অশ্রুজলে বোনা বিয়ে ২ পর্ব-৪৫+৪৬+৪৭

0
73

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_45
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশার এইচএসসি পরীক্ষা অবশেষে শেষ হয়ে গেল। পরীক্ষা মোটামুটি ভালো ভাবেই দিয়েছে সে। এখন শুধু ফলাফল হাতে পাওয়ার অপেক্ষা। এরমধ্যেই কয়েক মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। সবার জীবনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। আফিফার প্রেগ্যান্সির এখন ৪ মাস চলছে। সে এখন বেশ নিয়মমাফিক চলাফেরা করছে৷ আবরাজ খান ও নিঝুমও বৃষ্টিকে নিয়ে লন্ডনে চলে গেছেন। তবে এই কয়েকমাসে জাঈদের সাথে আরিশার দেখা হয়নি। কারণ জাঈদ নিজের লুকোচুরি খেলা অব্যাহত রেখেছে। এদিকে আরিশার বাবা আলমগীর খন্দকার এখন নির্বাচনে জয় লাভ করে একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আরিশা নিজের ঘরে বসেছিল। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলেও তার স্বস্তি নেই। সামনেই তার এডমিশন টেস্ট। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে আরিশা। আরিশা আজকেও নিয়ম করে পড়ছিল এমন সময় হঠাৎ করে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। আরিশা ফোনটা রিসিভ করে বলে,”হ্যালো, কে?”

কিন্তু বিপরীত দিক থেকে কোন উত্তর আসে না৷ আরিশা বিরক্ত হয়ে বলে,”আপনি কে বলুন তো? দীর্ঘ কয়েক মাস থেকে এভাবে আমাকে ফোন করে বিরক্ত করছেন অথচ কোন কথা বলছেন না। কিছু তো বলুন?”

তবুও কোন উত্তর আসে না৷ আরিশা বলে,”বেশ, আমি ফোনটা রেখে দিচ্ছি।”

বলেই আরিশা কল কেটে দেয়। কলট কেটে দিতেই বিপরীত দিক থেকে জাঈদ বলে ওঠে,”খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে তোমার সাথে।”

আরিশা আবার পড়ায় মন দেয়৷ আর ভাবতে থাকে এই লোকটা কে হতে পারে। এমন সময় হঠাৎ করে রাহেলা খন্দকার এসে বলেন,”কি করছ আরিশা?”

“এই তো মা, একটু পড়ছিলাম৷ কেন?”

“তোমার বাবা একটু তোমায় ডাকছে। একটু এসো তো।”

আরিশা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আচ্ছা, আসছি।”

বলেই আরিশা তার মায়ের সাথে যেতে থাকে। ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হতেই আরিশা দেখতে পায় আলমগীর খন্দকার বেশ চিন্তিত হয়ে পায়চারি করছিলেন৷ আরিশাকে দেখামাত্রই তিনি বলে ওঠেন,”এই তো আরিশা৷ এসো আমার পাশে এসে বসো৷ তোমার সাথে অনেক জরুরি কথা আছে।”

আরিশা নিজের বাবার কথামতো তার পাশে গিয়ে বসে। আরিশা বসতেই আলমগীর খন্দকার বলে ওঠেন,”এই কথা গুলো আমার অনেক আগেই বলা উচিত ছিল। কিন্তু এতদিন তুমি পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলে জন্য বলা হয়নি৷ তবে আজ বলার উপযুক্ত সময় এসে গেছে। আমি জানি, আমার আর তোমার মায়ের অনুপস্থিতিতে তোমার জীবনে কত ঝড় উঠেছে৷ তবে সবথেকে বড় ঝড় বোধহয় জাঈদ শেখ।”

জাঈদের নামটা শোনামাত্রই আরিশার মুখে আধার নেমে আসে। আরিশা বলে ওঠে,”বাবা হঠাৎ এসব কথা..”

