অশ্রুজলে বোনা বিয়ে ২ পর্ব-১৮+১৯+২০

0
440

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_18
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশা নিজের জন্য বরাদ্দ সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে এসে চুপচাপ বসে আছে। আজ বেশ অসুস্থ অনুভব হচ্ছে তার। কেন জানি মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে। আরিশা সবেমাত্র শুতে যাবে এমন সময় জামিলা শেখ সেখানে এসে বললেন,”এই মেয়ে, নিজেকে কি নবাবজাদী ভেবেছ? এখানে শুয়েবসে থাকার জন্য এসেছ নাকি? আমার বোনঝি আজ কতগুলো বছর পর লন্ডন থেকে এসেছে৷ যাও ওর জন্য ভালোমন্দ কিছু খাবার বানাও।”

আরিশার মেজাজটা গরম হয়ে যায়। সে বলে,”আপনার বোনঝিকে খাওয়ানোর এত শখ থাকলে গিয়ে খাওয়ান না! আমায় কেন বলছেন? আমি কিছু করতে পারবো না। আপনাদের কেনা দাসীবাঁদী নই আমি।”

জামিলা শেখ আরিশার এমন সাহস দেখে অবাক হয়ে যান। তিনি রেগে আরোও কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আরিশা বলে ওঠে,”আপনি যাবেন এখান থেকে নাকি আমি মিস সন্ধ্যাকে গিয়ে বলে দেব যে, আমার সাথে আপনার ছেলে জাঈদের..”

“তোমার সাহস তো মন্দ নয়! তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছ?”

“যেই রোগের যেই ওষুধ। যে যেই ভাষায় বোঝে, তাকে তো সেই ভাষাতেই বোঝাতে হয় মিসেস জামিলা শেখ।”

“নিজেকে বেশি চালাক ভেবো না। একবার শুধু সন্ধ্যার সাথে জাঈদের বিয়েটা হতে দাও। তারপর দেখো, কিভাবে টানতে টানতে তোমায় এই বাড়ি থেকে বের দেই।”

“আপনাকে আমায় টানতে টানতে বের করতে হবে না। সময় হলে আমি নিজেই চলে যাব। কিন্তু তার আগে আমার আমার আপ্পির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে।”

