অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-২১

0
692

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কলা থুরি ইলা তুমি এখানে কি করছো?তুমি না এলভি তে ছিলে?” অভ্র ইলা নামের মেয়েটাকে দেখে এতোটাই অবাক হয়েছে যে তার চোখ খুলে বেরিয়ে আসার উপক্রম।

” ছিলাম কিন্তু কাজ শেষ।”

” কাজ শেষ তো তুমি তোমার বাসায় যাবে এখানে কি?”

” সেটা আমি তোমাকে কেন বলবো?দেখি সরো।” অভ্রকে অনেকটা ধাক্কা দিয়ে ইলা ভিতরে প্রবেশ করলো।আকাশ সোফায় বসে ছিলো।ইলা আকাশকে দেখেই তাকে জরিয়ে ধরলো।

” আ….আকু বেপি কতদিন পর তোমাকে দেখলাম।কত মিস করেছি আমি তোমাকে।তুমিও আমাকে মিস করেছো তাই না?আমি জানি তো তুমিও আমাকে খুব মিস করেছো।তাই তো আমি দেশে এসে সোজা তোমার কাছে চলে এসেছি।”

আকাশ একপ্রকাশ ঠেলেই ইলাকে নিজের থেকে দূরে সরালো।

” তোমার এই হুটহাট জরিয়ে ধরার স্বভাবটা কবে যাবে ইলা?তোমাকে না সবসময় বারণ করি আর যাকেই ধরো অন্তত আমাকে হুটহাট জরিয়ে ধরবে না।” বিরক্তি নিয়ে বললো আকাশ।

” তোমাকে জরিয়ে না ধরলে আমি কাকে ধরবো বলো?” কান্না কান্না ভাব নিয়ে বললো ইলা।

” আকাশ না করলেও আমার কিন্তু কোন সমস্যা নেই।তুমি চাইলেই আমাকে জরিয়ে ধরতে পারো।” লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললো অভ্র।অভ্রের কথা শুনে ইলা রাগী চোখে অভ্রের দিকে তাকালো।ইলার এভাবে তাকানো দেখে অভ্র জোরপূর্বক একটা হাসি দিলো।

” আকু বেপি বলো না তুমি আমাকে মিস করেছো তাই না?”

” প্রথমতো এই আকুটা কি হ্যাঁ?আকাশ বলতে না পারলে আর কিছু বলো না।আর আমি তোমাকে মিস করবো কেন?মাত্র তো শুটিং এর কারণে একমাসের জন্য এলভিতে গিয়েছিলে।”

” তুমি সত্যি আমাকে মিস করোনি?”

” না করিনি,শুধু শুধু তোমাকে কেন আমি মিস করতে যাবো?এখন এটা বলো তুমি আমার বাড়িতে কি করছো?”

” আমি ওকে আমার সাথে এখানে নিয়ে এসেছি।”

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে আকাশ কেঁপে উঠলো।তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাঝ বয়সী একজন মহিলা।পোশাক,চুল সবই বেশ মার্জিত।

” মা তুমি!তুমি এতোদিন পর।” অবাক থেকেও বেশি কিছু থাকলে আকাশ তার মাকে দেখে সেরকম রিয়েকশন দিয়েছে।সে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেনা।

” অভ্র আমি ঠিক দেখছি তো?নাকি এটা আমার ভ্রম?আমার সামনে কি সত্যি মা দাঁড়িয়ে আছে?” অবিশ্বাসের স্বরে জিজ্ঞেস করলো আকাশ।

” এতো অবাক হওয়ার কি আছে আকাশ?আমি কি আসতে পারি না?”

” না তুমি আসতে পারো কিন্তু এতো বছর পর।তোমাকে আমি এতোটা দিন হাজার বার বললেও তুমি আসোনি কিন্তু আজ হঠাৎ না জানি…..”

