#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৩৮
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]
হসপিটালের ২য় তলায় হন্ত-দন্ত করে দৌড়াতে দৌড়াতে এলো এক রমণী।বয়স ১৭-১৮ হবে, চোখের কোণের কালো আইলেনারের বেশখানিকটা মুখে গিয়েছে চোখের জলের কারণে হয়তোবা বারে বার চোখ মুছতে গিয়ে এরকমটা হয়েছে।মাথায় মাঝ বরাবর সিঁথি করে বেণি করা চুলের চারপাশটাও বেশ অগোছালো হয়ে গিয়েছে।হাতে এক্সাম ফাইল,আর পরণে সাদা কলেজ ইউনিফর্ম।সাভার সি.টি হসপিটাল ২য় তলায় দৌড়ে যাচ্ছে মেয়েটা,রিসিপশনে বসে থাকা মাঝ বয়সি মহিলাটির কাছে গিয়ে হাফাতে হাফাতে বললো…
“মেম্ পেশেন্টে নেম নাদিম নাদিম আহমেদ,কতো তলায় কয় নং কেবিনে আছে বলতে পারবেন।”
মহিলাটি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হেঁসে উত্তর দিলো…
“কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন, বলছি।”
কম্পিউটারে কিছু একটা টাইপ করে,মহিলাটি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো…
“পেশেন্ট নেম নাদিম আহমেদ্, ইয়ার 27,থার্ড ফ্লোর, কেবিন 303…”
মেয়েটি অপেক্ষা করলো না।আবারও ছুটলো ৩য় তলার ৩০৩ নং কেবিনের উদ্দেশ্য।দু মিনিটও লাগলো না সেখানে পৌঁছাতে,চারপাশের মানুষজন কে না দেখেই হুট কেবিনে ঢুকে পড়লো মেয়েটা।কেবিনের বেডে শুয়ে থাকা নাদিমকে দেখে যেনো আর কান্না আটকে রাখতে পারলো না ও,হু হু করে কেঁদে উঠলো।নাদিমের এখনো জ্ঞান ফেরেনি।তাই সে এখনো জানে না তার অজানায় একজন মেয়ে কেঁদে তাট বুক চোখের জলে ভাসিয়ে ফেলছে।মিসেস নাইমা এবং নাইম সাহেব অবাক পানে চারুর দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারা রীতিমতো চমকে গিয়েছেন চারুর এমন ব্যাবহারে।কি রিয়েক্ট করবেন তাই ভেবে পাচ্ছেন না।নাইম আর নাইমার সাথেই দাড়িয়ে আছে মেঘা,মুখে হালকা ভয়ের ছাপ থাকলেও তেমন গরুতর কোনো ভয় প্রকাশ পাচ্ছে না তার আঙ্গ-ভঙ্গি দ্বারা।অথচ কাল তার সাথে নাদিমের বিয়ে ছিলো,এর ওপর চারুর এমন কান্ডেও সে কোনো রিয়েক্ট করছে না বা কোনো প্রকার প্রতিবাদ করছে না।
নার্সরা চারুকে কোনো রকমে মানিয়ে নিয়ে এসেছে,চারুর অবস্থাও তেমন ভালো না প্রেশার হাই হয়ে গিয়েছে একজন নার্স চারুকে নানান ঔষধ পত্র খাইয়ে দিয়ে গেলেন আর বললেন…
“তুমিই বুঝি ছেলেটার হবু বউ?শুনলাম বিয়ে বাড়িতে অনুষ্ঠানের রান্না করতে গিয়েই নাকি আগুন লেগেছে,তাই বললাম আরকি।অতো চিন্তা করোনা তেমন কিছুই হয়নি তোমার বরের কোনো যায়গায় পুড়ে ঠুড়েও যায়নি শুধু শ্বাসকষ্টটা বেড়ে গিয়েছে আর সুগার হাই হয়ে গিয়েছে।চিন্তা করোনা ঘন্টাখানেক বাদেই তার জ্ঞান ফিরবে।”
