আঁধারিয়া অম্বর পর্ব-১৩

0
1230

#আঁধারিয়া_অম্বর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
১৩।

ঠান্ডা কন্ঠে ওপাশ থেকে বলল ইজহান,

” এখনো জেগে আছো কেনো?”

ফোনের এ পাশের শ্যামার তখন তবলা পিটা করছে বুকে ভিতর। আজ সাত দিন.. আজ সাতটা দিন চলছে… ইজহানকে সে দেখেনি। তার এই গম্ভীর কন্ঠ মুনে নি। আজ যখনি কানের মাঝে তার কন্ঠ ভেসে এলো। শ্যামা যেন ঘোরে চলে এলো। আনমনা হয়ে বলল,

“কেউ একজন ঘুমুতে দিচ্ছেনা..!”

ফোনের ওপাশের মানুষটির তখন ভ্রু কুচকে গেলো। তাৎক্ষণিক বলল,

“কে ঘুমুতে দিচ্ছে না?”

শ্যামা তখনো আনমনে। বলল,

“আপনি!”

ইজহানের কঁপালে পড়া ভাজ মিলে গেলো। পাতলা ঠোঁটে হাসি ফুঁটে উঠলো। শ্যামা তাকে মিস করছে? ভেবেই এক ভালো লাগা সারা শরীরে দোলা দিয়ে গেলো। ফোনের ওপাশের মেয়েটিকে তার বড্ড দেখতে ইচ্ছে করলো। কন্ঠ খাদে নামি ধীমি আওয়াজে রোমান্টিক ভাবে বলল,

“ডু ইউ মিস মি?”

বলেই ইজহান মিটিমিটি হাসলো। আজ… আজ তার খুব খুব খুশি লাগছে। মনের কোনে থাকা বাল্যকালের ইজহান খিলখিল করে যেন হাসচ্ছে। তার মনে হচ্ছে সেই ছোট শ্যামা.. সেই ছোট শ্যামা তার কোলে উঠার জন্য বেকুল হয়ে দু হাত মেলে দিচ্ছে। যেমনটি প্রতিবার বাবার সাথে শ্যামাদের বাড়িতে গেলে হতো…ইজহানকে দেখলে এক ছুঁটে তার কোলে উঠে পড়তো। তখন শ্যামার বয়স ৩ বছর, তখন ইজহানের ৮ বছর ছিলো। শ্যামা তখন আকাশ কুসুম ভাবছিলো। ইজহানের কথায় আনমনেই আবার উত্তর দিলো,

“হ্যাঁ, খুব… খুব মিস করছি…!”

কথাটুকু শেষ করার সাথে সাথেই একটি আওয়াজ ভেসে এলো ওপাশ থেকে। শ্যামার সঙ্গে সঙ্গে ধ্যান ভাঙ্গলো। অধিরাজ ওপাশ থেকে ইজহানকে বলে যাচ্ছে ,,

“স্যার গাড়ি চলে এসেছে, চলুন! ”

এতটুকুতেই বুঝতে পারলো শ্যামা ইজহান কোথাও যাচ্ছে। কিন্তু কোথায়? তখনি ইজহান বলল,

“ঘুমিয়ে পর, পরে কথা হবে…!”

শ্যামা মাথা নাড়লো। ফোন কেঁটে যাওয়ার পর তাদের মাঝে হওয়া কিছুক্ষণ আগের কনভারসন মাথা রিপিট হতে লাগলো। লজ্জায় শ্যামার গাল দুটি লাল হতে লাগলো। দৌড়ে রুমে এসে বালিশে মুখ চেপে ধরলো। মনে মনে ভাবলো… ছিঃ.. কতটা, কতটা.. নির্লজ্জ হয়ে গেছে সে। কি ভাববে ইজহান তাকে নিয়ে….

সেদিন রাত এসব বাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো সে। পরের দিন সকালে সাউন্ড ঘুম দিয় নিজেকে ফ্রেস মনে হচ্ছিল। আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো সে। আজ অনেক দিন বাদে সে অফিসে যাবে। অসুস্থ তার জন্য যেতে পারেনি এত দিন। বাসা থেকে বেড়িয়ে কয়েক কদম হেঁটে উঠে পড়লো একটি সি এন জি তে। বাহিরে আজ ঠান্ডা পরিবেশ। স্ব স্ব বাতাস বইছে। বর্ষাকালের বিদায়ের পালা এবার। গুন গুনিয়ে গান গাইতে লাগলো শ্যামা। মনটা আজ বেশ ফুরফুরে। আশে পাশের ফুটপাতের ধরে হেটে যাওয়া মানুষ গুলোকে দেখায় ব্যস্ত। কিন্তু কে জানতো? শ্যামার এই খুশিটুকু কতটুই বা সময় থাকবে!

