অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-০২

0
1136

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ০২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” আপনি বিবাহিত!” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে আরোশী।

” কি দেখে আপনার মনে হলো যে আমি বিবাহিত?”

” বিবাহিত না হলে বাচ্চাটা কি আকাশ থেকে পড়েছে নাকি বানিজ্য মেলায় বাই ওয়ান গেট ওয়ানে পেয়েছেন।” একটু রেগেই কথাটা বলে আরোশী।

” যদি বলি তাই।” একটু এটিটিউট নিয়ে উওর দেয় আকাশ।আকাশের উওরে একটু থতমত খেয়ে যায় আরোশী।

” আব…আপু কি বাইরে চাকরি করে?না মানে বাচ্চা দেখাশোনা করার জন্য আলাদা মানুষ চেয়েছেন।”

” সেটা আপাতত আপনার না জানলেও চলবে।আপনার কাজ বাচ্চা দেখাশোনা করা তো আপনি বরং বাচ্চা সম্পর্কে জানুন।”

আকাশের কথায় আরোশী কিছুটা অপমানবোধ করে তবে সে সেটা আকাশের সামনে প্রকাশ করে না।আকাশ আরোশীকে কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে এরই মধ্যে একটা বাচ্চা দৌড়ে এসে আকাশের কোলে বসে।

” আহির তুমি চলে এসেছো।স্কুলে তোমার সময় কেমন কাটলো আজ?”

” হুম ভালো।”

” মিস আরোশী এ হচ্ছে আমার ছেলে আহির।এখন কেজি ক্লাসে পড়ে।আহির আন্টিকে হাই বলো।”

” হ্যালো।বাবাই উনি কে?”

” উনি হচ্ছেন আরোশী,আমি তো বাসায় থাকিনা তাই আমি যতক্ষন বাইরে থাকবো আরোশী আন্টি তোমার দেখাশোনা করবে।”

” ও আচ্ছা।” কথাটা বলে আহির খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আরোশী দেখতে লাগলো।আহিরের এভাবে অদ্ভুত ভাবে তাকানো দেখে আরোশী একটু অস্বস্তি বোধ করে।সে পরিবেশটাকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে,

” হ্যালো আহির।কেমন আছো তুমি?”

” ভালো আছি আমি।বাবাই আমি জামাকাপড় চেঞ্জ করতে যাচ্ছি।”

কথাটা বলেই আহির নিজের ব্যাগ নিয়ে উপরে চলে যায়।এতো ছোট বাচ্চার এরকম গোমরা মুখ দেখে আরোহী কিছুটা অবাক হয় কারণ সে বাচ্চাদের দেখাশোনা করছে একবছরের মতো হবে।আজ পর্যন্ত সে যতগুলো বাচ্চা দেখেছে প্রায় সবাই চঞ্চল,হাসিখুশি।এরকম গোমরা বাচ্চা সে আজ পর্যন্ত খুবই কম দেখেছে।

” এই নিন,এইখানে আহিরের সব টাইম টেবিল লেখা আছে।এই নিয়ম ফলো করে আর সব কিছু করবেন।আর হ্যাঁ আপনাকে আমি একমাস অফজার্ভ করবো।একমাস পরে আমার যদি মনে হ্যাঁ আপনি আহিরের খেয়াল রাখতে পারবেন তাহলেই আমি আপনাকে রাখবো।”

” ওকে স্যার।তো আমি কি আজ থেকেই কাজ শুরু করে দেবো?আসলে আমি চাইছিলাম আজকে একটু আহিরের সাথে পরিচিত হয়ে যায়।”

” ওকে ঠিক আছে।আপনি আহিরের সাথে কথা বলে ফ্রী হয়ে নিন,কাল থেকে সকাল ৯ টার মধ্যে চলে আসবেন।আমি এখন আসছি।”

আকাশ টেবিল থেকে ফাইলগুলো নিয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে।আরোশী আহিরের ফাইলটা খুলে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।সব ঠিক আছে কিন্তু আহিরের খাবার দেখে আরোশীর খুবই বিরক্ত লাগে।সে বিরবির করে বলে,

” বুঝিনা বাপু এই বড়লোকেরা কি করে এতো শাকসবজি খাই।কই এরা প্রতিদিন মাছ,মাংস,বিরিয়ানি খাবে তা না এনারা খান শাকসবজি।”

