অশ্রুজলে বোনা বিয়ে ২ পর্ব-৪৮+৫৯

0
70

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_48
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশা অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল জাঈদের দিকে। জাঈদের দৃষ্টিও তার পানেই ছিল। আরিশার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে। আরিশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আফিফা তাকে জড়িয়ে ধরে। আরিশা বলে ওঠে,”কেন বারবার আমার সাথে এমন হয় গো আপ্পি?আমি তো কখনো কারো কোন ক্ষতি করিনি৷ তাহলে কেন ভাগ্য আমাকে এভাবে বারংবার কষ্ট দেয়। এর পেছনের কারণ কি? আমি কি সত্যিই কোন সুখ ডিজার্ভ করি না?”

এমন সময় আরিশার বাবা আলমগীর খন্দকার রাগী কন্ঠে রুহুল কবিরের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”তোমাকে আমি বন্ধু ভেবেছিলাম কবির কিন্তু আমার পিঠ পিছে যে তুমি এভাবে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে সেটা আমি ভাবতে পারি নি। আমি এবার পার্টির উপর মহলে কথা বলে দেখব তোমার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া যায়। আপাতত তুমি নিজের ছেলেকে নিয়ে বের হও এখান থেকে।”

রুহুল কবির ভীষণ অপমানিত বোধ করেন। তাই আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে ঈশান ও নিজের স্ত্রীকে সাথে নিয়ে তিনি স্থানত্যাগ করেন। রুহুল কবির যেতেই আরিশাকে এসে জড়িয়ে ধরেন রাহেলা খন্দকার। অতঃপর বলেন,”একদম কাঁদবে না। তোমার মা তোমার সাথে আছে।”

এরমধ্যে জাঈদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল৷ আলমগীর খন্দকার তার কাছে গিয়ে বলেন'”আজকে তুমি যা করলে তার জন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। এখন বলো, তুমি আমার কাছে এর বিনিময়ে কি চাও?”

“আমি যা চাই, সেটা কি আপনি আমাকে দেবেন মিস্টার খন্দকার?”

আলমগীর খন্দকার কিছুটা আন্দাজ করতে পারেন জাঈদ কি চাইতে পারে। তাই তিনি বলেন,”কিছু সিদ্ধান্ত অনেক জটিল, তবে যদি আমার সাধ্যের মধ্যে থাকে তাহলে আমি চেষ্টা করব।”

জাঈদ হালকা হেসে বলে,”আমার বেশি কিছু চাই না। আমি শুধু আপনার মেয়ের সুখের দায়িত্ব নিতে চাই।”

আরিশা অবাক হয়ে যায়৷ আলমগীর খন্দকার বলেন,”আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম তুমি এমন কিছু চাইতে পারো। যাইহোক, এবিষয়ে আমি কিছু বলব না। যদিও তোমার প্রতি আমার রাগ ছিল কিছুটা তোমার বাবা-মার কর্মের জন্য কিন্তু আজ তুমি যেভাবে আমার মেয়েকে রক্ষা করলে তাতে আমার কোন রাগ অবশিষ্ট নেই তোমার প্র‍তি। তবে আমার মেয়ে তোমাকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আমার মেয়ের একার৷ আমি সেই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না।”

জাঈদ কথাটা শুনেই ধীরপায়ে আরিশার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার পায়ের কাছে বসে পড়ে৷ অতঃপর বলে,”বারবার তুমি আমায় ফিরিয়ে দিয়েছ আরিশা, এবারই আমি শেষবারের মতো ভালোবাসা ভিক্ষা চাইতে এসেছি। এবার যদি তুমি আমায় না করে দাও, তাহলে আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, এই জীবনে আর কখনো এই মুখ তোমাকে আর দেখাবো না। তোমার জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাব।”

জাঈদের কথাটা শুনে আরিশার কেমন জানি অনুভব হয়। আরিশা একবার আফিফার দিকে তাকায়৷ আফিফা যেন ইশারা করে আরিশাকে বলছে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে। আবেগকে নয়, বিবেককে প্রাধান্য দিতে। তাই আরিশা বলে,”আমায় ভাবার জন্য একটু সময় দিন।”

জাঈদ বলে,”বেশ, এতদিন যখন অপেক্ষা করতে পেরেছি তখন আরো কিছু সময় নাহয় অপেক্ষা করে নেবো। তবে তোমার ইতিবাচক উত্তরের আশায় রইলাম।”

