আকাশে তারার মেলা ২ পর্ব-৩৮+৩৯

0
636

#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব__৩৮

নিরলস ভঙ্গিতে হাত টা ছাড়িয়ে নিল আদ্র। ঠোঁটে বহমান হাসিটা নিমেষে তাচ্ছিল্য রূপ ধারণ করল। তড়িৎ গতিতে মেয়েটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেওয়া তুলির পানে। তুলির জলে টলমল চক্ষু যুগল মেয়েটার জন্য ঘৃণা আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিল আদ্রর মনে। কাউকে তোয়াক্কা করল না আদ্র। টেবিল থেকে টিস্যু নিয়ে তুলির চোখের নিচের লেপ্টে যাওয়া কাজল মুছে দিল ধীরস্থির ভাবে । কন্ঠে গম্ভীরতা এঁটে বলে উঠল,

” হাত টা নোংরা হয়ে গেছে,ধুয়ে আসি। এসে যেন তোমার মুখে হাসিটা দেখতে পাই বউ।”

এমন এক তিরস্কার বাক্যে চরম অপমান অনুভূত হলো মেয়েটার। তীক্ষ্ণ নজর নিক্ষেপ করল তুলির দিকে, যেন চোখের অগ্নি তে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিবে তুলির ছোট্ট দেহ টাকে। পায়েল,রিমি,সাগর,অন্তু,নিবিড়ের মেজাজ খিঁচে আসছে মেয়েটা কে দেখে। রাগে ক্ষোভে জ্বলছে মন। মুখের রং পাংশুটে হয়ে গেছে। নিবিড় কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল,

” তুই এখানে কি করছিস ইতি?”

দুর্বোধ্য হাসল ইতি। চারদিকে চোখ বুলালো একবার। পুনরায় নিবিড়ের দিকে দৃষ্টি স্থির করে ম্লান হাসলো। প্রতিবাদী কন্ঠে নিবিড়ের প্রশ্নের পৃষ্ঠে পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো।

” এতো বছর পর দেখা তোদের সাথে অথচ এমন বিহেভ করছিস?আচ্ছা বন্ধুত্ব,শত্রুতা নাহয় বাদই দিলাম কিন্তু অতিথি? বাড়িতে আসা অতিথির সাথে বুঝি এতো নিষ্ঠুর ব্যবহার?পায়েলের হবু বরের চাচাতো বোন আমি। আসলাম হবু ভাবীকে দেখতে কিন্তু অপমান করে তাড়িয়ে দিচ্ছিস।”

ইতির কথার প্রেক্ষিতে বৃহদাকার ধারণ করল সবার চক্ষুদ্বয়। নিবিড়, রিমি,সাগর,অন্তু দ্রুত গতিতে পায়েলের দিকে তাকাল প্রশ্নসূচক দৃষ্টি মেলে। মাথা নাড়িয়ে জানত না বুঝালো পায়েল। সত্যিই জানা ছিল না তার। বিয়ে ঠিক করেছে দুই পরিবার মিলে। বিয়ে ঠিক হওয়ার কয়েক বছরেও সে অভিকের সাথে যোগাযোগ করে নি। গত একবছর ধরে টুকটাক কথা হয় তাও এক প্রকার বাধ্য হয়ে। আগ্রহের অভাবে তেমন কিছু জানার চেষ্টাও করে নি কোনো সময়। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়ল সকলে। তুলি কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে চেয়ে আছে। সবার মুখের ভঙ্গিমা ও মেয়েটার কথাতে যা বুঝলো মেয়েটা আদ্র ও তার বন্ধুমহলের সাথে পূর্ব পরিচিত। কিন্তু মেয়েটা আদ্রর হাত স্পর্শ করেছে তা যেন মানতে কষ্ট হচ্ছে তুলির। তবে একটু আগে করা আদ্রর কেয়ার মনে পড়তেই ঠোঁটে হাসির ঝলক ফুটে উঠল। ইতির সাথে আর একটা কথাও বললো না কেউ। এক প্রকার এড়িয়ে গেল সকলে।

তুলি ইতি নামক মেয়েটাকে পরখ করে নিল ভালোভাবে। গোলগাল চেহারার গড়ন,ফর্সা গায়ের রং, চুলগুলো হালকা ব্রাউন কালার করা। দেখেই অনুধাবন করা সহজ অনেক স্টাইলিশ মেয়েটা আর নির্লজ্জও বটে। নয়তো কিভাবে পারে পেট দেখিয়ে লেহেঙ্গা পড়তে!অসহ্য লাগছে তুলির। ভিতরে ভিতরে ফুঁসছে। আমরিন পাশে এসে দাঁড়াতেই তুলি সূক্ষ্ম একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল। খেয়াল করল ইতি এদিকেই আসছে। আমরিনের হাত টা চেপে ধরল তুলি। ইতি কাছাকাছি এসে দাঁড়াল। তুলির দিকে তুখোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমরিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

” কেমন আছো আমরিন?”

