#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ৩০
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
রেস্টুরেন্টে বসে কারো জন্য অপেক্ষা করছে ইলা।কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তির তার আগেই চলে আসা উচিত ছিলো কিন্তু সে এখনো এলোনা দেখে ইলার বেশ বিরক্ত লাগছে।অবশেষে কয়েকমিনিটের ব্যবধানে ইলার প্রতাশিত ব্যাক্তিটির আগমন ঘটলো।ইলা বিরক্ত হলেও মুখে হাসি বজায় রাখলো।
” এতো দেরি হলো কেন?”
” আসলে অফিসে ছিলাম তো তাই হুট করে আসতে পারিনি।সরি তোমাকে ওয়েট করানোর জন্য।”
” ইট’স ওকে।” কিন্তু মনে মনে ইলা প্রচন্ড বিরক্ত।
” আচ্ছা কেন ডেকেছো বললে নাতো?”
” আসলে আকাশের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তুমিই একমাত্র ব্যক্তি ছিলে যে আমাকে বুঝতে পেরেছো,আমাকে শান্তনা দিয়েছো।তুমি ছাড়া কেউ আমাকে বোঝেনি।তাই আমি আমার পক্ষ থেকে তোমাকে ট্রিট দিতে চাই অভ্র।”
হ্যাঁ ইলার সামনে বসে থাকা ব্যক্তি আর কেউ নয় বরং অভ্র।ইলার কথা শুনে অভ্র হেসে বললো,
” আরে ইলা এতো ফর্মাল হওয়ার কি আছে?আমি তো তোমাকে নিজের বন্ধু মনে করি।আর বন্ধুকে সাহায্য করতে না পারলে কি আর হয়।”
” আচ্ছা চলো আগে খাবার অর্ডার করো তারপর না হয় বাকি কথাগুলো বলবো।”
ইলার জোরাজুরিতে অভ্র খাবার অর্ডার দিলো।খাওয়া শেষ হলে বের হওয়ার মূহুর্তেই ইলার অভ্রের হাতের উপর নিজের হাত রেখে তার চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” অভ্র তুমি আমাকে নিজের বন্ধু মনে করো তো?”
” হুম অবশ্যই।”
” তাহলে আমার যখন তোমার প্রয়োজন হবে তুমি আমাকে সাহায্য করবে তো?”
” কেন করবো না?অবশ্যই করবো।তুমি শুধু আমাকে বলবে তোমার কখন সাহায্য প্রয়োজন।”
” প্রমিজ?”
” একদম।”
হুট করেই ইলা অভ্রকে জরিয়ে ধরলো।
” তুমি খুবই ভালো অভ্র।আমি সত্যিই খুবই লাকি যে তোমার মতো একজন বন্ধু পেয়েছি।”
অভ্রও হালকা হেসে ইলাকে আলতো ভাবে জরিয়ে ধরলো।
চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে অনেক আগেই।রাতের খাবার সময় হয়ে গিয়েছে।সকাল থেকে আকাশ আরোশীকে ওয়াশরুমে যাওয়া ছাড়া এমনিতে একপাও নিচে রাখতে দেনি।সারাদিন বিছানা শুয়ে,বসে প্রচুর বিরক্ত আরোশী।সে আবারো মনে মনে আকাশকে বকতে লাগলো।
” কি ম্যাডাম কি বিরবির করছেন?আমাকে বকছেন বুঝি?”
” হুম সেটাই করছি।”
” কেন কেন?আমি আবার কি এমন কাজ করলাম যে আপনি আমাকে বকছেন?”
