#অশান্ত বসন্ত।
(৩৩ পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী।
********************
চোখের কোনে ছলকে ওঠা জলের জন্য গাড়ি চালাতে অসুবিধা হচ্ছিলো বরুণ সাহার। হাতের পিছনটা দিয়ে চোখ দুটো মুছে নিলো।
মানুষের জীবনটা সত্যিই বড়ো অদ্ভুত, প্রথমে তো সে জন্মগ্রহণ করে পৃথিবীতে আসে,পরিবেশ আর পরিস্থিতি কিছু লোকজনকে একান্ত আপন ভাবায়, তারপর আবার তাদের জীবন থেকে সরিয়ে দিয়ে বারবার একা করে দেয়।
খুশি তো আর কিনতে পারা যায়না।যদি খুশি কিনতে পারা যেতো তাহলেও হয়তো বরুণ সাহার সেই দোকানে পৌঁছোবার আগেই খুশি শেষ হয়ে যেতো।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো বরুণ সাহা। ভেবেছিলো কখনো নিজের কথা ভাববেনা।কাজের মধ্যেই ডুবে থাকবে রাত দিন।ছিলোও সেই ভাবেই।কিন্তু কিভাবে যেন শিখাকে ভালো লেগে গেলো।শিখার চোখ দুটো আবার ভেসে উঠলো চোখের সামনে।
বহ্নির চোখেমুখে স্পষ্ট যে বরুন সাহাকে ওর দিদিয়ার জীবনের অংশ করতে ও বিন্দুমাত্র আগ্রহী নয়।এদিকে শিখাকে ছাড়া ভাবতে পারছে না কিছু।
না কিচ্ছু ভালো লাগছেনা ওর,কিচ্ছুনা।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে বারোটা বাজে।বহ্নির কথা শুনে বেরিয়ে এসেছিলো পার্টি থেকে।তখন থেকেই উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে।
আর নিজেকে নিজে নানা প্রশ্নে জর্জরিত করে চলেছে। অথচ কোনো উত্তর পাচ্ছেনা।হয়তো জীবনে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হয় না,জীবনে সব অপমানের জবাবও দিতে হয় না।জীবনে সব না পাওয়াগুলোকে একটা সময় মেনে নিতে হয়।
তবে এই বাতিলের খাতায় রাখা হিসাবগুলো কখন যে কিভাবে চেপে বসবে সেটাও বোঝা মুশকিল।
ফোনটা বেজে উঠলো বরুন সাহার।তাকিয়ে দেখলো,মায়ের ফোন।নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হলো।
এতো রাত অবধি মাকে জাগিয়ে রাখবার জন্য।ফোনটা রিসিভ করে মাকে নিশ্চিন্ত করে বাড়ির অভিমুখে গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
জন্ম ও মৃত্যুর অধিকার মানুষের হাতে না থাকলেও বিয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ তো অবশ্যই থাকে।তবে সেই নিয়ন্ত্রণ অন্যের ওপর চাপানো যে অন্যায় সেটা পল্লবের কথাতে পরিস্কার ভাবে উপলব্ধি করতে পেরে বহ্নি ঠিক করে অফিস থেকে ফিরে পল্লবকে নিয়ে বরুণ সাহার বাড়িতে যাবে।
কিছু জিনিস বরুণ সাহার কাছে আগেই পরিস্কার করে দেওয়া দরকার, অন্ধ আবেগের বশে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে পস্তানোর চাইতে।
প্রতিটি মানুষের কিছু আশা থাকে মনের মানুষটিকে ঘিরে,তার বাস্তবতা যখন হতাশ করে তখন বিচ্ছেদের আগুনে জ্বলে নিজের অপরিনামদর্শীতার জন্য হা-হুতাশই সম্বল হয়।
দিদিয়ার খামতি গুলোকে প্রথম প্রথম মেনে নিতে পারলেও পরে হয়তো এটাই বরুন সাহার বিরক্তির কারন হয়ে উঠবে।তাছাড়া বিয়ে দুটো মানুষের সাথে হলেও তাদের পরিবার গুলোর ভুমিকা তো আর অস্বীকার করা যায়না।তাদের ইচ্ছে ভাবনা আশা স্বপ্ন সব জড়িয়ে থাকে।
তবে বহ্নি চায় না বরুণ সাহা হঠাৎ আবেগে ভেসে গিয়ে বিয়ের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে নিজের সিদ্ধান্তের জন্য নিজেই অনুতপ্ত হন।কারন সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার দিদিয়া।
তাছাড়া যেখানে উনি চাইলেই যে কোনো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের শিক্ষিতা মেয়েকে নিজের জীবন সঙ্গিনী রূপে পেতে পারেন,সেখানে এই ধরনের প্রস্তাব দিলেন এটাই ভাবাচ্ছে বহ্নিকে।