দাঁতে দাঁত লেগে গেল আমরিনের রাগে। তবুও সম্মান রক্ষার্থে বললো,

” আলহামদুলিল্লাহ। ”

” সাথের মেয়েটা কে?”

দৈবাৎ প্রশ্নে তুলি হকচকালো। তাকে উদ্দেশ্য করে এমন প্রশ্ন করবে ভাবে নি সে। আমরিন তুলির দিকে এক পলক তাকাল। দুই ঠোঁট প্রসারিত করে জবাব দিল,

” আমার ভাবী। আদ্র ভাইয়ার বউ।”

কিছু সময় পূর্বেও ইতির মনে হয়েছে সে বোধহয় ভুল শুনেছে। কিন্তু এখন!এখন আমরিনের কন্ঠস্বর স্পষ্ট কানের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করেছে। হাত দু’টো মুঠো করে নিল সঙ্গে সঙ্গে। পরক্ষণেই ঠোঁটের কার্ণিশে ফুটে উঠল বাঁকা হাসি। তুলি কে নিয়ে পায়েলের কাছে এসে বসল আমরিন। তুলি একবার ভাবছে আমরিন কে ইতির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে কিনা, পরমুহূর্তে আবার সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছে। সামনের স্টেজে লাইটের আলো ছড়িয়ে পড়ছে। মিউজিক বাজতেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা মুখ গুলো দেখে তুলি চোখ বড়সড় করে তাকাল। ঠোঁট দুটো আলগা হয়ে গেল। মুখ হা হয়ে গেল আপনাআপনি। আদ্র নাচতে পারে?তুলি এতো সময় ধরে এই লোকের সাথে সংসার করছে অথচ জানতেই পারল না?অন্তু,নিবিড়, সাগর,আদ্র পায়েল কে ডেডিকেট করে নাচতে শুরু করল।

ঢোলক মে তাল হে,,
পায়েল মে ছনছন,,,
গোনগাট মে গৌরি হে,
সেহরে মে সাজন,,
যাহা বি ইয়ে যায়ে,,
বাহারে হি ছায়ে,,
ইয়ে খুশিয়া হি পায়ে,
মেরি দিল নে দি দোয়া,
মেরি ইয়ার কি শাদি হে,
মেরি ইয়ার কি শাদি হে,,,

বিস্ময়ে শ্বাস ফেলতেও যেন ভুলে গেল তুলি। পায়েলের চোখে খুশি চিকচিক করছে। অসম্ভব ভালো লাগা ছেয়ে গেছে অন্তরে। কেটে গেল গুমোট ভাব। সবাই আনন্দ মাতিয়ে তুলল প্রতিটা প্রহর। নাচ শেষে ক্লান্ত দেহ নিয়ে তুলির পাশে ধপ করে বসে পড়ল আদ্র। তখনও তুলি বিস্ময়ে জড়ীভূত হয়ে বসে আছে। শাড়ির আঁচলে টান পড়ায় সম্বিৎ ফিরে পেল তৎক্ষনাৎ। আঁতকে পাশে চাইতেই চোখে পড়ল আদ্রর ঘাম মুছবার দৃশ্য। শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছতে ব্যস্ত আদ্র। লজ্জিত হাসল তুলি। মনে মনে আওড়ালো,” প্রথমে ছিল গম্ভীর, রাগী তারপর বেরিয়ে এল ঠোঁট কাটা,বেহায়া,অসভ্য রূপ। আর এখন উনার অন্য এক গুণ। না জানি ভবিষ্যতে আরো কত রূপ দেখতে হবে তোর তুলি। ওহ্!এই মুহুর্তে আবার মনে হচ্ছে বউয়ের শাড়ির আঁচল ধরে রাখা বউ পাগল ডাক্তার সাহেব। ”
______