“প্রয়োজন আছে বলেই বলছি। ঐ শেখ পরিবারের জন্যই আমাদের জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। ঐ জাঈদের বাবা জাহাঙ্গীর শেখ জন্মের পরই তোমাকে আমাদের থেকে আলাদা করেছিল। জাঈদের মা তোমায় মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আর জাঈদ ও তো তোমায় বিয়ে করে তোমার জীবনটাই এলোমেলো করে দিয়েছে। আমি চাই না,তোমার উপর ওদের আর কোন অশুভ ছায়া পড়ুক। শুনেছি ঐ জাঈদ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, জানি না এখন ও কোথায় আছে। তবে আমি ওকে খুঁজে বের করবো। তারপর তোমার সাথে ওর ডিভোর্সের ব্যবস্থা করব।”

ডিভোর্সের কথাটা শুনেই কেন জানি আরিশার কেমন একটা অনুভূতি হয়। তন্মধ্যে আলমগীর খন্দকার আবারো বলে ওঠেন,”আর হ্যাঁ, মূলত যেজন্য তোমায় ডাকা। আমার রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম সঙ্গী আমার বন্ধু রুহুল কবীরের ছোট ছেলে ঈশান যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরেছে। এখন বাবার সাথে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে যোগ দেবে বলে ভাবছে। রুহুলের সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক। ও আমাকে নিজের বন্ধু নয় ভাই ভাবে আর আমিও। আমরা একসাথেই রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলাম। আর ওর ছেলে ঈশানও যথেষ্ট ভালো একজন ছেলে। রুহুলই আমায় প্রস্তাবটা দিয়েছে যে তোমার সাথে ওর ছেলের বিয়ে দিতে চায়।”

আরিশা যেন এবার আরো বেশি অবাক হয়৷ রাহেলা খন্দকার বলে ওঠেন,”আমি জানি, এই সিদ্ধান্তটা নেয়া তোমার জন্য কঠিন কিন্তু তোমার বাবা কিন্তু তোমার ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। আমিও ঈশান ছেলেটাকে ছোটবেলা থেকে চিনি। যথেষ্ট ভালো একটা ছেলে৷”

আরিশা বলে,”কিন্তু মা,আমি তো পড়াশোনা করে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাই।”

“সেই নিয়ে তো কোন অসুবিধা নেই। রুহুল বলেছে তুমি চাইলে বিয়ের পরেও পড়াশোনা করতে পারবে। দেখো আরিশা, তুমি আমার একমাত্র সন্তান। আমার আর তোমার মায়ের অবর্তমানে তোমার জীবনে অনেক ঝড় উঠেছে কিন্তু আমি চাই না আর কোন ঝড় উঠুক। তাই একজন যোগ্য পাত্রের হাতে তোমায় তুলে দিতে চাই। আর ঈশানের থেকে বেশি ভরসা আমি আর কাউকে ভরসা করতে পারি না। তাই এই বিয়েটা দিতে চাইছি।”

রাহেলা খন্দকারও নিজের স্বামীর কথায় সমর্থন করে বলেন,”হ্যাঁ, আর তুমি চাইলে ঈশানের সাথে একবার আলাদা করে কথা বলে দেখতে পারো। ঈশানও তোমার সাথে কোন ক্যাফেতে বসে আলাদা করে কথা বলতে চেয়েছে।”

আরিশা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আমায় ভাবার জন্য একটু সময় দাও।”

বলেই সে চলে আসে। আলমগীর খন্দকার আরিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। রাহেলা খন্দকার বলে ওঠেন,”ওকে একটু সময় দাও। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~★★~~~~~~~~~~
আরিশা নিজের রুমে বসে তার মা বাবার বলা কথাগুলো নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিল। এমন সময় হঠাৎ করে তার ফোন বেজে ওঠে। আরিশা ফোন হাতে নিয়েই দেখতে পায় আফিফা ফোন করেছে। ফোনটা রিসিভ করেই আরিশা বলে,”আপ্পি! তুমি এখন কেমন আছ? ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করছ তো? আর হ্যাঁ নিজের খেয়াল রাখছ তো? ”

“আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, রাখছি। উফ, তোর কথা শুমে মনে হচ্ছে ডাক্তার আমি না তুই।”

“যতোই তুমি ডাক্তার হও, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি তোমার ছোট থেকেই অনীহা। আমার এখনো মনে আছে, ছোটবেলায় কিভাবে সবসময় পড়াশোনা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে যে খাওয়ার কথাও ভুলে যেতে। আম্মুকেই ঠেলে ঠেলে তোমায় খেতে পাঠাতে হতো।”

“হয়েছে, হয়েছে। এখন বল তো, তোর খবর কি?”

