#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
আকাশের এভাবে তাকানো দেখে আরোশী ঘাবড়ে যায়।আরোশী আকাশের দিকে তাকাতেই আকাশ কিছু না বলে নিজের খাবারে মনোযোগ দেয়।আরোশী বুঝতে পারছেনা সে এখন কি করবে।এদিকে আহির অনেক আশা নিয়ে আরোশীর দিকে তাকিয়ে আছে।আরোশী নড়েচড়ে আহিরের দিকে তাকালো।
” আহির বাবু তুমি আজ নিজে খেয়ে নাও,আমি তোমাকে কালকে দুপুরে খাইয়ে দেবো।”
” এখন দিলে কি হয়েছে?” শান্তভাবেই জিজ্ঞেস করলো আহির।আরোশী ভেবেছিলো আহির হয়তো বায়না করবে কিন্তু তার এরকম শান্তস্বরে জিজ্ঞেস করাটা একদম আরোশীর মনে লাগে।আরোশী করুন চোখে আবারো একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আহিরকে যখন কিছু বলতে যাবে তখনই আকাশ বলে উঠে,
” মিস আরোশী,আপনার সমস্যা না থাকলে আপনি আহিরে খাইয়ে দিতে পারেন।”
আকাশের কথা শুনে আহিরের মুখে যেন হাসি ধরেনা।আরোশীর মুখেও হাসি ফুঁটে উঠে।আরোশী আহিরের প্লেটে ভাত আর তরকারি নিয়ে খুব যত্ন সহকারে তাকে খাইয়ে দিতে লাগলো,আহিরও একদম ভালো ছেলের মতো চুপচাপ আরোশীর হাত থেকে খাবার খাচ্ছে আর তার সাথে এটা ওটা নিয়ে কথা বলছে।খেতে খেতে আকাশ তাদের দুজনকে দেখছে।আহিরের মুখে হাসি দেখে তার বেশ ভালোই লাগছে আবার কোথাও যেন একটা অপরাধবোধও তার মনে উঁকি দিচ্ছে।আহির যখন থেকে নিজের হাতে খেতে শিখেছে তারপর থেকে শেষ কবে আকাশ আহিরকে খাইয়ে দিয়েছে সেটা আকাশের মনে পড়ছেনা।এসব ভাবতে ভাবতেই আহিরের চোখের কোণে জল জমে যায়।আকাশ সবার আড়ালে খুব বুদ্ধি দিয়ে সেটা মুছে ফেলে।
আকাশের খাওয়া শেষ হলে সে উঠে চলে যায়।আহিরেরও খাওয়া শেষ কিন্তু সে নাকি এখন যাবেনা।সে তার ফেরি আন্টির খাওয়া দেখবে তাই আকাশও আর জোর করেনি।
খাওয়া শেষ হলে আহিরকে তার রুমে রেখে আরোশী গেস্টরুমে চলে এসেছে।কিন্তু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় চোখ পড়তে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায় কারণ আহির তার বালিশপত্র নিয়ে আহির বিছানায় বসে আছে।কেন যেন আরোশীর মনে হলো দরজার কাছে কেউ আছে তাই দেখার জন্য আরোশী ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আহিরকে ডাকছে।
” আহির তুমি এখানে কেন?”
” ফেরি আন্টি আমি আজ তোমার সাথে থাকবো।রাখবে আমাকে?”
আহিরের এই শান্ত স্বরে প্রশ্নগুলো আরোশীর মনে খুব গভীরভাবে দাগ কাটে।তার মনও চাইছে আহিরকে রাখতে।আরোশী একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আহিরকে পাশে গিয়ে বসলো।
” আহির বাবু তুমি না গুড বয়?”
” হুম।”
” ফেরি আন্টির কথা শুনবে তো?”
” হুম।”
” তাহলে বাবু শোন তুমি আমার সাথে না তোমার বাবাই এর সাথে থাকো।দেখো তুমি তো সারাদিন আমার সাথে থাকো আর এখন থেকে তো আমি এখানেই থাকবো তারমানে তুমি আমার সাথে আরো বেশি সময় কাটাতে পারবে কিন্তু তোমার বাবাই তো সারাদিন অফিসে থাকে।রাতটাতেই সে শুধু তোমাকে পায়।এখন যদি তুমি রাতেও আমার সাথে থাকো তাহলে তোমার বাবাই তো কষ্ট পাবে।তুমি কি চাও তোমার বাবাই মনে কষ্ট পেয়ে থাকুক?”
আহির মাথা নাড়িয়ে না বলে।আরোশী আহিরের কপালে চুমু দিলো আবারো বললো,
” তাহলে তুমি বাবাই এর সাথেই রাতে থাকবে আর দুপুরে আমার সাথে।ঠিক আছে?”
” হুম।আমি বাবাই এর সাথেই থাকবো গুড নাইট ফেরি আন্টি।” আরোশীকে জরিয়ে ধরে বলে আহির।আরোশীও আহিরকে জড়িয়ে ধরে গুড নাইট বললো।এদিকে বাইরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলো আকাশ।আরোশীর ব্যবহারে আকাশ মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে।সে চাইলেই পারতো আহিরকে তার কাছে রাখতে কিংবা তাকে বকে পাঠিয়ে দিতে কিন্তু আরোশী তা না করে কি সুন্দর করে আহিরকে বোঝালো।আরোশীর এই নম্র ব্যবহার দেখে আকাশ খুবই মুগ্ধ।
পরেরদিন সকালে,
আজ আহির অন্যদিনের তুলনায় আরো আগে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।সে তৈরি হয়ে ড্রইংরুমে বসে আরোহীর জন্য অপেক্ষা করছে আর পা নাড়িয়ে খেলছে।পাশের সোফায় বসে আড়াচোখে আহিরের কান্ড দেখছে আকাশ।
” এতো অস্থির হচ্ছো কেনো আহির?” ফাইল দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করলো আকাশ।
” ফেরি আন্টি এখনো কেন আসছেনা বাবাই?” মুখটা গোমড়া করে উওর দিলো আহির।
” মাত্র সকাল ছয়টা বাজে।তোমার ফেরি আন্টি ঘুমাচ্ছে হয়তো,তুমিই আজ তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছো।”
” আমি গিয়ে তাহলে ফেরি আন্টিকে ডেকে আনি?”
