#অশ্রুবন্দি
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৭
ইহসান বেশ কিছুক্ষণের জন্য চমকাল, থমকাল। বিস্মিত অবস্থাতেই রইল কতক্ষণ! হাসি ফুটল না ঠোঁটের কোণে, শুধু ভার হয়ে থাকা বুক থেকে পাথর নেমে যাওয়ায় সে কিছুটা ধাক্কা খেল। কেমন অদ্ভুত, অস্থিরতা কাজ করতে শুরু করল বুকের ভেতর। তবে বহুদিনের আকাঙ্খিত মেয়েটির কথাগুলো তার কর্ণকুহরে অদ্ভুত প্রশান্তি ছড়াচ্ছে। তৃষ্ণার্ত মনটা সৃজার পূর্ণ ভালোবাসা পাবার লোভেই আর দ্বিমত করল না। সৃজার চুলে আঙুল ডুবিয়ে, এক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে সে ম্লান স্বরে বলল,
“গ্র্যান্টেড…”
.
বিকেল পাঁচটা। ইহসান দাঁড়িয়ে আছে সৃজার ভার্সিটির সামনে। অপেক্ষা করছে ওর জন্য। সঙ্গে আছে সম্প্রতি কেনা তার ইয়ামাহা এমটি-১৫ বাইকটি। গতকাল রিকশায় করে সৃজাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিতে বেরিয়েছিল ইহসান। মোড়ে পৌঁছে হঠাৎ ইজহানের গাড়ির সামনে তাদের রিকশাটা পড়ে গেলে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে মুখ বের করে ইজহান ওকে টিপ্পনী কেটেছে, ইহসানের কোনোভাবেই সহ্য হয়নি সেটা। তাই আজ একটা বাইক নিয়ে নিয়েছে। সৃজা অবশ্য এখনো জানে না, ওকে চমকে দেবে বলে দাঁড়িয়ে আছে ইহসান। আরো মিনিট দশেক পেরোনোর পর সৃজাকে বেরিয়ে আসতে দেখল ইহসান। মুখে অবসাদের ছাপ, বিষন্ন দেখাচ্ছে! হয়তো ক্লাস করে ক্লান্ত মেয়েটা, ইহসানের খারাপ লাগল ওর জন্য। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে হাত উঁচিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করল সৃজার। ওকে সেখানেই থামতে বলে বাইকটারেখে নিজে রাস্তা পেরিয়ে চলে গেল ওর কাছে। দোকান থেকে পানির বোতল কিনে এনে ওটার ক্যাপ খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল,
“ক্লান্ত লাগছে খুব? পানি খা…”
সৃজা ব্যাগটা ওর হাতে দিয়ে বোতলটা নিলো। ঢকঢক করে অর্ধেকটা পানি খেয়ে এরপর বাকিটা চোখেমুখে ছিঁটিয়ে দিলো। ইহসান দ্রুত পকেট থেকে রুমাল বের করে ওর হাতে দিলো। সৃজা থমকে গেল এক মুহূর্তের জন্য! রুমালটা নিয়ে ধীরেসুস্থে মুখ মুছে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“অনেকক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছ তাই না?”
ইহসান অস্বীকার করল,
“এইমাত্র এলাম।”
সৃজা ভ্রু কুঁচকে ফেলল। ইহসানের চোখেমুখে ঘাম, বেশ দৌড়ঝাঁপ করার ফল। বোঝাই যাচ্ছে সে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে। অথচ সত্যিটা চেপে যাচ্ছে। সুন্দর পুরুষালি মুখটা দেখতে বড়ই মায়াবী লাগছে। সৃজা মনে মনে আক্ষেপ করল! ও তো একাই বাড়ি যেতে পারে, কেন আনা-নেওয়ার ঝামেলা করে কাহিল হচ্ছে লোকটা? ও এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল ইহসানের সামনে। হাতের ভেজা রুমালটা আর ব্যবহার করা যাবে না, তাই নিজের ওড়নাটাই রুমাল হিসেবে ব্যবহার করল। দু’পা উঁচু করে ইহসানের কপাল থেকে ঘামের সূক্ষ্ম ফোঁটা মুছে দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
“তুমি নিজেই কাহিল, আর পানি খাওয়াচ্ছ আমাকে? নিজেকে একটু আরাম দাও…”
ইহসানের মনটা আন্দোলিত হলো। সে নিজেই মাথা নামিয়ে সৃজাকে সাহায্য করল ধীরেসুস্থে কাজটা সম্পন্ন করতে। বলল,
“হ্যাঁ, যাতে তোর আদর পাই।”
সৃজা নাকটা জোরে টেনে ধরল ওর,
“কেউ শুনতে পেলে কী ভাববে! সবসময় প্রেম প্রেম পায় নাকি তোমার; রাস্তাঘাট মানো না…”
ইহসান বিগলিত কণ্ঠে বলল,
“প্রেম প্রেম কথা রাস্তায়ই সবচেয়ে বেশি মানায়! কারণ প্রেম সেই অনুভূতি, যা সাদামাটা রাস্তাঘাটকেও বিশেষ করে তোলে। ডু ইউ নো, প্রেমের কারণে পৃথিবী রঙিন হয়ে ওঠে, আর রাস্তাঘাটের প্রতিটি পাথরে প্রেমের ছোঁয়া থাকলে তবেই তার সৌন্দর্য বেড়ে ওঠে?”