বলেই তিনি হাসঁতে হাসঁতে চলে গেলেন।চারু কিছু বলার সুযোগও পেলো না,কারণ তিনি তার মতো বলে চলে গিয়েছেন চারুর কথা শোনার প্রয়োজনবোধই করেননি।
পরীক্ষা দিয়ে বাড়ির পথে ফেরার সময়ই তার বান্ধবী নিশির কাছে নাদিমের অসুস্থতার খবর পেয়েছে চারু,যখন শুনেছে সে হসপিটালে ভর্তি বাস বদলে সাভার চলে এসেছে সে।প্রচন্ড ভয়ে ছিলো ও।নাদিম এখন অনেকটাই সুস্থ নার্স যাই বলুক সে দেখেছে নাদিম হাতের দিকের যায়গাটাতে অনেকটা যখন হয়েছে তবে সেটা পুড়ে যাওয়ায় নয়,কেঁটে বা আচঁড় লেগে হয়েছে এটা।হয়তোবা আগুন লাগার পর তাড়াহুড়ো করে সব ঠিক করতে গিয়ে এমন হয়েছে।
ফাইল থেকে টিস্যু বের করে সেটা দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে,পানির বোতল থেকে পানি খেতে লাগলো চারু।তার ভয় এখনো কাঁটেনি।বেশ কিছুটা দূরে চেয়ারে বসে বসে চারুকে লক্ষ করছেন মিসেস নাইমা।মেয়েটার কান্ডে তার আর কিছুই বোঝার বাকি নেই,যে মেয়েটা কি চায় বা কাকে চায়।
__________
হসপিটালের এক কোণায় দাঁড়িয়ে পকেটে হাত রেখে সামনে দিকে তাকিয়ে আছে শরৎ।তার বরাবর একটা কেবিন বেশ নামি দামি একটা প্রাইভেট হসপিটালে আছে এখন সে।কাঁচের দেয়াল ভেদ করে সে দেখতে পাচ্ছে একটা ২১ বছর বয়সী মেয়ে পড়নে সবুজ হসপিটাল ইউনিফর্ম চুলগুলো বেনুনী করা,মুখে অক্সিজেন মাক্স পড়ে মৃত্যুর সাথে লড়ে চলেছে অনবরত।জোড়ে জোড়ে শ্বাস-প্রশ্বাস ওঠা নামা করছে তার।শরৎ আছে এখন বার্ণ ইউনিটে।শ্রীজার শরীরের বেশ খানিকটা অংশ পুড়ে গিয়েছে, তবে ভাগ্য ভালো মুখ-মন্ডল সহ শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোর কিছু হয়নি,যেমন হা পা আরো অনেক অংশ।শ্রীজাকে মিসেস নাইমাই হসপিটালে ভর্তি করিয়েছিলেন কিন্তু ছেলের শোকে এতোটাই বিভোর ছিলেন আশ-পাশের কোনো খবর ছিলো না তার।শরৎ দেখছে নার্স ডক্টররা ইকটু পর পরই শ্রীজাকে নানানভাবে ট্রিটমেন্ট করছেন।স্যালাইন দেয়া হচ্ছে শ্রীজাকে আপাততো কোনো খাবার তাকে খাওয়ানো যাবে না,তাই স্যালাইন চলবে।হাতে ক্যানেলা লাগানো।শরৎ কখনো ভাবেনি সে শ্রীজাকে এভাবে দেখবে।শরৎ আর সহ্য করতে পারছে না,তার মনে হচ্ছে কখন শ্রীজা সুস্থ হবে?আর কখন বলবে “শরৎ ভাই চলো সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করি,কোনো পিছুটান না রাখি।অতীত ভুলে শুরু করি নতুন এক অধ্যায়।”
কিন্তু আফসোস সে সুযোগটা এখন নেই শরৎয়ের কাছে।শরৎ ফোন দিয়ে সবটা জানিয়েছে শ্রীজার মা বাবাকে তারা বলেছেন তারা আসছেন।হয়তোবা এতোক্ষণে চলেও আসছেন।
★
ডক্টর বেরিয়ে এলেন কেবিন থেকে,শরৎকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন…
“যতো দ্রুত সম্ভব রোগীর রক্ত লাগবে,তার আগে থেকেই রক্ত শূন্যতার প্রবলেম আছে সেটা আপনারা আমাদের বলেননি কেনো?দ্রুত তিন ব্যাগ রক্তের ব্যাবস্থা করুন।”
