অসময়ের শুকতারা পর্ব-১৬

0
21

#অসময়ের_শুকতারা
#অনামিকা_আহমেদ
পর্ব:১৬

– আপনার ঘিলু কি মাথার খু*লি থেকে বের হয়ে জগিং করতে গেছে? নাকি গাঁ*জা পাতা চিবিয়ে এসেছেন? খোলামেলা পাট খেতে ওসব করার শখ না আপনার, গ্রামের কেও দেখে ফেললে বাঁশের বারি মেরে আপনার ভবিষ্যত অন্ধকার করে ফেলবে।

শীতলের টাইপিং দেখে হিম রীতিমতো খুশি হয়। মুখে একটু দু*ষ্টু হাসি টেনে শীতল কে নিজের বুকে মিশিয়ে নেয়। তারপর শীতলের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,

– বাহ, ছে*মরির তো দেখছি ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক জ্ঞান। তাহলে আজ রাতে এই ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাক, কি বলো?

হিম আকাশের দিকে এক পলক তাকায়। তারপর আবারো বলতে শুরু করে,

– আজ দেখি আকাশে ধামরা মার্কা চাঁদ ও উঠেছে। ভালই হয়েছে, লাইটিং এর ব্যবস্থাও হয়ে গেলো। আমি আবারও রাতে বেশি একটা চোখে দেখি না, রাতকানা তো। বিনা পয়সার লাইটিংয়ে খেলাধুলা করাটা বেশ রোমান্টিক। চলো বেগম, শুভ কাজে দেরি করতে নেই।

এই বলে হিম শীতলের হাত ধরে তাকে পাট ক্ষেতের ভিতরে নিয়ে যায়। শীতল নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে তবে অতটাও জোরালো ভাবে নয়, বলতে গেলে চক্ষুলজ্জা মাত্র। কারণ তার মনেও কিছু আদিম বাসনা ভর করছে। ইচ্ছে করছে খোলা প্রকৃতিতে হিমের সাথে হারিয়ে যেতে। কিন্তু গ্রামের মানুষের কাছে হিমের সাথে অন্ত*রঙ্গ অবস্থায় ধরা পড়ার ভয়টা শীতল মাথা থেকে ফেলতে পারছে না।

হিম শীতল কে নিয়ে পাট ক্ষেতের একেবারে মাঝখানে চলে আসে। ক্ষেতের মাঝে কিছুটা জায়গা ফাঁকা, কোনো গাছ নেই, মাটিটাও বেশ শুষ্ক। সেখানে কাঠের একটা চৌকি, একপাশে বাঁশের বেড়া আর উপরে ছনের ছাউনী। মূলত দিনের বেলা কাজের ফাঁকে কৃষকেরা এখানে বসে বিশ্রাম নেয়। কখনও বা রোদ বৃষ্টি থেকে বাঁচতে এই ছাউনীই হয়ে উঠে তাদের আশ্রয়।

হিমের মনে বর্তমানে আনন্দের অনুভূতি গুলো দোলা দিচ্ছে। সবকিছুই যেন পূর্ব নির্ধারিত, নিপুন ভাবে সাজিয়ে রেখেছে তাদের জন্য।

– দেখেছো বেগম, আমাদের বাস*রের জন্য অলরেডি বেড রেডিই আছে।

কথাটা বলেই হিম নে*শা ভরা চোখে শীতলের দিকে চায়। শীতলের দুটো চোখেও যেনো চাহিদার ছোঁয়া লেগেছে। হিম একটু একটু করে এগিয়ে যায় শীতলের দিকে। দুজনেরই শ্বাস ভারী হয়ে উঠছে। হিম তার একটা হাত শীতলের উম্মু*ক্ত পেটের ওপর রেখে চোখে চোখ রেখে তাকায়। শীতলের কানের কাছে এসে হিম ফিসফিসিয়ে বলে,

– I can’t promise you to love you perfectly. But I can promise you to love you endlessly. I love you because you are the meaning of my life. My love, wanna be mine forever?

