আগুনের তৃষ্ণা পর্ব-২৪

0
571

#আগুনের_তৃষ্ণা
#Maishara_Jahan
Part………..24

,,,,সায়ন,, দিয়ার মৃত্যুতে অয়নের কোনো দোষ নেয়, সব দোষ আমার।

সায়ন উঠে বসে গিয়ে বলে,,,,,মানেহহ।

সায়নের বাবা মাথা নিচু করে বলে,,, ঐদিন যখন দিয়া বলে সে কোনো দিন মা হতে পারবে না। সেটা আমি মেনে নিতে পারিনি। তাই পার্টিতে তাকে টাকা দিয়ে চলে যেতে বলি কিন্তু সে রাজি হয় না। তোকেও তো কতো ভবে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। তারপর ভাবলাম দিয়াকে ভয় দেখিয়ে চলে যেতে বলবো।

ঐদিন আমি বন্ধুক বের করে এমনি দিয়ার সামনে ধরে হুমকি দিচ্ছিলাম, যেনো সে তোমার জীবন থেকে সরে যায়। তখনি দিয়া ভয়ে দৌড় দিতে নেয় আমিও তাকে আটকাতে যায়, দিয়া আমাকে ধাক্কা দিতে নেয় আর ভুল করে আমার হাত দিয়ে বন্ধুক থেকে গুলি বের হয়ে যায়।

দিয়া সাথে সাথে মারা যায়। অয়ন দৌড়িয়ে এসে আমার হাত থেকে বন্ধুকটা নিয়ে দিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ সে নিজেও বুঝে না কি হচ্ছে। একটু পরেই তুই এসে চিৎকার করতে থাকিস। অয়নের হাতে বন্ধুক দেখে ওকে দোষারোপ করতে থাকিস। আমার অবস্থা তখন খারাপ ছিলো, আমি বুঝতেই পারছিলাম না কি থেকে কি হয়ে গেলো।অয়ন আমার দিকে তাকিয়ে, আমার অবস্থা থেকে সব দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নেয়।

আমি কিছু বলতে পারিনি । আমি জানি অয়ন যতোই আমার ওপরে রেগে থাকুক না কেনো সে চাই না তোর নজরে আমি ছোট হয়ে যায়,তুই আমাকে অপরাধী ভাবিস সেটা অয়ন চাই না। তাই সব অপরাধ নিজের উপরে নিয়ে নেয়। পিল্জ আমাকে মাফ করে দে।

বলে তার বাবা কান্না করতে থাকে, অয়ন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব শুনছে।অয়নের চোখেও পানি চলে আসে। সায়ন পানি ভরা চোখে সামনে তাকিয়ে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে।সায়ন বেড থেকে নেমে অয়নকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আর বার বার সরি বলতে থাকে।

অয়ন সায়নের পিঠে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে, সায়নকে বেডে বসিয়ে নিজেও সায়নের পাশে বসে।তাদের বাবা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু ক্ষন তিন জনে চুপচাপ বসে থাকে।

অয়ন তার বাবার হাতের হাত রেখে বলে,,,, যা কিছু হয়েছে এতে করো কোনো দোষ ছিলো না। এমন পরিস্থিতি এসে গেছে যে কাকে কাওকেই দোষারোপ করা যাচ্ছে না। আমরা সবাই পরিস্থিতির শিকার। আমরা সবাই অনেক দুঃখ পেয়েছি এখন দুঃখকে সরিয়ে খুশি থাকার পালা। সায়ন পিল্জ বাবাকে মাফ করে দে। মানছি ভুল ওনার ও ছিলো কিন্তু যা হয়েছে ভুলে হয়ে গেছে।

সায়ন কিছু বলে না, শুধু মাথা নাড়িয়ে অয়নকে জরিয়ে ধরে। তাদের বাবা চোখে পানি নিয়ে বলে,,,জানি তোর কাছে মাফ চাওয়ার ও আমার মুখ নেয়। নিজের নজরেই নিচে নেমে গেছি, তাও মাফ চাইছি। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো। নিজেকে কোনো দিন মাফ করতে পারবো না।