শরৎ বললো…
“হাতে কতোটুকু সময় আছে ডক্টর।”
“দেড় ঘন্টার মধ্যে ব্যাবস্থা করতে পারলে বেস্ট হয়,আর দেড়ি হলে এরপর যা ঘটবে তার জন্য আপনারাই দায়ি থাকবেন।”
বলেই চলে গেলেন ডক্টর।শরৎ ফোন করে জানিয়ে দিলো শ্রীজার মা বাবাকে কথাটা।সে জানে শ্রীজার ব্লাডগ্রুপ O+,,,ফোন দিয়ে তার ভার্সিটি লাইফের কজন বন্ধুকে ব্যাপারটা জানালো তাদের মাঝ থেকে চারজন আসছে ওরাও সাভারের আশে পাশেই থাকে।রক্তের জন্য এক্সট্রা মানুষ থাকা ভালো কখন না কখন আবার কাজে লেগে যায়।
প্রায় আধ ঘন্টা পর এলেন শ্রীজার মা বাবা,কিন্তু ওনাদের পাশে থাকা মানুষটিকে দেখে চমকে উঠলো শরৎ।অনু! অনু এখানে কি করছে?সাথে অনুর বর মিহাদও এসেছে?অনুকে দেখে শরৎয়ের রাগ উঠলেও হসপিটালের পরিবেশ নষ্ট করতে চাইলো না সে।চুপ-চাপ রইলো।অনু শ্রীজার কেবিনে যেতে নিলেই শরৎ তাকে বাঁধা দিয়ে বললো…
“আমার ওয়াইফের কাছে আপনাকে এলাও করছি না আমি।হসপিটালে এসেছেন ভালো কথা,শ্রীজার খবর নিয়েছেন ভালো কথা।কিন্তু ওর ধারে কাছে যাবার চেষ্টাও করবেন না।”
অনু রেগে গেলো,বললো…
“আমার বোনের সাথে আমি দেখা করবো না কথা বলবো সেটা তুমি ঠিক করে দেবার কে শরৎ?ঝামেলা তোমার সাথে আমার হয়েছিলো শ্রীজার সাথে নয়,এভাবে রাগের বসে উল্টা পাল্টা কথা বলোনা।রাগিয়ে দিও না আমায়।”
শ্রীজার মা অনুকে চুপ করতে বললেন।উনি শরৎয়ের কাছে এসে বললেন…
“ওর আর শ্রীজার ব্লাড গ্রুপ এক,ও শ্রীজাকে এক ব্যাগ রক্ত দিতে পারবে,আর মিহাদেরও এক দু ব্যাগ এমনিতেই হয়ে যাচ্ছে।আর এক ব্যাগ আমরা জোগাড় করে নিবো।এ সময়টাতে ঝোকের বসে কিছু কোরোনা শরৎ,শ্রীজা ওর বোনকে যথেষ্ট ভালোবাসে ও যদি এসব জানতে পারে সত্যিই খুব কষ্ট পাবে ও,এখন শ্রীজার ভালোটা দেখা উচিৎ আমাদের।আর এখানে ভুল কারোরই ছিলো না,যে যে যার যার অনুভূতীকে প্রাধান্য দিয়েছে।এতে কেউ কেউ কষ্ট পেয়েছে আবার কেউ কেউ ভালো ফল পেয়েছে।তুমি বুদ্ধিমান ছেলে শরৎ তুমি এটা জানো যে সব কিছুরই পজেটিভ আর নেগেটিভ দিক থাকে।এসব কথা এখন বাদ দিয়ে শ্রীজার কথাটা ভাবা উচিৎ আমাদের।”
এই বলে অনুকে তিনি শ্রীজার কেবিনে পাঠিয়ে দিলেন নার্সের সাথে কথা বলে শ্রীজাকে রক্ত দিবে সে।
শ্রীজার কেবিনে গিয়ে শ্রীজাকে দেখে ভয়ে, অনুশোচনায়,কষ্টে অনু কেঁদে ফেললো।শ্রীজা তার একমাত্র ছোট বোন,তাকে সে সত্যিই ভালোবাসে।সে যদি জানতো শ্রীজা শরৎকে পছন্দ করে তাহলে কখনোই শরৎয়ের দিকে এগোতো না সে।নিজেকে তার অপরাধী মনে হয়,তার একটা ভুলের কারণে এতোগুলো জীবন কেমন এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবে না সে কখনো না।
#চলবে_
#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_৩৯
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]
