অরুণরাঙা প্রেম পর্ব-২৯

0
753

#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কার সাথে কথা বলছিলে ইলা?”

আরোশীর প্রশ্নে ইলা ঘাবড়ে গেলো।

” ওই আসলে ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছিলাম।তুমি কেন এসেছো?কিছু বলবে?”

” রাতের খাবার এর জন্য ডাকতে এসেছিলাম।তুমি কি নিচে যাবে নাকি আমি উপরে নিয়ে আসবে?”

” যদি তোমার কোন সমস্যা না থাকে তাহলে উপরে নিয়ে এসো।আসলে আমার না খুব ক্লান্ত লাগছে।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি নিয়ে আসছি।”

” উফ….জোর বাঁচা বেঁচে গেলাম।ভাগ্যিস কিছু শোনেনি।না হলে আমার সব প্লেন ফেইল হয়ে যেতো।”

” কার জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছো আরোশী?”

” ইলার জন্য।উনি নাকি ক্লান্ত,তাই খাবার উপরে নিয়ে যেতে বলেছে।”

” কি এমন কাজ করেছে যে ক্লান্ত সে?সারাদিন বাইরে ঘুরে নয়তো ঘরে বসে থাকে।সামান্য খাবারটা নিচে এসে খেয়ে যেতে পারছে না।” বিরক্তি নিয়ে বললো আকাশ।

” আস্তে বলুন স্যার।উনি আমাদের অতিথি।হয়তো উনি সত্যিই ক্লান্ত।একদিন ঘরে খাবার দিয়ে এলে কিছু হয়না।আর আহিরের সামনে এসব বলবেন না।সে এমনিতেই ইলাকে খুব একটা পছন্দ করেনা,এসব তার সামনে বললে ইলার ব্যপারে তার মনে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হবে।আমি চাইনা আহির কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা নিয়ে বড় হোক।”

” আরোশী কাউকে বেশি বিশ্বাস করোনা,ঠকে যাবে।”

” উফ….আপনিও না বেশি বেশি চিন্তা করেন।আপনিও তো আমাকে বিশ্বাস করেছেন তাও বেশি।কোথায় আজ পর্যন্ত তো বললেন না আপনি ঠকেছেন।আপনি না একটু বেশিই চিন্তা করেন।এখন খাবার খেয়ে নিন তো।আমি ইলাকে খাবার দিয়ে আসছি।”
____________________________________________

সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আহিরের জন্য অপেক্ষা করছে ইলা।অনেকদিন সে চুপচাপ ছিলো কারণ তখন কিছু করলেই আকাশ আর আরোশীর সন্দেহ এমনিতেই ইলার উপর পড়তো।তাই সে এ কয়েকদিন কিছু করেনি।তবে আজ সে ঠিক করে নিয়েছে তার কি করা উচিত।আহির নিচে নামছে দেখেই ইলা তার হাতে থাকা মার্বেল গুলো নিচে ছড়িয়ে দিয়ে দূরে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো।আহির প্রায় মাঝ সিঁড়ি পর্যন্ত চলে এসেছে,ইলা অপেক্ষা করছে কবে আহির নিচে নেমে আসবে।এরই মধ্যে ইলার ফোনটা বেজে উঠলো।

” কি হলো তুমি আবার ফোন দিয়েছো কেন?”

” কেন মানে?এতোদিন হয়ে গেলো এখনো পর্যন্ত তুমি কিছু করলে না।তুমি কাজ করতে না পারলে বলে দাও আমি অন্যকোন ব্যবস্থা করছি।”

” কে বলেছে করিনি?আমি আমার কাজ অলরেডি শুরু করে দিয়েছি।এখন শুধু পা দেওয়ার পালা।তারপর বাকি কাজগুলোও আমি আসতে আসতে করবো।আমি একদম নিরবে তাদের জীবনে বিষ ছড়িয়ে দেবো।সেই বিষের প্রভাবে কবে যে তাদের জীবন বিষাক্ত হয়ে উঠবে সেটা তারা নিজেরাও বুঝতে পারবেনা।”

” আ…..”