রাত প্রায় শেষ হয়ে আসার পথে। আর কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত হলেই পৃথিবীর বুকে নেমে আসবে নতুন এক প্রভাত,হবে নতুন দিনের নব্য সূচনা। নিদ্রা পালিয়ে বেড়াচ্ছে তুলির নিকট হতে। আধা ঘণ্টা ধরে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছে কিন্তু ঘুম ধরা দেওয়ার নাম নেই। প্রতিদিন যার বুকে ঘুমিয়ে অভ্যেস তাকে ছাড়া বিছানায় ঘুম আসবে না বুঝে গেল তুলি। অন্ধকারেই উঠে বসল। আদ্র নেই পাশে। এখনও নিচে বিয়ের আয়োজন তদারকির দায়িত্বে ব্যস্ত । বালিশের পাশে হাতড়ে মোবাইলটা হাতে নিল তুলি। ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে ধীরস্থভাবে বিছানা ছাড়তেই দরজা খোলার আওয়াজ আসল কানে। সেই সাথে এক চিলতে আলোর রেখা রুমে নিজের পদার্পণের জানান দিল। ফ্লোরে কারো অবয়ব দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেল তুলি। মোবাইলের ফ্লাশ দিয়ে দেখার চেষ্টা করবে তার আগেই রুমের লাইট জ্বলে উঠল। স্মিত হেসে স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরল আদ্র কে। মিশে গেল একদম বুকের সাথে। আকস্মিকতায় দুই পা পিছিয়ে গেল আদ্র,ভড়কে গেল কিছুটা। সাথে সাথেই শিরদাঁড়া বরাবর বয়ে গেল শীতল স্রোত। তুলি কে বেঁধে নিল নিজের বলিষ্ঠ হাতের বাঁধনে। নরম স্বরে জিজ্ঞেস করল,

” কি হয়েছে তুলা?”

নিরুত্তর রইল কিছুক্ষণ তুলি। বুকে মাথা রেখেই মুখ খুলল।

” ঘুম আসছিল না।”

” আচ্ছা একটু বসো। আমি ক্লান্ত। ফ্রেশ হওয়া দরকার।”

নাছোড়বান্দা হয়ে উঠেছে তুলি। কোনো দামই দিল না আদ্রর কথাটা কে। আগের থেকেও গুটিশুটি হয়ে মিশে দাঁড়াল আদ্রর সাথে। কপালে ভাজ ফেলে ভ্রুঁ কুঁচকে চাইল আদ্র। তুলি তো কখনও এমন করে না আজ কেন করছে বুঝতে পারছে না আদ্র। অন্যদিকে তুলি আদ্রর বুকে মাথা রেখে হৃদস্পন্দন শুনছে আর মনে মনে আওড়াচ্ছে-

” আপনি শুধু আমার ডাক্তার সাহেব। ইতি ফিতির সাহস কি করে হলো আমার ডাক্তার সাহেব কে ছোঁয়ার? ভাগ্য ভালো ইতি ফিতির অভিক ভাইয়ার বোন হন। নয়তো হাত কেটে হাতে ধরিয়ে দিতাম। বলতাম, আমার আদ্র,আমার ডাক্তার সাহেব একান্তই আমার।”

তুলির অবাধ্যতা আদ্রর মেজাজ গরম করে তুলল। ক্লান্ত হবার দরুন বিরক্তি যেন চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। রাশভারি গলায় বললো,

” যদি না সরো,তবে আমি তোমাকে নিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকব কিন্তু তুলা। আর এর পরিণাম তো তুমি জানোই,একদম রাত কেটে সকাল হবে।”

দ্রুত গতিতে আদ্রর কাছ থেকে ছিটকে সরে এলো তুলি। মুখ কাচুমাচু করে এদিক ওদিক করতে লাগল। সারা মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে,আদ্রর চোখে পড়লে লাল রং টা আরও গভীর ভাবে প্রস্ফুটিত হবে সারা মুখশ্রীতে। ঠোঁট কামড়ে হাসল আদ্র। বিনা বাক্যে বড় বড় পা ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। যে করে হোক আদ্রর চোখের সামনে নিজেকে আর ধরা দেওয়া যাবে না আজ,তা ভেবে তুলি কাথা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে রইল। খানিক সময় বাদে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে গুটিয়ে গেল আরো।