শেষের কথাটা মনে মনে বলে আরিশা। এদিকে জামিলা শেখ রাগে গজগজ করতে করতে চলে যান। তিনি চলে যেতেই আরিশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”এখন একটু ঘুমিয়ে নেই। এই মহিলা এসে শুধু শুধু এত বিরক্ত করল ধুর।”

~~~~~~~~~~~
সন্ধ্যার সামনে হরেক রকম খাবার পরিবেশন করলেন জামিলা শেখ। এত সব খাবার দেখে সন্ধ্যা বললো,”বাহ, খালা। এত কিছু তুমি আমার জন্য বানিয়েছ?”

“হ্যাঁ, দেখো সব তোমার পছন্দের খাবার।”

“তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।”

সন্ধ্যা খেতে যাবে এমন সময় জাঈদও এসে খাবার টেবিলে বসে পড়ল। সন্ধ্যা ভেবেছিল জাঈদ হয়তো তার পাশে বসবে কিন্তু জাঈদ তার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে। এই জিনিসটা তাকে কিছুটা অপ্রস্তুত করে দেয়। এরইমধ্যে আরিশা সেখানে চলে আসে। একটু আগেই ঘুম থেকে উঠল সে। হঠাৎ ভীষণ পানি পিপাসা পেয়েছিল তার। কিন্তু তার রুমে পানি ছিল না। তাই মূলত পানি খেতেই তার এখানে আসা। আরিশাকে দেখেই জামিলা শেখ বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে নেন। এদিকে সন্ধ্যা আরিশাকে দেখেই হাসি মুখে বলে,”আরে আরিশা, তুমি! তোমাকে এমন লাগছে কেন?”

আরিশা বলে,”সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠলাম তো তাই আরকি..”

“ওহ আচ্ছা। তো এসো আমাদের সাথে খেতে বসো।”

আরিশা জামিলা শেখ ও জাঈদের দিকে তাকায় একবার করে। জামিলা শেখের চোখ থেকে যেন অগ্নিবৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু জাঈদ ভাবলেশহীন। আরিশা কিছু বলবে তার আগেই জামিলা শেখ বলেন,”ও এখন পরে নিজের রুমে বসে খেয়ে নেবে। তোমরা এখন নেয়ে নাও।”

সন্ধ্যা নিজের টেবিল থেকে উঠে আরিশাকে টেনে একদম নিজের পাশের সিটে বসিয়ে বলে,”পরে কেন খাবে? ও আমাদের সাথেই খাক।”

জামিলা শেখ এবার আর কিছু বলতে পারেন না। অগত্যা মুখ ফুলিয়ে থাকেন। এদিকে সন্ধ্যা আরিশার দিকে খাবার এগিয়ে দিয়ে বলে,”নাও, খাও।”

আরিশাও আর কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করে। কিছু সময়ের মধ্যেই জাঈদ নিজের খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর কোথাও যেন একটা বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যাও নিজের খাওয়া শেষ করে নিয়ে জামিলা শেখকে জানায়,”খালা, আমি এখন একটু আসছি। আমার এক ফ্রেন্ড আছে তো সিলেটে ওর সাথে দেখা করতে যাব।”

“আচ্ছা, যাও।”

সন্ধ্যা বেরিয়ে যেতেই জামিলা শেখ আরিশার সামনে থেকে খাবার প্লেট নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে আরিশাকে চেয়ারে বসা থেকে টেনে তুলে বলেন,”কোন সাহসে তুমি আমাদের বাড়ির ডাইনিং টেবিলে বসে ভাত খেলে?”

“কেন? আমি এখানে ভাত খাওয়ায় কি আপনাদের জাত চলে গেছে?”

“হ্যাঁ, গেছে। তোমার মতো অনাথ, বাপ-মায়ের পরিচয়হীন একটা মেয়ে আমাদেরও ডাইনিং টেবিলে বসার অযোগ্য।”

আরিশা জেদ দেখিয়ে আবারো ডাইনিং টেবিলে বসে বলে,”এই যে আবার বসে নিলাম আমি। কি করবেন করুন তো।”

“তোমাকে তো আমি..”

বলে যেই না তিনি আরিশার গালে হাত তুলতে যাবেন এমন সময় আরিশা জামিলা শেখের হাত শক্ত করে ধরে বলে,”খবরদার‍! এই ভুল আর দ্বিতীয় বার করতে যাবেন না। নাহলে আপনার হাতে ঐ দেয়ালের সাথে ঝুলে থাকবে।”

“তোমার এত বড় সাহস…”

“আমার সাহসের এক আনাও এখনো দেখেন নি আপনি। আপনাদের মা-ছেলে দুজনের পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার নিজেদের পাপের ফল ভোগ করার জন্য প্রস্তুত হন।”

বলেই আরিশা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। আর জামিলা শেখ সেখানে দাঁড়িয়ে ফুঁসতে থাকেন।

~~~~~~~~~~~~~~
দীর্ঘ দিন পর নিজের বান্ধবী আদৃতার সাথে মিলিত হয়েই তাকে আলিঙ্গন করে সন্ধ্যা। আদৃতা বলে ওঠে,”ইশ! আজ দীর্ঘ এক মাস পর আমাদের দেখা হলে৷ তোকে খুব মিস করেছি রে এতদিন। আমার তো অনেক আগেই লন্ডনে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আটকে গেলাম!”

সন্ধ্যা বলে,”হুম, সেটাই। তা তুই এখানে থাকছিস কিভাবে? তোর নাকি বাংলাদেশি একটুও পছন্দ নয়।”

“তা তো নয়ই। নেহাতই মম-ড্যাড থাকতে বলেছে তাই বাধ্য হয়ে থাকছি।”

“যা-ইহোক, শুনলাম তোর ভাইয়ের নাকি বিয়ে হয়ে গেছে!”

