#আঙুলে আঙুল
পর্ব (২৩)
রাতের বেলা। রান্না-বান্না শেষ। শূভ্রা বাবাকে খাওয়ার জন্য ডেকে এলো। অরুণিমা শুরু থেকে রান্নাঘরের দুয়ারের কাছটায় দাঁড়িয়ে আছে। সবসময়ের মতো আজও মাকে রান্নায় সাহায্য করতে এসেছিল। নাজিয়া বেগম সাহায্য নেননি। কিছুতে হাত দিলে চোখ রাঙিয়েছেন। ধমকে বলেছেন, রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতে। সে যায়নি। দরজার কাছে অধোবদনে দাঁড়িয়ে আছে। আড় চোখে শূভ্রাকে দেখছে। এক রাতেই মেয়েটা লক্ষী হয়ে গেছে। চালচলন শান্ত ও ধীর। মেরে-ধরেও যে মেয়েটিকে রান্নাঘরে আনা যায়নি আজ সে নিজ থেকে এসেছে। মা বলার আগেই বুঝে যাচ্ছে, এখন তার কী প্রয়োজন। রান্না শেষে খাবার পরিবেশনটাও করছে বেশ গুছিয়ে। যেন এ কাজটায় সে সর্বকালের পটু!
” বাবাকে ডাকিসনি? ”
মায়ের প্রশ্নে শূভ্রা উত্তর করল,
” ডেকেছি। ”
” তাহলে আসছে না কেন? ভাত ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। আরেকবার ডেকে আয় তো, মা। ”
শেষ কথাটা এত আদুরে সুরে বললেন, অরুণিমার মনে হলো তাকে বলেছে। সে মাথা সোজা করে বলল,
” যাচ্ছি, মা। ”
দরজা পার হতে নাজিয়া বেগম বললেন,
” তোকে না, শূভ্রাকে বলেছি। চোখের সাথে কী এখন কানটাও গেছে? ”
অরুণিমা থমকে যেতে বাধ্য হলো। অসহায় আর অপরাধি চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। সরাসরি না বললেও মাইমূনকে ইঙ্গিত করেই যে বিদ্রুপটা করেছে সে ঠিক বুঝে গেল। শূভ্রা এক পলক বোনের দিকে তাকিয়েই পাশ কাটিয়ে চলে গেল বাবার রুমের দিকে। অসীউল্লাহ খাটের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। চোখ দুটো বন্ধ। কপালে ডান হাতটা উল্টে রাখা। শূভ্রা ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে এলো। আলতো করে বাবার কাঁধে হাত রেখে মিহি সুরে ডাকল,
” বাবা? ”
তিনি চোখ মেললেন। কিন্তু প্রত্যুত্তর করলেন না। মেয়ের দিকে নিষ্পলকে চেয়ে আছেন। শূভ্রা কিছু সেকেন্ড নীরব থেকে বলল,
” বাবা, খাবে এসো। মা ডাকছে। ”
অসীউল্লাহ এবারও নিরুত্তর। মেয়ের দিকে পূর্বের মতো তাকিয়ে থাকতে থাকতে সহসা বললেন,
” আমার পাশে একটু বস তো, মা। ”
শূভ্রা বসল। সেই সাথে উপলব্ধি করল, অনেক দিন বাবা এইভাবে আদর করে তাকে মা সম্বোধন করেনি। কাছে ডেকে বসায়নি। এই রুমটায় যতবার এসেছে ততবার শুধু বকা শুনেছে, ধমক খেয়েছে। তর্কেও জড়িয়েছে। এই প্রথম তার মনে অনুতাপের কুঁড়ি জন্মাল। ডাল-পালাও মেলছে সময়ের চাকতির সাথে তাল মিলিয়ে। মনে মনে ঠিক করল, আর কখনও সে তর্ক করবে না। ভুলেও না।
” মাথায় খুব যন্ত্রণা হচ্ছে, চুলে বিলি কাটতে পারিস? ”
শূভ্রার চোখ দুটি ছলছল করে ওঠল। এত সহজে আপুর ভাগের কাজের সাথে আদর-ভালোবাসাগুলোও যে পেয়ে যাবে কল্পনাও করেনি কখনও!
