#আঁধার_শেষে_আলো
#পর্বঃ৮
#লেখিকা_দিশা_মনি
আলো যখন ভাগ্যের এই নিষ্ঠুরতম পরিহাসে বুঝতে পারছিল কি করবে তখন অন্যদিকে ঘটে চলেছে ভিন্ন ধরনের এক কাহিনি। আলো সাংবাদিকদের এই অতিরঞ্জিত করার ব্যাপার গুলো নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছিল একইসাথে স্মরণও।
এদিকে, আলোর মা মালতী খাতুন আগের তুলনায় কিছুটা ভালো আছেন। তার জ্ঞানও ফিরেছে। এখন তিনি কথাও বলতে পারছেন। তবে জ্ঞান ফিরেছে থেকে তিনি আলোর খোঁজ করছেন। শেফালি বেগম যিনি বর্তমানে তার পাশে বসে ছিলেন তিনি মালতী খাতুনকে বোঝানোর জন্য বলেন,
“তুই এত চিন্তা করিস না, আলো ঠিক আছে। ও নিশ্চয়ই কোন জরুরি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।..”
“কাজ? কি কাজ ওর? তুই তো বললি আলো নাকি কদিন থেকেই ভীষণ ব্যস্ত। হঠাৎ করে কি কাজ পেল ও?”
“সেটা জানি না। তবে নিশ্চয়ই কোন জরুরি কাজেই ব্যস্ত আছে ও। নাহলে তুই তো জানিস, আলো তোকে কতটা ভালোবাসে। যদি কোন জরুরি কাজে ব্যস্ত না থাকত তাহলে নিশ্চয়ই এখন ও তোর পাশেই থাকত।”
মালতী বেগমের মনে এবার সন্দেহ বৃদ্ধি পায়। তিনি শেফালি বেগম এর দিকে সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে বলে ওঠেন,
“তুই আমায় সত্যি করে বল তো..আলো কোথায় গেছে? আমার কেন জানি ব্যাপারটা ঠিক লাগছে না। আমাকে হঠাত করে সরকারি হাসপাতাল থেকে এই বেসরকারি হাসপাতালে শিফটই বা করা হলো কেন?”
“সরকারি হাসপাতালে তোর চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা ছিল না ”
“কিন্তু এই হাসপাতালের খরচের ব্যবস্থা করা তো সহজ নয়। এত টাকা কোথা থেকে এলো?”
শেফালি বেগম আর সত্যটা লুকাতে পারলেন না। তাই বলে উঠলেন,
“আলো, ও টাকা জোগাড় করেছে।”
মালতী খাতুন অবিশ্বাস এর চোখে তাকান। বলেন,
“আলো? কি বলছিস তুই? ও এত টাকা হঠাৎ কোথা থেকে পেল? ওর কাছে তো এত টাকা থাকার কথা না। সত্যি করে বল শেফালি..আলো কোথায় গেছে? ও কোন অনৈতিক..”
শেফালি বেগম সাথে সাথেই বলে ওঠেন,
“না, এমন মোটেই না। আলো আমায় নিজে বলেছে ও কোন অনুচিত কাজ করছে না। তুই তো আলোকে চিনিস সাথে আমিও চিনি। ছোটবেলা থেকে তো আমরা দুজনে মিলে ওকে বড় করেছি। ও এমন কিছু করবে না এটুকু বিশ্বাস তো রাখতেই পারিস ওর উপর।”
“বিশ্বাস তো আমিও রাখতে চাই কিন্তু…আমার যে ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। আলোর সাথে কথা না বলা পর্যন্ত আমি শান্তি পাবো না।”
এমন সময় দুজন আয়া চলে আসে কেবিনে। শেফালি বেগম তাদের দেখে দূরে সরে যান। একজন আয়া মেঝে পরিস্কার করছিল আরেকজন রুমে স্প্রে করছিল। কথায় কথায় তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠে,
“ভাইরাল খবরটা দেখেছিস রে?”
“কোন খবর? ও ঐ ক্রিকেট ম্যাচের। হ্যাঁ, দেখলাম তো। কালে কালে যে আর কত কি দেখতে হবে৷ সমাজটা একদম নষ্টামিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।”
“তাই না তাই৷ কি যেন নাম ঐ খেলোয়াড়টার আলু সর্দার না কি যেন।”
“হুম, এমনই তো শুনলাম। তবে যতদূর জানলাম এটা তো একটা ছদ্মনাম। ওর আসল নাম কি যেন বলছিল নিউজে..উম..মনে পড়ছে না।”
“আলো।”
“হ্যাঁ, আলো। ও তো বলছে যে ওর মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য নাকি ছেলের ছদ্মবেশে ক্রিকেট খেলতে গেছে।”
‘ওসব অজুহাত। একে তো ছদ্মবেশে খেলে লোক ঠকিয়েছে তার উপর ঐ চৌধুরী স্পোর্টিং ক্লাবের মালিকের ছেলের সাথে নষ্টামি করা সময় ধরা পড়েছে।’
শেফালি বেগম ও মালতী খাতুন এত সময় ধরে নীরবে সব কিছু শুনছিল শুধু। কিন্তু আলোর নামটা কানে আসতেই তারা হতবাক হয়ে যান। মালতী খাতুন বলে ওঠেন,
“কি বললেন আপনারা? এসব কি সত্যি?”