আরিশা বলে,”আপ্পি তুমি একদম ঠিক সময় ফোন করেছ। আমি একটা বিষয় নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছি।”

বলেই সে তার মা-বাবার বলা সমস্ত কথা আফিফাকে খুলে বলে। সব শুনে আফিফা বলে,”আমার মনে হয়, আঙ্কেল আন্টি একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওনারা তোর বাবা-মা। ওনারা তোর খারাপ চাইবেন না। আর এমনিতেও ঐ জাঈদের জন্য তোর জীবন যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে৷ এবার তোর জীবন নতুন করে শুরু করা দরকার৷ আর ওনারা তো নাকি বলেই ছে, বিয়ের পরও পড়ার সুযোগ দেবে৷ তাহলে প্রব্লেম কি?”

আরিশা বলে,”হ্যাঁ, সেটা বুঝতে পারছি কিন্তু…”

“কিন্তু কি? ঐ জাঈদের কথা ভাবছিস নাকি তুই? ওর কথা একদম ভাববি না। ঐ জাঈদ আর ওর ফ্যামিলি তোর সাথে কত অন্যায় করেছে, তোকে কত কষ্ট দিয়েছে সেটা ভুলিস না৷ তুই যা, আজই গিয়ে ঈশান নামের ছেলেটার সাথে দেখা কর। আমার মনে হয়, ছেলেটা অনেক ভালো হবে।”

“কিন্তু আপ্পি আমার মতো মেয়ে কি ওনার যোগ্য হবে? আমার তো একবার বিয়ে হয়েছিল আর ঈশান তো একদম অবিবাহিত। আর তাছাড়া, আমার জীবনের সবথেকে ভয়াবহ সত্যটা তো তুমি জানো যে, আমি কোনদিনও মা হতে পারব না।”

“তুই নাহয় ওকে সব কথা আগেই জানাস। সব জেনে যদি ও বিয়েতে রাজি হয়, তাহলে তো হয়েই গেল।”

আরিশা বলে,”বেশ, তাহলে আমি তাই করবো।”

বলেই আরিশা ফোনটা রেখে দেয়। অতঃপর ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের মা-বাবার সামনে গিয়ে বলে,”তোমার মিস্টার ঈশানকে জানিয়ে দাও,আমি ওনার সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত।”

আলমগীর খন্দকার খুশি হয়ে বলেন,”বেশ৷ আমি এখনই ওকে বলছি।”
to be continue…….

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_46
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশা নিজের পরিবারের সবার কথা অনুযায়ী একটি ক্যাফেতে এসে দাঁড়িয়েছে ঈশান এর সাথে দেখা করার জন্য। অনেক সময় ধরে আরিশা অপেক্ষা করছিল ঈশানের জন্য। কিন্তু ঈশানের আসার কোন নাম নেই৷ আরিশা এবার বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো এমন সময় একটা ছেলে দৌড়াতে দৌড়াতে আরিশার পাশে এসে বসলো। আরিশা ছেলেটাকে দেখেই বলল,”আপনি কি ঈশান?”

ঈশান বললো,”জ্বি, আমিই ঈশান। আপনি নিশ্চয়ই আরিশা?”

আরিশা মাথা নাড়ায়। ঈশান বলে,”আপনি জানেন, আপনার আর আমার পরিবার আমাদের বিয়ে দিতে চাইছে।”

“হ্যাঁ, সেজন্যই তো এখানে আসা।”

“চলুন কফি খেতে খেতে কথা বলি। অনেক আলাপ আছে।”

ঈশান আরিশার সাথে বসে। অতঃপর বলে,”আপনার কি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আছে?”

