#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
আকাশের বাসা আজকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।অনেক মানুষ দেখা যাচ্ছে।চারিদিকে নানা রঙের বেলুন দিয়ে সজ্জিত।আকাশ আর অভ্র ব্যস্ত সব ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখতে।রান্নার দিকটা শিলা দেখছে অনেকটাই আর আরোশী আহিরকে নিয়ে ব্যস্ত।আর হবে নাই বা কেন আজ যে আহিরের জন্মদিন।আজ ছয় বছরে পা দিয়েছে আহির।আহির আজ খুব খুশি কারণ এই প্রথম তার জন্মদিন এতো বড় করে পালন করা হচ্ছে।আর এই সবের পেছনে মূল ভূমিকা আরোশীর।সেই আকাশকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছে অনুষ্ঠান করার জন্য।
একটু অন্ধকার নামলেই আহিরকে আরোশী নিচে নামিয়ে আনলো।এতো সাজানো গোছানো বাড়ি দেখে আহির তো খু্বই খুশি কিন্তু সে সবসময়ের মতো চুপচাপ হয়ে আরোশীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।একপাশে আহিরকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আরোশী,তখন তার কাছে এলো রুদ্র।
” শুভ জন্মদিন আহির।”
” থ্যাংক ইউ।” রুদ্রকে মোটামুটি কয়েকবার দেখেছে আহির,তাই এখন সে রুদ্রের সাথে একটু একটু কথা বলে।
” এই নাও তোমার জন্মদিনের উপহার।” একটা বক্স আহিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো রুদ্র।রুদ্র আরোশীর দিকে তাকালো।আরোশী মাথা নাড়িয়ে নিতে বললে আহির সেটা নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে দিলো।পাশেই কয়েকটা বাচ্চা খেলা করছিলো।আহির দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ তাদের কেই দেখছিলো।
” আহির তুমিও খেলবে?যাও খেলো,ওরাও তোমার বন্ধু তো।”
আহির প্রথমে যেতে চাইছিলো না কিন্তু আরোশী আরেকবার বলাতে সে বাচ্চাগুলোর কাছে গিয়ে তাদের সাথে খেলতে লাগলো।
এদিকে এতোক্ষণ রুদ্র আরোশীর দিকেই তাকিয়ে ছিলো।গায়ে তার কালো রঙের একটা থ্রী পিস,একপাশে করে একটা বেনুনি করা,চোখে হালকা করে কাজল।আরোশীর দিকে তাকাতেই তার মুখে হাসে ফুঁটে উঠেছে কারণ আরোশীর পরনের জামাটা তারই দেওয়া।
” তোমাকে কিন্তু সুন্দর লাগছে।”
” হুম?ও,ধন্যবাদ।আপনার ড্রেসগুলো কিন্তু সুন্দর।আপনার জামাকাপড়ের চয়েজ কিন্তু ভালোই।”
” হুম।আমি জানি তো ভালো।” বিরবির করে বললো রুদ্র।
কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আরোশী আর রুদ্রকে দেখছেন মিসেস সামিরা।সে তাদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে।
” আন্টি কি দেখছো তুমি?”
” হুম?কিছু না।”
” আন্টি তুমি কি কথা দিয়েছিলো তোমার মনে আছে তো?”
” হুম ইলা,আমার খুব ভালো করেই মনে আছে।তুমি চিন্তা করোনা,সব ঠিকঠাক ভাবেই হবে।” আহিরের দিকে তাকিয়ে বললেন মিসেস সামিরা।
” আচ্ছা তুমি কি সবসময় এখানেই থাকো?”
” হুম।” আহিরের দিকে তাকিয়ে উওর দিলো আরোশী।
” তোমার ফ্যামিলিতে কিছু বলে না?”