“হুম। তাই তো দেখলাম নিউজে।”
“আমায় একটু নিউজটা দেখাতে পারবেন?”
শেফালি বেগম আশংকা করেন খারাপ কিছু হতে চলেছে। তাই তিনি বলে ওঠেন,
“না, তোকে এসব নিউজ দেখতে হবে না। তোর শরীর এমনি তেই ভালো না।”
মালতী খাতুন বলে ওঠেন,
“না, এবার আমায় সত্যিটা জানতে হবে। তুই আমাকে আটকাস না।”
আয়াটা তার ফোনে নিউজটা দেখায় মালতী খাতুনকে। মালতী খাতুন নিউজে আলোকে দেখে চরম অবাক। তার সন্দেহই তাহলে সত্য হলো। তিনি শেফালি বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠেন,
“এই তাহলে আলোর নৈতিক কাজ? এসব করেই ও আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে।”
শেফালি বেগম বলেন,
“শোন, তুই অস্থির হস না। এমনো হতো পারে যেমনটা দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি ওমন না। তোর শরীর এমনিতেই খারাপ। তুই প্লিজ এমন উত্তেজিত হস না।”
“উত্তেজিত হবো না? আর কিসের শরীর এর কথা বলছিস তুই? ঐ পাপের টাকায় আমি চিকিৎসা করাবো না। আমি এখনই এই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাব।”
বলেই তিনি ওঠার চেষ্টা করেন তখন শেফালি বেগম তাকে আটকাতে যান। এরইমধ্যে হঠাৎ করে শেফালি বেগমের বুকের ব্যথা বাড়ে। তীব্র শ্বাসকষ্টও অনুভব হয়। শেফালি বেগম ফ্লোরে বসে পড়েন। শেফালি বেগম বলেন,
“কি হয়েছে তোর ঠিক আছিস?”
দুজন আয়াও ভীত হয়ে ওঠে। এরমধ্যে একজন নার্সও সেখানে চলে আসেন। তিনি এসে বলেন,
“কি হয়েছে এখানে?”
শেফালি বেগম কান্না করতে করতে বলেন,
“দেখুন না, ও কেমন জানি করছে। আমার খুব ভয় হচ্ছে।”
শেফালি বেগম কান্না করে যাচ্ছিলেন। নার্স এসে বলেন,
“আমাকে দেখতে দিন।”
এরপর তিনি মালতী খাতুনকে আবারো বেডে শুইয়ে দেন। আর বলেন,
“আপনি বাইরে যান। আমি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করছি।”
★★
এদিকে, স্মরণ চৌধুরী কোন ভাবে ম্যানেজ করে আলোকে নিয়ে একটা নির্জন স্থানে আসে। আলো কাঁদতে থাকে। স্মরণ বলে,
“কি হয়েছে তোমার? এমন করছ কেন?”
আলো বলে,
“বিশ্বাস করুন, আমি শুধু নিজের মায়ের জন্য..”
“ঠিক আছে। বিশ্বাস করলাম। এবার কি করবে বল।”
“আমার খুব ভয় করছে। কোন ভাবে যদি এসব নিউজ আমার মায়ের কানে যায় তো..”
“এত চিন্তা করিও না। চলো আমি তোমাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে আসছি। আর এসব নিউজ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরানোর জন্য যা করার তাও আমি করবো।”
“আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি আজ অনেক সাহায্য করলেন।”
“তবে একটা কথা, তুমি ছদ্মবেশে খেলতে এসে ঠিক করো নি। তোমার এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল এটা প্রতারণা।”
“কিন্তু এছাড়া যে আমার কিছু করার ছিল না। আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।”
★★
এদিকে, বৃষ্টি হাসপাতাল করিডোর দিয়ে হেটে যাচ্ছিল এমন সময় আবারো ভুলবশত কারো একটা সাথে ধাক্কা খায়। বৃষ্টি চোখ তুলে তাকিয়ে দেখতে পায় সৌরভ চৌধুরীকে। সৌরভ সামান্য রেগে বলে,
“ধাক্কা খাওয়ার আর মানুষ পান না? বারবার আমার সাথেই কেন?”
বৃষ্টি আজ আর চুপ থাকবে না। প্রতিবাদে কিছু বলতে যাবে এমন সময় একজন নার্স এসে বলে ওঠে,
“ডাক্তার চৌধুরী, আপনি তাড়াতাড়ি ১২১ নাম্বার কেবিনে চলুন। ঐ পেশেন্টের অবস্থা বেশি ভালো না। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন
”
“ঠিক আছে, তুমি যাও। আমি আসছি।”
বলেই সৌরভ চৌধুরী যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। এদিকে বৃষ্টির হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় আলো বলেছিল তার মা ১২১ নাম্বার কেবিনে আছে। বৃষ্টির যেহেতু আলোকে ভীষণ আপন লাগছিল এবং তার জন্য চিন্তিতও ছিল তাই ভাবে একবার গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসবে। এজন্য সেও যাওয়ার জন্য সামনের দিকে পা বাড়ায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