আরোশী ফাইলটা রেখে রান্নাঘরে চলে যায় কারণ স্কুল থেকে এসে আহির নাকি জুস বা মিল্ক শেইক খেয়ে থাকে।রান্নাঘরে এসে আরোশী একটা মেয়েকে দেখতে পায়।কথায় কথায় জানতে পারে মেয়েটার নাম শিলা আর সে তার থেকে কয়েকবছরের বড়।আরোশী আরো জানতে পারে আকাশ নাকি একজন ফ্যাশেন ডিজাইনার।আর আহির খুবই ভালো আর নম্রভদ্র একটা ছেলে।এরই মধ্যে আরোশী কমলার জুস বানিয়ে ফেলে।শিলা থেকে আহিরের রুম কোনটা জেনে আরোশী জুসের ক্লাসটা নিয়ে আহিরের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।

আরোশী প্রথমে দরজাটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে নিলেও পরমুহূর্তেই থেমে যায়।কি মনে করে যেন সে দরজায় নক করে।

” আমি কি ভেতরে আসতে পারি?”

” আসুন।” ভেতরে থেকে আহির উওর দেয়।আরোশী দরজা ঠেলে হাসিমুখে ভেতরে প্রবেশ করে।আহির তখন বিছানায় বসে ড্রইং করছিলো।আরোশী ভেবেছিলো আহিরের রুমটা হয়তো কার্টুন বা এ্যানিমি ক্যারেকটারে ভরা থাকবে,হয়তো সে এখন টিভিতে কার্টুন দেখবে কিন্তু না আহির তো আরোশীর ভাবনার ঠিক উল্টো।আহিরের রুমটা দেখলে কেউ বলবেনা যে এখানে কোন বাচ্চা থাকে,প্রথম দেখাই যে কেউ ভাববে হয়তো এখানে প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ থাকে।

আরোশী জুসের গ্লাসটা নিয়ে আহিরের সামনে এসে দাঁড়ায়।

” কি করছো তুমি আরিহ?”

আহির আরোশীর দিকে না তাকিয়ে উওর দিলো, “ছবি আঁকছি।”

আহিরের কথায় আরোশী একটা গা ছাড়া ভাব এর আভাস পাই।মানে ব্যপারটা এরকম যে আহিরের কোন মাথাব্যথা নেই আরোশীর ব্যপারে।

” এই নাও আহির জুসটা খেয়ে নাও,তুমি তো স্কুল থেকে এসে জুস খেয়ে থাকো।তাই আমি তোমার জন্য নিজের হাতে জুস বানিয়ে এনেছি।”

আহির কথা না বাড়িয়ে আরোশীর হাত থেকে জুসের গ্লাসটা নিয়ে খেলে আবারো গ্লাসটা আরোশীকে ফেরত দিয়ে দেয়।

” আব…আহির আমি কি বসতে পারি?”

” হুম।”

আহির এই শান্ত স্বভাবে আরোশীর কিরকম যেন অদ্ভুত লাগছে।সে চাইছে আহিরের সাথে ফ্রী হওয়ার জন্য কিন্তু আহির তো নিজের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে আছে।

” আচ্ছা আহির আমাকে কি তোমার পছন্দ হয়নি?না মানে তুমি আমার সাথে কথা বলছো না,এড়িয়ে চলছো আমাকে।আমাকে তোমার পছন্দ না হলে মন খুলে বলতে পারো,ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।তোমার আমাকে পছন্দ না হলে বলো আমি স্যারকে বলবো অন্যকাউকে রাখার জন্য।”

” না আন্টি সেরকম কিছু না।”

” তাহলে কথা বলছো না যে?”

” আমার কথা বলতে ভালো লাগেনা।”

” কেন ভালো লাগেনা?আচ্ছা সমস্যা নেই এখন আমি চলে এসেছি।এবার থেকে তুমি অনেক অনেক অনেক বেশি কথা বলবে কারণ আমি অনেক বেশি কথা বলি।আর আমার সাথে যে থাকে সে কথা না বলে থাকতেই পারেনা।আচ্ছা আহির তোমার স্কুলে কয়টা বন্ধু আছে?”

