#অলকানন্দা_ও_তিতলি
#পর্ব-১৭
#সারা মেহেক
আপু এবার দৃষ্টি তুলে আমার দিকে চাইলো। সিক্ত গলায় বললো,
” তুই কেনো বুঝছিস না মিম? আমি তোর বড় বোন। সবসময় তোর ভালো চাই। ঐদিনও তোর ভালো চেয়েছিলাম৷ তুই যেনো ভুলপথে…….”
আপুর কথা শেষ হওয়ার আগেই আপুর ব্যস্ত কণ্ঠ শোনা গেলো। আম্মু রুম থেকে আপুকে ডাকছে। খালামনি ফোন করেছে। জরুরী কি কথা বলবে যেনো তাই ডাকছে। আপু গলা উঁচিয়ে বারবার বলছে যে আমার সাথে জরুরী কথা বলছে। কিন্তু আম্মু ওসবে পাত্তা দিলো না। সে ডেকেই চলছে। আপু আর না পেরে এবার চরম বিরক্তি নিয়েই আমার রুম থেকে চলে গেলো।
আপু রুম থেকে যেতেই আমি দরজা আটকে দিলাম। ফের ভাবনায় মশগুল হলাম। আমি আসলে এখনও মেনেই নিতে পারছি না যে এসবের পিছনে আপুর হাত ছিলো। টিনএজ বয়সে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রমা, সবচেয়ে বেশি কষ্টের দিনগুলো আপুর জন্যই দেখেছি আমি! আমি কোনো ভাবেই আপুর কাজটাকে জাস্টিফাই করতে পারছি না। সেখানে আপু যতই যৌক্তিক কারণ বলুক না কেনো আমি তা মেনেই নিতে পারছি না।
সবার জীবনেই প্রথম প্রেম বলে একটা ডায়েরির পাতা থাকে। প্রতিটা ছেলেমেয়েই চায় সে ডায়েরির পাতাটা রঙিন কলম দিয়ে পূর্ণ করতে। কিন্তু সবার ভাগ্যে তা জোটে না। আপু পেরেছিলো তার ডায়েরির পাতাটা রঙিন কলম দিয়ে পূর্ণ করতে। কিন্তু সে আমার ডায়েরির পাতাটা পূর্ণ করেছে নিজ হাতে, কালো কলম দিয়ে। যার ফলে না পেরেছিলাম জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টাকে এঞ্জয় করতে, না পেরেছিলাম এই কষ্টের সময়গুলোকে ভুলে যেতে।
আমি আদ্রিশ ভাইকে যতটা পছন্দ করতাম তাতে এ জীবনে দ্বিতীয় কারোর স্থান থাকতো না, সে আমি বিগত কয়েক বছর ধরে উনাকে যতই ঘৃণা করি না কেনো! যদিও রাফিদ দেখতে আসার আগ পর্যন্তও মনে হতো আমি উনাকে প্রচণ্ড ঘৃণা করি। কিন্তু রাফিদ আসার পর আমি নিজের ভুল বুঝতে পারি। নিজের সাথে করা এই মিছে অভিনয়ও টের পাই।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। আপাতত আপুকে মাফ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। হয়তো আমার সময়ের প্রয়োজন। আদ্রিশ ভাইকে যতটা সহজে মাফ করতে পেরেছি, আপুকে হয়তো ততটা সহজে মাফ করা সম্ভব না।
**
রাত বাজে ১টা। কাল সকাল ৮টায় ক্লাস। কিন্তু আমার চোখে কোনো ঘুম নেই। ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। অদ্ভুত উত্তেজনা ও মন খারাপের মিশ্র অনুভূতি নিয়ে আমি ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। রাতের মৃদু হাওয়ার তালে অলকানন্দা ফুলের নাচন দেখছি। এই অলকানন্দাকে দেখে হঠাৎ আদ্রিশ ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। এবং আমি উপলব্ধি করলাম, উনার চেহারাখানা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ঠোঁটের কোনে এক মৃদু হাসির ঝলকানি দেখা গেলো। আশেপাশে কেউ না থাকার পরও এ হাসির ফলে আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম। লজ্জায় দু হাতে মুখ ঢাকলাম৷
