আঁধার শেষে আলো পর্ব-১৩

0
26
আঁধার শেষে আলো
আঁধার শেষে আলো

#আঁধার_শেষে_আলো
#পর্বঃ১৩
#লেখিকা_দিশা_মনি

মালতী খাতুন তার দুই মেয়ে বৃষ্টি ও আলোকে নিয়ে এসেছেন তার বাবার বাড়িতে। এত বছর পর নিজের বাবার বাড়িতে পা রাখার পর তিনি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন। মিজানুর চৌধুরী নিজের বোনের কাধে হাত রেখে বললেন,
“আর কাঁদিস না, মালতী। তোমার কাঁদার দিন শেষ। এখন থেকে তোর আনন্দের দিন শুরু।”

মিজানুর চৌধুরীর স্ত্রী এসে হেসে বললেন,
“তোমাকে এত দিন পর দেখে অনেক ভালো লাগছে মালতী। সেই কবে তোমায় দেখেছিলাম। আমার বিয়ের ৫/৬ মাস পরেই তো বোধহয় তুমি সব ছেড়ে চলে গেলে। আর তখন থেকে আমাদের আর কখনো যোগাযোগই হয়নি। তা আমাকে চিনতে পেরেছ তো?”

“কেন চিনতে পারব না মেজ ভাবি? তোমার সাথে আমার পরিচয় কম দিনের হলেও সম্পর্ক তো আপন বোনের মতো ছিল। তুমি, বড় ভাবি দুইজন তো আমায় মায়ের মতো ভালোবাসা দিয়েছ৷ বড় ভাবি আর ভাইজান যে আর নেই এটা ভাবতেও আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।”

“আসলেই। আমারো তাদের কথা ভেবে খারাপ লাগে। যদি আজ তারা বেঁচে থাকতেন তাহলে তোমাকে ফিরতে দেখে অনেক খুশি হতেন৷ আর আম্মা তো জীবনের শেষ দিন অব্দি তোমার কথাই বলে গেছেন।”

মালতী খাতুন কান্নারত স্বরে বলে,
“এত গুলো মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্যই বোধহয় আমি জীবনে সুখী হতে পারলাম না।”

এমন সময় সৌরভ এগিয়ে এসে মালতী খাতুন এর কাধে হাত রেখে বলে,
“একদম কেঁদো না ফুফু। তোমাকে কাঁদতে দেখে আমার একদম ভালো লাগছে না।”

মালতী খাতুন চোখের জল মুছে সৌরভের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“তুমি একদম তোমার বাবার মতো হয়েছ বাবা। তোমাকে দেখলেই আমার বড় ভাইজানের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। উনি বেঁচে থাকলেও বোধহয় আমাকে এভাবেই বলতেন।”

সৌরভও এবার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। এদিকে বৃষ্টি সৌরভকেই দেখে যাচ্ছিল। সৌরভের নজরও হঠাৎ তার দিকে পড়তেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায় এবং দুজনেই প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে। সাথে সাথেই দুজন চোখ সরিয়ে নেয়। শেফালি বেগমও ততক্ষণে এসে গেছেন। মূলত মিজানুর চৌধুরীর অনুরোধেই তার এখানে আসা।

মিজানুর চৌধুরী সবার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“তোমরা অনেক ধকল করে এসেছ, এখন যে যার রুমে যাও তারপর দুপুরে তোমাদের সাথে জরুরি কথা আছে?”

মালতী খাতুন জানতে চান,
“কি জরুরি কথা?”

“সেটা পরেই জানতে পারবি।”

“আচ্ছা।”

*★★★*
দুপুরে খেতে বসে,
সবাই এসে গেছে দেখে মিজানুর চৌধুরী সবাইকে খেতে বসতে বলেন। সবাই খেতেও বসে পড়ে। খাওয়া শেষ হবার পর তিনি সবাইকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বসেন। সবার চোখে ছিল কৌতুহল। মিজানুর চৌধুরীর এর স্ত্রী ধৈর্য হারিয়ে বলে ওঠেন,
“আমাদের সবাইকে এখানে কিসের জন্য ডাকলে এবার সেটা বলো।”

মিজানুর চৌধুরী গম্ভীর স্বরে বলেন,
“হুম, বলছি। তো তোমরা সবাই অবগত যে আজ অনেক দিন পর, আমি আমার হারানো বোনকে ফিরে পেয়েছি। তবে শুধু আমার বোনকেই নয় তার দুই মেয়েকেও। আমার ভাগ্নিদের পেয়ে আমি সত্যি অনেক আনন্দিত। আজ এত গুলো বছর পর পরিবার টাকে একত্রিত দেখে আমার অনেক ভালো লাগছে। আর এজন্য আমি সবাইকে একটা সুন্দর প্রস্তাব দিতে চাই, যাতে আমাদের এই পরিবারের ঐক্য বজায় থাকে।”

মালতী খাতুন বলেন,
“কি প্রস্তাব?”

