#আঁধারিয়া_অম্বর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
১৭।
“আই ওয়ান্ট ডিভোর্স! ”
কথাটি কানের মাঝে বাজতে লাগলো ইজহানের। বিস্ময়, আশ্চর্য নিয়ে তাকিয়ে রইলো শ্যামার দিকে। বুঝতে চাইলো শ্যামার মুখের অভিব্যক্তি। শক্ত, কঠিন অথচ সরলতায় ভরা মুখ। কোনো ভনিতা নেই। ঘরের ভিতর থাকা দুটি ব্যক্তির মাঝে অদ্ভুত নিরবতা বিরাজমান। ইজহান এবার ভ্রু কুচকে এলো। ফুঁটে উঠলো চোখে মুখে হতাশা। ইজহান নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। শ্যামা তার থেকে ডিভোর্স চাইছে? তার থেকে বড় কথা.. ইজহান এত.. এত গুলো টাকা পেলো কোথা থেকে? তার থেকে বড় কথা… শ্যামা এত বড়… এত বড় সাহস পেলো কোথা থেকে তাকে ডিভোর্স দেয়ার? ইজহানের মাথায় সুক্ষ্ম ভাজ পড়লো। একে একে মাথার মাঝে জমা হতে লাগলো প্রশ্নের বাহার। সব কিছু দূরে ঠেলে দিলো ইজহান। রাগে গা কাঁপছে এই মুহূর্তে। তবে সে নিজেকে সামলে হাসলো। সেই হাসিতে নাড়িয়ে দিলো শ্যামার অন্তরআত্মা। ইজহান হাতের পেপার গুলো মুচড়ে ধরে বলল,
” এত টাকা পেলে কই? লটারি লেগেছে নাকি?”
শ্যামা কঠিন কন্ঠে বলল,
“তা আপনার না জানলেও চলবে, যা নিয়েছিলাম, সব ফিরত দিয়েছি, এবার আপনি সাইন করে দিন!”
ইজহান হো হো করে হাসলো। বলল,
“তোমার কি মনে হয়? আমাকে ডিভোর্স দেয়া এতো সহজ?”
শ্যামার অভিব্যক্তি এবার পরিবর্তন হলো। অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে, সন্ধিহান কন্ঠে বলল,
“আপনি… আপনি কি বলতে চাইছেন?”
ইজহান তাচ্ছিল্য হাসলো। যদিও ভেতরের জমে থাকা, রাগ, ক্ষোভ আগ্নেয়গিরির মতো ফেঁটে যাচ্ছে। তবুও নিজেকে শান্ত করে বসে পড়লো শ্যামার বিছানায়। শ্যামা কিছুই বুঝতে পারছে না, মুলত ইজহান চায়ছে টা কি? সে বলল,
” আপনি এখানে সাইন করে বিদেয় হোন!”
ইজহান তার অদ্ভুত হাসি ঠোঁটের কোনে রেখে শ্যামাকে কাছে টেনে নিলো আচমকা। শ্যামা টাল সামলাতে না পেরে ইজহানের উপরেই পড়লো। শ্যামা তাতে রাগে ফেঁটে পড়লো। কিন্তু তার আগেই হিংস্র ভাবে চেপে ধরলো শ্যামার কোমড়। দুজনে এখন এতটাই কাছে, যে তাদের ঠোঁট ছুঁই ছুঁই। একে অপরের শ্বাস প্রশ্বাস পড়ছে মুখে। ইজহান তখন বলল,
” তোমার কি মনে হয়? আমি এতটা কাঁচা খেলোয়াড়? ”
বলেই ইজহান শ্যামার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধড়লো। শ্যামা নিজেকে ছাড়াবার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো। এক পর্যায় না পেরে কামড় বসিয়ে দিলো ইজহানের ঠোঁটে। ইজহান সাথে সাথে ছেড়ে দিলো শ্যামাকে। শ্যামা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” আমাকে ছোঁয়ার আর একবার চেষ্টা করবেন, তো লোক জর করে আপনাকে ধোলাই খাওয়াতে বেশি সময় লাগবে না!”
ইজহান যেন মজার কৌতুক শুনেছে সে বলল,
“ওকে আমার সমস্যা নেই, আমি বরং সবাইকে ডেকে বলে দিচ্ছি।”
এই পর্যায় শ্যামা ভয় পেয়ে গেলো। বলল,
” আপনি এখানে সাইন করুন, আর আমার জীবন থেকে চলে যান। আমি হাত জোর করছি!”
ইজহানের মুখ এবার সিরিয়াস হয়ে গেলো। বলল,
” তুমি তো আমাকে ডিভোর্স দিতে পারো না?”
“মানে?”
“মানে এটাই… তোমার কি আমাদের কন্ট্রাকের কথা মনে নেই?”
শ্যামা যুক্তি সঙ্গত গলায় বলল,
“আমি আপনাকে টাকা জন্য বিয়ে করেছিলাম, টাকা ফিরত দিচ্ছি, আমাদের কন্ট্রাক ও শেষ।”
“তা তুমি ভাবছে। মনে হচ্ছে আরো একবার কন্ট্রাক পেপার টা তোমার পড়া উচিত!”
