অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব-১৯+২০

0
833

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_19
#ইয়াসমিন_খন্দকার
ডাক্তার স্মিথ বিস্ময়ের সাথে সমস্ত রিপোর্ট দেখেন। আবরাজ নিজের সত্যটা ধরা পড়ার ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ডাক্তার স্মিথ বলে ওঠেন,”এই রিপোর্টে এটা স্পষ্ট যে মিস্টার আবরাজ খানের মাথায় বেশ ভালোই আঘাত লেগেছে এবং আমার মনে হয় এই আঘাতের জন্যই ও নিজের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। আমাক এবিষয়ে একটু ভাবতে দিন। আমি ভালো কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি যার মাধ্যমে উনি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।”

আবরাজ তো পুরোই অবাক। এটা কিভাবে সম্ভব হলো তাই ভাবতে লাগল সে৷ মিজানুর রহমান বলে উঠলেন,”বেশ আপনার যা ভালো মনে হয় করুন কিন্তু আমার ভাগ্নে যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুস্থ হয়৷ ও কিন্তু একদম আমার ছেলের মতোই৷ তাই আমি চাই ওর যেন কোন বড় ক্ষতি না হয়।”

“জ্বি, আমরা ব্যাপারটা দেখছি।”

তারা আরো কিছু সময় কথাবার্তা বলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে। ডাক্তার স্মিথের বলা কথা গুলো এখনো ঘুরছে আবরাজের মাথায়। এরইমধ্যে হঠাৎ করে মিজানুর রহমান নিঝুমকে বলে ওঠে,”মা, তুমি যাও গাড়িতে গিয়ে বসো। আমি আবরাজকে নিয়ে কিছু মেডিসিন নিয়ে যাচ্ছি।”

নিঝুম মাথা নাড়ায় এবং সামনের দিকে পা বাড়ায়। সে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে। নিঝুম চলে যেতেই মিজানুর রহমান আবরাজের উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠে,”কি হলো? অবাক হয়ে গেলি তো? কি ভেবেছিলি তুই আবরাজ? তোর অভিনয় আমি ধরতে পারব না? শোন, আমি না ছোটবেলা থেকে তোকে মানুষ করেছি। তাই কোনটা তোর অভিনয় আর কোনটা বাস্তব তা বোঝার ক্ষমতা আমার আছে।”

“তার মানে?”

মিজানুর রহমান হেসে বলেন,”আমি তো তোকে প্রথম দেখেই বুঝতে পেরে গেছিলাম যে তুই অভিনয় করছিস। এরপর তোর বন্ধু ম্যাক্সের সাথে কথা বলে এই ব্যাপারে আরো বেশি নিশ্চিত হয়ে নেই।”

“তার মানে তুমিও এতদিন আমার সাথে অভিনয় করে গেছ ”

“হ্যাঁ, আর এখন সেই অভিনয়ে যোগ দিল আমার বন্ধু ডাক্তার স্মিথও।”

মিজানুর রহমারের কথা শুনে আবরাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”কিন্তু আমার এরকম ভাবে আর অভিনয় চালিয়ে যেতে ভালো লাগছে না। আমার প্রতিনিয়ত মনে হচ্ছে আমি সবাইকে ধোকা দিচ্ছি, বিশেষ করে নিঝুমকে।”

“এটা তো ঠিকই, তুই মেয়েটাকে সত্যি ধোকা দিচ্ছিস। এটার উপলব্ধি করতে পারলে তো ভালোই। দেখ, আমি তোর আর নিঝুমের বিয়ের ব্যাপারে সবটা জানতে পেরেছি। আমি এটা জানি যে, যা হয়েছে মোটেই ঠিক হয়নি। তোর সাথে ধোকাবাজি হয়েছে এই ভাবনা টাও ভুল না। কিন্তু আমার তো নিঝুমকে দেখে মনে হয়নি ও লোভী বা এমন কোন মেয়ে। বরং আমার ওকে বেশ ভালো মনের মেয়েই মনে হয়েছে। তবুও তুই যদি চাস ওকে আরো একটু পরীক্ষা করে নিতে পারিস। তবে আমার একটা বিশেষ পরামর্শ থাকবে তুই মেয়েটাকে বোঝার চেষ্টা কর। ওর মধ্যে তোর মামির বৈশিষ্ট্য গুলো খুঁজে পেয়েছি আমি। আমার তীব্র বিশ্বাস এই মেয়েকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিলে তুই ঠকবি না।”

