#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ২৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
আহির ঘুমিয়ে পড়ার পর অভ্র ছাদে এসেছিলো একটু খোলা আকাশের নিচে বসতে।সারাদিন কাজ করে তার এখন আর ঘরে ভালো লাগছিলো না।ছাদে উঠে দেখলো লাইট বন্ধ,অভ্র অন্ধকারের মাঝেও সহজে সুইচ খুঁজে পেলো কারণ সে আরো অনেকবার এখানে এসেছে।লাইট জ্বলে উঠতেই অভ্র দেখলো ইলা ছাদের কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।
” তুমি এখানে কি করছো ইলা?”
” কে!ও তুমি।আসলে ঘরে ভালো লাগছিলোনা তাই ছাদে এসেছি।যদি মনটা একটু ভালো হয়।”
” তুমি আকাশের বিয়ে হতে দেখে কষ্ট পেয়েছো না?”
” কষ্ট পেলেও বা কি।কেউ কি আর আমার চিন্তা করে?সবাই শুধু নিজের কথায় ভাবে।তাই আমি কষ্ট পেলেও কারো কিছু যায় আসেনা।”
” এভাবে বলো না ইলা।আসলে আহিরের জন্য আকাশ আরোশী আপুকে বিয়ে করেছে।”
” কেন?তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করেনি?আমি কি আহিরকে মেরে ফেলতাম নাকি?”
ইলার কথা শুনে অভ্র কয়েক সেকেন্ড এর জন্য অন্যমন্সক হয়ে গেলো।
” না আসলে আকাশের ধারণা আরোশী যেহেতু অনাথ তাই সে আহিরের খেয়াল রাখতে পারবে।”
” এরকমটা ভাবার কারণ?আমি কি কোন রাক্ষস নাকি পাষাণ যে আহিরের খেয়াল রাখতে পারতাম না?”
” সেরকম কিছু না ইলা।আসলে আহিরের আরোশীর সাথে অনেক ভালো বন্ডিং হয়ে গিয়েছে আর সেটা দেখে আকাশের মনে হয়েছে আহিরকে যদি কেউ ভালো রাখতে পারে তাহলে সেটা হবে আরোশী।”
” আচ্ছা অভ্র একটা কথা বলো তো।আকাশের প্রথম স্ত্রী কি মারা গিয়ে?আকাশের প্রথম স্ত্রীর নাম কি?”
ইলার কথা শুনে অভ্র একটু ঘাবড়ে যায়।সে কাজ আছে বলে নিচে নেমে গেলো কারণ আকাশ তাকে বারণ করে এই কথা যতক্ষণ না সে বলছে ততক্ষণ কাউতে বলতে।আর আকাশ তাকে বারবার বারণ করেছে ইলাকে এই কথাটা বলতে।অভ্রের এভাবে চলে যাওয়াতে ইলা একটু অবাক হলেও পরক্ষণে সেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো।
পরেরদিন সকালে,
আরোশীর ডাকে ঘুম থেকে জেগে উঠলো আকাশ।ঘুম ঘুম চোখে সে শোয়া থেকে উঠে বসলো।একটু ঘুম কেটে যেতেই সে বুঝতে পারলো কেউ তাকে ডাকছে।ঘাড় ঘুরিয়ে বাম পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরোশীকে দেখে তার পুরো ঘুম উবে গেলো।সাধারণ বেগুনি রঙের শাড়ি পড়েছে আরোশী,চুলগুলো আধবেজা।আরোশীকে বিয়ের দিন বাদে আজ প্রথম শাড়ি পড়তে দেখেছে আকাশ।শাড়িতে আরোশীকে তার কাছে বেশ ভালোই লাগছে।