সন্ধ্যার গলার স্বরে কিছুটা আক্ষেপ ছিল। আদৃতা হাপিত্যেশ করে বলে,”কি আর বলবো দুঃখের কথা। আমি তো বুঝতেই পারলাম না, ব্রো বাংলাদেশে এসে এমন একটা টিপিক্যাল মেয়েকে কেন বিয়ে করল। আমার কত ইচ্ছা ছিল তোকে নিজের ব্রোয়ের বউ হিসেবে দেখব। ”

“বাদ দে এসব কথা আদৃতা। আমি আজ থেকে ৬ মাস আগে যখন তোর ভাইকে প্রপোজ করেছিলাম তখনই সে আমায় প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিল এটা বলে যে সে অন্য কাউকে পছন্দ করে। আমি ব্যাপার‍টাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছি। হ্যাঁ প্রথমদিকে একটু কষ্ট হয়েছিল কিন্তু কি আর করার। জোর করে তো আর ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তাছাড়া, আমার ভাগ্যে হয়তো অন্য কেউ ছিল। যাইহোক, আমি তোর ভাবি না হতে পারলেও তুই কিন্তু চাইলেই আমার ভাবি হতে পারিস।”

আদৃতার মুখে হঠাৎ হাসি ফুটে ওঠে। সন্ধ্যা বলে,”আমি ভাবছি আমার বিয়েটা হওয়ার আগেই সায়ন ভাইয়ার বিয়ের কথাটা তুলব। যাতে করে আমার এই সুন্দরী বান্ধবীটাকে নিজের ভাবি করতে পারি।”

“ধুর! কি যে বলিস না।”

“বাহ, মেয়ে তো দেখি লজ্জা পাচ্ছে। সায়ন ভাইয়ার কথা ভাবলে এতো লজ্জা পাস কেন তুই?”

আদৃতা মনে করে সেই অতীব সুদর্শন চেহারার পুরুষটার কথা। অতঃপর ভাবে,”সত্যি কি লোকটাকে আমি নিজের করে পাবো? যাকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে পছন্দ করে এসেছি।”

—–
আরিশা নিজের কক্ষেই অবস্থান করছিল এমন সময় হঠাৎ কেউ দরজা খুলে আরিশার কক্ষের মধ্যে প্রবেশ করে। আরিশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিশার মুখ চেপে ধরে দেখে বিছানায় ফেলে দেয়। আরিশা অবাক চোখে জাঈদকে দেখতে থাকে। জাঈদের চোখগুলো ছিল ভীষণ রক্তিম৷ সে আরিশার গলা চেপে ধরে বলে,”আমার মাকে অপমান করার সাহস তুমি কোথায় পেলে? এর শাস্তি তোমায় পেতেই হবে।”

কথাটা বলেই আরিশার গলা আরো জোরে চেপে ধরে। আরিশা এক ধাক্কায় জাঈদকে নিজের উপর থেকে সরিয়ে বলে,”আমাকে দূর্বল ভেবে বারবার আঘাত করতে আসবেন না। মনে রাখবেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে একটা পিপড়াও ঘুরে দাড়াতে পারে।”

বলেই আরিশা পাশ থেকে একটা ফুলদানি তুলে নিয়ে জাঈদের মাথায় আঘাত করে। সাথে সাথেই জাঈদ ফ্লোরে পড়ে যায়৷ পুরো ফ্লোর ভেসে যায় জাঈদের রক্তস্রোতে।

to be continue…….

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_19
#ইয়াসমিন_খন্দকার

জাঈদ রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। যা দেখে আরিশা ভয় পেয়ে যায়। সে বুঝতে পারছিল না এখন কি করবে। এমন সময় জাঈদ কোনরকমে উঠে দাঁড়ায়। আরিশা জাঈদকে দেখে বুঝতে পারে তার শরীর বেশ দূর্বল। তার এবার কিছুটা খারাপও লাগে। তাই সে জাঈদকে বলে,”আপনি একটু বসুন, আমি দেখছি কোন ব্যান্ডেজ পাওয়া যায় কিনা।”

“কোন দরকার নেই। আঘাত করে এখন নাটক করছ? আর নিজেকে কি ডাক্তার ভাবো?”

“আপনি চুপ করে বসুন। এটুকু করার জন্য ডাক্তার হতে হয় না।”

বলেই আরিশা জাঈদকে টেনে বসায়। অতঃপর ফাস্ট এইড বক্স এনে তার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিতে থাকে। জাঈদ চুপচাপ ছিল৷ আরিশা জিজ্ঞেস করে,”খুব বেশিই আঘাত লেগেছে নাকি?”