টিফিন টাইমে বহ্নির মেসেজ দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠলো পল্লবের।বরুন সাহাকে ফোন করে জানালো যে আজকেই অফিস ফেরত বহ্নিকে নিয়ে বরুণ সাহার বাড়িতে যাবে,সময় করে উনি যেন বাড়ির এড্রেসটা হোয়াটসঅ্যাপ করে দেন।
তারপর বহ্নিকে মেসেজের উত্তরের সাথে দুটো লাভ রিএক্ট পাঠিয়ে দিলো।এই বিয়েটা হলে সত্যিই ভালো থাকবে শিখা।বহ্নি যে ওর কথার গুরুত্ব দিয়ে বরুণ সাহার সাথে কথা বলতে ওর বাড়িতে যাচ্ছে এটাই অনেক পল্লবের কাছে।
বরুণ সাহার মা কাজের মেয়েকে দিয়ে ওদের ঝকঝকে ফ্ল্যাটটা আরো একবার ঝারিয়ে রাখলো।আজ ওনার সত্যিই খুশির সীমানা নেই।ঠিক করলেন মিষ্টির সাথে লুচি ছোলারডাল বানিয়ে দেবেন।অফিস ফেরত আসছে যখন খিদেও তো পাবে ওদের।
বহ্নি একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে দিদিয়াকে জানালো যে আজকেই বরুণ সাহার বাড়িতে যাবে,তাড়াতাড়ি দিদিয়াকেও তৈরি হয়ে নিতে।কথাটা শুনে এক গাল হাসির সাথে বহ্নিকে জড়িয়ে ধরলো ওর দিদিয়া ।
বহ্নি বুঝতে পারে কতোটা খুশি হয়েছে দিদিয়া ওর কথায়।
কলিংবেল বাজাতেই বরুণ সাহা এসে দরজা খুললো।পল্লব আর বহ্নির সাথে শিখাকে দেখে ভীষণ ভালো লাগলো বরুণ সাহার।
ওদের নিয়ে বসবার ঘরে ঢুকে পরিচয় করিয়ে দিলো মায়ের সাথে। শিখা আজকে হলুদ রঙের শিফন পরে।স্নিগ্ধতা যেন টপকে পরছে ওর শরীর থেকে।বরুন সাহার মা শিখাকে নিজের পাশে বসালেন।
তারপর বহ্নিকে বললেন,’আমি জানি তুমি খুব চিন্তিত তোমার দিদিয়াকে নিয়ে,তবে এই কথাটা আমাদের দুজনের তরফ থেকে দিতে পারি যে তোমার দিদিয়ার কোনো রকম অমর্যাদা হবেনা এই বাড়িতে’।
বহ্নি বললো,’অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আমার অনেক কিছু বলবার আছে যে আপনাদের।আমি চাইবো কোনো কিছুই গোপনীয় না থাকুক’।
এরপর বহ্নি সেই ছোটোবেলা থেকে শুরু করে একে একে সমস্ত ঘটনা জানালো ওদের।বরুন সাহার মা উঠে এসে বহ্নির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন,’ভরসা রাখতে পারো আমাদের ওপর,তোমার দিদিয়া ভালো থাকবে এখানে’।
বরুণ সাহা বললেন,’এবার বুঝতে পারছি কেন গতকাল ওই ভাবে রেগে গিয়েছিলেন।নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন এই বিষয়ে যে আমি ছাড়বার জন্য হাত ধরছিনা।তবে আমি চাইবো বিয়েতে আপনাদের বাবাও উপস্থিত থাকুন’।
বরুণ সাহার কথায় শিখার মুখটা নিমেষে শুকিয়ে গেলো।
বহ্নি বললো,’কেন চাইছেন উনি থাকুক?আমরা তো ওনার সাথে যোগাযোগ রাখতে চাইনা।’
বরুণ সাহা বলেন,’প্লিজ ওনাকে আসতে দিন বিয়েতে।শিখার বাকি জড়তাটাও কেটে যাবে উনি আসলে,এই কথাটা আমি ডাক্তার হিসেবে বলছি’।
(চলবে)
#অশান্ত বসন্ত।
(৩৪ তম পর্ব)
জয়া চক্রবর্তী।
****************
সারা দিন ঝা-ঝা রোদের পর আসন্ন সন্ধ্যায় ঝমঝম বৃষ্টি নেমে গুমোট বাতাবরণটা নিমেষে বদলে দিলো। সাথে দক্ষিণের ঠান্ডা হাওয়ার দাক্ষিণ্য শরীর মনকে যেন তরতাজা করে দিলো।
অঞ্জনা যদিও এই গুমোট গরমের ভিতরেই হাসি মুখে সকাল থেকে বিভিন্ন দিক সামলাচ্ছিলো। তাড়াহুড়োতে হলেও পিউ আর সৃঞ্জয়ের রেজেস্ট্রি ম্যারেজ উপলক্ষে বাড়িতেই ছোট্টো একটা পারিবারিক মিলন সন্মেলনের আয়োজন করেছে।
পিউয়ের বাবা,অসীমের যদিও এই তাড়াহুড়ো করে রেজেস্ট্রি বিয়ে একেবারেই পছন্দ ছিলোনা। তবে বেশ কয়েকবার বিরক্তি প্রকাশ করলে-ও বিশেষ কোনো সুবিধা করে উঠতে পারেনি।
কলকাতায় এই নিয়ে সীমাকে রাজ্যের কথা শোনালেও, ব্যাঙ্গালোরে পল্লবের ফ্ল্যাটে পা দেওয়া অবধি সীমাকেও এই বিষয়ে কথা শোনাতে গেলে পিউ,পল্লব মায়ের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
