#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৪০
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]
নামি দামি একটা ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে বসে নাদিমের জন্য অপেক্ষা করছে মেঘা।হাতে একটা কফির কাপ,ইদানিং বৃষ্টির কারণে মৌসুম ঠান্ডা হয়ে আছে,এ সময়টাতে কফি হলে মন্দ হয় না।অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো নাদিম,হাতে ব্লেক ঘড়ি গায়ে পার্পল কালার শার্ট আর ব্লু জিন্স।ফোন টিপতে টিপতে এগিয়ে এলো নাদিম মেঘার পাশের চেয়ারটাতে বসলো ও।নাদিমকে কিছু না বলতে দেখে মেঘা নিজেই আগ বাড়িয়ে কথা বলা শুরু করলো…
“কেমন আছো?”
নাদিম ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে মেঘার দিকে তাকিয়ে হালকা হেঁসে বললো…
“ভালো না থাকলেও আমাদের ভালো থাকতে হয়,তাই ভালো আছি।তুমি?”
“এখন বেশ ভালো আছি।”
“কেনো আগে ভালো ছিলে না?”
“ছিলাম না বললে ভুল হবে,ভালো ছিলাম তবে চিন্তায় ছিলাম খুব এখন চিন্তামুক্ত। ”
“তাহলে তো ভালোই,কি খাবে বলো?অর্ডার করি!”
“না তেমন কিছু খাবো না,আজকে অনেকটা ব্যাস্ত আমি কিছু কেনা-কাটার বাকি আছে।”
“তা তো হচ্ছে না…”
বলেই ওয়েটার কে ডাক দিয়ে নাদিম কিছু খাবার অর্ডার করলো।ওয়েটার চলে যেতেউ মেঘা নাদিমের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো…
“নাদিম অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলার জন্য তোমাকে এখানে ডাকা।আশা করি আমার সবটা কথা তুমি শুনবে আর আমার পরিস্থিতিটা বোঝার চেস্টা করবে।”
নাদিম হাঁসলো, এরপর বললো…
“আচ্ছা বলো শুনি কি বলবে তুমি!”
মেঘা বললো…
“বাবা কে তুমি কতোটুকু চেনো বা জানো সেটা আমি জানি না তবে হ্যা ওনার মেয়ে হিসেবে ওনাকে খুব ভালো করে চিনি আমি,তুমি একটা ভালো ব্যাবসা করো ঢাকায় তোমাদের বাড়ি গাড়ি সুনাম আছে বলেই বাবা তোমার সাথে আমাকে বিয়ে দিচ্ছে তুমি মানুষটা কেমন সেটা দেখা তার কাছে মূল বিষয় না।নাদিম সত্যি বলতে আমি এই বিয়েটা করতে রাজি নই,নাইবা এটাতে আমার কোনো মত আছে,যা আছে সব ওপড়ে ওপড়েই আছে, শুধু মাত্র বাবাকে দেখানোর জন্য যে আমি তার কতোটা বাধ্য মেয়ে।আসলে আমি কখনোই তোমাকে পছন্দ করতাম না আর না ভালো করে চিনতাম,এ কথাটা মিথ্যে যে আমি তোমাকে পছন্দ করি,এটা আমার বাবাই তোমার বাবাকে বলেছে।আমার বয়ফ্রেন্ড আছে,আর সামনেই আমরা বিয়ে করতে চলেছি এতোদিন বাবাকে কিছু বলতে পারিনি কারণ ওর কোনো চাকরি বাকরি ছিলো না।কিন্তু রিসেন্টলি ও একটা জব পেয়েছে,আর এটাই আমার কাছে অনেক।আমি জানি বাবা হয়তোবা রাজি হবে না কারণ নতুন নতুন কোনো জবেই সেলারির মান ভালো থাকে না।আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে এ বিয়েটাতে তোমারও কোনো মত নেই,আর আমারও নেই, বিয়ে মানে কি জানো নাদিম?”
“বিয়ে মানে বিয়ে, সংসার আর কি?”
