#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
আজকে আহিরকে খুশি খুশি লাগছে।সে স্কুল থেকে আসার পর থেকে সোফায় বসে অধির আগ্রহে কারোর জন্য অপেক্ষা করছে।আহিরকে হাসিখুশি দেখে আরোশী অবাক হলো তবে খুশিও হলো।
” আহির বাবু,কি হয়েছে?আজ এতো খুশি খুশি লাগছে?”
প্লেটে ভাত নিতে নিতে জিজ্ঞেস করলো আরোশী।
” কিছু না ফেরি আন্টি।” মিষ্টি হেসে উওর দিলো আহির।আহিরের হাসি দেখে আরোশীও হাসলো।
” না আমি জানি নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।তবে তুমি যখন বলছো না তখন আমি আর জোর করবোনা।এখন হা করো তো দেখি।” আহির মুখ খুললে আরোশী তাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।আহির খাচ্ছে আর টিভিতে কার্টুন দেখছে।
আজ আকাশের বাড়ি ফিরতে অন্যদিনের তুলনায় একটু দেরি হয়ে গেলো।আকাশকে আসতে দেখে আহির দৌড়ে তাকে জরিয়ে ধরলো।হুট করে এভাবে জরিয়ে ধরাতে আকাশ হকচকিয়ে যায়।
” আজ আসতে দেরি কেন হলো বাবাই?”
আহিরের মুখে আজ হঠাৎ এধরণের কথা শুনে আকাশ একটু অবাক হলো।তবুও সে হেসে বললো,
” রাস্তায় জ্যাম ছিলো আহির তাই আসতে একটু দেরি হয়েছে কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আজ আহির সোনা কোন কারণে খুশি।হুম?কারণটা কি?”
” কিছু না বাবাই।তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।”
আহির না বললেও আকাশ ঠিকই বুঝতে পারলো আহির কোন কারণ আজ খুশি।আকাশ রুমে যাওয়ার সময় মাঝপথে আরোশীর দেখা পেলো।
” আরোশী আহিরকে আজ খুশি খুশি লাগছে।কিছু হয়েছে কি?নাকি আপনি আবার খুশি থাকার কোন জাদু করেছেন?”
আকাশের কথা শুনে আরোশী হেসে উওর দিলো,
” না স্যার আজ আমি কিছু করিনি।স্কুল থেকে আসার পর থেকেই আহিরকে খুশি খুশি লাগছিলো।আমি ওকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু সে কিছু বলেনি,তাই আমিও আর জোর করিনি।”
” হুম বুঝলাম।তার মানে নিশ্চয়ই কোন গন্ডগোল আছে আর আমাকেই সেটা খুঁজে বের করতে হবে।তবে তার আগে আমার ফ্রেশ হওয়া দরকার।আপনি একটু ওয়েট করুন আরোশী।আমি ফ্রেশ হয়ে এসে এই রহস্যের সমাধান করছি।” বলে আকাশ একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।আকাশের কথা বলার ধরণ দেখে আরোশীও আনমনে হেসে উঠলো।
ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আকাশ দেখতে পেলো আহির বিছানায় বসে আছে।তাকে দেখেই আহিরের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠলো।
” আহির সোনা কি হয়েছে তোমার?এতো খুশি কেন বাবাইকে বলবেনা?”
” বাবাই তোমাকে একটা কথা বলবো।আগে বলো বকবেনা।”
আহিরের কথা শুনে আকাশের মুখের হাসিটা উবে গিয়ে কপালে ভাঁজ পড়লো।তাও সে মুখে হাসি রেখে বলবো,
” বকবোনা,এবার বলো কি হয়েছে?”
আহির কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে তার স্কুল ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করলো।আহির আকাশের দিকে ফিরলে আকাশ দেখলো আহিরের হাতে একটা গোল করে ভাজ করা একটা কাগজ।আহির কাজটা এনে আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিলো।
” এটা কি আহির?”
” খুলে দেখো।”
মাথায় হাজারো চিন্তা নিয়ে আহির থেকে কাগজটা নিলো আকাশ।কেন যেন তার কাগজটা খুলতে ভয় লাগছে।এদিকে আহির তাড়া দিয়ে যাচ্ছে কাজটা খোলার জন্য।অবশেষে মনকে শান্ত করে আকাশ কাজটা খুললো কিন্তু কাগজের দিকে তাকিয়ে সে থমকে গেলো।আকাশ কাগজটা থেকে চোখ তুলে আহিরের দিকে তাকালো।আহিরের মুখে এতোক্ষণ যে হাসিটা ছিলো আকাশের এভাবে তাকানো দেখে তা উবে গেলো।
” এটা তুমি কখন করেছে আহির?” গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো আকাশ।
” কিছুদিন আগে।” নিচুস্বরে উওর দিলো আহির।”
” কে করিয়েছে এটা তোমাকে?”
” ফেরি আন্টি।” এবারো ভয়ে ভয়ে উওর দিলো আহির।আহিরের এরকম ভীত গলা শুনে আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।সে বিছানায় বসে আহিরকে নিজের দিকে করলো।
” তুমি আমাকে এতো ভয় পাও কেন বলোতো আহির?আমি কি তোমাকে কখনো মেরেছি বা বকাঝকা করেছি?”
আকাশের কথা শুনে আহির মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো।
” তাহলে?আমাকে এতো কেন ভয় পাও তুমি?আমি না তোমার বাবাই।তাহলে তুমি আমাকে কেন এই কথাটা বললে না?”
