#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_21
এলাম বাজতেই ঘুম থেকে উঠে পরে অনিন্দিতা। আড়মোড়া ভেঙে এলাম স্টপ করে। মনে মনে ঘুম থেকে উঠার দোয়া পরে নেয়। আজ শরীর টা বেশ ফুরফুরে। নামাজের পর দুই ঘন্টা ঘুম হয়েছে। মাঝে কেঁটে গেছে দুই বছর। অনিন্দিতা যথাসম্ভব নিজেকে পরিবর্তন করছে। নির্ভীকের নাম ই উচ্চারন করে না সে। পুরনো ডায়েরী টা টেবিলের কোনো এক কোনে পরে আছে। কখনো ইচ্ছে হয় না লেখার। ডায়েরী টা কেমন অসমাপ্ত হয়ে আছে। কয়েক পাতা লিখলেই শেষ হয়ে যাবে। অথচ লেখালেখির আগ্রহ পায় না মেয়েটা। হঠাৎ করে ডায়েরীর কথা মনে পরে যাওয়ায় বিদ্রুপ মাখা হাসি তে মত্ত হয় অনিন্দিতা। সমস্ত পিছুটান ফেলে এগিয়ে যায় নতুন আলো তে। ফাইনাল এক্সাম এর লাস্ট ডে আজ। সারাক্ষন পড়াশোনা তে ব্যস্ত থাকায় ঠিক মতো ঘুম হয় নি। প্যাক্টিকাল এক্সাম হওয়াতে আজ ইচ্ছে মতো ঘুমিয়েছে। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে রেডি হতে থাকে অনিন্দিতা । কাবাড মেলে দিয়ে চিন্তায় পরে যায় কোন ড্রেস পরবে। একটা একটা করে দেখে। হঠাৎ চোখ যায় পার্পল রঙের থ্রি পিসে। কিছু দিন আগে পৃথিবী গিফ্ট করেছে এটা। ড্রেস টা পরা হয় নি। অনিন্দিতার ইচ্ছে হয় না পরার। পরক্ষনেই সমস্ত ধ্যান ধারনা বদলে ফেলে। একটা মানুষের সাথে জড়িয়ে থাকা রঙ কে কেন ইগনোর করবে ওহ ?
জেদ ধরে এই রঙের ড্রেস টাই পরে। ডাইনিং এ আসতেই শাহানা বলেন
” আজ কেই তো লাস্ট এক্সাম তাই না ? ”
” হুমম। কেন বলো তো ? ”
” সারাক্ষন পড়াশোনায় ডুবে থেকে প্রিয় মানুষদের ভুলে যাস। ”
” কি বলছো কিছুই বুঝলাম না। ”
” এতো বুঝে কাজ নেই। সাবধানে যাস , আর শোন আসার সময় এক বক্স চকলেট নিয়ে আসবি। ”
” এই বয়সে এসে বাচ্চা হতে ইচ্ছে হলো বুঝি ? ”
শাহানার দৃষ্টি তে বিরক্ত । ফিঁচেল হাসে অনিন্দিতা। এক টুকরো রুটি মুখে পুরে শাহানা কে জড়িয়ে বলে
” আসছি আম্মু। দোয়া করো , আর আব্বু কে দেখে রেখো। ”
” হুমম। ”
” সময় মতো ঔষধ দিও কেমন। ”
” আচ্ছা দিবো। ”
” আর শোনো আব্বুর খাবারে তেল ঝাল কম দিও। ”
তেঁতে উঠেন শাহানা । টেবিলে ধুম করে গ্লাস রেখে বলেন
” আশ্চর্য । আমাকে রোজ রোজ বলার কি আছে আমি বুঝলাম না। মানলাম তদের মতো ভারসিটি তে পড়ি নি আমি। তবে অশিক্ষিত তো নই ? এক মেয়ে ফোন করে বলবে আরেক মেয়ে রোজ কানের কাছে এসে একি কথা বলবে। তোর আব্বুর জন্য তোরাই চিন্তা করিস। আমার চিন্তা হয় না ? মানুষ টা দু দু বার হার্ট এট্রাক করেছে আর এই দুই মেয়ে আমাকে চিন্তার বুলি শোনায়। আমি কি তোর আব্বুর যত্ন করি না। ”
” উফফ আম্মু। তুমি এখন আমাদের কে হিংসে করছো। একা একাই বরের যত্ন করবে। আর আমরা চিন্তা করবো সেটা তে ও জেলাসি। ইতিহাসে তোমাদের প্রেম অমর হয়ে থাকবে। ”
” আর একটা কথা বললে মার খাবি অনি।”
কথা টা বলার সময় হেসে ফেলেন শাহানা। অনিন্দিতা ও হাসে। দরজার কাছে এসে বলে
” যাচ্ছি আমি। আর শোনো আব্বুর খেয়াল রেখো। ”
কথা টা বলেই জ্বিভ কাঁটে ওহ। রোজ কার অভ্যাস কি না। শাহানা অবাক চোখে তাকায়। এই মেয়ে কে নিয়ে আর পারা গেলো না।
.