“উহু,বিয়ে মানে হচ্ছে দুটো আত্মার মিলন,দুটো মানুষের ভালোবাসা হালালভাবে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া,দুজন মানুষ যারা দুজন কে চায় তাদের চাওয়ার পূর্ণতা পাওয়া এবং পুরো পৃথিবীকে জানিয়ে পূর্ণতা পাওয়া,বিয়ে মানে ভালোবাসার আরেকটা ধাপ যে ধাপ পূরণ করলে কোনো বাঁধা থাকে না।”
“এবার ভাবো তো নাদিম আমার আর তোমার মাঝে কি আদেও কোনো ভালোবাসা আছে?”
নাদিম চুপ হয়ে রইলো,মেঘার কথায় যুক্তি আছে আর সবটাই সত্য এখানে সে আগ বাড়িয়ে কি বলবে?
“নেই সেটা তুমিও জানো আমিও জানি। যেখানে ভালোবাসা নেই যেখানে কোনো মত নেই সেখানে বিয়েটাই তো বৃথা।আদেও কি বিয়েটা কবুল হবে নাদিম?না তুমি ভালো থাকবে না আমি,আর না আমি যাকে চাই সে!”
“তো এখন আমরা কি করবো?বিয়ের ডেইট থেকে শুরু করে যাবতীয় কেনা-কাটা,মেহমানদের দাওয়াত দেয়া পর্যন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে,লাস্ট মোমেন্টে এসে এটা করাটা ঠিক হবে?লোকে কি বলবে?আমার কথা বাদ দিলাম, সমাজ তো সব দোষ মেয়েদের দেয় সব কাজে, যা শুনতে হবে সব তোমার আর তোমার মা বাবার শুনতে হবে,দোষ কিন্তু তোমাদেরই পড়বে বেশি।”
“ধরো সমাজের চাপে পড়ে বিয়েটা আমরা করে নিলাম,এরপর তো নিশ্চই আমরা সুখি হবো না,কারণ আমাদের কোনো মত নেই,সমাজ কি আমাদের ভালো রাখার দ্বায়িত্বটা নেবে?না এসে দেখে যাবে তুমি আমি ভালো নেই?এক দিন দুদিন এই করে মাসের পর মাস চলে গেলে বিষয়টা এমনি সবাই ভুলে যাবে,কিন্তু আমরা যদি ভুক্তভোগী হই আমরা কি করে ভুলবো?”
“এখন আমরা কি করবো?”
“তুমি জাস্ট একটা কাজ করবে আমার বাবা কে গিয়ে জানাবে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও না।কেনো চাওনা কি কারণ এসব আমি সামলাবো এসব তোমায় বলতে হবে না।আর তুমি যদি কিছু নাও করতে পারো তাতে আমার কিছু যায় আসবে না আমি পালিয়ে যাবো।কারণ আমার ভালো থাকাটা যারা দেখবে না আবেগের বশে পড়ে তাদের জন্য তো আমি আমার ভালো থাকা ভালো লাগাকে বিষর্জন দিতে পারি না তাইনা,তোমার যদি মনে হয় আমি স্বার্থপর তো হ্যা আমি স্বার্থপর।”
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি।”
“তাহলে আমি উঠি আজ,খাবারের বিল পে আমি করবো ওটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না,শেষ করে যাও।”
__________
“চুলের এই অবস্থা কেন তোর?”
আমি রান্না করতে করতে বললাম…
“সংসারের কাজ করেই তো কুল পাই না আবার কিসের চুল ঠুল!”
শরৎ ভাই আমার খোপা টুপ করে খুলে ফেললেন চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো আমার পিঠের ওপড়,।
উনি বললেন…
“ওরে তোর সংসাররে মনে হচ্ছে হালি খানেক বাচ্চা কাচ্চা পালতে পালতে নিজের যত্ন নেয়ার সময়ই পান না উনি।”
“সব সময় নিজের যত্ন নিতে মন চায় না আমার।”
“তাহলে কি আমি তোর যত্ন নিবো নাকি?”
“তো কি?আরেক লোক এসে নেবে যত্ন?না আমার আরেকটা বর আছে?”