” মিসেস তুলা ঘুমের ভান না ধরে উঠে বসুন। এক সেকেন্ড নষ্ট হলে আমি কিন্তু আপনাকে কুমিল্লার রসমালাই ভেবে খেয়ে ফেলব।”

হুড়মুড়িয়ে উঠে বসল তুলি। নতজানু হয়ে রইল লজ্জামাখা মুখ নিয়ে।ইশ!আদ্র আপনার কি অমন করে বলা খুব জরুরি?নিজ মনে প্রশ্ন করল তুলি। হাতে টান অনুভব করতেই মাথা উঁচিয়ে তাকালো সম্মুখে। হাত জোড়া আকড়ে ধরে কাছে টেনে আনল আদ্র। ওষ্ঠ নেড়ে বললো,

” তুলা আসুন ছাদে যায়। তারার মেলা দেখার সঙ্গী হবেন আমার।”

আদ্রর পিছু পিছু কোনো প্রকার শব্দ বিহীন সিঁড়ির ধাপ অতিক্রম করল তুলি। ছাদের দরজার মুখে আদ্র কে থেমে যেতে দেখে তুলি চমকালো। মুখ খুলে কিছু বলবে তার আগেই নিজের ওষ্ঠে আদ্রর ওষ্ঠ যুগল অনুভব করল। বিমূর্ত দৃষ্টিতে আদ্রর দিকে তাকালো তুলি। বুকে ধুরু ধুরু অশনি নিয়ে কাটছে সেকেন্ড,কাটছে মিনিট। মুখ সরিয়ে এনে তুলি কে নিয়ে এক সাইডে চেপে দাঁড়াল আদ্র। তখনও তুলি বিমূঢ়তায় বাক্যহারা। কিছু বলার ভাষা নেই তার। বলবেই কিভাবে আদ্রর আচমকা স্পর্শে কন্ঠনালি শুকিয়ে গেছে। তুলির পিছনে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে তুলির ছোট্ট দেহ টা কে মিশিয়ে নিল আদ্র। কানের কাছে ফিসফিস করে খুবই নিচু আওয়াজে বললো,

” সামনে তাকাও।”

তুলি সামনে তাকাল। দেখতে পেল একটা ছেলে ও একটা মেয়ে ছাঁদে পাতানো বেঞ্চিতে বসে আছে পাশাপাশি। দু’জনের মাঝে আকাশসম নয় বরং কিঞ্চিৎ দূরত্ব মাত্র। পিছন থেকেই দিব্যি চিনতে পারল দু’জন কে। আনমনে আদ্রর বুকে পিঠ ঠেকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলে উঠল,

” ঘুচে যাক এই সামান্য দূরত্ব টুকু। আমি জানি সব ঠিক হবে। আপনি সব সুন্দরভাবে গুছিয়ে দিবেন আদ্র।”

” এতো বিশ্বাস?”

” বিশ্বাসের চেয়ে যদি বেশি কিছু থাকত তবে সেটা উচ্চারণ করতাম আমি। না থাকায় বিশ্বাস টাই উচ্চারণ করলাম।”

বিশাল আকাশের বুকে অজস্র তারার ভিড়ে নিজেদের ভালোবাসা কল্পনা করতে মগ্ন অন্তু,পায়েল। পাশাপাশি বসা মাঝে কিছুটা দূরত্ব তবে ভাবনার দিক থেকে দু’জনে একই পথের পথিক। বসে বসে কেটে গেছে প্রায় দশ মিনিটের উপর। নিস্তব্ধতা গ্রাস করে নিয়েছে মানুষ দু’টো কে। অবশেষে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিরবতা ভাঙল অন্তু। দৃষ্টি আকাশে রেখেই বললো,

” রুমে গিয়ে ঘুমা পায়েল। কাল সারাদিন অনেক ধকল যাবে।”

” উহু!ভালো লাগছে এখানে। তুইও থাক অন্তু। তোর সাথে চাঁদের আলোতে ভালো লাগছে আমার। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি আমি। যেখানে তুই খুবই সুদর্শন এক যুবক।”

অন্তু মুখ লুকিয়ে তৃপ্তি করে হাসল। অশ্রু টুকুও বিসর্জন দিল অতি গোপনে। পায়েল দূরত্ব ঘুচিয়ে হুট করেই গা ঘেঁষে বসে পড়ল। অন্তুর বাহু জড়িয়ে মাথা এলিয়ে দিল কাঁধে। বুকটা হাহাকার করে উঠল অন্তুর। ইচ্ছে করছে শূন্য এই বুকে পায়েল কে জড়িয়ে পূর্ণ করে নিতে। কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব! তবুও চোখ বুঁজে পায়েলের হাত টা আঁকড়ে ধরল শক্ত করে।
______________