” কি করেননি সেটা বলুন।আজকে সারাদিন বিছানা পুতুলের মতো বসিয়ে রেখেছেন।”
” ও আচ্ছা তাহলে এই কারণেই মহারাণী রাগ করেছে।আচ্ছা সমস্যা নেই খাবারটা খেয়ে নাও তারপর ভেবে দেখবো কি করা যায়।”
” উপরে নিয়ে এলেন কেন?আমি তো নিচে গিয়েই খেতে পারতাম।”
” বেশি কথা বলো।” ওয়াশরুম ঢুকতে ঢুকতে বললো আকাশ।আকাশ ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আরোশী প্রশ্ন করলো,
” আহির খেয়েছে?ও কোথায়?সেই যে বিকেলে দেখলাম এরপর তো আর তার দেখা পেলাম না।”
” হুম আহিরকে আমি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।এবার তোমার পালা।দেখি তাড়াতাড়ি হা করো তো।”
” হা কেন করবো?আমার পায়ে ব্যথা নাকি হাতে।আমাকে দিন,আমিই খেতে পারবো।”
কিন্তু আকাশ আরোশীর কোন কথা কানে নিলো না।সে প্লেটটা সাইডে দেখে আরোশীর মুখটা চেপে ধরে মুখের মধ্যে ভাতের লোকমা ঢুকিয়ে দিলো।
” এটা কি হলো?” ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করলো আরোশী।
” বেশি পাকনামি করার শাস্তি।এবার এটা মুখের মধ্যে নিয়ে বসে না থেকে তাড়াতাড়ি পেটের মধ্যে ঢুকাও।”
আরোশী আর কোন কথা বলে মুখ গোমড়া করে খেতে লাগলো।আরোশীর গোমড়া মুখ থেকে আকাশ হেসে তার মুখে আরেকটা ভাতের লোকমা ঢুকিয়ে দিলো।কিছুটা খাওয়া পর আরোশী আর খেতে পারবে না বলে জানিয়ে দিলো।তাও আকাশ এর জোড়াজুড়িতে আরো ১/২ লোকমা খেয়ে সে আর খাবে না বলো ঘোর আপত্তি জানালো।আকাশ এবার আর জোড় করলো না।
হুট করেই আকাশের হাত ধরে বসলো আরোশী।এতে আকাশ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে আরোশীর দিকে তাকালো।
” কি করছেন কি এটা?”
” কি করছি?”
” এইযে আমার অর্ধেক খাওয়া খাবারগুলো খাচ্ছেন।এটা খাবেন না।এটা ফেলে দিয়ে নতুন খাবার নিন।”
” কেন খাবো না কেন?তুমি কি আর এতে বিষ মিশিয়েছো নাকি?তাহলে?আর আমি আমাদের দু’জনের জন্যই খাবার নিয়ে এসেছি।আর খাবার ফেলে দেওয়া ঠিক না।তাই চুপচাপ বসে থাকো,বেশি পাকনামি করবে না।”
আকাশের কথা শুনে আরোশী মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো।আকাশ খেয়ে প্লেটটা নিয়ে নিচে চলে গেলো।আকাশের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মাত্রই আরোশীর চোখটা লেগে এসেছিলো তখনই আকাশ তাকে ডাকলো।
” আরোশী উঠো।”
” কি হয়েছে?” ঘুম জরানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো আরোশী।
” ছাদে যাবে?”
” এই সময়ে!”
” হুম,চলো না।দেখো বাইরে চাঁদের আলোতে কি সুন্দর লাগছে পরিবেশটাকে।”
আরোশী কিছু না বলে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।আরোশী দাঁড়াতেই আকাশ তাকে কোলে তুলে নিলো।আরোশীর চোখে এতোক্ষণ যাও একটু ঘুম ছিলো আকাশের কাজে সেটা উবে গেলো।
” কি করছেন বলুন তো?আপনি আবারো আমাকে কোলে নিয়েছেন।”
” তোমার তো তুলোর বস্তাকে কোলে নিতে বেশ ভালোই লাগে।ইচ্ছে করে সারাদিন কোলে তুলে ঘুরে বেড়ায়।কিন্তু তা তো সম্ভব নয় তাই যখন সুযোগ পাই তখনই তুলে নি।”
আরোশী বুঝতে পারলো না আকাশ তার প্রশংসার করলো নাকি অপমান।আকাশের কথা বিশ্লেষণ করতে করতে আকাশ কবে যে তাকে ছাদে নিয়ে এসেছে সেটা আরোশী খেয়াল করেনি।যখন আকাশ তাকে দোলনার মধ্যে বসিয়ে দিলো তখন আরোশীর খেয়াল হলো।আরোশী আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো চাঁদের আলোয় চারিপাশ আলোকিত হয়ে আছে।আকাশ এসে আরোশীর পাশে বসলো।
” আকাশটা চাঁদের আলোয় সুন্দর লাগছে না?”