“আচ্ছা আচ্ছা এই ব্যাপার।”
“হুহ”
বলেই আমি চুলোটা বন্ধ করে,কাপড় চোপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
★★__★★
দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে বারান্দায় পানি দিচ্ছি এমন সময় কোথা থেকে যেনো হুট করে শরৎ ভাই এলেন,হাতে একটা চিরুনি আর চুল বাঁধার রাবার।আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে চুল আচড়াতে লাগলেন উনি,বললেন…
“চুলে কি শ্যাম্পু করিস না?খুশকি হয়ে আছে।”
আমি বললাম…
“করি তো তাও এমন হয়,।”
উনি আর কিছু বললেন না চুপচাপ বেনুনী করতে লাগলেন।আমি আবার বললাম…
“আমি ভাবছি একটা পার্ট টাইম জব নেবো শরৎ ভাই,কেমন হবে?”
“নে সমস্যা কোথায়?পড়া শোনা করে তো আর বসে থাকবি না।”
“অনেক দিন হয়েছে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না,চলেন না কোথাও ঘুরতে যাই আমরা!”
“কই যাবি?চারু একা একা কি করবে বাড়িতে?”
“একা একা কি করবে মানে?নিজের মতো থাকবে,ভার্সিটিতে যাবে ভালো রেজাল্ট করসে এখন ইকটু বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঘুরবে,টুক টাক টিউনশন করাবে,আর কি করবে?”
“আচ্ছা চল তাহলে আজ বিকেলে মাওয়া যাই আমরা তিনজন,রাতের দিকে ফিরে আসবো?কেমন?”
“আচ্ছা ঠিক আছে,তাহলে আমি সব গোছগাছ করি,চারুকেও জানাতে হবে।”
“ভালো কথা চারু কোথায় ওকে কোথায় দেখছি না,যে?”
“ভার্সিটিতে গিয়েছে,বাড়ি ফিরতে মোটামোটি দেড়ি হবে ওর।”
“আচ্ছা,শোন ভাবছিলাম কদিন পর চারুর দাদিকে দেখতে যাবো কেমন হবে?অনেকদিন হয় ওনার সাথে দেখা হয় না,আর চারুও নিশ্চই মিস করে ওনাকে?দাদিকে দেখতে মনচায় বলতে পারে না হয়তো,নিজের গ্রাম গ্রামের মানুষকেও তো দেখতে ইচ্ছে করে।”
#চলবে_
#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৪১
#Addrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]
আকাশে কালো কালো মেঘ উড়ে চলছে,দেখে মনে হচ্ছে যেনো সোফার কালো কুশোন আকাশে কেউ টাঙিয়ে রেখেছে।ঠান্ডা বাতাস এলো মেলো করে দিচ্ছে সব,রাস্তার ধুলো বালি উড়ে উড়ে অজান্তা গন্তব্যস্থলে পাড়ি জমাচ্ছে।বৃষ্টি এখনো নামেনি অথচো আকাশের ডাকা-ডাকি শুরু হয়ে গিয়েছে গুরুম গুরুম করে ডাকছে আকাশ,অতিরিক্ত বর্ষনের কারণে আবহওয়া কিছুদিন যাবৎ বেশ ঠান্ডা।ঘরে বসে আপন মনে একটা চাকরির জন্য সিভি গোছাচ্ছে শ্রীজা, সামনেই ইন্টারভিউ প্রস্তুতি নিতে হবে ভালো করে।মানে মানে জবটা পেয়ে গেলেই ভালো,শরৎ পুরোটাদিন ব্যাস্ত থাকে।কিসের এতো ব্যাস্ততা ওর?সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা,ইদানিং খুব রাত করে বাড়ি ফেরে কিছু জিঙ্গেস করলেই বলে সে তার লইয়ারির স্টাডি নিয়ে ব্যাস্ত,মাঝ দিয়ে এতোগুলো দিন কেঁটে গেলো এখনো শরৎয়ের স্টাডি শেষ হয় না,চাকরিতে ঢুকবে কবে ও?কি জানি কি করছে?