” না এটা ব্যাড মেনার্স আহির।উনি ঘুমাচ্ছেন ওনাকে ঘুমাতে দাও।ওনার সময় হলে উনি নিজেই বাইরে বেরিয়ে আসবেন,তোমার ঘুম পেলে তুমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো।”
আহির কিছু না বলে সোফায় শুয়ে গেস্টরুমের দরজা দিকে তাকিয়ে থাকলো।কিছুক্ষণ পর আকাশ সোফার দিকে তাকিয়ে দেখে আহির সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে।আকাশ আর কিছু না বলে রুম থেকে একটা চাদর এসে আহির গায়ে দিয়ে দেয়।
প্রায় সাড়ে সাতটার দিকে আরোশীর ঘুম ভাঙে।ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে আরোশী দেখলো আকাশ সোফায় বসে পেন্সিল দিয়ে কিছু একটা করছে আর আহির সোফায় ঘুমিয়ে আছে।
” আহির এখানে ঘুমিয়ে আছে কেন স্যার?” নিচুস্বরে জিজ্ঞেস করলো আরোশী।
” ও মিস আরোশী আপনি উঠে পড়েছেন।আহির আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতেই সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি ওকে তুলে দিচ্ছি।”
” না থাক স্যার আমিই ডাকছি।” আরোশী নিচে বসে আহিরের মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
” আহির?আহির বাবু উঠে পড়ো।স্কুলে যেতে হবে তো।দেখো ফেরি আন্টি উঠে পড়েছি।”
পিটপিট করে চোখ খুলে আহির আরোশীর দিকে তাকালো,তারপর হেসে উঠে বসলো।
” তুমি এতো তাড়াতাড়ি উঠলে কেন?”
” আমি মনে করেছিলাম তুমি উঠে পড়েছো তাই আমিও উঠে পড়েছি।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।চলো এবার দাঁত ব্রাশ করবে,স্কুলে যেতে হবে তো।”
আরোশী আহিরকে তার ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে যত্ন সহকারে মুখ পরিষ্কার করিয়ে দিলো।
খাবার টেবিলে বসে আছে আহির আর আকাশ।শিলা তাদের খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছে আর আরোশী তাকে টুকটাক সাহায্য করছে।পাউরুটির একটা টুকরো মুখে নিয়ে আকাশ আরোশীর দিকে তাকালো।
” মিস আরোশী আপনি তো এখন আপনার ফ্ল্যাটে যাবেন?”
” জ্বি স্যার।আমার তো কোন কিছুই এখানে নেই।আমার জিনিসগুলো নিয়ে আসতে হবে আর যেহেতু এখানেই থাকবো তো বাড়িওয়ালাকেও তো বলতে হবে যে আমি ফ্ল্যাট ছেড়ে দিচ্ছি।”
” হুম।আচ্ছা তাহলে এখুনি কি বের হবেন?”
” না এখুনি বের হবোনা।আপনারা যাওয়ার পর বের হবো।”
” তুমি কোথায় যাবো ফেরি আন্টি?তুমি কি আমাদের সাথে থাকবেনা?”
” থাকবো তো বাবু।কিন্তু আমার কোন জিনিসই তো এখানে নেই তাই আমার জিনিসগুলো আনার জন্য আমি আমার বাসায় যাবো।”
” আমিও যাবো তোমার সাথে।” হাসি মুখে আবদার করলো আহির।
” কিন্তু তোমার তো এখন স্কুলে যেতে হবে বাবু।”
” বাবাই আমি প্লিজ ফেরি আন্টির সাথে যায়।আমি তো প্রতিদিন স্কুলে যায়,প্লিজ আমি আজকে ফেরি আন্টির সাথে আন্টির বাসায় যায়।প্রমিজ এরপর থেকে আমি প্রতিদিন স্কুলে যাবো।প্লিজ বাবাই যেতে দাও।”
আকাশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাথা নাড়িয়ে আহিরকে যাওয়ার পারমিশন দিয়ে দেয়।আকাশের খাওয়া শেষ হলে সে ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
” মিস আরোশী আমি জানি আহির খুব শান্ত আর বিচক্ষণ বাচ্চা তবুও ওর খেয়াল রাখবেন।আমি কিন্তু ওকে আপনার ভরসায় ছেড়ে গেলাম।”
” আপনি চিন্তা করবেন না স্যার।আমি সবসময় আহিরের খেয়াল রাখবো।আপনি আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন।”
” হুম আর আহির তুমিও কিন্তু সাবধানে থাকবে।আন্টিকে কোন রকম বিরক্ত করবেনা।”
আহিরও ভালো ছেলের মতো মাথা নাড়িয়ে আকাশের কথায় সায় দেয়।
আকাশ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আরোশী আহিরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।সারা রাস্তা আহির এটা ওটা আরোশীকে দেখি দেখি গল্প করেছে।
রিকশা ভাড়া দিয়ে যেই আহিরকে রিকশা থেকে মানালো তখনই আরোশীর কানে কারো কন্ঠ এসে লাগলো।
” এটা তোমার বাচ্চা নাকি?”
চলবে……