আরোশীর চিৎকার শুনে ইলা চমকে গেলো।সে তাড়াতাড়ি সিঁড়ির কাছে এসে দেখলো আরোশী নিচে বসে আছে।আরোশীকে এই অবস্থায় দেখে ইলা যা বোঝার তা বুঝতে পেরে গিয়েছে।হুট করে আরোশীর পড়ে যাওয়াতে আহির ভয় পেয়ে সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে পড়লো।আরোশীর চিৎকার শুনে আকাশ আর শিলা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলো।

” আরোশী কি হয়েছে তোমার?পড়ে গেলে কিভাবে?”

” জানিনা।হয়তো শাড়ির সাথে লেগে পড়ে গিয়েছি।”

” আমি তোমাকে বলেছিলাম শাড়ি সামলাতে না পারলে পড়ো না কিন্তু তুমি কি আর আমার কথা শোনো।দেখলে তো এখন কি হলো।”

” বকছেন কেন?ব্যথা তো মানুষই পাই,গাছপালা তো আর পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবেনা।বেশি কিছু হয়নি এরকম আমি আরো কত বার পড়ে গিয়েছি।আ…..”

” হুম দেখতে পাচ্ছি কিছু হয়নি।আর তোমাকে কে বলেছে উঠে দাঁড়াতে।বেশি বোঝো তুমি।” বলেই আরোশীকে কোলে তুলে নিলো আকাশ।

” আরে আরে কি করছেন কি?নামান আমাকে,আরে আমি ঠিক আছি।কিছু হয়নি আমার।”

” চুপ করে থাকো।নয়তো কোল থেকে ফেলে বাকি যা হাড়গোড় আছে তাও ভেঙে দেবো।”

” আচ্ছা তাই নাকি?তাহলে দেখি ফেলে দেখান তো।”

আরোশী জানে আকাশ তাকে জীবনেও ফেলবে না তাই এ কথাটা সে নির্দিধায় বলতে পারলো।

” তুমি যে এতো কথা বলতে পারো সেটা আমি জানতাম না।”

” জানতে হবে না।এবার নিচে নামান।দেখুন শিলা আপু আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।আপনার কি লজ্জা নেই।”

” লজ্জা কেন পাবো?আমি কি অন্যের বউকে কোলে নিয়েছি নাকি?নিজের বউকে কোলে নিতে আবার কিসের লজ্জা?শিলা এখানে দাঁড়িয়ে না হেসে আরোশীর জন্য হট ওয়াটার ব্যাগ রেডি করো।”

আকাশকে আরোশীকে কোলে নিয়ে উপরে চলে গেলো।তাদের পেছন পেছন আহিরও গেলো।

” শেট,শেট,শেট,আ……আরোশী।” ইলার রাগে এখন নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।

” আমি কত সুন্দর প্ল্যান করেছিলাম যে আহির মার্বেলে পা দিয়ে পড়ে যাবে আর আমি তার দোষ আরোশীর উপর দিয়ে দেবো।আর এতে রেগে আকাশ আরোশীর সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করবে আর আমিও সেটা সুযোগ নেবো।কিন্তু এই আরোশী মাঝে দিয়ে সব উল্টো করে দিলো।আ……আমাকে আবার নতুন কিছু ভাবতে হবে কিন্তু তার আগে এই মার্বেলগুলো সরাতে হবে।কারো চোখে পড়লে সব ভেস্তে যাবে।”

ইলা তাড়াতাড়ি মাটি থেকে মার্বেলগুলো তুলে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

” ফেরি মাম্মা তুমি ঠিক আছো?”