এই লোকের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করা যেনো যুদ্ধজয় করার মতো।রাত বেশ শান্ত ইকটু আগেও শো শো করে শব্দ হচ্ছিলো বাতাসের।আশে পাশে কোনো শোরগোল নেই,না আছে কোনো শব্দ,পশ্চিম পাশের জানালা ভেদ করে হু হু করে বাতাস ঘরে প্রবেশ করছে।পাশের ঘরে চারু আছে,অথচ মনে হচ্ছে পুরো ফ্লাটটা যেনো ফাকা শ্রীজা ছাড়া কোনো প্রানীর কোনো অস্তিত্বই নেই ঘরগুলোতে।বিছানা থেকে খুব আস্তে করে নামলো শ্রীজা ইকটু কড়া করে একটা কফি খাওয়ার দরকার, ইন্টারভিউর প্রিপারেশন নিতে হবে ভালো করে দরকার হলে কিছুটা রাতও জাগবে ও।কফির মগ হাতে নিয়ে ওটাতে চিনি কফি দুধের মিশ্রণটা চামচ দিয়ে নাড়তে নাড়তে চারু ঘরের পাশ কাটিয়ে নিজের ঘরে এলো ও,মেয়েটা আবার গম্ভির হয়ে যাচ্ছে কেমন যেনো,নির্জীব হয়ে যাচ্ছে।দুদিন পর পর কি হয় মেয়েটার?ইশুকে ফোন করে জিঙ্গেস করতে হবে,ইশু আর নিশি দুজনের একজন যদি ওর পেট থেকে গুপ্ত কথাগুলো বের করতে পারতো।তাহলে সমস্যাটা কি জেনে সেটার সমাধানের সর্বচ্চো চেষ্টা করতো শ্রীজা।
ফাইলগুলো চেক করতে করতে কফিটা শেষ করে ড্রইংরুমে থাকা বুকশেল্ফের মাঝ থেকে ওর ডায়েরীটা বের করে নিয়ে এলো হাতে ফোন নিয়ে ইশিতার নম্বরটা ডায়েরী দেখে ফোনে উঠিয়ে ডায়েল করলো।একবার দুবার তিনবার চারবারের মাথায় ফোন তুললো ইশিতা,অজানা নম্বর দেখে সালাম দিয়ে বললো…
“কে বলছেন?”
শ্রীজা গলা খাকরি দিয়ে সালামের উত্তর দিয়ে বললো…
“আমি চারুর ভাবি শ্রীজা বলছিলাম”
ইশিতা শ্রীজার কথা শুনে কিছুটা আওয়াজ করে হেঁসে আবার সালাম দিয়ে হাঁসিমাখা গলায় বললো…
“ওহ্ আপু আপনি,আমি আবার ভেবেছিলাম কে না কে।আজ-কালকার ছেলেপেলেদের কথা তো জানেনই আপু একটা নম্বর পেলেই হলো,বিরক্ত করতে করতে মাথা ধরিয়ে ফেলে একদম।তাই ওমন রুডলি কথা বলছিলাম আরকিহ্ মনে কিছু নিয়েন না আপু,আমি কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?”
শ্রীজার কিছুটা হাঁসি পেলো,এসব বিষয় সে পাড় করে এসেছে এখন ওরা পাড় করছে বিষয়গুলো যেনো পরিবর্তন হয় না,একের পর এক হতেই থাকে।এসব বিষয় এখন শ্রীজার কাছে দুধ-ভাতের মতো,আননোন নম্বর দেখলেই ব্লক।শ্রীজা বললো…
“আরেহ্ চাপ নিও না,ব্লক করে দিলেই হবে রাস্তার ছেলেপেলে এরা,এদের পাত্তা তো দূর কথাই শোনা উঁচিত না।”
“ঠিক বলেছেন আপু,নম্বরগুলো ব্লক করে দিয়েছি।”
“আচ্ছা একটা কাজে ফোন করেছিলাম তোমায়,বিষয়টা গুরুতর সিরিয়াস বলতে পারো।তোমার হেল্প লাগবে আমার,করতে পারবা?”
ইশিতা বললো…
“কি বলেন আপু ইশিতা তালুকদার আপনার কাজে প্রয়োজনে যে দরকারি হয়ে উঠছে সেটাই তার কতো ভাগ্য।”
“মানুষ ভালো পটাতে পারো তুমি।”
বলেই হু হু করে প্রাণখোলা একটা হাঁসি হাঁসলো শ্রীজা।ফোনের অপর পাশে থাকা ইশিতাও বেলকণির সামনে দাড়িয়ে গ্রিলগুলো হাত দিয়ে ধরে হু হু করে হেঁসে বললো…
“আপনাকে যে পটাতে পেরেছি সেটাই আমার ভাগ্য!”
