অসময়ের শুকতারা পর্ব-১২

0
60

#অসময়ের_শুকতারা
#অনামিকা_আহমেদ
পর্ব:১২

হিমের কন্ঠ কানে আসায় শীতল পিছন ঘুরে তাকায়। হিম পকেটে হাত গুঁজে সাভাবিক গতিতে তার দিকে এগিয়ে আসছে, কিন্তু ভাব মারতে গিয়ে বেচারা এটা খেয়াল করেনি যে সে দেহের নিম্নার্ধে অন্ত*র্বাস ছাড়া আর কিছুই পড়েনি। তাই হাটার সময় পাঞ্জাবির ফাঁক দিয়ে তার ফর্সা দুটো উরু দুটো দৃশ্যমান হচ্ছে।

হিম শীতলের ঠিক সামনে চলে আসে, শীতলের বিস্ময়ে বড় বড় চোখের দিকে তাকিয়ে একটা দু*ষ্টু হাসি দেয়। তারপর শীতলের মুখে ওপর এলোমেলো ভাবে পড়ে থাকা এলোচুল গুলোকে সে সযত্নে শীতলের কানে গুঁজে দেয়।

– পুরুষ মানুষের পেটের নীচে তাকিয়ে থাকতে ল*জ্জা লাগে না তোর ছেম*রি। এভাবে উঁকি ঝুঁকি মেরে লাভ নেই, মেইন পয়েন্ট দেখতে পারবি না। আমি আবার নিজের মান সম্মান রক্ষার ব্যাপারে অনেক সচেতন, সবসময় আন্ডার প্যান্ট পরি, সেটা লুঙ্গির সাথে হোক, বা পেন্টের সাথে। এক্সট্রা প্রটেকশন আরকি, দেশে তো তোর মত লু*চু নারীর অভাব নেই, কে জানে কোন সময় আমার ই*জ্জত মেরে দেয়। মেয়েদের বিশ্বাস করতে নেই।

হিমের কথা গুলো শীতলের বহিরকর্ণ ভেদ করে কানের পর্দায় ধাক্কা দিলেও মগজে ঢুকে না কোনো কথাই। শীতল অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেছে, তাই সে এতক্ষণ ধরে অপলক দৃষ্টিতে যে হিমের উদাম পায়ের দিকে চেয়ে আছে সেটা সে আন্দাজ করতে পারেনি। আঠারো টা বছর সে তার বাবা, চাচা ভাইদের সাথে এক বাড়িতে থেকেছে। কিন্তু কখনও এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি শীতল। কোনো পুরুষকে অ*র্ধনগ্ন অবস্থায় এই প্রথম দেখলো সে।

শীতলের গভীর ঘোর পর্যবেক্ষণ করে হিম তাকে জ্বালা*নোর জন্য আরেকটু ভাব মেরে বলে,

– পায়ের দিকে চেয়ে কি দেখছিস ছে*মরি? আমি আসলেই ফর্সা কিনা সেটার প্রমাণ খুঁজছিস? দেখে নি , ভালো করে দেখে নি। চাইলে ভিমবার দিয়ে মেজেও নিতে পারিস। আমি জাত ফর্সা, তোদের মত জাত কালা মেকাপ সুন্দরী না।

এতক্ষণে শীতলের হুশ ফিরে আছে। হিমের কথাগুলো পুনরায় কানে বাজলে লজ্জা*য় তার মুখ রাঙা হয়ে উঠে। সাথে সাথেই শীতল মুখ নুইয়ে হিমের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু হিম শীতলের হাত ধরে এক টানে তাকে নিজের একেবারে কাছে নিয়ে আসে। তারপর শীতলের রাঙ্গা গালে হাত রেখে বলে,

– লজ্জার কি আছে বরফ কন্যা? আমাকে এত কাছ থেকে নিখুঁতভাবে দেখার অধিকার তো শুধু তোরই। আমার সামনে ল*জ্জা ল*জ্জা খেলা খেলি না, তাহলে আমিও এক খেলায় মাতবো, কিন্তু সেটা তুই হয়তো স*হ্য করতে পারবি না।

শীতল হিমের খুব কাছে থাকায় হিম কথা গুলো ঠান্ডা কন্ঠে খুব ধীর গতিতে বলে। হিমের এই কন্ঠস্বর শীতলের কাছে একেবারেই নতুন, কেনো এই স্বর শীতলের পুরো মস্তিষ্ক জুড়ে মায়াজাল সৃষ্টি করেছে। চোখে ঘোর লেগে এসেছে শীতলের। কিন্তু যৌবনের অপ্রকাশিত অনুভূতির আবেশে গভীরভাবে মোহিত হওয়ার আগেই হিম শীতল কে নিজের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়।

– সর ছেম*রি, আমার বাচ্চা গুলোকে আবার ঘুম পাড়াতে হবে। আয় আমার মন্টু ঝন্টু, বাবার বুকে আয়। মা পঁ*চা তাই ঘুম ভাঙিয়ে দেয়, আর বাবা ভালো। বাবা বাচ্চাদের আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

কথা গুলো বলতে বলতে হিম পুকুর পাড়ে বসে পড়ে। খানিক দুর থেকে শীতল দেখতে পায় কুমির দুটো হিমের পায়ের কাছে চুপ করে বসে আছে। হিম তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, এতে কুমিরগুলো একটুও ক্ষে*পছে না, বরং তারা হিমের এই আদুরে স্পর্শ গুলো উপভোগ করছে।

হিম নিজের কাজ সেরে উপরে উঠে এলে শীতল ইশারায় তাকে জিজ্ঞাসা করে যে – ” আপনি নিচে কিছু পড়েননি কেনো? আপনার চামড়া বুঝি গন্ডারের মত, তাই ঠান্ডা লাগে না?”