” তুমি না করবে ভেবে বলিনি।”
আহিরের কথা শুনে আকাশ আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো।
” এরপর থেকে আমার কাছ থেকে কিছু লুকাবেনা,ঠিক আছে?”
আহির মাথা নাড়িয়ে আকাশের কথার হ্যাঁবোধক উওর দিলো।
” তোমার ফেরি আন্টি জানে এটা?”
” না।”
” আচ্ছা ঠিক আছে তুমি কিছু বলোনা।যা বলার আমিই বলবো।”
আহিরকে খাইয়ে দিয়ে যখনই আরোশী তাকে নিয়ে তার রুমে যাবে তখনই আকাশের ডাকে সে থমকে যায়।
” আরোশী।”
” জ্বি স্যার।”
” এটা কি?” ট্রাউজারের পকেট থেকে একটা কাগজ টেবিলে রেখো বললো আকাশ।আরোশী একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে কাগজটা তুলে নিলো।
” কি হলো কিছু বলছেন না যে?”
” আহির এটা কি সত্যি?এর কারণেই তুমি সকাল থেকে খুশি।”
” হুম।” মুখে হাসি রেখে বললো আহির।
” আহির…..বাবু তুমি জানোনা এটা জেনে আমি কত খুশি হয়েছি।আমার যে কি আনন্দ লাগছে এটা জেনে যে তুমি ড্রইং প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছো।” আরোশী আহিরের গালে একটা চুমু দেয়।
” দেখেছো আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি পারবে।দেখেছো প্রথমবার অংশগ্রহণ করেই কত ভালো ফলাফল অর্জন করেছো।”
” মিস আরোশী আপনি কিন্তু কাজটা মোটেও ঠিক করেননি।আপনার আমাকে বলা উচিত ছিলো।”
আকাশের হুট করে এমন কথা শুনে আরোশী একটু ঘাবড়ে যায়। ” আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো এসব পছন্দ করেন না তাই আর বলিনি।” মাথা নিচু করে উওর দিলো আরোশী।
” আরোশী আমি আহিরকে কোন কিছুতেই বাঁধা দিনি।আহির এসব নিয়ে আমাকে কোনদিন বলেনি তাই আমিও তাকে জোর করিনি।”
” স্যার আপনি হয়তো জানেন না বা কোনদিন খেয়াল করেননি আহির কিন্তু আঁকতে পছন্দ করে এবং ওর আঁকার হাতও বেশ ভালো।ও চাইলেই এই গুনটাকে সৎ ব্যবহার করে সে অনেক দূর যেতে পারবে।আহির চলো ঘুমাবে।”
” আরোশী আপনি যান ঘুমিয়ে পড়ুন,আজ আমরা বাবা-ছেলে কিছুক্ষণ গল্প করবো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তাহলে আসি,আহির বাবাইকে কিন্তু একদম জ্বালাবে না।”
” আচ্ছা ফেরি আন্টি।”
” শুভ রাত্রি স্যার,শুভ রাত্রি আহির।আহির ডিস্টার্ব করলে আমাকে ডাকবেন কিন্তু,আমি চলে আসবো।”
আকাশ হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ উওর দিলো।আরোশী গেস্ট রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।আকাশ আহিরকে ব্রাশ করিয়ে নিজেও ব্রাশ করে বিছানায় এসে আহিরের পাশের বসলো।
” আহির।”
” হুম বাবাই।”
” তুমি তো এখন আমাকে ভালোই বাসো না।”
” না বাবাই,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।কে বলেছে আমি তোমাকে ভালোবাসি না?তুমি এরকম কথা কেন বলছো?” আকাশকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো কন্ঠ বললো আহির।
” কেউ বলেনি কিন্তু আমি জানি তুমি এখন আর আমাকে ভালোবাসোনা।”
” না বাবা আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি।তুমি এরকম বলোনা।” কথাগুলো বলতে বলতে আহির কান্না করে দিলো।আহিরকে কান্না করতে দেখে আকাশ ঘাবড়ে যায়।
” আরে আহির কান্না করছো কেন?আমি মজা করছিলাম,তুমি কান্না বন্ধ করো বাবু।”
” তুমি কেন বললে আমি তোমাকে ভালোবাসি না?” হেঁচকি তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করলো আহির।আকাশ মুচকি হেসে আহিরকে এক গ্লাস পানি খেতে দিলো।পানি খাওয়া শেষ হলে আকাশ আহিরের চোখ মুখে বললো,
” তাহলে তুমি এখন আমার সাথে আগের মতো কথা বলো না কেন?কোন কথাও আমাকে বলোনা।সব কথা তুমি আরোশীকে বলো কিন্তু আমাকে কিছুই বলোনা।”
” আচ্ছা বাবাই তুমি রাগ করোনা,এবার থেকে আমি তোমাকেও সব বলবো।প্লিজ রাগ করে থেকো না।তুমি আমার সাথে কথা না বললে আমার একদম ভালো লাগেনা।এই দেখো আমি কান দেখছি,তুমি প্লিজ আমার সাথে কথা বলো।”
” আচ্ছা রাগ করবোনা তবে একটা শর্তে।”
” কি বলো?”
আকাশ নিজের গালটা বাড়িয়ে দিলো।আহির তাড়াতাড়ি করে আকাশের গালে একটা চু*মু দিলো।
” এবার বলো কথা বলবে আমার সাথে?”
” আমি আমার আহির এর সাথে কি কথা না বলে থাকতে পারি।”
আকাশ হেসে আহিরকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
চলবে…..