সৃজা ওর বলার ধরণ দেখে হেসে ফেলল। দারুণ দেখাল ওর এতক্ষণের বিষন্ন, মলিন চেহারাটা। ইহসান বিবশ চোখে চেয়ে রইল। সৃজা তার ওড়না দ্বারা ইহসানের কপাল, মুখ ভালোভাবে মুছে ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়িয়ে ব্যতিব্যস্ত স্বরে বলল,
“পানি তো সবটা খেয়ে ফেলেছি, দাঁড়াও তুমি! আমি আরেকটা বোতল নিয়ে আসি। শুকিয়ে আছে তোমার মুখটা ইশ, দাঁড়াও।”
ইহসান এ পর্যায়ে ছোটখাটো ধমক দিয়ে বলল,
“ধুর গবেষণা রাখ। আয় আমার সাথে…”
বলে ইহসান ওর হাত মুঠোয় নিয়ে হাঁটা শুরু করল। সৃজা আপত্তি করার সুযোগ পেল না। ইহসান ভিড়ভাট্টা, রাস্তা পার হয়ে চলে এলো এপাশে; বাইকের সামনে। কালো রঙের সম্পূর্ণ নতুন বাইকটি দেখে সৃজা কিছুই বুঝল না। প্রশ্নোক্ত চাহনিতে তাকাল ইহসানের দিকে। সে ইতস্তত কণ্ঠে সৃজাকে বলল,
“এখন আপাতত টাকাপয়সা খুব একটা হাতে নেই, কম দামের মধ্যে এটা নিয়েছি তোর জন্য। দেখ তো, কেমন হলো?”
সৃজা বিস্ময়ে একবার বাইকের দিকে একবার বাইকের দিকে তাকাল। ইহসান ওর জন্য বাইক নিয়েছে, কিন্তু কেন? সৃজা কি বলেছে ওর বাইক লাগবে? আশ্চর্য! বাইক তো ও দু’চক্ষে পছন্দ করে না, কারণ এতে এক্সিডেন্ট হয় তাই! সৃজা কপাল চাপড়াল,
“আমার জন্য বাইক নিয়েছ, কিন্তু কেন?”
“ভার্সিটি কামাই করেছিস এতদিন, এখন থেকে তো নিয়মিত আসতে হবে। প্রতিদিন রিকশা করে আসাটা ঝামেলা আর সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই ভাবলাম নিয়ে নেই, সুবিধা হবে তোর জন্য!”
সৃজার মুখটা কালো হয়ে গেল। মানুষটা ওর জন্য এতটা ভেবেছে এতে ওর খুশি হওয়া উচিৎ। কিন্তু ও খুশি হতে পারছে না উল্টো ভয় হচ্ছে। জীবনে কখনো বাইকে উঠেনি সে, দেখলেই ভয় লাগে। মনে হয় এক্ষুনি ট্রাক-বাসের নিচে চলে যাবে। নাহ, সে উঠবে না বাইকে, না ইহসানকে উঠতে দেবে। সৃজা ইহসানের বাহু খামচে ধরে হাসার প্রচেষ্টা করে বলল,
“বাইকটা খুব সুন্দর হয়েছে, দারুণ! কিন্তু আমরা রিকশায় করে যাব, ঠিক আছে?”