শ্যামার মাথা কাজ করা যেন বন্ধ হয়ে গেছে, এই পাগলো লোকটা…. পাগলো লোকটা কি করতে চাইছে? শ্যামার ভাবার মাঝেই ইজহান কাউকে ফোন করলো। অপাশ থেকে ফোন তুলতেই ইজহান বলল,
“তোমাদের মেম, কন্ট্রাক পেপারটি আরো একবার দর্শণ করতে চায়। ১০ মিনিট সময় দিচ্ছি, কাম ফাষ্ট….!”
বলেই কল কেঁটে দিলো। এদিকে ১০ মিনিট গড়াতেই হন্তদন্ত হয়ে উপস্থিত হলো অধিরাজ। হাতে একটি ফাইল। ইজহানের দিক এগিয়ে দিতেই, ইজহান শ্যামার হাতে তুলে দিলো। শ্যামা ভ্রুকুচকে তাকাতেই ইজহান বাঁকা হেসে বলল,
“পড় আবার।”
শ্যামা এক রাশ কৌতুহল নিয়ে পেপারস এর লেখা গুলোতে চোখ বুলালো। মুলত, সেদিন সে না পরেই রাজি হয়ে গেছিলো। তার বাবা অবস্থা ক্রিটিকেল থাকায়। কিন্তু আজ যা দেখছে তাতেই লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে শ্যামার। শ্যামা পড়তে লাগলো।
১. ইজহান ছাড়া শ্যামা তাকে ডিভোর্স দিতে পারবে না।
২. যদি কখনো নিজের থেকে ডিভোর্স এপ্লাই করে, তাহলে এর জন্য ইজহানকে ২ কোটি টাকা কম্পালসারি দিতে হবে।
এসব দেখে শ্যামার চোখ চড়কগাছ। সামান্য রক্ষিতার জন্য? এত কিছু? কেন? শ্যামা রাগে চেচিয়ে বলল,
“রক্ষিতা করে রাখার জন্য, এত এত কিছু?”
ইজহান ফিকে হাসলো। শ্যামার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” পেপারে কোথাও কি লিখা আছে? তুমি আমার রক্ষিতা?”
শ্যামা বিস্ময়ে বিমুঢ়। বলল,
“কি বলতে চাইছেন আপনি?”
ইজহান আরো কাছে এসে বলল,
” এটাই বলতে চাইছি, তুমি আমার বউ!”
শ্যামার বুকের ভিতর ছেদ করে উঠলো। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ইজহানের দিকে। শ্যামার মাথায় তখন ঘুর ঘুর করতে লাগলো অন্য চিন্তা… ইজহানকে যদি সে ডিভোর্স না দেয়? তাহলে যে সামনে আরো বড় বিপদ রয়ে গেছে। যেটি তার বাবাই তার জন্য সৃষ্টি করে গেছে। শ্যামা শুকনো ঢুক গিললো। ইজহানকে কাট কাট গলায় বলল,
“আমি ডিভোর্স চাই, যে কোনো মূল্য। ”
ইজহানের রাগ এবার সপ্তম আসমানে, শ্যামার হাতে শক্ত করে ধরে বলল,
” একদিন সময় দিচ্ছি তোমাকে ফিরে এসো, নয়তো ভালো হবে না তোমার জন্য, তুমি হয়তো জানো না.. আমি কি করতে পারি!”
বলেই ছেড়ে দিলো ইজহান শ্যামাকে, ইজহানের এমন হুমকিতে কেঁপে উঠলো শ্যামা। ইজহানে চলে যাওয়ার দিক তাকিয়ে রইলো শুধু। পর মুহূর্তে ভাবলো, এখান থেকে তাকে পালাতেই হবে, যে করেই হোক…. সে পালাবে, নতুন যে ঘুর্ণিঝড় তার তিকে তেরে আসচ্ছে তার আগেই। ঠিক তখনি শ্যামার ফোন বেজে উঠলো। ওপাশ থেকে ভেসে এলো ভাড়ী কন্ঠ। বলল,
“খুব জলদি আমি দেশে ফিরছি, মনে আছে তো আমার কথা!”
শ্যামা ঠান্ডায় জমে যাওয়ার উপক্রম। তোতলিয়ে কোনো রকম বলল,
” হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে!”
অপাশ থেকে আবারো ভেসে এলো কন্ঠ,
“ভুলে যেও না শ্যামা, আমার ছেলের কাছে তোমার বাবা তোমাকে বিক্রি করে দিয়েছে, তাও অনেক বছর আগে। এখন তোমার বাবা নেই, তাই তোমাকে সব ঠিক করতে হবে, খবরদার যদি পালাতে চেষ্টা করেছো… তোমার বাবা যেভাবে পাড় পায়নি… তোমরাও পাবে না!”
শ্যামা ফোনের এই প্রান্তে একদম জমে গেছে। মাথা শুধু চলছে। পালাতে হবে….
চলবে,