আরিশা মাথা নাড়িয়ে বলে,”না, তবে অনেক কিছু জানানোর আছে আমার ব্যাপারে। আমি চাই, আপনি আমার ব্যাপারে সবটা জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।”

“হ্যাঁ, জানান কি জানাতে চান।”

“আমার এর আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল।”

ঈশান স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,”এটা জানি আমি। আপনার বাবা আমার বাবার ভালো বন্ধু। তাই এই সত্যটা আমার থেকে লুকানো হয়নি। আর আমি সবটা জেনেই এখানে এসেছি আপনাকে বিয়ে করতে।”

“তবে এর থেকেও বড় একটা সত্য আছে যেটা আপনার জানা নেই আর সেটা হলো…”

কথাটা বলতে গিয়ে আরিশা হঠাৎ করে থেমে যায়। কারণ ওয়েটার কফি নিয়ে চলে এসেছে৷ আর এই ওয়েটার আর কেউ নয়, জাঈদ। জাঈদকে দেখেই আরিশা বলে ওঠে,”আপনি!”

জাঈদও অবাক হয় আরিশাকে দেখে। আরিশার সঙ্গে অন্য একটি ছেলেকে বসে থাকতে দেখে যেন তার গায়ে আগুন জ্বেলে ওঠে৷ তবে সে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,”আমি এখন এই ক্যাফেতেই ওয়েটার হিসেবে কাজ করি।”
বলেই ঠান্ডা মাথায় কফিটা দিয়ে চলে যায়। ঈশান বলে ওঠে,”আপনি কি চেনেন নাকি ওনাকে?”

আরিশা সহসা বলে ওঠে,”হ্যাঁ, মানে, এমনি পরিচিত আরকি৷ যাইহোক, আপনাকে যেটা বলতে চাইছিলাম। যেহেতু আমার সাথে আপনার বিয়ের কথা চলছে তাই এটা আপনাকে জানানো আমার দায়িত্ব। আসলে, কয়েক বছর আগে আমার জরায়ুতে টিউমার হয়েছিল৷ সেই টিউমার অপসারণ করার জন্য আমার জরায়ু কেটে বাদ দিতে হয়। আর এজন্য আমার পক্ষে আর মা হওয়া সম্ভব না। তাই আপনাকে কখনো সন্তান সুখ দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

কথাটা শুনে ঈশানের মুখ কিছুটা কাচুমাচু হয়ে যায়৷ তবে সে হেসে বলে,”ব্যাপারটা দুঃখজনক। আচ্ছা, আমি একটু আসছি৷ এসে আপনার সাথে বাকি কথা বলছি।”

বলেই ঈশান উঠে দাঁড়ায় এবং ওয়াশরুমের দিকে যায়। আরিশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,”নিশ্চয়ই উনি এই কথাটা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, তাই একটু অস্বস্তি বোধ করছেন।”

এমন ভাবনা থেকেই আরিশা ছটফট করতে থাকে।

এদিকে ঈশান ওয়াশরুমে এসে নিজের ফোন বের করে নিজের বাবা রুহুল কবিরকে ফোন করে। কিছু সময় পর রুহুল কবির ফোন রিসিভ করে বলে ওঠেন,”কি হলো ঈশান? এই সময় কল দিলে কেন? আলমগীরের মেয়ের সাথে দেখা করেছ তুমি? ওকে পছন্দ হয়েছে? অবশ্য না হলেও কিছু করার নেই। কারণ এই মেয়েকেই তোমাকে বিয়ে করতে হবে।”

ঈশান রাগী কন্ঠে বলে,”আমি পারবো না ড্যাড। শুধুমাত্র তুমি বলেছিলে জন্য আমি মেয়েটাকে দেখতে এসেছিলাম। একেই তো মেয়েটার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল তাছাড়াও দেখতেও তেমন সুন্দর নয়। তার উপর তো এখন আমি শুনছি ও কোনদিন মাও হতে পারবে না। এই মেয়েকে বিয়ে করে কি আমি শোপিস করে সাজিয়ে রাখব নাকি?”