” হ্যাঁ বাবু আমি ঠিক আছি।আমার কিছু হয়নি।তুমি চিন্তা করোনা।”

” হুম আহির তোমার মাম্মার কিছু হয়নি।তুমি বরং বাইরে গিয়ে টিভি দেবো।”

আহির গুটি গুটি পায়ে নিচে চলে এলো।আকাশ আহির পায়ে হাত দিতে গেলে আরোশী যেই পা সরিয়ে নেবে তখনই ব্যথায় মৃদু চিৎকার করে উঠে সে।আকাশ বিরক্তি নিয়ে আরোশীর পা নিজের হাঁটুর উপর লাগলো।

” এই জন্যই বলি পাকনামি একটু কম করো।বেশি পাকনামি শরীরের জন্য ভালো না।”

” আ….আস্তে স্যার,লাগছে আমার।”

” আরে রাখো তো তোমার স্যার।কতবার বলেছি স্যার বলো না কিন্তু না মহারাণী কি আমার কথা শুনবে।”

” এভাবে বলছেন কেন?” মুখ ফুলিয়ে বললো আরোশী।

” না আপনাকে তো মিষ্টি মিষ্টি করে বলবো।”

আকাশ উঠে ড্রয়ার থেকে ব্যথার মলম এনে সেটা আরোশীর পায়ের লাগিয়ে দিতে লাগলো।

” এসব কি করে হলো?একটু সাবধানে হাঁটতে পারোনা?”

” আমি তো সাবধানেই ছিলাম।সিঁড়ির কাছে আসতেই হুট করে স্লিপ খেয়ে পড়ে গেলাম।”

” হুট করে স্লিপ খেলে মানে?ওখানে কি পানি ছিলো?কই আমি তো পুরো শুকনো দেখলাম।”

” জানিনা মনে হলো।হয়তো শাড়ির সাথে পেঁচিয়েই পড়ে গিয়েছি।”

” পা একদম নাড়াবে না।আর কোথাও কি লেগেছে।”

আকাশের কথা শুনে আরোশী কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছেনা যেটা আকাশ ঠিকই খেয়াল করেছে।

” কি হলো আরোশী বলো।”

” আপনি একটু শিলা আপুকে ডেকে দেবেন।”

” কেন?কোন সমস্যা?সমস্যা হলে তুমি আমাকে নির্দিধায় বলতে পারো।”

” আসলে আমার কোমড়েও লেগে তাই বলছিলাম কি আপুকে একটু ডেকে দেবেন।”

” দেখি উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ো।”

” কি!”

” বলেছি উল্টো হয়ে বা এক সাইড হয়ে শুয়ে পড়ো।তোমার কোমড়ে মলম লাগিয়ে দি।”

” আপনি!” আকাশের কথা শুনে আরোশীর চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।

” কোন আমি লাগালে কি কোন সমস্যা আছে?বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি যেটা করতে বলেছি সেটা করো নয়তো আমিই জোড় করে লাগিয়ে দেবো।”

আরোশী বুঝতে পেরে গিয়েছে আকাশকে বললেও সে শুনবে না।তাই সে এক সাইড হয়ে শুয়ে পড়লো।আকাশ যত্ন সহকারে আরোশী কোমড়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।আকাশের কাজে আরোশী অস্বস্তি বোধ করছে।সে চাইছে আকাশ যেন তাড়াতাড়ি মলম লাগিয়ে শেষ করে।অবশেষে আকাশ হাত সরাতেই আরোশীর দেহে তার জান ফিরে এলো।আকাশ বিছানা থেকে উঠে আরোশীকে উদ্দেশ্য করে বললো,

” আরোশী আমি তোমার বিয়ে করা স্বামী নাকি কোন পরপুরুষ।তাই আমার সামনে এতো লজ্জা বা অস্বস্তি না পেলেও চলবে।তুমি শুয়ে থাকো আমি এখুনি আসছি।” কথাটা বলে আকাশ কিউট একটা এক্সপ্রেশন দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

” তুমি এখন ফ্রী আছো?” ফোনে কাউকে জিজ্ঞেস করলো ইলা। ” তুমি ‘…….’ এই রেস্টুরেন্টে আসতে পারবে এখন?আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি এসো।আমি ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে আসছি।” ফোন কেটে দিয়ে ইলা তার ফোন আর পার্স নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

চলবে……