অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-৪২+৪৩

0
597

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৪২ (তবে কি বিচ্ছেদ?)
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে অনুভব করতেই,ঘুম ভেঙে গেলো শরৎয়ের।ঘুম থেকে উঠে আশ-পাশ পর্যবেক্ষণ করে দেখলো সে বেলকণিতে শুয়ে আছে,কাল রাতে সে বেলকণির দরজা লাগিয়ে যে নিজের ভুল সম্মন্ধে আফসোস করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।আর বাকিটা?বাকিটা তার স্বপ্ন ছিলো?নাকি ভ্রম?যদি তা বাস্তব হতো অবশ্যই দরজাটা খোলা থাকতো,আর শ্রীজাও তার সাথেই থাকতো,যেহুতু কোনোটাই তার হাতে নেই বা বাস্তবিক নয় সেহুতু এটা তার স্বপ্নই ছিলো।শরৎ ভাবলো শ্রীজা হয়তোবা রাতে কান্না করতে করতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছে তার তাকে সরি বলা উচিঁত।এই ভেবে দরজার ছিটকিনিটা খুলে পাশের রুমে প্রবেশ করতেই সে চোখ বুলিয়ে দেখলো ঘরে শ্রীজা নেই,হুট করেই তার বুকটা ধক করে উঠলো কোথায় গেলো মেয়েটা?এ ঘরেই তো ছিলো।চারুর ঘরে গেলো,এই ভেবে হয়তোবা সে ও ঘরেই আছে।কিন্তু কে জানতো শরৎ নিরাশ হয়ে ফিরবে?শ্রীজা কোথায় চারুকে জিঙ্গেস করতেই চারু বললো…

“ভাবি তো কাল রাতেই বেরিয়ে পড়েছে,আমি ঘুমিয়ে ছিলাম আমাকে ডেকে বললো কোথায় যাচ্ছে দেখলাম পরিপাটি হয়েই যাচ্ছে কিন্তু ঝড় বাদলের রাতে কোথায় যাচ্ছে জিঙ্গেস করতেই আমাকে ধমক দিলো,আর এমনিতেও ভাবি রেগে ছিলো তাই বেশি কথা না বাড়িয়ে দরজা লাগিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়েছি।কেন তোমাকে বলে যায়নি?”

উত্তর দেয়ার মতো কিছু খুঁজে পেলো না শরৎ।কোথায় গিয়েছে মেয়েটা?এতো রাতে কোথায় বেরিয়ে গেলো?শহর অঞ্চলে রাত দশটার পরই মেয়েরা ভয়ে বের হয় না।তারপর বৃষ্টির রাত ১১ টার পরেই বেরিয়েছে নিশ্চই।শরৎ দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে একটা শার্ট পড়ে নিলো উদ্দেশ্য শ্রীজাদের বাড়িতে যাওয়া।শরৎ তার মানের নম্বরে ফোন করতে করতে চারুকে বললো…

“আমি শ্রীজার বাড়িতে যাচ্ছি আজ নাও আসতে পারি,নিজের খেয়াল রাখিস আর বাজার সব করাই আছে রান্না বান্না করে নিস,কিছু লাগলে ফোন বা টেক্স করবি।”

বলেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। চারু কিছু বুঝে উঠতে পারছে না এই দুজনের হয়েছেটা কি?কাল ঘুমের মাঝে ঝগড়ার কিছুটা আভাস পেলেও ঘুমের জোড়ে আর উঠতে পারেনি চারু,আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলো।কোথায় গেলো শ্রীজা কাউকে না জানিয়ে?আবার শরৎ শ্রীজাদের বাড়িতেই বা কেনো গেলো?মনোমালিন্য হলো নাকি আবার?
এসব চিন্তা করতে করতেই দরজা আটকে ঘরে চলে গেলো চারু।