বলেই জাঈদ হালকা হেসে উঠে দাঁড়ায়।

~~~~~~~~~
আরিশা একা রুমে বসে ভাবছিল সে কি সিদ্ধান্ত নেবে৷ এমন সময় আফিফা তার রুমে এসে বলে,”বোনু, তুই কি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিস?”

আরিশা বলে,”না আপ্পি। আমি এখনো দ্বিধার মধ্যে আছি।”

“দেখ, জাঈদ আজ যা করলো তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আমি নিজেও ওর প্রতি কৃতজ্ঞ তোকে এত বড় বিপদ থেকে মুক্ত করার জন্য। কিন্তু তাই বলে ওর অতীতে করা সব অন্যায় তো মুছে যায়না। ওর আজকের এই ভালো কাজের জন্য তো কিছুতেই ভোলা যায়না যে ও আগে কি কি করেছে। জোর করে তোকে বিয়ে করেছে, তোর উপর দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছে, সবার চোখে তোকে খারাপ করেছে আর…”

আফিফা নিজের কথা শেষ করার আগেই আরিশা বলে ওঠে,”সবথেকে বড় কথাটাই তো তুমি বলতে ভুলে গেছ আপ্পি। জাঈদ শেখ আমার সাথে বিয়ের আগে কিভাবে তোমার উত্ত্যক্ত করত, এমনকি কিভাবে তোমার আর নির্ঝর ভাইয়ের বিয়ে ভেঙে দিতে চেয়েছিল। ভাগ্যিস, তোমার বদলে আমায় তুলে নিয়ে গেছিল জাঈদ শেখ এর চ্যালারা। নাহলে হয়তোবা আজ আমার বদলে তোমার সাথে ওনার বিয়ে হতো।”

“আরিশা! এসব কি বলছিস তুই?!”

আরিশা হালকা হেসে বলে,”এটাই তো সেই মূল কারণ যার কারণে তুমি জাঈদ শেখকে এতোটা ঘৃণা করো। তাইনা?”

আফিফা আর কিছু বলতে পারে না। আরিশা আফিফার হাত নরম করে স্পর্শ করে বলে,”আমি তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য কথাটা বলি নি আপ্পি। তোমার যায়গায় থাকলে হয়তো আমিও একইভাবে চিন্তা করতাম। তাছাড়া জাঈদ যা করেছেন তা অনেক অন্যায় ছিল আমি মানছি। তবে তুমিও তো নিশ্চয়ই এটা মানবে যে, যেই জাঈদ শেখকে তুমি ঘৃণা করেছিলে সেই জাঈদ শেখের সাথে আজকের জাঈদ শেখের কোন মিল নেই। তারা দুজন যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুজন মানুষ। আমিও তো আগের সেই জাঈদ শেখকে ঘৃণা করতাম। কিন্তু আজ যে জাঈদ শেখ আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তাকে তো আমি ঘৃণা করতে পারবো না।”

আফিফা বলে,”হয়তো তুই ঠিকই বলছিস কিন্তু..”

“না, আপ্পি৷ এখানে কিন্তুর আর কোন যায়গা নেই। লোকটার চোখে আমি নিজের জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছি। তাই ওনাকে আজ আমি আর ফিরিয়ে দিতে পারবো না৷ তাছাড়া, তুমিই তো আমায় শিখিয়েছ, ক্ষমাই মহৎ গুণ। তুমিও তো নির্ঝর ভাইকে ক্ষমা করেছিলে তার সত্যিকারের ভালোবাসা আর তড়পানো দেখে। তাহলে আজ যখন জাঈদও ঠিক একইভাবে সত্যিকারের ভালোবাসা দিয়ে মন থেকে আমার কাছে ক্ষমা চাইছে তখন কেন আমায় আটকাচ্ছ আপ্পি?”

আফিফা যেন নিজের ভুল বুঝে যায়৷ তাই সে বলে,”বেশ, তুই নিজের ভালোর জন্য যা সিদ্ধান্ত নিবি আমি তোর পাশেই থাকব। যদি তুই ভাবিস, জাঈদের সাথে তুই সুখী থাকবি তাহলে তাই হোক। আমি চাই, তুই শুধু একটু সুখী হ।”

বলেই আফিফা আরিশাকে জড়িয়ে ধরে। আরিশা বলে,”আপ্পি। এখন তাহলে আমি গিয়ে জাঈদকে গিয়ে বলি৷ বেচারাটা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে।”

“আচ্ছা, যা।”

আরিশা রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামে। জাঈদ বলে,”তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ আরিশা?”

আরিশা একটু গাম্ভীর্য ভাব নিয়ে বলে,”হ্যাঁ, নিয়েছি। আপনি চলে যান মিস্টার জাঈদ শেখ।”