রুদ্রের কথা শুনে আরোশীর মন খারাপ হয়ে গেলো।সে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসি দিয়ে উওর দিলো, ” আমার কোন ফ্যামিলি নেই তাই বলার মতোও কেউ নেই।”
আরোশীর কথা শুনে রুদ্রের মুখ মলিন হয়ে যায়।সে আরোশীকে হার্ট করতে চাইনি,সে তো জানতোই না এই ব্যপারে।
” সরি আসলে আমি জানতাম না।”
” সমস্যা নেই।”
” প্লিজ তুমি মন খারাপ করোনা।আমার তোকে কষ্ট দেওয়া কোন ইনটেনশন ছিলো না।আমি তো…..”
” ঠিক আছে মিস্টার রুদ্র।আমি কিছু মনে করিনি।আহির বাবু চলো কেক কাটার সময় হয়ে গিয়েছে।আপনিও আসুন।”
আরোশী আহিরকে নিয়ে কেকের কাছে গেলো।রুদ্রও তাদের পেছন পেছন এলো।কেকের কাছে আকাশ আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলো।আরোশী আহিরকে আকাশের পাশে দাঁড় করিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
সবাই উইশ করার পর আকাশ আহিরের হাতে ছুড়িটা ধরিয়ে দিয়ে উপর থেকে তার হাত ধরলো।কিন্তু আহির ছুড়ি হাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
” আহির কি হয়েছে?কেক কাটো।সবাই অপেক্ষা করছে তো।”
আহির আকাশের কথার উওর না দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন খুঁজে চলেছে।
” আহির কি খুঁজছো তুমি?কেক কাটো।”
” ফেরি আন্টি।”
আহিরের কথা শুনে আকাশ যা বোঝার তা বুঝতে পেরে গেলো।একটু চোখ ঘুরিয়েই সে আরোশীকে দেখতে পেয়ে গেলো।
” আরোশী।ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?এদিকে এসো।” একটু জোড়েই বললো আকাশ।আকাশের কথা শুনে আরোশী অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো কারণ সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে।আরোশী সবার এভাবে তাকানো দেখে জোরপূর্বক হেসে সামনে এগিয়ে গেলো।আরোশীকে দেখে তো সে বেজাই খুশি।আরোশীর হাতটা সে আকাশের হাতেন উপর রাখলো।এভাবে হাত রাখে আরোশী আর দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।আহিরের এই আরোশী আরোশী করাটা মিসেস সামিরা বা ইলা কারোই খুব একটা পছন্দ হয়নি।কেক কাটা শেষ হলে আহির বুঝতে পারছেনা সে কি করবে তাই আরোশী তার হাতে একটা কেকের পিস তুলে দিয়ে আকাশে খাইয়ে দিতে বললো।আকাশকে খাইয়ে দিয়ে আহির পিসটা আরোশীর দিকে করলো।আরোশী হাত দিয়ে একটু করে কেকটা নিয়ে খেলো।
একপাশে আহিরকে নিয়ে বসে আছে আরোশী।ঘরের মাঝখানে কয়েকটা ছোট বাচ্চা গানের তালে তালে নাচছে।আহির আরোশীর পাশে বসে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
হুট করেই গান বন্ধ হয়ে গেলে সবাই একটু চমকে গেলো।এতোক্ষণ বাচ্চারা যেখানে নাচছিলো সেখানে মিসেস সামিরা ইলাকে নিয়ে দাঁড়ালেন।
” যেহেতু আজ অনেকেই এখানে আছেন এবং এটা একটা ওকেশন।তাই আমি একটা এনাউন্সমেন্ট করতে চলেছি।এ হচ্ছে ইলা,আপনারা কম বেশি তাকে সবাই চেনেন।” এবার আকাশকে নিজের বামপাশে এনে দাঁড় করালেন মিসেস সামিরা।এ ধরনের চিত্র দেখে আরোশী কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে কি হতে চলেছে।আর একটু পর কি হতে পারে এটা চিন্তা করতেই তারা সারা শরীরের রক্ত হিম হয়ে গেলো।সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে আছে।