_________

নিজেকে কেমন যেনো এলোমেলো লাগছে শরৎয়ের, মায়ের কাছে ফোন করে জানতে পারলো সেখানে শ্রীজা নেই।রিদা,আঁচল,নুপরকে পর্যন্ত ফোন করেছে শরৎ।আঁচল, নুপূর, রিদা তিন জনের এক জনের বাড়িতেও শ্রীজা নেই কোথায় থাকতে পারে?কোথায় যাওয়ার আছে ওর?বর্তমানে সে দাড়িয়ে আছে শ্রীজাদের ফ্লাটের সামনে কর্নিংবেল চেঁপেই যাচ্ছে সেই কখন থেকে কিন্তু কারো আসার নাম-গন্ধ পর্যন্ত নেই।বেশ কিছুক্ষন পর দরজা খুললেন শ্রীজার মা।শরৎকে দেখলে প্রতিবারই একটা মিষ্টি করে হাঁসি দেন তিনি,ভাগ্নের সাথে মেয়ের জামাই নামক সম্পর্কটা যোগ হয়েছে যে।কিন্তু এবার শরৎতকে অবাক করে দিয়ে তিনি আর হাঁসলেন না,মুখটা পানশে করে রেখে শরৎ কে ভেতরে আসতে বলে চলে গেলেন।শরৎ ঘরে এসে হাত মুখ ধুয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো সে জানে শ্রীজা এখানে ছাড়া কোথাও থাকবে না।শ্রীজার মা হাতে করে মিষ্ট আর ফল-মূলের ট্রে নিয়ে এলেন।টেবিলের ওপর রাখলেন।আর সাথে দিলেন লেবুর শরবত ঘরে আপাততো টেং নেই,এই ভর দুপুরে চা বা কফি দেয়াটাও বেমানান, লোবুর শরবতটা খেলে মন শরীর দুটোই সতেজ থাকবে তাই মুলতো দেয়া।
শরৎ খেয়াল করলো শ্রীজার মায়ের চোখে মুখে কিছুটা ভয় আর অনেকটা গম্ভীরতা প্রকাশ পাচ্ছে,এসবকে পাত্তা না দিয়ে শরৎ শ্রীজার মায়ের মন রক্ষার জন্য শুধু শরবতটা খেলো।তার এসব খাওয়ার রুচি নেই এখন,মনে একটা অজানা ভয় ঢুকে আছে।শরৎ শ্রীজার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো, ঘরে প্রবেশ করে বুঝতে পারলো এ ঘরে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই,শরৎ ভাবলো শ্রীজা বোধয় বেলকণিতে আছে। অভিমান করে নিজেকে লুকিয়ে রাখার জন্য বেলকণি বেছে নিয়েছে,শরৎ এই ভেবে হাঁসলো কিছুটা।ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো বেলকণির দিকে, আশ্চর্য বেলকণিতেও শ্রীজা নেই তাহলে কোথায় ও?
শরৎ এসব ভাবতে ভাবতে শ্রীজার মায়ের ঘরে প্রবেশ করলো এই আশায় হয়তো শ্রীজা সে ঘরে আছে ভেবে।শরৎ ঘরে প্রবেশ করতেই শ্রীজার মা তাকে প্রশ্ন করলেন…

“কাকে খুঁজচ্ছো?শ্রীজাকে?”

শরৎ হ্যা বোধক ইচ্ছা প্রকাশ করতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।

শ্রীজার মা রুক্ষ কন্ঠে উত্তর দিলেন…

“শ্রীজা নেই,।”

শরৎ অবাক হয়ে বললো…

“শ্রীজা নেই মানে?”

“তোমার স্ত্রীকে তুমি দেখে শুনে রাখতে না পারলে তা তোমার ব্যার্থতা শরৎ,আমাদের নয় নিজে দায়িত্ব নেবার সময় ভেবে চিন্তে নিতে হয়। ”

শরৎ শ্রীজার মায়ের কথায় কিছুটা ধাক্কা খেলো,কিসব বলছেন উনি?

শরৎয়ের মনে হলো,আর যাই হোক এ বাড়িতে শ্রীজাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।তাই এখানে থেকে কোনো লাভও নেই,বেরিয়ে পড়লো শরৎ,তার
মাথায় এখন আকাশসম চিন্তা কিভাবে সে শ্রীজাকে খুঁজে পাবে?এসব ভাবতে ভাবতেও শ্রীজার ফোনে কল করলো শরৎ,মারাত্নক বিরক্তকর একটা বাক্য শুনে ফোনটা কেটে দিলো সে,শ্রীজার ফোন বন্ধ।এখন কি করবে সে?কোথায় খুঁজবে মেয়েটাকে?কি করবে সে?