সবকিছু এখনও স্বপ্নের মতো লাগছে। কখনও ভাবিনি আমার প্রথম ভালো লাগা, প্রথম ভালোবাসা এভাবে পূর্ণতা পাবে! এতোটা অকস্মাৎ, এতোটা নাটকীয়ভাবে! কখনো ভাবিনি এভাবে অন্যজনের সাথে বিয়ে ঠিক হতে হতে আদ্রিশ ভাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাসায় চলে আসবে। সত্যিই সবকিছু অবিশ্বাস্য লাগছে আমার কাছে। পেটের মধ্যে যে প্রজাপতিরা উড়ে বেড়াচ্ছে তা টের পাচ্ছি বেশ৷
এসবের মাঝেই হঠাৎ আমার ফোনে কল এলো। এতো রাতে কে কল করেছে ভাবতে ভাবতে ফোনের স্ক্রিনে আদ্রিশ ভাইয়ের নাম দেখলাম। এতো রাতে উনার কল দেখে একটু অবাকই হলাম বটে। কারণ বেশ ক’বছর আগেও শুনেছিলাম উনি ১২ টার মধ্যে শুয়ে পড়েন। মাঝেমধ্যে কোনো কারণে একটু রাত হয়। এই তো সেদিন যেমন আড্ডা দিতে গিয়ে উনি ঘুমালেন ফজরের পর! আজ এমন কি হয়েছে কে জানে!
আমি কল রিসিভ করে ব্যালকনিতে বসলাম। রুমের লাইট নেভানো। কল রিসিভ করতেই ওপাশ হতে আদ্রিশ ভাই বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” এখনও ঘুমাওনি তুমি!”
আমি সরু চোখে অলকানন্দার দিকে চেয়ে রইলাম। উনার মতোই জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি কেনো ঘুমাননি?”
” আগে আমি প্রশ্ন করেছি। উত্তর পাবো। তবেই তোমার প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি। ”
” এমনি ঘুম আসছে না।”
ওপাশে আদ্রিশ ভাই মৃদু হাসলেন বুঝলাম। এবার স্পষ্টত টিপ্পনী কেটে বললেন,
” এমনি আসছে না নাকি আমার কথা ভেবে আসছে না?”
উনার কথার বিপরীতে কিছু বলার প্রস্তুতি নিলেও এহেন প্রশ্নে আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। কেননা উনি যে প্রশ্ন করেছে তা তো সঠিকই! সত্যিই আদ্রিশ ভাইয়ের কথা ভেবে আমার ঘুম আসছে না। কিন্তু এ গোপন কথা যে স্বীকার করা যাবে না! স্বীকার করলে অহংকারে উনার পা আর মাটিতে পড়বে না। এ আমি কি করে হতে দিতে পারি!। নিজের অপ্রস্তুত ভাবটা লুকিয়ে বললাম,
” এ কথা কে বলেছে আপনাকে! যত্তসব আজগুবী চিন্তাভাবনা। নিজেকে এতোটা প্রায়োরিটি দেয়া বন্ধ করুন।”
আদ্রিশ ভাই হাসলেন। আমি একটুখানি কপট রাগ নিয়ে বললাম,
” আপনি হাসছেন!”
আদ্রিশ ভাই ক্ষণেই হাসি থামিয়ে চাপা স্বরে বললেন,
” কই হাসছি! কানে বেশি শুনো তুমি।”
” উঁহু। আপনি সত্যিই হাসছিলেন। ”
আদ্রিশ ভাই কথার মোড় পাল্টে নিলেন। কয়েক সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে বললেন,
” শোনো, আমি নিজেকে কখনো অতোটা প্রায়োরিটি দেইনি৷ তবে ভবিষ্যতে প্রায়োরিটি দিবো। কিন্তু আমাকে না, তোমাকে। যে মানুষটা আমার বাকিটা জীবনের সঙ্গী হতে আসছে তাকে প্রায়োরিটি দিবো না তো কাকে দিবো শুনি!”
এ পর্যায়ে আমি প্রত্যুত্তরে কিছু বলার সুযোগ পেলাম না। কেননা লজ্জায় আমার গাল দুটো গরম হয়ে আসছে। আদ্রিশ ভাই ওপর পাশ থেকে জিজ্ঞেস করলেন,
” কিছু বলবে না এর জবাবে?”