” আমার কোন বন্ধু নেই।” গম্ভীর ভাবে উওর দেয় আহির।আহিরের কথা শুনে আরোশীর ভ্রু-কুচকে যায়।

” বন্ধু নেই কেন?কেউ কি তোমার সাথে কথা বলেনা?”

” বলতে তো আসে কিন্তু আমিই বলিনা।”

” কিন্তু কেন?”

” আমার ভালোলাগা ওসব।আর বাবাই বলেছে স্কুলে বেশি কথা না বলতে,বেশি কথা বললে নাকি মিস খারাপ ভাববে।”

” এই লোকটার কি কোন কনমসেন্স নেই।কিসব শেখাচ্ছে বাচ্চাকে।” বিরবির করে নিজে নিজে বলে আরোশী। ” শোন আহির বাবু,তোমার বাবাই এর কথা ঠিক কিন্তু তাতে একটু ভুল আছে।তোমার বাবাই বলেছে বেশি কথা বললে মিস খারাপ ভাববেন কিন্তু তার মানে উনি এটা বোঝাতে চেয়েছেন যখন মিস পড়াবেন তখন কথা বললে খারাপ ভাববেন।যখন মিস ক্লাসে থাকবেনা তখন তো তুমি কথা বলতেই পারো।”

আরোশীর কথা শুনে আহির চুপ করে আরোশীর কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করছে।

” আচ্ছা আহির এবার বলোতো তোমার কি করতে ভালো লাগে?”

” আমার……ছবি আঁকতে।”

” বাহ্ সেটা তো খুবই ভালো।আমি কি তোমার আঁকা ছবিগুলো দেখতে পারি?”

আহির আরোশীর কথার কোন উওর না দিয়ে তার খাতাটা আরোশীর দিকে এগিয়ে দেয়।আরোশী পুরো খাতাটা উলটে-পালটে দেখে আবারো আহিরকে ফেরত দিয়ে দেয়।

” বাহ্ আহির তুমি তো খুব সুন্দর ছবি আঁকতে পারো।আমার তো মনে হচ্ছে তুমি বড় হয়ে খুব ভালো চিত্রশিল্পী হবে।”

” চিত্রশিল্পী কি আন্টি?”

” চিত্রশিল্পী?যারা খুব ভালো ছবি আঁকতে পারে তাদের চিত্রশিল্পী বলে।আচ্ছা এবার বলো তোমার প্রিয় খাবার কি?আমি তোমার খাবার রুটিন দেখলাম তুমি তো প্রায় সবসময় ভেজিটেবল এর তৈরি জিনিস খেয়ে থাকো।মাছ,মাংস এরা অন্যান্য খাবার তো খুবই কম খাও।তোমার কি এসব ভালো লাগেনা?”

” লাগে তো।কিন্তু বাবাই তো ছোটবেলা থেকে আমাকে এসবই খেতে বলেছে তাই আমি এসবই খায়।”

” খেতে বাজে লাগেনা?”

” না তো।আমার তো অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।”

” আচ্ছা ঠিক আছে,আজ আমি তোমাকে স্পেশাল কিছু রান্না করে খাওয়াবো।বলো তুমি কি খাবে?”

” কি খাওয়ার যায়?”

” হু……চলো আজ আমি তোমাকে রোল বানিয়ে খাওয়াবো।খাবে তো?”

” হুম।”

আরোশী আহিরকে আদর করে তার হাত ধরে তাকে নিয়ে রান্নাঘরে এলো।

আরোশী আহিরকে একটা টুলে বসিয়ে দিয়ে শিলার সাথে রোল বানানোর কাজে নেমে পড়ে।প্রায় আধাঘন্টা পর আরোশীর রোল বানানো শেষ হলো।আরোশী একটা ছোট প্লেটে করে দুটো রোল সর্বপ্রথম আরিহকে খাওয়ার জন্য দিলো।আহির একটা রোল তুলে তার থেকে কিছুটা অংশ ছিঁড়ে খেতে শুরু করলো।আরোশী অধির আগ্রহে আহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।মুখের খাবারটা শেষ হলে আহির অদ্ভুতভাবে আরোশীর দিকে তাকালো।আহিরের এভাবে তাকানো দেখে আরোশী বুঝতে পারলো না রোলটা কি ভালো হয়েছে নাকি খারাপ?

চলবে…….