আবরাজ বলে ওঠে,”আমি ভেবে দেখছি কি করা যায়।”

~~~~~~~~~~~~““
কয়েক সপ্তাহ পর,
মিজানুর রহমান আবরাজ ও নিঝুমকে ফ্লাইটে তুলে দিতে চলে এসেছেন। ফ্লাইটের কাছে এসেই মিজানুর রহমান নিঝুমকে বলেন,”আমার ভাগ্নেটার খেয়াল রেখো। ডাক্তার স্মিথ তো বলেই দিয়েছেন যে ওর স্মৃতি খুব শীঘ্রই ফির‍তে চলেছে। অনেক কিছুই তো ও এখন মনে করতে পেরেছে। তবে এখনো অনেক কিছু মনে করা বাকি। ”

নিঝুম মাথা নাড়িয়ে বলে,”জ্বি, আঙ্কেল। আপনাকে ধন্যবাদ।”

“ধুর পাগলী! আমায় ধন্যবাদ দিচ্ছ কেন? এটা তো আমার কর্তব্য ছিল। আর হ্যাঁ, আমার ফোন নম্বরটা নিয়ে রেখো। কোন সমস্যা হলে আমার সাথে যোগাযোগ করবে। একদম অস্বস্তি বোধ করবে না। আমি তোমাকে নিজের মেয়ের মতোই ভেবেছি। তুমিও আমাকে নিজের বাবার আসনে বসাতে পারো।”

নিঝুমের চোখে একদম জল চলে আসে। অবশেষে নিঝুম ও আবরাজ তাকে বিদায় জানায় এবং লন্ডনের ফ্লাইটের উদ্দ্যেশ্যে উঠে পড়ার জন্য রওনা দেয়। যাওয়ার আগে মিজানুর রহমান আবরাজকে আলিঙ্গন করে এবং তার কানে কানে বলে,”তুমি এখনো ভেবে দেখো কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ। তবে আমি তোমাকে এতটুকু নিশ্চয়তা অবশ্যই দিতে পারি, যে এই নিঝুম মেয়েটি তোমার জন্য কেয়ার করে। তাই ওকে বেছে নিলে তুমি ঠকবে না। বরং বলতে গেলে জয়ীই হবে।”

আবরাজ নিঝুমের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়। আসলে এই ক’দিনে নিঝুমের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছে। সে এখন নিজের অনেক সিদ্ধান্তই পুনবিবেচনা করার কথা ভাবছে৷ তার কেন জানি মনে হচ্ছে, একসময় যখন সে ভেবেছিল এই মেয়েটির সাথে তার এক মুহুর্তও থাকা সম্ভব নয় কিন্তু আজ মনে হচ্ছে এই মেয়েটির সাথে যুগের পর যুগ থাকা সম্ভব। শক্ত খোলসের আড়ালে মেয়েটির কোমল দিক সে আবিস্কার করে ফেলেছে।

এদিকে নিঝুম মনে মনে ভাবে,”আর হয়তো মাত্র কিছুদিন। তারপরই এই দায়বদ্ধতার সম্পর্ক থেকে আমি মুক্ত পাবো। আবরাজ তো মনে করতেন যে, আমি ওনার যোগ্যই না। হয়তো ওনার এই মনে করাটাই ওনার দৃষ্টিভঙ্গিতে ঠিক। আমিও জোর করে কারো জীবনে স্থান নেবো না। উনি সম্পূর্ণ রূপে নিজের স্মৃতি ফেরত পেলেই আমি ফিরে যাব সিলেটে।”

___________________________
লন্ডনের এয়ারপোর্টে নেমেই তারা দুজন ট্যাক্সিতে করে আবরাজের এপার্টমেন্টের দিকে রওনা দেয়৷ নিঝুম পুরোটা যাত্রায় জানালা দিয়ে লন্ডন শহরটি দেখছিল এবং ভাবছিল খুব শীঘ্রই হয়তো আবার তাকে এই শহর ত্যাগ করে নিজের জন্মভূমি, সিলেটে ফেরত যেতে হবে।

আবরাজের এপার্টমেন্টে পৌঁছেই তারা দুজন ট্যাক্সি থেকে নামে। সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে ঘরের ভেতরের দিকে রওনা দেয়।

আবরাজ নিজের এপার্টমেন্টে ফিরে ছটফট করতে থাকে। তার কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে এখনোই নিঝুমকে তার সমস্ত সত্যটা বলে দেবে। কিন্তু কোথাও একটা গিয়ে সে আটকে যাচ্ছিল। নিঝুম আবরাজের এই অস্থিরতা খেয়াল করে বলে,”আপনি কি কোন বিষয় নিয়ে অস্বস্তি বোধ করছেন?”

আবরাজ ভাবে এটাই সঠিক সময় যখন তার নিঝুমকে সমস্ত সত্যিটা বলে দেওয়া উচিত। সে বলতেই যাবে এমন সময় হঠাৎ করে তাদের বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে। যার ফলে আবরাজ আর বলতে পারে না। নিঝুম বলে ওঠে,”আমি দেখে আসি, কে এসেছে।”

