#আঁধারে_প্রণয়কাব্য
#পর্ব_____১৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
“অন্যের স্বামীর জন্য আর কত কাঁদবি মায়া? তোর একতরফা প্রেমিক কিন্তু তোকে নয় বরং অন্য নারীকে বিয়ে করেছিল। নিজেকে এতটা বিলিয়ে দিসনা ভুল মানুষের জন্য!”
নাবিলকে ছেড়ে দাড়ালো মায়া। হতবাক দৃষ্টি তার নাবিলের দিকে নিবদ্ধ। নিশ্চল ও নিরুত্তর মায়া। নাবিল শুকনো হাসল। বলল,
“জানি তোর কাছে কোনো উত্তর নেই। উত্তর থাকার কথাও নয়। বাস্তব জীবন সম্পর্কে তোর কোনো ধারণাই নেই। অন্ধকারে তলিয়ে রয়েছিস তুই। যেখানে তুই শুধু নিজের স্বার্থটাকেই বড়ো করে দেখছিস!”
“কি বললি তুই? আমি স্বার্থপর?”
“ভুল কি বললাম? নিজের বোন কিংবা মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছিস? তোর বিয়ে হচ্ছেনা বলে আন্টি তোর ছোটো বোনটারও বিয়ে দিতে পারছেন না! অথচ কত ভালো ভালো সম্বন্ধ আসে তার জন্য। মাথায় দু’দুটো বড়ো বোঝা পড়ে রয়েছে আন্টির। এই বয়সে আর কত চাপ নিবেন তিনি? তোদের বিয়ে না দেওয়া অবধি যে আন্টি শান্তি হবেননা বুঝিসনা তুই? শান্তিতে মরতেও পারবেন না তিনি। এই দিকগুলো তুই কখনও ভেবে দেখেছিস? নাকি নিজের একতরফা প্রেম নিয়েই অন্ধকারে ডুবে রয়েছিস?”
মাথা নুইয়ে নিলো মায়া। এলোমেলো পায়ে হেঁটে বিছানায় নির্লিপ্ত ভঙিতে পা ঝুলিয়ে বসল। নাবিল কদম বাড়িয়ে মায়ার সম্মুখস্ত হয়ে দাড়ালো। নিবিড় কণ্ঠে বলল,
“যা বললাম তা একটু ভেবে দেখিস। তুই যেভাবে চলছিস সেভাবে জীবন চলেনা। মনে রাখিস জীবন কিন্তু একটাই। দুঃখের পাশাপাশি এখানে সুখও রয়েছে। দুঃখ নিয়ে এভাবে পড়ে থাকলে জীবন উপভোগ করা যাবেনা। জীবনে সুখী হতে হলে সুখের কাছে যেতে হবে। জেচে পড়ে দুঃখকে বইলে এতে শুধু নিজের ক্ষতিই নয় বরং তোকে ঘিরে বেঁচে থাকা মানুষগুলোরও ক্ষতি হবে। তাদের কথা অন্তত ভাব।”
মায়া তবুও নিশ্চুপ। বাকশক্তি না কাজ করলেও শ্রবণশক্তি বেশ ভালোই কাজ করছে তার। নাবিল ছোট্টো করে দম ফেলল। বলল,
“অনেককিছু বলে ফেলেছি। যদি মনে হয় যে আমার কথাগুলো তোর জীবনে কাজে লাগতে পারে তবে অ্যাপ্লাই করতে পারিস। এর জন্য আমার যতটুকু হেল্প করার প্রয়োজন আমি করব। আজ আসছি তবে।”
নাবিল পিছু ঘুরতেই মায়া নীরবতা ভাঙল। নির্বাক গলায় শুধাল,
“তুই কি বলতে চাইছিস সোজাসাপটা বল?”
“আমি তোকে ভালোবাসি এবং বিয়ে করতে চাই এটাই বুঝাতে চেয়েছি! নতুন করে সবকিছু শুরু কর এটাই বলতে এসেছি!”