সায়ন অয়নকে ছেড়ে তার বাবাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তার বাবাও সায়নকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তাদের বাবা অয়নের দিকে তাকায় তকন অয়ন ও দুজনকে জরিয়ে ধরে।

এমন সময় আলো সোজা সায়ন বলে ভিতরে ডুকে, ডুকতেই অভাক হয়ে যায়। ওরা তিন জন তিনজনকে ছেড়ে দেয়। তিন জনের চোখেই পানি। আলো একটু নার্ভাস হয়ে বলে,,,, আমি একটু পরে আসছি।

বলে যেতে নেয়, তখনি সায়নের বাবা উঠে বলে,,, ডক্টর আলো আপনাকে যেতে হবে না। আপনি আমার ছেলের ভালোভাবে চিকিৎসা করেন, আমি আসছি।

আলো,,,,ওকে আংকেল।

তিনজনি তাদের চোখের পানি মুছে ফেলে। অয়ন দাঁড়িয়ে বলে,,,আমি আপনাকে বাহিরে পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসি।

অয়ন আর তার বাবা বাহিরে যায়। সায়ন ও ঠিক করে বসে। আমি সায়নের পেশার চেক করতে করতে বললাম,,,, যায় হয়ে যাক মাথায় কোনো চাপ নিবে না। সব কিছুর সমাধান আছে।

সায়ন মুচকি হেঁসে বললো,,,,, আর চিন্তা করতে হবে না আমার। মিস্ আলো আমি সুস্থ হতে চাই। যদিও আমার মন বার বার বলছে,, তুই দিয়াকে ছাড়া বাঁচবি না,, তাও আমি সুস্থ হতে চাই।

আমি খুশিতে লাফিয়ে বললাম,,,,সত্যি,, ওয়াও এটা তো অনেক খুশির খবার। আর দিয়ার কথা বার বার আপনার মন না মাথা বলছে, যেটাকে আপনার কন্ট্রোল করতে হবে।

,,,,,,,হুমমম। পাশে থাকবে তো আমার।

,,,,আপনি না চাইলেও সব সময় আপনার পাশে থাকবো। এই আলো অন্ধকারেও আপনার সাথে থাকবে।

সায়ন হালকা হাসে। তখনি অয়ন আসে। এসে সায়নকে বলে,,, তোকে আজকে বাড়ি নিয়ে যাবো। সেখানেই তোর চিকিৎসা করাবো।

সায়ন অন্য দিকে ফিরে বলে,,,,আমি বাড়ি যাবো না।

অয়ন,,,,কেনো।

সায়ন,,,,আমার জন্য ভাবীর বিপদ হতে পারে।

অয়ন,,, এখন এমন কিছুই হবে না, তুই তো সব কিছু জেনেই গেছিস।

সায়ন,,,, আমি ভাবীর সামনে গিয়ে দাঁড়াবো কিভাবে। ওনাকে মারার জন্য সব প্লেন আমিই করেছি। কতো বার মারার চেষ্টা করেছি। ভাবীর সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আমার নেয়।

তখনি মারু আসে এসে সায়নের সামনে দাঁড়ায়। সায়ন আমাকে দেখে অভাক হয়ে যায়। নিজের মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আমি সায়নের সামনে দাঁড়িয়ে বলি,,,, আমি জানতাম তুমি আসতে চাইবে না, তাই আমিও সাথে এসেছি তোমাকে নেওয়ার জন্য।

সায়ন নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,,,, আমি কোথাও যাবো না।

আমি বেডে সায়নের পাশে বসে বলি,,,,,, কেনো আসবে না, আর আমার জন্য গিল্টি ফিল করার কোনো দরকার নেয়। তুমি আমার ভায়ের মতো। আর ভাই একটা ভুল করলে মাফ করায় যায়৷ তাছাড়া তুমি তো কিছু ইচ্ছে করে করো নি। আর আমি জানি সায়ন কোনো দিন ইচ্ছে করে কারো খারাপ করতে পারে না। আর তুমি সবসময় আমাকে বাঁচিয়েছো। নিজের অজান্তেই আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করলেও নিজের ইচ্ছায় সজ্ঞানে আবার আমাকে বাঁচিয়েছো।

