অশ্রুজলে বোনা বিয়ে ২ পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
73

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_33
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশা সামান্য হেসে রাহেলা খন্দকারকে ধরে তার গাড়িতে তুলে দিতে সাহায্য করেন। অতঃপর চকলেটের ব্যাগটা রাহেলা খন্দকারের হাতে তুলে দিয়ে বলে,”এটাও আপনার সঙ্গে রাখুন আন্টি। এটা বোধহয় আপনার।”

রাহেলা খন্দকার আরিশার দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,”তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মা। কেন জানি তোমায় আমার ভীষণ আপন মনে হচ্ছে জানো? আজ যদি আমার সন্তান বেচে থাকত সেও বোধহয় তোমার বয়সীই হতো।”

বলেই তিনি শাড়ির আঁচল দিয়ে নিজের চোখ মোছেন। আরিশার ভীষণ খারাপ লাগে রাহেলা খন্দকারের কথা শুনে। মহিলাটিকে দেখে তো ভীষণ ভালো মনে হচ্ছে অথচ তার কপালে কতই না দুঃখ লেখা। আরিশা বলে ওঠে,”চিন্তা করবেন না আন্টি৷ আল্লাহর কাছে আপনার সন্তানের জন্য প্রার্থনা করবেন। আল্লাহ কাউকে ফেরায় না।”

“যদি সত্যিই এমন কিছু ঘটত। যদি অলৌকিক ভাবে হলেও আমি আমার সন্তানকে ফেরত পেতাম..কিন্তু সেটা যে আর সম্ভব নয় মা।”

গাড়ির ড্রাইভার বলে ওঠেন,”এখন কি তাহলে আমি আপনাকে নিয়ে অনাথ আশ্রমে যাব নাকি হাসপাতালে?”

আরিশা বলে ওঠে,”এই অবস্থায় উনি অনাথ আশ্রমে কিভাবে যাবেন? আপনি ওনাকে নিয়ে হাসপাতালে যান।”

রাহেলা খন্দকার বলে ওঠেন,”কিন্তু অনাথ আশ্রমের বাচ্চারা যে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ওদেরকে যে এই চকলেট আর জামাগুলো দিতে হবে।”

আরিশা বলে,”আন্টি,আপনি আমায় বিশ্বাস করে চকলেট আর এই জামাগুলো দিতে পারেন। আর অনাথ আশ্রমের ঠিকানাটা বলুন। আমি গিয়ে ওদের এগুলো দিয়ে আসব।”

রাহেলা খন্দকার আবেগময় দৃষ্টিতে আরিশার দিকে তাকান। আরিশা বলে,”আমায় বিশ্বাস করতে পারেন আন্টি। আমি এগুলো সঠিক জায়গাতেই পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করব।”

রাহেলা খন্দকার বলেন,”তোমায় আমি বিশ্বাস করি মা। এই নাও এগুলো রাখো আর এখানে অনাথ আশ্রমের ঠিকানাও দেয়া আছে৷ এগুলো পৌঁছে দিও কেমন? ঐ হতভাগা বাচ্চাগুলোর কেউ নেই। ওদের জন্য কিছু একটা করতে পারলে আমার মনে হয় যেন আমি আমার সন্তানের জন্যই কিছু করছি।”

“আপনি একদম চিন্তা করবেন না আন্টি। এগুলো আমি ঠিক যায়গায় পৌঁছে দেব। আপনি এখন তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যান।”

অতঃপর রাহেলা খন্দকার আরিশাকে বিদায় জানায়। ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে তাকে নিয়ে যেতে থাকে। যাওয়ার সময় রাহেলা খন্দকারের মনে হয় যেন তিনি খুব আপন কিছু হারিয়ে ফেলছেন।

এদিকে আরিশারও কেন জানি ভীষণ খারাপ অনুভূতি হতে থাকে। এমন সময় আফিফাও সেখানে এসে বলে,”বোনু, চল এখন। আমি সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ফেলেছি।”

আরিশা বলে,”আপ্পি আমাদের আগে একটা অনাথ আশ্রমে যেতে হবে।”

“অনাথ আশ্রমে কেন? আর তোর হাতে এগুলো কি?”