শ্রীজা এবার সময় নষ্ট না করে বললো…
“তুমিও তো চারুর সাথেই জাবিতে আছো না,তুমি চারু,আর নিশিমিতা? ”
“হ্যা নিশিমিতা আমি আর চারু যা কষ্টে টিকেছি জাবিতে ভেবেছিলাম হোস্টেলে থাকবো মা তো কিছুতেই রাজি ছিলো না জাবির জন্য,কি কষ্টে রাজি করিয়েছি আমি।”
“চারু ইদানিং কেমন চুপ হয়ে যাচ্ছে খেয়াল করছো?কি হয়েছে বলতে পারবে?জানো কিছু?ওর কি কোনো ছেলের সাথে রিলেশন বা ব্রেকআপ এমন টাইপের সম্পর্ক আছে?যার কারণে এমনটা হচ্ছে?”
“না না, আমি কলেজ লাইফ থেকে ওকে জানি,তেমন কিছু দেখিনি আমি।তবে নিশিমিতা কে জিঙ্গাসা করে দেখতে পারেন।ওর সাথে চারুর সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ, তাই ওর সাথে কথা বললেই লাভ হবে আপনার।”
“নিশিমিতা মানে নিশির নম্বর আছে তোমার কাছে?শুনেছি ফোন কিনেছে ও,কিন্তু নম্বর নেয়া হয়নি,ওর মায়ের নম্বর আছে আমার কাছে।”
“তাহলে নম্বরটা আমাকে এসএমএস করে দিয়ে দিও।”
“ওকে।”
★★__★★
তুমুল ঝড় বৃষ্টিকে পার করে বাড়িতে এসেছে শরৎ,তাও আবার কাকভেজা হয়ে।পুরো শরীরটা বৃষ্টির পানিতে জবজবা হয়ে আছে।গা থেকে পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।তুমুল বর্ষনের কারণে রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত। ছাতা না থাকায় এতো রাতে বৃষ্টিতে ভিজেই বাড়িতে ফিরতে হয়েছে ওকে।দরজা খুলে শরৎকে এ অবস্থায় দেখে দুটো কথা শুনিয়ে দিতে মন চাইলো শ্রীজার তবে,মনে মনে বেশ বকে নিলেও,বাস্তবে তার ছিলেফোটাকেও বাস্তবিক রূপ দিতে পারছে না।শ্রীজার কথা শোনার অপেক্ষা না করে ইতিমধ্যে শরৎ ফ্রেশ হতে ওয়াশ রূমে চলে গিয়েছে।রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে একটা নাপা পিল খেয়ে নিলো শরৎ।আশে পাশে শ্রীজাকে দেখতে পেলো না।কোথায় গেলো মেয়েটা?আবার চারুর সাথে ঘুমোতে গেলো নাতো?খুব বেশি সাহস হয়েছে,ওকে কিছু না বললেই দুদিন পর পর এসব শুরু করে ও,প্রথমে শরৎ ভাবলো চারুর ঘরে যাবে,এরপর ওর মনে হলো শ্রীজা কোনো কাজেও ব্যাস্ত থাকতে পারে।কাজ শেষ করলে চলে আসবে,।
পেরিয়ে গেলো ১ ঘন্টার মতো সময় তবুও শ্রীজা আসছে না ব্যাপারটা দেখে চিন্তিতো হলো শরৎ,চারুর ঘরে দেখার জন্য পা বাড়াতেই সামনে দেখলো একটা নারীমূর্তি তার সামনে দাড়িয়ে আছে।গায়ে তাঁতের একটা কালো শাড়ি জড়ানো লাল পাড়,এর ওপর লাল লাল সুতা দিয়ে গুটি গুটি ফুল করা।চুলগুলো ছেড়ে দেয়া,চোখের ওপর আইলানার দেয়া,কপালে আইলানারের সাহায্যে একটা কালো টিপের ফোটা বসানো।দেখতে ভালো লাগছে লাল আর কালো চুড়ির মিশ্রনে হাত জোড়া রাঙিয়ে তুলেছে সে,চুড়ির রিনিঝিনি শব্দে পুরো ঘর মেতে উঠেছে,মাতাল করা পায়ের নুপূরের শব্দ।ঠোঁটে লিপবাম দেয়া,ফলে ঠোঁটটা গোলাপী হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে।শ্রীজার কে দুচোখ দিয়ে ভালো করে দেখে নিয়ে ভ্রুকুটি করে এবার ওর মুখের দিকে দৃষ্টিস্থির করলো শরৎ, বললো…
“রাতে এতো সাঁজগোজ করেছিস কেনো?কোথাওতো যাবি না এতো রাতে,কেউ নেই দেখাবার জন্য তাহলে এতো সাঁজ কার জন্য?”