_________
গতকাল স্বামীর পাগলামিকে সামলে নিয়েছিলেন স্বর্ণলতা। কিন্তু পুরোপুরি ভুলিয়ে ফেলতে পারেননি। সকাল হতেই মস্তিষ্কে কামড়ে থাকা পোকাটা আবারও বিষাক্ত রস ঝরাতে থাকে। আপনমনে ছেলের নিষ্ফল কর্মকাণ্ডের জন্য বকা-ঝকা করতে থাকেন। সকালে খাবারের সময় বাবা-ছেলে মুখোমুখি হতে বিষয়টা পুনরায় সামনে আসে। সঞ্জয়ানের দিকে চোখ ঘুরিয়ে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন,
” আমি কৃষক মানুষ। মুক্ত হাওয়ায় খেত-খামারে ঘুরে না বেড়ালে দিন কাটে? ”
প্রশ্নটা করেই পাতের রুটিটা হাতে নিলেন। গভীর পর্যবেক্ষণের দর্শন রেখে বললেন,
” অন্যের হাতের বানানো খাবার আমার পেটে সয় না জানো না? তারপরও দিয়েছ কেন? ”
উত্তরটা সঞ্জয়ান দিল,
” অন্যের হাতের বানানো নয়, বাবা। মা বানিয়েছে। আমাদের খেতের গম থেকে ভাঙানো আটা দিয়ে রুটি হয়েছে। শুধু আটা নয়, এখানে যত খাবার দেখছ, সবগুলোর উপকরণই আমাদের নিজস্ব। আমার হাতে উৎপাদন করা। ”
স্বর্ণলতা স্বামীর ভাবটা খেয়াল করলেন। প্রসঙ্গের ইতি টানতে বললেন,
” শহরের আলো-বাতাস আমারও সয় না। মনটা সারাক্ষণ অস্থির হয়ে থাকে। হাঁসফাঁস লাগে। চলেন, ছায়ানীড়ে ফিরে যাই। ”
মুনসুর সাখাওয়াত খাওয়ায় মন দিলেন। গম্ভীর বদনে ধীরেসুস্থে বললেন,
” অবশ্যই যাব। ছেলের বউটাকে আগে আনি তারপর। আরেকটু সবুর করো। ”
সঞ্জয়ান মায়ের দিকে এক ঝলক তাকাল। তারপর চোখ নামিয়ে বেজার মুখে খাবার গুজল ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে। স্বর্ণলতাও আর কথা বাড়ালেন না। চুপচাপ রুটি ছিঁড়ে দিয়ে স্বামী সেবায় মগ্ন হলেন।
_______
সন্ধ্যা বেলা। একটু একটু করে অন্ধকারে ডুবছে শহরটা। জনপ্রাণী ও যানজটের কোলাহল ও ব্যস্ততাও কিছুটা কমে এসেছে। সঞ্জয়ান অশান্ত মনে শান্ত দেহটা নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। উদাস দৃষ্টি শূণ্যে। এলোমেলো ভাবনায় শুধু অরুণিমাকেই মনে পড়ছে। তাকে নিয়ে তৈরি হওয়া প্রতিটি মুহূর্ত সুখের স্বপ্নের মতো আনন্দ দিচ্ছে, শিউরে তুলছে। তার এই বিভোর সময়টাতে আগমন ঘটল অসীউল্লাহর। স্বর্ণলতা হাসিমুখে বসার রুমটায় বসালেন। আপ্যায়নের ফাঁকেই বাবা ও ছেলেকে ডাক পাঠালেন। মুনসুর সাখাওয়াত সামনের সোফাটায় বসতে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। সালাম প্রদর্শন করলেন। স্বর্ণলতা চা-বিস্কুট, ফলের জুস এনে রাখলেন সামনে। তিনি সেগুলো ছুঁয়েও দেখলেন না। হাত জোর করে ভার স্বরে ক্ষমা চাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। মুনসুর সাখাওয়াত চ’টে গেলেন বোধ হয়। তি’রি’ক্ষি মেজাজে বললেন,
” ক্ষমা! কিসের ক্ষমা? আপনি জানেন, আমরা কতদূর থেকে এসেছি? কী পরিমাণে ব্যস্ত মানুষ? পুরো গ্রামের মানুষের অন্ন যোগান দিই আমরা। তাদের কাছে আমরা কতটা সম্মানিত? আমার ছেলে বিয়ে করবে। নতুন বউ আসবে ছায়ানীড়ে! এই সংবাদটা এতক্ষণে পুরো গ্রামে ছড়িয়ে গেছে। সকলে অপেক্ষা করে আছে। এই অবস্থায় গিয়ে যদি বলি, বিয়ে ভেঙে গেছে। তাহলে কেমন শোনাবে? আমার উঁচু মাথাটা কোথায় গিয়ে পড়বে বুঝতে পারছেন? ”
