অসময়ের শুকতারা পর্ব-১৯

0
14

#অসময়ের_শুকতারা
#অনামিকা_আহমেদ
পর্ব:১৯

অনেকটা সময় অজ্ঞান থাকার দরুন প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় কাতরাচ্ছে শীতল। তার ওপর অন্ধকার রুমে হাত পা বেঁধে তাকে ফেলে রাখা হয়েছে, রুমটা এতটাই রুদ্ধ ছিল যে ক্ষণে ক্ষণে তার শ্বাস আটকে আসছিল। শীতল পা দুটো হালকা নাড়িয়ে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছে যাতে করে একটু শব্দ সে করতে পারে। কিন্তু না তার আয়ত্তের মধ্যে কিছুই নেই।

চোখ ভরা পানি আর অসাড় শরীর নিয়ে শীতল পড়ে আছে ঠান্ডা মেঝের ওপর। পরনে কালকের পোশাক, তীব্র শীতকে রুখতে নাম মাত্র গরম পোষাক নেই তার। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ কানে এলে শীতল চোখ বুঁজে শুয়ে থাকে। অজ্ঞান হওয়ার ভান করতে থাকে যাতে সাদাতের কাছ থেকে পালানোর একটা পথ সে খুঁজে পায়।

খাবার ভর্তি প্লেট হাতে নিয়ে সাদাত অন্ধকার রুমে প্রবেশ করে। রুমের লাইট অন করে করু*ন দৃষ্টিতে চায় তার শীতলের দিকে। তার শীতল বলাটা ভুল হবে, কারণ শীতল তো আর তার নেই। সে এখন অন্য কারো বিবাহিত স্ত্রী। কিন্তু এসব কিছুই ভাবতে চায় না সাদাত। কাচের প্লেটটা আস্তে করে টেবিলের ওপর রেখে সাদাত মেঝেতে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে।

শীতলের ঠান্ডা শরীর স্পর্শ করতেই হালকা কেঁপে উঠে শীতল। তারপর হালকা গোঙ*রানির আওয়াজ করতে থাকে। সবই তার অভিনয়, সাদাত কে বোকা বানানোর চাল। শীতলের কাহিল অবস্থা দেখে সাদাত ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি করে শীতলের মাথাটা নিজের কোলের ওপর রেখে আবেগ জড়ানো কন্ঠে বলে,

– শীত, এই শীত, বেশি কষ্ট হচ্ছে? কি হলো আমার কথার জবাব দে।

শীতল মুখে কিছু বলে না। শুধু চোখ পিটপিট করতে থাকে আর সেই সাথে হাত পা হালকা নাড়ায়।

সাদাত এবার শীতল কে কোলে তুলে দাঁড়িয়ে যায়।

– আমারই ভুল হয়েছে। এই ঠাণ্ডার মধ্যে তোকে এভাবে মেঝেতে ফেলে রাখা উচিত হয়নি। মাফ করে দে শীত, আর হবে না।

এই বলে সাদাত শীতল কে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দেয়। নিজের রুমে পৌছে সে অতি যত্নে শীতল কে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চাদর দিয়ে ঢেকে দেয় তার সারা শরীর। তারপর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

– প্রতিবার ভাবি তোকে আর ক*ষ্ট দিবো না কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে আমি নিজের অজান্তেই তোকে ক*ষ্ট দিয়ে ফেলি শীত। কেনো ওই হিমকে বিয়ে করলি তুই শীত? আমার এত বছরের ভালবাসার কি কোনো মূল্য নেই তোর কাছে? এমন কেনো করলি শীত আমার সাথে?

সাদাতের কথা গুলো ভীষণ বি*রক্ত করছে শীতল কে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সাদাতের অপ্রকাশিত অনুভূতি গুলো বুঝতে শীতলের দেরী হয়নি, কিন্তু সাদাত কখনোই তার মন কে দখল করতে পারে নি। শুধু অত্যা*চার আর যন্ত্র*ণা দেওয়া ছাড়া সে শীতলের জীবনে বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখে নি।