মিজানুর চৌধুরী বলেন,
“আমার ছেলে স্মরণের সাথে তোর ছোট মেয়ে আলোকে নিয়ে এমনিতেই অনেক গুজব ছড়িয়েছে। তবে আমি সেসব নিয়ে চিন্তিত না। তবে আমি চাই, আমাদের সম্পর্ক যাতে মজবুত হয় সেজন্য আমি স্মরণের সাথে আলো এবং সৌরভের সাথে বৃষ্টির বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছি।”

এই কথা শুনে সবাই হতবাক। মিজানুর চৌধুরীর স্ত্রী বলেন,
“এ তো অতি উত্তম প্রস্তাব। মালতী তোমার কি মত?”

মালতী খাতুন সামান্য হেসে বলেন,
“প্রস্তাব টা ভালো কিন্তু আমার মনে হয়, ওরা সবাই আজ কাল কার যুগের ছেলে-মেয়ে তাই ওদেরও তো পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে এজন্য ওরা যদি রাজি থাকে তাহলেই এই বিষয়ে আগানো উচিৎ নাহলে নয়।”

মিজানুর চৌধুরী বলেন,
“আমিও ওদের উপর জোর করে কোন কিছু চাপিয়ে দেবার পক্ষপাতী নই। ওদের মত নিয়েই যা করার করা হবে। ওরা একে অপরের সাথে কথা বলুক। ওদের মতামত নিয়েই আমি সামনে আগাবো। তার আগে নয়।”

“ঠিক আছে। ওরা যদি রাজি থাকে তাহলে আমিও দ্বিমত করব না।”

মিজানুর চৌধুরী সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“তাহলে তোমরা একে অপরের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাও।”

“আচ্ছা।”

সবাই সমস্বরে বলে ওঠে।

সৌরভ-বৃষ্টি

বৃষ্টি সৌরভের সাথে প্রথম থেকে একের পর এক ঝামেলার কথা ভাবে। এ সব ভেবে তার কেমন জানি লাগছিল। হঠাৎ করেই তার মনে পড়ে যায় সৌরভের উদারতার কথাও। হাসপাতালে সে কি মহত্ব দেখিয়েছিল সেই কথা মনে পড়েই তা মনে অন্যরকম অনুভূতি হয়। এসব ভাবনার মাঝেই সৌরভ বলে ওঠে,
“আপনার কি মত এই বিয়ে নিয়ে?”

বৃষ্টি বলে,
“বুঝতে পারছি না। আপনার কি মত?”

“আমার কোন সমস্যা নেই তোমাকে বিয়ে করতে। তোমার কোন সমস্যা থাকলে বলতে পারো।”

বৃষ্টি বুঝতে পারে না কি বলবে। সৌরভ বলে,
“তোমার কি আমাকে পছন্দ না?”

“এমনটা না?”

“আমাকে তোমার কেমন লাগে?”

“ভালোই।”

“তাহলে বিয়েটা করেই নাও।”

“আচ্ছা..”

কথাটা বলেই জিভ কাটে সে নিজেই। সৌরভ হেসে বলে,
“ভেবেই বললে তো?”

বৃষ্টি আর সৌরভ দুজনেই এরপর এক সাথে হেসে ওঠে। দুজনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল এই সম্পর্ক নিয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই। তবে বৃষ্টি বলে,
“আমি ড্যাডের সাথে একবার কথা বলে দেখি। ওনার কোন সমস্যা না থাকলে আমি রাজি।”

“আচ্ছা।”

স্মরণ+আলো

আলো স্মরণের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাই।”

“আমার কোন আপত্তি নেই।”

“তার মানে বিয়েটা করতে আপনার আপত্তি নেই?”

“আমার বাবা যখন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমি তখন রাজি আছি। এখন তুমি বলো তোমার কি সিদ্ধান্ত।”

“আমার তেমন কোন অসুবিধা নেই।”

“আচ্ছা৷ তাহলে মত টা দিয়ে দাও।”

আলো কিছুটা ভেবে বলে,
“আচ্ছা দিলাম মত।”

সবার মধ্যে এরকম ইতিবাচকতার মধ্যেই বৃষ্টির বাবাও জানিয়ে দেয়, বৃষ্টি যদি এই বিয়েতে খুশি হয় তাহলে তারও কোন আপত্তি নেই। এসব কারণে সর্বসম্মতিক্রমে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। একই দিনে দুই বোনের বিয়ে। বেশ দারুণ কিন্তু! আর এখন এই দারুন ঘটনারই সাক্ষী হতে চলেছেন আপনারা সবাই। বিয়েতে আপনাদের সবাইকেও দাওয়াত দিলাম। সবার কিন্তু উপস্থিত থাকা চাই চাই। আর হ্যাঁ, যেহেতু জোড়া বিয়ে তাই জোড়ায় জোড়ায় গিফট আনবেন। খাওয়াও পাবেন জোড়ায় জোড়ায়। আসবেন কিন্তু হ্যাঁ, ননবদম্পতির জন্য প্রাণঢালা দোয়া আর হাত ভড়া গিফট দিয়ে। কালক বিয়ের দিন দেখা হচ্ছে ✨

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