কবুল বলার আগে চারদিকে আহত চোখ বুলালো পায়েল। বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল- “কবুল।”
সাথে সাথেই বুকে চেপে রাখা কষ্ট গুলো অশ্রু রূপে অঝোর ধারায় বেরিয়ে আসতে শুরু করল। ক্ষণে ক্ষণে বাড়তে লাগল কান্নার বেগ। আদ্র,অন্তু,রিমি সকলে দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে পায়েলের পাশে বসল। পায়েল অশ্রুসিক্ত নয়ন জোড়া নিবন্ধ করল আদ্রর দিকে। কাঁদতে কাঁদতে বললো,

” সবসময় ভাবতাম আমার একটা বড়ভাই থাকলে খুব ভালো হতো। আমার কেয়ার করত। আমার জন্য ভাবতো। আজ মনে হচ্ছে আল্লাহ আমার আশা পূরণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ শুধু আমায় বেস্ট ফ্রেন্ড নয় বেস্ট ফ্রেন্ড রূপে ভাইও দিয়েছেন।”

সূক্ষ্ম হাসল আদ্র। নির্বিকার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বললো,

” তোরা কষ্ট পেলে আমার মনে আঘাত হানে। আর তোরা বেশ ভালো করে জানিস আমি বড্ড স্বার্থপর। নিজের কষ্ট টা মেনে নিতে পারলাম না, কারণ কষ্ট মেনে নেওয়ার মানুষ আমি নই।”

#চলবে,,,

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রি-চেইক করা হয় নি।)

#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব__৩৯

নিকষকৃষ্ণ রজনীর প্রহর চলছে। বাহিরে বইছে নির্মল পবন। এ যেন শুধু নির্মল নয় সুখের হাওয়া ও বটে। সুখময় হাওয়া বয়ে চলেছে মানব মনের দুয়ারে দুয়ারে। কখনও কখনও মনের দুয়ারে খুলে প্রবেশ করছে গহীনে, জানান দিচ্ছে নিজস্ব অস্তিত্ব। রুমের পর্দা গুলো মৃদু মৃদু উড়ছে বাতাসের দাপটে। চার দেয়ালের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়ছে ফুলের সুবাস। আহা কি মনোমুগ্ধকর সুবাস টুকু!বিশেষ করে সাদা গোলাপের ঘ্রাণ তুলির মন নাড়িয়ে দিচ্ছে,খুব করে টানছে নিজের কাছে। ডাগরডাগর শান্তিপূর্ণ আঁখি মেলে তুলি ফুলশয্যার ঘর সাজানো অবলোকন করতে মগ্ন। তবে তার মগ্নতা বার বার নষ্ট করতে চাইছে ফুলগুলোর মনোমুগ্ধকর,মন মাতানো সুবাস।

আদ্র,নিবিড়, সাগর মিলে রুম টা সাজাচ্ছে। তুলি কখনও কারো বাসর সাজানো দেখে নি। তাই তো অদ্ভুত হলেও স্পৃহা জাগল বাসর ঘর সাজানো দেখবে। যদিও লজ্জায় ভুগছে মন,তবুও গুটিসুটি মেরে বসে আছে এক কোণে। আচমকা আদ্রের কন্ঠস্বর শুনে চমকে তাকাল তুলি। দেখল আদ্রর হাতে একটা শুভ্র সাদা গোলাপ। দেখা মাত্রই চকচক করে উঠল তুলির চক্ষু যুগল। নেত্রে গোলাপের ন্যায় ফুটে আছে অনাবিল আনন্দ। কোনোরূপ দ্বিধাদ্বন্দ্ব বিহীন আদ্রর হাত থেকে ফুল টা নিয়ে নিল। নিমিষেই নাক ডুবিয়ে সবটুকু সুবাস টেনে নিল নিজের মাঝে। অথচ একটা বার জানতেও চাইল না ফুল টা তার জন্য কিনা!মুখ তুলে আদ্রর দিকে চেয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসল। লজ্জা লুকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে বলে উঠল,

” গোলাপ টা কি আমার জন্য না?”