তুমি আমাদের সাথে বাড়ি যাবে বেস এটাই শেষ কথা।তোমাকে ছাড়া বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাকা লাগে। মনে হয় বাড়িতে জান নেয়।

সায়ন,,,,কিন্তু ভাবী।

,,,কোনো কিন্তু নয়,, বাড়ি ফিরে যাবে মানে যাবে। এখন যদি তুমি আমার কথা না শুনো তাহলে আমি কষ্ট পাবো। আর এসময় আমার কষ্ট পাওয়া ঠিক না। তাহলে বেবির সমস্যা হতে পারে ।

সায়ন,,,,,ভাবী এসব কথা কেও বলে,, বেবির কিছু হবে না।

,,,তাহলে তুমি যাবে।

সায়ন একটু ভেবে বলে,,,হুমম যাবো।

তখন সবাই খুশি হয়ে যায়। তখন অয়ন বলে,, আমি তোর জন্য আমেরিকার একজন বেস্ট সাইকোলজি ডক্টর এর ব্যাবস্থ করেছি, সেই তোর চিকিৎসা করবে।

এটা শুনে আলোর মুখটা মলিন হয়ে যায়। সায়ন আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,আলোও কিন্তু অনেক ভালো ডক্টর। তাই আমার মনে হয় আলো আমার চিকিৎসা করলে ভালো হয়।

অয়ন,,,,,হুমম,, আলোও ডক্টরের সাথে থাকবে। আলো প্রতিদিন আমার বাসায় আসতে কোনো প্রবলেম নেয় তো তোমার।

আলো এক লাফে বলে উঠে,,,,, না কোনো প্রবলেম নেয়।

অয়ন আর আমি আলোর দিকে চোখ দুটো বড় করে তাকায়। তখনি আলো তাড়াতাড়ি করে বলে উঠে,,,, না মানে এটা তো আমার কর্তব্য।

আমি আর অয়ন হাল্কা হেঁসে বলি,,,, হুমম

কিছু ক্ষন পরে আমরা সায়নকে নিয়ে বাসায় পৌঁছে যায়। সায়ন রুমে শুয়ে রেস্ট করতে থাকে। মা সায়নের পাশে বসে আছে।

আমি আর অয়ন বসে আছি। অয়ন ফ্রেশ হয়ে জিজ্ঞেস করে,,,,,প্রহর কোথায় ওকে দেখছি না যে।

,,,,, প্রহর তো তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলো, বলছিলো কি যেনো কাজ আছে।

,,,হুমম আজ কাল ওর কাজটা একটু বেশিই থাকে।

,,,,,তোমার এতে কি প্রবলেম।

,,,নাহহ আমার আর কি সমস্যা থাকতে পারে।
,,,,,,,,
প্রহর স্নেহার বাসায় যায়। সেখানে তাকে জামাতার মতো ব্যবহার করা যায়। সে স্নেহার রুমে যায়, গিয়ে দেখে স্নেহা শুয়ে আছে৷ ওর মাথায় জ্বর পট্টি দেওয়া। স্নেহা প্রহরকে দেখে উঠতে নেয়, প্রহর উঠতে মানা করে।

প্রহর আমার পাশে বসে বলে,,,,জ্বর কিভাবে বাঁধালে।

যতো টুকু জ্বর উঠেছে তার থেকে বেশি ভাব নিয়ে বলে,,,আমি কি জানি,, আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি।

প্রহর স্নেহার কপাল থেকে পট্টিটা সরিয়ে জাত লাগিয়ে চেক করে বলে,,,তোমার তো দেখে অনেক জ্বর,, আমি ডক্টরকে কল করছি।

,,,, ডক্টর এসে দেখে গেছে আর ঔষধ ও দিয়ে গেছে, বলেছে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না।