আমি মৃদু লাজুক কণ্ঠে বললাম,
” কি বলবো? আমার কি কিছু বলা উচিত?”
আদ্রিশ ভাই আলতো স্বরে হাসলেন। ফের জিজ্ঞেস করলেন,
” লজ্জা পাচ্ছো নাকি তুমি?”
চোর ধরা পড়ার মতো পরিস্থিতিতে পড়ে খানিকটা হকচকালাম আমি। এই ঘটনাকে অস্বীকার করতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললাম,
” না, না, মোটেও না। আমি কেনো লজ্জা পাবো!”
আদ্রিশ ভাই ওপাশে প্রায় হেসে উঠে উৎসাহী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” এ্যাই, এ্যাই,তোমার গাল দুটো কি লাল হয়ে গিয়েছে মিশমিশ? গাল দুটো কি হালকা গরম হয়ে গিয়েছে?”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
” ন-না, না, লাল হবে কেনো? আমি কি টমেটো নাকি যে লজ্জায় লাল হয়ে যাবো!”
উনি এবার সশব্দে হেসে উঠলেন। উনার হাসির ভাব এমন যে আমি বোধহয় বিশ্বসেরা কোনো কৌতুক বলেছি! কি আশ্চর্য! উনি লজ্জা দেয়ার মতো কথা বলবেন। আর আমি লজ্জা পেতে পারবো না! আর লজ্জা পেলেও কি বেহায়ার মতো স্বীকার করে আরোও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়বো নাকি!
আদ্রিশ ভাই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। এপাশে আমিও নিশ্চুপ। উনি অনেকক্ষণ যাবত কোনো কথা বলছেন না দেখে আমি নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করলাম,
” হ্যালো? আছেন না-কি?”
আদ্রিশ ভাই ছোট্ট করে জবাব দিলেন,
” হুম।”
” কথা বলছেন না যে?”
” আমাদের কথা ভাবছিলাম। ”
” কি ভাবছিলেন?”
” আমাদের ভবিষ্যতের কথা। ”
আমি মৃদু হেসে বললাম,
” বিয়েটা হয়েই নিক। তারপর না হয় ভবিষ্যতের কথা ভাববেন। ”
আদ্রিশ ভাই হুট করেই প্রফুল্ল কণ্ঠে শুধালেন,
” এই মিশমিশ! কালকে আমাদের কি? মানে কোন ফাংশনটা হবে? ”
আমি উনার প্রফুল্লিত কণ্ঠ শুনে কিঞ্চিৎ অবাক হয়েই বললাম,
” এঙ্গেজমেন্ট।”
” শোনো! একটা প্রস্তাব দেই। কালকে বিয়েটা করে ফেলি আমরা। ”
আমি চরম বিস্মিত হলাম উনার এ প্রস্তাবে। বললাম,
” বিয়ে! কালকে! মাথা খারাপ আপনার? কালকে এঙ্গেজমেন্ট করিয়ে বিয়ের ডেট ঠিক করতে আসবে। বিয়ে পড়াতে নয়। ”
” কিন্তু আমার যে কালকেই বর সাজতে মন চাচ্ছে!”
আমি অভিমানী কণ্ঠে বললাম,
” কিন্তু আমার কালকে বউ সাজতে মন চাচ্ছে না। এভাবে বিয়ে করবো না আমি। কোনো হলুদ, মেহেদী নেই। সে বিয়ে আবার কেমন বিয়ে হলো! আমি ওমন বোরিং বিয়ে শাদির মধ্যে নেই। ”
” তাহলে কেমন বিয়ে চাও তুমি?”
” আমাদের মধ্যেই ধুমধাম করে বিয়ে হবে। অর্থাৎ শুধু আমার কাছের আত্মীয়স্বজনরাই, আমার বিয়েতে থাকবে। তাদের সাথেই মজা করবো, সব অনুষ্ঠান করবো। ওমন শুকনো বিয়ে আমার ভালো লাগে না। ”
আদ্রিশ ভাই ওপাশে শান্ত হলেন। আগের সেই প্রফুল্লতা কমে এলো খানিকটা। ধীর গলায় বললেন,
” আচ্ছা। তাই হবে। আমাদের বিয়েটা তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই হবে।”
আমি আনন্দিত গলায় বললাম,
” থ্যাংকইউ আদ্রিশ ভাই। ”
” আচ্ছা, কালকে কি রঙের শাড়ি পরবে?”