তার উপর ওই উটকো দুটো আপদ, বহ্নি আর শিখা।এরাও যেন সীমার নতুন পাহাড়াদার হয়েছে। সীমাকে একা পাওয়ার সুযোগ নেই। মনে মনে ঠিক করেছে এদুটোকে পল্লবের ফ্ল্যাট থেকে বিদায় না করে কলকাতায় ফিরবেনা অসীম।
তাছাড়া কোনো এক অলৌকিক মন্ত্রবলে সীমাও যেন তার কথা অগ্রাহ্য করে চলেছে । অসীমের অসহ্য লাগছে সীমার এই পরিবর্তন। মনে মনে ঠিক করে রেখেছে কলকাতায় ফিরে যাওয়ার পর মজা বোঝাবে সীমাকে।
এদিকে সীমার মধ্যে বেশ একটা স্বস্তি কাজ করছে।একটা দুর্বোধ্য হিসেব মিলে গেলে যে স্বস্তিটা পাওয়া যায় ঠিক সেই রকম স্বস্তি, সাথে অঞ্জনার প্রতি কিঞ্চিৎ কৃতজ্ঞতাবোধ মনটাকে ভরিয়ে দিয়েছে সীমার।
অসীম তো নিজেই কিছুদিন আগে অবধি পিউয়ের বিয়ে নিয়ে অস্থির হয়ে পরেছিলো। মেয়েটাকে পড়াশোনা অবধি শেষ করে নেওয়ার সুযোগ দিতে চায়নি। আর আজ যখন বিয়েটা হচ্ছে তখনো অভিযোগ অনুযোগের শেষ নেই অসীমের। অঞ্জনা নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে ধুমধাম করে বিয়ে দিতে দিচ্ছেনা তাদের!
আসলে সীমার আপন মনের নিভৃতিতে যে ভালো লাগাটুকু কাজ করছে পিউয়ের বিয়ে উপলক্ষে, তা যেন টেনে হিঁচড়ে উপড়ে ফেলতে পারলেই অসীমের শান্তি।
যতোদূর বুঝেছে তাতে পল্লবকে নিয়েও আর চিন্তার কিছু নেই। এই বহ্নি মেয়েটি বেশ বুদ্ধিমতী, যদিও ওরা দুজন মিলে ঠিক করেছে যে বিয়ে না করে পাশাপাশি থাকবে আজীবন। সেটাই জানিয়েছে পল্লব। নাহলে সীমা চেয়েছিলো একই দিনে বহ্নি পল্লবের চারহাত ও এক করে দেবে।
অবশ্য বিয়ে না করলেও কিই বা যায় আসে তাতে!সম্পর্কের স্বীকৃতি দিলেই সম্পর্ক দারুণ মাধুর্য এনে জীবনকে ভরিয়ে তোলে তা তো নয়। আসল কথা হলো দুজনের দুজনের প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা,সম্মান।
সীমার মুখে এক চিলতে হাসি খেলে যায়। দীর্ঘকাল একসাথে থাকলেও আমাদের জানার বাইরেও অনেক কিছু থেকে যায়। যেমন অসীমের জানা নেই যেই সীমাকে সে আইসক্রিমের মতো মনে করে সেই সীমাই প্রয়োজনে অগ্নিবৎ হতে পারে। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে সীমার।
মাঝেমাঝে ভাবতো,অসীম কিছু বললে বোকার মতো চুপ করে কেন থাকে সে! অমন অপরাধী অপরাধী ভাবের কি দরকার! তারপর ভাবতো ওর অনুচ্চারিত কথা গুলোই ওর শক্তি, সেই শক্তিই ওকে সংসারে রেখেও নির্লিপ্ত আর নিশ্চিন্ত করে রেখেছে।
ভেবেছিলো বিয়ের পর নিজের স্বামীর সাথেই চুটিয়ে প্রেম করবে। যদিও অসীম তাকে সেবাদাসীর বেশি ভাবতেই পারলো না কখনো। অথচ প্রেমে পরার পক্ষে অনুপযুক্ত তো ছিলোনা সীমা। সুন্দরী, সুশিক্ষিতা, বাকপটু, কর্ম দক্ষ,সংগীতে পারদর্শিনী-অথচ অসীম তাকে প্রেমিকার নজরে দেখলোই না কোনোদিন।
কলকাতা থেকে আসার সময় পিউয়ের জন্য মোহিনী মোহন কাঞ্জিলাল থেকে বেনারসি আর নিজের বিয়ের সমস্ত গয়না সাথে করে এনেছে সীমা।
গতকালই গয়নার বাক্স থেকে অসীমের মায়ের আশীর্বাদ করা মকর মুখী বালা জোড়া বের করে নিজের হাতে বহ্নিকে পরিয়ে দিয়েছে, বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হতে না চাইলেও পল্লবের সারা জীবনের সঙ্গিনী হিসেবে এটা বহ্নিরই প্রাপ্য।
তারপর শিখাকে নিজের কানপাশা পরিয়ে দিয়েছিলো বিয়ের আগাম উপহার হিসেবে।
বাকি গয়নার বাক্সটা ধরে পিউকে দিয়ে বলেছিলো,
‘ এর ভিতরের যাবতীয় গয়না তোর’। পিউ বলেছিলো,’নিজের জন্য কিছু না রেখে সব কেন দিয়ে দিচ্ছো মা!’, সীমা হেসে বলেছিলো,’আমার আসল গয়না যে তোরা,এই গয়না রেখে কি করবো আমি!’
