#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_39
#ইয়াসমিন_খন্দকার
জরিনা হতবাক চোখে রাহেলা খন্দকারকে দেখছিল। তার মনে পড়ে যাচ্ছিল অতীতের কিছু কথা। জরিনা মনে মনে বলে,”আজ এত দিন পর কি তাহলে সব সত্য সামনে আনার জন্যই আল্লাহ আজ আমায় এখানে আনলেন?”
এদিকে আনিকা খান আফিফাকে বলে ওঠেন,”আফিফা, তুমি গিয়ে আরিশাকে ডেকে নিয়ে এসো। আরিশাকে গিয়ে বলো ও যার সাথে দেখা করার জন্য এতদিন অপেক্ষা করছিল সে এখন এখানে এসে গেছে।”
আফিফা বলে,”কি বলছ তুমি আম্মু? কে এসেছে?”
“আরিশার আসল মা, জরিনা।”
আফিফা হতবাক হয়ে যায় নিজের মায়ের কথা শুনে। এদিকে রাহেলা খন্দকারও অবাক হয়ে বলেন,”কি বলছেন আপনারা? আরিশা জরিনার মেয়ে। জরিনা, তুমি তাহলে নিজের সন্তানকে ত্যাগ করেছিলে। কিন্তু কেন?”
আফিফা রাহেলা খন্দকারকে জিজ্ঞেস করে,”আপনি এনাকে চেনেন আন্টি?”
“হ্যাঁ, চিনবো না কেন। জরিনা তো আমাদের বাড়িতে কাজ করত আগে। আমি যখন প্রেগন্যান্ট ছিলাম তখন ঐ আমার দেখভাল করত। এমনকি আমার সন্তানের জন্মদানের মুহুর্তেও ও আমার পাশে ছিল৷ তারপর আমার মৃত সন্তান জন্ম নেয়ার পর যখন আমি ভেঙে পড়েছিলাম তখন জরিনাই তো আমায় সামলেছিল। এরপর যদিওবা কিছুদিনের মধ্যেই ও কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।”
আফিফা বলে,”আমি আরিশাকে ডেকে নিয়ে আসছি। ওর নিজের আসল মায়ের সাথে দেখা করা দরকার।”
বলেই আফিফা ছুটে যায়। এদিকে আনিকা খান জরিনাকে চেপে ধরে বলেন,”নিজের মেয়ের কথা কি এতদিনে একবারও মনে পড়ে নি তোমার? একটা মা এতটা নির্দয় কিভাবে হতে পারে। সন্তানের প্রতি তো একটু হলেও টান থাকার কথা।”
জরিনা দুচোখ বন্ধ করো নেয়। সে বুঝতে পেরে যায় এখন আর কোন কথা লুকিয়ে লাভ নেই। এতদিন পর যখন আজ সবাই একসাথে হয়েছে তখন নিশ্চয়ই মহান সৃষ্টিকর্তাই তাকে আজকে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে নিজের অতীতের সব পাপ মুছে ফেলার। এই পাপের ভার আর কত বয়ে বেড়াবে সে? জরিনা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়,পরিণাম যাই হোক না কেন আজ সে সব সত্য সবাইকে বলবে৷ এতে যদি তার পাপ কিছুটা হলেও লাঘব হয় সেটাই অনেক। তাই জরিনা বলে ওঠে,”ঠিক বলছেন আপনে ম্যাডাম। আমার ঐ মেয়ের প্রতি কোন টান নেই। কারণ ও আমার মেয়েই নয়।”
আনিকা খান হতবাক স্বরে বলেন,”তোমার মেয়ে নয়, মানে? আরিশাকে তো তুমিই হাসপাতালে ফেলে চলে গেছিলে। আর এখন বলছ ও তোমার মেয়ে নয়৷ তাহলে ওর আসল মা কে?”
জরিনা দুচোখ বন্ধ করে রাহেলা খন্দকারের দিকে ইশারা করে বলে,”ইনি..ইনি হলেন বাচ্চাটার আসল মা।”
কথাটা শোনামাত্রই সবাই হতবাক হয়ে যায়৷ রাহেলা খন্দকার চরম পর্যায়ের অবাক হয়ে বলেন,”এসব কি বলছ তুমি জরিনা? আরিশা আমার মেয়ে, মানে? আমার মেয়ে তো জন্মের পরপরই মারা গেছিল। তাহলে ও আমার মেয়ে হয় কি করে?”