অসীউল্লাহ খুব ঘা’ব’ড়ে গেছেন। ঘাম ঝরছে কানের দু’পাশ দিয়ে। স্বর্ণলতা স্বামীর কণ্ঠ শুনেই বুঝে গেছিলেন, তিনি নিয়ন্ত্রণ হারাবেন। তাই পাশ থেকে এক হাতের বাহু চেপে ধরে থামাতে চেয়েছিলেন। সফল হোননি। মুনসুর সাখাওয়াত কথায় লাগাম টানেননি। তিনি হতাশ মনে তাকালেন অপমানে দগ্ধ হওয়া মানুষটির দিকে। অসীউল্লাহ কাতর দৃষ্টিতে তাকান সঞ্জয়ানের দিকে। সে মা-বাবার পাশে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। যে মানুষটা এতদিন নিশ্চিন্তের শক্ত খুঁটি ছিল, সেই মানুষটায় আজ দুশ্চিন্তা ও অপমানের ধারাল তীরে রূপ নিয়েছে। তিনি দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলেন সামনের মানুষটির দিকে। ভীষণ অসহায় সুরে বললেন,
” আমি অনেক চেষ্টা করেছি, মেয়েটাকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে। কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। যদি বলেন, আমি গ্রামবাসীর সামনে ক্ষমা চাইব, নিজেদের…”
তার কথার মধ্যেই মুনসুর সাখাওয়াত বললেন,
” এক মেয়ে রাজি হচ্ছে না তো অন্য মেয়েকে রাজি করান। তার নিশ্চয় প্রেমিক-ট্রেমিক নেই। ”
” অন্য মেয়ে? কার কথা বলছেন? ”
অসীউল্লাহর মুখের ভাব অবোধ, বুদ্ধিশূণ্য। মুনসুর সাখাওয়াত সঙ্গে সঙ্গেই স্পষ্ট স্বরে বললেন,
” শূভ্রা। আমাদের ওকে খুব পছন্দ হয়েছে। আমি চাই, শূভ্রাই আমার..”
বাবাকে কথাটা সম্পূর্ণ করার সুযোগ দিল না সঞ্জয়ান। তাড়া স্বরে বললেন,
” চাচা, বাসায় যাবেন তো? আসুন, এগিয়ে দিয়ে আসি। ”
সে আর এক দণ্ডও দাঁড়াল না সেখানে। সোজা এগিয়ে চলল মূল দরজার দিকে। সিটকানি খুলে পেছনে তাকিয়ে দেখল, অসীউল্লাহ দাঁড়িয়ে পড়লেও দ্বিধায় আটকে গেছেন। সঞ্জয়ান দূর থেকেই ডাকল,
” চাচা? ”
এই ডাককে উপেক্ষা তিনি করতে পারলেন না। দ্রুত পদে এগিয়ে এলেন। অনুসরণ করে চললেন সঞ্জয়ানকে।
________
অসীউল্লাহকে সিএনজিতে তুলে দিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে সঞ্জয়ান। মায়ের দেখা পেতেই বলল,
” বাবার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে, মা। এখান থেকে নিয়ে যাও। ”
স্বর্ণলতা শুরুতে ছেলের কথার অর্থটাকে ধরতে পারলেন না। সরলমনে জিজ্ঞেস করলেন,
” হঠাৎ এমন বলছিস কেন, কী হয়েছে? ”
” এখনও হয়নি, সে এখানে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে। মা, আমি বাবাকে ভয় পাচ্ছি। তুমি দয়া করে তাকে নিয়ে এখান থেকে যাও। নাহয় আমিই কোথাও চলে যাব। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে তবেই যাব। ”
স্বর্ণলতা ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা শুরু করলেন। জোর করে সোফায় নিয়ে বসালেন। ঠাণ্ডা পানি খাওয়ানোর সঙ্গে একটু মাথায়ও দিলেন। সঞ্জয়ানের মাথা ঠাণ্ডা হওয়ার বদলে আরও গ’র’ম হয়ে যাচ্ছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমার সাথে শূভ্রা? কখনও না। কোনোভাবেই না। ওর ব্যবহার কতটা খারাপ জানো তুমি? জানো না। ব্যবহার বাদ দিলাম। বয়স? আমার থেকে অনেক ছোট। সবে ইন্টারে পড়ছে। ”