জাঈদ বলে,”একটু লেগেছে।”

“আসলে আমার মাথাটা হঠাৎ করে অনেক গরম হয়ে গেছে আর তাই..যাইহোক, আমি তো আপনার মতো নির্দয় নেই। আমার চরম শত্রুকেও আমি বিপদের দিন সাহায্য করতে পারি। এটাই আমার মানবিকতা।”

বলেই জাঈদের মাথায় ব্যান্ডেজ করিয়ে দিয়ে আরিশা বলে,”এবার প্রয়োজনে গিয়ে কোন ডাক্তারকে দেখিয়ে আসুন। কোন ওষুধ লাগতে পারে।”

জাঈদ আরিশার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমার এত খেয়াল রাখতে কে বলেছে তোমায়?”

“কেউ বলে নি। আমি নিজের বিবেক বোধ থেকেই কথা গুলো বলছি।”

বলেই আরিশা ফাস্ট এইড বক্সটা সঠিক জায়গায় রেখে বলে,”এখন আপনি আসতে পারেন। আমার মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে। একটু বিশ্রাম নিতে হবে।”

“মাথায় আঘাত পেলাম আমি, আর ব্যথা লাগছে তোমার। ব্যাপারটা কেমন না?”

আরিশা বলে,”শারীরিক আঘাতটা বড় না। আমার মতো মানসিক অবস্থায় থাকলে আপনার কাছে তখন এমন হাজার হাজার শারীরিক আঘাতকে নগণ্য মনে হতো। যাইহোক, আমি বেশি কথা বলতে পারব না।”

“ঠিক আছে, থাকো। আমি যাচ্ছি।”

বলেই জাঈদ বেরিয়ে যায়৷ জাঈদ বেরিয়ে যেতেই আরিশা শুয়ে পড়ে। অতঃপর ঘুমানোর চেষ্টা করে।

_________
আদৃতা নিজের বাসায় এসেই দেখতে পায় নিঝুম ও আবরাজ এসেছে। তাদের দেখে আদৃতা খুশি হয়ে যায়৷ আবরাজ আদৃতাকে দেখেই বলে,”এই তো, আমার প্রিন্সেস এসে গেছে। কোথায় ছিলে তুমি?”

“একটু কাজে গিয়েছিলাম।”

“বাহ, ভালো কথা। আমরা আজ এখানে এলাম। কিছু জরুরি কাজেই মূলত আসা। তোমার সাথে একটা ব্যাপারে কথা বলার ছিল।”

“কি ব্যাপারে?”

“তোমার মিস্টার সাজিদ চৌধুরীর কথা মনে আছে? আমার বন্ধু সাজিদ চৌধুরী। ওনার মেয়ে সন্ধ্যা তো মেবি তোমার কলেজেই পড়ে।”

“হুম। কিন্তু হঠাৎ ওনার কথা বলছ কেন?”

“মিস্টার সাজিদ আমায় বলছিলেন ওনার ছেলে সায়নের জন্য ভালো কোন মেয়ে খুঁজছেন বিয়ের জন্য। আমিও ভাবছিলাম, তোমারো তো বিয়ের বয়স হচ্ছে। আর সাজিদকে তো আমি চিনি। ছেলেটা বেশ ভালো, পরিশ্রমী। ওর ব্রাইট ফিউচার আছে, দেখতেও যথেষ্ট সুদর্শন। তাই আমি ভাবছিলাম, তোমার সাথে সাজিদের বিয়ে দিলে মন্দ হয় না। তাই আমি প্রাথমিক ভাবে ওনার সাথে কথা বলেছি৷ উনি অবশ্য বলেছেন, ছেলে-মেয়েদের মতামতের উপরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে। তাই উনি সায়নের সাথে কথা বলবেন জানিয়েছেন। এদিকে আমিও ভাবলাম তোমার সাথে কথা বলার দরকার। তো তুমি বলো, এই ব্যাপারে তোমার কি মত?”