কোলাহলে পূর্ণ শহর।ধুলো-বালি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শহরের কোণায় কোণায়,বাতাসে বাতাসে উড়ে চলছে।ইকটু পর পরই গাড়ি-রিকশা-বাস নামক যন্ত্রগুলোর হর্ণ বেঁজে চলছে অবিরাম।বাসের এক কোণায় গুটিশুটি হয়ে বসে আছে চারু উদ্দেশ্য সে এখন শ্রীজাদের বাড়িতে যাবে ঠিকানা তার নেয়া হয়ে গিয়েছে,নিশির কথা শুনে হন্ত-দন্ত হয়ে হসপিটালে চলে এসেছিলো সে,এর মধ্যে তার মনেই ছিলো না যে আজ শ্রীজা তাদের বাড়িতে যাচ্ছে,শরৎয়ের তো এই সময়টাতে অফিসে থাকার কথা।ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলো তার মাকে(শরৎয়ের মা)জানিয়ে দিতে হবে সে সাভার চলে এসেছে,শ্রীজাকে কাল পাঠিয়ে দিতে,ফোন অন করার জন্য বাটন চাপঁতেই দেখলো ফোনের চার্জ শেষ।জ্যাম পড়েছে রাস্তায় এখন প্রায় মিনিট পাঁচেক হবে বাস থেমে আছে,গরমে ঘেমে ফেঁপে একাকার হয়ে যাচ্ছে চারু,স্কাফটা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে আবার ইকটু পানি খেয়ে নিলো সে,হাতে থাকা ঘড়িটাতে সময় দেখে বুঝতে পারলো আজ আর সাদ্দমদের বাড়িতে যাওয়া হবে না,চারু সাদ্দামের আম্মুকে কালই না করে দিয়েছিলো সে সাদ্দদামকে আর পড়াবে না তার বদলে নতুন টিচার দিয়ে যাবে,এক্সাম শেষে সে আর মহাখালী থাকবে না বিধায় সাদ্দামকেও পড়ানো হবে না।শর্ত মতে আজ নতুন শিক্ষিকার সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেবার কথা ছিলো কিন্তু বাড়ি ফেরার পড়ে যা হলো,তাতেই হিতাহিত কান্ড-জ্ঞান সব ভুলে বসেছিলো চারু,সে এখন বুঝতে পারছে আবেগের বশবর্তী হয়ে সে ঠিক কতোটা মারাত্মক ভুল করে বসেছে তাকে ওভাবে কাঁদতে দেখেছেন মিসেস নাইমা আর নাইম সাহেব, এখন যদি কোনো কিছু মনে করে শ্রীজা আর শরৎকে বলে দেয় আর তারপর যদি কোনো ঝামেলা হয়!এতো ঝামেলা এতো বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারছেনা ও,একটার পর একটা একটার পর একটা বিপদ লেগেই আছে তার পেছন।জীবন সুন্দর আবার অনেক কঠিনও।সকাল বেলা নাস্তা করে বেরিয়েছিলো এক্সামের উদ্দেশ্যে।কথা ছিলো বাড়ি ফিরে দুপুরের খাবার খাবে তাও তো হলো না।খুঁদার জন্য পেটও ব্যাথা করছে বেশ।এর মধ্যেই চারু দেখতে পেলো,বয়স আট – নয় এর মধ্যে একটা ছেলে শসা-আর আমড়ার ভর্তার প্যাকেট নিয়ে বাসে ঘুরোঘুরি করছে উদ্দেশ্য বিক্রি করা।চারু ব্যাগ থেকে খুচরা টাকার নোট বের করে ছেলেটাকে ডাক দিলো…
“এই পিচ্চি শুনে যাও তো।”
চারুর ডাক শুনে ছেলেটি হাঁসি মুখে দ্রুত পা চালিয়ে চারুর সামনে এসে দাড়ালো…
“জ্যা আফা কি লাগবো কন?সব আসে?আম বর্তা,শসা কাটা,আমড়া বর্তা,ঠান্ডা পানি বড়ুইয়ের আচাঁড় সব।”
ছেলেটা বেশ চটপটে,চারু তাকে বললো…
“একটা আমড়া,আর একটা শসা দিবি।পানি কতো করে?”