হিম শীতলের ইশারায় বলা সবগুলো কথাই বুঝতে পারে। এতে হিম শব্দ করে হেসে বলে,

– হালকা বাতাসে,
লুঙ্গি আকাশে।

এই বলে হিম গা দুলাতে দুলাতে বাড়ির দিকে চলে যায়। শীতল তখনও হিমের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। ছেলেটা ভীষণই অদ্ভুত, যেনো জীবন নিয়ে একটুও মাথাব্যথা নেই তার। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে সে ভালো ভাবে উপভোগ করতে জানে।

__________________________________________

প্রায় ১০ মিনিট ধরে গ্রিন পার্কের এক বেঞ্চে বসে আছে তুষার। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও ঋতির আসার কোনো নামগন্ধ নেই। ঘড়ির দিকে একবার আড়চোখে চায় তুষার, এবার রীতিমতো বিরক্তি জাগছে তার মনে। কতদিন ধরে ঋতির সাথে দেখা করার জন্য মনটা আনচান করছে তার। আসবে বলে সেও এখন উধাও।

আর স্টির থাকতে না পেরে তুষার পায়চারী করে শুরু করে। গ্রিন পার্কের দক্ষিণের দিকটা বেশ নীরব, তাই যখনই ঋতির সাথে সে একান্ত কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত করতে চায়, তখনই তুষারের অবচেতন মন এই জায়গায় ছুটে আসে। আপন ভাই হলেও তুষার একটু শান্ত স্বভাবের, জনমানুষ তার পছন্দ নয়। তাই নিজেকে একটু আড়াল করে গোপন করে চলতেই সে ভালবাসে। হিমের মত সকলের সাথে মিশে যেতে পারে না তুষার।

পাগ*ল প্রেমিকের অনন্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঋতি হাঁপাতে হাঁপাতে সেখানে আসে। ঋতি কে নিজের মন মতো সাজে দেখে তুষারের অটোলা মন খানিক শান্ত হয়। ঠোঁটের কোণে এক টুকরো মুচকি হাসি বজায় রেখে বলে,

– হাপাচ্ছেন কেনো বেগমসাহেবা? বাসা থেকে পায়ে হেঁটে এসেছেন বুঝি?

ঋতি একটু দম নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বলে,

– গাড়ি পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু রাস্তায় ভীষণই ট্রাফিক। তাই বাধ্য হয়ে এই হিল জুটো পরেই আসতে হয়েছে। যদি ট্রাফিক ছোটার আসায় বসে থাকতাম তাহলে আর দেখা করা হতো না আপনার সাথে।

তুষার নিজের পকেট থেকে রুমালটা বের করে ঋতির কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটা মুছে দেয়। তারপর সযত্নে ঋতির ডান হাতটা নিজের আয়ত্তে এনে তাতে আলতো করে চুমু খায় সে।

– ভুল হয়ে গেছে বেগম সাহেবা। আমার আপনাকে রিসিভ করবার জন্য গাড়ি নয় বরং পার্সোনাল জেটটা পাঠানোর দরকার ছিল। তাহলে যদি আরেকটু আগে আপনার মুখশ্রীর দর্শন পেতাম।

তুষারের বাচ্চামো দেখে ঋতি হালকা হাসে।

– হয়েছে হয়েছে, আর তেল মারতে হবে না। এতই যখন দেখার সাধ তাহলে বিয়ে করে ঘরে তুলুন আমায়।

– ওর বাবা, হিম কে ছাড়া বিয়ে? ওকে রেখে বিয়ে করেছি জানতে পারলে তোমার অল্প বয়সেই স্বামী হারা হতে হবে জান। দরকার নেই, ও আসুক তারপর না হয় আমরা কোর্টে যাবো।

– বড় ভাই হয়ে ছোট টাকে ভয় পান। কি ভাই আপনি?

– ওটা দেখতে ছোট হলে কি হবে? কাজে কর্মে কোনো অভিজ্ঞ কে হার মানিয়ে দিবে। আর সাথে লেগে কাজ নেই। এখন বরং কিছু খেয়ে নেই, খুব খিদে পেয়েছে।

________________________________________

হিমের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইকবাল, আর তার পাশে ফয়সাল। ফয়সালের চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। আর হিম তার গাম্ভীর্য বজায় রেখে দক্ষতার সাথে সি*গারেট থেকে নির্গত নিকো*টিনের সকল ধোঁ*য়া গ্রাস করছে।

– আমি যা শুনেছি টা কি সত্য?

ইকবাল , ফয়সাল কেও ই কোনো উত্তর দেয়না। ভয়ে তাদের গলা শুকিয়ে উঠেছে। হিমের কাছে এই নীরবতা যেনো অ*সহ্য লাগে। তাই সে এবার চিৎকার দিয়ে উঠে,

– কি হলো বা*লের বাচ্চা, মুখ দিয়ে কথা বাইর হয় না কেনো তোর? সত্যি করে বল তোর সাথে মিনার কি সম্পর্ক আছে?

ইকবাল ভয়ে পেন্ট ভিজিয়ে ফেলার উপক্রম। ভয়ে ভয়ে সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।

– তোর কি চোখ তেড়া, নাকি লেন্স ভালো করে কাজ করেনা, কোনটা? মেয়ে পেলি না, শেষে কিনা এই মেয়েকে তোর পছন্দ হলো? মেয়ে পছন্দ করবি তোদের হবু ভাবির মতো। আর সে পছন্দ করেছে এক ভাঙ্গা রেডিও কে। বিয়ে কর, বাসর রাতেই টের পাবি, কি ধানি লঙ্গা ঘরে তুলেছিস।

চলবে…………….