আদৃতা যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়ে যায়। তার পছন্দের মানুষটার সাথে তার বিয়ের কথা! সন্ধ্যা কি এই ব্যাপারে জানত? তাই কি তখন ওভাবে বলছিল। এদিকে আদৃতাকে চুপ দেখে নিঝুম খান বলেন,”কি হলো? কিছু বলছ না কেন? তাহলে কি তোমার এই বিয়েতে কোন মত নেই? না থাকলে বলতে পারো,আমরা জোর করে তোমার উপর কিছু চাপিয়ে দেব না। আমরা শুধু তোমার অনুমতিই জানতে চেয়েছি। সায়ন ছেলেটা তো বেশ ভালোই। তবে তোমার অন্য কোন পছন্দ থাকলেও আমাদের বলতে পারো।”

আদৃতা বলে ওঠে,”না, মম৷ আমি সায়নকে বিয়ে করতে রাজি আছি। তোমরা চাইলে বিয়ের কথাবার্তা আগাতে পারো।”

ছবি বেগম এতক্ষণ চুপচাপ সবকিছু শুনছিলেন। আদৃতার কথা শুনে তিনি খুশি হয়ে বলেন,”বাহ, তাহলে আমাদের আবার বাড়িতে একটা বিয়ে লাগল বলে। বেঁচে থাকতেই তাহলে আমি আমার সব নাতি-নাতনির বিয়ে দেখে যেতে পারবো। আমি যাই, ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আসি। এই খুশিতে সবাই মিষ্টিমুখ করুক।”

এমন সময় নির্ঝর ও আফিফা সেখানে উপস্থিত হয়৷ নির্ঝর বলে ওঠে,”মিষ্টি কোন খুশিতে?”

ছবি বেগম খুশি মুখে বলেন,”তোমার বোনের বিয়ের কথাবার্তা চলছে দাদুভাই।”

“কি? আদৃতার বিয়ে? ওর কি এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি? ও তো কোন কাজই পারে না৷ শ্বশুর বাড়িতে গেলে তো কিক মে**রে বের করে দেবে।”

বলেই মুখ টিপে হাসে। আদৃতা খানিক রেগে বলে,”ভাইয়া, এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি। তাছাড়া সায়নদের বাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই।”

ছবি বেগমও বলেন,”একদম। আমার আদৃতা দিদিভাই তো রাজরানি হবে। তুমি এভাবে বলো না তো।”

