অসময়ের শুকতারা পর্ব-১৩

0
51

#অসময়ের_শুকতারা
#অনামিকা_আহমেদ
পর্ব:১৩

হিমের রাগী গলায় বলা কথা গুলো শুনে ইকবালের চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে উঠে। বয়স বাড়লেও তার স্বভাব থেকে বাচ্চামো যাইনি। জুতোর তল দিয়ে ফ্লোর ঘসতে ঘসতে ইকবাল একবার সাহস করে হিমের রাগী চোখের দিকে তাকায়। তারপর আবারো মেঝের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আপনি আমাদের একসাথে মানবেন না ভালো কথা, তাই বলে আপনি ওর নামে এসব উ*ল্টা পা*ল্টা কথা বলবেন। সেটা আমি কিছুতেই মানব না।

হিম কপাল কুঁচকে তাকায় ইকবালের দিকে। মানুষ প্রেমে পড়লে মাথার ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারে না, এতদিন কথাটা হিম শুনেছিল, আজ নিজের চোখে দেখে নিল। যে হিমের ভয়ে ইকবাল জড়ো সরো হয়ে থাকতো, সেই ইকবাল আজ হিমের মুখের ওপর কথা বলতেও দ্বি*ধা করে না। বরং একগাদা সাহস নিয়ে যা মুখে আসছে সেটাই বলে যাচ্ছে।

– মানবি না, তাহলে কি করবি আমিও শুনি?

– চাকরি ছেড়ে দিবো।

– চাকরি ছাড়লে বউকে খাওয়াবি কি?

– দরকার হলে বউ জামাই মিলে অন্ধ হওয়ার নাটক করবো। অন্ধ সেজে পথে পথে ভি*ক্ষা করে বেড়াবো। তাও আপনার মত কি*পটার কাছে চাকরি করবো না।

– কি বললি আমি কি*পটা!? তোর কোন মাসের বেতন আটকে রেখেছি যে কিপটা বল্লি তুই আমাকে?

– জানি না কেনো বলেছি, মুখে এসেছে তাই বলে ফেলেছি। আর আপনার মুখ দেখলে আপনাকে এক হাড়*কিপটা লোকই লাগে।

হিম নিজেকে শান্ত করার জন্য নিজের হাত দিয়ে মুখ ঘসতে থাকে। এবার সে ইকবালের দিকে না তাকিয়ে তার পাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ফয়সলের দিকে চায়।

– ওই ছাল, তোর লাগামহীন ভাইকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যা। তানাহলে আমার হাত জোড়া লাগামহীন হয়ে যাবে এক্ষুনি।

হিমের চাপা কণ্ঠের কথা গুলো শুনে সে ইকবাল কে সেখান থেকে টানতে টানতে নিয়ে যায়। ইকবাল যেতে চায়না, সে চিৎকার করে বলতে থাকে,

– মিনা কে আমার লাগবেই। আপনি যেভাবে পারেন তাকে আমাকে এনে দিন।

__________________________________________

ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দায় গেলে হাত দিয়ে বসে আছে শীতল। সারাদিনের কর্মশূন্য জীবনে প্রবেশের সূচনা লগ্নেই সে হাঁপিয়ে উঠেছে। ও বাড়িতে থাকতে তার কাজের অন্ত ছিল না, আর এখানে তার অবসর সময়ের যেনো অন্ত নেই। সময় কাটতেই চায় না তার।

বাংলোর সবচেয়ে সুন্দর ঘরটা হিম তার বরফ কন্যার জন্য বরাদ্দ করেছে। বারান্দা দক্ষিণমুখী হওয়ায় শীতের তীব্র বাতাস শীতল কে ছুঁতে পারছে না ঠিকই কিন্তু তাই বলে সেখানে পরিবেশ একেবারে গুমোট এটা বলা যায় না। মাঝে মাঝে মৃদু মন্দ আলো প্রবেশ করে সেই বারান্দা দিয়ে। হালকা বাতাসে শীতলের কোমর লম্বা চুল যখন দোল খায়, ভারী মিষ্টি লাগে তাকে দেখতে, ঠিক যেনো সদ্য ফুটন্ত ফুলের কলি। কোনো লো*ভ, নিষ্ঠুর*তা, পা*প, সম্পদের হাতছানি ছুটে পারে নি শীতলের মনকে। আজও তার মন এক নবজাতকের মতো পবিত্র।

হিম হন্ত দন্ত হয়ে শীতলের ঘরে প্রবেশ করে। আজ ইকবালের কথা গুলো শুনে তার মাথায় চরম রা*গ উঠে গেছে। এখন এই রা*গ কমানোর জন্য একটা খোলা হাওয়া আর তার অক্সিজেন কে প্রয়োজন। শীতলের চেয়ে বড় অক্সিজেন হিমের জীবনে আর কে হতে পারে?