ইহসান কপালে ভাঁজ ফেলল,
“সে কী কথা, বাইক থাকতে রিকশা করে যাব কেন? তোর কি পছন্দ হয়নি? না হলে বল, অন্যটা নিয়ে আসব…”
সৃজা বোকা বোকা হেসে বলল,
“এটা খুব সুন্দর, কিন্তু এত টাকা খরচ না করলেই পারতে।”
ইহসান ওকে আগাগোড়া পরখ করে ওর কাঁধে হাত রেখে দাঁড়াল,
“সমস্যাটা কী বল তো? এরকম আমতাআমতা করছিস কেন?”
সৃজা মুখ নামিয়ে বলল,
“আমি বাইকে চড়ব না, তোমাকেও চালাতে দেব না। এক্সিডেন্ট হয়ে গেলে? আমার ভয় লাগে।”
ইহসান হু হু করে হেসে উঠল। সৃজা কিছুটা রুক্ষ স্বরে চেঁচাল,
“আমার ভয় করে শুনে তুমি হাসছ? আশ্চর্য লোক তো!”
মাগরিবের আযান পড়ে গেল। ইহসান দেরি করতে চাইল না। হাসতে হাসতেই গিয়ে বাইকে উঠে বসল। হ্যান্ডেলবারে রাখা হেলমেটটা পরতে পরতে সৃজাকে পেছনে বসার ইঙ্গিত করে দৃঢ়চিত্তে বলল,
“ডার্লিং, আপনার হাজব্যান্ড এতোটাও অকর্মণ্য নয় যে আপনাকে সামান্য একটা বাইক নিয়ে এতটা ভয় পেতে হবে। সো, টেক আ সিট অ্যান্ড উইটনেস ইয়োর হাজব্যান্ড’স এক্সট্রাঅর্ডিনারি রাইডিং স্কিলস।”
ইহসানের মুখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ। ওর কথা শুনে কোটর থেকে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো সৃজার। মুখ শুকিয়ে গেল ওর। চোখেমুখে আতঙ্ক, দ্বিধভাব। পা দুটো কাঁপতে শুরু করল, আর তারে স্পষ্ট ভয়ের অনুভূতি ফুটে উঠছিল। ইহসান দেখল ওকে সচকিত চোখে। এই মেয়ে উঠার আগেই যেভাবে ভয়ে কাঁপা-কাঁপি করছে না জানি বাইকটা টান দিলে স্ট্রোক করে বসে! বাইকটা কিনে কী তাহলে ভুল করল সে? কিছুটা ম্লান দেখাল ওকে। তবুও একবার চেষ্টা করে দেখা যাক, সৃজার ভয় ভাঙানো দরকার। যদি সেটা না হয় তাহলে বাইক রাখবে না সে! সে তাড়া দিলো সৃজাকে। আতঙ্কিত চেহারা নিয়ে সৃজা ওর পেছনে বসল। বসেই ইহসানের পেট,বাহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ইহসান অভয় দিলো ওকে। এরপর কিছুটা আত্মবিশ্বাস আর উত্তেজনা নিয়ে হাতটি সোজা করে বাইকের নেভিগেশন বার ধরল, আর পা দুটি শক্তভাবে গিয়ার প্যাডাল ও ব্রেকের উপর স্থির করল। এক হাত দিয়ে ক্লাচ ধরে, অন্য হাত দিয়ে স্টার্ট সুইচটা টিপে দিল। মুহূর্তে বাইকটির ইঞ্জিনে হালকা গুঞ্জন শোনা গেল। সঠিক সময়ে ক্লাচটি ধীরে ধীরে ছাড়ল, আর এক্সেলেটর প্যাডালটি সোজা করে ইহসান ডান হাত দিয়ে সামান্য টিপলো। বাইকটি ইঞ্জিন শক্তি পেয়ে ধীরে ধীরে গতি নিতে শুরু করল। ইহসান মাথাটা এক ঝাঁকানি দিয়ে সোজা করে বাইকটি রাস্তায় নামাতেই সৃজা চোখ বন্ধ করে এক চিৎকার দিয়ে ওর কোমড় ঝাপ্টে ধরে চিৎকার করে বলল,
“আমার ভয় করছে, এটা এক্ষণি বাসের নিচে চলে যাবে। দোহাই তোমার ইহসান ভাই, থামাও এটা। তোমার বাইক চালানোর এত্ত শখ… আল্লাহ আমি মরে যাব…”
সৃজার কান্ড দেখে ইহসান হাসবে না কাঁদবে বুঝে পেল না। সে প্রচন্ড এক ধমক দিলো,
“তোর চিল্লানি শুনেই আমি কন্ট্রোল হারাব, এমনিতে না। চুপচাপ বস, নয়তো গতি বাড়াব…”
সৃজা অবশ্য থামল না, চোখই খুলল না। দোয়াদুরুদ পড়া শুরু করল। ইহসানের পিঠে মুখ গুঁজে পুরোটা সময় এভাবেই কাটিয়ে দিলো। বেশ খানিকক্ষণ পর ‘অরবিট টাওয়ারের’ পার্কিং লটে বাইকটা থামাল ইহসান। দু’সেকেন্ড দম নিয়ে এরপর সৃজাকে উদ্দেশ্যে করে বলল,
“ভীতুর বাচ্চা, উঠ এবার; সরি উঠো বউ….”