আরিশা আফিফাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে আফিফা বলে,”বেশ, চল তাহলে।”

আরিশা যেতে যেতে বলে,”জানো, আপ্পি ঐ মহিলাটা না অনেক ভালো। ওনাকে দেখে কেমন জানি মা মা ফিলিংসটা আসে। ওনার সন্তানকে উনি হারিয়ে ফেলেছেন অথচ অনাথ বাচ্চাদের জন্য কিছু করেই উনি সন্তুষ্টি লাভ করেন৷ সন্তানকে কতোটাই না ভালোবাসেন উনি। আর এদিকে আমার মা-বাবা যারা জন্মের পরই আমার ত্যাগ করেছিল। সত্যিই,কত বিচিত্রই না আমাদের এই পৃথিবী।”

“আজো এমন ভালো মানুষ আছে বলেই তো পৃথিবীটা টিকে আছে।”

~~~~~~~~~~~~~
অনাথ আশ্রম থেকে বাড়ি ফিরেই আফিফা ও আরিশা অবাক হয়ে যায়৷ কেননা, ঈশিতাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে ছবি বেগম, নিঝুম ও নির্ঝর। তাদের দেখেই আফিফা বলে ওঠে,”তোমরা?”

আনিকা খান এবং আবির খানও সেখানে ছিলেন। আনিকা খান বলে ওঠেন,”আফিফা আসলে তোর দাদি, চাচি আর নির্ঝর ওরা সবাই আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে।”

আফিফার চোয়াল আচমকা শক্ত হয়। সে বলে ওঠে,”তুমি বলো নি যে, আমরা এখন ফিরবো না?”

ছবি বেগম এগিয়ে এসে বলেন,”আর মন খারাপ করে থেকো না দিদিভাই। ছোটরা ভুল করলে তো আমরা বড়রা তাদের ভুল ক্ষমা করে তাদের আপন করে নেই,তাহলে তোমরা কি পারো না বড়দেরকে ক্ষমা করতে?”

আফিফা কিছু বলবে তার আগেই নিঝুম এগিয়ে এসে আফিফার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”ফিরে চলো আফিফা। আমার ছেলেটা যে তোমাকে ছাড়া থাকতে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে। হ্যাঁ, ও হয়তো ছেলেমানুষ তাই মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না নিজের কষ্টটুকু প্রকাশ করতে পারছে না। কিন্তু আমি তো মা, তাই নিজের ছেলের কষ্টটা বুঝতে পারছি।”

ছবি বেগমও বলেন,”আর সবথেকে বড় কথা আমাদের পরিবার এতদিন পর একীভূত হয়েছে। আমার আসল নাতনিকে এতদিন পর ফেরত পেয়েছি সেখানে এই সময় তো আমাদের পরিবারের সবার একসাথে হয়ে আনন্দ করা উচিৎ। সেখানে এমন আলাদা আলাদা থাকা মোটেই কাম্য নয়।”

নির্ঝরও এগিয়ে এসে আফিফার হাত আলতো করে ধরে বলে,”আমি সবকিছুর জন্য মন থেকে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি আফিফা। দয়া করে ফিরে চলো। আমি সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে চাই। আমাদের এই ভুল বোঝাবুঝি আর আমি বাড়াতে চাই না।”

আরিশাও আফিফাকে বলে,”সবাই যখন এত করতে বলছে তখন তুমি আর মনের মধ্যে রাগ পুষে রেখো না আপ্পি। সবকিছু ঠিক করে নাও।”

আফিফা বলে,”বেশ,তোমরা যখন এত করে বলছ তখন আমি ফিরতে রাজি আছি। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।”

ছবি বেগম জানতে চান,”কি শর্ত?”

“তোমাদের সবাইকে আরিশার সাথে করা সকল খারাপ ব্যবহারের জন্য ওর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আর ওকেও আমাদের সাথে খান ভিলায় মেয়ের মর্যাদা নিয়েই নিয়ে যেতে হবে।”

আরিশা বলে ওঠে,”এসব কি বলছ তুমি আপ্পি?”