” হঠাৎ শাড়ি পড়লে যে?” বিছানা থেকে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলো আকাশ।
” বিয়ের পর তো সবাই শাড়িই পড়ে তাই আমি পড়েছি।”
কার্বাড থেকে জামা বের করে আরোশীর দিকে তাকিয়ে বললো, ” বিয়ে হয়েছে বলেই যে শাড়ি পড়তে হবে এটা কোন রীতি বা বাধ্যগতা নয় আরোশী।তোমার শাড়িতে অসুবিধা হলে তুমি নরমাল আগের মতোই জামা পড়তে পারো।”
আকাশের কথা শুনে আরোশী হালকা হেসে আবারো বিছানা গোছাতে লাগলো।আকাশ বাথরুম ঢুকে দরজা বন্ধ করবে কিন্তু পরক্ষণেই সে দরজার ফাঁকে দিয়ে মাথা বের করে আরোশীকে বললো,
” কিন্তু যাই বলো শাড়িতে কিন্তু তোমাকে বেশ ভালোই লাগছে।অসুবিধা না হলে শাড়িই পড়ো।আর পড়তে যদি অসুবিধা হয় তাহলে আমাকে বলো।তোমার বিবাহিত স্বামী থাকতে তোমাকে কষ্ট করতে হবে না।”
কথাগুলো বলেই দুম করে দরজা বন্ধ করে দিলো আকাশ।আকাশের কথা শুনে আরোশীর মুখ হা হয়ে গেলো।আকাশের কথা ঠিক মতো বুঝতে তার একটু সময় লাগলো।তবে ঠিক মতো বোঝার পর আরোশী আবারো হাসলো।
খাবার টেবিলে বসে আছে আকাশ আর আহির।আরোশী তাদের খাবার বেড়ে দিচ্ছে।আজ আরোশী সব খাবার নিজে বানিয়েছে।
” গুড মর্নিং আকাশ।গুড মর্নিং আরোশী এন্ড আহির।”
টেবিলে বসতে বসতে বললো ইলা।ইলার হঠাৎ এই ধরনের পরিবর্তন দেখে আকাশ একটু অবাক হলো হয়তো কারণ ইলা আজ পর্যন্ত খু্বই কম তাকে আকাশ বলে সম্বোধন করেছে।তবে আরোশী এতো সব খেয়াল করলো না।সে হাসিমুখে ইলাকেও খাবার বেড়ে দিলো।
” নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা আরোশী।দোয়া করি যেন তোমরা সুখে থাকো তবুও একটা সাবধানে থেকো।বলাতো যায় না কখন কি হয়।” খেতে খেতে বললো ইলা।আরোশী ইলার কথা এতোটা গুরুত্ব দিলো না।এরই মধ্যে মিসেস সামিরা নিচে নেমে এলেন।
” আরে মা তুমি এসেছো।আমি তো এখনই তোমার কাছে যেতাম।”
আরোশী খেয়াল করে দেখলো মিসেস সামিরার হাতে উনার লাগেজ।আরোশী আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় সেটা তাকে দেখালো।যেহেতু আকাশ টেবিলে বসে ছিলো তাই প্রথমে সে এটা খেয়াল করেনি।
” মা তোমার হাতে লাগেজ কেন?”
” আমি চলে যাচ্ছি।”
” চলে যাচ্ছি মানে!কোথায় যাচ্ছো?”
” আমি আবারো এলভিতে চলে যাচ্ছি।তোমার কাছে আমার না কোন গুরুত্ব আছে আর না আমার কথার।আর এখন তো এই বাড়িতে অন্যকারো রাজত্ব চলবে।তাই আমার এখানে না থাকাটাই ভালো।”
” মা তুমি এসব কি বলছো?আমার কাছে তোমার কোন গুরুত্ব নেই এটা তোমাকে কে বলেছে?”