দমহীন মনের সমস্ত জমানো কথাগুলো বলে ফেলে নাবিল শো শো বেগে প্রস্থান নিলো। একটি বারও পিছু ফিরে তাকালো না। মায়ার প্রতিক্রিয়া এখনও শূণ্য। কিয়ৎক্ষণ ফাঁকা মস্তিষ্কে সে ঠায় বসে রইল। আচমকা বসা থেকে ওঠে দাড়ালো। ধীর পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হলো। হাঁটতে হাঁটতে তার মায়ের রুমে গেল। দরজায় দাড়িয়ে দেখল তার অসুস্থ মা খুকখুক করে কাশছেন। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল মুখটা ভীষণ নেতিয়ে রয়েছে। দুঃশ্চিতার ছাপ স্পষ্ট। শরীরের মাংস প্রায় শুকিয়ে গেছে। অথচ বিগত ছয়/সাত বছর আগেও তিনি কত স্বাস্থবতী মহিলা ছিলেন!
মোড় ঘুরিয়ে ফেলল মায়া। উল্টোদিকে হেঁটে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। মোহনা তরকারি রান্না করছে। কড়াইয়ে ছ্যাত ছ্যাত শব্দ হচ্ছে। এর মাঝেও কেমন যেন ফ্যাচফ্যাচে কান্নার স্বর ভেসে এলো মায়ার কর্ণকুহরে। মায়া উদ্বেগি হয়ে ওঠল। কদম বাড়িয়ে ঢুকল রান্নাঘরে। মোহনার ঠিক পেছনে দাড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,
“তুই কাঁদছিস মহু?”
ঘটনার আকস্মিকতায় মোহরা হুড়োহুড়ি করে তার চোখের জল মুছে নিলো। জোরপূর্বক হেসে পিছু ফিরে তাকালো। উৎফুল্ল স্বরে বলার চেষ্টা করল,
“কই না তো।”
“মিথ্যে বলে লাভ?”
“মিথ্যে কেন বলতে যাব আপু? আমি সত্যিই কাঁদছি না।”
মোহনা মুখ চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করল। পুনরায় রান্নায় মনোযোগ দিলো। মায়া ক্ষুব্ধ হয়ে মোহনাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নিলো। মোহনার কাঁধে হাত রেখে ঝাঁকিয়ে শুধাল,
“কি হয়েছে বল?”
আবেগ বা দুঃখ কোনোটিই এবার ধরে রাখতে পারলনা মোহনা। ডুকরে কেঁদে সে মাথা নুইয়ে বলল,
“শামিম আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে আপু। মাকে বলাতে মা বলল আগে তোমার বিয়ে হবে এরপর আমার। শামিমের পরিবার শামিমকে খুব প্রেশার দিচ্ছে বিয়ের জন্য। শামিম আমাকে এক সপ্তাহের সময় দিয়েছে। এরমধ্যে যদি আমি রাজি না হই তবে সে তার পরিবারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য হবে।”
মোহনা অঝরে কেঁদে দিলো। মায়ার বিবেক জাগ্রত হলো। নিজেকে অপরাধী ও স্বার্থপর মনে হতে লাগল। নিজের প্রতি ভৎসনা জন্মাতে শুরু করল। ছোটো বোনের কষ্টটা সে সহ্য করতে পারলনা। বাহুডোর আবদ্ধ করে নিলো মোহনাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে নিথর কণ্ঠে শুধাল,
“খুব ভালোবাসিস শামিমকে?”
“নিজের চেয়েও বেশি।”
“কাঁদিস না। তোর ভালোবাসা হেরে যাবেনা।”
মোহনাকে ছেড়ে দাড়ালো মায়া। নিজেকে শক্ত করল সে। দূর্বলতা আর খাটবেনা। দ্রত কদমে রান্নাঘর থেকে প্রস্থান নিয়ে তার মায়ের রুমে গেল। সাজনীন বেগম সবেই বিছানায় পিঠ লাগিয়েছেন। মায়া রুমে প্রবেশ করে বিছানার ওপর বসল। সাজনীন বেগমের মাথায় হাত বুলালো। তিনি সচকিত হয়ে চোখ মেলে তাকালেন। মায়াকে দেখামাত্রই তিনি ক্ষীণ হাসলেন। মায়া বলল,
“শরীর কি বেশি খারাপ মা?”
“মোটামুটি। কেন কিছু করতে হবে তোর?”
“না।”
নিচের দিকে খানিক ঝুঁকে মায়া তার মায়ের কপালে চুমু খেলো। প্রশ্ন ছুড়ল,
“নাবিল তোমার কাছে এসেছিল মা?”
“হ্যা। তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে!”
“তুমি কি বললে?”
“তোর মতামতের বিরুদ্ধে আমি আর কি বলতে পারি?”
“বড়ো মেয়ের ভুলের জন্য ছোটো মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিতে চাচ্ছ?”