“২০ ট্যাহা।”
“১৫ টাকার পানি ২০ টাকায় বিক্রি করছিস?বোকা পেয়েছিস আমাকে?”
ছেলেটা মাথা চুলকে বললো…
“এডা ঠান্ডা পানি আফা এল্লাইগা ২০ ট্যাহা।বলে শসার প্যাকেটে লবন মেশাতে লাগলো।”
চারু শসা আর আমড়ার প্যাকেটটা হাতে নিয়ে ছেলেটার হাতে দশ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিলো,ছেলেটা বললো…
“আফা আর দশ ট্যাহা?”
“দশ টাকা মানে?আমড়া পাঁচ,শসা পাঁচ মোট দশ,আবার কিসের দশ টাকা?”
ছেলেটা একটু হেঁসে বললো…
“জ্যা না আফা আমড়া দশ শসাও দশ,দশের নিচে এহন মাল পাওন যায় না।”
চারু বিরক্ত হলো,জিনিসের দাম এখন তরতরিয়ে বাড়ছে, গলার ওপড় পাড়া দিয়ে সবাই সব উশুল করে নিচ্ছে,অথচ চাকরির বেতনের টাকা কেউ বাড়াচ্ছে না।ব্যাগ থেকে আরেকটা দশ টাকার নোট বের করে ছেলেটার হাতে বাড়িয়ে দিতেই ছেলেটা বললো…
“আফা পানিডা নিয়া লন,বাসে আর পানি পাইবেন না,খাওনের পরে ঝাল লাগবো আফনের।”
চারু বললো…
“না পানির দরকার নেই ১৫ টাকার পানি আমি ২০ টাকায় নিবো কোন দুঃখে?”
ছেলেটা হতাশ হয়ে বললো…
“আইচ্চা তয় ১৫ ট্যাহাতেই নেন।”
সে বিড়বিড়িয়ে বললো…
“বেডি বেশি চালাক পাঁস ট্যাহা বেশি লাভ করতারলাম না ধুর।”
চারু অনেক্ষণ ধরে ভাবছে তার মা কে একটা ফোন করা উচিঁত। নিশ্চই খুব চিন্তা করছে,শ্রীজা ভাবিও পৌঁছে গিয়েছে বাড়িতে এতোক্ষণে নিশ্চই ওর বান্ধবীদের ফোনে ফোন করা শুরু করেছে কিন্তু নিশি তো ফোন ব্যাবহারও করে না,আর ওর মায়ের নম্বরটাও ও বাড়িতে নেই।এইসব ভেবে বেশ চিন্তায় মগ্ন চারু।হঠাৎ ভাবলো কারে কাছ থেকে ফোন ধার নিয়েও তো ফোন করা যায়।যেই ভাবা সেই কাজ,পাশের সিটে বসে থাকা মেয়েটার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে মায়ের কাছে ফোন করলো ও,প্রথম দুবার ফোন না ধরলেও তৃতীয়বার ফোন ধরলেন শরৎয়ের মা।চারু বললো…
“মা আমি সাভার এসে পড়েছি,ভাবিকে বোলো কাল সাভার চলে আসতে আর তোমরা চিন্তা করো না।আমি ঠিক আছি।”
চারু আরো কিছু বলতে নিবে তার আগেই ওপাশ থেকে শরৎয়ের মা কেঁদে দিয়ে বলে উঠলেন…
“মহাখালীতে কেউ নেই,আমরা সাভার এসেছি তোর ভাবিদের বাড়িতে আগুন লেগেছিলো ওই সময় তোর ভাবি বাড়িতে থাকায়…”
আর কিছু বলতে পারলেন না তিনি।চারু আতৎকে উঠলো সে এমন কিছুই আশা করেনি,,,চারু চিন্তিত স্বরে দ্রুত বললো….