স্নেহার অবস্থা আর কান্না কান্না ভাব দেখে প্রহর স্নেহার হাত ধরে বলে,,,,, এমন কিছু হবে না। এসব তোমার মনের ভুল ইসটুপিড। জ্বর হলে এমন মনে হয়। আর এটা তো সাধারণ একটা জ্বর,তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।

স্নেহা রোগীদের মতো করে বলে,,,,অনেক জ্বালাতন করেছি আপনাকে, পারলে মাফ করে দিয়েন।

,,,,,,,স্নেহা এবার একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। চুপচাপ শুয়ে থাকো, দেখবে এমনি ঠিক হয়ে যাবে।

,,,,,আমি আর ঠিক হবো না, আমি নিশ্চিত মরে যাবো।

,,,, দূররর তোমার সাথে কথা বলাটাই ভুল, আমি চলে গেলাম।

বলে প্রহর যেতে নেয় স্নেহা হাত ধরে টান দেয়। প্রহর তাল সামলাতে না পেরে স্নেহার উপরে গিয়ে পড়ে যেতে নেয় কিন্তু প্রহর তার দুহাত স্নেহার দুপাশে বিছানায় ধরে ফেলার কারনে স্নেহার গায়ে পড়ে যায়নি কিন্তু স্নেহার অনেক কাছে চলে আসে।

দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রহর উঠে যেতে নিলে স্নেহা তার দুই হাত প্রহরের ঘাড়ে রেখে তাকে আটকায়। প্রহর স্নেহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,, কি করছো স্নেহা।

স্নেহা প্রহরের গালে কিস করে বলে,, আই লাভ ইউ প্রহর,, তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসবে।

প্রহর তাড়াতাড়ি উঠে পরে। নিজের গালে হাত দিয়ে স্নেহার দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
,,,,,,
আমি,অয়ন, প্রহর, সায়ন নিচে বসে আছি। এমন সময় কেও একজন দরজার বেল বাঝায়৷ একজন মেইড এসে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই রিয়ান জোরে আমার নাম নিয়ে ভিতরে আসে।

রিয়ান এসেই বলে,,,,মারু আমি এসে গেছি।

আমিও উঠে গিয়ে খুশিতে লাফিয়ে বলি,,,,তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম।

অয়ন দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে বলে,,,, কেনো।

আমি রিয়ানের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বলি,,,এর জন্য,, এতে আন্টির তৈরি করা আমের আচাড় আছে। আমার অনেক খেতে ইচ্ছে করছিলো, তাই রিয়ানকে বলেছি এনে দিতে।

প্রহর,,,,এতো ইচ্ছে করলে আমাদের বলতে পারতে। কিনে এনে দিতাম।

,,,আরে আন্টির হতের আচারের সাথে কোনো আচারের মিল হতেই পারে না। আমার অনেক ইচ্ছে করছিলো তাই বলেছি৷

অয়ন,,,হুমম

রিয়ান,,,,আরে তোমাদের প্রবলেমটা কি হুমম,,আমি এখানে এসেছি বলে৷ ঠিক আছে আমি চলে যাবো, চলে যাবো ২/৩ ঘন্টা পরে। কতো দিন হলো মারুর সাথে ঠিক করপ কথা হয় না।

আমি সোফায় দুপা উঠিয়ে বসে, আচারের ডিব্বাটা বের করে খেতে থাকি। আমার খাওয়া দেখে সায়ন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু ক্ষন পরে বলে,,,ভাবী আমাকেও একটু দাও।

আমি সায়নের দিকে ডিব্বাটা এগিয়ে দিলাম। সায়ন সেখান থেকে একটা খোসা নিলো। প্রহর সায়নের দিকে তাকিয়ে বলে,,,, তুইও কি প্রেগন্যান্ট নাকি।

সায়ন খেতে খেতে বলে,,,, কোন বইয়ে লিখা আছে আচার শুধু প্রেগন্যান্ট মেয়েদের জন্য।

চলবে,,,,,,,,

ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।