রুহুল কবির বলে ওঠেন,”এই বোকা ছেলে, একদম চুপ করো৷ এই বিয়েটা তোমায় কর‍তেই হবে। কেন বুঝতে পারছ না, ওই মেয়েটা হলো সোনার ডিম পাড়া হাঁস। ওর বাবা হলো বর্তমান এমপি। এখন যদি তুমি ওকে বিয়ে করো, তাহলে পরবর্তী ইলেকশনে তার জামাই হিসেবে তুমি দাড়াতে পারবে। আমি যা করছি তোমার ভালোর জন্যই তো করছি।”

“কিন্তু তাই বলে এই মেয়েকে বিয়ে..আমার পাশে কি ওকে মানায়?”

“আরে, তুমি শুধু একবার বিয়েটা করে নাও। তারপর চাইলে বাইরে কয়েকটা রিলেশন চালাবে। সমস্যা কি? আর এমনিতেও একবার তুমি শুধু এমপি হয়ে যাও, তারপর ঐ মেয়েকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তোমার যোগ্য কোন মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দেব আমি।”

“সত্যি বলছ কি তুমি? নাকি আমায় মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ?”

“আমি কেন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেব তোমায়? তুমি আমার নিজের ছেলে। আমি নিজে রাজনৈতিক জীবনে সফলতা পাইনি শুধু ঐ আলমগীর খন্দকারের জন্য। সারাজীবন পার্টির জন্য খেটে গেলাম কিন্তু কোন লাভ হলো। তাই সোজা আঙুলে যখন ঘি উঠল না তখন একটু আঙুল বেকিয়েই দেখি। তুমি আমার কথামতো কাজ করো,এতে তুমিই সবথেকে বেশি লাভবান হবে। বিশ্বাস করো।”

“বেশ, তুমি যখন বলছ তখন আমি তাই করবো৷ আপাতত তাহলে মেয়েটাকে বলে দিচ্ছি, আমি এই বিয়েতে রাজি৷ নাকি?”

“হুম, তাই করো।”

বলেই ঈশান ফোন কেটে দেয় একটা বিরক্তির চাহনি দেয়। এদিকে আড়াল থেকে একটা ছায়ামূর্তি সরে যায় যে তাদের সব কথা শুনেছে। এ আর কেউ নয় জাঈদ। জাঈদ তো রাগে কাপছে পুরো৷ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,”আমার আরিশার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা। এই ঈশান আর এর বাপকে এবার আমি শায়েস্তা করবো৷ তার সাথে আরিশাকেও এবার আমি নিজের করে নেবো। শ্বশুরজির গুডবুকে নাম লেখানোর এর থেকে ভালো কোন উপায় তো আর নেই।”

——–
ঈশান এসে আরিশার সামনে বসে বলে,”আমি বুঝতে পারছি, আপনার নিজেকে নিয়ে হীন্যমনতায় ভোগা অনেক স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কাছে এই ব্যাপারটা কোন ম্যাটারস করেনা। আমি শুধু একজন যোগ্য জীবনসঙ্গী দরকার। আর আপনি যেভাবে শুরুতেই আমায় সবকিছু খুলে বললেন, তাতে আমি বুঝে গেছি আপনি কতোটা অনেস্ট এবং লয়াল। তাই আপনার মতো জেমস আমি হারাতে চাই না।”

ঈশানের এমন কথায় আরিশা মুগ্ধ হয়ে যায়। আরিশা মনে মনে ভাবে,”এত ভালো মনের মানুষও হয়।”

ঈশান বলে,”এখন আপনি বলুন, আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে তো?”

আরিশা কিছুটা লাজুক হাসি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ঈশান বলে,”আপনার এই নীরবতাকেই আমি তাহলে সম্মতির লক্ষণ ধরে নেবো। আপনার বাবাকে আমার সালাম দেবেন আর নিজের মতামত জানিয়ে দেবেন। আমি তাহলে এখন আসি।”

বলেই ঈশান চলে যায়। এদিকে আরিশা আফিফাকে ফোন করে। আফিফা বলে,”কিরে বোনু! তুই ঐ ঈশানের সাথে দেখা করলি?”

