অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব-২৩+২৪

0
765

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_23(ধামাকা)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আবরাজ সুস্থ হয়ে নিজের এপার্টমেন্টে ফিরেছে। নিঝুম মাথা নিচু করে আবরাজের রুমে প্রবেশ করে। আবরাজ নিঝুমকে আসতে দেখে বলে,”তুমি কি কিছু বলবে?”

নিঝুম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”জ্বি, আমি আসলে..আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।”

“ক্ষমা! কিন্তু কিসের জন্য?”

“আপনাকে ভুল বোঝার জন্য। আমার একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য আপনার জীবনে আজ এত বড় বিপদ ডেকে এনেছে।”

“মানে?”

“আমি জানতাম, চিংড়ি মাছে আপনার এলার্জি। তবুও আমি আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য চিংড়ি মাছ খেতে দিয়েছিলাম। কারণ আমার মনে সন্দেহ জন্ম নিয়েছিল যে আপনি হয়তো স্মৃতি হারান নি এমনি নাটক করছেন আর তাই..”

আবরাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আর সেজন্যই তুমি এমন একটা ফন্দি আটলে? আচ্ছা, তোমার কেন মনে হলো আমি স্মৃতি হারাই নি।”

“আসলে..”

“দেখো, নিঝুম। আমি তোমাকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই। আমি জানি না, আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা আগে কেমন ছিল। তবে যতটুকু আন্দাজ করতে পারছি খুব একটা ভালো হয়তো ছিল না। এজন্যই তুমি আমাকে সবসময় এমন সন্দেহের চোখে দেখো হয়তোবা। কিন্তু আমি সত্যি বলছি,আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা আর পাঁচটা স্বাভাবিক স্বামী-স্ত্রীর মতো হোক।”

নিঝুম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”সেটা আপনি এখন বলছেন কারণ আপনার আগের কোন স্মৃতি নেই। কিন্তু আপনার আগের স্মৃতি ফিরে এলেই নিশ্চয়ই আপনি আবার আমার সাথে আগের মতো ব্যবহার করবেন। আবার আমায় বলবেন যে..এই সম্পর্ক রাখতে চান না।”

“আর যদি আমি স্মৃতি ফেরার পরেও এমনটা না বলি?”

“মানে?”

“মানে যদি আমি স্মৃতি ফেরার পরেও তোমাকে নিজের করে চাই তবে তুমি থাকবে তো আমার পাশে?”

“কি বলছেন এটা আপনি?”

আবরাজের মন চাইল এখনই নিঝুমকে সব সত্যটা বলে দিতে। তবে সে কিছু একটা ভেবে থেমে গেল। অতঃপর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,”আমার একটু বিশ্রাম দরকার। তুমি একটু আমায় একা থাকতে দাও।”

নিঝুম আর এক মুহুর্ত বাক্যব্যয় না করে বাইরে আসে। অতঃপর কিচেনে গিয়ে রান্না বসিয়ে দেয়।

______________
ম্যাক্স ও এলিনা এসেছে আবরাজের সাথে দেখা করতে। আবরাজ তাদের দুজনকে দেখে বিছানায় শোয়া থেকে আড়মোড়া ভেঙে বসে। ম্যাক্স এসেই আবরাজকে বলে,”কাজটা কি তুমি ঠিক করলে আবরাজ? চিংড়ি খেলে তোমার বড় কোন ক্ষতি হতে পারে এটা জেনেও কেন চিংড়ি খেতে গেলে? যদি বড় কোন বিপদ হয়ে যেত?”

আবরাজ বলে,”এটা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না। আমি যদি চিংড়ি মাছটা না খেতাম তাহলে নিঝুম সন্দেহ করত আমার উপর। আর এমনটা হলে আমি ওর চোখে খারাপ হয়ে যেতাম। আমি চাই না, নিঝুম আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখুক।”

এলিনাও নিজের রাগ ঝেড়ে বলে,”আমিও তো সেটাই বলছি। কাজটা কিন্তু একদম ঠিক হয়নি। আর আমার মনে হয় তোমার এবার এই মিথ্যা অভিনয় ত্যাগ করা উচিৎ। আর কতদিন এভাবে অভিনয় চালিয়ে যাবে? যে উদ্দ্যেশ্যে অভিনয় করছিলে সেটা তো পূরণ হয়েছে। এখন তো আর নিঝুমের প্রতি তোমার কোন সন্দেহ নেই। তাইনা? আর তোমার কয়েক দিনের ব্যবহার দেখে যা মনে হচ্ছে তুমি নিঝুমকে অন্য চোখে দেখতেও শুরু করেছ। তাহলে আর কিসের লুকোচুরি? এবার সব সত্যটা নিঝুমকে বলে দাও।”