_____🥀_____

ড্রইংরুমে খাবার টেবিলের সামনে থাকা কাঠের একটা চেয়ারে উদাস হয়ে বসে আছে শ্রীজা।তার থেকে কিছুটা দূরে সোফায় বসে বসে নিউজ দেখছে অনু,মিহাদ বাজার করতে বাহিরে গিয়েছে তার বউয়ের একমাত্র বোন এসেছে বাড়িতে তাও প্রথমবার ভালো করে আপ্যায়ন না করলে হবে?অনুর শ্বাশুড়িমা রান্নাঘরে ইলিশ পোলাও করছেন সাথে ভাপে ইলিশও রয়েছে যখনি শুনেছেন শ্রীজা ইলিশ পছন্দ করে তখনি আনিয়েছেন তিনি।সাথে আরো অনেক রকম খাবার তৈরি করছেন।মিহাদটাও আসছে না গোলাপ জলটা রেজালাতে না দিলে ঘ্রাণতো ভালো হবে না।
অনুর শ্বাশুড়ি রান্না বসিয়ে দিয়ে এসে চেয়ারে বসলেন পানি খেয়ে নিয়ে শ্রীজার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললেন…

“এমাআআ ওমন উদাশ হয়ে বসে আছো কেনো? ফ্রুট কাসটার্ডটা কি ভালো হয়নি?আমি তো খেলাম তেমন খারাপ হয়নি,শেষ করছো না কেনো দ্রুত শেষ কর।”

এসব কথা বলেই আবার রান্নাঘরে চলে গেলেন তিনি।অনু চ্যানেলটা চেঞ্জ করে বললো…

“মন খারাপ?”

শ্রীজা হাসঁলো বললো…

“ওই ইকটু ইকটু।।”

“ঝগড়া হয়েছে শরৎয়ের সাথে?বা কথা কাটাকাটি?”

শ্রীজা মাথা নুইয়ে ফেললো,বললো…

“হ্যা কিছুটা।”

অনু বললো…

“তাইতো বলি মা কেনো এতো রেগে আছে?হুট করেই বা কেনো তোকে বেশ কিছু দিনের জন্য আমার কাছে রাখতে চাইছে।”

“তোমার সমস্যা হলে আমাকে বলে দাও,আমি চলে যাবো, থাকার যায়গায়র অভাব হবে না নিশ্চই আমার।”

অনু রেগে গেলো,ধমকের স্বরে বললো…

“তোকে আমি বলেছি কখনো?বেশি বুঝিস কেনো এতো?”

শ্রীজা চুপ করে রইলো তার চোখে পানি টলটম করছে।বুকের মাঝে বন্ধি থাকা কষ্টগুলো বেরিয়ে আসার জন্য যেনো যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। সে আর কান্না আটকে রাখতে পারছে না।সামন্য উত্তরটা দেবার মতোও শক্তি নেই,কান্নায় গলাটাও ভেঙে আসছে নিশ্চই,এই স্বরে কথা বললে যে কেউ বুঝে যাবে যে সে কাঁদছে।কিন্তু সে কেনো কাঁদবে সে তো কাদঁতে চাইছে না।যে তাকে চায় না,যার তার জন্য কোনো মায়া নেই,কোনো ভালোবাসা নেই, নেই কোনো পিছুটান তার কথা ভেবে কিসের এতো কান্না?সে তো কান্নার জন্য সব ফেলে আসেনি।যে যাই করুক যতো যাই বলুক সে আর ও বাড়ি ফিরে যাবে না।তার মনে হয় সত্যিই শরৎ তাকে চায় না,তা না হলে কেনো বারে বার এভাবে দূরে ঠেলে দেয়?যেখানে সম্পর্কের মূল্যটা মূল মানুষটাই দিচ্ছে না সেখানে আবার কিসের সম্পর্ক?এক পাক্ষিক কি আদেও কিছু হয়?না এক পাক্ষিক ভাবে কোনো সম্পর্ক এগিয়ে যেতে পারে?পারে না অব্যশই। সে আর এসব টানতে চায়না,তাই সবটা জানিয়ে এসেছে বাবাকে বছর কেঁটে গিয়েছে তাও কেনো এই সম্পর্কের প্রতি এতো অবহেলা শরৎয়ের?শরৎ বলেছিলো তার সময় লাগবে,তবে বলেনি এতোটা লাগবে,আর তার নেয়া সময়গুলোই যে শ্রীজাকে আঘাত করবে বার বার সেটাও বলেনি।

#চলবে_

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_৪৩
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