আমি একটু চিন্তায় পড়লাম। কেননা আমার কালেকশনে খুব একটা শাড়ি নেই। বললাম,
” এখনও জানি না। আম্মু কিছু বলেনি আমাকে। ”
আদ্রিশ ভাই মোলায়েম গলায় ধীরেসুস্থে বললেন,
” একটা আবদার রাখবে?”
” কি আবদার?”
” কালকে মেরুণ রঙের একটা শাড়ি পরো। ”
আমি এবার আরোও চিন্তায় পড়লাম। কেননা আমার জানামতে আমার এমনকি আমাদের বাসায় কোনো মেরুণ রঙের শাড়ি নেই। এখন উপায়! আমি আমতাআমতা করে বললাম,
” বোধহয় মেরুণ রঙের শাড়ি নেই আমার। ”
আদ্রিশ ভাই মন খারাপ করলেন বোধহয়। বিষণ্ণ গলায় বললেন,
” ওহ আচ্ছা। সমস্যা নেই। অন্য রঙের শাড়ি পরো তাহলে।”
আমি প্রত্যুত্তরে কিছু বললাম না। আদ্রিশ ভাই এবার বললেন,
” আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো। অনেক রাত হলো। বেশি রাত জাগলে চোখের নিচে কালি পড়ে যাবে। বাকি যা কথা, কাল হবে। ”
” আচ্ছা, আপনিও ঘুমিয়ে পড়ুন। ”
অতঃপর ফোন কেটে আমি আকাশের দিকে চেয়ে রইলাম। বাইরে দিয়ে শান্ত হলেও ভেতরে ভেতরে দুশ্চিন্তায় অশান্তি শুরু হয়ে গেলো। কীভাবে মেরুণ রঙের শাড়ি জোগাড় করবো তাই মাথায় চলতে থাকলো।
———
আজ শুক্রবার। অন্যদিন হলে সামিহাকে সাত সকালে উঠিয়ে মেরুণ রঙের শাড়ির খোঁজ করতে পাঠাতাম। কিন্তু আজ ছুটির দিন বলে ম্যাডাম ফোন অফ করে ঘুমাচ্ছে। সকাল ১১টা বাজে এখন। সেই ৯টা থেকে একটানা ফোন দিয়েই যাচ্ছি। কিন্তু তার ফোন বন্ধ। এদিকে আন্টির নাম্বারও নেই। আম্মুর বা আপুর কারোরই মেরুণ রঙের শাড়ি নেই। তাই এবার বাধ্য হয়ে আমার খালাতো বোনকে কল দিলাম৷ ওকে কল দিতাম না। কারণ ও একদমই শাড়ি-টাড়ির ধারের কাছে নেই। তাই প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েই কল দিলাম ওকে।
কল রিসিভের পর টুকটাক হালচাল জিজ্ঞেস করতেই হঠাৎ বাসায় কলিংবেল বাজলো। এ সময়ে কে আসলো ভাবতে ভাবতে গিয়ে দরজা খুললাম। খুলে দেখি অপরিচিত এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা বাক্স। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনার নাম মিম?”
” জি। ”
” আপনার নামে একটা পার্সেল এসেছে। ”
হঠাৎ আমার নামের পার্সেল! আমি তো কিছু অর্ডা করিনি। তাহলে? নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি শিওর তো?”
” জি ম্যাম। আপনার নামসহ এড্রেস এটাই দেয়া।”
” কিন্তু আমি তো কিছু অর্ডার দেইনি। ”
” তা তো বলতে পারবো না ম্যাম। এটা পেইড পার্সেল। ”
আমি আর কিছু বললাম না। দ্বিধা নিয়ে পার্সেলটা রিসিভ করে দরজা আটকিয়ে দিলাম। আম্মু রান্নাঘর থেকে জিজ্ঞেস করলো,
” কে এসেছে?”