বলেই নিঝুম গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়। দরজাটা খুলতেই দেখতে পায় এক পুরুষ অববয় পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। যার ফলে তার মুখ দেখতে পারে না নিঝুম। কৌতুহলের সাথে বলে ওঠে,”এক্সকিউজ মি, কে আপনি?”

পুরুষ অববয় এবার সামনের দিকে ঘোরে। মুখে মাস্ক পড়া থাকায় তখনো নিঝুম তাকে ঠিক চিনতে পারছিল না। সামনের দিকে ঘুরেই সে নিজের মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে বলে,”আমাকে তুই চিনতে পারলি না নিঝুম? এটাও আমায় বিশ্বাস করতে হবে?”

নিঝুম অবাক স্বরে বলে ওঠে,”ইমরান! তুই!”

আবরাজ ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বলে,”কে এসেছে নিঝুম?”

ইমরান নামক সেই আগন্তুক বলে ওঠে,”লেট মি গেস, এটা নিশ্চয়ই তোর সেই কাজিন টু বি হাজবেন্ড..উম..আবরাজ..রাইট? হ্যালো, আবরাজ। নাইস ঠু মিঠ ইউ। আ’ম ইমরান খান। নিঝুমের চাইলহুড ফ্রেন্ড।”

আবরাজ কিছুটা গম্ভীর স্বরে বলে,”নাইস ঠু মিঠ ইউ ঠু। বাট আপনি হঠাৎ এখানে..”

নিঝুম বলে,”আমরা একই স্কুলে পড়তাম। ইমরান যখন ক্লাস ৭ এ পড়তো তখনই ও সপরিবারে লন্ডনে চলে আসে। আজ দীর্ঘ ৫ বছর পর আমি ওকে দেখলাম।”

ইমরান বলল,”তুই তো বন্ধু নামে কলংক। লন্ডনে এসেও আমার খোঁজ করলি না। তাই আমি নিজেই তোর খোঁজ করতে করতে এখানে চলে এলাম।”

নিঝুম হেসে ওঠে। এদিকে ইমরানের উপস্থিতি আবরাজের একদমই ভালো লাগে না। সে ঈর্ষা অনুভব করতে থাকে।
to be continue…..

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_20
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আবরাজ অবাক চোখে নিঝুমকেই দেখছিল। নিজের বন্ধুকে দেখে নিঝুমের চোখে সে যে আনন্দ উপলব্ধি করছে তা আবরাজের মনে হিংসা নামক অনুভূতির সৃষ্টি করছে। আবরাজ নিজ হাত মুষ্টিবদ্ধ করছে। মনে মনে চরম আক্রোশ নিয়ে বলছে,”এত কিসের খুশি নিঝুমের? লন্ডনে আসার পর থেকে তো ওকে এত খুশি দেখিনি৷ নিজের বন্ধুকে দেখতে পেয়েই খুশি একদম উতলে উঠেছে!”

এদিকে নিঝুম খুশি মনে ইমরানকে বলে,”তুই আর কতক্ষণ এভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবি? আয়, ভেতরে আয়।”

ইমরান মৃদু হেসে বলে,”সেটা আবার আলাদা করে বলতে হবে নাকি? আমি তো তোর ঘরেরই লোক।”

বলেই ইমরান ঢুকে পড়ে। আবরাজের গাত্রদাহ আরো বৃদ্ধি পায়। সে না পারছিল কিছু সইতে আর না পারছিল কিছু বলতে। ইমরান ঘরে প্রবেশ করেই আবরাজকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”আপনি আমার হঠাৎ এভাবে চলে আসায় কিছু মনে করেন নি তো ব্রো?”

আবরাজের তো ইচ্ছা করছিল মেরে ইমরানের নাক ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু সে অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে,”না, না। আমি আবার কেন কিছু মনে করতে যাব? আমি কিছুই মনে করিনি।”

ইমরানকে এটুকু বলেই সে নিঝুমকে বলে,”তোমার বন্ধুর খাতির যত্নের ব্যবস্থা করো। ওর যত্ন-আত্তির যেন কোন ত্রুটি না হয়।”

ইমরান বলে,”আরে ব্রো! আপনাকে এসব নিয়ে কিছু ভাবতে হবে না। নিঝুম কি আমার পর নাকি? আমাকে এত ফর্মালিটি দেখাতে হবে না। নিজের ঘরের লোকের মতোই দেখতে পারেন আমাকে।”