প্রহর গুলো যেনো বিষাক্ত হয়ে উঠছে।স্মৃতিগুলো বারে বার দৌড়-ঝাপ করছে মস্তিষ্কের আনাচে কানাচেতে,ধমকা একটা ঝড় যেনো এলোমেলো করে দিয়েছে শরৎয়ের সব কিছু।কোনো কাজে মন বসাতে পারছে না সে।বেশ কদিন ধরে প্রচন্ড জ্বর মাথা ব্যাথা আর সর্দিতে ভুগছে শরৎ।শরীরের অবস্থা বর্ণনা করা মতো নয়,বলিষ্ঠ দেহ টা জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে গিয়েছে, শরীরের ওজন কমে ৬৭ কেজি যেখানে শরৎ ৭৫ কেজি ওজনের এক তাগড়া যুবক।চুলগুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে রয়েছে চোখ দুটো প্রচন্ড লাল।শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ছাড়িয়েই যাচ্ছে বোধয়।শরীর চেয়ে মনের অবস্থা করুন,যা প্রকাশ করার মতো না, নাইবা কাউকে দেখানোর মতো।কষ্টগুলো জমাট বেঁধে যাচ্ছে বুকে,মাঝে মাঝেই হুট হাট ব্যাথা শুরু হয়।শরৎ জানে শ্রীজার মা বাবা মানে তার ফুপি এবং ফুপাই শ্রীজাকে কোথায়ও একটা পাঠিয়ে দিয়েছে,হয়তোবা এমন স্থানে পাঠিয়েছে যে স্থান শরৎয়ের কল্পনায়ও আসবে না।বেলকণিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে শরৎ,মন খারাপ হলে নাকি আকাশ দেখে দেখে প্রভুর কাছে কষ্টগুলো বলা সুন্নত, তাতে নাকি কষ্টটা অনেকাংশে কমে আসে।তার কষ্ট কেনো বাড়ছে?সৃষ্টিকর্তা কেনো তার আর্জি মেনে নিচ্ছে না?কেনো ফিরিয়ে দিচ্ছে না শ্রীজা কে?তবে কি প্রভুও তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে?প্রভুর তো জানার দরকার ছিলো সে কোন অবস্থায় আছে।সে শ্রীজাকে ভালো রাখতে পারে না সেটা সত্যিই তার চরম ব্যার্থতা চরম।

“ভাইয়া কি করছো?”

কথাটা বলেই হন্ত-দন্ত হয়ে বেলকণির দিকে দৌড়ে এলো চারু।শরৎয়ের হাত কেঁটে রক্ত গড়িয়ে পরছে।ফল কাঁটার ধারালো ছুড়িটা ইচ্ছে করেই হাতের সাথে চেঁপে ধরেছিলো সে,তার ব্যার্থতাগুলো মাশুল নিজের কাছে নিজেই দিচ্ছিলো।কেনো বারে বার শ্রীজাকে নিজের অজান্তেই কষ্ট দিয়ে ফেলে?সত্যিই তো শ্রীজার যোগ্য নয় সে,শ্রীজা মেয়েটা খুব ধৈর্যশীল বলেই তার সাথে এতোটা দিন থেকেছে্,শরৎ তাকে কাছে টেনেও দূরে ফেলে রেখেছে তখনও টু শব্দটি করেনি শ্রীজা চুপচাপ সহ্য করেছে্।এবার বোধয় আঘাতের পরিমানটা বেশিই হয়ে গিয়েছিলো তাই শ্রীজা চলে গিয়েছে সব মায়া ভুলে।আদেও কি সে সব ভুলতে পেরেছে?যে মানুষটা ধীরে ধীরে নিজের অজান্তেই এতো কিছুকে আগলে রেখেছে,ওর মতো একটা মানুষকে ভালোবেসেছে সে কি এতো সহজেই সব ভুলে যাবে?এতো সহজে?

“পাগল হয়ে গেছো ভাইয়া?তুমি এসব কি করছো?ক্লাস ৯-১০ এর অবুঝ বালক না তুমি এমন করে আবেগের বশে নিজের ক্ষতি করবে।তুমি তোমার ক্ষতি করলে ভাবি কে কে সামলাবে?ভাবিকে বোঝার চেস্টা করো ভাইয়া,মানুষটা তোমায় চরম ভালোবাসে,একটা কথা জানো ভাইয়া?যারা আমাদের ভালোবাসে তাদের আগলে রাখা উচিঁত, কারণ তারা আমাদের ছোট ছোট খুশি এনে দেবার জন্য অকাল পরিশ্রম করে।স্বর্ণ খুজঁতে গিয়ে হিরেকে হারিয়ে ফেলো না।ভাবি হিরা, সেই হিরা যে সব-সময় আলো দেয়,তার আলো দিয়ে ভালোবাসার মানুষগুলোর জীবনকে আলোকিত করে তোলে,তাকে কয়লা মনে করছো?কয়লাও তো কম দামি নয় শরৎভাই কয়লা থেকেই কিন্তু হিরার উৎপত্তি হয়।”