জাঈদের মন ভেঙে যায়। সে ভেবেছিল আরিশা তাকে ইতিবাচক উত্তর দেবে। কিন্তু আরিশা যে তাকে এভাবে আশাহত করবে তা জাঈদ ভাবেনি। জাঈদ ছলছল চোখে বলে,”বেশ, আমি যাচ্ছি। তুমি ভালো থেকো। নিজের খেয়াল রেখো।”

বলেই জাঈদ বেরিয়ে যেতে নেবে এমন সময় আরিশা বলে ওঠে,”হেই মিস্টার জাঈদ শেখ। সারাজীবন তো অনেক ভিলেনগিরি করলেন এখন শেষে বাপ্পারাজের একটিং করলে হবে? যাচ্ছেন যান, ভালো কথা। গিয়ে কাজি ডেকে নিয়ে আসুন। আজ আবার আমরা আরেকবার নাহয় বিয়ে করব। আগেরবার বিয়ে তো জোর করে হয়েছিল, আমার পরিবারও পাশে ছিল না। এবার নাহয় সবার উপস্থিতিতে স্বেচ্ছায় আমি বিয়ে করবো না।”

আরিশার কথা শুনে জাঈদ ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। এক আবেগঘন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। জাঈদ বলে,”আই লাভ ইউ, আরিশা। কথা দিচ্ছি,তোমায় অনেক সুখে রাখব।”
to be continue…….

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_49(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশা একদম বউয়ের মতো সেজে উঠেছে। আফিফাই মূলত আরিশাকে এভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। আরিশাকে লাল বেনারসি পড়ে যেন লাল পড়ি লাগছে। আরিশাকে এভাবে সাজিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে আফিফা বলে,”জানিস, বোনু আমার খুব ইচ্ছা ছিল যে তোকে বিয়ের দিন নিজের হাতে আমি সাজিয়ে দেব। অবশেষে আজ আমার সেই ইচ্ছেটা পূরণ হলো।”

আরিশা নিজের বোনের মুখে এই কথাটা শুনে হালকা হেসে বললো,”আমিও তো আগেরবার বিয়ের সময় সুন্দর করে সাজতে পারি নি৷ ঐ জাঈদ শেখ তো আমায় সালোয়ার কামিজ পড়িয়েই বন্দুকের নলে রেখে বিয়েটা করেছিলেন। তবে এবার আমি সুন্দর করে বউ সাজতে পেরেছি। আসো আপ্পি, এখন একটা সেলফি তুলি।”

বলেই দুই বোন মিলে কিছু সেলফি তোলে। এমন সময় রাহেলা খন্দকার এসে বলেন,”তোমাদের সাজগোজ হলো? কাজি সাহেব তো এসে গেছেন।”

আফিফা বলে,”হ্যাঁ, আন্টি হয়েছে।”

অতঃপর আফিফা আরিশাকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। জাঈদ একটা সুন্দর কারুকাজ করা শুভ্র পাঞ্জাবি পড়ে বসেছিল৷ আরিশাকে দেখেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। যা দেখে তার পাশে বসা নির্ঝর হালকা হেসে তার হাতে টোকা দিয়ে বলে,”দেখার আরো অনেক সময় পাবে ভাই৷ আপাতত নিজের বিয়েতে মন দাও।”

আরিশাকে এনে জাঈদের পাশে বসানো হয়৷ অতঃপর কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। তবে এই পুরোটা মুহুর্ত আরিশার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল জাঈদ। আরিশাও জাঈদের দিকে কয়েকবার আড়চোখে তাকিয়েছে। অবশেষে কবুল বলার পালা আসতেই আরিশা কিছুটা সময় নিয়ে “কবুল” বলে। এদিকে জাঈদকে তো বলতে না বলতেই কবুল বলে দেয়। যা দেখে নির্ঝর, আফিফা হালকা হাসে। আনিকা খান, রাহেলা খন্দকারও মুচকি হাসেন। এদিকে বিয়ে হতেই আলমগীর খন্দকার এগিয়ে এসে জাঈদের হাত শক্ত করে ধরে বলেন,”আমার মেয়েটাকে অনেক ভরসা করে তোমার হাতে তুলে দিলাম। মেয়েটার জীবনে অনেক দুঃখ ছিল তবে আশা করব তুমি এবার ওকে সুখী করার দায়িত্ব নেবে। ওর সুখের দায়িত্ব আমি তোমার কাধে তুলে দিলাম।”

জাঈদ বলে ওঠে,”আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করব আরিশাকে সুখে রাখার। আপনাকে আমি এই সিদ্ধান্তের জন্য আফসোস করতে দেব না।”