” জানিয়ে আসলে কি আর তোমার এই রিকেয়শন দেখতে পেতাম।”

” হুম।কিন্তু তুমি এসেছো ভালো কথা,ইলাকে কেন নিয়ে এসেছো?আর তোমরা কি একসাথে এসেছো?”

” হুম।আমি যখন জানতে পারি ইলা এলভিতে আছে তখন আমি তার শুটিং শেষ হলে দেশে ফেরার আগে এলএ থেকে তার কাছে যায়।তারপর দু’জনে একসাথে দেশে ব্যাক করি।”

” তা না হয় ঠিক আছে কিন্তু আমাদের বাড়িতে কেন?”

” কেন সেটা না হয় পরে জানতে পারে।আপাতত কিছুদিন ইলা এই বাড়িতেই থাকবে।”

এরই মধ্যে অপরিচিত মানুষের শব্দ শুনে আহির গুটি গুটি নিচে নেমে এলো।

” বাবাই।”

আহিরের কথা শুনে সবাই আহিরের দিকে তাকালো।হুট করে একসাথে সবার এভাবে তাকানো দেখে আহির কিছুটা ঘাবড়ে গেলো।সে এসে আকাশে পাশে দাঁড়িয়ে তার পা জড়িয়ে ধরলো।আকাশ তার মা মিসেস সামিরার দিকে তাকিয়ে দেখলো উনি বেশ বিরক্ত।

” এটা তোমার….. ”

” ছেলে।আমার ছেলে আহির।তুমি তো জানোই সেটা।” ইলাকে মাঝপথে থামিয়ে বললো আকাশ।

” বাবাই এনারা কারা?”

” এনারা?ইনি হচ্ছে তোমার ইলা আন্টি আর ইনি হচ্ছে আমার মা মানে তোমার দাদীমণি।”

” আমি ওর…..”

” মা।” মিসেস সামিরা কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু আকাশ তাকে থামিয়ে দিয়ে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বললো।আকাশের আচরণে মিসেস সামিরার রাগ আর বিরক্ত দুটোই বেড়ে গেলো।

” বাবাই ফেরি আন্টি কোথায়?”

” আরোশী?ওই তো।আরোশী ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?এদিকে এসো।”

এতোক্ষণ আরোশী রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবার কথা শুনছিলো।আকাশের কথা শুনে আরোশী সামনে এসে তাদের দু’জনকে সালাম দিলো।

” ফেরি আন্টি আমার খিদে পেয়েছে।”

” তুমি আমার সাথে এসো বাবু,আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।”

মিসেস সামিরা আর ইলার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে আহিরের হাত ধরে তাকে নিয়ে গেলো।

” ইলা তুমি যাও গেস্ট রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”

ইলা নিজের লাগেজ নিয়ে যেতে নেবে কিন্তু আকাশ তাকে বাঁধা দিলো।

” নিচের গেস্ট রুমটা যেও না।”

” কেন?ওখানে কি আছে?” মিসেস সামিরা প্রশ্ন করলো।

” কেন আকু বেপি যেতে বারণ করছো কেন?আমি তো ওই রুমটাতে আরো অনেকবার থেকেছি।”

ইলার কথা বলার ধরণ দেখে আকাশ প্রচুর বিরক্ত।সে বিরক্ত নিয়ে উওর দিলো, ” ওখানে এখন আরোশী থাকে।তুমি উপরের বামপাশের রুমটাতে চাইলে থাকতে পারো আর সমস্যা হলে তোমারে বাড়িতে…..”

” না না থাক কোন সমস্যা নেই।আমি ওখানেই থাকবো।আমি ফ্রেশ হয়ে এখুনি আসছি।”

ইলা লাগেজটা টেনে টেনে উপরে তুললো।

রান্নাঘরে একটা চেয়ারে বসে খাবার খাচ্ছে আহির।আরোশী তার পাশে বসে আছে।এদিকে মিসেস সামিরা আর আকাশ যখন কথা বলছিলো তখন অভ্র চুপচাপ রান্নাঘরে চলে এসেছে।

” ভাউ…..”