” দেওয়ার আগে যখন ছিনিয়ে নিলে তবে সেটা তোমারই।”

মুচকি হেসে প্রতুত্তর করল আদ্র। শার্টের হাতা দু’টো ভালো করে ফোল্ড করে তুলির পাশের টুলে বসে পড়ল। তুলি এই মুহুর্তে একটা চোখ জুড়ানো দৃশ্য হৃদয়পটে গেঁথে নিল। ভালো লাগে তার কাছে। খুব ভালো লাগে যখন আদ্র শার্টের হাতা গুটিয়ে নেয় তার সামনে। এই মানুষ টার সবকিছুই তার খুব পছন্দ। যদি কখনও পরস্পর পাশাপাশি দাঁড়ানো হয় আরশির সামনে তখনও তুলি শুধু আরশিতে আদ্র তেই বিমোহিত থাকে। সেই সাথে কতশত নতুন নতুন অনুভূতির সাথে যে পরিচয় হয় তুলির তার হিসেব সে কোনো কালেই রাখে নি। এতো এতো অনুভূতির হিসাব রাখা তুলির পক্ষে অসম্ভব। কেননা সে তো রোজ রোজ প্রতি মুহুর্তে, প্রতি ক্ষণে, প্রতি সেকেন্ডে পরিচয় লাভ করে নয়া নয়া অনুভূতির সঙ্গে।

তুলি শাড়ির আঁচলে আঙ্গুল পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে গভীরভাবে কিছু একটা ভাবল। রুমের চারদিকে নজরকরণ করে কিছু একটা মিসিং মিসিং ঠেকল তার নিকট। কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করল আদ্র কে বলবে কিনা। কিন্তু বললে বেশ হতো,রুমটা দেখতেও ভালো লাগত। সময়টা খুবই সল্প,হুট করেই তো হয়ে গেল সবকিছু। অতি অল্পতে কাহিনি টা ঘটে গেলেও খুশি টা চিরকালের জন্য চিরস্থায়ী হয়েছে। তুলি আলতো হেসে লজ্জাসংকোচ ধাবিয়ে ফেলল। আদ্রর ঘা ঘেঁষে বসল কিছুটা। ক্ষীণ স্বরে ডাকল,

” ডাক্তার সাহেব! ”

তুলির দিকে নজর নিবদ্ধ করে বিস্তর হাসল আদ্র। কোমল স্বরে সাড়া দিয়ে বললো,

” বলুন বউ।”

তুলির চোখ বুঁজে এলো আবেশে। এই যে কথায় কথায় আদ্র বউ বলে,তুলা বলে ডেকে উঠে একবারও কি অনুধাবন করার প্রয়াস চালিয়েছে তুলির বক্ষস্থলের প্রকান্ড ঝড়?চেষ্টা করেছে কি প্রবল কম্পন অনুভত করার?করেছে হয়ত। নয়তো তার দিব্যি জানা আছে তুলির বুকে কিভাবে তোলপাড় সৃষ্টি করতে হবে। পিটপিট করে নেত্রপল্লব মেলে তুলি পুনরায় প্রস্তুত হলো মনে সদ্য উদয় হওয়া কথাটুকু ব্যক্ত করার লক্ষ্যে। আমতা আমতা করে বললো,

” ফুলশয্যার ঘর,,”

” তোমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে তাই না?”

মুহুর্তেই তুলির কপালে ভাজ পড়ল। আঁখিপল্লব ললাটে স্পর্শ করল কিঞ্চিৎ। বিস্ফোরিত নয়ন জোড়া নিক্ষেপ করল আদ্রর দিকে। ছোট্ট করে বললো,

” হু। কিন্তু! ”

আদ্র দৃষ্টি গভীর করল। সবার অগোচরে কোমর জরিয়ে কাছে নিয়ে এলো তুলিকে। সমস্ত দেহে শিহরণ খেলে যেতে লাগল তুলির। সবার সামনে লজ্জায় রাঙা হতে গিয়েও চুপসে যাচ্ছে সে। বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে। আদ্রর দিক করুণ চাহনি ফেলতেই বাঁকা হাসল আদ্র। ফিচেল স্বরে বলে উঠল,