” কাউকে বলার প্রয়োজন নেই আকাশ।আমি নিজের চোখেই তা দেখেছি।আর যদি গুরুত্ব থাকতো তাহলে তুমি আমার কথা শুনতে নাকি নিজের ইচ্ছে মতো চলতে।আমি চলে যাচ্ছি,ভুলেও আমাকে দেশে ফেরার কথা বলবে না।যেদিন তুমি আমার কথা শুনবে সেইদিনই আমি দেশে ফিরে আসবো আর তা না হলে আমার লা*শও এই দেশে আনবে না তুমি।”
কথাগুলো বলেই ধুপধাপ পা ফেলে মিসেস সামিরা চলে গেলেন।আকাশও ওনার পেছন পেছন গেলেন কিন্তু না উনি থামলেন না।আকাশ হতাশ হয়ে আবারো টেবিলে এসে বসলো।আরোশী আকাশের পাশে এসে তার কাঁধে হাত রাখলো।
” চিন্তা করবেন না,ম্যাডাম ঠিক মেনে নেবে।”
” নেবে না আরোশী,তোমাকে তো বলেছিলাম।”
” মনের জোর হারাবেন না,বিশ্বাস রাখুন।উনি এখন একটু অভিমান করেছেন কারণ আপনি ওনার কথা রাখেননি আর এটা স্বাভাবিক।চিন্তা করবেন না কিছুদিন যাক আমি না হয় ওনার সাথে কথা বলে বোঝাবো।”
আকাশ আরোশীর কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো খেতে শুরু করলো।এদিকে এসব দেখে মনে মনে হাসছে ইলা।
” যাক একটা আপদ বিদেয় হলো এই বাড়ি থেকে।এবার আমার কাজ করা আরো সহজ হবে।আন্টি তো চলে গেলো কিন্তু আমি এতো সহজে এইবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছিনা।আমি তো আমার কাজ শেষ করে তবেই এই বাড়ি আর তোমাদের জীবন থেকে যাবো।” মনে মনে ভাবলো ইলা। ” আমার খাওয়া হয়ে গিয়েছে।আমার একটু কাজ আছে তাই বাইরে যাচ্ছি।সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসবো।বাই আরোশী,বাই আকাশ।”
ইলা নিজের ফোন আর পার্স নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।আরোশী আহিরের খাওয়া শেষ হলে তাকে উপরে নিয়ে গেলো স্কুলের জন্য তৈরি করিয়ে দিতে।সবাই চলে যাওয়ার পর আকাশ ফোনে কিছু একটা করলো তারপর আবারো খাবারে মনোযোগ দিলো।
.
.
” তোমার সাথে না সকালেই দেখা করলাম তাহলে এখন আবার ফোন কেন দিয়েছো?”
” কারণ আমার তোমার সাথে জরুরি কথা বলার ছিলো।”
” কি কথা?”
” তোমার প্ল্যান আমার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না।”
” তোমার কি আমার উপর ভরসা নেই?”
” আরে না আমি সেটা বলছিনা কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না এতে কাজ হবে।তুমি জানো না আকাশ যতটা নিজেকে সাদাসিধা দেখায় আসলে সে ওরকম না।ও অনেক বুদ্ধিমান।যদি কোনভাবে তোমাকে ধরে ফেলে তখন আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে।”
” আরে ধুর তুমিও না,শুধু বেশি চিন্তা করো।আকাশকে আমি চিনি।ও জীবনেও আমাকে ধরতে পারবে না।আমি যেই প্ল্যান করেছি সেটা ঠিকঠাক ভাবে হওয়াটা শুধু একজনের উপর নির্ভর করে।যদি আমি তাকে ম্যানেজ করতে পারি তাহলে আমরা যা চায় তা খুব সহজে পেয়ে যাবে।”
” আমি জানি না।আমি তোমাকে আগেই বলে দিচ্ছি যদি তোমার প্ল্যানে কোন ঝামেলা হয় তাতে আমি নেই।”
” আরে শোন।হ্যালো?হ্যালো?ধুর ফোনটা কেটে দিলো।”
” ইলা।”
কারো কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো ইলা।
চলবে……