এভাবেই পুরো পরিবার মজা করতে থাকে। কিন্তু আফিফা যেনো অন্য চিন্তায় মগ্ন। কিছুদিন থেকে চেষ্টা করেও সে আরিশার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারছে না। সে বুঝতে পারছে না এখন কি করবে।
~~~~~~~
সন্ধ্যা বসে বসে জামিলা শেখের সাথে কথা বলছিল। জামিলা শেখ বলেন,”আচ্ছা, আপা,দুলাভাই তারপর সায়ন ওরা কবে দেশে আসবে? আমার যে আর অপেক্ষা করতে মন চাইছে না। তোমাদের দুজনের বিয়েটা দিলেই আমার শান্তি।”

“ওরা তো আজকালের মধ্যেই এসে পড়বে। তবে, আমার বিয়ের আগে মম-ড্যাড ভাইয়ার বিয়ে দিতে চায়। কারণ, ও আমার বড়।”

জামিলা শেখ কিছুটা বিরক্তির স্বরে বলেন,”কেন? তোমার ভাইয়ের জন্য আবার মেয়ে খুঁজতে তো সময় লাগবে। আগে তোমাদের বিয়েটা হলে হয় না?”

“নাহ, খালা। বেশি সময় লাগবে না। মেয়ে আমাদের পছন্দ করাই আছে। ভাইয়া আর মম ড্যাড দেশে আসলেই বাকি কথাবার্তা এগোবে।”

“তাহলে ঠিক আছে৷”

এমন সময় জাঈদ সেখানে চলে আসে। জাঈদের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে জামিলা শেখ উদ্বিগ্ন স্বরে বলেন,”তোমার মাথায় কি হয়েছে জাঈদ? আবার কি কোথাও গিয়ে মারামারি করেছ? ”

“না,একটা বাঘিনীর সাথে মারামারি করে আহত হয়েছি।”

বলেই জাঈদ ভাবলেশহীন ভাবে বেরিয়ে যায়। জামিলা শেখ বলতে থাকেন,”বাঘিনী..মারামারি এসব কি বলছে ও? আঘাত লেগে মাথাটা আবার খারাপ হয়ে গেলো না তো?”

এমন সময় সন্ধ্যা আরিশাকে দেখতে পেয়ে উঠে গিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”আরে আরিশা এসো। জানো, আজ আমি সবার জন্য কিছু ব্রিটিশ ডিশ রান্না করেছি। তুমি একটু খেয়ো দেখো তো কেমন লাগে।”

এদিকে জামিলা শেখ আরিশাকে নিয়ে সন্ধ্যার এত আহ্লাদ করতে দেখে বলেন,”উফ! সন্ধ্যা এই মেয়েটার সাথে এত ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ছে কেন? নাহ, এদের বেশি মিশতে দিলে চলবে না। যদি মিশতে মিশতে আরিশা ওকে সব সত্য বলে নেয়। এটা আমি কিছুতেই হতে দেব না। আপা আর দুলাভাই আসুক, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিয়েটা দিয়ে এই মেয়েকে আমায় তাড়াতে হবে। প্রয়োজনে ওকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেব, তবুও ওকে আমার পথে কাটা হতে দেব না।”

to be continue…….

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে(সিজন ২)
#Part_20(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আরিশাকে সাথে নিয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করে সন্ধ্যা। নিজের হাতে সন্ধ্যাকে সে খাবার খাইয়ে দেয়। আরিশা সন্ধ্যার এমন অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যা আরিশার দিকে তার বানানো চিকেন কাটলেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এটা খেয়ে দেখো। খুব সুন্দর লাগবে খেতে। আমার হাতের চিকেন কাটলেট না আমার বাড়ির সবার খুব প্রিয়।”

আরিশা খেয়ে বলে,”সত্যি ভীষণ ভালো খেতে।”

সন্ধ্যা আরিশার হাসি মুখ খেয়াল করে বলে,”তোমাকে হাসতে দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। জানো,তোমার জীবনের কাহিনি শুনে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। তোমার মতো এত মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে যে বা যারা অন্যায় করেছে তাদের যেন আল্লাহ অনেক বড় শাস্তি দেন। এই কামনা করি।”