” আ….”

অভ্রের হঠাৎ চিৎকারে আরোশী ভয়ে কেঁপে উঠে।আরোশীকে ভয় পেতে দেখে অভ্র,আহির,শিলা তিনজনেই হেঁসে উঠলো।

” হাহাহা…..আপু আপনি তো দেখি খুব সহজে ভয় পেয়ে যায়।”

” এভাবে হুট করে চিৎকার করলে তো যে কেউ ভয় পাবে।”

” যে কেউ না শুধু আপনি।” প্লেটে থাকা একটা চপ তুলে খেতে খেতে বললো অভ্র।

” আচ্ছা ভাইয়া উনারা কে?আর এতোদিন কোথায় ছিলেন?”

” মধ্যবয়স্ক যিনি ছিলেন উনি হচ্ছেন সামিরা আন্টি,আকাশের মা।আন্টি এতোদিন এলএ তে ছিলো,প্রায় তিন বছর পর দেশে ফিরে এসেছেন।”

” তিন বছর!এতোদিন কেন দেশের বাইরে ছিলেন?”

” হুম তিন বছর।ছিলো কোন একটা কারণে।আর মেয়েটাকে তো আপনান চেনার কথা।চেনেন না?”

” না,কে উনি?”

আরেকটা চপ তুলে অভ্র বললো, ” ও তার মানে আপনি খবরের কাগজ আর টিভি দেখেন না।ও হচ্ছে ইলা,মডেলিং করে।এই পেশায় এসেছে খুব বেশিদিন হয়নি।অতিরিক্ত জনপ্রিয় না হলে নতুন হিসেবে অনেকটাই পরিচিত।আমাদের কোম্পানিতে মডেলিং করে।শুটিং এর জন্য এলভিতে গিয়েছিলো একমাস আগে।”

” ও আচ্ছা।তাহলে তো উনি অনেক বড় মানুষ।ওনার থেকে তাহলে দূরে দূরে থাকতে হবে।”

” কেন?দূরে দূরে কেন থাকবেন?ইলা বাঘ না ভাল্লুক যে দূরে দূরে থাকবে?নাকি শাঁক*চুন্নি?”

” আরে না না সেরকমটা নয়।আসলে উনি কত বড় একজন মানুষ তাই দূরে দূরে থাকাই ভালো।”

” ধুর,কি যে বলেন না আপনি।শিলা আপু আমাকে এক কাপ কফি করে দেবে প্লিজ।

” দিচ্ছি অভ্র,তুমি একটু অপেক্ষা করো।” হেসে জবাব দিলো শিলা।

এদিকে,

” মা তুমি এতোদিন পর কেন এসেছো বলো তো?”

” কেন তুমি খুশি হওনি বুঝি?”

” না আমি সেরকম কিছু বলেনি।আমি তোমাকে এই তিন বছরে শখানেক বার বলেছি আসতে কিন্তু তুমি প্রতিবার একই উওর দিয়েছো কিন্তু আজ হঠাৎ না বলে চলে এসেছো,তাই জিজ্ঞেস করছি।আর তুমি এসেছো ভালো কথা ইলাকে কেন বাড়িতে নিয়ে এসেছো?”

” কাজ আছে তাই আমি ওকে বাড়িতে এনেছি।”

” তোমার কি ওই ব্যপারে কোন সমস্যা নেই এখন?তুমি তো এতোদিন এই কারণে বাড়িতে আসেনি।এখন এসেছো তার মানে কি তুমি…..?”

” না এখনো নয়,আর যখন এতোদিনেও বিষয়টা আমি মানেনি তাহলে আমি যে মানবো সেটার আশা ছেড়ে দাও।আমি এখন খুব ক্লান্ত,বাকি কথা আমি তোমার সাথে পরে বলছি।”

মিসেস সামিরা ব্যাগটা নিয়ে উপরে চলে গেলেন।আকাশ অসহায় দৃষ্টিতে তার মায়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে…..