“হ্যাঁ।”

“তুই ওকে সব খুলে বলেছিস তো? উনি কি বলল?”

আরিশা সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে আফিফা বলে,”এই ছেলেই তোর জন্য উপযুক্ত আরিশা৷ যার চিন্তাভাবনা এতোটা উঁচু তার সাথে তুই অবশ্যই সুখী হবি। আল্লাহ বুঝি তোর ভাগ্যে সুখ লিখে রেখেছিল। তাই তো এত ভালো একটা ছেলের সাথে তোর দেখা করিয়ে দিল। আরো ভালো হতো যদি ঐ জাঈদের সাথে তোর দেখা হবার আগেই ঈশানের সাথে হতো। যাইহোক, তুই আঙ্কেল আন্টিকে গিয়ে বল তুই এই বিয়েতে রাজি। আর নারাজি দেখাস না। এই ছেলেকে হারালে পরে আফসোস করতে হবে।”

“আচ্ছা, ঠিকাছে।”

বলেই আরিশা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যায়। জাঈদ বলে,”তুমি যতই আমায় খারাপ ভাবো, তোমার কোন ক্ষতি আমি হতে দেব না আরিশা। ঐ ঈশানের হাত থেকে আমি তোমায় রক্ষা করবোই।”

to be continue…….

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_47(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশার সাথে আজ ঈশানের এনগেজমেন্ট। সেই উপলক্ষ্যেই আজ খন্দকার বাড়ি পুরো সেজে উঠেছে উৎসবের আমেজে। আরিশাকে আজ বিউটি পার্লার থেকে লোক এসে ভীষণ সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। তার পরণে একটি লম্বা গোলাপি গাউন ও তার সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি যা তাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আফিফারাও আজ সপরিবারে এসেছে আরিশার এনগেজমেন্টে। আফিফাকে আসতে দেখে আরিশা ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি ভালো আছ আপ্পি? ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছ তো? এখন কিন্তু তোমার ভেতরে আরো একটি প্রাণ বেড়ে উঠছে। সেটা মনে রেখো।”

“হ্যাঁ, রে। তুই তো এমন ভাবে বলছিস যেন আমি একটা ছোট বাচ্চা। যাইহোক, তোকে কিন্তু আজ খুব সুন্দর লাগছে। ঈশান তো তোর দিক থেকে চোখই সরাতে পারবে না।”

আফিফার কথা শুনে আরিশা লজ্জায় রাঙা হয়ে বলে,”ধুর! কি যে বলো না তুমি আপ্পি!”

এমন সময় ছবি বেগম বলে ওঠেন,”ও তো ঠিকই বলছে। তোকে সত্যি অনেক ভালো লাগছে আরিশা।”

এমন সময় রাহেলা খন্দকার এসে বলেন,”আপনারা চলুন৷ নিচে গিয়ে সব গেস্টদের সাথে পরিচয় হয়ে নেবেন।”

আনিকা খান বলে ওঠেন,”না, না। আমরা ওখানে গিয়ে কি করব?”

আবির খানও বলেন,”সেটাই। আমরা এখানেই ঠিক আছি।”

“এসব বললে কিন্তু হবে না৷ হতে পারে আমি আরিশাকে জন্ম দিয়েছি কিন্তু ওর জন্মের পর থেকে তো আপনারাই ওকে কোলেপিঠে করে বড় করে তুলেছেন। তাই আপনাদেরও আরিশার উপর অধিকার আছে৷ কিছু ক্ষেত্রে আমার কিংবা ওর বাবার থেকে বেশি আছে।”

রাহেলা খন্দকারের কথা শুনে সবাই মুগ্ধ হন। আরিশার দাদি সিতারা বেগমও এসে বলেন,”হ্যাঁ, বৌমা একদম ঠিক বলেছে। আপনারা নিচে চলুন, সবার সাথে পরিচয় হয়ে নেবেন।”

আরিশা আফিফাকে বলে,”আপ্পি ওরা সবাই যাক। তুমি একটু আমার সাথে বসো, তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”