শীতল চোখ বুঁজে হাত পা নাড়ানোর চেষ্টা করে। সাদাত তড়িঘড়ি করে শীতলের গা থেকে চাদর সরিয়ে তার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। ফর্সা চামড়ার ওপর দড়ির দাগ গুলো লাল হয়ে উঠেছে। সাদাত লাল হয়ে ওঠা ত্বকের ওপর কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে ভিজে চোখে তাকায় শীতলের দিকে।
মুখ শুকিয়ে গেছে মেয়েটার। কাল থেকে না খাওয়া তারওপর এতক্ষণ ঠাণ্ডার মধ্যে নির্জিবের মত পড়ে থাকার কারণে এতটুকু ও শক্তি অবশিষ্ট নেই শীতলের শরীরে।

সাদাত মুখ কালো করে রুম থেকে বের হয়ে যায় শীতলের জন্য খাবার আনতে। এই সুযোগটার অপেক্ষাই শীতল করছিল। সাদাত বের হওয়ার সাথে সাথেই সে এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দাড়ায়।

– না যত দেরি হবে তত এখন থেকে পালানো কঠিন হবে। বেলকনিতে গিয়ে দেখি, নিচে নামার ব্যবস্থা আছে কিনা। ( মনে মনে)

শীতল এর দেরি না করে বেলকনিতে চলে যায়। সেখানে শীতল বুঝতে পারে যে সে বর্তমানে বাড়িটির দুতলায় আছে। আশেপাশের পরিবেশ শীতলের অচেনা হলেও সেটা নিয়ে মাথা ঘামায় না সে। তার এখন মুল চিন্তার বিষয় এখন থেকে পালানো।

বারান্দার রেলিং আর পানির পাইপের ওপর ভর দিয়ে শীতল আস্তে করে নিচে নেমে যায়। জায়গাটা বাড়ির পিছনের দিক, কারণ এখানে কোনো সিকিউরিটি গার্ড নেই। শীতল দ্রুত পা চালিয়ে মেইন গেটের দিকে যেতে থাকে। উত্তরের ঠান্ডা বাতাস প্রতি মুহূর্তে ছুঁয়ে যাচ্ছে শীতল কে। কিন্তু অষ্টাদশী তরুণীর সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।

আর কয়েক কদম পা তারপরেই শীতল বেরিয়ে যাবে এই বাড়ির ত্রিসীমানা থেকে। শেষ কদম টা দেওয়ার আগেই তাকে কেও পিছন থেকে জাপ্টে ধরে। ভ*য়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায় শীতল। কারণ সে ভালই আন্দাজ করতে পারছে তাকে কে ধরে রেখেছে।

– বিশ্বাস করে হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়েছিলাম যাতে তোর ক*ষ্ট লাঘব হয়। আর তুই কিনা সেই সুযোগটাকে বেছে নিলি পালানোর জন্য? এর শা*স্তি ঠিক কতটা ভয়ং*কর তুই আন্দাজ করতে পারছে না শীত।

___________________________________________

পর পর তিনটা চ*র এসে পরে শীতলের গালে। এগুলো সামলে নিলেও শেষের চ*ড় খানা তাকে পড়ে যেতে বাধ্য করে। সাদাত সাথে সাথেই শীতলের চুলের মুঠি ধরে তাকে আবারও দাঁড় করায়। প্রচণ্ড ব্য*থায় চোখ বেয়ে পানি পড়ছে শীতলের। কিছুদিন সাদাতের অত্যা*চার গুলো সহ্য না করায় এতটুকুতেই ভেঙে পড়েছে সে। আগে পিঠে বেল্টের বারি পড়লেও সে সহ্য করে নিত।

– বল আর কখনও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মাথায় আনবি?

শীতল কোনো শব্দ করে না। কেবল নিজের হাত দিয়ে সাদাত কে তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। সাদাত অবাক দৃষ্টিতে তাকায় শীতলের দিকে। যে শীতল কখনও সাদাতের দিকে ভ*য়ে চোখ তুলে তাকাতো না, আজ সে নিজেকে তার থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

– বাহ জল তাহলে এতদূর গড়িয়ে গেছে। আমি তো ভেবেছিলাম হিম তোকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছে। কিন্তু এখন তো দেখছি আগে থেকেই তোর হিমের ওপর নজর ছিল। কেনো রে বিদেশি মা*ল দেখেই কি গলার ঝুলে পড়ার সাধ জন্মে ছিল তোর?

সাদাত আর কিছু বলতে পারে না। নিচের হলরুম থেকে হঠাৎ গু*লির শব্দ ভেসে আসে। অর্থাৎ হিম এখানে এসে উপস্থিত হয়েছে।

চলবে……………………