জরিনা এবার কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে রাহেলা খন্দকারের পায়ের কাছে বসে পড়ে বলে,”আমায় ক্ষমা করে দেবেন মালকীন। আপনার নুন খেয়েছি কিন্তু সেই বিশ্বাস রাখতে পারিনি। আপনি যখন গর্ভবতী ছিলেন তখন রাজনৈতিক শত্রুতার জন্য আপনার স্বামীর বিরোধী দলের কিছু লোক টাকা দিয়ে আমায় কিনে নেয়। তারা আমায় দায়িত্ব দেয় যেন আপনার সন্তান জন্মানোর পরই আমি তাকে পাচার করে দেই। আর আজ থাকি ২০ বছর আগে, যখন হাসপাতালে আপনার বাচ্চা জন্ম নেয় সেই ঝড় বাদলের রাতে হাসপাতালের কিছু লোক যারা শিশু পাচারের সাথে যুক্ত ছিল তারাই আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিল আর বলেছিল কোন পতিতাপল্লিতে গিয়ে বাচ্চাটাকে বিক্রি করে দিতে। আমি যেহেতু তাদের টাকা খেয়েছিলাম সেহেতু আমি আর না করতে পারিনি। কি করব বলুন, ঘরে আমার অসুস্থ স্বামী, তিন তিনটে সন্তান। তাদের কথা ভেবে আমার নৈতিকতা বিসর্জন দিতে বাধ্য হই। কিন্তু মাসুম বাচ্চাটাকে দেখে আমার অনেক মায়া হয়। আমি পারিনা তাকে ঐ নোংরা জগতে বিক্রি করে দিতে। আর তাই তো হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে অন্য একটা হাসপাতালে যাই। সেই হাসপাতালেই আনিকা ম্যাডামের সাথে আমার দেখা হয়। আমি তখন নিজের দরিদ্রতার অজুহাত দিয়ে আনিকা ম্যাডামের হাতে বাচ্চাটাকে তুলে দিয়ে পালিয়ে আসি।”
বলেই জরিনা হু হু করে কাঁদতে থাকে। রাহেলা খন্দকার যেন চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন। এতদিন থেকে যেই মেয়েকে তিনি মৃত ভেবেছেন সেই মেয়ে বেঁচে আছে। তার সঙ্গে মেয়েটার দেখা হয়েছে অথচ তিনি নিজের মেয়েকে চিনতে পারেন নি। এজন্যই কি তাহলে মেয়েটাকে তার এতোটা আপন আপন লাগত।
এদিকে আনিকা খান, নিঝুম এনারা দুজনেও অবাক হয়ে যান এত কথা শুনে। তারা ভাবতেই পারেন না যে অতীতে এত কিছু হয়ে গেছে। এরইমধ্যে আফিফার ডাকে আরিশাও নিচে চলে আসে। সে এসেই করুণ স্বরে বলে,”কোথায় আমার মা? আমি আমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই। তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই কেন এতগুলো দিন আমায় দূরে ঠেলে রেখেছিল সে।”
বলেই সে জরিনার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,”আপনি আমার মা হন?”
জরিনা দুদিকে মাথা নাড়ায়। আরিশা বলে ওঠে,”তাহলে আমার মা কে? কার কোল থেকে আপনি আমায় তুলে এনেছিলেন বলুন।”
রাহেলা খন্দকার অশ্রুসিক্ত নয়নে, ভঙ্গুর কন্ঠে বলে ওঠেন,”আমিই তোমার সেই অভাগী মা, যার কোল থেকে জরিনা তোমায় আলাদা করে দিয়েছিল।”
কথাটা শোনামাত্রই আরিশা অবাক চোখে রাহেলা খন্দকারের দিকে তাকায়। তার চোখ থেকে অনবরত বৃষ্টির ফোটার মতো অশ্রুপাত হতে থাকে। রাহেলা খন্দকার নিজের দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেন,”নিজের মায়ের কাছে আসবে না?”
আরিশা ঝাপিয়ে পড়ে রাহেলা খন্দকারের কোলে। দুই মা-মেয়ের পুনঃমিলনে পরিবেশ পুরো ভারী হয়ে ওঠে। দুজনেই সমান স্বরে কাঁদতে থাকে। আবেগ যেন আজ বাধা মানতে রাজি নয়। আরিশা ফুপিয়ে বলতে থাকে,”কেন আমাকে নিজের থেকে দূরে করে দিয়েছিলে মা? আমি কি দোষ করেছিলাম?”
“তুমি কোন দোষ করো নি, মা। দোষ তো আমার ছিল। নিজের দূর্ভাগ্যের জন্য তো আমি তোমায় আটকে রাখতে পারি নি।”
আনিকা খান এবার আরিশাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে আরিশা অবাক হয়ে যায়।
নিঝুম বলে ওঠে,”জরিনা, তুমি টাকার লোভে যা করেছ তা অত্যন্ত অন্যায়। তোমার জন্য দুই মা-মেয়ে এত গুলো বছর বিছিন্ন ছিল। এর শাস্তি তোমায় পেতেই হবে। আমি পুলিশ ডেকেছি ওনারা এসে তোমায় গ্রেফতার করবে। এছাড়া এসবের পেছনে আরো যারা ছিল তাদের নামও তো জানা দরকার। তুমি একদম পালানোর চেষ্টা করবে না।”
জরিনা বলে,”আমার অন্যায়ের শাস্তি পেতে আমি প্রস্তুত। একইসাথে পুলিশকে যতটা সাহায্য করা যায় আমি করবো।”
~~~~~~~~~~~~~~
জরিনাকে পুলিশ এসে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। বর্তমানে রাহেলা খন্দকার আরিশাকে জড়িয়ে ধরে খান বাড়ির সোফা দখল করে বসে আছেন। খান বাড়ির সকল সদস্য ড্রয়িংরুমে উপস্থিত। সবাই সবটা শুনেছে।
ছবি বেগম তো হা-হুতাশ করে বললেন,”আহারে! আরিশা কত বড় পরিবারের মেয়ে। ওর তো এতদিনে রাজকুমারীর মতো থাকা উচিৎ ছিল অথচ মেয়েটার জীবন পুরো কষ্টে ভরা।”
আবরাজ খান বলেন,”ঠিক বলেছেন আপনি। সত্যি, বাস্তবতা কতটা নিষ্ঠুর। আমার মেয়েটাকেও তো এতগুলো বছর আমাদের থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। কিন্তু আজ আমরা ওকে আবার ফিরে পেয়েছি। ”
বলেই বৃষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দেন তিনি। রাহেলা খন্দকার আরিশাকে বলে,”আরিশা, মা, তুমি এবার তোমার আসল বাড়িতে চলো। তোমার বাবা-দাদি তাদের সাথে যে এখনো পরিচয় বাকি।”
আরিশা হতবাক স্বরে বলে,”আসল পরিবার!”
আবির খান বলে ওঠেন,”তুই সবসময় আমাদের কাছে আপনই থাকবি কিন্তু এবার যে সময় এসেছে তোর আসল পরিবারের সাথে দেখা করার।”
আরিশা এবার একে একে বাড়ির সকলকে বিদায় দেয়। আফিফা আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”যা বোনু! তোর আসল পরিবারে ফিরে যা। কিন্তু আমাদের ভুলে যাসনা। আমরা সবসময় তোর আপন থাকব যেমন এখন আছি।”
“তোমাদের ভুলে গেলে যে আমার অস্তিত্বই থাকবে না।”
বলেই আরিশা সবার থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দেয় নিজের আসল গন্তব্যে।
to be continue…….