সন্ধ্যার মুখে এমন কথা শুনে আরিশা মনে মনে ভাবে,”আমি কি সন্ধ্যা আপুর কাছ থেকে সব কথা লুকিয়ে কোন অন্যায় করেছি? সন্ধ্যা আপু কত ভালো! আর ঐ জাঈদ! ওর সাথে বিয়ে হলে তো সন্ধ্যা আপুর জীবনটা পুরো নষ্ট হয়ে যাবে। নাহ,আমি এমনটা হতে দিতে পারি না। আমাকে সন্ধ্যা আপুকে সমস্ত সত্যটা বলতে হবে।”

এমন ভাবনা থেকেই আরিশা বলে ওঠে,”আপু, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।”

“হ্যাঁ, বলো।”

“আসলে…”

এমন সময় হঠাৎ করে জামিলা শেখ এর করা হট্টগোল শুনে সন্ধ্যা সেদিকে ছুটে যায়। জামিলা শেখ বলেন,”সন্ধ্যা, দেখো কারা এসেছে।”

সন্ধ্যা তাকিয়ে দেখে তার মা-বাবা দুজনেই এসেছে। তাদের দেখে তো সে অবাক কন্ঠে বলে ওঠে,”তোমরা! কিন্তু তোমরা যে বলেছিলে ২/৩ দিন পর আসবে।”

সন্ধ্যার বাবা সাজিদ চৌধুরী বলে ওঠে,”সারপ্রাইজ! কেমন লাগল আমাদের এই সারপ্রাইজ? তোমাকে এভাবে অবাক করে দেয়ার জন্যই তো আমরা জানাই নি কিছু।”

জামিলা শেখ খুশি হয়ে বলেন,”আপনারা এসে খুব ভালো কাজ করেছেন দুলাভাই। আমি সন্ধ্যার সাথে আজ আপনাদের নিয়েই কথা বলছিলাম। শুনলাম, আপনারা নাকি সায়নের জন্য মেয়ে খুঁজছেন। তা সায়ন কোথায়?”

সাজিদ চৌধুরীর স্ত্রী তথা সন্ধ্যার মা ইভা চৌধুরী বলে ওঠেন,”আরে আর বলিস না! সায়নকে তো চিনিস। ও অনেকদিন পর দেশে ফিরল তো তাই সবার আগে নিজের দাদা-দাদীর সাথে দেখা করতেই গেছে। ওদের সাথে দেখা করেই এখানে আসবে৷ আমরা ভাবলাম আগে সন্ধ্যার সাথে দেখা করি, তারপর নাহয় সবাই মিলে একসাথে যাব।”

সন্ধ্যা তার মার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তোমাদেরও ভাইয়ার সাথে যাওয়া উচিত ছিল। আমি তো প্রথম দিন এসেই দাদা-দাদির সাথে দেখা করে এসেছি। ওনাদের বয়স হয়েছে, তাই আমাদের কাছে ওনাদেরই ফাস্ট প্রায়োরিটি থাকা দরকার।”

ইভা চৌধুরী কিছু বলতে গিয়ে থেমে গিয়ে সন্ধ্যার দিকে নজর দিয়ে বলেন,”এই মেয়েটাকে তো ঠিক চিনলাম না।”

জামিলা শেখ ব্যাপারটা সামাল দিতে বলেন,”ও আমাদের বাড়ির আশ্রিতা। বিপদে পড়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে।”

“ও, তা তোর স্বামী, জাঈদ ওরা কোথায়?”

“আসলে আপা তুমি তো জানোই, আমার স্বামী এবার এমপি হওয়ার দৌড়ে নাম দিয়েছে। সেইজন্য ওকে সারাদিন এখন মিছিল মিটিং করে বের হতে হচ্ছে। বাড়িতে সেরকম থাকেও না। ছেলেটাও হয়েছে একদম বাবার মতোন।”

“ওহ।”

তারা কথাই বলছিল এরকম সময় আবারো কলিং বেল বেজে ওঠে। জামিলা শেখ আরিশার দিকে খেয়াল করে বলেন,”এই মেয়ে, এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন? শুনতে পাচ্ছ না কলিং বেল বাজছে। যাও, গিয়ে দরজাটা খুলে দিয়ে এসো।”

“আচ্ছা।”

বলেই আরিশা দরজাটা খুলতে যায়। দরজাটা খোলামাত্রই আরিশার মুখোমুখি হয় অতীব সুদর্শন এক যুবক। ভীষণ লম্বা এবং সুঠামদেহী এই পুরুষটিকে একবার দেখলেই যেকোন মেয়ে ঘায়েল হয়ে যাবে৷ তার উপর গায়ে থাকা কালো শার্ট ও ডেনিম জিন্স প্যান্টের সাথে মানানসই সানগ্লাস পড়ায় তার সৌন্দর্য যেন আরো বহুগুণে বেড়ে গেছে৷ তবে আরিশা ছেলেটির দিকে সেভাবে না তাকিয়ে চোখ নামিয়ে দিল। কিন্তু ছেলেটি অপলক তাকিয়ে রইল আরিশার দিকে। তার দৃষ্টিতে ছিল এক ধরনের মুগ্ধতা।

সন্ধ্যা হঠাৎ করে এগিয়ে এসে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে বলে,”ভাইয়া, তুমি এসে গেছ।”

সন্ধ্যার কন্ঠ শুনে সায়নের ভাবনায় ছেদ পড়ে। সে হালকা হেসে বলে,”হ্যাঁ, এসে গেলাম। তুই তো আগে আগেই গেলি। আজ আমরাও এসে গেলাম তোকে সারপ্রাইজ দিতে।”