পরীক্ষা শেষ করে বের হয় অনিন্দিতা। বাহ আজ থেকে মুক্তি। মাঝে বেশ অনেক দিন সময় পাওয়া গেল। রেজাল্ট এর পর মাস্টার্স কমপ্লিট করলেই হয়ে গেল। জীবন থেকে একটা ধাপ উত্তীর্ণ। ক্যাম্পাসে সবার সাথে হৈ হুল্লর করে বের হয় অনিন্দিতা। গেটের কাছে আসতেই চোখ যায় আসিমের দিকে। গাড়ি তে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। চোখে সানগ্লাস, হিরো দের থেকে কোনো অংশেই কম নয় ছেলেটা। ছুটে যায় অনিন্দিতা। চার্ট দিয়ে লাগাতার মারতে থাকে। নিজেকে রক্ষা করে আসিম বলে
” আরে মেরে ফেলবে তো। ”
” মারবো না তো কি করবো। এখন আদর করতে বলছো ? ”
” করতেই পারো। আমার কোনো অসুবিধা নেই। ”
” আসিম।”
” আরে চিল। আমি এসেছি তুমি খুশি হও নি ? ”
” না হই নি। ”
” আচ্ছা স্যরি। আসলে বিজনেস এ আটকে আছি। এর জন্যই আসতে পারি নি। সমস্ত চাপ আমার উপর দিয়ে রেখেছে। আমার তো মনে হয় অতি দ্রুত বিজনেস লাটে উঠবো। ”
” মোটে ও না। আঙ্কেল সব ভেবে চিন্তেই দিয়েছেন। এক বছর ধরে বিজনেস সামলাচ্ছো। লাভ ই হয়েছে কোনো ক্ষতি তো হয় নি।”
” সেটা ও ঠিক। ”
” এখন আমার কথা বাদ দাও। আগে বলো এক্সাম কেমন হলো ? ”
” উমম ভালোই। তোমার তো দুই মাস পরেই এক্সাম। পড়াশোনা করো তো নাকি ফাঁকি বাজি , আর আড্ডা বাজি? ”
বা হাতে কলার উঁচু করে আসিম। কলার ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে অনিন্দিতার দিকে চোখ নাচায়। ভ্রু কুটি করে তাকায় অনিন্দিতা। আসিম বলে
” রেকর্ড ভেঙেছে কেউ ? লাস্ট ইয়ার এন এস ইউ তে প্রথম হয়েছি তো ? এবারো ভালো রেজাল্ট হবে। ”
” বাহহ। শুধু ভালো হলে হবে ? এবার প্রথম হতে পারবে না বুঝি। ”
একটু ভাবে আসিম। শুকনো মুখে বলে
” এবার হবে না রেকর্ড। ”
” কেন হবে না। হতেই হবে , না হলে কোনো কথা বলবো না। ”
আসিম কে রেখে হাঁটা লাগায় অনিন্দিতা। পেছন থেকে চিৎকার করে আসিম বলে
” আরে রেকর্ড হবে তো। এর জন্য আজ আমরা এক সাথে চিকেন চাপ খাবো। রাজি ? ”
” রাজি। ”
রাস্তার ধারের দোকানে এসে চিকেন চাপ অর্ডার দেয় অনিন্দিতা। প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছিলো তাঁর। বহু দিন পর চিকেন চাপ খাচ্ছে। খাওয়া শেষে আসিম বলে
” চলো। ”
” কোথায় যাবো ? ”
” হীরের শশুর বাড়ি। ”
” হঠাৎ মামা বাড়ি কেন যাবো। ”
” উফফ অনি। সব ভুলে যাও তুমি। আজ কে অরুর জন্মদিন সেটা ও মনে নেই। ”
” উফফফস। এর জন্য ই আম্মু আমাকে চকলেট নিতে বলেছে। ইসস কতো টা দেরি হয়ে গেল। ”
” দেরি হয় নি। আন্টি আর আঙ্কেল অনেক আগেই চলে গেছে। এখন তুমি আর আমি যাবো। ”
” ধ্যাত আগে বলবে না। ”
” পড়াশোনা নিয়ে যেভাবে ডুবে আছো। কোনো কথা শুনতে চাও তুমি ? ”
” বেশি বেশি হচ্ছে। ”
” আচ্ছা আর বলছি না। এখন চলো। ”
” আরে আমি ড্রেস নিয়ে এসেছি না কি। আগে বাসায় যাবো তারপর মামা বাড়ি। ”
” আচ্ছা। আসো এবার না হলে সত্যি লেট হয়ে যাবে। সন্ধ্যার আগে পৌছাতে হবে তো। ”