“কেউ নেই কে বলেছে আছে তো!”
শ্রীজা রিনরিনে স্বরে কথাগুলো বললো।
শরৎ শ্রীজার কথা শুনে বললো…
“আছে?কে আছে?”
“গেস করো।”
“কথা বাড়াবিনা শ্রীজা,সোজাসুজি বলে দিবি যা বলার”
শ্রীজা আল্লাদি গলায় বললো…
“আজকের ওয়েদারটা সুন্দর না,একদম রোমান্টি।”
“তো আমি কি করতে পারি?”
শ্রীজার রাগ লাগলো বেশ,লোকটাকি কিছু বুঝে না?আর কিভাবে বোঝাবে এই লোকটাকে ও?ও কি চায়?
“কিছু বোঝোনা তুমি?”
“নাহ্।”
শ্রীজা হুট করেই কেমন সাহসী হয়ে গেলো,টিপটিপ পায়ে এগিয়ে গেলো শরৎয়ের সামনে।কালো রঙের শার্টের কলারটা টেনে ধরলো,আচমকা এমন আক্রমণে শরৎ অবাক হলো শ্রীজা কলার ধরে টান দেয়ায় শ্রীজার কাছে আচমকা গিয়ে পড়লো ও,হুট করেই শ্রীজা দু হাত দিয়ে আকড়ে ধরলো শরৎকে,বুকের বা পাশে একটা হাত রাখলো।একটা হাত কপালে নিয়ে গিয়ে পা উচিঁয়ে দাড়ালো ও হুট করেই শরৎয়ের কপালের মাঝখানটায় ওষ্ঠদ্বয়ের উষ্ণ স্পর্ষে রাঙিয়ে দিলো,ধীরে ধীরে তা বাড়তে লাগলো।সময় এতো দ্রুত এগুচ্ছিলো যে শরৎ কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো না,শুধু একটা জিনিসই সে বুঝতে পেরেছিলো শ্রীজার কান্ডে সে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে,ঠিক কি করবে কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে আচমাকাই শ্রীজাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে নিলো ও,হুট করে চর লাগিয়ে দিলো ঠান্ডা গালদ্বয়ের একপাশে।ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না শ্রীজা,লজ্জায় অপমানে মাথা নুইয়ে দাড়িয়ে রইলো শরৎয়ের সামনে।শরৎ কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না।তবুও নিজেকে কঠোর গম্ভীর গলায় বলে উঠলো…
“তুই যা চাইছিস তা সম্ভব না,কিছুতেই না।”
শ্রীজা কান্নায় গলা ভেঙে এলো,চাপা কষ্ট সহ্য করে কান্নাদের বুকের খাঁচায় বন্ধি করে নিলো ও,চাপা গলায় বললো…
“কিছুতেই না কেনো শরৎ?কেনো আপনি আমার সাথে প্রতিবার এমন করেন?সম্পর্কটা যতোবার এগোতে যায় ততোবার কেনো ভেঙে গুড়িয়ে দেন সবটা?কেনো করেন এমন?আমার অনুভূতীগুলো কি মূল্যহীন শরৎ?আপনি অস্বিকার করতে পারবেন?আপনি আমাকে ভালোবাসি বলছেন?অস্বিকার করতে পারবেন ডিভোর্স শব্দটাকপ আপনিই আমাদের মাঝ থেকে মুছে দিয়েছেন,অস্বিকার করতে পারবেন আপনার হয়ে বাঁচার জন্য আপনি আমাকে প্রশ্রুতি দিয়েছেন,অস্বিকার করতে পারবেন নির্মম সত্যগুলো?আদেও পারবেন?”