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_40
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আরিশাকে সাথে নিয়ে খন্দকার বাড়িতে প্রবেশ করতে থাকেন রাহেলা খন্দকার। আরিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে চারিদিকে। রাহেলা খন্দকার অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলেন,”এটাই তোমার আসল বাড়ি। এই বাড়িতেই তোমার বেড়ে ওঠার কথা ছিল কিন্তু ভাগ্যের ফেরে..”
আরিশা রাহেলা খন্দকারকে জড়িয়ে ধরে। রাহেলা খন্দকার বলেন,”আজ আর আমরা কাঁদবো না৷ আজ তো আমাদের সুখের দিন৷ আজ এতগুলো বছর পর আমি নিজের মেয়েটাকে আবার ফিরে পেলাম। এখন চলো, তোমার আপনজনদের সাথে পরিচিত হয়ে নেবেন।”
এমন সময় সিতারা বেগম চলে আসেন। তিনি এসেই রাহেলা খন্দকারকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,”তুমি ফিরে এসেছ বৌমা। আর তোমার সাথে এটা কে?”
রাহেলা খন্দকার কাতর কন্ঠে বলে ওঠেন,”এই দেখুন মা৷ এ হলো আপনার নাতনী।”
সিতারা বেগম হতবাক স্বরে বলেন,”আমার নাতনী মানে?”
রাহেলা খন্দকার এবার একে একে সিতারা বেগমকে সব ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে সিতারা বেগম হতবাক হয়ে যান। অতঃপর বলে ওঠেন,”হায় আল্লাহ! এ তোমার কেমন বিচার৷ আজ এতগুলো বছর আমাদের বাড়ির মেয়েকে আমাদের থেকে বিছিন্ন রাখলে। এ কোন পাপের শাস্তি দিলে তুমি আমাদের? দিদিভাই, এসো ভেতরে এসো। আমার কাছে আসো। তোমায় একটু বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখি।”
রাহেলা খন্দকার আরিশাকে ইশারা করে ছুটে যেতে বলেন। আরিশাও ছুটে যায়। সিতারা বেগম নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় আরিশাকে। আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তোমাকে স্পর্শ করেই আমার কেমন আপন আপন লাগছে৷ এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?”
“আমিও নিজের আসল পরিবারকে এতদিন খুঁজে বেরিয়েছি দাদিমা। যেদিন থেকে জানতে পেরেছি, ছোটবেলা থেকে যেই পরিবারকে আপন জেনে এসেছি সেটা আমার আপন পরিবার নয় তবে থেকেই তোমাদের খোঁজ করেছি। আর ভাগ্যের ফেরে আজ এতদিন পর তোমাদের সন্ধান পেলাম।”
এমন সময় আলমগীর খন্দকার সেখানে চলে আসেন৷ তিনি এসেই আরিশাকে দেখে বলেন,”একি তুমি এখানে? আম্মা, রাহেলা তোমরা এভাবে কাঁদছ কেন?”
রাহেলা খন্দকার উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন,”আসল সত্য জানলে তোমার অবস্থাও আমাদের মতোনই হবে।”
“কি সত্যের কথা বলছ?”
“আমাদের মেয়ে..আমাদের মেয়ে ফিরে এসেছে।”
“কি? আমাদের মেয়ে মানে?”
রাহেলা খন্দকার এবার তাকে সমস্ত কিছু খুলে বলে। সব শুনে আলমগীর খন্দকার বলেন,”ঐ যে আমার মেয়ে তার প্রমাণ কি?”
রাহেলা খন্দকার হতবাক স্বরে বলেন,”প্রমাণ? এটা তুমি কেমন কথা বলছ। জানো ওকে যখন প্রথমবার দেখেছি তখনই আমার আপন আপন লেগেছিল। আর তাছাড়া জরিনা তো সবকিছু বললোই।”
“দেখো রাহেলা, তোমরা হয়তো ব্যাপারটা আবেগ দিয়ে ভাবছ কিন্তু আমার এই বিষয়টা বিবেক দিয়ে চিন্তা করতে হবে। যেই বাচ্চাকে জন্মের পরই মৃত বলা হয়েছিল সে আজ এতদিন পর আমাদের সামনে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তাছাড়া এটা আমাদের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রের অংশ তো হতে পারে। আমার তো শত্রুর অভাব নেই। তাই আমাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, আরিশাই আমার মেয়ে।”
রাহেলা খন্দকার বলেন,”একজন মায়ের মন কখনো ভুল করতে পারে না। আমি নিশ্চিত আরিশাই আমার মেয়ে। কিন্তু তোমার যদি আমাকে বিশ্বাস না হয় তাহলে তুমি একটা কাজ করতে পারো, তুমি ডিএনএ টেস্ট করাতে পারো। তাহলেই সবকিছু পরিস্কার হবে।”
“হ্যাঁ, তাই করবো আমি।”
এদিকে আরিশা নিজের বাবার এমন অবিশ্বাস দেখে ভেঙে পড়ে। সিতারা বেগম তখন আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”এতটা চিন্তা করো না দিদিভাই, আসলে তোমার বাবা একটু এমনই। রাজনীতি করে তো তাই সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। একবার ডিএনএ টেস্টটা করতে দাও। তারপরই সব সত্য সামনে আসবে।”
“ঠিক আছে।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রাহেলা খন্দকার সোফায় বসে অধিক আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আলমগীর খন্দকারের জন্য। তিনি হাসপাতাল থেকে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আনতে গেছেন। কিন্তু এখনো ফেরেন নি। রাহেলা খন্দকারকে চিন্তিত দেখে সিতারা বেগম বলেন,”তুমি এতোটা চিন্তা করো না বৌমা, সব রিপোর্ট ঠিকঠাক আসবে।”
রাহেলা বলেন,”চিন্তা কি আর সাধে করছি আম্মা? এতগুলো দিন পর আমি নিজের মেয়েটাকে ফেরত পেয়েছি৷ এখন যদি আবার কোন কারণে তাকে হারাতে হয়, তাহলে যে আমি..”