” পছন্দ হলে পুনর্বার আমাদের কক্ষ টাকে বাসর ঘরে পরিণত করবো। লাল টকটকে বেনারসিতে জড়িয়ে আমার এই প্রশস্ত বক্ষে পুনরায় আবদ্ধ করবো তোমাকে। অতঃপর লজ্জায় স্থবির হয়ে গুটিসুটি মেরে বসে থাকবে তুমি যখন আমি চেয়ে থাকব তোমার পানে অহর্নিশ। বক্ষস্থলের তান্ডব যখনি সামলাতে ব্যর্থ হব আমি তখনই একটু একটু করে অনেকখানি, গভীরভাবে ছুঁয়ে দিব তোমাকে,এঁকে দিব যত্ন করে আমার ভালোবাসার প্রলেপ।”

ঘোরের মাঝে ডুবে যেতে লাগল তুলি। কথাগুলো কর্ণ ভেদ করে সোজা বুকের বা পাশে বিঁধছে। প্রভাব ফেলছে প্রগাঢ়ভাবে। তীব্র থেকে তীব্র রূপ ধারণ করছে বুকে উঠা প্রবল ঝড়। হুট করে উঠে দাঁড়াল তুলি৷ বড় বড় পা ফেলে পালিয়ে এলো এক প্রকার। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরালো। লুব্ধনেত্রে তাকাল আদ্রর ঠোঁটের দিকে। স্পষ্ট চোখে বিঁধছে আদ্রর ঠোঁটের কোণে প্রস্ফুটিত স্মিত হাসি টুকু। অনুভূতিরা সাদরে লুফে নিল হাসি টা। প্রায়ই তুলির খেয়ালে এসেছে যখনই আদ্র তাকে লজ্জার বান ছুঁড়ে মারে ঠিক তখনই এই হাসিটা অভ্যাসবশত আদ্রর অধর স্পর্শ করে। ইশ! কি মাদকতা ভরপুর এই হাসি তে। তুলি বিড়বিড় করে বললো,

” ভয়ংকর, মারাত্মক,সাংঘাতিক শব্দগুলো যেন আপনার জন্যই মানানসই আদ্র। কি যে ভয়ংকর আপনার হাসি কি করে বুঝাবো আমি আপনাকে?বুঝানো বড়ই মুশকিল।”

আনমনে ভাবতে ভাবতে তুলি যে দরজায় স্থির দাঁড়িয়ে আছে তা নিজেই ভুলে বসল। আদ্র কে সম্মুখে দেখতে পেয়ে উল্টো পিঠে ঘুরে দাঁড়াল তৎক্ষনাৎ। ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলে শাড়ির কুঁচি আঁকড়ে ধরে দৌড়ে নেমে আসল নিচে। তুলির যাওয়ার পথে আদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে উঠল,

” তুমি আজকাল প্রবলভাবে কাঁপাচ্ছ হৃদপিণ্ড। বাড়িয়ে তুলছো তোমাকে চাওয়ার প্রখরতা। আমাকে উম্মাদ করে তোলা লাজুকলতা তুমি, আমার তুলা।”

বুঝ হওয়ার পর থেকে তুলি দেখে এসেছে সর্বদা বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে বন্ধ বান্ধব, ভাবী,কাজিনের দল। কিন্তু আজ পুরো উল্টোই দেখছে তুলি। মনে হচ্ছে সে বুঝি চাঁদের উল্টোপিঠ দেখতে পেয়েছে। পায়েল ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। বেচারা অন্তু মুখ কাচুমাচু করে তাকিয়ে আছে পায়েলের দিকে। তার গজদন্তিনী দাবি করেছে টাকা না দিলে বাসর ঘরে ঢুকবে না সে। ব্যাপার টা সত্যিই হাস্যকর। অন্তুর মুখ দেখে তুলিসহ সকলের পেট ফেটে হাসি আসার উপক্রম। বিয়ে করে চরমভাবে ফেঁসে গেছে বেচারা। কোনো কালেই হয়ত কল্পনায় ও ভাবে নি নিজের বউ বিয়ের রাতে টাকা না দিলে বাসর ঘরে ঢুকবে না বলে দাবি করবে। অসহায় মুখ করে অন্তু পায়েলের হাত টা ধরতে গেল। ঝারি মেরে সরিয়ে দিল পায়েল। ঠোঁট ছড়িয়ে বললো,

“বহুদিনের ইচ্ছে আমার তোর বাসর রাতে মোটা অংকের টাকা আদায় করব। এই ইচ্ছে টা মাটিতে মেশানোর পাত্রী আমি নই। বান্ধবী হিসেবে টাকা আমার চাই মানে চাই। নয়তো যা রুমে,কর গিয়ে একা একা ফুলশয্যা।”

অন্তুর অসহায় দৃষ্টি আরও করুণ রূপ ধারণ করল। বিয়ে করে যা খুশি হয়েছিল তা সবটা দলা মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিল পায়েল। প্রথমত নিজের বর কে তুই ডাকছে,দ্বিতীয়ত ফুলশয্যার রাত টুকু শেষ করে দিচ্ছে টাকার দাবিতে। শেষমেশ হার মানল অন্তু। বিড়বিড় করে বললো,

” কত দিতে হবে?”

