#অশ্রুবন্দি
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৫
একটু থেমে আবার বলল সৃজা,
“ইস্মি ভাবির কেমন লাগে আমি জানি না, তবে এক্ষুনি আমার সাথে করা আপনার ব্যবহারটা আমার খুবই
খারাপ লেগেছে। আপনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে।
যতটুকু অবশিষ্ট আছে তার পরিপ্রেক্ষিতেই বলছি, আমি আপনার ছোট বোনের মতো। আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না ভাইয়া।”
লম্বা রচনা শুনিয়ে সৃজা বসার ঘর থেকে প্রস্থান করল। পেছনে হতভম্ব হয়ে রইল ইজহান, আর সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে কাহিনী দেখতে থাকা ইহসানের বুক ফুলে উঠল গর্বে!
.
বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়া। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। গাছগাছালির পাতা ছুঁয়ে জল টুপটাপ ঝড়ছে মাটিতে।
শব্দ হচ্ছে তাতে। অবশ্য এ শব্দটা ছাড়া চারদিক নিঃস্তব্ধতায় ডুবে আছে। যেন শান্ত, শীতল ভীষণ প্রশান্তিময় মুহূর্ত! অথচ শান্তি নেই ইজহানের মনে। সে আজ সারাদিন বহুত খেটেছে। মিটিং ছিল চারটা। সবগুলোতে নিজে উপস্থিত ছিল সে। এমপ্লয়ের রেডি করা প্রেজেন্টেশন যাচ্ছেতাই ছিল, শেষ মুহূর্তে সে ছুটোছুটি করে নিজের বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে প্রেজেন্টেশন রেডি করে দিয়ে ডিলটা হাতিয়ে নিয়েছে। মন-মস্তিষ্ক, দেহ তাই অবসাদে পিষ্ট!
সারা গায়ে ব্যথা। বিশেষ করে পা দুটোতে।
কফির স্বাদটা বড্ড তিতকুটে ঠেকছে তার। অথচ তার বউয়ের এদিকে মন নেই। ক্রোধে মাথার রগ ফুটে উঠল তার। চোখমুখ কুঁচকে কফির মগটা ছুঁড়ে মারল মেঝেতে। রুঢ়স্বরে ইস্মিকে বলল,
“এটা কী জঘন্য কফি? বানানো ভুলে গেছিস? সারাদিন খেটেখুটে ঘরে এসেও শান্তি নেই দুদণ্ড! যাচ্ছেতাই কোথাকার… ”
ইস্মি টেবিল গুছাচ্ছিল, ওসব রেখে ন্যাকড়া নিয়ে এসে কফি মুছে, ভাঙা কাচ তুলে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলো। এরপর আবারো হিটারে পানি গরম করতে বসালো। পুরোটা সময় একটা কথাও বলল না। ইজহান ওর নির্লিপ্ততা দেখে রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল,
“তোর কফি বানিয়ে তুই-ই খা…”
বলে পাশ ফিরিয়ে বালিশে মুখ চেপে শুয়ে পড়ল।
বিরক্ত লাগছে সবকিছু। ইস্মিকেও! এই মেয়ে রোবটের মতো আচরণ করছে, থাপ্পড় দিতে নিশপিশ করছে হাতটা। রাগে না পেরে ইজহান বিছানার হেডবোর্ডে ঘুষি বসালো পরপর দুটো। ইস্মি সেই শব্দে কেঁপে উঠল৷ চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস টেনে নিলো৷ স্বামীর স্বভাব তার চেনা, এতটাই চেনা যে ইস্মি বুঝতেও পারছে ওর এই নির্লিপ্ত আচরণটাই ইজহানের মাথাব্যথার কারণ! সে কিছুই বলার সাহস করল না। হাতের কাজ দুটো শেষ করে ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ইজহান অন্যদিকে মুখ করে, পুরোটা দখল করে শুয়ে আছে। এখন কিছু বললেই ছ্যাঁত ছ্যাঁত করে উঠবে জানা কথা। ইস্মি হাসি আটকে একপাশে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়ল। এরপর হাতটা নিয়ে গেল ইজহানের মাথায়, বিলি কাটতে লাগল। ইজহান যেন এই সময়ের অপেক্ষাতেই ছিল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“ধরবি না আমায়।”
ইস্মি সাহস করে বলল,
“ধরব।”
“হাত সরা..”
