অসময়ের শুকতারা পর্ব-১০

0
33

#অসময়ের_শুকতারা
#অনামিকা_আহমেদ
পর্ব:১০

শীতল হতভম্বের মত তাকায় হিমের দিকে, মুখের ভঙ্গি দেখে বোঝা যাচ্ছে হিমের নির্ল*জ্জ কথায় সে কম আশ্চর্য হয় নি। তিল কে তাল বানিয়ে ফেলার টেলেন্ট হিমের শিরায় শিরায় বহমান। শীতল হিমের থেকে চোখ সরিয়ে আবারো ফোনে কিছু লিখে। লেখাটা হিমের দিকে বাড়িয়ে দিলে সাথে সাথেই হিমের ঠোঁটের কোণে থাকা দুষ্টু হাসি গায়েব হয়ে যায়।

” আপনার মন মগজকে জমজম এর পানি দিয়ে ধুলেও আপনি ঠিক হবেন না কারণ আপনি একটা কুকুরের বাঁকা লেজ।”

কিন্তু হিমের মুখে আবারো হাসি ফিরতে বেশি সময় লাগে না। তবে এবারে তার হাসির পরিধি আরও ব্যাপক, যা দেখে শীতল কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। আবেগের বশে সে হিম কে কুকু*রের সাথে তুলনা দিয়েছে। কিন্তু এখন সে মনে মনে অনুমান করতে পারছে যে সে কতটা ভুল করেছে। আসলে দীর্ঘ অনেক বছর তার বাড়ির সদস্যরা পান থেকে চুন খসলেই তার ওপর চড়াও হয়েছে, ক*টু কথা এমনকি গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা করেনি। আর সাদাত তো প্রতিদিন শীতল কে নিয়ম করে রকমারি শাস্তির সম্মুখীন করত। তাই ছোট থেকেই সে নিজের কাজ কর্ম চলাফেরা সম্পর্কে বেশ সচেতন। কিন্তু আজ কেনো জানি শীতল এত বড় ভুল করেছে, হয়তো হিম কে সে বাড়ির লোক গুলোর মতো অমা*নুষ ভাবতে পারে নি, অন্য পৃথিবীর এক ভিন্ন ধাঁচের মানুষ ভেবেছে হয়তো।

শীতলের মুখে ভ*য়ের ছাপ স্পষ্ট, চোখ জোড়া আত*ঙ্কে ভরে উঠেছে দেখে হিম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করবার জন্য শব্দ করে হেসে ফেলে। হিম কে এভাবে হাসতে দেখে আবারো ভীষণ অবাক হয় শীতল। হিমের হাসির রেশ শেষ হলে কৌতুক চোখে সে তার বরফ কন্যার দিকে তাকায়।

– শোনো ছেম*রি, আমি কুকুরের বাকা লেজ নয়, আমি হলাম কু*ত্তার তেরা লেঙ্গু*র, একেবারে জন্ম থেকেই।

আঞ্চলিকতা বরাবরই শীতলের ভীষণ পছন্দের। কিন্তু দীর্ঘ জীবন ঢাকা শহরের চার দেওয়ালের মাঝে কাটানোর কারণে আঞ্চলিকতা তাকে ছুঁতে পারে নি গভীর ভাবে। তাই হিমের মুখে বাঙ্গাল ভাষায় কথা গুলো বেশ মজার লাগে শীতলের কাছে। আর এবারের কথাটা যেনো অন্যগুলোর চেয়ে ভীষণ আলাদা।
সব কিছু ভুলে প্রাণ খুলে হাসতে থাকে শীতল।

আজ অনেকদিন পর প্রাণ খুলে হেসেছে শীতল। হাসি থামলে সে হিমের দিকে তাকালে দেখতে পায় সে তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। যার হাসির শব্দ এতটা আরামদায়ক তার কন্ঠ জানি কতটা শ্রুতিমধুর, এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়। শীতলের কন্ঠস্বর শোনার জন্য আকুল হয়ে থাকে হিমের অবুঝ মন।

– আমি গোসল করব।

শীতলের লেখা দেখে হিম তার কল্পনার রাজ্য থেকে বের হয়ে আসে।

– বাথরুমে কি পানি নেই?

– আছে কিন্তু গোসল সেরে কি পরব? জামা কাপড় তো নেই।

লেখাটা পড়ে হিম নিজের জিহ্বায় কামড় বসায়। আসলেই সে এটা ভুলে গেছে। পড়ে গিয়ে কাপড় কিনা গেলেও এখন কিছু একটা দিয়ে কাজ চালাতে হবে। কিছুক্ষণ ভেবে নিজের আলমারির দিকে পা বাড়ায় হিম।

একটা ওভারসাইজড সাদা টিশার্ট আর সাদা একটা লুঙ্গি এনে হিম সেগুলো শীতলের দিকে তুলে দেয়। পোশাকগুলোর মাঝে লুঙ্গি দেখতে পেয়ে শীতল রা*গী তাকায় হিমের দিকে।

– ওভাবে তাকিয়ে আছ কেনো ছে*মরি? ওভাবে তাঁকিয়ে থেকো না, বলা যায় না কখন তোমার প্রেমে পড়ে যাই।

হাতের কাপড় গুলো বিছানায় রেখে শীতল আবারো লেখে,

– আপনার কি মাথা ন*ষ্ট, আমি মেয়ে মানুষ হয়ে লুঙ্গি পড়বো?