ছবি বেগম আরিশার সামনে এসে বলে,”আমায় ক্ষমা করে দিস, আরিশা। তোর সাথে আমি অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। তবে এখন আমি সব সত্য জানি, ঐ সায়ন ছেলেটা আজ সকালে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। ও এসেছে আমাদের সব বলেছে যে যা হয়েছে তাতে তোর কোন দোষ নেই। আর ঐ জাঈদ কিভাবে তোকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছিল সেসবও আমরা জানতে পেরেছি ওর মাধ্যমেই। সব না জেনে তোর সাথে কত খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। সবকিছুর জন্য আমি হাতজোড় করে..”

আরিশা ছবি বেগমকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”ছি ছি দাদি! তুমি কি করছ এসব? এভাবে ক্ষমা চেয়ে আমায় লজ্জা দিও না। তোমরাই তো আমাদের আপনজন। তোমাদের সাথে আমার হয়তো কোন রক্তের সম্পর্ক নেই কিন্তু তোমরাই তো আমায় ছোট থেকে সমস্ত আদর-ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেছ। তোমাদের সেই ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারব না। তোমাদের প্রতি আমার কোন রাগ বা ক্ষোভ নেই।”

ছবি বেগম এবার আরিশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেন। সবাই সাক্ষী হয় এই আবেগঘন দৃশ্য। সবার চোখেই জল এসে যায়। নিঝুম বলে ওঠে,”এতদিন পর আমার আসল মেয়েকে আমি ফেরত পেয়েছি। আগামীকাল ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে সকলের সাথে ওর পরিচয় করিয়ে দেব। তোমরা সবাই আজ বাড়িতে ফিরে চলো। আমি চাই,পুরো পরিবার মিলে অতীতের সব তিক্ততা আর ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে আবার এক হই। আমরা সবাই তো একটা পরিবার নাকি?”

সকলেই একমত জানায়। নির্ঝর আফিফাকে বলে,”ফিরে চলো আফিফা। আমি কথা দিচ্ছি, এরপর আর তোমায় কোন অভিযোগ করার সুযোগ দেব না।”

আফিফা বলে,”বেশ,এটাই আমি তোমাকে প্রথম এবং শেষ সুযোগ দিলাম। এরপর যদি তুমি কখনো আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করো বা এমন কিছু করো যাতে আমাদের সম্পর্কের উপর আঘাত আসে তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে চিরজীবনের মতো ছেড়ে। এরপর আর হাজার অনুরোধ, কান্নাকাটি করলেও আমি ফিরবো না!”

“বেশ।”

অতঃপর সবাই মিলে রওনা দেয় খান ভিলার দিকে। পুরো পরিবার যেন মেতে উঠতে চলেছে পুনঃমিলনের আনন্দে।
to be continue…….

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_34
#ইয়াসমিন_খন্দকার

পুরো খান ভিলায় আজ যেন উৎসবের আমেজ লেগেছে। আজ এতগুলো দিন পর খান পরিবারের সব সদস্য একসাথে আনন্দে মেতে উঠেছে। খান পরিবারের সদস্য “সালমা আক্তার বৃষ্টি” কে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য একটা বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেই নিয়েই পুরো বাড়িতে এত তোড়জোড় চলছে। এদিকে যাকে নিয়ে এত আয়োজন সেই সালমা তথা বৃষ্টি একদিকে গুটিশুটি মেরে বসে আছে৷ যদিও তার নাম সালমা তবে এই বাড়ির সবাই তার জন্য বৃষ্টি নামটাকেই বেশি উপযুক্ত মনে করেছে এবং এই নামেই মূলত তাকে ডাকছে সবাই।

বৃষ্টিকে একা বসে থাকতে দেখে আরিশা এসে তার পাশে বসে। আরিশাকে বৃষ্টিকে উদ্দ্যেশ্য করে হালকা হেসে বলে,”এভাবে চুপচাপ বসে আছ কেন? নার্ভাস ফিল হচ্ছে নাকি?”

বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ-বোধক ইশারা করে। তখন আরিশা বৃষ্টির হাতে হাত রেখে তাকে সাহস দিয়ে বলে,”এতটা নার্ভাস হওয়ার দরকার নেই। এখানে সবাই তোমার আপনজন। এটাই তো তোমার আসল পরিবার৷ তোমার ভাগ্য ভীষণ ভালো জানো, তাই এত বছর পর হলেও নিজের আসল পরিবারকে ফেরত পেয়েছ। সবার তো আর সেই ভাগ্য হয়না।”

বলেই আরিশার মুখটা একটু আধার হয়ে যায়। তবে সে বেশি দুঃখ না পেয়ে পরক্ষণে আবারো বৃষ্টিকে বসা থেকে উঠিয়ে বলে,”ওদিকে নাচগান হচ্ছে। চলো একটু নাচি।”

বৃষ্টি একটু ইতস্তত বোধ করে কিন্তু আরিশার জোরাজুরিতে আর বেশিক্ষণ না করতে পারে না৷ তারা দুজনেই “সোহাগ চাঁদ বদনী” গানে নাচতে থাকে। দূর থেকে তাদের এত আনন্দ করতে দেখে আফিফা খুশি হয়। নির্ঝর ঠিক তার পাশেই দাঁড়িয়ে। আফিফা বলে ওঠে,”এতদিন পর যেন আবার সেই আগের হাসিখুশি আরিশাকে ফেরত পেলাম আমি। ওকে এভাবে আনন্দ করতে দেখে ভীষণ ভালো লাগছে জানো। নাহলে একয়দিন ওর উপর দিয়ে যা গেছে তা ভাবতেই আমার গা শিউরে ওঠে।”

নির্ঝর আফিফাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে,”এখন কষ্টের দিনগুলো আর মনে রেখো না। এখন শুধু আমাদের একসাথে খুশি থাকার পালা।”

“আর কখনো আমায় দূর করে দেবে না তো?”

“মৃত্যু ছাড়া আর কেউ কখনো আমাদের আলাদা করতে পারবে না আফিফা।”

নির্ঝরের কথায় আফিফা স্বস্তি খুঁজে পায়৷ এদিকে আরিশা ও বৃষ্টিকে একসাথে নাচতে করতে দেখে নিঝুম, ছবি বেগম, আনিকা খান সবাই আনন্দ পাচ্ছিলেন। একটু পর আরিশা ছুটে এসে ছবি বেগমকেও টেনে নিয়ে এসে তাকে নিয়েও নাচতে থাকে। সবাই যখন এভাবে আনন্দ করছিল তখন কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এসব দৃশ্য দেখে আদৃতা যেন হিংসার আগুনে জ্বলছিল। আদৃতার এই হিংসার আগুনে ঘি ঢালার জন্যই যেন কিছু সময়ের মধ্যে সায়নও সেখানে চলে এলো। মূলত এই অনুষ্ঠানে সায়নদেরও সপরিবারে আমন্ত্রণ করেছেন আবরাজ খান। সায়নের মা বাবা আর বোন তো আসেনি তবে আমন্ত্রণ রক্ষা করতে সায়ন এসেছে। এসেই মুগ্ধ হয়ে আরিশাকে দেখছিল সায়ন। সায়নের চোখে আরিশার জন্য মুগ্ধতা খেয়াল করে আদৃতা বলে,”একজন আমার পরিচয় কেড়ে নিলো আর একজন আমার ভালোবাসা! কাউকেই সুখী হতে দেব না আমি৷ এদের সুখ আমি ধ্বংস করে দেব। আই প্রমিস।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
জামিলা শেখ ফোনে তার বড় বোনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলেন বহুদিন থেকে। অবশেষে আজ অনেক দিন পর ইভা চৌধুরী ফোন রিসিভ করায় জামিলা শেখ অনেক আশা নিয়ে ছিলেন যে এবার বোধহয় সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে৷ তবে ফোন রিসিভ করতেই তার ভুল ধারণা ভেঙে যায়। ইভা চৌধুরী তাকে একগাদা কথা শোনান৷ অবশেষে জামিলা শেখ কিছুটা বোঝানোয় তিনি বলেন,”ঠিক আছে, সন্ধ্যা আর জাঈদের ব্যাপারটা আমি ভেবে দেখবো। কিন্তু তার আগে জাঈদকে নিজে এসে বলতে হবে যে ও ওর আগের বিয়েটা মানে না এবং ও আমার সন্ধ্যাকে বিয়ে করতে চায়।”

ইভা চৌধুরী মূলত নিজের ছেলের কথা ভেবেই কথাটা বলেছেন। কেননা, সায়ন যেভাবে কিছুদিন থেকে আরিশা, আরিশা করে পাগলামী করছে তাতে শুরুর দিকে ইভা চৌধুরী ও তার স্বামী মান্যতা না দিলেও নিজেদের ছেলের জেদের সামনে অবশেষে তাদের দমে যেতে হয়েছে। কেননা, সায়ন বলে দিয়েছে, সে আরিশাকেই বিয়ে করবে নাহলে আজীবন বিয়ে করবে না। এখন যদি মাঝখান থেকে জাঈদ আর আরিশার বিচ্ছেদ হয় তবেই তাদের ছেলের মনের আশা পূরণ হবে৷ এসব ভেবেই মূলত ইভা চৌধুরী এমন একটা শর্ত দিলেন।