“ঘুমান…”
খ্যাঁকিয়ে উঠল ইজহান,
“আমি ইজহান শেখ তোর অর্ডারে চলব? ভেড়ার ভেড়ীর মতো কথাবার্তা শিখেছিস দেখছি! ঘুমাব না,
কী করবি আমিও দেখব…”
ইস্মি হাত সরিয়ে নিতে নিতে হাই তুলে বলল,
“আমি ঘুমাই, বড্ড ঘুম পাচ্ছে।”
বলে সত্যি সত্যিই ইস্মি ঘুমিয়ে পড়ল৷ এখনো ঘুমের সময় হয়নি, মাত্র দশটা বাজে! ইজহান বাক্যহীন হয়ে গেল। এটা তার বউ ইস্মিতা? হতেই পারে না। ইস্মিতা ওর বলার আগে সব বুঝে যায়, ওর গা ব্যথা, পা ব্যথা। অস্থির অস্থির লাগা সব! অথচ আজ, কফিটা পর্যন্ত আরেকবার সাধল না। নাহ, অভদ্রতার পরিচয় দিয়েছে মেয়েটা। ইজহান চিনতেই পারল না পাশে ঘুমে মগ্ন থাকা এই মেয়েকে! সে তীব্র বুক জ্বালা নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল।
.
ইহসান ফেরেনি এখনো, ব্যস্ত সে কিছু ইন্টেরিয়র ডিজাইন নিয়ে। সৃজা পুরো সন্ধ্যাটা ইস্মির সাথে টুকটাক গল্পগুজব করে কাটিয়েছে, কিন্তু ইজহান ফিরে আসায় এখন ঘরে এসেছে। একাকী সময়টা উপভোগ করতে সৃজা বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছিল। পুকুরপাড়ে টিমটিম করে জ্বলছে ষাট ওয়াটের একটা হলদে বাতি। বাতির আলোতে জলে মাছের লাফালাফি আর পাড়ে গাছের ডালে জমে থাকা জলের ফোঁটা মাটি স্পর্শ করার আগে ঝিকমিক করছিল। দৃশ্যটা বেশ উপভোগ করছে সৃজা। এই পরিবেশে রোমান্টিক গান হলে মন্দ লাগতো না, আবহাওয়ায় দারুণ মানাতো! সৃজার ফোনটা বিছানার উপর, এখন উঠে গিয়ে আনতেও ইচ্ছে করছে না। আলসেমি লাগছে ওর। তবে অ্যাস্থেটিক ভাইবটা ক্যাপচার করার লোভে আলসেমি ত্যাগ করে ফোনটা নিয়ে এলো সে। বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাটা চালু করে সে ভিডিয়ো করল কয়েকটা। এরপর আগের জায়গায় ফিরে গিয়ে বসল। ভিডিয়ো গুলো এলিজাকে সেন্ড করে ইজহানকে ম্যাসেজ লিখল,
“কাজ শেষ হয়নি, কখন আসবে?”
ইহসানের ফিরতি ম্যাসেজ এলো একটু পর,
“আদর খাবি, তাই ডাকছিস নাকি?”
সৃজা রাগান্বিত ‘ইমুজি’ দিয়ে ব্যাঙ্গ করে লিখল,
“ঘাড় মটকাব, পেট ভরবে।”
“সাহস দেখছি মন্দ না, বউ না শত্রু তুই?”
সৃজা চাপা হেসে লিখল,
“চলে এসো, একা একা বোরিং লাগছে।”
ওপাশ থেকে লিখল,
“সময় দিন মহারাণী, কাজ গুছিয়ে ফিরছি।”
সৃজা ‘আচ্ছা’ লিখে সমাপ্তি টানলো কথোপকথনে। ওয়াই-টি মিউজিকে ঢুকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বৃষ্টিভেজা পরিবেশের সঙ্গে মানানসই একটি গান খুঁজে বের করল৷ এরপর গানটি প্লে-লিস্টে যোগ করে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ শোনায় মনোযোগ দিলো,
— আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে
মনে পড়ে গেছে তোমার কথা।
মনের কোণে লুকানো প্রেমের
কথা বলে যেত বৃষ্টি রাত….
বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ আর গানটির আবেগময় সুর মিলে পরিবেশটা যেন আরও প্রাণবন্ত করে তুলল।
গানের প্রতিটি লাইনে সৃজার হৃদয়ে একটা অদ্ভুত নস্টালজিয়া জেগে উঠল। চোখের তারায় ভেসে উঠল ইহসানের কুঁচকানো চেহারাটা। শান্ত, স্থির আর রাগান্বিত মুখটা। ঠোঁটের কোণে খেলে গেল এক চিলতে হাসি৷ ইহসান যখন রেগে যায়, বড্ড অবুঝ লাগে তাকে। যখন অনুভূতির দায় সামলাতে না পেরে অনেকটা জোর করে দু-একটা ছোট চুমুতে চেপে ধরে, তখন সৃজার বুকের ভেতর কাঁপন ধরে যায়। অনুভব করলে মনে হয়, লোকটা বহু আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছোঁয় তাকে, যেন সৃজা তার বহু আরাধ্যিত কেউ! মনে হয় যেন, প্রেম করে বিয়ে করেছে। অথচ তেমন কিছুই নয়। একসময় ভাই হিসেবে দেখে আসা জীবনসঙ্গীকে নিয়ে তাই অদ্ভুত এক সংকোচ কাজ করে সৃজার! অবশ্য এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, যতই নখড়াঝকড়া করুক, ইহসানের ঘুমিয়ে থাকা শান্ত চেহারাটা দেখলে আজকাল বড়ই প্রেমপ্রেম পাচ্ছে সৃজার! আচ্ছা, এই সত্যিটা জানলে ইহসান কী ক্ষ্যাপাবে তাকে? সৃজার মুখখানি রক্তাভ হয়ে উঠল!
গানটা শেষ হতেই সৃজা চিন্তার জগত থেকে বেরিয়ে এলো। ফোনটা হাতে নিয়ে অন্য আরেকটা গান প্লে করে ওটা ছোট্ট কাঠের টেবিলটায় রাখতে গিয়ে আচমকা সৃজার দৃষ্টি থেমে গেল। ভ্রু কুঁচকে গেল। পুকুরপাড়ের ঘন ঝোপের আড়াল থেকে কি যেন নড়ছে! সরাসরি তাকাতেই ওটা স্থির হয়ে গেল। কিছুক্ষণ বুঝতেই পারল না সৃজা, ওটা কী!
খানিকক্ষণ পর বৃষ্টির পানি ঝেড়ে ফেলতে ওটা যখন একটু নড়চড় করে স্থির হয়ে দাঁড়াল, তখনই বুকটা লাফিয়ে উঠল সৃজার। ওখানে একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে! কোনো মানুষ নাকি ভূতপ্রেত? একমনে কেন তাকিয়ে আছে ওর দিকে? চোখ দুটি যেন দুই অদ্ভুত শিখা, জ্বলজ্বলে, গভীর আর অস্বাভাবিক। সৃজা টের পেল সেই চোখ ভয়ানক, পাগলাটে, অথচ ক্রোধিত! ওর গায়ের রোম খাড়া হয়ে উঠল। যদিও সৃজা ভীতু মেয়ে না, তবুও ভয়ে ওর পা জমে গেল। দম আটকে একছুটে বারান্দা থেকে ঘরের ভেতর চলে এল। ভেতরের দরজাটা বন্ধ করার আগে একবার উঁকি দিলো, ঝোপের আড়ালের ছায়ামূর্তিটি তখনো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনুসরণ করে যাচ্ছে ওকে। ঘন অন্ধকারের মাঝেও সেই দুটি চোখের শাণিত দৃষ্টি সৃজার বুকের ভেতর এক অজানা শঙ্কার কাঁপন ধরিয়ে দিলো৷ আতঙ্ক নিয়ে দরজাটা আটকে দিলো সশব্দে। দ্রুত ফোনটা নিয়ে কল করল ইহসানকে, ধরল না ও। সৃজা বিরক্ত ও বিচলিত হয়ে ম্যাসেজ করল ইহসানকে,
“কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি আসো, ভয়ংকর একটা চোর দেখেছি…”
সেন্ড হবার মিনিটের মধ্যেই দরজায় টোকা পড়ল। সৃজা আঁৎকে উঠল। শুনতে পেল ইহসানের রাশভারি কণ্ঠস্বর,
“খোল।”
প্রাণ ফিরে পেল সৃজা। দ্রুত দরজা খুলল। ইহসান অর্ধভেজা শরীরে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বিচলিত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“কোথায় দেখেছিস?”