যদিও বহ্নি আর সীমাকে গয়না দেওয়াটা অসীমের আড়ালেই সেরেছে সে।
পিউ আর সৃঞ্জয় রেজেস্ট্রির এক সপ্তাহের মাথাতেই একসাথে আমেরিকা পাড়ি দেবে।
পিউয়ের ইচ্ছে ছিলো ওর শিখাদির বিয়েতে ও নিজে হাতে শিখাদিকে সাজাবে।কিন্তু চাইলেই কি আর সব হয়! আগামী মাসের ১৫ তারিখে বিয়ের তারিখ স্থির হয়েছে শিখার। একটু আগেই বরুন সাহার মা ফোন করেছিলো বহ্নিকে। তবে পিউয়ের শিখাদি আর বরুনদার যে বিয়ে হচ্ছে তাতেই দারুণ খুশি পিউ।
বহ্নি তারিখ স্থির হতেই শিউলি মাসীকে ফোন করে দিদিয়ার বিয়েতে আমন্ত্রণ জানালো। শিউলি মাসি তো ফোনে কেঁদেই ফেলেছে আনন্দে।
শিউলি মাসির থেকেই বাবা নামক ভদ্রলোকের ফোন নাম্বার নিয়ে ফোন করতেই অপর প্রান্ত থেকে দীর্ঘদিন পর একটা গমগমে কন্ঠস্বর কয়েক মুহূর্ত আচ্ছন্ন করে রাখলো বহ্নিকে।
কোনোরকমে বললো,’আমি বহ্নি,চিনতে পারছেন না নিশ্চয়ই! সম্পর্কে আমি আপনার মেয়ে’।বহ্নির গলা শুনে চোখে জল এসে পরলো অর্নবের। কোনোক্রমে বললো,’নিজের মেয়েকে চিনতে পারবোনা?ভালো আছিস তো ডল?’,বহ্নি যতোদূর সম্ভব গলাটা স্বাভাবিক রেখে বললো,’হ্যাঁ আমি আর দিদিয়া খুব ভালো আছি’।খুব শব্দটার ওপরে অকারন বেশি জোর দিলো বহ্নি।
তারপর বললো,’আগামী মাসের ১৫ তারিখ দিদিয়ার বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। চাইছি বাবার কোনো দায়িত্ব পালন না করলেও বিয়ের দিন এসে অন্ততঃ সম্প্রদানের দায়িত্বটা পালন করবেন । বাড়ির ঠিকানায় কার্ড পাঠিয়ে দিচ্ছি। আসার সময় সাথে করে শিউলি মাসিকে আনবেন,এইটুকুই বলবার ছিলো’।
কথাটা শেষ করেই বহ্নি ফোন কেটে দিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো। যে বাবাকে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতো, সেই বাবার সাথে এই ভাবে কথা বলতে তার নিজেরও কি কম কষ্ট হয়! কিন্তু মায়ের মৃত্যুর জন্য মনে মনে এই লোকটাকেই দায়ী করে বহ্নি।
বহ্নিকে একা একা বসে চোখের জল ফেলতে দেখে, কাছে গিয়ে মাথায় স্নেহের হাত রাখলো সীমা। বহ্নি সীমাকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে উঠলো। সীমা বললো,’আজ যে পিউয়ের বিয়ে। এইভাবে কান্নাকাটি করলে চলবে! পার্লার থেকে পিউকে সাজাতে লোক চলে এসেছে। ছয়টার মধ্যে আমাদের কিন্তু অঞ্জনাদের বাড়ি পৌঁছাতে হবে’।
সীমার কথায় বহ্নি চোখের জলটা মুছে মুখটা হাসিতে ভরিয়ে নিয়ে বললো, ‘এসো আন্টি আমি তোমায় সাজিয়ে দিই, শত হলেও মেয়ের মা বলে কথা!’, বহ্নির কথা বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেললো সীমা। বললো,’আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি,তুই বরং শিখাকে তৈরি করে দিয়ে নিজেও তৈরি হয়েনে।আর একজন নাহলে দেরি হলে হইচই করে বাড়ি মাথায় তুলে বসবে’।
কথাটা মুখে বললেও সীমার আজ আর অসীমের অহেতুক চেঁচামেচির জন্য ভয় নেই । মনে মনে স্থির করে রেখেছে, পিউরা আমেরিকা পারি দেওয়ার পর সে নিজেই অসীমের বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে যাবে চিরতরে।যদিও জানে পল্লব আর বহ্নি জানতে পারলে তাকে জোর করে নিজেদের কাছেই আটকে রাখবে।