আরিশা রাহেলা খন্দকারের হাত শক্ত করে ধরে বলেন,”আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মা এবার আমি আর তোমায় ছেড়ে কোথাও যাব না। রিপোর্ট যাই আসুক না কেন, আমি তোমাকে নিজের মা বলে মেনে নিয়েছি আর তুমিই আমার মা হয়ে থাকবে।”
রাহেলা খন্দকার কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নেন। এমন সময় আলমগীর খন্দকারের আগমন ঘটে। তার চোখেই তার ক্রোধ প্রকাশ পাচ্ছিল। রাহেলা খন্দকার উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,”রিপোর্ট পেয়েছ তুমি? রিপোর্ট কি এসেছে?”
আলমগীর খন্দকার কোন কিছু না বলে আরিশার দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। আরিশা উঠে দাঁড়ায়। ভয়ে সে শুকনো ঢোক গিলতে থাকে। সিতারা বেগম বলেন,”তোকে এত রাগী লাগছে কেন আলমগীর? রিপোর্ট কি নেগেটিভ এসেছে? তাই কি তুই এত রেগে গেছিস?”
আলমগীর খন্দকার এবার একদম আরিশার মুখোমুখি এসে দাঁড়ান। আরিশা কিছু বলবে তার আগেই হঠাৎ করে আলমগীর খন্দকার আরিশাকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর একদম ছোট বাচ্চার মতো কাঁদতে শুরু করে দেন। আরিশা বলে ওঠে,”বাবা..”
আলমগীর খন্দকার আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন,”আমার মেয়ে..আমার রাজকন্যা। এতদিন কোথায় ছিলে তুমি? কেন এতদিন আমায় বাবা বলে ডাকোনি? আমি যে সারাটা জীবন এই বাবা ডাক শোনার জন্য পাগলের মতো তড়পে গেছি।”
রাহেলা খন্দকারও এবার এগিয়ে এসে কাঁদতে থাকেন। আলমগীর খন্দকার তাকে ইশারা করে কাছে ডেকে বলেন,”দেখো রাহেলা, এই হলো আমাদের মেয়ে। ওর তো আমাদের কাছে থেকে কত আদরে মানুষ হবার কথা ছিল। তাহলে কেন ও আমাদের th দূরে মানুষ হলো? কেন আমরা সারাটা জীবন সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত হলাম। বাবা হিসেবে যে আমার নিজেকে আজ ভীষণ ব্যর্থ মনে হচ্ছে। আমি না পারলাম আমার মেয়েকে হাত ধরে হাঁটতে শেখাতে, না পারলাম তার শৈশব, কৈশোরের সঙ্গী হতে। আমার পুরো জীবন যে আজ ব্যর্থ হয়ে গেল রাহেলা।”
সিতারা বেগম বলেন,”এতোটা ভেঙে পড়িস না আলমগীর। আল্লাহ যখন এতদিন পর তোর মেয়েকে তোর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তখন এবার জীবনের বাকি দিনগুলো মেয়েকে নিয়ে সুন্দর ভাবে কাটা।”
“তা তো আমি কাটাবোই৷ তবে তার আগে আমায় খুঁজে বের করতে হবে কার ষড়যন্ত্রে এতগুলো দিন আমি আমার মেয়ের থেকে দূরে ছিলাম। তারপর তাকে যোগ্য শাস্তি দিয়ে তবেই আমি শান্তি পাবো।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
৩ মাস পর,
দীর্ঘ ৩ মাস জেলে থাকার পর অবশেষে বেকসুর খালাস পেয়ে জেল থেকে বের হলো জাঈদ শেখ। তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ আজ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। জাঈদ জেল থেকে বেরিয়েই দেখতে পায় তার হয়ে কাজ করা মান্না তার সামনে দাঁড়িয়ে। মান্নাকে দেখেই জাঈদ বলে ওঠে,”তুই একা এসেছিস আমাকে নিতে?”
মান্না বলে,”হ্যাঁ, বস। আমি এসেছি৷ এই দুনিয়ার আর কেউ আপনার পাশে না থাকলেও আমি সবসময় আপনার পাশে আছি।”
জাঈদ মান্নাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ধন্যবাদ রে, আমার পাশে থাকার জন্য। কিন্তু আমার পাশে থেকে তোকে আর তোর জীবন নষ্ট করতে হবে না। তুই এবার নিজের মতো নিজের জীবন গুছিয়ে নেবে।”
“এসব আপনি কি বলছেন বস? আপনাকে ছাড়া..”
“আমি নিজের জীবনটা একটু গুছিয়ে নেই।”
“আপনার বাবাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বস।”
“কেন?”
“কারণ আপনার বাবা আরিশা ম্যাডামকে তার আসল বাবা-মার থেকে দূরে করে দিয়েছিল।”
“মানে?”
মান্না জাঈদকে সব খুলে বলে৷ সব শুনে জাঈদ বলে,”আরিশা তো আগে থেকেই আমাকে ঘৃণা করত। এখন নিশ্চয়ই আমার বাবার কৃতকর্মের জন্য আমায় আরো বেশি ঘৃণা করে, তাই না? এজন্য তো আমি নিরপরাধ প্রমাণিত হবার পরেও আমার সাথে দেখা করতে এলো না। আমি আসলে এই ঘৃণাই ডিজার্ভ করি।”
“বস..”