অফিসে পৌছাতেই শান্তনু এসে দাড়ালো তার সামনে।
গুমররা মুখে বলল,

“এই মাসে আর ছুটি তুমি পাচ্ছো না। ”

শ্যামার হাসি হাসি মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। এসেই ভালো মন্দ কিছু না বলে, প্যান প্যান শুরু? শ্যামা মেকি হেসে বলল,

“অবশ্যই স্যার!”

শান্তনু প্রতি উত্তরের কিছু না বলে, একটি ফাইল এগিয়ে দিলো। বলল,

“তোমার নতুন কাজ, আশা করছি এবার ডিসাপয়েন্টেড করবে না!”

বলেই গটগট পায়ে বেড়িয়ে গেলো। তখনি জাহিদের জায়গায় আসা নতুন সানজিদা নামের মেয়েটি খিলখিল করে হেসে উঠে বলল,

“এবার তোমার চাকরি নিয়ে টানাটানি শ্যামা। কি করবে হ্যাঁ?”

শ্যামা জবাব দিলো না। ভাবলেশহীন ভাবে ফাইলটি খুলতে জ্বল জ্বল করে উঠলো কিছু লিখা,

“মি. ইজহান মেহরাবের গোপন তথ্য ফাস, গোপন সূত্র জানা গেছে তিনি মেয়েলী ব্যাপারের সাথে জড়িত। এর সাথে এটিও জানা গেছে, উনি ড্রাস নিয়ে থাকেন। ”

একটু পরেই হিম হয়ে গেলো শরীর। রাগে কাঁটতে লাগলো। কি জাতা পেয়েছে এরা? নিজেদের চ্যানালের নাম করার জন্য যা ইচ্ছে করে চলবে নাকি? কাঁপা কাঁপা হাতে ফাইলটি ধরে শ্যামা ছুটে গেলো শান্তনুর কক্ষে। নক না করেই চেচিয়ে বলল,

“স্যার এসব কি? একজন ভালো নেতার নামে এসব কি লিখে যাচ্ছেন আপনারা? ”

শান্তনু ভ্রু কুচকে বলল,

“এইটা একজন রিপোর্ট করে শ্যামা। হাইপার হয়ে যাওয়ার কিছু নেই। ফাইল দিয়েছি তোমাকে, এর সততা কত যাচাই করকে! গট ইট? নাও গো।”

শ্যামা মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো। রাগটা দপদপ করে জলছে। এসব কি বের হচ্ছে মি. ইজহানের নামে? কেই বা করছে এসব??

ঠিক তখনি শ্যামার ফোনে একটি মেসেজ এলো। শ্যামা চেক করতেই জল জল করে ভেসে উঠলো একটি নাম….

রিদ…

যে লিখেছে…..

“কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ? ”

শ্যামা মেসেজটি দেখে বুঝতে বাকি নেই এই কাজটি রিদের। সে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে চেচিয়ে বলল,

” কি চাই তোমার? কেন করছো এমন? আমাকে শান্তিতে থাকতে কি দিতে চাউ না তুমি?”

ওপাশ থেকে অট্ট হাসিতে ফেঁটে পরে বলল রিদ,

” জান… বলেছিলাম দেখা করো, শুনোনি তো? এবার তো দেখা করতেই হবে তোমার। নয়তো….!”

শ্যামা নিজেকে কন্ট্রোল করলো। ছোট্ট শ্বাস টেনে বলল,

” কোথায় আসতে হবে আমার?”

রিদ হেসে বলল,

” মেসেজ করছি, জলদি এসো, আ’ম ওয়েটিং। ”

ফোন কেঁটে গেলো। শ্যামা মেসেজ পেয়ে বেড়িয়ে গেলো। অফিসে বলে গেলো নিউজ কালেক্ট করতে যাচ্ছে।

এদিকে আজ বাসায় ফিরছে ইজহান। হাতে একটি লাল গোলাপের তোরা। মুখে এক চিলতে হাসি। আজ অনেক দিন পর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখবে সে৷ অধিরাজ নিজেও আজ খুশি স্যারের হাসি হাসি মুখটি
দেখে। ইজহান বাহিরে তাকিয়ে রইলো। ভেসে উঠলো শ্যামার হাসি হাসি মুখটি। ঠিক তখনি তার ফোনে একটি কল এলে। রিসিভ করতেই কঁপালে ভাজ পড়লো। অধিরাজকে বলল,

“ডানে নেও৷ ”

অধিরাজ অবাক হয়ে গেলো। ইজহানের অভিব্যক্তি মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কারণ কিছুতেই বুঝলো না। কিছুক্ষণের মাঝেই ওরা একটি নামি দামি রেস্টুরেন্টে উপস্থিত হলো। আর তখনি….

চলবে,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।