এদিকে ফোন রেখে জামিলা শেখ গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন যে কিভাবে তিনি এখন নিজের ছেলেকে মানাবেন। কিছু সময় পরই জাঈদ মলিন মুখে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো। বিগত কিছুদিনেই জাঈদের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। সেদিনের আরিশার প্রত্যাখ্যানের পর থেকে জাঈদ ঠিকভাবে ঘুমায় না,খায় না একদম বিধ্বস্ত লাগছে তাকে এই অবস্থায়। জামিলা শেখ জাঈদকে দেখেই বললেন,”কি হয়েছে জাঈদ? তোমায় এমন লাগছে কেন?”

জাঈদ বলে,”তেমন কিছু না। কিছু বলবে?”

“শোনো, আমি জানি তুমি ঐ মেয়ের কথা ভেবে এভাবে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে এমন পাগলের মতো ঘুরছ। কি লাভ এসব করে? ঐ মেয়ের যা দেমাগ, ভাব দেখে মনে হয় রাণী ভিক্টোরিয়া কিন্তু .আসলে তো একটা অনাথ ফকিন্নি তার এত দেমাগ কোথা থেকে আসে আমি বুঝিনা।”

আরিশার নামে এমন কথা শুনে জাঈদ রেগে বলে,”খবরদার আম্মু। আমার আরিশাকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বললে কিন্তু আমি ভুলে যাব তুমি আমার জন্মদাত্রী মা হও।”

“জাঈদ! তোমার এত অধঃপতন হয়েছে। একটা বাইরের মেয়ের জন্য তুমি আমাকে, নিজের মাকে এভাবে বলছ?”

জাঈদ এবার পাশে থাকা একটা ফুলদানি ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে বলে,”ও বাইরের মেয়ে নয়, আরিশা আমার স্ত্রী, ও আমার..ও এখানে থাকে(নিজের বুকের দিকে ইশারা করে) আমার মনে..ওকে একদম বাইরের মেয়ে বলবে না। হতে পারে ও আমার উপর রাগ করে আছে, আমায় ঘৃণা করে। করুক, আমার কিছু যায় আসে না৷ একদিন ওর সব রাগ, সব ঘৃণা দূর করে আমি ওর মনে আমার প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি করবো। ও ঠিকই একদিন আমায় ভালোবাসবে। বুঝেছ তুমি?”

“আমি এত কিছু বুঝতে চাই না। আমি কিছুতেই ঐ মেয়েকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে মানবো না। তোমার বড় খালার সাথে আমার কথা হয়েছে। উনি আমায় বলেছেন, তুমি যদি এখন গিয়ে সন্ধ্যার কাছে ক্ষমা চেয়ে সবকিছু ঠিক করে নাও তাহলে..”

জাঈদ মাঝপথেই জামিলা শেখকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”বাজে বকা বন্ধ করো আম্মু। আমি তোমাকে আগেও অনেক বার বলছি আর আজ শেষ বারের মতো বলছি আমি শুধু আর শুধু আরিশাকে ভালোবাসি৷ অন্য কাউকে না। তাই তুমি সন্ধ্যাকে নিয়ে যেই মিথ্যা স্বপ্ন দেখছ তা যত তাড়াতাড়ি বাদ দেবে ততোই তোমার জন্য ভালো। ”

বলেই জাঈদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। জামিলা শেখ রেগেমেগে বলেন,”সন্ধ্যাকে তো আমি এই বাড়ির বউ করবোই। আর সেটা কিভাবে করতে হবে সেটাও আমার জানা আছে। এর জন্য সবার আগে আমার পথের কাঁটা মানে ঐ আরিশাকে দূর করতে হবে। ভেবেছিলাম ওকে এই বাড়ি থেকে দূর করতে পারলেই হবে কিন্তু এখন দেখছি ওকে দুনিয়া থেকে বিদায় না করতে পারলে আমার স্বার্থসিদ্ধি হবে না। বেশ,তাহলে এবার আমি ওকে দুনিয়া থেকে সরানোর ব্যবস্থাই করছি।”

বলেই জামিলা শেখ একটা শয়তানী হাসি দেন।