কিন্তু সেটা চায়না সীমা। বাকি জীবনটা বৃদ্ধাশ্রমে সেবার মাধ্যমে কাটিয়ে দিতে চায় সে। সেই ভাবে আগে থেকেই কথা বলে রেখেছে সোনারপুরের সংসপ্তক বৃদ্ধাশ্রমে।অনেক থেকেছে সবার মতো করে, এবার সীমা নিজের মতো করে বাকি জীবনটা বাঁচবে।
তবে ভাবছে বহ্নি আর শিখার যেহেতু মা নেই, তাই শিখার বিয়েতে মায়ের কাজটা পালন করে তারপর সব ছেড়ে বেরিয়ে পরবে। সব মিলিয়ে সীমার মনটা নির্ভার হয়ে গেছে। আর মাত্র কিছুদিন তারপরেই এই সংসার নামক খেলাঘর থেকে মুক্তি।
অপর প্রান্তে অর্নব ও ফোন রেখে কান্নায় ভেঙে পরে।কতোদিন পর তার আদরের ডলের গলার আওয়াজ পেলো। তার একটা ভূলের মাশুল গুনে যাচ্ছে গোটা পরিবার। তবে শিখাকে আবার কে বিয়ে করতে রাজি হলো!ভাবনাটা চেপে ধরলো অর্নবকে।
কিছু সময় পর ধাতস্থ হয়ে ঠিক করে ব্যাঙ্গালোরের ফ্লাইট বুক করবে।
(চলবে)
#অশান্ত_বসন্ত।
(৩৫ পর্ব)
#জয়া_চক্রবর্তী।
*****************
আগামীকাল শিখার বিয়ে।এদিকে ইচ্ছে না থাকলেও বহ্নি আর পল্লবকে অফিসে যেতে হয়েছে।অতএব বিয়েবাড়ির সব ভার আপাতত সীমার কাঁধে।
সীমা ফোন করে অঞ্জনাকে সকালবেলাতেই ডেকে এনেছে। তারপর রান্নার মাসিকে অন্য কাজে লাগিয়ে দিয়ে দুই বন্ধু মিলে বেশ কয়েক পদ রান্না করেছে।
আসলে সীমার ইচ্ছে দুপুরে শিখাকে লাল টুকটুকে শাড়ি পরিয়ে আইবুড়ো ভাত খাওয়াবে।
সেই অনুযায়ী স্নান সেরে আসার পর সীমা নিজেই ঘরোয়া ভাবে শিখাকে লাল শাড়িটা পরিয়ে দিলো। শিখার ভিজে চুল ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে সুন্দর করে খোঁপা বেঁধে দিলো।তারপর শিখার ভাষা ভাষা চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক পরিয়ে দিয়ে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলো।লাবন্য যেন টপকে পরছে শিখার গা দিয়ে।
খেতে বসে শিখার চোখ দিয়ে জল পরছিলো মায়ের কথা মনে করে। সেটা খেয়াল করে সীমা হাতের শাঁখটা অঞ্জনার হাতে দিয়ে শিখার পাশে বসলো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,’মা কিন্তু দূর থেকে সব দেখছে।শিখার চোখে জল দেখলে মা কষ্ট পাবে যে’।
সীমার কথায় কাজ হলো,শিখা চোখের জল মুছে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো । ঠিক তখনই কলিংবেলের আওয়াজ।অঞ্জনা গিয়ে দরজা খুলতেই একজন মহিলা আর একজন সৌম্য দর্শন পুরুষ ফ্ল্যাটের ভিতরে প্রবেশ করলো। মহিলাটিকে দেখে মুহুর্তের মধ্যে শিখার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
শিখা সীমার দিকে তাকিয়ে কেটে কেটে বললো,’কাকিমা আমার শেফালী মাসী এসেছে দেখো’। সীমা বললো,’আচ্ছা আপনিই ওদের শেফালী মাসী?আপনার কথা বহ্নির মুখে অনেক শুনেছি’,।
তারপর অর্নবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি কি শিখা, বহ্নির বাবা?’,অর্নবের এদিকে চোখ সরছেই না শিখার দিক থেকে।হাঁ করে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে শিখার দিকে।বিশ্বাস হচ্ছেনা এটা তার সেই লালা ঝরা মেয়ে!কোনোরকমে মাথা নাড়িয়ে জানালো যে উনিই শিখা আর বহ্নির বাবা।