“এখন কই আছো তোমরা?”
“সাভার সিটি হসপিটাল পাঁচ তলায় কেবিন নং ৫০৬।”
চারুর মাথা ঘুরে উঠলো।কালই তো শ্রীজার সাথে কথা বললো ও,এই ইকটু আগেও সে সিটি হসপিটালে ছিলো,আর কিছু ভাবার জন্য সময় নিলো না ও।ফোনটা মেয়েটার হাতে দিয়ে বাস থেকে নেমে পড়লো।একটা রিকশা নিয়ে আবার যেতে লাগলো সিটি হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
★★___★★
সময় তো বহমান,সে কারো জন্য অপেক্ষা করে?কখনোই করে না।তার কোনো পিছুটান নেই, নেই কারো প্রতি কোনো মায়া,আশা, ভরসা ভালোবাসা।তাই তো সে স্থির নয়,ছুটে চলে এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে।নিজের গতিতে নিজের ভালোবাসায়।সে সময়কে লোকে ভালোভাবে ব্যায় করতে পারলেই তার জন্য সময় বয়ে আনে চরম সাফল্য, আর অপচয় করলে চরম ব্যার্থতা।
দেখতে দেখতে সময়ের অংশ ১ টা মাস কেঁটে গিয়েছে।চারু এখন শ্রীজাদের বাড়িতেই থাকে।তার থাকার উদ্দেশ্য আগে একটা হলেও এখন তার সংখ্য বেড়ে গিয়ে মোট দুটো।
প্রথম কারণ জাবিতে চান্স পাবার জন্য স্টাডি করা আর দ্বিতীয় কারণ শ্রীজার খেয়াল রাখা আর তাঁকে সঙ্গ দেয়া।
শ্রীজা এখন সুস্থ গায়ের পোড়া দাগগুলোও মিলিয়ে যাচ্ছে।শরৎয়ের সাথে তার সম্পর্কের উন্নতিও হচ্ছে ধীরে ধীরে,চারুও আগের মতো নেই এখন প্রথম সময়কার মতোই ধীরে ধীরে বন্ধুসহিত আচর করছে শ্রীজার সাথে।তবে কিছু কথা তো তার নিজের ভেতরেই থেকে যাবে।যে কথা সে কাউকে বলবে না,সে কখনো প্রকাশ করবে না সে একটা মানুষকে খুব করে চায়, এতোটাই ভালোবাসে যে মানুষটা তার স্বপ্নে এসেও ঘুম হারাম করে দিয়ে যায়।অদ্ভুত কথা হচ্ছে সে যাকে ভালোবাসে সে ভালোবাসে শ্রীজাকে আর শ্রীজা শরৎ কে।ভালোবাসায় এতো অপূর্ণতা কেন?মাঝে মাঝে সে নিজেকে প্রশ্ন করে কি করে কিভাবে সে নিজের জানা শর্তেও এমন একটা মানুষকে ভালোবাসলো যাকে সে কখনোই নিজের করে পাবে না।যাকে নিয়ে ভাবতে গেলেও ভাবনাগুলে বারে বারে তাকে বলে সেই মানুষটা তার নয়।সেদিন যদি বাড়িতে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা টা না ঘটতো তাহলে তো নাদিম আজ ঠিকই অন্যকারো হতো,নাদিমের বিয়ের কাজও থেমে নেই,বিয়ের দিন তারিখ আবার ফিক্সড করা হয়েছে তবে এবার কমিউনিটি সেন্টারে।বাড়িতে করবেন না তারা আগের বারের মতো ভুল আর করতে চাইছেন না,তাই আগের চেয়েও বেশি শতর্কতা অবলম্বন করছেন মিসেস নাইমা এবং নাদিম।চারু নাদিমকে চাইলেই বলতে পারতো,কিন্তু তার অনেকটা বড় হতে হবে,তার ক্যারিয়ার পথ চলা সমাজ পড়াশোনাই আগে।এসব আবেগ ভালোবাসা তো তার জন্যে নয়,এ দুনিয়াতে যার মা বাবা নেই তার আবার কিসের এতো চাহিদা?তাদের তো লোকে টাকা দেখে ভালোবাসে।কজনইবা বিনা সার্থে ভালোবাসে তাদের?