“এছাড়া আর কি করতে পারি?”
মায়া তৎক্ষনাৎ বসা থেকে ওঠে গেল। তার মায়ের দিকে অশ্রুসজল দৃষ্টিতে তাকালো। বলল,
“আমার বিয়ের ব্যাবস্থা করো মা! নাবিলকে বলে দিও আমি তার প্রস্তাবে রাজি!”
সাজনীন বেগমেকে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে দিয়ে মায়া প্রস্থান নিলো৷ দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকা মোহনা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে মায়াকে জড়িয়ে ধরল! সুখের অশ্রু ছেড়ে বলল,
“এই প্রথম তুমি যোগ্য একটা কাজ করলে আপু! মা এবং আমাকে নিশ্চিন্ত করলে। থ্যাংকস আপু। থ্যাংকস অ্যা লট।”
নির্বিক গলায় মায়া বলল,
“শামীমকে বলে দিস তোদের ভালোবাসা শীঘ্রই পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে!”
এই বলে মোহনাকে ছেড়ে মায়া তার রুমে প্রবেশ করল। ভেতর থেকে দরজার ছিটকিনি আটকে দিলো। ড্রয়ার ঘেঁটে পুরনো ছবির একটি অ্যালবাম বের করল। অ্যালবামটি খুলে সে দু-হাত দ্বারা অ্যালবামটি টেনেটুনে ছিঁড়ে ফেলল! বিষিয়ে ওঠা কণ্ঠে চোখের জল ছেড়ে বলল,
“আর নয় থেমে থাকা। আজ থেকে শুরু পরিবারের জন্য বেঁচে থাকা!”
__________________________
“তুই বাড়ি ফিরে যা তৃধা।”
তৃধা পিছু ঘুরে তাকালো। মালিহা চৌধুরীর মুখ থেকে এই কথা শুনে ভড়কালো। পড়ার টেবিল থেকে ওঠে বিস্ফোরিত গলায় তার খালামনিকে বলল,
“কেন খালামনি?”
“বেশিদিন হয়নি আমি আমার এক মেয়েকে হারিয়েছি। তোর বাড়াবাড়ির জন্য এখন আমার ছেলেকেও হারাতে পারবনা!”
আঁচল চেপে কেঁদে দিলেন মালিহা চৌধুরী৷ তৃধা তেতে ওঠল। তেড়ে এসে তার খালামনিকে বলল,
“ভুলে যেওনা খালামনি। একদিন কিন্তু তুমিই আমাকে বলেছিলে ফায়েয ভাইকে পটাতে, তাকে হাত করে বিয়ে করতে। এখন তুমি এই সময়ে এসে পল্টি নিচ্ছ?”
“হ্যা নিচ্ছি পল্টি। এরচেয়ে বেশি আমি কি করতে পারি? তখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। ভেবেছিলাম সানাম কখনও ফিরবেনা। ফায়েয হয়ত সানামের স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকার পায়তারা করছে। তাই আমি তোকে বলেছিলাম ফায়েযকে হাত করতে, তাকে বিয়ে করতে। কিন্তু এখন যেহেতু সানাম ফিরে এসেছে, ফায়েযের প্রতি তার কিছুটা হলেও দূর্বলতা কাজ করছে। আর ফায়েযও তাকে পাওয়ার জন্য উতলা হয়ে গেছে তাই আমি মনে করিনা তাদের মাঝখানে তোর থাকা উচিত!”
চওড়া কণ্ঠে তৃধা বলল,
“তাদের মাঝখানে তুমি আমাকে কেন জড়িয়েছিলে খালামনি? ফায়েয ভাইয়াকে তো আমিও এখন ভালোবেসে ফেলেছি! তাকে ছাড়ব কি করে আমি? তাকে ছাড়া বাঁচব কি করে আমি?”