সৃজা ধাতস্থ হলো সময় নিয়ে। এরপর মাথা তুলল। গভীর শ্বাস নিতে নিতে বলল,
“এভাবে মজা কথা বলছ কেন? আরেকটু হলে মরেই যাচ্ছিলাম…”
“তোর স্বামী ছিল তো, তুই টপকাবার আগেই সে টপকে যেত…”
সৃজা মুখ গোঁজ করে বলল,
“পাষাণ কোথাকার… ”
“হু, এবার নাম।”
সৃজা এতক্ষণে আশেপাশে তাকাল। এরপরই কপাল কুঁচকে গেল। এখানে ওরা কি করছে? বাড়িতে না নিয়ে ইহসান কেন তার রেস্তোরাঁয় নিয়ে এলো ওকে? প্রশ্নটা করতে যাবে তার আগেই উত্তরটা এলো,
“কিছু কাজ আছে সেরে একেবারে ডিনার করেই ফিরব।”
“ওহ!”
শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত অরবিট টাওয়ারের চারতলায় ইহসানের ‘Le Cœur de Maman’ রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে চেইনটি বিস্তৃত। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে, এটি ফ্রেঞ্চ এবং ইটালিক খাবারের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সৃজা আর এলিজা এর আগে বেশ কয়েকবার এসেছে এখানে, ইহসানই নিয়ে এসেছে। তাই চেনে ও। ইহসান সৃজার হাত মুঠোয় নিয়েই এলিভেটরে চড়ল। ফোর্থ ফ্লোরে নেমে ছোট্ট একটা হলওয়ে পেরুতেই পৌঁছে গেল তারা। রেস্তোরাঁর প্রবেশমুখে ঝলমলে আলোয় উজ্জ্বল ‘Le Cœur de Maman’ নামটি দৃশ্যমান। বিভিন্ন রঙের লাইটিংয়ের আলোতে এটি আরও বিশেষ ও আকর্ষণীয় হয়ে দেখাচ্ছে। ভীষণ সুন্দর! কাচের চকচকে দরজা ঠেলে সৃজাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেই ইহসান সৃজাকে প্রাইভেট লাউঞ্জে অপক্ষা করতে বলে ম্যানেজমেন্ট অফিসের ওখানে চলে গেল। সৃজা লাগোয়া ওয়াশরুম
থেকে ফ্রেশ হয়ে একা একা ঘুরে দেখল লাউঞ্জটা। সোনালী রঙের দেয়াল, নরম কার্পেট, বড় লিডি সোফা এবং গ্লাস টেবিলে রুমটাকে সাজিয়েছে ইহসান। এক কোণায় কফি বার, কিছু অলংকৃত গ্লাস, ছোট আর্ট পিস দ্বারা সজ্জিত। বড্ড আধুনিক আর শীতল। জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সৃজা নরম গদিওয়ালা সোফায় বসে শহরের দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে ক্লান্তিতে চোখদুটো বুজে ফেলল টের পেল না। ইহসান ফিরল ঘন্টাখানেক পরে। একেবারে খাবারদাবার নিয়ে। সৃজা যেহেতু বিদেশি খাবার খুব একটা পছন্দ করে না তাই ওর পছন্দের শাহী বিরিয়ানি, তিরামিসু, ক্রেম ব্রুলি আর স্মুদি নিয়ে এসেছে। কিন্তু লাউঞ্জে ঢুকেই ওর ঢুলতে থাকা চক্ষুদুটো চড়কগাছ। সোফায় পা গুটিয়ে ঘুমে মগ্ন সৃজা। মুখটা ভীষণ আদুরে। সারাদিনের ক্লান্তির পর ওর সুন্দর এই ঘুমটা ভাঙানোর ইচ্ছে ছিল না ইহসানের। কিন্তু খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে
দেখে সে আস্তেধীরে, আদুরে গলায় ডাকল সৃজাকে দু’বার। ধরফড়িয়ে উঠে বসল সৃজা। ইহসানকে দেখে বলল,
“এসে পড়েছ? বাড়ি যাব কখন?”