শিখা কিন্তু ওর বাবার দিকে একবারও ঘুরে তাকাচ্ছেনা। তবে শেফালী মাসীকে পেয়ে দারুণ খুশি।খাওয়ার পর শেফালীমাসীকে নিজের আঁকা ক্যানভাস গুলো দেখাতে শুরু করলো।
সীমা দেখলো, শিখার বাবাও দূর থেকে দারুণ আগ্রহ নিয়ে মুদ্ধ চোখে সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
সীমা আর অঞ্জনা মিলে এবার টেবিল গুছিয়ে অর্নব আর শেফালীকে খেতে ডাকলো।তবে অবেলায় আর কিছু খেতে চাইলোনা অর্নব।কিন্তু সীমা আর অঞ্জনার আন্তরিকতাকে অবহেলা করতে না পেরে অবশেষে খেতে বসতে হলো অর্নবকে।
অর্নব ভাতটা নাড়াচাড়া করতে করতে বললো,’আমি বাবা হয়ে যেটা পারিনি,আমার ডল সেই অসাধ্যসাধন করে দেখিয়েছে।আমি ভাবতেই পারিনি শিখা কখনো সুস্থ হতে পারে। যদিও ডাক্তার বলেছিলো পাঁচ বছর বয়েসের পরে অপারেশন করাতে,আমি সেটাও করিনি’।
একটু চুপ করে থেকে বললো,’ভেবেছিলাম ওই মেয়ে সুস্থ হবেনা। এবার বুঝতে পেরেছি কি প্রচন্ড ভুল হয়ে গেছে আমার,এই ভুলের সত্যিই কোনো ক্ষমা নেই’।
তারপর চোখের জল মুছে নিয়ে বললো,’কি জানেন আমার জীবনটাই ভুলে ভরা।আমার পাপের শেষ নেই।সেজন্যই ভগবান আমাকে একা করে দিলো,নামেই আমি দুই সন্তানের বাবা।অথচ বাবা ডাক শোনার জন্য কান মুখিয়ে থাকে,কেউ ডাকেনা’।
সীমা অঞ্জনা দুজনেই বলবার ভাষা পায়না।
এরমধ্যেই পার্লার থেকে একটি মেয়ে এসে শিখাকে ফেসিয়াল করে হাতে মেহেন্দি পরিয়ে গেলো।
পিউ আর সৃঞ্জয় আমেরিকা থেকে ভিডিও কল করে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলছিলো ওদের সাথে। আসলে শিখার বিয়ের জন্য পিউয়ের মন ও এখানে পরে। ভিডিও কলের মাধ্যমে শিখার বাবার সাথে ও পরিচয় করিয়ে দিলো সীমা।
অঞ্জনা আর সীমা দুজনেই নিজেদের ছেলে মেয়েকে একসাথে খুশি দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
কথা বলার ফাঁকে পিউ ওর বাবার খোঁজ করছিলো।
সীমা পিউকে জানায় যে পিউ আর সৃঞ্জয় চলে যাওয়ার পর ওদের বাবার মন আর বসেনি ব্যাঙ্গালোরে। তাই তিনি কলকাতায় ফিরে গেছেন।
শুধু জানায়না যে অসীম কী ভয়ংকর রকম রাগ দেখিয়ে ফিরে গেছে কলকাতায়।
আসলে বহ্নি আর পল্লবের ব্যাপারটা আন্দাজ করবার পর থেকে অসীমের রাগের পারদটা এমনিতেই চড়েছিলো।
পিউরা আমেরিকা যাওয়ার পরের দিনই সেই নিয়েই সীমার সাথে কথা বলছিলো অসীম।সীমাকে বলছিলো পল্লবকে জানিয়ে দিতে যে বহ্নিরা অব্রাহ্মণ, তাই ওদের বিয়েতে মত দেওয়ার প্রশ্নই নেই।
অসীমের কথা কানে যেতেই পাশের ঘর থেকে পল্লব বেরিয়ে আসে।আগ বাড়িয়ে জানায় যে ওরা বিয়ে না করেই একসাথে জীবন কাটাবে,তাতে কারো কোনো আপত্তি থাকলে সেটা যেন নিজের কাছেই রাখে।তাছাড়া ভবিষ্যতে বহ্নির ইচ্ছে হলে ওরা বিয়েটাও করতে পারে।
ব্যাস এতে আগুনে ঘি দেওয়ার মতোই অবস্থা হলো।অসীমের আজন্ম সংস্কারাচ্ছন্ন মন বিদ্রোহ করে বসলো। অসীম তখনই জানিয়ে দিলো সমাজে থেকে এমন গর্হিত কাজ কিছুতেই মেনে নেবে না।
বিয়ে না করে একসাথে থাকলে যেমন ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করবে, তেমনি ওই অব্রাহ্মণ মেয়েকে বিয়ে করলেও ত্যাজ্য পুত্র করবে পল্লবকে।
পল্লব বলে উঠেছিল, করে দাও।আমি কি বারন করেছি নাকি তোমায় ত্যাজ্য পুত্র করতে?’