মালিহা চৌধুরী নত হয়ে এলেন। অসহায়ের ন্যায় তৃধার হাত দুটি নরমভাবে ধরলেন। অনুনয় করে বললেন,
“আমার ভুলের জন্য আমি তোর হাত ধরে ক্ষমা চাইছি তৃধা। দয়া কর আমার ওপর। বিশ্বাস কর তোর অনুভূতি নিয়ে খেলার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিলনা। তাছাড়া একতরফা ভালোবাসা কখনও মঙ্গল বয়ে আনেনা। ফায়েয তোকে ভালোবাসে না। তুই এভাবে কেন একটা ছেলের অবহেলা সহ্য করবি? কোনদিক থেকে খারাপ তুই? এখনও কত ভালো ভালো সম্বন্ধ আসে তোর জন্য। সেসব থেকে তুই একজনকে বিয়ে করে সুখে থাক। তবুও দয়া করে আমার ছেলের সুখে নজর দিসনা।”
তৃধা মাথা নুইয়ে নিলো। অকাতরে চোখের জল ফেলে দিলো। ল্যাগেজ গুছাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। ঘৃণার স্বরে তার খালামনিকে বলল,
“এভাবে আমার ইমোশন নিয়ে খেলে কাজটা তুমি মোটেও ভালো করোনি খালামনি। তুমি এখন যতই ক্ষমা চাওনা কেন আমি তোমাকে এই জন্মে ক্ষমা করবনা! তুমি সবসময় আমার চোখে দোষী হয়ে থেকে যাবে। কারণ তুমি আমাকে ব্যাবহার করেছ!”
মালিহা চৌধুরী চুপচাপ দাড়িয়ে তৃধার ভৎসনা শ্রবণ করছিলেন। নিরুপায় তিনি। নিজের পক্ষে কিছু বলার ভাষা কিংবা পরিস্থিতি নেই তার। চোখের জল ফেলে তিনি আওড়ে বললেন,
“আমি জানি তৃধা। আমি তোর কাছে এখন বিষের চেয়ে বিষাক্ত হলেও একটা সময় পর তুই ঠিকই আমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবি। যখন তুই অন্য কারো সাথে সুখে থাকবি তখন মন থেকেই আমাকে ক্ষমা করে দিবি। তোর খালামনির পরিস্থিতি তুই বুঝতে পারবি। সেদিন আর আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারবিনা।”
তৃধা সবকিছু গুছিয়ে মালিহা চৌধুরীর থেকে বিদায় না নিয়েই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল! আর কখনও তার খালামনির মুখ দর্শন করবেনা বলে পণ করে নিলো। ফায়েয তার রুমের করিডর থেকে তৃধাকে চলে যেতে দেখে কফির মগে চুমুক দিয়ে আলতো হাসল। বলল,
“মায়ের ঔষধ কাজে দিয়েছে তবে!”
________________________
সপ্তাহ খানিক কেটে গেল মাঝখানে। নওশাদ শিকদার, এরশাদ শিকদার ও অনামিকা শিকদার তাদের তিনজনের কেসটি কোর্টে ওঠল। এমনকি তাদের শাস্তির ফয়সালাও হয়ে গেল! নওশাদ শিকদার ও এরশাদ শিকদারকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হলেও অনামিকাকে দেয়া হলো মাত্র পাঁচ বছরের কারাদন্ড। কারণ সে কোনো খুনের সাথেই প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলনা! খুনগুলো হওয়ার পর সে বিষয়গুলো জেনেছিল। তাই তার শাস্তির পরিমাণ কম ছিল।
শ্রেতাকে পরোক্ষভাবে সুইসাইডের দিকে এগিয়ে দেওয়া তাওহীদ এখন জেলে পচে মরছে। দশ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে তাকে! সেই সাথে জরিমানা হিসেবে শ্রেতার মাকে দিতে হয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা! ভোক্তভোগীরা বিচার পেলেও হারানো মানুষগুলোকে ফিরে পাবেনা আর কখনও! এই আক্ষেপেই যেন সকলে ভেতরে ভেতরে মরে পচে গলে যাচ্ছে।
পারিবারিকভাবে নাবিল ও মায়ার বিয়ে সম্পন্ন হলো! তিন কবুল পড়ে দুজনই পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো। মায়ার পরিবারের সকলে ভীষণ খুশি। তাদের খুশিতে মায়া নিজেও খুশি হওয়ার অভিনয় করল! ফায়েয এই বিয়ের আগা থেকে গোঁড়া অবধি ছিল। সাদিদের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে ফায়েয দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পেল। সেদিনটি ছিল ফায়েযের জন্য সবচেয়ে খুশির দিন।
বেশ রাত করে বাড়ি ফিরল ফায়েয। পুলের পানিতে পা ভাসিয়ে বসল। প্যান্ট ভাজ করে টাকনুর ওপর তুলে রাখল। শার্টের বোতম দুটি খোলা রাখল। নিশ্চিন্ত মনে সিগারেট ধরালো। বেশ তৃপ্তি সহকারে ফায়েয সিগারেটে ফুঁক দিয়ে ধোঁয়া উড়াতেই পাশে কারো উপস্থিতি টের পেল। হকচকানো দৃষ্টি ফেলল পাশে।
মৃদু হেসে সানাম পুলে পা ডুবিয়ে দিলো। পানিতে পা ভাসিয়ে খেলা করতে লাগল। ভীষণ হাসিখুশি দেখাচ্ছে তাকে। এ যেন ফায়েযের দৃষ্টিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল দৃশ্য ছিল! মায়ার বিয়েতে পরা পরনের নীল শাড়িটি এখনও পরনে রয়েছে সানামের। খুবই সাধারণ সাজ। খোলা চুল থেকে মাতাল করা গন্ধ ভেসে আসছে। ভীষণ নেশা অনুভব করছে ফায়েয। পাগল হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। ঘোর লেগে গেল তার। সানামের কাঁধে লেগে থাকা চুল গুলোকে সরিয়ে দিলো। তবুও সিগারেটটি হাত থেকে ফেললনা! সানাম পাশ ফিরে তাকালো। নিশ্চল দৃষ্টি তার। গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন ছুড়ল,
“সিগারেট না আমি কোনটা?”