– তাহলে আমি এখন কি করব বলো? আর কিছু নেই আমার কাছে। আজকে রাতের জন্য লুঙ্গিটা কেই স্কার্ট মনে করে পরে ফেলো। কাল সকালে আমি নাহয় কাপড় নিয়ে রাখবো তোমার জন্য।

শীতল এর কিছু লিখে না। মনে মনে হিম কে গা*লি দিতে দিতে ব্যার্থ রুমের দিকে পা বাড়ায়। এসময় হিমের উচুঁ গলায় কথা শোনা যায়।

– গোসল করতে সমস্যা হলে আমায় ডেকো কেমন? আমার দয়ার শরীর, কিছু কে দেখে হেল্প করে দিবো প্রমিজ।

একটা মানুষ কতটা নি*র্লজ্জ হতে পারলে এসব কথা বলে একটা মেয়েকে। এসব চিন্তা করতে করতে শীতল সজোরে বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দেয়।

– ধুর, কবে যে ছে*মরিটাকে নিজের পত্নী বানাবো আল্লাহ জানে? মনটা খালি উড়ু উড়ু করছে, সুতায় টান দিয়েও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছি না। 🥹🥹

___________________________________________

নিস্তব্ধ ঘরের একমাত্র আলোর উৎস বেডসাইড টেবিলের ল্যাম্প দুটো। ক্ষীণ আলো ছড়াচ্ছে যেনো কেবল হাঁটাচলা করা যায়। বিলাসবহুল বেডের ওপর পশমি চাদরের তলায় বেঘোরে ঘুমাচ্ছে হিম। কিন্তু তার শান্তির ঘুম নষ্ট করতে এক মুহুর্ত সময় নেয় না তার ফোন। কারো কল আসায় বিকট শব্দে বাজতে থাকে সেটা।

– আরে আমার জন্ম শত্যু*র ফোনের বাচ্চা চুপ যা। তানাহলে এক ঢিল মেরে তোকে গুড়িয়ে ফেলতে আমার হাত কাপবে না।

চোখ না খুলেই ফোন কেটে আবারো ঘুমের দেশে তলিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ফুরসৎ পায়নি হিম। আবারও ফোনটা বেজে উঠে। অতি বিরক্তি ফোনটা রিসিভ করে ওপাশে থাকা মানুষটা কে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হিম বলতে থাকে,

– প্লাটিহেলমিন্থেস এর বাচ্চা, তুই প্লাটিহেলমিনথেস, তোর বাপ দাদা চোদ্দ গুষ্টি প্লতিহেলমিন্থেস। কল কেটে দিয়েছি,তাও বুঝিস না আমি ঘুমাচ্ছি। শা*লায় বউরে নিয়া স্বপ্ন দেখছিলাম। বউ কত সুন্দর করে ভাত মাখায়ছিল, তোর জন্য বউয়ের হাতে ভাতটাও খাইয়ে পারলাম না। তোর বিয়ে হবে না শা*লা।

– সব বুঝলাম কিন্তু প্লাটিহেলমিন্থেস আবার কি?

– চেপ্টা কৃ*মি, তুই চেপ্টা কৃ*মি, তোর বাপ দাদা চোদ্দ গুষ্টি চেপ্টা কৃ*মি।

– তাহলে তো তুই ও চেপ্টা কৃ*মি হলি, after all you are my younger brother.

শেষের লাইনটা শুনে হিমের ঘুম উড়ে যায়, তারাতারি করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে তুষার তাকে কল দিয়েছে। ভ*য়ে গলা শুকিয়ে যায় তার।

– ও তুষার ভাই তুমি, আগে বলবে না, ঘুমের ঘোরে কি না কি বলে ফেললাম তোমায়।

– বলতে দিলে তো বলবো, ফোন রিসিভ করেই তো ভাঙ্গা রেডিও চালিয়ে দিয়েছিস।

– সরি ভাই, কিছু মনে করো না। আসলে মাথা মুথা ঠিক নেই কদিন ধরে। কি বলতো ছাব্বিশ বছরেও স্বপ্নের বাসর টা হয়নি তো, বউ নামক দাবাই পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

– আমি তোর বড় ভাই হয়েও এখনও বিয়ে করলাম না, আর তুই কিনা ফিডার খাওয়ার বয়সে বাসরের স্বপ্ন দেখিস?

– সবার স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে, নিজে স্বপ্ন দেখো অন্যকেও দেখাও।

– তুই বাড়ি আয়, তোর স্বপ্ন আমি বের করছি। দেশে পড়ে আছিস, ভাইয়ের কথা মনে হয় না। বাসায় ফিরবি কবে?

– ওর পাসপোর্ট বানাতে দিয়েছি, সেটা হলেই চলে আসবো।

– ও মানে? ও টা কে? কাকে আনছিস নিজের সাথে?

হিম সাথে সাথেই জিহ্বায় কা*মড় বসায়। শীতলের কথা বললে নির্ঘাত তুষার তাকে গু*লি করবে, তাই এখন কিছু বলা যাবে না।

– না মানে আশিক জ্বী*ন কে, বাংলাদেশের গুলো অনেক ভালো। তাই ভাবলাম সাথে করে নিয়ে যাই।

এই বলে সাথে সাথেই কলটা কেটে দেয় হিম। তুষার কিছুক্ষণ হেলো হেলো করে কোনো রেসপন্স না পাওয়ায় বুঝে যায় যে হিম কল কেটে দিয়েছে।

ফোন টা হাত থেকে সে রাখতেই হবে ঠিক এমন সময় একটা পরিচিত নম্বর থেকে মেসেজ আসে তার ফোনে।

– এই যে ছত্রিশ বছরের বুড়ো, আজকে আমাদের দেখা করার কথা মনে আছে? নাকি বাড়ি থেকে আপনাকে কিড*ন্যাপ করতে হবে?

চলবে………………..