এরপর বাপ ছেলের মধ্যে রীতিমতো কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়, সীমা থামাতে যাওয়ায় সীমাকেও যাচ্ছেতাই রকম অপমান করে অসীম।এবং অবশেষে সীমাকে না নিয়ে সেই দিনই কলকাতায় প্রস্থান।
সীমার কথাটা মনে হতেই এক চিলতে হাসি খেলে গেলো মুখে।অসীম ভেবেছে দারুন জব্দ করেছে সীমাকে!অথচ সীমা যে সব মিটলে সত্যি সত্যিই সবাইকে ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাবে সেটা কি অসীম স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছে!
অফিস থেকে বেরিয়েই দেখলো পল্লবের গাড়ি।পল্লব মেসেজ করে সাড়ে চারটার মধ্যে বেরিয়ে আসতে বলেছিলো বহ্নিকে। গাড়িতে উঠতেই পল্লব একগাল হেসে স্প্রাইট ধরিয়ে দেয় বহ্নির হাতে।পল্লবের এই কেয়ারিং ব্যাপারটা দারুন উপভোগ করে বহ্নি।
স্প্রাইটে চুমুক দিয়ে বহ্নি বলে উঠলো,’জানো পল্লব আমার পড়া বেশিরভাগ গল্প উপন্যাসে নানা ঘাত প্রতিঘাত,উত্থান পতনের শেষে নায়ক নায়িকার বিয়ে হয়ে যেতো,যাকে বলে মধুরেণসমাপয়েৎ’।
বহ্নির কথায় পল্লব হেসে বলে,’আরে আমি নিজেও গল্প পড়ার সময় মনে মনে এই সমাপ্তিই চাইতাম। মনে হতো দুটো ভালোবাসার মানুষের মধ্যে অবশ্যই বিয়ে হওয়া উচিত ‘।
বহ্নি বললো,’কিন্তু বিয়ের পরের ঘটনা নিয়ে আমরা কেউই চিন্তা করিনা,বিয়ের পরেই আসল সমস্যা শুরু হয়’।
পল্লব বললো,’দেখো বহ্নি জীবন থাকলে সমস্যা থাকবে।কারন সমস্যা অনন্ত,সবার জীবনেই সমস্যা আসে,ভাঙাগড়া হয়,বদল আসে।কোনো বদল যন্ত্রণা এনে দেয় বা কোনো বদল সুখ।তাবলে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সুন্দর ছবি কালি ধেবড়ে যাচ্ছেতাই করার কি মানে আছে কোনো?’
বহ্নি বললো,’ভয় করছে যে ভীষণ আমার।কালকে দিদিয়ার বিয়ে,অথচ আমায় দেখো! সময় যত এগিয়ে আসছে ভয় ততোই চেপে বসছে আমার মাথায়,মনে হচ্ছে বিয়েটা কেন্সেল করে দিই’।
পল্লব হেসে বললো,’কি ছেলেমানুষী হচ্ছে বহ্নি!শিখাকে নিজের মতো করে বাঁচতে দাও ।নির্বোধ হয়োনা।আর এতো নেগেটিভ চিন্তা কেন তোমার মাথায়?’
একটু থেমে বললো,’আচ্ছা বহ্নি একটা সত্যি কথা বলবে?আমি কিন্তু সত্যিটা জানতে চাই’,বহ্নি বললো,’কখনো কি মিথ্যে বলেছি তোমায়,কথা দিচ্ছি এতোদিন যখন মিথ্যে বলিনি,তখন আগেও বলবোনা’।
পল্লব বহ্নির দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো,’ভালোবাসো আমায়??’,বহ্নি হেসে বললো,কেন তোমার সন্দেহ আছে?’পল্লব বললো,’আমায় প্রশ্ন না করে উওরটা দাও।ভালোবাসো আমায়?’বহ্নি পল্লবের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো,’ভালোবাসি ভালোবাসি ভীষণ রকম ভালোবাসি’।
.পল্লব হেসে বললো,’বিশ্বাস করলাম।এবার বলো তোমার কি মনে হয় আমায় বিয়ে করলে আমি তোমায় ঠকাতে পারি?’,পল্লবের প্রশ্নে বহ্নি বললো,’না আমার মনে হয়না তুমি ঠকাবে আমায়,কিন্তু ভেবে দেখো আমার মাও তো সেই বিশ্বাসের উপর ভর করেই বাবার হাত ধরেছিলো,তারপর কি হলো!’