” পঞ্চাশ হাজার। ”

অন্তুর মনে হলো তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। বউ নিয়ে রুমে ঢুকার জন্য পঞ্চাশ হাজার?মনের দুঃখে অন্তুর একবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো, ‘তোর কি বাসর করার সাধ নেই ডাকিনী?’ কিন্তু প্রশ্নটা চেপে গেল সে। ভালো করে জানে এই প্রশ্ন করলে তিন বছরেও পায়েল কে কাছে পাবে কিনা তাতে সন্দেহ আছে। রাজি হয়ে গেল পায়েলের দাবিতে। কারণ অন্তুর মস্তিষ্ক তাকে বলেছে বউয়ের চেয়ে টাকা বেশি নই। তবুও আমতা আমতা করে বললো,

” এতো টাকা দিয়ে কি করবি?তোর একটু দরদ দেখানো উচিত নিজের জামাইয়ের টাকার উপর।”

ক্ষিপ্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করল পায়েল। হেসে বললো,

” দরদ দেখিয়েছি তো তোর উপর। তোকে বিয়ে করেছি। ইশ!কি কান্না করছিলি তুই আমাকে বিয়ে করার খুশিতে গাড়িতে বসে।”

চোখ বড় বড় করে তাকাল অন্তু। সব ফাঁস করে দিচ্ছে এই মেয়ে বন্ধুমহলের সামনে। এই মেয়েকে পাওয়ার খুশিতে নাহয় একটু আকটু কেঁদেছিল, তাই মান সম্মান এভাবে ডুবিয়ে দিবে!

রুমে যাওয়ার পূর্বে নিবিড়, সাগর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,

” বান্ধবী এখন ভাবী। আজ ভাবী সম্পর্ক টা কে সম্মান জানিয়ে তোর কানে কানেই বলি,বাঘিনী শিকার করে সফল হয়ে কাল আমাদের মুখ দেখাস অন্তু। ভয়ে আবার বেহুঁশ হয়ে পড়ে যাস না যেন।”

অন্তু সূক্ষ্ম ঢোক গিলল। প্রচন্ড সাহসের সহিত বলে উঠল,

” এটা তো আমার বা হাতের খেল।”
__________

কখন কে কোথায় অবস্থান করবে তা কেউ জানে না। কত সেকেন্ড আর পৃথিবীর বুকে নিঃশ্বাস ফেলবে তাও কারো জানা নেই। অন্তুদের বাড়ির বেলকনিতে দাঁড়িয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে তুলি। গতকাল অব্দি নিঃশ্বাস টা বার বার বন্ধ হয়ে আসছিল। সারাক্ষণ মাথায় একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিল সব ঠিক হবে আদৌ!নিমিষেই সব ঠিক করে দিল আদ্র। কাউকে ভাসতে দেয় নি কষ্টের সাগরে। তুলির মনে পড়ে গেল সেই মুহুর্ত টা,যেই মুহুর্তে আদ্র খুব রিস্ক নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল পায়েলের বাবার নিকট।

নিকষ কালো আঁধার ডিঙিয়ে ধরণীতে সবেমাত্র সূর্য উজ্জ্বলতা ছড়াতে শুরু করেছিল। তুলি ও আদ্র ধীর পায়ে হেঁটে এসে উপস্থিত হলো পায়েলের বাবার রুমে। তখন দু’টো ভয় কাজ করছিল উনি কথাটা কিভাবে নিবেন? কি হবে এর পরিণাম?তুলির বুকটা কাঁপছিল ভয়ে অথচ আদ্র নির্ভয় ভঙ্গিতে একটা প্রশ্ন ছুড়েছিল অতি বিনয়মিশ্রিত কন্ঠে।

” ধরে নিন,পায়েল অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে তাকে অভিকের সাথে বিয়ে দেওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত আংকেল?”

#চলবে,,,

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)