” একটা পার্সেল এসেছে আম্মু। ”
” কিসের পার্সেল? ”
” জানি না। ”
আম্মু আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। আম্মু আর আপু এখন কাজে ব্যস্ত। তবে পার্সেলের কথা শুনে আভা ছুটে এলো রুম থেকে। আমি ওর সাথে পার্সেল নিয়ে আমার রুমে গেলাম। দুজন মিলে পার্সেল খুলতেই দেখলাম সবার উপরে একটা চিরকুট। তাতে লেখা,
” মেরুণ রঙে তোমাকে দারুণ মানায় মিশমিশ। আজ আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। বহুদিন পর তোমাকে এ রঙে দেখার তীব্র ইচ্ছে হলো আমার। তাই মেরুণ রঙের চুড়িসহ শাড়িটা আজ পরো। আমার হবু বউকে মেরুণ রাঙা বউরূপে কেমন দেখায় তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।”
চিরকুটটা পড়তেই লজ্জায় আমার গাল দুটো গরম হয়ে এলো। লাল হয়েছে কি না কে জানে। তবে আমার এ লাজুক রূপ দেখে আভা চিরকুটটা পড়তে চাইলে আমি দ্রুত হাতের মুঠোয় লুকিয়ে ফেলি। আভা তখন বাঁকা হেসে টিপ্পনী কেটে বললো,
” ওহহো, আদ্রিশ ভাইয়ার প্রেমপত্র পড়ে লালে লাল হয়ে গিয়েছো আপু!”
আমি লাজুক হেসে ওর হাতে আলতো চড় মারলাম। এছাড়া আমার বলার কিছুই রইলো না।
—————
ঢাকায় আমার যেসব খালা, চাচারা আছেন তারা প্রায় সবাই উপস্থিত হয়েছে। বাসায় ছোটখাটো একটা বিয়ের অনুষ্ঠানের মতোই পরিবেশ তৈরী হয়েছে। আমার কাজিনরা সবাই এক্সাইটেড। তাদের এক্সাইটমেন্ট ঠ্যালায় আমার একটু একটু ভয় লাগা শুরু হলো। চাপা অস্বস্তি বোধ ও অস্থিরতা নিয়ে আমি সাজতে লাগলাম৷
মেকআপ আমি একাই করলাম। কিন্তু শাড়ি পরতে পারি না দেখে আপু এগিয়ে এলো। আমি ক্ষণেই আপুকে বাধা দিয়ে গম্ভীর গলায় বললাম,
” তোমাকে শাড়ি পরাতে হবে না আপু। আমি অন্য কাউকে দিয়ে পরিয়ে নিবো। তুমি প্লিজ যাও। ”
আপু ব্যথিত চাহনিতে চেয়ে শুধালো,
” এখনও আমার উপর রাগ করে আছিস মিম?”
” আপু প্লিজ। এসব নিয়ে এখন কথা বলো না। আমার মুডটা ভালো আছে। এ ব্যাপারে কথা বলে নষ্ট করো না প্লিজ। ”
আপু আর কিছু বললো না। অভিমান করে চলে গেলো। কাঁদছে নাকি কে জানে!
আমি চাচিকে ডাকলাম শাড়ি পরিয়ে দেয়ার জন্য। আদ্রিশ ভাইদের আসার সময় হয়ে গিয়েছে। বলেছে মাগরিবের আগেই চলে আসবে।
আমার শাড়ি পরানো শেষ হলে চাচি রুম থেকে চলে গেলো। আপাতত রুমে আমি একা। সাজ পুরোপুরি শেষ। এখন আদ্রিশ ভাইয়ের দেয়া চুড়িটা পরবো। চুড়িগুলো প্যাকেট থেকে খুলে একে একে পরতে লাগলাম। এর মাঝেই হঠাৎ করে কলিং বেল বাজলো। চমকে উঠলাম আমি। বুকের ধড়ফড়ানি ক্রমশ বৃদ্ধি পেলো। অস্থিরতা ঘিরে ধরলো আমাকে। ফলস্বরূপ হাত থেকে চুড়িগুলো মেঝেতে পড়ে গেলো। আমি দ্রুত ঝুঁকে চুড়িগুলো মেঝে থেকে উঠাতেই বাইরে থেকে কিছু কথা কানে এলো,
” কাজি সাহেব এসেছে। কাজি সাহেব এসেছে।”
এটুকু শুনতেই আমি থমকে গেলাম৷ আমার হাত দুটো একদম স্থির হয়ে রইলো।
®সারা মেহেক
#চলবে