” কিচ্ছু লেট হবে না। তোমার এরো প্লেনের যে স্প্রিড। ”
গাড়ির দিকে তাকায় আসিম। সত্যি গাড়ি টার গতি বেশ ভালো। নতুন মডেলের বেস্ট ডিজাইন করা।
বাসায় আসে অনিন্দিতা। আসিমের হাতে কফি মেকার ধরিয়ে দেয়। আসিম বলে
” এটা দিয়ে কি হবে ? ”
” কফি বানাবে। ”
” আরে আমি এখন কফি খাবো না। ”
” তোমাকে খেতে বলি নি তো। আমার জন্য বানাতে বলেছি। ”
” এহহ ? ”
” হ্যাঁ মিস্টার আলসে। দ্রুত কফি বানান আমার জন্য। আমি রেডি হয়ে আসছি। ”
অনিন্দিতা চলে যায়। আসিম হাসে , এ যেন ভিন্ন রকমের অনিন্দিতা। দেড় বছর আগে ও কতো টা পাগলামি করেছে মেয়েটা। মেঝে তে গড়াগড়ি খেয়েছে। সারাক্ষন নির্ভীকের নাম উচ্চারন করেছে। পাওয়াফুল ঔষধের জন্য কিছু টা স্থূল হয়ে গিয়েছিলো। তাঁতে ও যেন মেয়েটার প্রতি আকর্ষন কমে নি আসিমের। ভালোবাসা বুঝি এমনি হয়। রূপের পরিবর্তন ও ভালোবাসায় বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে না। পুরনো কথা ভাবতেই গাঁয়ে কাঁটা দেয়। দীর্ঘ সাত মাস ঠিক মতো দু চোখে পাতা এক করতে পারে নি আসিম। হসপিটালে রোজ যাওয়া আসা করতে হয়েছে। তবে একটা কথা বলতেই হয় অনিন্দিতা নিজের পরিবারের সামনে নির্ভীকের নাম কখনো উচ্চারন করে নি। কখনো নির্ভীক কে ছোট হতে দেয় নি। ছেলেটার সম্মান ধরে রেখেছে। হায়রে ভালোবাসা , মানুষ কে কোন পর্যায় নিয়ে যায়।
” এই আসিম। ”
অনিন্দিতার ধমকে চমকে যায় ছেলেটা। বলে
” হ্যাঁ বলো। ”
” কোন রাজ্যে চলে গিয়েছিলে। উঠো , আমি কফি বানাচ্ছি। সারাক্ষন আলসেমি। ”
মাথ চুলকোয় আসিম। অনিন্দিতা কফি কাপ টা এগিয়ে দেয়। আসিমের ভালো লাগে। প্রিয় মানুষ টা কে কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য রয়েছে তাঁর। প্রিয় মানুষ টার সাথে একটা আলাদা সময় কাটানোর অধিকার রয়েছে তাঁর। সব ভালোবাসা বোধহয় এমন প্রাপ্তি পায় না। যেমন টা ওর ভালোবাসা অব্যক্ত হয়ে আছে। তবু ও কিছু টা স্বস্তি তো মিলেছে।
বাঁকা পথে গাড়ি চালাচ্ছে আসিম। যাঁর দরুন বেশ সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে অনিন্দিতা। পড়ন্ত বিকেলে কোনো এক প্রিয় মানুষের বড্ড অভাব। যার হাত ধরে সারা বিকেল টা কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো সেই মানুষ টা আজ কতো দূরে। তাঁর অবস্থান হাজার মাইল দূরে এমন কি মন থেকে ও দূরে সরে গেছে। মাঝে মাঝে হৃদয়ের ফাঁক ফোকর গলে ঢুকে পরে দীর্ঘশ্বাস। অনুভব করায় নিজের শূন্যতা। ব্যস্ত শহরে সবাই কে পাশে পেয়ে ও কাউ কে পায় নি অনিন্দিতা। মন থেকে নির্ভীক কে সরিয়ে দিয়ে ও মনের শান্তি মিলে নি। মিলেছে শুধু দীর্ঘশ্বাস আর ক্লান্তির ছাঁপ। ভালোবাসি বলে চিৎকার করা হয় নি আজ বহুদিন। ডায়েরী মেলে অনিন্দিতা। হঠাৎ করেই দুই বছরের স্মৃতি লিখতে ইচ্ছে হয়। ডায়েরী টা অসাপ্ত রেখে লাভ কি ?
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে