অসময়ের শুকতারা পর্ব-১৭

0
11

#অসময়ের_শুকতারা
#অনামিকা_আহমেদ
পর্ব:১৭

শীতের সকালে রাস্তাটা বেশ নির্জন। তবুও সূর্যোদয়ের সময়টা গ্রামের মেঠো পথ ধরে চলায় পাখির কিচিরমিচির শব্দ হিমের প্রাইভেট কারের কালো গ্লাস ভেদ করে ভিতরে ঢুকে। শীতল উদাস চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, প্রকৃতি যেনো তাকে বারবার হাতছানি দিচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে আবারও ছুটে যেতে সেই সোনালী ধান খেতে। মনে অদম্য বাসনা থাকলেও টা চরিতার্থ করবার উপায় নেই শীতলের। কারণ সে নিজ দেহকে এক চুল পরিমান নাড়াতে পারছে না, তার কোল জুড়ে রয়েছে হিমের অস্তিত্ব।

গাড়িতে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই হিমের চোখে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম। সারাজীবন বিলাসবহুল নরম গদিতে ঘুমোনো যার অভ্যাস, তার কি আর শক্ত কাঠের পাটাতনে ঘুমিয়ে শান্তি হয়? তাই একটু শান্তির ঘুম ঘুমিয়ে নিতে সে শীতলের কোলে মাথা রাখে। শীতল ও হিমের ঘুম কে আরামদায়ক করতে তার মাথায় বিলি কেটে দেয়। কিন্তু শীতল তো জানে যে হিম কি হাড়ে বজ্জা*ত ছেলে, যার নিজের ল*জ্জা নেই, অন্যের ও ল*জ্জা সে থাকতে দেয় না। সুযোগ বুঝে হিম কয়েক দফা কাম*ড় আর চুমুতে ভরিয়ে দেয় শীতলের হাত খানা। প্রথমবার আনমনে থাকায় হিমের ধা*রালো দাঁতের স্পর্শে শীতল কিছুটা অচঞ্চল হয়ে পড়ে। কিন্তু গাড়িতে আরও দুজন পরপুরুষ বসে আছে, তাদের সামনে তো আর সে নি*র্লজ্জ সাজতে পারে না। তাই মুখ বুজে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে উপভোগ করতে থাকে হিমের হালকা অত্যাচার মিশ্রিত আদর গুলো।

গাড়ি তখন ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে, কাল বিকেল থেকে পেটে দানাপানি না পড়ায় একটা ভারী নাস্তার প্রয়োজন বোধ করে ফয়সাল আর ইকবাল। খুঁজে খুঁজে একটা হোটেলের সামনে গাড়ি রেখে তারা নেমে পড়ে। তবে যাওয়ার আগে ফয়সাল শীতল কে জিজ্ঞাসা করে,

– ম্যাম, আপনার জন্য কিছু আনবো? কি খাবেন আমাকে বলুন আমি নিয়ে আসছি।

শীতল কেবল মাথা নাড়ায়। সে কিছু খাবে না। কিন্তু ফয়সাল কিছুটা পীড়াপীড়ি করায় শীতল ইশারায় ফয়সাল কে বলে তাদের দুজনের জন্য দুটো জুস নিয়ে আসতে। বেশ ঠাণ্ডা হলেও তার গলা শুকিয়ে গেছে। তাই শুকনো খরখরে গলায় একটু জুস ঢেলে ভিজিয়ে নেওয়াটা ম*ন্দ বুদ্ধি নয়।

ফয়সাল গাড়ির দরজা লাগানোর সাথে সাথেই শীতলের কোলে ঘুমের ভং ধরে থাকা হিম উঠে শীতল কে জড়িয়ে ধরে। সে যেনো ফয়সলের যাওয়ার অপেক্ষা করছিল। হিমের এমন কাণ্ড দেখে শীতল অবাক না হয়ে পারে না। সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও বারবার ব্যর্থ হয় এই পুরুষের কাছে। হিম আস্তে আস্তে নিজের মুখখানি শীতলের ঘাড়ে ঘসতে থাকে। এক মিশ্রিত আবেগের প্রভাবে শীতলের চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসে।

– চলো না বেগম, একটু খেলি। এখন কেও নেই আমাদের মাঝে, তাই পুরো সেভ আমরা।

শীতলের চক্ষুচড়ক গাছ। ডান কনুই দিয়ে হিমের পেয়ে তৎক্ষনস্ক সে একটা কিল বসিয়ে দেয়। তারপর নিজেকে ছাড়িয়ে ইশারায় বলতে থাকে,

– আপনার কি কান্ডজ্ঞান নেই, এখানে ওসব করতে চান? এত এত শখ কেনো আপনার? আপনার দুই চেলা যদি এসে পরে , নিজের মন সম্মান তো নেই, আপনার জন্য ও আমারটাও জলাঞ্জলী যাবে।

হিম মুখ ভার করে শীতলের হাত ধরে তাকে কাছে টেনে নেয়,

– ওই দুটো খুক্কো*সের খেতে পাক্কা আধ ঘন্টা তো লাগবেই। এই সময়টা যথেষ্ট পাখি, চলো না খেলায় মাতি।