আবরাজের ক্রোধ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল কিন্তু সে তবুও কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। নিঝুম ইমরানকে বলে ওঠে,”ইশ! যদি আমি আগে জানতাম তুই আসবি তাহলে তোর পছন্দের খাবার গুলো বানাতে পারতাম।”

আবরাজ একথা শুনে চরম ক্রোধে মনে মনে বলে,”প্রথম প্রথম তো আমায় শুটকির রেসিপি করে খাওয়াতো জোর করে! আর নিজের বন্ধু আসতেই দেখো তার পছন্দের খাবার বানাতে উতলা হয়ে উঠছে!”

ইমরান বলে,”তুই যা খেতে দিবি, আমি তাই খাবো। আর খাওয়ার সময় কি চলে যাচ্ছে নাকি? এখন থেকে তো আমি রোজই এখানে যাওয়া আসা করব।”

আবরাজ হতবাক স্বরে বলে ওঠে,”রোজ!”

ইমরান মৃদু হেসে বলে,”হ্যাঁ, ব্রো। আমার বাবা তো এখানেই নতুন একটা কফিশপ খুলেছে। এখান থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই আমার বাবার কফিশপ। খুব শীঘ্রই আমরা সপরিবারে এখানেই নতুন এপার্টমেন্টে উঠব।”

“বাহ, বেশ ভালোই তো।”
ক্রোধ লুকিয়ে বলে আবরাজ।

নিঝুম ইমরানকে বসতে বলে কিচেনে চলে যায়। ইমরান সোফায় বসে ফোন ঘাটতে থাকে। আবরাজ ইমরানকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। একটু পরেই নিঝুম হাতে দুই মগ কফি নিয়ে এসে ইমরানকে বলে,”এই নে তোর প্রিয় ব্ল্যাক কফি। চিনি দেইনি একদম।”

ইমরান হেসে বলে,”তোর এখনো মনে আছে যে আমি চিনি ছাড়া কফি খাই?”

নিঝুম বলে,”মনে থাকবে না কেন? আমার তো এখনো সেদিনের কথা মনে আছে। ঐ যে স্কুল থেকে জাফলং এ পিকনিকে গিয়ে যখন তুই চিনিযুক্ত কফি খেয়ে বমি পর্যন্ত করে দিয়েছিলি।”

এই বলে দুজনে একসাথে হেসে ওঠে। আবরাজের সহ্যের মাত্রা একদম ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। এরইমধ্যে নিঝুম তার দিকে একটা কফির মগ বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই নিন, কফি।”

আবরাজ গম্ভীর স্বরে বলে,”আমার এখন কফি খেতে ইচ্ছা করছে না। তোমরা খাও। আমি একটু রুমে যাচ্ছি। মাথাটা কেমন জানি ব্যথা করছে।”

নিঝুম উদ্বিগ্ন স্বরে বলে,”সেকি! আপনার আবার কি হলো?”

“তেমন কিছু না। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।”

“ঠিক আছে। আপনি গিয়ে বিশ্রাম নিন। আর কোন প্রয়োজন হলে আমায় ডাকবেন।”

আবরাজ আর কোন কিছু না বলেই নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। এরপর ইমরান ও নিঝুমের ঘনিষ্ঠতার কথা ভেবে দেয়ালে জোরে একটা ঘুষি দিল। যাতে সে নিজের হাতেই প্রচণ্ড আঘাত পেল। আবরাজ সেসব পরোয়া না করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”অসহ্যকর!”

~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঝুম ও ইমরান নানা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলে। কথা বলতে বলতেই হঠাৎ করে ইমরান জানতে চায়,”আচ্ছা, তুই হঠাৎ এভাবে বিয়ে কেন করে নিলি? তোর তো ডাক্তার হবার স্বপ্ন ছিল। সেসবের কি হলো?”

নিঝুম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল৷ অতঃপর চাপা কষ্ট নিয়ে বলল,”সব স্বপ্ন কি আর পূরব হয়?”

ইমরান অবাক হয়ে জানতে চায়,”মানে?”