“পুকুরপাড়ে।”
ইহসানের সিক্ত অবস্থা দেখে সৃজার অবশ্য আর তখন চোরের কথা মাথায় নেই। ওর দৃষ্টি নিবদ্ধ ইহসানের ভেজা বসনে। ও অস্থির কণ্ঠে বলল,
“উফ! ভিজে একাকার হয়েছ, জ্বর বাঁধানোর ধান্ধা।”
ইহসান ওর কথার জবাব না দিয়ে টর্চ বের করে বারান্দায় গিয়ে চোখ বুলাতে লাগল পুকুরের দিকটায়।
নাহ! কেউ নেই, কাউকে দেখা যাচ্ছে না, চোখে পড়ছে না ওর। ইহসান সচকিত চোখে বাইরে তখনো চোর খুঁজে চলেছে। সৃজা তোয়ালে নিয়ে এসে ওর কাণ্ড দেখে ফুঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলল,
“ছিঁচকে চোর হয়তো, এতক্ষণ বসে থাকবে না।”
ইহসান অন্যমনস্ক। তাকে চিন্তিত দেখাল। দৃষ্টি ঝোপঝাড়েই অনড়। কিছু না পেয়ে যেন সে হতাশ। দারোয়ানকে ফোন দিয়ে বলল, পাড়টা খুঁজে দেখতে, কেউ আছে নাকি! দারোয়ান খুঁজে এসে জানাল, ওখানে কেউ নেই। এই বৃষ্টিতে কেউ চুরি করতে আসে নাকি? আসবেও না!
এরপরও সন্দেহবাতিক মন নিয়ে ইহসান ঠোঁট কামড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এদিকওদিক পরখ করতেই ব্যস্ত। ঠিক করল, নিজে গিয়ে একবার দেখে আসবে! সৃজা এবারে ধৈর্য হারাল। কী গোঁয়ার লোক রে বাবা! যেখানে দারোয়ান আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও কাউকে পায়নি, সেখানে ইহসান গিয়ে কী পাবে? এই লোক গায়ের ভেজা শার্ট পর্যন্ত খুলেনি, না শুনেছে কথা! এখন আবার বেরুতে চাইছে! সৃজা খানিকটা রুষ্ট হয়েই ওর পথ আটকাল। সরু চাহনি ছুঁড়ে ওর শার্টের বোতামে হাত দিলো, একটা একটা বোতাম খুলতে খুলতে বিড়বিড় করতে করতে বলল,
“কিছু একটা দেখেছি, সেটা ভূতপ্রেত হতে পারে, নয়তো চোর। আবার হতে পারে চোখের ভুল আমার! যেটাই হোক, ত্যাঁনারা কি গণধোলাই খেতে ঘন্টা ধরে এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বসে থাকবে এখনো, যে তুমি গোয়েন্দাদের মতো তল্লাশি চালাচ্ছ? তোমাকে দেখছি কিছু বলাই যাবে না!”
ইহসানের মনোযোগ ঘুরল সৃজার ব্যস্ত হাতের পানে তাকিয়ে। কপালে ভাঁজ ফেলে সে সরু চোখে তাকাল। এরপর নিরুত্তর দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল সৃজার কাজ।
শার্টের টপ বোতামটা খুলতে গিয়ে ওর তীক্ষ্ণ চোখে চোখ পড়ল সৃজার। তখনি মেয়েটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না ওর শাণিত দৃষ্টিতে। বোতামটা না খুলেই হাত নামিয়ে ফেলল আলগোছে। লজ্জায় রক্তিম হলো গাল। পালিয়ে যাওয়ার মতলব কষতেই ইহসান ধরে ফেলল ওকে। বক্র হাসি ঝুলিয়ে মুখ নিচু করে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“বৃষ্টিভেজা দিন, আমরা লুডু খেলব না?”
.
মাঝরাতে মেয়েলি ছোঁয়ায় আধোঘুম থেকে জাগ্রত হতেই ইজহান দেখল ইস্মি ওর পিঠে মালিশ করে দিচ্ছে! নরম হাতের স্পর্শ সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে ব্যাপারটা অনুভব হতেই ইস্মিকে বুকের ভেতর টেনে নিলো ইজহান। অস্ফুটস্বরে বলল,
“সারা গায়ে ব্যথা বউ, মনেও…”
.
______
চলবে…