সে নাদিমের ভালোবাসার আবেগে পড়ে শরৎ শ্রীজা কিংবা তার মা বাবা কে কষ্ট দিতে চায় না।খুব কষ্টে নতুন করে আপনজন পেয়েছে সে,সে জানে স্বজন হারানোর কষ্ট,শরৎয়ের স্বপ্ন শ্রীজার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে যে তার।অনেক বড় হতে হবে,দেখিয়ে দিতে হবে চারুও পারে।
★____★
গভীর রাত,গড়ির কাটায় এখন দেড়টা বাজে ঘুমিয়ে গিয়েছে প্রায় সবাই।শুধু ঘুমোয়নি শরৎ চুপটি করে শুয়ে শুয়ে তার পাশে থাকা ঘুমন্ত রমণীকে দেখছে সে।এতো মায়া এতো স্নিগ্ধতা কোথা থেকে নিয়ে এসেছে এই মেয়ে?কই আগে তো এতো মায়া এতো ভালোলাগা আসেনি শ্রীজার প্রতি।নাকি সে অন্য কারো মোহে পড়ে ছিলো বলে সে মোহের পর্দা তাকে অন্ধ করে দিয়েছিলো?
ইদানিং শ্রীজার সব কিছুই ভালো লাগে তার।ভালো মন্দ সব,মাঝে মাঝে শরৎ ভাবে সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে?এতোটা মুগ্ধ একজন মানুষের ওপর আরেকজন মানুষ কি করে হতে পারে?শ্রীজাকে হারানোর ভয় তাকে এখন আরো বেশি তারা করে।হঠাৎ শ্রীজা আচমকাই চোখ মেলে তাকালো অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো শরৎ।শ্রীজা শরৎয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে প্রশ্ন করলো…
“লুকিয়ে লুকিয়ে কাকে এভাবে দেখা হচ্ছিলো?”
শরৎ বালিশে মাথা ঠেকিয়ে বললো…
“আমার বউ কে দেখছিলাম।কেনো কোনো সমস্যা?”
শ্রীজা চোখ পাকালো বললো…
“অবশ্যই সমস্যা আছে,আলবাত আছে।”
শরৎ উৎসুক হওয়ার ভান করে বললো…
“আলবাত আছে?তাহলে তো জানতেই হবে কি সমস্যা।হয়েছেটা কি জনাবা?”
শ্রীজা উঠে বসে বললো…
“কি হয়েছে জানেন না?আমার সাথে মশকরা করা হচ্ছে?”