~~~~~~~~~~~
এদিকে আফিফা নিজের রুমে এসে নিজের আর আরিশার একসাথে বাধানো একটা ছবি দেখছিল হাতে নিয়ে। হঠাৎ করে তার হাত ফসকে ছবিটা পড়ে যায়। আফিফা হচকচিয়ে যায় এবং ছবিটা তুলতে গিয়ে কাচ ফুটে তার হাত থেকে রক্ত বের হতে থাকে। এরমধ্যে হঠাৎ করে ছবি বেগম আফিফাকে খুঁজতে আফিফার রুমে এসে এই অবস্থা দেখে বলেন,”কি হয়েছে দিদিভাই?”

“দেখো না দাদি..আমি ছবিটা দেখছিলাম আর হঠাৎ করে..”

“তোমার হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে। দেখি দেখি..আর এভাবে ছবি ভেঙে যাওয়া তো ভালো লক্ষণ নয়। তাহলে কি কোন অমঙ্গল হতে চলেছে?”

“এসব কি বলছ তুমি দাদি? এমন কিছু হবে না৷ এসব কুসংস্কার।”

ছবি বেগমকে এসব বললেও আফিফার নিজের মনেও কেমন একটা খুতখুতানি থেকেই যায়।
to be continue…….

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_35
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশা অনুষ্ঠানের ফাঁকে কিছুটা বিশ্রাম নিতে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। হঠাৎ করে ফোন বেজে ওঠায় আরিশা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে প্রায় ৪০ টা মিস কলড! আরিশা ভ্রু কুচকে বলে ওঠে,”আমায় আবার এই সময় কে মিস কল দিল?”

এই ভাবনা থেকে আরিশা কলব্যাক করতে যাবে এমন সময় ফোনটা আবার বেজে উঠতেই সে কলটা রিসিভ করে নেয়। রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে এক উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বর শুনতে পায়। জাঈদ বলে ওঠে,”আরিশা..এটা তুমি? আমি সেই কখন থেকে তোমায় ফোন করছি। ফোনটা রিসিভ করছিলে না কেন? আমি কত চিন্তা করছিলাম জানো?”

“কেন ফোন করেছেন আপনি আমাকে? আমি সেদিন বললাম না,আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।”

“এতটা নিষ্ঠুর হয়ো না আরিশা। আমি কি এতটাই খারাপ যে একটা শেষ সুযোগ পাব না? তুমি কেন তোর আপুকে দিকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়েছ?”

আরিশা এবার কিছুটা অবাক হয় কারণ সে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠায় নি। তাহলে কি আফিফা তাকে না জানিয়ে এমনটা করেছে? আরিশা বলল,
“আমি তো পাঠাই নি তবে আপ্পি আমার ভালোর জন্যই পাঠিয়েছে বোধহয়। আপনি এবার দয়া করে আমায় মুক্তি দিন।”

“আরিশা!”

জাঈদের কন্ঠে ছিল তীব্র আকুলতা। সে করুণ স্বরে বলে,”আমার কথা শোনো আরিশা, আমার সাথে অন্তত একবার দেখা করো। তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই। জাস্ট একবার আমায় সুযোগ দাও। তারপর তোমার যা সিদ্ধান্ত নেবার তুমি নিও।”

“আমি..”

“প্লিজ। এটাই আমার শেষ অনুরোধ। আমি কথা দিচ্ছি, এরপর আর কখনো তোমায় বিরক্ত করবো না।”

জাঈদের বারবার এমন অনুরোধ করায় আরিশা হার মেনে নিয়ে বলে,”বেশ, আমি আপনার সাথে দেখা করবো। বলুন, কোথায় দেখা করতে চান।”

“তুমি একটু পাহাড়ি চা বাগানের দিকে এসো।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। তবে এটাই শেষবার কিন্তু।”

বলেই আরিশা ফোনটা রেখে দেয়। আরিশা সম্মতি দিতেই জাঈদের মুখে খুশি খুশি ভাব ভেসে ওঠে। সে বলে,”তোমার জন্য অনেক সুন্দর সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করে রেখেছি আরিশা। আজ তোমার সব ভুল বোঝাবুঝি আমি মিটিয়ে দেব। আর একটা অনুরোধ, তোমার আপু বা পরিবারের অন্য কাউকে জানিওনা প্লিজ। নাহলে ওরা তোমায় আসতে দেবে না।”