হিম দরজা খুলে সারা ঘরে একবার চোখ বুলায়। কিন্তু শীতল কে দেখতে না পেয়ে বারান্দার দিকে তাকায় সে। বরফ কন্যার স্ত*ব্ধ মুখ তাকেও ভাবিয়ে তুলে। হিম বড় বড় পা ফেলে শীতলের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। হালকা করে শীতলের কাধ স্পর্শ করতেই যেন শীতল কেঁপে উঠে। তারপর বড় বড় চোখে একবার তাকায় সে হিমের দিকে। হিমের অশান্ত হৃদয়কে ঠান্ডা করার জন্য এতটুকুই দরকার ছিল।

মুখে এক প্রশান্তির হাসি টেনে বুকে একহাত রেখে বলে,

– ওহ ছেম*রি, দিলে তো এনজাইমার ব্যথাটা তুলে। জানোই তো তোমার ঐ চাহনি আমার হৃদপিণ্ড কে ঘা*য়েল করার জন্য যথেষ্ট। তাও কেনো এমন করে তাকাও আমার দিকে। সত্যি করে বল তো, তোমার মতলবটা কি? আমাকে তোমার প্রেমে টেমে ফেলার ইচ্ছা আছে নাকি ছে*মরি। তাহলে তোমাকে আগেই বলে দেই, আমি উ*স্টা খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ি, কিন্তু প্রেমে পরি না।

হিমের কথায় ভঙ্গিমা অন্য রকম। যেই শুনবে সে হাসতে বাধ্য। আর শীতল ও নিজের গাম্ভীর্য কে বজায় রাখতে না পেরে একগাল হেসে দেয়। শীতল কে হাসতে দেখে হিম ও হাসে।
তার মিশন সাকসেসফুল।

হাসির রেশ শেষ হলে শীতল হিমের হাত চেপে ধরে। ইশারায় বোঝাতে চায় যেনো হিম তাকে বাইরে নিয়ে যায়। হিম বিষয়টা বুঝতে পেরে বলে,

– বাইরে নিয়ে গেলে যদি তুই পালিয়ে জাস আমার থেকে? তখন কোথায় খুজবো তোকে আমি? এই কয়দিনে তুই আমার মা*দকে পরিণত হয়েছিস, তাই তুই হিনা জীবন কেমন হয় সেটা আমার মস্তিষ্ক থেকে মুছে গেছে।

শীতল কিছুক্ষণ হিমের দিকে তাকিয়ে ভাবে। তারপর ওড়নার নীচের অংশ দিয়ে নিজের হাতের সাথে হিমের হাত বেঁধে শক্ত করে বেধে দেয়। তারপর সে হিমের দিকে চেয়ে মুচকি হেসে দেয়।

– অগত্যা কি আর করা? ম্যাডামের অর্ডার তো আমার মতো কর্মচারীরা ফেলতে পারি না। অর্ডার না মানলে আবার চাকরিটাও চলে যেতে পারে। যান মেডাম রেডি হয়ে আসেন, আপনাকে নিয়ে ঘুরে আসি।

___________________________________________

– ভাই দেখ মাল*টা কি ক*ড়া, এক্কেবারে মাখন।

– খেতেও মনে হয় মাখনের মতোই হবে। অফ টেস্ট করতে মন চাচ্ছে।

– ভাই যেখানে যেটা থাকার ঠিক সেখানেই সেটা আছে। পারফেক্ট ফিগা*র।

নিজের সম্পর্কে বা*জে ম*ন্তব্য গুলো শুনে চোখ জোড়া সিক্ত হয়ে উঠে শীতলের। আশেপাশে হিম নেই। ওদের দুজনের জন্য খাবার অর্ডার করতে গিয়েছে সে। হিম সিট থেকে উঠে যেতেই পিছনের টেবিলে বসে টাকা তিনটা ছেলে শীতল কে হে*রাস করতে থাকে।