“তুই নিজের রাস্তায় যা মান্না। এখন থেকে আমি এক নতুন জীবন শুরু করব।”
to be continue…….
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_40
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আরিশাকে সাথে নিয়ে খন্দকার বাড়িতে প্রবেশ করতে থাকেন রাহেলা খন্দকার। আরিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে চারিদিকে। রাহেলা খন্দকার অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলেন,”এটাই তোমার আসল বাড়ি। এই বাড়িতেই তোমার বেড়ে ওঠার কথা ছিল কিন্তু ভাগ্যের ফেরে..”
আরিশা রাহেলা খন্দকারকে জড়িয়ে ধরে। রাহেলা খন্দকার বলেন,”আজ আর আমরা কাঁদবো না৷ আজ তো আমাদের সুখের দিন৷ আজ এতগুলো বছর পর আমি নিজের মেয়েটাকে আবার ফিরে পেলাম। এখন চলো, তোমার আপনজনদের সাথে পরিচিত হয়ে নেবেন।”
এমন সময় সিতারা বেগম চলে আসেন। তিনি এসেই রাহেলা খন্দকারকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,”তুমি ফিরে এসেছ বৌমা। আর তোমার সাথে এটা কে?”
রাহেলা খন্দকার কাতর কন্ঠে বলে ওঠেন,”এই দেখুন মা৷ এ হলো আপনার নাতনী।”
সিতারা বেগম হতবাক স্বরে বলেন,”আমার নাতনী মানে?”
রাহেলা খন্দকার এবার একে একে সিতারা বেগমকে সব ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে সিতারা বেগম হতবাক হয়ে যান। অতঃপর বলে ওঠেন,”হায় আল্লাহ! এ তোমার কেমন বিচার৷ আজ এতগুলো বছর আমাদের বাড়ির মেয়েকে আমাদের থেকে বিছিন্ন রাখলে। এ কোন পাপের শাস্তি দিলে তুমি আমাদের? দিদিভাই, এসো ভেতরে এসো। আমার কাছে আসো। তোমায় একটু বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখি।”
রাহেলা খন্দকার আরিশাকে ইশারা করে ছুটে যেতে বলেন। আরিশাও ছুটে যায়। সিতারা বেগম নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় আরিশাকে। আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”তোমাকে স্পর্শ করেই আমার কেমন আপন আপন লাগছে৷ এতদিন কোথায় ছিলে তুমি?”
“আমিও নিজের আসল পরিবারকে এতদিন খুঁজে বেরিয়েছি দাদিমা। যেদিন থেকে জানতে পেরেছি, ছোটবেলা থেকে যেই পরিবারকে আপন জেনে এসেছি সেটা আমার আপন পরিবার নয় তবে থেকেই তোমাদের খোঁজ করেছি। আর ভাগ্যের ফেরে আজ এতদিন পর তোমাদের সন্ধান পেলাম।”
এমন সময় আলমগীর খন্দকার সেখানে চলে আসেন৷ তিনি এসেই আরিশাকে দেখে বলেন,”একি তুমি এখানে? আম্মা, রাহেলা তোমরা এভাবে কাঁদছ কেন?”
রাহেলা খন্দকার উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন,”আসল সত্য জানলে তোমার অবস্থাও আমাদের মতোনই হবে।”
“কি সত্যের কথা বলছ?”
“আমাদের মেয়ে..আমাদের মেয়ে ফিরে এসেছে।”
“কি? আমাদের মেয়ে মানে?”
রাহেলা খন্দকার এবার তাকে সমস্ত কিছু খুলে বলে। সব শুনে আলমগীর খন্দকার বলেন,”ঐ যে আমার মেয়ে তার প্রমাণ কি?”
রাহেলা খন্দকার হতবাক স্বরে বলেন,”প্রমাণ? এটা তুমি কেমন কথা বলছ। জানো ওকে যখন প্রথমবার দেখেছি তখনই আমার আপন আপন লেগেছিল। আর তাছাড়া জরিনা তো সবকিছু বললোই।”
“দেখো রাহেলা, তোমরা হয়তো ব্যাপারটা আবেগ দিয়ে ভাবছ কিন্তু আমার এই বিষয়টা বিবেক দিয়ে চিন্তা করতে হবে। যেই বাচ্চাকে জন্মের পরই মৃত বলা হয়েছিল সে আজ এতদিন পর আমাদের সামনে, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তাছাড়া এটা আমাদের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রের অংশ তো হতে পারে। আমার তো শত্রুর অভাব নেই। তাই আমাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, আরিশাই আমার মেয়ে।”
রাহেলা খন্দকার বলেন,”একজন মায়ের মন কখনো ভুল করতে পারে না। আমি নিশ্চিত আরিশাই আমার মেয়ে। কিন্তু তোমার যদি আমাকে বিশ্বাস না হয় তাহলে তুমি একটা কাজ করতে পারো, তুমি ডিএনএ টেস্ট করাতে পারো। তাহলেই সবকিছু পরিস্কার হবে।”
“হ্যাঁ, তাই করবো আমি।”
এদিকে আরিশা নিজের বাবার এমন অবিশ্বাস দেখে ভেঙে পড়ে। সিতারা বেগম তখন আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”এতটা চিন্তা করো না দিদিভাই, আসলে তোমার বাবা একটু এমনই। রাজনীতি করে তো তাই সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। একবার ডিএনএ টেস্টটা করতে দাও। তারপরই সব সত্য সামনে আসবে।”
“ঠিক আছে।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রাহেলা খন্দকার সোফায় বসে অধিক আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আলমগীর খন্দকারের জন্য। তিনি হাসপাতাল থেকে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আনতে গেছেন। কিন্তু এখনো ফেরেন নি। রাহেলা খন্দকারকে চিন্তিত দেখে সিতারা বেগম বলেন,”তুমি এতোটা চিন্তা করো না বৌমা, সব রিপোর্ট ঠিকঠাক আসবে।”
রাহেলা বলেন,”চিন্তা কি আর সাধে করছি আম্মা? এতগুলো দিন পর আমি নিজের মেয়েটাকে ফেরত পেয়েছি৷ এখন যদি আবার কোন কারণে তাকে হারাতে হয়, তাহলে যে আমি..”