~~~~~~~~~~~
আরিশা ফুল দিয়ে সাজানো বাসর ঘরে জাঈদের জন্য অপেক্ষা করছে। মাথায় একহাত ঘোমটা দিয়ে রেখেছে আফিফার কথা অনুযায়ী। আরিশা তাই এভাবেই চুপচাপ বসেছিল। এমন সময় ঘরে কারো প্রবেশ উপলব্ধি করতে পেরেই আরিশা সোজা হয়ে বসে। জাঈদ সরাসরি এসেই দেরি না করে দরজাটা বন্ধ করে। অতঃপর বিছানায় এসে আরিশার ঘোমটা সরিয়ে বলে,”থাক, নতুন বউয়ের মতো এত লজ্জা পেতে হবে। এমনিতেই আমাদের মধ্যে যা হওয়ার আগেই হয়ে গেছে।”

আরিশা বলে ওঠে,”হয়েছিল তো কিন্তু নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আর আপনি আমাকে আপ্পি ভেবে..”

আরিশা নিজের পুরো কথা শেষ করার আগেই জাঈদ নিজের হাত দিয়ে তার মুখ আটকে ধরে বলে,”অতীত নিয়ে আর কোন আলোচনা নয়৷ চলো আজ আমরা অতীতের সব অন্ধকার অধ্যায় ভুলে গিয়ে নতুন আরম্ভ করি।”

বলেই জাঈদ আচমকা উঠে দাঁড়িয়ে আরিশাকে কোলে তুলে নেয়৷ আরিশা বলে,”এ কি করছেন?”

জাঈদ আর কোন কিছু না বলে আরিশাকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। আজ ছিল পূর্ণিমা আর তাই আকাশেও চাঁদ যেন পূর্ণ আলোর কিরণ ছড়াচ্ছিল৷ সেই চাঁদকে সাক্ষী রেখেই আরিশার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিয়ে আদরে আদরে ভড়িয়ে দিতে থাকে জাঈদ। তার এমন নরম স্পর্শে আরিশা কাতর হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে চিবুক, চোয়ালেও পড়ে প্রেমের আবেশ। অতঃপর আরিশাকে ধরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়৷ অতঃপর তারা দুজনে ভেসে যায় প্রেমের সাগরে। অশ্রুজলের স্রোত পেরিয়ে অবশেষে প্রেমের স্রোত এসে ভড়িয়ে দেয় তাদের দেহ ও মন।

সকালে আরিশার যখন ঘুম ভাঙে তখন সে নিজেকে জাঈদের নগ্ন বুকে আবিষ্কার করে। এতে বেশ খানিক লজ্জা পেয়ে যায় আরিশা। জাঈদেরও ঘুম ভেঙে যায় আরিশার নড়াচড়ায়। অতঃপর সে বলে,”উঠে পড়েছ জান?”

আরিশা মাথা নাড়িয়ে বলে,”হুম।”

“কেমন লাগছে এখন?”

“ভালোই।”

“সত্যিই? আমার বুকে থাকতে তোমার ভালো লাগছে।”

আরিশা লজ্জা পেয়ে বলে,”ধুর আপনি কি যে বলেন না!”

জাঈদ বলে,”আপনি আজ্ঞে বাদ দিয়ে এখন একটু তুমি করে বলার চেষ্টা করো। আমাদের সম্পর্ক তো এখন স্বাভাবিক, তাই না জান? আর চাইলে একটু জান, বাবু, বেবি এসবও বলতে পারো।”

“আর লজ্জা দেবেন না।”

“আবারও আপনি আজ্ঞে!”

“বেশ তুমি করেই বলবো। এবার খুশি তো?”