ইহসান এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কেমন শক্তমুখে বলল,
“খাবার নিয়ে এসেছি, হাতমুখ ধুয়ে আয়।”
সৃজা খানিকটা অবাক হলো, এইতো ভালো, হাসিখুশি ছিল। কি এমন হলো হুট করেই মুড পালটে গেল? কিন্তু কথায় কথা বাড়বে, তাই বিনাবাক্যে চলে গেল হাতমুখ ধুতে।
ফিরে এসে দেখল ইহসান খাবার বেড়ে বসে আছে। মুখ চিন্তিত, অস্থির। সৃজার আসার শব্দ পেয়ে ওকে পাশে বসার ইশারা করল। সৃজা বসল, ইহসান প্লেটে খাবার নিয়ে ধীরেসুস্থে ওর মুখের সামনে ধরে বলল,
“হা কর…”
“আমি খেতে পারব।”
ইহসানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল,
“আমার হাতে কী সমস্যা?”
অগত্যা সৃজা লোকমাটা মুখে নিতে বাধ্য হলো। জিজ্ঞেস করল,
“তুমি খাবে না?”
“আমাকে নিয়ে ভাবতে বলেছি?”
কঠিন ও জড়ানো স্বরে বলল ইহসান৷ সৃজা বুঝল কোনো কারণে মুড ভালো নেই লোকটার৷ তাই আর ঘাঁটালো না। রাগের সময় হুঁশ থাকে না ইহসানের, উল্টোপাল্টা বলে ফেলে। তাই পুরোটা সময় চুপচাপ বসে থেকে ওর হাতে খাবার খেল সৃজা৷ ক্রেম ব্রুলি আর স্মুদি খেতে পারল না অতোটা। তিরামিসুটা খাবার সময় ক্রিম লেগে গেল ঠোঁটে-মুখে। ইহসান দেখল শাণিত, নেশাক্ত চোখে, বলল
না। কিছুটা খেয়ে বাটিটা রেখে দিলো সৃজা। ওদিকে ঘোলাচোখের দৃষ্টিদুটোর লোভ জাগছে সৃজার ঠোঁটে লেগে থাকা ক্রিমের উপর। চোখ পড়লেই মাথাটা ভার, নেশালো লাগছে। আচমকা সৃজার চোখ পড়ল ইহসানের উপর।
ওর থেকে কিছুটা দূরে বসে আছে। অস্থির, অস্বাভাবিক লাগছে। ছোট ছোট চোখ করে সন্দেহজনকভাবে ইহসানের গাল ছুঁলো সে,
“এমন অস্বাভাবিক ঠেকছে কেন তোমায়?”
“বেবি, আই ওন্ট টু নো এভরি কার্ভ অফ ইউর বডি. আই ক্যান্ট ওয়েইট এনি লংগার….”
রক্তাভ চোখে এতটুকু বলেই নরম গদির সোফায় হুট করেই চেপে ধরল ইহসান সৃজাকে। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই গালের পাশে লেগে থাকা তিরামিসু ক্রিমটা চেটে ঠোঁট আঁকড়ে ধরল ওর। তখনি নাকে ঠেকল অদ্ভুত, অচেনা এক গন্ধ। গা গুলিয়ে উঠল সৃজার। দম বন্ধ হয়ে এলো। বহুকষ্টে মুখটা সরাতে সক্ষম হলো সে, ইহসানের ঠোঁট তখন ওর কানের লতি ছুঁচ্ছে। সৃজার এদিকে বেহাল অবস্থা। গন্ধে ওর মনে হচ্ছে বমি পেয়ে যাবে। নাকমুখ কুঁচকে বলল,
“কি খেয়েছ তুমি?”
ইহসান অস্থির, অদ্ভুত, এলোমেলো গলায় বলল,
“লাল ম’দ। ছুঁয়েছি শুধু, খাইনি…”
সৃজা হতবাক, স্তব্ধ! বেহেড ইহসান ওর ঠোঁটে লেগে থাকা তিরামিসু চেটে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আই ওয়ান্ট টু বি ইয়োর তিরামিসু।”
_____
চলবে…