শীতল নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে। তাদের কথাগুলো কানে নিতে টা চাইলেও যেনো রেস্টুরেন্টের হাজার শব্দগুলোকে ছাপিয়ে সেই অশ্লী*ল শব্দগুলোই তার কানের পর্দা ভেদ করছে।

এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হিম দুহাতে দুটো প্লেট নিয়ে তাদের টেবিলে রাখে। প্রায় সাথে সাথেই সে পকেট থেকে ফোন বের করে ফয়সাল কে কল করে। ফয়সাল কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স না করতে দিয়ে হিম কাঠ কাঠ গলায় বলে ওঠে,

– আমার পুরো রেস্টুরেন্ট খালি চাই এক্ষুনি। সব কাস্টমারদের সরিয়ে দাও।

– ইয়েস স্যার।

চোখের পলকেই যেনো হিমের লোকজন পুরো রেস্টুরেন্ট এরিয়া থেকে মানুষদের সরিয়ে নেয়। এখন কেবল সেখানে উপস্থিত আছে শীতল, হিম, হিমের কিছু বডিগার্ড আর সেই তিন ছেলে।

হিম হাসি মুখে সেই তিন ছেলের দিকে তাকায়। সব কটার বয়স পঁচিশের নিচে। হিমের পাওয়ার দেখে তারা একেকজন মৃ*ত্যু সমান ভয় পাচ্ছে, যা তাদের চোখে মুখে বর্তমান। হিম আস্তে আস্তে তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

– আয়ুশ খান হিমাদ্র এর হবু বউয়ের দিকে তোরা কু*নজর দিয়েছিস। কলিজা আছে তোদের বলতে হবে। আজ তোদের এই কলিজা আমি ওজন করবো।

এই বলে সাথে সাথেই হিম তার হাতে থাকা ছু*রি টা একটা ছেলের বুকে গেঁথে দেয়। ফি*নকি দিয়ে রক্ত এসে পড়ে বাকি দুটো ছেলের শরীরে। হিম ছেলেটার বুক চি*রে বের করে আনে তার কালচে কলিজা।

– না, যতটা বড় ভেবেছিলাম ততটাও বড় না।

ছেলেটার নিথ*র দেহ চেয়ারের ওপর পড়ে গেলে এবার হিমের চোখ যায় তার পাশের ছেলেটার দিকে।

– কি জানি বলেছিলি তুই? টেস্ট করে দেখবি? এই নে টেস্ট করে বলতো এটা হাইড্রোক্লো*রিক এসি*ড নাকি সালফিউরিক এসি*ড ?

এই বলে হিম জোর করে ছেলেটার মুখ হাঁ করিয়ে পুরো এক বোতল তার মুখে ঢেলে দেয়। বীভ*ৎস ভাবে ক্ষত বিক্ষত লা*শ দুটো দেখে শেষ ছেলেটির আ*ত্মা উড়ে যায়। সে হিমের পা জড়িয়ে ধরে বলে,

– আমার ভুল হয়ে গেছে, প্লীজ আমাকে ছেড়ে দিন। প্রাণে মারবেন না, আর কোনো দিন কোনো মেয়েকে আমি উত্য*ক্ত করবো না।

হিম তার চুল ধরে তাকে দাঁড়া করিয়ে বলে,

– কি ভেবেছিস কয়েকটা অস্লী*ল কথা বলার জন্য আমি তোদের এত বীভৎ*স মৃ*ত্যু উপহার দিচ্ছি? তোরা এর আগে গুনে গুণে দশ টা মেয়ের ইজ্জ*ত লুটেছিস। সেই অপরাধের শাস্তি*ই তোদের দিচ্ছি আমি।

এই বলে ছেলেটার দুচোখে দুটো গু*লি করে হিম।

– আমার ভালোবাসার দিকে লো*লুপ পাত করা জানো*য়ারদের আমি এই হালই করি।

চলবে…………………