আবরাজ বলে,”হুম, বলব। তবে একটু সময় বুঝে। আমি তাড়াহুড়ো কোন কিছু করতে চাইছি না। আমি চাই৷ আমার আর নিঝুমের সম্পর্কটা আরো স্বাভাবিক হোক।”

ম্যাক্স বলে,”তোমার এই স্মৃতি নষ্টের অভিনয় আর বেশিদিন করার দরকার নেই। এবার এর অবসান ঘটাও।”

এমন সময় নিঝুম ম্যাক্স ও এলিনার জন্য কফি নিয়ে আসে নিঝুম। দরজায় দাঁড়িয়েই সে ম্যাক্সের বলা কথাটা শুনে নেয়। আগের পরের আর কোন কথাই সে শোনে না। এই একটি কথার ভিত্তিতে সে মনে করে তার সাথে এতদিন ধরে সবাই প্রতারণা করেছে। রাগে-ক্ষোভে নিঝুম কাপতে থাকে। তার হাত থেকে কফির মগ পড়ে যায়। সেই শব্দে সবাই দরজার দিকে তাকাতেই চরম অবাক হয়। আবরাজ বলে ওঠে,”নিঝুম তুমি?”

নিঝুম এগিয়ে এসে বলে,”হ্যাঁ, আমি। বড্ড ভুল সময় চলে এলাম তাইনা? আপনাদের এত দিনের সাজানো নাটক এক নিমেষেই শেষ হয়ে গেল।”

এলিনা বলল,”নিঝুম, লিসেন টু মি। তুমি ভুল ভাবছ। লেট আস এক্সপ্লেইন।”

নিঝুম বলে ওঠে,”প্লিজ..আর কোন এক্সকিউজ দিতে হবে না আপনাদের। আমি আপনাকে বড্ড বিশ্বাস করেছিলাম এলিনা। তবে আপনিও যে মিস্টার আবরাজের এই জঘন্য পরিকল্পনার সঙ্গী হবেন আমার তা জানা ছিল না। আসলে ভুলটা আমারই। আপনাদের কাউকে বিশ্বাস করাই আমার উচিৎ হয়নি।”

আবরাজ এবার উঠে এসে নিঝুমের কাধে হাত রেখে বলে,”নিঝুম, আমার কথাটা শোন। আমি এই মিথ্যা অভিনয় করেছি তার পেছনে অনেক বড় একটা উদ্দ্যেশ্য ছিল।”

নিঝুম আবরাজের হাত নিজের কাধ থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে বলে,”ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মি। এতদিন ধরে আপনার অনেক অভিনয় দেখেছি আর নয়। আপনি কি বুঝবেন, আমার মানসিক অবস্থা? অন্যের ইমোশন নিয়ে খেলা তো আপনার কাছে কিছুই না।”

বলেই নিঝুমের চোখ দিয়ে অজান্তে অশ্রু ঝড়তে থাকে। নিঝুম সেটা মুছে নিয়ে বলে,”আপনারা সবাই মিলে আমার সাথে প্রতারণা করেছেন। এত গুলো দিন ধরে আমায় বোকার স্বর্গে রেখেছেন৷ আমিই..আমিই নির্বোধ আমি আপনাদের এই চাল বুঝতে পারি নি। এত দিন ধরে নিঃস্বার্থ ধরে আপনার সেবা করে গেছি। ভেবেছি আপনি এক অসহায় মানুষ কিন্তু আপনি.?”

ম্যাক্স বলে,”তুমি নিজেই সবকিছু বুঝে নিচ্ছ নিঝুম আমাদেরও অন্তত কিছু বলার সুযোগ দাও।”

নিঝুম বলে,”আমার আর কিছু বলার বা শোনার ইচ্ছা নেই আপনাদের থেকে। আপনাদের দেখে জাস্ট আমার ঘৃণা আসছে। আর কিছু না। আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকব না।”

আবরাজের বুক কেপে ওঠে। সে নিঝুমের সামনে এসে বলে,”কোথায় যাবে তুমি?”