সঞ্জয়ান বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। অস্থির চিত্তে ডানে-বায়ে ঘুরে-ফিরে হেঁটে বলল,
” সব থেকে বড় কথা, অরুণিমা ব্যতীত অন্য কাউকে আমার বউ হিসেবে কল্পনাও করতে পারছি না। ”
স্বর্ণলতা বসে ছিলেন। সঞ্জয়ান তার পায়ের কাছে বসল। কোলে মাথা ফেলে করুণ স্বরে বলল,
” আমাকে এই অবস্থা থেকে বের করো, মা। আমি আর লড়তে পারছি না। একটা সমাধান বের করে দেও। ”
মা মৃদু হেসে ছেলের মাথায় হাত রাখলেন। কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে বললেন,
” অসীউল্লাহ তাহলে তোর বন্ধু নয়? ”
” না। ”
” যে মেয়েটিকে বাচ্চার সাথে তুলনা করেছিলি সেই মেয়েটি এই অরুণিমা? ”
সঞ্জয়ান মাথা তুলল। স্মরণ হলো, অরুণিমাকে প্রথম দেখার সময়টা। যেটা মায়ের সাথে ভাগ করেছিল। স্বর্ণলতা বলে চললেন,
” যেই বাবুটার সাথে তুলনা করেছিলি সেই বাবুটার চেহারা মনে পড়ে তোর? ”
সে অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর করল,
” হ্যাঁ। ”
” ও বেচে নেই। ”
সঞ্জয়ানের বুকে বুঝি তীর বিঁধল। মুখের রঙ ও ভাবটায় বদল এসেছে। জিজ্ঞেস করল,
” কবে, কিভাবে? শুনিনি তো। ”
” যেদিন জন্মেছিল সেদিনই। তুই কষ্ট পাবি তাই বলিনি। ”
সঞ্জয়ানের খুব মনখারাপ হলো। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। মায়ের কাছ থেকে সরে যেতে চাইলে তিনি বললেন,
” ওর বাবা মনে করে, ওর মৃ’ত্যু’র জন্য তুই দায়ী। ”
” আমি? ”
” হ্যাঁ, শেষ বার তুই কোলে নিয়েছিলি। খুব কান্না করছিল, মনে আছে? ”
” আমি কোলে নিলাম বলে মরে গেছে? এটা কোনো যুক্তি হলো, মা? ”
” না, হয়নি। কিন্তু সে বিশ্বাস করেছে। আর সব বিশ্বাসের যুক্তি হয় না, বাবা। ”
সঞ্জয়ান আবারও চুপ হয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত পর বলল,
” যেটা এত বছরেও বলোনি, সেটা আজ কেন বললে, মা? তুমি জানো, আমার মন ভালো নেই। ”
” মনে হলো, এটা বললে তোর মন ভালো হবে। ”
” এটা মন ভালো হওয়ার মতো কোনো কথা? ”
স্বর্ণলতা ছেলের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালেন। গালে হাত রেখে বললেন,
” আমি অরুণিমার মধ্যে ঐ বাচ্চাটার ছায়া দেখতে পাচ্ছি। বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার জন্য যেমন জেদ করেছিলি, ঠিক তেমন জেদটাই অরুণিমাকে পাওয়ার জন্য করছিস। ”
” তুমি কী বলতে চাচ্ছ? অরুণিমাকে বিয়ে করলে ঐ বাচ্চাটার মতো ম’রে যাবে? ”
” না। কারও মৃত্যুর সম্পর্কে পূর্বে অবগত হওয়া যায় না। আমি অনুমান করছি, ওর সুখ মরে যাবে। বাবার অনুগত মেয়েটা নিজের পছন্দের কথা জানিয়েছে, তাকে বিয়ে করার জন্য যু’দ্ধ করছে। সঞ্জু, তুই হয়তো ধারণাও করতে পারছিস না, ও মাইমূনকে কতটা ভালোবাসে! এই ভালোবাসাটা পূর্ণতা না পেলে মেয়েটা কখনও সুখী হবে না। তোকে বাঁধা দিব না, তোর বাবাকেও হয়তো সামলে নিব। কিন্তু একটা কথা জানিয়ে দিই, ঐ বাচ্চাটার বাবার মতো অন্য কেউ যেন এই বিশ্বাসটা না করে যে, তোর জন্য অরুণিমার সুখ ম’রে গেছে। ”