সবাই চলে যায় নিচে। শুধু আরিশা ও আফিফা একা ছিল সেখানে। আফিফা বলে,”হ্যাঁ, বল। কি যেন বলবি বলছিলি।”

আরিশা বলে,”জানো আপ্পি, আমি আজ জাঈদ শেখকে দেখেছি।”

“কি? ঐ শয়তানটাকে দেখেছিস তুই? কোথায় আর কিভাবে? ও আবার তোর কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করে নি তো? শোন ও যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে তোর বাবাকে সব বলে দিবি৷ তারপর তোর বাবা ওকে জেলের ঘানি টানাবে।”

“না,আপ্পি সেরকম কিছু না। জাঈদ শেখ তো এখন একটি ক্যাফেতে ওয়েটার হিসেবে কাজ করছে। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না।”

“বেশ হয়েছে। সবটাই কর্মফল। তুই এখন ঐ লাফাঙ্গাটাকে নিয়ে আর কিছু ভাবিস না তো। তুই এখন এই এনগেজমেন্টে মন দে।”

“আচ্ছা।”

সিতারা বেগম এসে আরিশাকে বলে,”দিদিভাই, তুমি নিচে চলো। তোমার হবু শ্বশুর বাড়ি থেকে সবাই চলে এসেছে এনগেজমেন্ট করতে।”

আফিফা আরিশার হাত ধরে বলে,”চল, আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।”

দুই বোন মিলে একসাথে নিচে নামে। রুহুল কবির, তার স্ত্রী ও ঈশান সবাই একসাথেই দাঁড়িয়ে আছে। আরিশাকে আসতে দেখেই রুহুল কবির এগিয়ে এসে বলেন,”বাহ, মা। তোমাকে দেখার অনেক ইচ্ছা ছিল৷ যেদিন থেকে তোমার বাবার কাছে শুনেছি তার হারানো মেয়ে ফিরে এসেছে সেদিন থেকেই আসব ভাবছিলাম। কিন্তু এতদিন সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে এবার তো সুযোগ পেয়েছি। খুব শীঘ্রই তোমাকে নিজের ঘরের বউ করে নিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হতে চলেছে আমার।”

আরিশা সামান্য হাসে। রুহুল কবির পিছিয়ে গিয়ে ঈশানকে ইশারা করেন। ঈশান তারপর এগিয়ে এসে আরিশাকে বলে,”আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে আরিশা। এই পিংক ড্রেসটায় আপনাকে অনেক সুন্দর মানিয়েছে।”

আরিশা লজ্জায় লাল হয়ে যায়৷ আফিফা বলে ওঠে,”মিস্টার ঈশান, আমি কিন্তু আপনার হবু জেঠানি হবো তাই আমার সামনে একটু লজ্জা রাখুন।”

ঈশানও এবার সামান্য লাজুক হাসে। আফিফা বলে,”আমার বোনটা জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। একটা ভুল জীবন ওর সম্পূর্ণ জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছিল। এবার অন্তত ও আপনার মতো একটা ভালো মানুষের সঙ্গ পাক।”

আলমগীর খন্দকার এগিয়ে এসে বলেন,”এখন তাহলে এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান শুরু করা যাক।”

ঈশান ও আরিশাকে পাশাপাশি এনে সবার মাঝখানে দাঁড় করানো হয়। ঈশান একটা ডায়মন্ড রিং বের করে আরিশাকে পড়িয়ে দেয়ার জন্য এগোতে থাকে। ঈশান আরিশা হাতে ডায়মন্ড রিং পড়াতেই যাবে এমন সময় হঠাৎ করে সেখানকার আলো নিভে যায়। ঈশান এই ঘটনায় ব্যাপক বিরক্ত হয়ে বলে,”হঠাৎ এভাবে লাইট টা অফ হলো কিভাবে? কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না।”

আলমগীর খন্দকার বলেন,”উফ! কি জ্বালা।”

কিছু সময় পর হঠাৎ করে আবারো আলো জ্বলে ওঠে। আর ঠিক সময়েই একটি বাইকে করে একদম হিরোর মতো এন্ট্রি নেয় জাঈদ শেখ।

ঈশান বলে ওঠেন,”কে আপনি? আর হঠাৎ এভাবে ভেতরে প্রবেশ করলেন কিভাবে? সিকিউরিটি আটকালো না?”