“যেখানে দু চোখ যায় সেখানে যাব। কিন্তু আপনাদের মতো প্রতারকের সাথে এক মুহুর্ত আর থাকব না।”

আবরাজ নিঝুমকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,”আমার কথা না শুনে এক পাও নড়বে না। আমাকে সবটা বোঝাতে দাও।”

“কি বোঝাবেন আর আমায়? আমি কি কচি খোকা? আমি আপনাদের উদ্দ্যেশ্য বুঝে গেছি। আপনি আমার উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন তাই না? এজন্যই আমার ইমোশন নিয়ে খেলেছিলেন। ভেবেছিলেন এভাবে নাটক করে আমাকে নিজের প্রেমে ফেলবেন তারপর নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দেবেন।”

“তুমি ভুল..”

“ভুল না আমি ঠিকই ভাবছি। এবার আপনিও শুনে রাখুন, আপনার এই উদ্দ্যেশ্য পূরণ হতে দিব না আমি। আপনি আমায় কি নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দেবেন? আমি আজ নিজেই আপনার জীবন থেকে সরে যাব। নিজের পথ আমি নিজে বেছে নেব।”

বলেই আবরাজকে দূরে ঠেলে সে ঘর থেকে বেরোনোর চেষ্টা করে। নিঝুম বলে,”আমায় যেতে দিন। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”

আবরাজ ইশারা করে ম্যাক্স ও এলিনাকে বেরিয়ে যেতে বলে। তারা বেরিয়ে যেতেই আবরাজ ঘরের দরজা লাগিয়ে বলে,”আমি তোমার উপর জোর করতে চাইনি কিন্তু তোমায় ধরে রাখার জন্য এবার আমায় এটা করতেই হবে..”

বলেই আবরাজ নিজের শার্ট খুলতে শুরু করে। নিঝুম ভয় পেয়ে বলে,”কি করছেন এটা?”

“তোমাকে নিজের কাছে ধরে রাখার ব্যবস্থাম”

“প্লিজ..এটা করবেন না।”

আবরাজ নিঝুমের অনুনয় শুনল না। জোর করে তাকে বিছানায় ফেলে দিল। অতঃপর তার উপর নিজের পুরুষত্ব দেখালো। নিঝুমের চিৎকারে ঘরে এক লোমহর্ষক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো।

to be continue…..

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_24
#ইয়াসমিন_খন্দকার

নিঝুম মেঝেতে বসে আছে তার চোখ দুটো বন্ধ। সেই চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রুপাত হয়ে চলেছে। অন্যদিকে বিছানায় বসে আছে আবরাজ। তার দৃষ্টি আনত। নিজের কাজে এখন তার বেশ আফসোস হচ্ছে। আবরাজ বুঝতে পারছে জেদের বশে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে সে। এভাবে নিঝুমের উপর জোর করে অধিকার বিস্তার করা উচিৎ হয়নি। এটা নিঝুমের অধিকার হরণ করেছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যেমন পবিত্র তেমনি তাদের মিলনেও উভয় পক্ষের সম্মতির প্রয়োজন। আবরাজ ভাবল, নিঝুমের কাছে এবার এর জন্য ক্ষমা চাইবে। এই চিন্তা থেকে সে মেঝেতে নিঝুমের সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। অতঃপর অনুতাপের কন্ঠে বলল,”নিঝুম, আমি ভীষণ দুঃখিত। আমার উচিৎ হয়নি এভাবে তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে..আমি স্বীকার করছি আমি ভুল করেছি। যাইহোক আমরা বিষয়টা নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে নিতে পারি।”

নিঝুম এবার চোখ খুলে। তার চোখ একদম রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। রাগে ক্ষোভে সে আবরাজকে ধাক্কা দেয় যাতে আবরাজ পড়ে যায়। আবরাজ অবাক চোখে নিঝুমের দিকে তাকায়। নিঝুম গর্জে উঠে বলে,”ভুল! এটা আপনার ভুল। আপনি যা করেছেন তা কতটা জঘন্য আপনি জানেন? আপনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমায়..”

নিঝুম ডুকরে কেঁদে ওঠে। আবরাজ বলে,”প্লিজ, তুমি এভাবে কেঁদো না। বিষয়টাকে আর কঠিন করে তুলো না আমার জন্য।”

নিঝুম উঠে দাঁড়ায়। চোখের জল মুছে বলে,”অনেক সহ্য করেছি আমি আর না৷ একে তো আপনি আমার সাথে প্রতারণা করেছেন তার উপর আপনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। এটা হতে পারে যে, আপনি আমার স্বামী। কিন্তু শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। তার থেকে বড় কথা, আমাদের সম্পর্ক তো আর ৪-৫ টা দম্পত্তির মতো নয়। আমাদের সম্পর্কটা কেমন সেটা আপনিও জানেন। তবু আপনি কিভাবে এত নীচ একটা কাজ করলেন?”