“তোমরা আসবে আমায় আগে বলবে না, আমি আজ সবার জন্য স্পেশাল ডিশ বানিয়েছিলাম জানো। কিন্তু সব তো শেষ হয়ে গেল।”

“কোন ব্যাপার না, আবার বানিয়ে দিস।”

কথাটা বলেই সায়ন আবার তাকালো আরিশা দিকে। আরিশা তখন কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। জামিলা চৌধুরীর এগিয়ে এসে গদোগদো হয়ে বললেন,”আরে আমায় সায়ন বাবু যে! কত্ত বড় হয়ে গেছ। আর বেশ সুদর্শনও হয়েছ দেখছি।”

“কেমন আছ খালা?”

“আমি আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”

” আমিও।”

সায়ন কথা বলতে বলতে বারবার আড়চোখে আরিশার দিকে তাকাচ্ছিল। ব্যাপারটা সন্ধ্যা খেয়াল করে। তবে কিছু বলে না।

জামিলা শেখ বলে ওঠেন,”গেস্টরুমটা পরিস্কার করাই আছে। তোমরা ওখানে গিয়ে বিশ্রাম নেবে চলো।”

ইভা চৌধুরী বলেন,”হ্যাঁ, রে। আমিও অনেক ক্লান্ত। রেস্ট নিতে হবে।”

বলেই তিনি তার স্বামীর সাথে গেস্টরুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। সন্ধ্যা ও সায়নও তাদের পিছন পিছন যায়। সায়ন নিজের কৌতুহল দমন করতে না পেরে সন্ধ্যাকে প্রশ্ন করে বসে,”আচ্ছা, ঐ মেয়েটা কে রে যে আমাকে দরজা খুলে দিল? ওকে তো আগে এই বাড়িতে দেখেছি বলে মন হয় না। ও কি এই বাড়ির কোন আত্মীয়?”

“তেমন কিছু না। আসলে মেয়েটার কথা কি বলব, মেয়েটার লাক ভীষণ খারাপ। জানিস, ওর না বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু ওর স্বামী এই বিয়েটা মেনে নেয় নি। ওকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তারপরই খালারা ওকে এই বাড়িতে আশ্রয় দেয়। মেয়েটার জন্য না আমার ভীষণ কষ্ট হয় জানিস। এত ভালো একটা মেয়ে অথচ ভাগ্যটা কত খারাপ!”

সায়ন আরিশার কথা ভেবে হালকা হেসে বলে,”হয়তো ওর জীবনে এমন কেউ আসবে যে ওর সব কষ্ট দূর করে দেবে।”

—++–
তখন রাত দশটা। ডিনার শেষে সায়ন নিজের জন্য বরাদ্দ রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছিল। হঠাত করেই পানির পিপাসা পাওয়ায় সে ড্রয়িং রুমে যায়৷ আরিশাও সেই সময় ড্রয়িংরুমে এসেছিল পানি খেতে৷ ফলে দুজনে মুখোমুখি হয়ে যায়। আরিশাকে দেখেই সায়ন থমকে যায়। এদিকে আরিশা সায়নকে খেয়াল করে খানিকটা অস্বস্তি বোধ করে। কারণ সে খেয়াল করেছে ছেলেটা কিভাবে যেন তার দিকে তাকাচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে পানি খেতে গিয়ে আরিশা বিষম খায়। অতঃপর চলে যেতে নেবে এমন সময় সায়ন বলে ওঠে,”শুনুন…”

আরিশা পিছন ফিরে তাকায়। সায়ন মাথা চুলকে বলে,”আপনার নামটা যেন কি?”

“আরিশা, কেন?”

“শুনুন, পানি খাওয়ার সময় আস্তে খাবেন। যাতে বিষম না লাগে। আর হ্যাঁ, আপনার নামটা অনেক সুন্দর।”

আরিশার কাছে সায়নের কথাগুলো অস্বস্তিকর ছিল। তাই সে আর না দাঁড়িয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়। সায়ন সেটা দেখে মৃদু হেসে বলে,”এভাবে আর কতদিন আমার থেকে পালিয়ে বেড়াবে? একদিন না একদিন আমার কাছে তোমায় ধরা দিতেই হবে।”

এদিকে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একজোড়া চোখ এইসব কিছু পর্যবেক্ষণ করছিল। রাগে সে নিজের হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে বলে,”আরিশার দিকে কেউ নজর দিলে তার চোখ আমি তুলে ফেলবো। ওর দিকে নজর দেবার অধিকার কারো নেই। কারণ ও আমার…”
to be continue…….