আরিশা রাহেলা খন্দকারের হাত শক্ত করে ধরে বলেন,”আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মা এবার আমি আর তোমায় ছেড়ে কোথাও যাব না। রিপোর্ট যাই আসুক না কেন, আমি তোমাকে নিজের মা বলে মেনে নিয়েছি আর তুমিই আমার মা হয়ে থাকবে।”
রাহেলা খন্দকার কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নেন। এমন সময় আলমগীর খন্দকারের আগমন ঘটে। তার চোখেই তার ক্রোধ প্রকাশ পাচ্ছিল। রাহেলা খন্দকার উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,”রিপোর্ট পেয়েছ তুমি? রিপোর্ট কি এসেছে?”
আলমগীর খন্দকার কোন কিছু না বলে আরিশার দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। আরিশা উঠে দাঁড়ায়। ভয়ে সে শুকনো ঢোক গিলতে থাকে। সিতারা বেগম বলেন,”তোকে এত রাগী লাগছে কেন আলমগীর? রিপোর্ট কি নেগেটিভ এসেছে? তাই কি তুই এত রেগে গেছিস?”
আলমগীর খন্দকার এবার একদম আরিশার মুখোমুখি এসে দাঁড়ান। আরিশা কিছু বলবে তার আগেই হঠাৎ করে আলমগীর খন্দকার আরিশাকে জড়িয়ে ধরেন। তারপর একদম ছোট বাচ্চার মতো কাঁদতে শুরু করে দেন। আরিশা বলে ওঠে,”বাবা..”
আলমগীর খন্দকার আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন,”আমার মেয়ে..আমার রাজকন্যা। এতদিন কোথায় ছিলে তুমি? কেন এতদিন আমায় বাবা বলে ডাকোনি? আমি যে সারাটা জীবন এই বাবা ডাক শোনার জন্য পাগলের মতো তড়পে গেছি।”
রাহেলা খন্দকারও এবার এগিয়ে এসে কাঁদতে থাকেন। আলমগীর খন্দকার তাকে ইশারা করে কাছে ডেকে বলেন,”দেখো রাহেলা, এই হলো আমাদের মেয়ে। ওর তো আমাদের কাছে থেকে কত আদরে মানুষ হবার কথা ছিল। তাহলে কেন ও আমাদের th দূরে মানুষ হলো? কেন আমরা সারাটা জীবন সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত হলাম। বাবা হিসেবে যে আমার নিজেকে আজ ভীষণ ব্যর্থ মনে হচ্ছে। আমি না পারলাম আমার মেয়েকে হাত ধরে হাঁটতে শেখাতে, না পারলাম তার শৈশব, কৈশোরের সঙ্গী হতে। আমার পুরো জীবন যে আজ ব্যর্থ হয়ে গেল রাহেলা।”
সিতারা বেগম বলেন,”এতোটা ভেঙে পড়িস না আলমগীর। আল্লাহ যখন এতদিন পর তোর মেয়েকে তোর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তখন এবার জীবনের বাকি দিনগুলো মেয়েকে নিয়ে সুন্দর ভাবে কাটা।”
“তা তো আমি কাটাবোই৷ তবে তার আগে আমায় খুঁজে বের করতে হবে কার ষড়যন্ত্রে এতগুলো দিন আমি আমার মেয়ের থেকে দূরে ছিলাম। তারপর তাকে যোগ্য শাস্তি দিয়ে তবেই আমি শান্তি পাবো।”
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
৩ মাস পর,
দীর্ঘ ৩ মাস জেলে থাকার পর অবশেষে বেকসুর খালাস পেয়ে জেল থেকে বের হলো জাঈদ শেখ। তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ আজ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। জাঈদ জেল থেকে বেরিয়েই দেখতে পায় তার হয়ে কাজ করা মান্না তার সামনে দাঁড়িয়ে। মান্নাকে দেখেই জাঈদ বলে ওঠে,”তুই একা এসেছিস আমাকে নিতে?”
মান্না বলে,”হ্যাঁ, বস। আমি এসেছি৷ এই দুনিয়ার আর কেউ আপনার পাশে না থাকলেও আমি সবসময় আপনার পাশে আছি।”
জাঈদ মান্নাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ধন্যবাদ রে, আমার পাশে থাকার জন্য। কিন্তু আমার পাশে থেকে তোকে আর তোর জীবন নষ্ট করতে হবে না। তুই এবার নিজের মতো নিজের জীবন গুছিয়ে নেবে।”
“এসব আপনি কি বলছেন বস? আপনাকে ছাড়া..”
“আমি নিজের জীবনটা একটু গুছিয়ে নেই।”
“আপনার বাবাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বস।”
“কেন?”
“কারণ আপনার বাবা আরিশা ম্যাডামকে তার আসল বাবা-মার থেকে দূরে করে দিয়েছিল।”
“মানে?”
মান্না জাঈদকে সব খুলে বলে৷ সব শুনে জাঈদ বলে,”আরিশা তো আগে থেকেই আমাকে ঘৃণা করত। এখন নিশ্চয়ই আমার বাবার কৃতকর্মের জন্য আমায় আরো বেশি ঘৃণা করে, তাই না? এজন্য তো আমি নিরপরাধ প্রমাণিত হবার পরেও আমার সাথে দেখা করতে এলো না। আমি আসলে এই ঘৃণাই ডিজার্ভ করি।”
“বস..”