” এ হচ্ছে আমার ছেলে আকাশ,আপনারা তাকেও কমবেশি চেনেন।আজ আমি সবার সামনে এটা এনাউন্সমেন্ট করছি যে কিছুদিন পরেই ইলার সাথে আমার একমাত্র ছেলে আকাশের বিয়ে হতে চলেছে এবং আজকেই তাদের এনগেজমেন্ট হবে।”
মিসেস সামিরার কথা শুনে ইলার যেন খুশির সীমা নেই।সে পারছেনা খুশিতে নাচতে।আকাশ অবাক চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।সে প্রথম থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো তার মা নিশ্চয়ই এরকম কোন কারণেই ইলাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে কিন্তু তিনি যে আজ হুট করে এরকম কিছু বলে বসবেন সেটা আকাশ মোটেও আশা করেনি।সবাই মিসেস সামিরার কথা শুনে তালি দিচ্ছে।অভ্র তো যেন আকাশ থেকে পড়লো,রুদ্র ধীরে ধীরে হাতে তালি দিচ্ছে আর ইলার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে।
” এই নাও আকাশ,আংটিটা ইলাকে পরিয়ে দাও।”
” মা তুমি এসব কি করছো?প্লিজ বন্ধ করো।” মিসেস সামিরাকে নিচু গলায় বললো আকাশ।
” আমি যা করছি তোমার ভালোর জন্য করছি আকাশ।আমি তোমার খারাপ চায়না।”
” কিন্তু মা আহির…..”
” আহির এদিকে এসো সোনা।আরোশী আহিরকে নিয়ে এদিকে এসো।” একটু জোরেই আরোশীকে কথাটা বললেন মিসেস সামিরা।আরোশী একটা শুকনো ঢোক গিলে আহিরকে নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ালো।
” নাও এবার আহিরও চলে এসেছে,এবার তাড়াতাড়ি আংটিটা পড়িয়ে দাও তো।”
মিসেস সামিরার কথায় আকাশের কোন ভাবান্তর হলোনা।সে এখনো চোখের ইশারায় মিসেস সামিরাকে বোঝাচ্ছে।কিন্তু তিনি আকাশের কোন কথা না শুনে জোর করে তার হাতে আংটিটা ধরিয়ে দিলেন।আকাশ একবার আংটিটার দিকে তাকালো তারপর মিসেস সামিরার দিকে তাকিয়ে শেষ বারের মতো তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তিনি কোনভাবে আকাশের কথা শুনতে রাজি নন।
অভ্র একটু দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখছিলো।কোন এক কারণে তার মুখে কালো মেঘ জমা হয়ে গিয়েছে,যেন একটু পড়েই তার থেকে বৃষ্টির কণা ঝড়ে পড়বে।রুদ্র এসে অভ্রের পাশে দাঁড়ালো।
” এটা কি হলো বলো তো।জন্মদিনের পার্টিতে এনগেজমেন্ট!আগে থেকেই সব প্ল্যান করা ছিলো নাকি?কই মিস্টার আকাশ তো শুধু আমাকে বললেন ওনার ছেলের জন্মদিন কিন্তু ছেলের জন্মদিনে উনি যে নতুন জীবনের সূচনা করতে চলেছেন এটা তো বলেননি।”
রুদ্রের কোন কথা অভ্রের কানে গেলো বলে মনে হলো না,সে এখনো তাদেন দিকে তাকিয়ে কি যেন ভেবে চলেছে।
” কি হলো অভ্র কিছু তো বলো।” অভ্রকে হালকা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো রুদ্র।
” হুম?না আমি জানিনা।”
আকাশ যখন দেখলো মিসেস সামিরাকে আর বলে কোন লাভ নেই তখন সে হতাশ হলো।আহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে নিস্পাপ দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আহিরের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশ আংটিটা পড়িয়ে দিলো।
চলবে………