শরৎ মুখ টিপে হাঁসলো।ডান হাত দিয়ে বার বার গালে হালকা করে চাপড় দিয়ে দিয়ে তওবা করার ভান করতে করতে বললো…
“ছিহ্ ছিহ্, এসব কি বলছেন?আমার রাজ্যের রানির সাথে কি আমি এসব করতে পারি?গর্দান যাবে আমার।”
“আপনার গর্দান যাওয়ার দরকার তো অনেক আগেই ছিলো।বিনা অনুমুতিতে একজন সহজ-সরল মেয়েকে দেখা হচ্ছে।তাও খু্ঁটিয়ে খুঁটিয়ে।এটা কি মহা অপরাধ নয়?পাপ করেছেন আপনি মহা পাপ।”
শরৎ বললো…
“কিন্তু সে মেয়েটি তো আমার স্ত্রী,তিন কবুল বলে তার সাথে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি আমি,এখন সব অধীকার আছে আমার।”
শ্রীজা মুখ ভেংচালো বললো…
“নিজের বেলায় ষোলো আনা,আর আমার বেলায় এক আনা ও না।এখন তো বউ প্রেমিকা ছেড়ে চলে গিয়েছে বলেই তো বউয়ের কাছে এসেছেন।বুঝি বুঝি সব বুঝি,”
শরৎ মুচঁকি হেঁসে বললো…
“ভাগ্যিস অনু আমার জীবন থেকে চলে গিয়েছিলো,তা না হলে আমার তো জানাই হতো না, যে সত্যিই শ্রীজা নামের মেয়েটা আমাকে এতো এতো বেশি ভালোবাসে।”
“ঢং কম করবেন শরৎ ভাই।”
“আচ্ছা আমি ঢং করছি,তাহলে তুই কি করছিস?”
“কিছুই করছি নাহ্, শরৎ ভাই।”
শরৎয়ের এবার রাগ লাগলো প্রচুর,মেয়েটা কথায় কথায় তাকে শরৎ ভাই শরৎ ভাই বলবেই বলবে।তাকে রাগিয়ে দেয়ার বড্ড প্রয়োজন বোধয় মেয়েটার।শরৎ চোখ পাকিয়ে বললো…
“একদম ভাই ভাই করবি না,তোর মার পেটের ভাই নেই,সে শখ তুই ভাই দত্তক নিয়ে তারপর তাকে ভাই ডেকে পূরণ কর।আমাকে একদম ভাই ভাই ডাকবিনা।”
শ্রীজা হাঁসলো বললো…
“কেনো শরৎ ভাই?”
শরৎ এবার কিছু বললো না তার ধৈর্যের বাধঁ ভেঙে যাচ্ছে,আর ইকটু হলেই রাগেরা গড়গড়িয়ে পরতে থাকবে।হুঠাৎ করে শরৎয়ের মাথায় আচমকা একটা দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।তার কেনো যেনো মনে হলো এই কাজটা করলে শ্রীজা থামবেই,..
হুট করেই সে তার অধর যুগল ছুঁইয়ে দিলো শ্রীজার গালে।শ্রীজা শোয়া থেকে বসে পড়লো,হাত দিয়ে শরৎকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে রইলো,সে এখন কিছু বলতে পারছে না।বাক শক্তি যেনো হারিয়ে ফেলেছে ও,লজ্জায় শরৎয়ের দিকে তাকাতেও পারছে না ও,আবার এ ঘর থেকে যাবারও উপায় নেই,যেতে নিলে যদি শরৎ আবার…
নাহ্ আর ভাবতে পারছে না লজ্জায় কান গরম হয়ে যাচ্ছে।হাত দিয়ে গাল ডলতে ডলতে দ্রুত অপর পাশে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো শ্রীজা।ভাবতেই তার কেমন লাগছে শরৎ দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে পড়ছে।যখন তখন হুট হাট এসব কান্ড করে বসে সে।শ্রীজা কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে রইলো বিপরীত পাশে।তার বুক ধড়ফড় করছে।হাত পা কাপঁছে লজ্জা মাথা কাটা যাচ্ছে একেবারে।সে পারছে না দৌড়ে এ ঘর ত্যাগ করতে,শ্রীজা চোখ বন্ধ করে, শক্ত হয়ে পাথরের মতে শুয়ে রইলো।বেশ কিছুক্ষন পর শরৎয়ের একটা কথাই তার কান অব্দি পৌছলো তা হচ্ছে…
“আর ভুলেও আমাকে ভাই ডাকবি না,ভুল করেও ভাই ডাকলে।এমন শাস্তির জন্য প্রস্তুত থাকবি,আমি অলওয়েজ তোকে শাস্তি দিবো,আমার কোনো সমস্যা নেই।”
#চলবে_