জাঈদ আবারো আরিশার ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নেয়। অতঃপর কিছুক্ষণ তার ওষ্ঠদ্বয় এর মাঝে ডুবে থেকে মুখ তুলে নিয়ে বলে,”ভীষণ খুশি।”

~~~~~~~~~~`
৬ মাস পর, সময়ের পরীক্রমায় পেরিয়ে গেছে আরো ৬ মাস। এই ৬ মাসে সবার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। জাঈদ ও আরিশা দীর্ঘ ৬ মাস যাবৎ সুখে সংসার করছে। তাদের সম্পর্ক যেন দিনকে দিন গভীর থেকে গভীরতর হয়ে চলেছে। জাঈদ এখন নিজের শ্বশুরের সাথে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছে। আগে থেকেই অভিজ্ঞতা থাকায় খুব একটা বেগ পেতে হয়নি৷ তারা দুজন এখন খন্দকার বাড়িতেই থাকে৷ সারাজীবন মেয়েকে কাছে না পেলেও মিস্টার ও মিসেস খন্দকার এখন নিজের মেয়েকে তো কাছে পেয়েইছেন সাথে একটা ছেলেও পেয়েছেন৷ জাঈদ তাদের জামাই না একদম ছেলে হয়ে উঠেছে।

এদিকে আজ একটা স্পেশাল দিন। আজ আফিফা ও নির্ঝরের সন্তান পৃথিবীতে আসতে চলেছে। সেই জন্য পুরো বাড়িতে খুশির আমেজ চলছে। আফিফাকে গতকালকেই হাসপাতালে এডমিট করানো হয়েছে। আজ তার ডেলিভারি ডেইট। আরিশা অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাথে আনিকা খান, নির্ঝর, আবির খান, ছবি বেগম সবাই দাঁড়িয়ে আছেন। ছবি বেগম বলেন,”আল্লাহ, তুমি দেখো, আমাদের বংশধর যেন ভালোয় ভালোয় পৃথিবীর মুখ দেখে। আমি দেখ আমার নাতির ঘরের পুতি-পুতনীর মুখ দেখতে পারি।”

আরিশা বলে,”তুমি চিন্তা করো না দাদি৷ সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আনিকা খান বলেন,”আমি তো ডাক্তার,আমাকে নিশ্চয়ই ওরা ভেতরে যেতে দেবে। আমি গিয়ে দেখি কি অবস্থা।”

নির্ঝরও অস্থির পায়চারি করছিল। নির্ঝরকে সান্ত্বনা দিতে আরিশা বলে,”ভাইয়া আপনি বেশি চিন্তা করবেন না। আমার আপ্পি ফাইটার দেখবেন ফাইট করে আপনাদের সন্তানকে পৃথিবীতে আনবে।”

এমন সময় অপারেশন থিয়েটারের লাল বাতি নিভে যায়। আনিকা খান একটা ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন৷ তাকে দেখেই নির্ঝর খান বলে,”চাচি..”

আনিকা খান হেসে হেসে বলেন,”তোমাকে অভিনন্দন। তোমার একটা ছেলে হয়েছে। মা ও ছেলে দুজনেই ভালো আছে। এই নাও তোমার ছেলেকে কোলে তুলে নাও।”

ছবি বেগম খুশি হয়ে বলেন,”আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে ওরা দুজনেই এখন ভালো আছে। দেখি দেখি আমার পুতির মুখ দেখি।”

আফিফার ছেলেকে দেখেই ছবি বেগম খুশি হয়ে বলেন,”মাশাল্লাহ,কি সুন্দর চেহারা। একদম বাবার মতোই সুদর্শন হয়েছে।”

আনিকা খান বলেন,”আপনি শুধু নিজের নাতির সাথেই মিল দেখতে পাচ্ছেন। এদিকে আমার তো ওকে দেখে ওর মায়ের কার্বন কপি মনে হচ্ছে। যাইহোক আমি আপনার ছোট ছেলে আর নির্ঝরের বাবাকে ফোন করে সব জানাচ্ছি। ওদের নাতি হওয়ার সুখবর তো ওদের জানা দরকার।”

এদিকে আফিফার ছেলে হঠাৎ করেই কেদে ওঠে। তখন নির্ঝর, ছবি বেগম, আনিকা খান কেউই তার কান্না থামাতে পারে না। এমন সময় আরিশা তাকে কোলে তুলে নেয়। আরিশার কোলে উঠতেই আফিফার ছেলের কান্না থেমে যায়। এমন সময় জাঈদও হাসপাতালে চলে আসে।

সে আরিশাকে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে থাকতে দেখে ভীষণ খুশি হয়৷ এমন সময় ছবি বেগম বলে ওঠেন,”বাহ, আরিশা তো খুব ভালোই বাচ্চা সামলাতে পারে। ওর বাচ্চা হলে তো ও একাই সামলাতে পারবে ”

কথাটা শুনেই আরিশার মুখে আধার নেমে আসে। ছবি বেগম নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলেন,”ওহ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম..”

আরিশার চোখে জল চলে আসে। জাঈদ এগিয়ে এসে আরিশার কাধে হাত রাখে। আরিশার চোখের ভাষাই যেন তার মা হতে না পারার ব্যথা ফুটিয়ে তুলছিল।
to be continue…….