“তুই নিজের রাস্তায় যা মান্না। এখন থেকে আমি এক নতুন জীবন শুরু করব।”
to be continue…….
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_41
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আরিশা আজ অনেকদিন পর আফিফাদের সাথে দেখা করার জন্য খান ভিলায় এলো। আরিশার আসার খবর শুনে আফিফাও আজ বেশ সকাল সকাল তার মেডিকেল কলেজ থেকে ফিরে এসেছে। এখন আপাতত দুই বোন একসাথে বসে গল্প করছে। আফিফা কিছুটা ব্যথিত স্বরে বলে,”নিজের আসল পরিবারকে ফিরে পাওয়ার পর তো বোধহয় তুই আমাদের ভুলেই গেছিস বোনু। আজ এতদিন পর তোর আমাদের কথা মনে পড়লো?”
আরিশা বলে ওঠে,”তুমি ভুল ভাবছ আপ্পি৷ আমার তো সবসময় তোমাদের কথাই মনে পড়ে। আসলে কি হয়েছে বলো তো, বাবা-মা ওরা আমাকে সবসময় ভীষণ নজরে নজরে রাখে। আমাকে নিয়ে কত আত্মীয়র বাড়িতে গেল তাদের সাথে পরিচয় করালো৷ আবার মাঝখানে দাদিমা একটু অসুস্থ হয়ে গেছিল আবার বাবার ইলেকশনের ব্যস্ততার জন্য আমাকে আর মাকেই হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে হয়েছিল। তাই আরকি..”
“হুম, বুঝেছি৷ তো এসব বাদ দে, তুই এবার তোর পড়াশোনার কথা বল। আর কয়েকদিন পরই যে তোর এইচএসসি পরীক্ষা তার খেয়াল কি আছে? এবার কিন্তু ভালো রেজাল্ট করতে হবে।”
“হ্যাঁ, মনে থাকবে না আবার? মা তো আমায় নিয়ম করে পড়তে বসাচ্ছে, কয়েকটা টিউশনিও করছি।”
“হুম, গুড। এভাবেই এগিয়ে যা। অতীত ভুলে এবার নিজের একটা পরিচয় গড়ে তোল। আচ্ছা, তুই কি এখন নিজের স্বপ্ন কি সেটা ঠিক করতে পেরেছিস?”
“হ্যাঁ, আপ্পি। আমি পেরেছি। আমি চাই এইচএসসিতে ভালো রেজাল্ট করে একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে। তারপর পড়াশোনা শেষ করে আমি একজন টিচার হতে চাই।”
আফিফা আরিশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি খুব খুশি যে আমার বোনুটা এবার তার জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছে।”
এমন সময় ছবি বেগম সেখানে এসে বলেন,”আরে আরিশা। এতদিন পর এলে। কেমন আছ তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমক্ন আছ দাদি?”
“আমিও আছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমার মনটা একটু খারাপ৷ আসলে কি বলো তো, আবরাজ, নিঝুম ওরা নাকি আবার বৃষ্টি দিদিভাইকে নিয়ে লন্ডনে যাবে। সেখানেই নাকি বৃষ্টি দিদিভাইকে পড়াশোনা করাবে। আসলে ওদের আর কি দোষ দেব, আবরাজের বিজনেস আছে ওখানে আবার নিঝুমও ওখানেই ডাক্তারি করে। ওদের ছুটি তো শেষ হয়ে আসছে তাই এবার ওদের ফিরতে হবে। তবে নির্ঝর দাদুভাই নাকি এইদেশেই নিজের আলাদা বিজনেস শুরু করবে আর আফিফা দিদিভাইকে নিয়ে এখানেই থাকবে। এটা জেনে একটু স্বস্তি পেলাম।”
হঠাৎ করেই সায়ন সেখানে চলে আসে। সায়নকে দেখেই আরিশা একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সায়ন সেটা বুঝতে পারে৷ আফিফা সায়নকে দেখে বলে,”আরে সায়ন ভাইয়া আপনি, আসুন ভেতরে আসুন।”
সায়ন এসে বলে,”আরিশা, আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিল আলাদা ভাবে। যদি একটু সময় দিতেন আমায় খুব ভালো হতো..”
আরিশা বলে,”আচ্ছা, আপনার যা বলার বলুন।”
“আসলে আমি আপনার সাথে একা কথা বলতে চাইছিলাম।”
আরিশা আফিফার দিকে তাকায়৷ আফিফা আরিশাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে সায়নের সাথে যেতে বলে। আরিশা তাই রাজি হয়।
আরিশা উঠতেই আফিফা বলে ওঠে,”তোর জীবনের সব সিদ্ধান্তই তোর বোনু। তাই আমি তোকে বলব, যাই সিদ্ধান্ত নিবি ভেবেচিন্তে নিবি।”
আরিশা মাথা নাড়ায়।
অতঃপর সায়নের সাথে একটু দূরে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। সায়ন আরিশাকে বলে,”আসলে..কথাটা কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না..”
“আপনার যা বলার নির্ভয়ে বলুন৷”
“আসলে…”
“সন্ধ্যা আপু কেমন আছে? উনি কি এখনো আমার উপর রেগে আছে?”
সায়নকে স্বাভাবিক করার জন্য জিজ্ঞেস করে আরিশা৷ সায়ন একটু স্বাভাবিক হয়ে বলে,”ও ভালো আছে। আর ওর আপনার উপর রাগ নেই।”
“যাক জেনে ভালো লাগল। এবার আপনি যা বলতে চান বলুন।”
“আরিশা, আমি আপনাকে….আপনি কি অতীতের সবকিছু ভুলে আমার সাথে নতুনভাবে জীবন শুরু করবেন?”