জাঈদ নিজের হেলমেটটা খুলে দেয়। তার মুখ দেখেই আরিশা বলে ওঠে,”আপনি!”

জাঈদ বলে,”আমি বেঁচে থাকতে আমার বউ অন্য কারো সাথে এনগেজমেন্ট করে নেবে এটা কিভাবে হতে পারে। তাই তো আমায় আসতে হলো এই অনাচার থামাতে।”

আফিফা বলে ওঠে,”এই ছেলে। তুমি আবার কেন এসেছ? আমার বোনুকে এত কষ্ট দিয়েও তোমার শান্তি হয়নি? আবার ওর জীবনের সব সুখ কেড়ে নিতে চলে এসেছ।”

জাঈদ শেখ হালকা হেসে বলে,”এসব আপনি কি বলছেন আপু? আমি আপনার বোনের সুখ নষ্ট করতে আসব কেন? আমি তো ওর সাথে সুখের সংসার শুরু করতে এসেছি।”

আলমগীর খন্দকার রেগে বলেন,”তোমার সাহস কি করে হয় এখানে আসার। সিকিউরিটি কোথায় তোমরা। এদের সব’কটাকে চাকরি থেকে তাড়াব।”

“সিকিউরিটি ডেকে লাভ নেই। সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।”

ঈশান এবার রেগে জাঈদের শার্টের কলার ধরে বলে,”এই ছেলে! বের হও এখান থেকে।”

জাঈদের তো এতে মেজাজ ভীষণ গরম হয়ে যায়। সে ঈশানের নাক বরাবর একটা ঘুষি দিয়ে বলে,”কে থাকবে আর কে বিদায় নেবে সেটা তো এখনই পরিস্কার হয়ে যাবে।”

রুহুল কবির এসে বলেন,”তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার ছেলের গায়ে হাত তুললে। তোমায় তো আমি…”

রুহুল কবির নিজের কথা শেষই করতে পারেন না। এমন সময় হঠাৎ করে সামনে লাগানো একটি স্ক্রিনে একটি ভিডিও ভেসে ওঠে। যেখানে ঈশানকে বলতে শোনা যাচ্ছে,”আমি পারবো না ড্যাড। শুধুমাত্র তুমি বলেছিলে জন্য আমি মেয়েটাকে দেখতে এসেছিলাম। একেই তো মেয়েটার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল তাছাড়াও দেখতেও তেমন সুন্দর নয়। তার উপর তো এখন আমি শুনছি ও কোনদিন মাও হতে পারবে না। এই মেয়েকে বিয়ে করে কি আমি শোপিস করে সাজিয়ে রাখব নাকি?”

একই সাথে পরবর্তী সব কথোপকথন কথা শোনা যায়। কারণ সেদিন ক্যাফেতে জাঈদ লুকিয়ে ঈশান আর তার বাবার বলা সব কথোপকথন রেকর্ড করে। ফলে তাদের সব উদ্দ্যেশ্যের কথা উপস্থিত সবাই জেনে যায়। রুহুল কবির ও ঈশানের থোতা মুখ তো সম্পূর্ণ ভোতা হয়ে যায়।

আলমগীর খন্দকার রুহুল কবিরের দিকে তাকিয়ে বলেন,”এসবের মানে কি কবির? আমি তো তোমায় বন্ধু ভেবেছিলাম আর তুমি…”

রুহুল কবির আমতাআমতা করে বলে,”এসব মিথ্যা..আমাদের ফাসানো হচ্ছে। সব এই ছেলের চক্রান্ত।”

জাঈদ বলে,”এসব বলে আর লাভ নেই। রিয়ালিটি মাইনা নেন, আপনারা ধরা পড়ে গেছেন চাচা।”
to be continue…….