বহ্নির কথার উওর না দিয়ে পল্লব বললো,’ আমি কিন্তু চোখ বুজলে এখনো সেই দুবেনী করা সাদা খোলের উপর কমলা পাড়ের শাড়ি পরা সেই অসাধারণ সুন্দরী মেয়েটাকে ব্যাগ কাঁধে একমনে হেঁটে যেতে দেখি কাঁথির রাস্তা ধরে’।
বহ্নি বললো, ‘হুম জানিতো সেটা।তুমি একা একাই সেই তখন থেকে প্রেম বৃক্ষে জল সিঞ্চন করে যাচ্ছো কোনো রকম আশা ছাড়াই।আমি তো ভাবতেই পারিনা এতো ভালোবাসা ও যায় কাউকে।তোমার বলা না বলা প্রতিটি শব্দই আমার আঙ্গুল ছুঁয়ে বলে যায় ভালোবাসি’।
পল্লব হেসে বলে,’তারপরেও আমার থেকে বিয়ের অধিকারটাও কেড়ে নিয়েছো,আচ্ছা তোমার কষ্ট হয়না আমাকে কষ্ট দিতে? ‘।
বহ্নি বলে,’ মাঝেমধ্যে মনে হয় কেন আমার জন্য তোমার মনের কোনে স্বযত্নে লালিত বিয়ের স্বপ্নটা ভঙ্গ হবে! তুমি তো চাইলেই যে কেউ তোমার জীবন সঙ্গিনী হতে চাইবে’।
পল্লব বললো,’আমি তো যে কাউকে চাইনা, শুধু তুমি চাইলে তবেই আমাদের সম্পর্ককে বিয়ের স্বীকৃতি দেবো।থাক আমার চাওয়া নিয়ে বা স্বপ্ন নিয়ে অতো ভেবোনা।আমি শুধু চাই আমরা একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সারাজীবন পাশে চলবো’।
একটু থেমে গিয়ে আবার বলে,’তোমাকে হারাবার কথা আমি যে ভাবতে পারিনা বহ্নি।তোমার জন্য নিজেকে ভেঙে গড়েছি বহুবার।কিন্তু তোমাকে মন থেকে সরাবার কথা ভাবতে পারিনি।এটা সত্যি প্রথম দিকে বিয়ের জন্যই তোমার পিছনে ধাওয়া করছিলাম।মনে হয়েছিলো বিয়ে করলে একেই বৌ করবো’।
বহ্নি বললো,’তুমি বলেছিলে আমায়।তবে বিয়ের প্রতি আমার বিরূপ মনোভাবের কারনটা জেনে তুমি আর জোর করোনি’।
পল্লব বলে,’ ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসায় তোমার বিয়ের প্রতি ভয়টা কেটে যাবে।কিন্তু মনে হয় আমি তোমার মনে সেই ভালোবাসা আর বিশ্বাসের জায়গাটা করতেই পারিনি যেখানে তুমি নির্দ্বিধায় আমার হাত ধরতে চাইবে’।
বহ্নি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎই বলে উঠলো,’গাড়িটা শিগগিরই থামাও সাইড করে ‘।পল্লব বললো,’ কেন হঠাৎ গাড়ি থামাতে বলছো কেন! কি হলো আবার?কিছু কি নিতে হবে মার্কেট থেকে?’।
বহ্নি গম্ভীর স্বরে বললো,আরে থামাও না গাড়িটা,এতো প্রশ্ন কিসের? একবার থামাতে বলেছি যখন থামাবে’।
পল্লব অবাক হয়ে বহ্নির দিকে তাকালো।সাধারণত এই স্বরে বহ্নি কথা বলেনা পল্লবের সাথে।
পল্লব একটু এগিয়ে সাইড করে গাড়ি থামায়।গাড়ি থামানোর সাথে সাথে বহ্নি নেমে যায় গাড়ির থেকে।পল্লবকেও নামতে বলে।
না এবার আর কোনো প্রশ্ন করে না পল্লব।জিজ্ঞাসু মুখে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে বাইরে এসে দাঁড়ায়।
বহ্নি হঠাৎই এক হাঁটু গেড়ে বসে পল্লবের দিকে হাত বাড়িয়ে নাটকীয় ভাবে বলে উঠলো,’উইল ইউ ম্যারি মি ? ‘
ঘটনার আকস্মিকতায় পল্লব কিছু বুঝতে পারেনা।ফ্যালফ্যাল করে বহ্নির দিকে তাকিয়ে থাকে।বহ্নি আবারো বলে,’উইল ইউ ম্যারি মি ? ‘
এবার পল্লব বহ্নির হাতটা ধরে।উচ্ছ্বাস যেন ফেটে পড়ছে পল্লবের চোখে মুখে। তাও বলে,’সত্যি বিয়ে করবে আমায়?মানে সত্যিই কি বিয়ে করতে চাইছো?নাকি মজা করছো আমার ইমোশনের সাথে?’
বহ্নি হেসে বলে,’ ইয়েস ওর নো কিছু তো বলো,আমার হাঁটুতো ব্যথা হয়ে গেলো’।
পল্লব তাড়াতাড়ি বহ্নিকে ,’ ইয়েস-ইয়েস-ইয়েস ‘বলে উঠিয়ে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকে।
বহ্নি বলে,’কালকে দিদিয়ার মন্ডপেই বিয়ে করতে হবে কিন্তু। তবে আমি ওই ভারি বেনারসি পরে জমকালো সেজে বিয়ে বসতে পারবোনা’।
পল্লব আরো নিবিড়ভাবে বহ্নিকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে বলে,’জিনস টপ পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেও আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই।শুধু একটাই শর্ত বিয়ের কনে তোমাকেই হতে হবে’।
(চলবে)