” হুম।” একটু অন্যমন্সক হয়ে বললো আরোশী,যা আকাশ ঠিকই খেয়াল করলো।
” কি হলো আরোশী?কিছু চিন্তা করছো?”
” ইলার কথা ভাবছিলাম।”
” কেন?ওর কথা কেন ভাবছো তুমি?” একটু বিরক্ত নিয়েই বললো আকাশ।
” আপনি ইলার সাথে বিয়ে করতে যে অস্বীকার করেছেন তারপর তো তার সাথে কথাই বলেননি।আপনার কি এটা উচিত হয়েছে?আপনার একবার তার সাথে কথা বলা উচিত ছিল।”
” আরোশী এই সব বাজে কথা চিন্তা করা বন্ধ করো।শুধু শুধু বাজে জিনিস নিয়ে চিন্তা করে কেন নিয়ে রাতের ঘুম নষ্ট করবে?আর শোন আমি যা করছি ভেবেচিন্তেই করছো।আর সাথে কথা না বলারও কারণ আছে।এখন তুমি এসব কথা আর বলো না তো।পরিবেশের সৌন্দর্য উপভোগ করো।” আকাশ আরোশীর মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে একহাতে তাকে জরিয়ে ধরলো।
” এতো চিন্তা করো না আরোশী।আমি আছি তো।”
এরপর একদম চুপ।আরোশী বা আকাশ কেউ কোন কথা বললো না।চুপচাপ চাঁদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর আকাশ খেয়াল করলো আরোশী ঘুমিয়ে পড়েছে।আকাশ হেসে আরোশীকে আবারো কোলে তুলে নিলো।বিছানায় যত্ন করে শুয়ে দিলো আরোশীকে।এরপর আরোশীর পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বিরবির করে বললো,
” তুমি চাঁদের মতো শীতল সেইসাথে অরুণের ন্যায় রঙিন,পবিত্র,আলোকিত।তুমি সকালের অরুণের মতো মিষ্টি।অরুণ যেমন রাতের সকল অন্ধকার দূর করে চারিদিকে আলোকিত করে তেমনি তোমার আগমনে আমাদের জীবনও আলোকিত হয়ে গিয়েছে।”
ফোনের শব্দে আকাশের ধ্যান ভাঙলো।সে আরোশীর পাশ থেকে উঠে বারান্দায় চলে গেলো।
” কোথায় ছিলি?”
“………”
” কাজ হয়েছে?”
” হুম কিন্তু কোন সমস্যা যদি হয়!”
” তোর এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে।তোকে যেটা করতে বলেছি শুধু যেটাই কর।তুই শুধু আমার কথা মতো কাজ করতে থাক,দেখবি সব আমাদের ফেভারে হবে।”
” কিন্তু এতে লাভ?”
” অনেক বড় লাভ আছে।ওসব তুই বুঝবি না।তুই শুধু কাজ কর।”
” আচ্ছা।”
” আর শোন যা করবি একদম চুপিসারে করবি,যেন কেউ টের না পায়।”
ফোন রেখে দিয়ে আকাশ চাঁদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো।তারপর পেছন ফিরে ঘুমন্ত আরোশীর দিকে তাকালো।
চলবে…….