দরজায় দাঁড়িয়ে লুকিয়ে এসমস্ত কথা শোনেন জামিলা শেখ। তিনি একটা শয়তানী হাসি দিয়ে বলেন,”আজ আরিশা এমন সারপ্রাইজ পাবে যেটা ওর জীবনের সবথেকে ভয়াবহ আর শেষ সারপ্রাইজ হবে।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আরিশা বেশ তড়িঘড়ি করে সবার অলক্ষ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তবে বেরোনোর সময় আদৃতা তাকে দেখে নেয়। আদৃতা বিড়বিড় করে বলে,”এই মেয়ে আবার এই সময় কোথায় যাচ্ছে।”

আরিশা বেরিয়ে যাবার কিছু সময় পর আদৃতা দেখে সায়ন চারিদিকে কাউকে যেন খুঁজছে। তাই সে এগিয়ে গিয়ে সায়নকে বলে,”কাউকে খুঁজছেন?”

কিন্তু সায়ন তাকে কোন পাত্তাই দেয় না। বিষয়টা আদৃতার অনেক খারাপ লাগে। সে বলে,”নিশ্চয়ই ঐ আরিশাকেই খুঁজছে সায়ন। ঐ মেয়েটার জন্যই আমার জীবনটা এভাবে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ওর জন্যই সায়নের সাথে আমার বিয়েটা হয়নি। আর এখন তো আমার পরিবারও আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আমি তো ওকে একদমই ছাড়বো না। সাথে ঐ বৃষ্টিকেও না। এই দুজনে মিলে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। এদের দুজনকেই আমি শেষ করে দেব।”

বলেই আদৃতা ফুঁসতে ফুঁসতে বৃষ্টির দিকে তাকায়।

বৃষ্টি সবার সাথে আনন্দ করছিল। ছবি বেগম এসে বৃষ্টিকে বলে,”তুমি নিশ্চয়ই অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছ দিদিভাই। যাও, এখন নিজের রুমে গিয়ে বিশ্রাম নাও।”

“আচ্ছা,দাদি।”

বলেই বৃষ্টি বিনয়ী কন্ঠে নিজের রুমের দিকে যায়। আদৃতা বৃষ্টির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার স্থান কেড়ে নিয়ে তুমি সুখী থাকবে সেটা তো হতে পারে না ডিয়ার বৃষ্টি। তোমাকে আমি কিছুতেই সুখী হতে দেব না। আমার সব সুখ তুমি কেড়ে নিয়েছ, আমার পরিবার, আমার পরিচয় সব তুমি কেড়ে নিয়েছ। এবার এসব কিছুর ফল তোমায় পেতেই হবে।”