আবরাজ বলে,”আমি সবকিছু ঠিক করে দেব। আমি তোমার সাথে..তোমার সাথে সংসার করতে চাই নিঝুম। আমরা চাইলেই আমাদের সম্পর্কটা ঠিক করে নিতে পারি।”

“এত কিছুর পর আপনি কোন মুখে এসব কথা বলছেন? আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, আমার আত্মসম্মানকে আঘাত করে আপনি এহেন কথা বলতে পারেন না। আপনি আজ যা করলেন তার চরম মূল্য আপনাকে দিতে হবে৷ কি ভেবেছেন? এসব করে আমায় আটকে রাখবেন? পারবেন না। আমি এখনই এখান থেকে চলে যাব। আপনার সাথে আর এক সেকেন্ডও থাকার ইচ্ছা নেই আমার।”

বলে নিঝুম যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আবরাজ তার পথ আটকে দাঁড়াল। বলে উঠল,”আমি তোমাকে কিছুতেই যেতে দেবো না।”

“আমার সামনে থেকে সরে দাড়ান। আমাকে আটকানোর আপনি কেউ নন।”

“নিঝুম!”

“চোখ রাঙাবেন না। আপনার এই চোখ রাঙানিতে আমি ভয় পাই না।”

আবরাজ নিঝুমকে শক্ত করে ধরে বলল,”আমাকে আরো খারাপ হতে বাধ্য করো না।”

“এর থেকে বেশি আর কত খারাপ হবেন আপনি? খারাপের আর কি বাকি রেখেছেন টা কি আপনি?”

“দেখতে চাও আমার আরো খারাপ রূপ? আমি চাইলে দেখাতেই পারি।”

নিঝুম বলে,”এভাবে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনি আমার সাথে এত অন্যায় করতে পারেন না।”

“আমি কি পারি আর কি পারি না সেই ব্যাপারে তোমার কোন ধারণা নেই। ভুলে যেও না, তোমার পাসপোর্ট ভিসা সব আমার জিম্মায়। এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোন যায়গা পাবে না। আর যদি এরপরেও বেশি বাড়াবাড়ির চেষ্টা করো তো…”

“তো কি করবেন আপনি?”

“প্রয়োজনে তোমার পা ভেঙে বিছানায় ফেলে রাখবো। তবুও তোমায় আটকে রাখব নিজের কাছে।”

“ব্যস, ওটাই তো পারেন আপনি। আমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমায় আঘাত দেয়া, এটাই আপনার কাজ। এসব করে নিজেকে পুরুষ বলে দাবি করছেন? আপনি কি ভেবেছেন আজ যেভাবে আমার উপর জোরজবরদস্তি করলেন তা আপনার পুরুষত্ব বাড়িয়েছে? না ভুল ভাবছেন আপনি। এটা প্রমাণ করেছে আপনি একজন কাপুরুষ, একজন রেপিস্ট!”

আবরাজ রেগে গিয়ে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। জোরে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় নিঝুমের গালে। চিৎকার করে বলে ওঠে,”আমি কোন রেপিস্ট নই। আমি তোমার স্বামী।”

এটা যেন আগুনে ঘি ঢালার সমান ছিল। নিঝুম এটা মেনে নেয় না। সেও জোরে থাপ্পড় মারে আবরাজের গালে। আবরাজ চূড়ান্ত পর্যায়ের হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে নিঝুমের দিকে। নিঝুম আবরাজের দিকে আঙুল তুলে বলে,”আমাকে এতোটাও দূর্বল ভাববেন না। আমায় আঘাত করলে তার বিপরীতে আঘাত করার ক্ষমতাও আমার আছে।”

নিঝুমের এই প্রতিক্রিয়া আবরাজকে ভীষণ রাগিয়ে দেয়। সে নিঝুমের সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে,”বেড়িয়ে যা আমার এপার্টমেন্ট থেকে। রাস্তায় গিয়ে পচে মর। আর নাহলে তোর ঐ নাগর ইমরানের কাছে যা। এটাই তো চাচ্ছিলি তুই তাই না? যা তোকে দিলাম সুযোগ। যা গিয়ে কত নষ্টামি করার কর।”

“মিস্টার আবরাজ!”