মুহুর্তের মাঝেই শীতলের চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসে। এই মূহূর্তটা প্রতিটা নারীর স্বপ্ন, হালাল পুরুষের ভালবাসা, তার স্প*র্শে নিজেকে পরিপূর্ণ করা প্রতিটা নারীর আকাঙ্ক্ষা। দীর্ঘ আঠারো বছরের হাজারো দুঃ*খ বেদ*নার পর আজকের এই মুহূর্তটা শীতল কে স্বর্গের সুখ এনে দিয়েছে। হিমের করা প্রশ্নের স্বীকারোক্তিতে শীতল হিমের ঠোঁটে আলতো করে একটা চু*মু খায়। এতে হিম আরও উৎসাহ পায় এবং দুই নরনারী আদুরে স্প*র্শে মিলে একাকার হয়ে যায়।

_______________________________________

ফজরের আজান তখনও দিতে বোধয় আধ ঘন্টা দেরি আছে। সুবহে সাদিক হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত। গতকাল রাত্রিযাপন শেষে হিম আর শীতল ঘুমাতে ব্যস্ত। হঠাৎই কোনো কারণে শীতলের ঘুম পাতলা হয়ে আসে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে শীতল চারপাশে তাকায়। কাল রাতের কথা মনে পড়ে যেতেই সে হুড়মুড় করে বসে পড়ে। হিম ঠান্ডা থেকে বাঁচতে একটা শাল নিয়ে এসেছিল, সেটা দিয়েই সে তার প্রেয়সীকে আষ্টেপৃষ্টে ঢেকে রেখেছিল যেনো এই শীতের রাতে তার ঠান্ডা না লাগে। শীতল হিমের ফোনে সময় দেখে কিছুটা শান্ত হয়।

– না এখনও সময় আছে, কেও কিছু দেখে ফেলার আগেই সব ঠিকঠাক করতে হবে।

মনে মনে কথা গুলো আউরে সে তাড়াতাড়ি হিম কে ডাকতে থাকে। শীতলের ডাকে হিমের সাধের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে সে আদো ঘুমে বলতে থাকে,

– এখন না বেগম, একটু ঘুমিয়ে নেই। তারপর ঘুম থেকে উঠে আবার আদর করব।

হিমের কথা গুলো শুনে শীতল তেলে বেগুনে জ্ব*লে ওঠে।

– একটু পরেই খেতে মানুষ আসা শুরু করবে আর এই ছেলে আদর সোহাগ নিয়ে আছে। ( মনে মনে)

শীতল এবার ডুম করে একটা কিল বসিয়ে দেয় হিমের খোলা পিঠে। হিম সাথে সাথেই চিল্লিয়ে উঠে,

– ওই ছেম*রি , আমার পিঠের ওপর কি কুস্তি প্রেকটিস করছিস নাকি? এভাবে কেও মা*রে?

– আমি তো শুধু একটা কিল দিয়েছি, একটু পর মানুষ জড়ো হলে দুজনের পিঠে বেতে*র বারি পড়বে।

শীতলের লেখা গুলো পরে হিম মুখ ভার করে বসে পড়ে। বিরক্তি ভরা কন্ঠ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করে,

– তো কি করতে হবে এখন?

– ফরজ গোসল সেরে কাপড় পরে বাড়ি ফিরতে হবে।

শীতের ভোরে গোসলের কথা পড়ে হিমের চোখ ছানাবড়া।

– are you gone crazy? এত ঠান্ডা পানিতে নামলে আমার আ*ত্মা খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবে। তোমার ইচ্ছা করলে তুমি যাও, আমি নাহয় কয়েকটা বেতের বারি খেয়ে নিব।

কিন্তু শীতলের জোরাজুরির মুখে হিম আর শুয়ে থাকতে পারে না। অগত্যা তাকে শীতলের সাথে নদীর দিকে পা বাড়াতে হয়। নদীর দিকে যাওয়ার সময় হিম আস্তে আস্তে বলে উঠে,

– সাধে কি মানুষ বলে, পুরুষ দুই প্রকার। জীবিত নয় বিবাহিত। 🥹🥹

ভোরের স্তব্ধ বাতাসে শীতল হিমের কথাগুলো ঠিকই শুনতে পারে। প্রতিউত্তরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে হিম কে সে ইশারায় বোঝায়,