“তুমি!”
সিগারেটটি হাত থেকে ছুড়ে ফেলতে বিলম্ব করলনা ফায়েয। আনমনেই সানামের কাঁধে গাঢ় চুমু এঁকে দিলো! সানাম লজ্জায় মুখ ঢেকে নিলো। বুকে দুরুদুরু কম্পন হতে লাগল তার। মুহূর্তেই সানামকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল ফায়েয। বলল,
“আমরা কবে বিয়ে করছি?”
“যখন আপনি চাইবেন।”
“আমিতো এখনই চাইছি। করবে তুমি?”
“সাদামাটা বিয়ে আমি করতে পারবনা! জানেন বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন আমার?”
“ওহ্। তাহলে আম্বানি ফ্যামিলির মতো বছর জুড়ে বিয়ে করব আমরা ওকে?”
সানাম খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। ফায়েয মুগ্ধিত নয়নে সানামের হাসি দেখছিল। চাঁদের হাসিতে যেমন জোছনা রাত হয়। তেমনি সানামের হাসিতে যেন ফায়েযের মনের আকাশে আজ জোছনা রাত এলো।
_______________________
“তোর অমতে আমি তোকে টাচ করবনা মায়া! কাঁদিসনা তুই। ভয়ও পাসনা।”
হাতে বালিশ নিয়ে নাবিল মেঝেতে শোয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলো। কান্না থামালো মায়া। হেঁচকি থামানোর জন্য মুখ চেপে ধরল। মেঝেতে শোয়ার পূর্বে নাবিল একবার দৃষ্টি ফেলে বিধ্বস্ত মায়ার দিকে তাকালো। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলতে বাধ্য হলো সে। অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। ভারী শাড়ি ও গহনা সামলে মায়া বিছানা থেকে ওঠে দাড়ালো। গাঁ থেকে এক এক করে গহনাগুলো খুলল। শাড়ি খুলে সোজা ওয়াশরুমে গেল। ছিটকিনি আটকে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। কি বিভৎস মু্খমন্ডল। কাজল লেপ্টে বিধ্বস্ত অবস্থা। চোখেমুখে পানি ছিটালো মায়া। কয়েক দফা রুদ্ধশ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করল। পুনরায় আয়নার দিকে মুখ তুলে তাকালো। আচমকা হেসে ওঠল সে! পরনে শুধু ব্লাউজ ও পেটিকোট তার। দরজা ঠেলে বের হলো। সোজা হেঁটে মেঝেতে বসল! নাবিলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল! চোখ বুজে আচ্ছন্ন কণ্ঠে বলল,
“আমি অতীতের সব কষ্ট ভুলতে চাই নাবিল। যেভাবেই হোক সব ভুলিয়ে দে আমায়।”
নাবিল পিছু ঘুরল। মায়ার ঠোঁটের সাথে তার ঠোঁট লেগে গেল। নাবিল নেশালো হয়ে ওঠল। ঠোঁট আঁকড়ে ধরল মায়ার! সুখের নেশায় ভাসিয়ে দিতে লাগল মায়াকে।
#চলবে_____?