শরৎ কিছু বললো না,চুপ করে রইলো।শ্রীজার উন্মাদতা যেনো বাড়তে লাগলো ক্রমশই, শ্রীজা শরৎয়ের কলার চেঁপে ধরলো বললো…
“আপনি আপনি একটা মিথ্যেবাদী, যখন এ সম্পর্কের কোনো মূল্যই আপনার কাছে নেই,তখন আমি এ সম্পর্ক থেকে মুক্তি চাই আটকে রাখতে পারবেন না আপনি আমাকে।পারবেন না,আপনি যদি চান বাকিটা জীবন আমি আপনার সাথে কাটাবো না,তখন কাটাবো না আমি,অন্যকেও ভালোবাসার ক্ষমতা আমার আছে বারে বারে আপনার নিষ্ঠুর প্রনয়ের আগুনে পোড়ার চাইতে,অন্যকে ভালোবাসাই ভালো,আমি মুক্তি চাই আর এসব জঞ্জালে ফেসে থাকতে চাইনা,একটা ভিত্তিহীন মানুষ কি করে একটা সম্পর্ক সুষ্ঠভাবে গড়ে তুলবে?আপনার মতো আপনার সম্পর্কটাও ভিত্তিহীন।”
শরৎ উত্তর দিলো না চুপটি করে বারান্দায় গিয়ে বসে পড়লো,আকাশে চাঁদের আলো জ্বল জ্বল করছে সঙ্গী হিসেবে আছে অজস্র তারকারাশি।আকাশের চাঁদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছে শরৎ,ভাবছে কেনো সে এসব করছে?সে নিজেই মানুষটার কাছে যাচ্ছে ইকটু ইকটু করে,আবার মানুষটা যখন পরিপূর্ণভাবে তার কাছে যেতে চাইছে যখন তাকে সে অপমান করছে দূরে ঠেলে দিচ্ছে বারে বার।কি করা উচিঁত তার?তার কি উঁচিত নয় শ্রীজার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া?তার কি উঁচিত নয় মেয়েটার ইচ্ছেগুলোকে পূর্ণ করা?
শরৎয়ের ভাবনার মাঝেই ধপ করে বারান্দার দরজায় ধাক্কা দিলো শ্রীজা।ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো শরৎয়ের কাছে।
গালদুটো হাত দিয়ে আকড়ে ধরে আচমাকাই নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা শরৎয়ের ওষ্ঠযুগল বন্ধি করে হিংস্র আক্রমণ চালালো।সবটা রাগ ঝেড়ে দিলো শরৎয়ের ওপড়।শরৎ বাঁধা দিলো না দু হাতে দিয়ে শ্রীর এলোমেলো চুলোগুলোতে হাত বুলাতে লাগলো।বেশ কিছুক্ষন পর শরৎয়ের কর্ণপথে শ্রীজা নামক মেয়েটা ফিসফিস করে বলে উঠলো…
“শ্রীজা নিজের অধীকার ছিনিয়ে নিতে জানে,শ্রীজা নরম তবে দুর্বল নয়।”
শ্রীজার কথা শুনে হেঁসে ফেললো শরৎ,বললো…
“ওহ্ আচ্ছা,বেশ রোমান্টি মুডে আছেন আপনি,কি ব্যাপার বলুন তো?”
“কোনো ব্যাপার না,আমি জানি না কি ব্যাপার।”
শরৎ এবার খুব কাছে গিয়ে দাড়ালো শ্রীজার কানের সামনে গিয়ে ফিসফিস করে বললো…
“বা কি টা তাহলে আমি জানিয়ে দি?”
এতোক্ষণ নির্লজ্জের মতো কর্মকান্ড করে,এখন বেশ লজ্জায় পড়ে গেলো শ্রীজা,হালকা লাল গোলাপি আভায় রাঙিয়ে উঠলো গালদ্বয়,চাঁদোর স্বচ্ছ উজ্জল আলোয় স্পষ্ট তা দেখতে পেলো শরৎ।বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো প্রিয়তমাকে।
বৃষ্টি মেঘের আগমনে চাদঁ মামাকে আর দেখা গেলো না সে ফের লুকোলো আকাশের বুকে,যেমন করে লুকিয়ে পরেছে শ্রীজা শরৎয়ের বাহুডোরে,মাজ রাতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হতে লাগলো।বাড়তে লাগলো ভালোবাসা,পূর্নতা পেলো আরেকটি ভালোবাসা।ভালোবাসাময় একটি রাত।
#চলবে_