শরৎয়ের হাতে বেন্ডেজ করে দিতে দিতে কথাগুলো বললো চারু।শরৎ সব শুনলো ঠিকই কিন্তু কিছু বললো না।তার মুখে এখনো গম্ভীর্যতা বিরাজমান।চারু একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে চলে গেলো।সব কিছু ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে।কেউ ভালো নেই,সবাই সব বুঝচ্ছে, সবার ভালোবাসা বুঝচ্ছে তবে অসময় অবেলায়,অসময় আর অবেলায় এই মানুষগুলোর আগমন যেনো সব এলো-মেলো করে দিচ্ছে।

__________

অনুদের বাড়ির গেস্টরুমে শুয়ে শুয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছে শ্রীজা।আজ এতোগুলো দিন হয়ে গেলো শরৎয়ের কোনো খোঁজ নেই,একটিবারের জন্যও শরৎ শ্রীজাকে খুঁজতে এলো না,একবারের জন্যও শ্রীজার সাথে যোগাযোগের চেস্টা করলো না,ফোনটা নাহয় তার মা তার কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছে,একটা সপ্তাহ্ কেঁটে গিয়েছে শরৎ যদি চেস্টা করতো অবশ্যই তার খোঁজ পেতো সে।হয়তোবা তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে শরৎয়ের জীবনে,আচ্ছা শ্রীজার প্রয়োজন ছিলো কখনো শরৎয়ের?কখনোই ছিলো না,সে তো পড়ে আছে তার প্রাক্তনকে নিয়ে যে মানুষটা তাকে ভালোই বাসতে পারলো না, তাকে নিয়ে শরৎয়ের কতো-শতো অনুভিতি কতো ভুল ভ্রান্তি।
আচ্ছা ভালোবাসা ভালো লাগার অনুভুতিরা এমন কেনো হয়?যার ওপর নিজের জোড় থাকে না,জোড় থাকে শুধু মনের,সে মনটাই মানুষটাকে নিয়ন্ত্রন করে,একটা সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে দিতে পারে।কেউ জোড় করে কাউকে ভালোবাসতে পারেনা কারো প্রতি অনুভুতি জাহির করতে পারে না।ভালোবাসা, পরিস্থিতি,অনুভুতি,ভালোলাগা সব অদ্ভুত ওরা নিজেরাই নিজেদের নিয়ন্ত্রক, এই ভালোবাসায় না দোষ আছে শ্রীজার নিজের,নাইবা অনুর আর নাইবা শরৎয়ের,তারা ভালোবেসেছে ঠিকই ভালোবাসার চেস্টা করেছে ঠিকই তবে ভুল সময় ভুল মানুষদের।এসব ভেবে ভেবে আনমনে চোঁখের পানি ফেলতে লাগলো শ্রীজা।মাথার ওপর ফ্যানটা ঘুরছে সেটার দিকে তাকিয়ে কতো-শতো ভাবনা তার।আজ বাবাকে কেমন অচেনা লাগছে প্রিয় বাবাটাও অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে,তার মাতো নরম সে শুনেছে শ্রীজার মাকে তার বাবা জোড় গলায় বারণ করেছে শরৎকে কিছু না জানাতে।ফোন বেঁজে উঠলো আচমকাই,ফোনটা হাতে নিয়ে কানের সামনে ধরলো শ্রীজা,চোখের পানি মুছে গলা ঝেড়ে বললো…

“হ্যা মা বলো….”

শ্রীজার মা বললেন…

“কেমন আছিস তুই?ও বাড়িতে কোনো অসুবিধে হচ্ছে নাতো?”

শ্রীজা হাঁসলো,ব্যাঙ্গ করে বললো…

“আর ভালোথাকা! তোমরা আমাকে ভালো থাকতে দিলে কই?”