“চুপ। বেরিয়ে যা। এক্ষুনি বের হ।”

নিঝুম এহেন অপমান মেনে নিতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায় আবরাজের এপার্টমেন্ট থেকে। নিঝুম বেরিয়ে যেতেই আবরাজ দরজা বন্ধ করে অন্ধকারে বসে থাকে ঘরের মাঝে। রাগে ফুসছিল সে।

~~~~~~~~~~~~~~~~
এদিকে নিঝুম দৌড়াতে দৌড়াতে ইমরানের কফিশপে পৌঁছে যায়। ইমরান তখন ঐ কফিশপের মধ্যেই ছিল। নিঝুমকে আসতে দেখে সে বলে ওঠে,”নিঝুম, তোকে এমন লাগছে কেন? কিছু কি হয়েছে। তোকে কেন জানি ভীষণ অদ্ভুত লাগছে!”

আশেপাশে ভীড় দেখে নিঝুম কিছু বলে না৷ ইমরান সেটা খেয়াল করে বলে,”আমার সাথে ভেতরে চল। ভেতরে বসে প্রাইভেটলি কথা বলা যাবে।”

নিঝুম সায় জানায়। ইমরানের সাথে ভেতরে যায়। ইমরান নিঝুমকে পানি খেতে দেয়। নিঝুম সেই পানিটা খেয়ে নেয়। ইমরান জানতে চায়,”এবার আমাকে সবটা খুলে বল তো। কি হয়েছে? তুই হঠাৎ এই সময় আমার ক্যাফেতে এই অবস্থায় এলি কেন? তোকে তো খুব একটা ভালো লাগছে না। আমার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে তোর জন্য।”

নিঝুম নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,”সে অনেক ঘটনা। তোকে পরে সব খুলে বলব আমি। এখন তোর কাছে যদি কিছু সাহায্য চাই, তুই করবি তো?”

“অবশ্যই। আমি এখানে আছি কি করতে। তোর যা সাহায্য লাগবে তুই বল, আমি করার জন্য প্রস্তুত।”

“আমাকে এখানে কোথাও একটা মাথা গোজার ব্যবস্থা করে দিতে পারবি? আমার এখানে যাওয়ার কোন যায়গা নেই। আমার পাসপোর্ট, ভিসা সব মিস্টার আবরাজ এর কাছে। নাহলে আমি দেশেই ফিরে যেতাম কিন্তু..”

“সেসব নিয়ে তুই কোন চিন্তা করিস না। আমি কিছু না কিছু ব্যবস্থা ঠিক করে নেব। এখন আমায় বল, তোর সাথে আসলে ঘটেছে টা কি?”

নিঝুম দুচোখ বন্ধ করে নেয়। অতঃপর তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলে ইমরানকে। সব শুনে ইমরান চূড়ান্ত পর্যায়ের রাগান্বিত হয়৷ রাগে তার হাত-পা কাপছিল। সে বলে ওঠে,”ঐ জার্কটা তোর সাথে এসব করল আর তুই এভাবে মেনে নিলি..”

“মেনে নেই নি আমি৷ আমি প্রতিবাদ করেছি এসবের।”

“শুধু প্রতিবাদ যথেষ্ট নয় তোকে আরো বেশি কিছু করতে হবে।”

“মানে?”

“তুই আবরাজ খানের নামে কেইস ফাইল কর।”

“কেইস? কিন্তু কিভাবে? উনি তো আমার স্বামী হন।”

“ইংল্যান্ডে মেরিটাল রে**পও একটা বড় ক্রাইম এবং এর বিরুদ্ধেও কেইস ফাইল করা যায়। তুই শুধু আমার সাথে থানায় চল একবার। তারপর ঐ আবরাজ খানের জীবন কীভাবে হেল করতে হয় সেটা আমি দেখে নিচ্ছি। ও তোর সাথে যা অন্যায় করেছে তার ফল ওকে পেতেই হবে।”

“কিন্তু এটা কি ঠিক হবে?”

“আলবাত হবে। তুই শুধু আমার সাথে থানায় চল। এর একটা বিহিত করতেই হবে।”

“আমাকে একটু ভাবার জন্য সময় দে। আমি দেখছি কি করা যায়।”
to be continue…..