– কখনোই না, ঘুমাচ্ছিলেন না, সেটাই করুন। চুপচাপ ঘুমান।

শীতলের রাগ হিম কে দমাতে পারে না, না পারে তার আকাংখাগুলো বাস্তবায়নে বাধা দিতে। হিমের হাজারো চুম্বন আর আদুরে স্পর্শের কাছে হার মানে শীতলের জিদ আর ল*জ্জা। কালো গাড়ির কালো কাচের আড়ালে আবারও মিলিত হয় দুই নর নারী।

___________________________________________

প্রায় আধঘন্টা পর ফয়সাল আর ইকবাল ফিরে আসে। এবার গাড়ির দরজা খুললে তারা দেখতে পায় শীতল ও হিমের সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফয়সাল তাদের ডাকবে নাকি ভাবছিল ঠিক তখনই একটা শব্দে হিমের ঘুম ভেংগে যায়।

– এভাবে তাকিয়ে আছ কেনো আমার বউয়ের দিকে ফয়সাল? আমার বৌকে দেখে কি মনে বিয়ের কুর*কুরানি উঠেছে নাকি?

ফয়সাল লজ্জা*য় চোখ নামিয়ে নেয়। সত্যিই বলতে শীতল অনেক রূপবতী, প্রথম দেখায় সে ফয়সলের নজর কেড়েছিল। কিন্তু তাই বলে নিজের বসের বউকে নিয়ে কোনো খারাপ চিন্তা ফয়সলের মাথায় নেই, খারাপ দৃষ্টি তো দূরের কথা।

– না মানে স্যার, মেম বলেছিলেন জুস আনতে।

– ও আচ্ছা আমাকে দাও। আমি ওকে দিয়ে দিচ্ছি।

ফয়সাল জুস দেওয়ার সময় খেয়াল করে হিম শীতল দুজনেই প্রচুর ঘেমে গেছে। তাই সে কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে হিম কে জিজ্ঞাসা করে,

– স্যার, আমি কি এসি ছেড়ে যাইনি? শীতের মধ্যেও এত ঘামছেন যে?

– আরে ছে*মরা বুঝিস না কেনো এটা যৌবনের উত্তাপ। 🥹🥹 বিয়ে কর, তারপর বুঝবি, তখন বউকে নিয়ে গান গায়বি,

” জ্বলে যায় , ভেতরটা তামার জ্বলে যায়।
তোমায় না পেয়ে জ্বলে যায়।”

হিমের গান শুনে ফয়সাল কোনো রকমে হাসি কন্ট্রোল করে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। তারপর হিমের বাংলো বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়।

__________________________________________

শীতল কে কোলে নিয়ে বাড়িতে ঢুকলে এক অপ্রত্যাশিত ব্যক্তির সাথে চোখাচোখি হয় হিমের। হিম সাথে সাথেই তার কোলে থাকা ঘুমন্ত শীতল কে সোফায় ছুঁড়ে মেরে তুষারের গলা জড়িয়ে ধরে। চোখে মুখে তার বিস্ফারিত আনন্দ। এদিকে ঘুমের মধ্যে এমন আছাড় খেয়ে শীতল তো ভয়ে দাঁড়িয়ে যায়। কি হচ্ছে কেনো হচ্ছে সে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। কেবল বড় বড় চোখে তাঁকিয়ে থাকে হিমের পাগ*লামির দিকে। হিম পারলে তুষারের ঘাড়ে উঠে যায়, কিন্তু ইচ্ছার তুলনায় দেহের আকৃতি বড় হয়ে যাওয়ায় সেটা আর করতে পারে না হিম।

– আরে লিটিল ব্রাদার, আমাকে ছাড়। চেপ্টা বানিয়ে ফেলবি তো একটু হলেই।

– ভাইয়া, এত জীবন পর তোমার এই ছোট বাচ্চা ভাইটার কথা মনে পড়ল?

– তুই বাচ্চা!!! দুদিন পর বাচ্চার বাপ হয়ে যাবি স্টু*পিড। বাই দ্যা ওয়ে, মেয়েটা কে?

তুষারের শীতলের দিকে আঙুল তাক করে। হিম তুষারের দিকে তাকিয়ে নির্বিকার ভাবে বলে,

– বাচ্চার বাপ হওয়ার মাধ্যম। আই মিন আমার লিগাল্লি মেরিড ওয়াইফ। কাল ই বিয়ে করেছি, এখনও হানিমু*ন হয়নি 🥹🥹।

– বাহ লিটিল ব্রাদার, তলে তলে তো ভালই টেম্পু চালিয়েছিস। এই যে ভাইয়ের বউ ,এদিকে আসো।

শীতল ধীর পায়ে তুষারের কাছে যায়।

– আমি তুষার, তোমার ভাসুর। তোমার নাম কি বোন?

শীতল একবার চায় হিমের দিকে। তারপর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

– ওর নাম শীতল।

– বোন তুমি কি আমার সাথে কথা বলতে ল*জ্জা পাচ্ছো?

– ভাইয়া ও কথা বলতে পারে না।

এটা শুনে তুষারের মন খারাপ হয়ে যায়। এত মিষ্টি মেয়ে কথা বলতে পারে না! তুষার এক হাত শীতলের মাথায় রেখে বলে,

– ইটস ওকে, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। তুমি মন খারাপ করো না, আমি জানতাম না।

শীতল তুষারের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে।

– ভাইয়া তুমি রেস্ট নাও, অনেক দূর থেকে এসেছো। আমরাও যাই, ইউ নো বিয়ের পর নবদম্পতির অনেক কাজ থাকে। 🙃🙃

চলবে………………..