– খুব তো নাচতে নাচতে বিয়ে করেছিলেন, এখন ভোগ করেন বিবাহ যন্ত্র*ণা।

এবার হিম শীতল এর দিকে তাকিয়ে বলে,

– নিষ্ঠু*র মেয়ে জাতি।

_________________________________________

গোসল সেরে হিম ফয়সাল কে ফোন করে তাকে গাড়ি নিয়ে আসতে বলে। হিমের কথপোকথনের মাঝে শীতল কাঠের দাওয়ায় বসে সকালের মৃদুমন্দ বাতাসে নিজের ভেজা চুলগুলো শুকিয়ে নিচ্ছে।

হিম ফোন টা রেখে শীতল কে জড়িয়ে ধরে। সদ্য গোসল করায় শীতলের ঘাড়ের ত্বক ঠান্ডা হয়ে গেছে। তবুও তাতে মুখ রেখে হিম বলে,

– আর বেশিক্ষন লাগবে না বেগম। তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আমরা আবারও ভবিষ্যৎ ভবিষ্যৎ খেলব কেমন? রাতে মন খুলে কিছু করতে পারি নাই। কিন্তু আজকে মন প্রাণ কিডনি ফুসফুস সব খুলে করবো।

হিমের নির্ল*জ্জ কথাগুলো শুনে শীতল শুধু মাথা নাড়ায়, আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কারণ সে জানে হিম কে কিছু বলা বা না বলা সবই সমান।

প্রায় এক ঘন্টা পর ফয়সাল গাড়ি নিয়ে আসে। তখন চারদিকে শুভ্র দিনের আলোয় চেয়ে গেছে। হিম আর শীতল গড়িয়ে উঠে পড়ে। ড্রাইভিং সিটে ফয়সাল বসা আর তার পাশেই বসে আছে ইকবাল। হিম ইকবালের ভয়া*র্ত মুখের দিকে তাকায় কিছুক্ষণ, কেনো জানি তার মনে হচ্ছে এসবের পিছনে ইকবালের হাত রয়েছে। কিন্তু শীতলের সামনে কোনো ঝামেলা করতে চাচ্ছে না হিম, তাই সে কিছু না বলে সিটে মাথা এলিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে থাকার পর হিম ফয়সাল কে বলে,

– ফয়সাল ওই গানটা ছাড়ো তো।

– স্যার কোন গান?

– ঐযে দাড়াও গেয়ে শুনাই,

যেতে যেতে পথে
পূর্ণিমা রাতে
চাঁদ উঠেছিল আসমানে।

বা*সর হয়েছিল
তোমাতে আমাতে
পাটের ক্ষেতের মাঝখানে।

হিমের গান শুনে শীতল তো ভিতরে ভিতরে লজ্জা*য় ম*রে যাচ্ছে। এতটা নির্লজ্জ মানুষ কিভাবে হতে পারে? শীতল ভেবে পায়না।

শীতলের লজ্জা*য় লাল হয়ে ওঠা মুখের দিকে তাকিয়ে হিম তার দিকে এক চোখ টিপে।

– স্যার কোন গান সেটা বুঝেছি, কিন্তু গানের লাইন তো অন্য রকম ছিল।

– সুর ঠিক থাকলেই চলবে, গানের লাইন ধুয়ে কি পানি খাবা। তাছাড়া গান টা আমার খুব ভালো লেগেছে।

যেতে যেতে পথে
পূর্ণিমা রাতে
চাঁদ উঠেছিল আসমানে।

বা*সর হয়েছিল
তোমাতে আমাতে
পাটের ক্ষেতের মাঝখানে।

– স্যার মূলা ক্ষেত হলে আরও বেশি সুন্দর লাগত মনে হয়।

– আমি পাট খেতে করলাম তুমি নাহয় মূলা খেতে করো 🥹🥹

– কি করবো স্যার?

– ইয়ে মানে গান বানিয়ে নিজের ক্রিয়েভিটি দেখিও।

চলবে……….……………