কথাটা বলার সময় আদৃতার চোখে এক ধরণের বিধ্বংসী হিংসা লক্ষ্য করা যায়।

~~~~~
জাঈদ সিলেটের পাহাড়ি চা বাগানের কাছাকাছি একটা হোস্টেলে এসেছে। এখন সে একটা রুম নিজে থেকে বেশ সুন্দর করে ডেকোরেট করছে। উদ্দ্যেশ্য,আজ এই রুমেই আরিশাকে নিয়ে এসে সে সুন্দর ভাবে প্রপোজ করে নিজের মনের কথা জানাবে। রুমটা সাজাতে সাজাতেই হঠাৎ করে জাঈদ বলে ওঠে,”আজকের পর আরিশা আর কিছুতেই আমার উপর রাগ করে থাকতে পারবে না। ওর সব রাগ আজকে আমি দূর করবো।”

বলেই জাঈদ মৃদু হাসে। এমন সময় হোস্টেলের এক কর্মকর্তা জাঈদের রুমে চলে আসেন খাবার নিয়ে। জাঈদ বলে,”খাবারগুলো ওখানে রাখুন, আসলে আমি এখানে একজনের জন্য অপেক্ষা করছি। সে আসার পর একসাথে ডিনার করব।”

“আচ্ছা স্যার, তবে অনেকক্ষণ থেকে দেখছি আপনি একা একাই কাজ করে যাচ্ছেন। নিশ্চয়ই অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অন্তত এই শরবতটুকু খান তাহলে আপনার ক্লান্তি দূর হবে।”

“আচ্ছা,দিন।”

বলেই জাঈদ শরবতটুকু নিয়ে খেয়ে নেয়। শরবতটা খাওয়ার কিছু সময় পর থেকেই জাঈদ কিছুটা দূর্বল বোধ করতে থাকে ও এক সময় ঘুমের ঘোরে ঢোলে পড়ে।

আরিশা জাঈদের কথামতো সিলেটের পাহাড়ি চা-বাগানের কাছে এসে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু এখানে আশেপাশে কোথাও জাঈদকে দেখতে না পেয়ে আরিশা কিছুটা অবাক হয়। বিড়বিড় করে বলে,”আমাকে এখানে আসতে বলে উনি আবার কোথায় চলে গেলেন?”

কথাটা ভেবেই আরিশা ফোন বের করে জাঈদের ফোনে কল দেয়। কিন্তু জাঈদ ফোনটা রিসিভ করে না। আরিশা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,”ভীষণ অদ্ভুত তো লোকটা! এভাবে আমায় ডেকে পাঠিয়ে নিজেই এখন না-ই হয়ে গেছেন! অদ্ভুত ব্যাপার।”

আরিশা বিরক্ত হয়ে আশেপাশে হাটাহাটি করতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ করে সে দেখতে পায় জামিলা শেখ তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। জামিলা শেখকে দেখে আরিশা অবাক হয়ে বলে,”আপনি এখানে? কিন্তু এখানে তো আপনার ছেলের আসার কথা ছিল।”

জামিলা শেখ আরিশার দিকে এগোতে থাকেন। আরিশা ভয়ে পিছোতে থাকে। জামিলা শেখ হঠাৎ করে আরিশার গলা চেপে ধরে বলে,”মায়াবীনী মেয়ে! তুই আমার ছেলের উপর কি যাদু করেছিস? তোর জন্য আমার ছেলে আমাকে অপমান করেছে,আমার কথার অমান্য হয়েছে। তোর মতো দুই টাকার মেয়েকে আমি কিছুতেই আমার ছেলের বউ হতে দেব না।”

“ছাড়ুন আমায়, লাগছে…”

“আর একটু অপেক্ষা কর। তারপর তোর সব কষ্ট চিরজীবনের মতো শেষ হবে।”

বলেই তিনি আরিশাকে ঠেলতে ঠেলতে একদম পাহাড়ের কিনারায় নিয়ে যান। আরিশা সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কেউ তার ডাকে সারা দেয় না। আরিশা একসময় বলে ওঠে,”জাঈদ! কোথায় আপনি? প্লিজ আমায় বাঁচান।”

জামিলা শেখ ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে,”তোর কি মনে হয়, আমার ছেলে এখানে তোকে বাঁচাতে পারবে? ঐ তো আমাকে এখানে পাঠিয়েছে তোকে চিরতরে শেষ করে দিতে। কারণ ও এখন নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে, বুঝতে পেরেছে যে তুই ওর জন্য কতটা ক্ষতিকর, ওকে জেলের ভাত খাওয়াতে পারিস।”

আরিশার চোখে জল চলে আসে। সে ভাবল,, তাহলে জাঈদ আমাকে এভাবে ঠকালো! আমি তো ওনাকে বিশ্বাস করেছিলাম আর উনি..

আরিশার ভাবনার মাঝেই জামিলা শেখ নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে আরিশাকে পাহাড়ের কিনারা থেকে জোরে একটা ধাক্কা মারে। আরিশা পড়ে যেতে ধরে পাহাড়ের কিনারার মাটি আকড়ে নিজেকে বাচানোর চেষ্টা করে কিন্তু জামিলা শেখ নির্দয়ের মতো আরিশার হাতে লাথি মারতে থাকেন। আরিশা বলে,”প্লিজ..আমায় মারবেন না। আমি বাঁচতে চাই..”

কিন্তু জামিলা শেখের কানে আরিশার কোন অনুরোধ যায় না৷ একসময় আরিশার হাত ছুটে যায়। সে চিৎকার করে বলে ওঠে,”আপ্পি!”

অতঃপর সে হারিয়ে যায় পাহাড়ের অতল গভীরে।
to be continue…….