শ্রীজার মায়ের মন নরম হয়ে এলো,নিজেকে বেশ অপরাধী মনে হচ্ছে,উনি ভাবছেন এতোবড় সিদ্ধান্তের কথা কি করে মেয়েকে জানাবেন?যেখানে মেয়ে এখনই এতো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে…

“তুই এতো কঠিন করে কথা বলিস কেনোরে মা?”

“সত্য শুনতে মাঝে মাঝে কঠিনই মনে হয়,মিথ্যেরা তো সত্য মানতে পারে না, কথাটা নিশ্চই অজানা নয় তোমার।”

শ্রীজার মা শুনলেন মেয়ের কথা,তারপর নিজের স্বামীর সিদ্ধান্তের কথা জানানোর আশায় মেয়েকে বললেন…

“শ্রীজা…”

মায়ের কথা শুনে শ্রীজার মনে কিছুটা খটকা লাগলো,তার মা কখনো এভাবে তার মেয়েকে লম্বা স্বরে এক শব্দে সম্মোধোন করেন না।আর যখনই করেন তখন কোনো না কোনো বিশেষ কারণ থাকে।শ্রীজাকে কিছু বলতে না দিয়ে তার মা বললেন…

“তোর বাবা ঠিক করেছেন।”

শ্রীজার কিছুটা ভয় হলো,সে জিঙ্গেস করলো…

“কি ঠিক করেছে?”

“তোর আর শরৎয়ের ডিভোর্সয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোর বাবা,পেপার্স সব তোর কাছে কাল পাঠিয়ে দিবে বলছে,তুই সই করে দিস তাহলেই হবে।”

শ্রীজার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।কিসব বলছে তার মা?ভেতরকার কষ্টগুলো যেনো আরো তাজা হয়ে উঠছে,রাগে রূপান্তরিত হচ্ছে কষ্টরা এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো ফোনটা আছাড় দেই পরেই মনে পড়লো এটা তার দির বাটন ফোন আছাড় দিলেও পরে যদি কথা শুনতে হয়।
তার অবাক লাগে এসব ভেবে তার পরিবারের মানুষগুলো ঠিক কিভাবে নিজের সিদ্ধান্তগুলো তার ওপর চাপিয়ে দেয়।তার কি কোনো মূল্য নেই?তার কি ইচ্ছে নেই না সে ইচ্ছেহীন?২২ বছরের যুবতী সে,তার ভালো সে বোঝেনা এমনটাও নয়।তার মা বাবা তার ভালো বুঝতে গিয়ে ঠিক কতোটা খারাপ করে দিচ্ছে তা সে তিলে তিলে টের পাচ্ছে।শ্রীজার মা আবারও বললেন…

“আমি আর তোর বাবা কয়েকটা ছেলে দেখেছি,শরৎয়ের চাইতোও হাজারগুণে ভালো।পাত্রগুলোর ছবি আমি তোকে পেপার্সের সাথে দিয়ে দিবো,যেহুতু ফোন নেই সেহুতু হাতেই দিবো।আর…”

শ্রীজা আর কিছু বলতে দিলো না।রাগ দমন করতে পারলো না,চিৎকার করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো…

“এনাফ…,অনেক হয়েছে,এবার থামো।তা না হলে আমি পরে যা করবো,তা তোমরা থামাতে পারবে না।অনেক করেছো এতো ভালো করতে হবে না তোমাদের।তোমাদের মান-সম্মান, তোমাদের সমাজে উঁচু করে বাঁচা,তোমরা বাবা-মা তোমরাই সব,তোমরাই সব ভালো বোঝো।এসব অনেক ভেবেছি আর না,অনেক বেশি ছেলে-খেলা করে ফেলেছো এবার থামো।আমি আর শরৎভাই দাবা খেলার কোনো গুটি নই,যখন তখন ধরে বিয়ে দিয়ে দিবে আর যখন তখন ডিভোর্স করাবে।কাকে দোষারপ করতে চাইছো?শরৎভাইকে?তার অজান্তে তার স্ত্রী বদল করা হয়েছে,সে মানুষটা তার ভালোবাসার মানুষ ছিলো,সে পুরুষ সেও ভালোবাসতে জানে,ভালোবাসা প্রকাশ করতে জানে।কিন্তু ভালোবাসা হারিয়ে পাগলামি করতে জানে না।সব দোষ তোমাদের,আর তোমাদের সিদ্ধান্তের আমার ওপর আর কিছু চাপাতে চাইলে…

#চলবে_