নিঝুম অশ্রুসিক্ত নয়নে এবার ইমরানকে তার বিয়ে থেকে শুরু করে সব ঘটনা বলতে শুরু করে। সব শুনে ইমরান তাজ্জব বনে যায়। নিঝুম কত খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে সেটা সে অনুধাবন করতে পারে। ইমরান নিঝুমের কাঁধে হাত দিয়ে সমবেদনা জানিয়ে বলে,”একজন বাবা কিভাবে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে? তোর বাবা কিভাবে এমন করতে পারল? আজ শুধুমাত্র তার জন্যই তোর জীবনটা এত এলোমেলো হয়ে গেল। আর তুই এই মিথ্যা জীবনটা কেন বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিস বল তো? তুই তো আরো ভালো কিছু ডিজার্ভ করিস। আর আমার মতে, তোর জীবন তো এখনো শেষ হয়ে যায়নি৷ তোর এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট তো মনে হয় এখনো দেয়নি। আমার মনে হয়, রেজাল্ট দেয়ার পর তোর উচিৎ দেশে ফিরে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গঠনে মনযোগ দেয়া। এই মিথ্যা সম্পর্ক বয়ে নিয়ে বেড়ালে তুই অপমান আর গঞ্জনা ছাড়া আর কিছুই পাবি না। তোর কাছে যা শুনলাম, তাতে তো মনে হলো মিস্টার আবরাজের এখন স্মৃতি নেই জন্যই তোর সাথে ভালো ব্যবহার করছে। স্মৃতি ফিরলেই আবার আগের মতো খারাপ ব্যবহার করা শুরু করবে!”

নিঝুম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আমিও এ ব্যাপারে নিশ্চিত রে! আমি তো শুধু এখন মানবিকতার খাতিরে ওনার খেয়াল রাখছি৷ তবে আর বেশিদিন বোধহয় আমাকে এই মিথ্যা সম্পর্ক বয়ে নিয়ে যেতে হবে না। কারণ উনি নিজেই এই সম্পর্ক রাখতে চান না। আর ডাক্তার বলেছেন খুব শীঘ্রই ওনার স্মৃতি ফেরত আসবে। একবার ওনার স্মৃতি ফেরত আসলে তারপর আমি এখান থেকে চলে যাব। নিজের জীবন নিজের মতো গুছিয়ে নেব।”

ইমরান নিঝুমের হাত আলতো ভাবে স্পর্শ করে বলে,”একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তুই। সবসময় মনে রাখবি, তুই একা না। তোর এই বন্ধু তোর সব সিদ্ধান্তে তোর পাশে থাকবে। তোর কোন সাহায্য লাগলে শুধু একবার আমায় বলবি। আমি তোকে সাহায্য করার জন্য সর্বদাই প্রস্তুত আছি।”

দূরে দাঁড়িয়ে তাদের এসব কথোপকথনের সাক্ষী হয় আবরাজ। সে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। ক্রোধের সাথে ফিসফিস করে বলে,”তাহলে এই পরিকল্পনা করছ তুমি নিঝুম? আমি তো ভেবেছিলাম এবার নিজের সব অভিনয়ের কথা তোমার সামনে বলে দিয়ে সবকিছুর একটা নতুন শুরু করব কিন্তু এখন দেখছি এই সত্যটা তোমার কাছে প্রকাশ করব না। দেখি তুমি কিভাবে এখান থেকে ফিরে যাও।”

একটু পরেই ইমরান ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়। ইমরান যাওয়ার আগে নিঝুমকে বলে যায়,”থাক তাহলে, আবারো দেখা হবে।”

বলেই সে বিদায় নেয়। ইমরান চলে যেতেই নিঝুম দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই নিজের চোখের সামনে আবরাজকে দেখতে পায়। আবরাজ ক্রোধিত চোখে তার দিকেই তাকিয়ে। নিঝুম আলতো স্বরে বলে,”আপনি?”

আবরাজ বলে,”কি বলছিলে তোমার বন্ধুকে? আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তুমি?”

নিঝুম কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। একটু ভেবে কিছু বলতে উদ্যত হবে এমন সময় আবরাজ নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা নিঝুমের ঠোঁট দখল করে নেয়। নিঝুম পুরোপুরি হতবাক হয়ে যায়। কিছু সময় ধরে এভাবেই পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে নিঝুম। তারপর হুশ হতেই আবরাজকে সর্বশক্তি দিয়ে দূরে ঠেলে দেয়। আবরাজ বলে ওঠে,”আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা একদম মুখে আনবে না। তোমাকে এখানেই থাকতে হবে তাও আমার সাথেই…”
to be continue…..