আরিশা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। অতঃপর বলে,”আমি জানি, আপনার মনে আমার জন্য কি অনুভূতি আছে। আমি সেই অনুভূতিকে সম্মান করি। কিন্তু..আপনি যেটা চাইছেন সেটা সম্ভব না। আমি আমার জীবনটা নতুন করে শুরু করতে চাই কিন্তু সেই শুরুর জন্য আপাতত কোন সঙ্গী আমার চাই না। আর আপনাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি জানি, আপনি মানুষ হিসেবে অনেক ভালো৷ কিন্তু মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তো কিছু সম্ভব নয়। আপনি বিবেকবান মানুষ, আশা করি, নিজের বিবেক দিয়ে সবটা চিন্তা করবেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল, আপনার জীবনে ভালো কেউ আসুক। শুধু আপনার হয়ে আসুক।”
বলেই আরিশা স্থানত্যাগ করে। সায়ন বিষন্ন চোখে আরিশার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। সে আটকায় না আরিশাকে। কারণ জোর করে আর যাইহোক ভালোবাসা হয়না। এদিকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে বৃষ্টি। তার কেন জানি, সায়নের ঐ বিষন্ন চোখের দিকে তাকিয়ে ভীষণ খারাপ লাগছিল। ইচ্ছা করছিল, সায়নের সব কষ্ট মুছে দিতে। এটা কি তাহলে নতুন কোন শুরুর ইঙ্গিত?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আদৃতা নিজের রুমে বসে বসে ঈর্ষায় দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। শেষে কিনা, ঐ মেয়েটা, ঐ গাইয়া মেয়েটা এখন তাদের সাথে লন্ডনে যাবে! এটা আদৃতা কিছুতেই মানতে পারছে না। এখন লন্ডনে তার সব বন্ধুরা জেনে যাবে যে, আদৃতা যে আবরাজ খানের মেয়ে হওয়া নিয়ে এতো গর্ব করত সে তার আসল মেয়ে নয়। সবাই তাকে বাকা দৃষ্টিতে দেখবে। আদৃতা রাগে অন্ধ হয়ে বলে ওঠে,”এটা আমি কিছুতেই হতে দেব না। ঐ সালমা কি ভাবছে? বৃষ্টি নাম ধারণ করেই ওর গ্রাম্য পরিচয় মিটে যাবে? কিছুতেই না। ও আমার স্থান দখল করতে চাইলে সেটা আমি এত সহজে হতে দেব না। ও আসার পর থেকে কেউ আমাকে মূল্যায়নই করছে না। সবার সব ভালোবাসা ও একাই পাচ্ছে। মম, ড্যাড, ব্রো সবাই ওকে মাথায় তুলে নাচছে আর এবার কিনা ও লন্ডনে গিয়েও সবার চোখের মনি হবে। আমি সেটা কিছুতেই হতে দেব না। এবার সময় এসে গেছে পথের কাঁটা সরিয়ে দেবার৷ আর পথের কাঁটা কিভাবে সরাতে হয় সেটা আদৃতা খুব ভালো করেই জানে।”
বলেই আদৃতা একটা শয়তানী হাসি দেয়। অতঃপর কিছু একটা ভেবে কাউকে একটা ফোন করে কিছু বলে।
বৃষ্টি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা সায়নের কাছে যায়। সায়ন বৃষ্টিকে খেয়াল করে। তার চোখে বিন্দু বিন্দু জল জমেছিল। বৃষ্টি সায়নের দিকে একটা টিস্যু পেপার এগিয়ে দিয়ে বলে,”এভাবে কাঁদবেন না, কাউকে কাঁদতে দেখলে আমার একদম ভালো লাগে না।”
সায়ন বৃষ্টির এমন সরল ব্যবহারে কিছুটা ভালো অনুভব করে। অতঃপর তার হাত থেকে টিস্যুটা নিয়ে চোখের জল মুছে। বৃষ্টি বলে,”এবার একটু হাসুন। জানেন, যখন আমি গ্রামে ছিলাম তখন কত কষ্টে ছিলাম তবুও আমি সবসময় হাসতাম। হাসলে কষ্ট কমে।”
সায়ন এবার বৃষ্টির কথায় একটু হাসার চেষ্টা করে। দূরে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখে যেন আদৃতার গা জ্বলে ওঠে। আদৃতা বলে,”আমার পরিবার, আমার অবস্থান কেড়ে এই মেয়ের শান্তি হয়নি এখন আমার ভালোবাসার মানুষকেও কেড়ে নিতে চায়। নাহ, বৃষ্টি তোকে আমি এই সুযোগ দেব না।এবার নিজের অবস্থান আমি আবার আদায় করে নেব। তুই থাকলে আমার অবস্থান আমি কখনোই ফিরে পাবো না। তাই এবার তোকে সরিয়ে দিতে হবে।”
বলেই সে মনে মনে কিছু একটা পরিকল্পনা করে নেয়।
বৃষ্টি সায়নকে হাসতে দেখে বলে,”এভাবেই সবসময় হাসবেন।”
বলেই সে স্থান ত্যাগ করে। বাইরের দিকে আসতেই আদৃতা তার পথ আটকে বলে,”কি ব্যাপার? কোথায় যাচ্ছ?”
বৃষ্টি একটু ঘাবড়ে যায়। কারণ সে আদৃতাকে একটু ভয়ই পায়। আদৃতা বৃষ্টির ভীতু ভীতু মুখ দেখে বলে,”আমি জানি, তুমি আমায় ভয় পাও। হয়তো এর জন্য আমি দায়ী। তবে আমি এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। আর তাই তো তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই।”
বৃষ্টি অবাক স্বরে বলে,”বন্ধুত্ব?”
“হ্যাঁ, হবে তো আমার বন্ধু।”
বৃষ্টি সরল মনে মাথা নাড়ায়। আদৃতা বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে। আর মনে মনে বলে,”এভাবেই তোর বিশ্বাস জিতে তোকে আমি শেষ করে দেব।”
to be continue…….