সঞ্জয়ান কাঠের মুর্তির মতো নিস্তব্ধ হয়ে গেল। মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় ফোন বেজে ওঠল। অপরিচিত নাম্বার। ধরতেই শুনল,
” আমি জানতাম আপনি একটা খা’রা’প মানুষ। তাই বলে এত খা’রাপ! ”
সে কণ্ঠ চিনে ফেলেছে। বিরক্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
” শূভ্রা না? আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছ? ”
শূভ্রা এই প্রশ্ন কানেই তুলল না। নিজের মতো বলে চলল,
” আমি আপনাকে বিয়ে করব না। আমাদের বাড়ির আশপাশেও যদি আপনাকে দেখেছি তাহলে সাজনার কচি ডাল দিয়ে আপনাকে পে’টা’ব। বুড়ো বয়সে বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করা? পি’টি’য়ে বিয়ের ভূত তাড়াব। ”
সঞ্জয়ান কল কেটে দিল। ফোন পকেটে ভরে দরজার দিকে এগুলে মা জিজ্ঞেস করলেন,
” কোথায় যাচ্ছিস? ”
” বউ আনতে। ”
চলবে
আঙুলে আঙুল
পর্ব (২৪)
বাবা বাসা থেকে বেরুলে অরুণিমাও বেরুনোর সুযোগ পেল। সুযোগটাকে হাত ছাড়া করল না একদমই। তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করল মাইমূনের সাথে। জরুরি দেখাটা হলো সেই ইটের দেয়ালে ঘেরা একতলা বাড়ির সামনে। যেখানে মাইমূন ও রতনকে বাঁধা অবস্থায় পেয়েছিল। অরুণিমা ফটকহীন স্থানটার মাঝে দাঁড়িয়ে ভেতরে চাহনি ফেলল। কোথাও কেউ নেই। আগের বার যে ছেলেগুলোকে দেখেছিল তাদেরও নজরে পড়ছে না। সে ভেতরে সন্ধিৎসু দৃষ্টি রেখে সুধাল,
” আমাকে এখানে আনলে যে? ”
মাইমূন তার থেকে এক কদম পিছিয়ে ছিল। এবার পাশে এসে দাঁড়াল। মৃদু হেসে বলল,
” ভ’য় করছে? ”
উত্তরের পরিবর্তে প্রশ্ন পেয়ে অরুণিমা পাশ ফিরে তাকাল। ইতস্তত করে বলল,
” না, কিন্তু জায়গাটা এত শান্ত ও নীরব কেন? আশেপাশে বাড়িঘর নেই? ”
” না। এই গলির এটাই শেষ বাড়ি। ”
অরুণিমার বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠল। তার পাশে উপস্থিত একমাত্র পুরুষটাকে সে চেনে। পরিচয় অনেক দিনের। দেখা-সাক্ষাৎও হয়েছে কয়েক বার। এরপরও বিশ্বাসের ঢালটা তেমন মজবুত নয়। কচি গাছের মতো নরম, নয়নীয়। ভাঙতে চাইলে ভাঙবে না কিন্তু সহজেই বেঁকে যাবে।
” আমরা পরিচিত কারও নামে দুর্নাম শুনলে প্রথমে বিশ্বাস করি না। প্রতিবাদ করি কিংবা নীরব থাকি। সেই সাথে অজান্তেই মনের মাটিতে সন্দেহের একটা বীজ রোপন করে ফেলি। আমার মনে হয়, তুমিও বীজ রোপন করেছ। যার কুঁড়ি তোমার চোখদুটোতে আমি দেখতে পাচ্ছি। ”
অরুণিমা লজ্জিত হয়ে বলল,
” ভুল ভাবছ। ”
” না, ঠিক ভাবছি। ভালোবাসা, আমাকে নিয়ে তোমার মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ”
মাইমূনের কণ্ঠে দৃঢ়তা, প্রত্যয়। অরুণিমা কুণ্ঠাবোধ করছে। দৃষ্টি উঁচু করতে পারছে না। নিজের কাণ্ডে, ভাবে নিজেরই রাগ হচ্ছে। মাইমূন বলল,
” চিন্তা করো না, এই সন্দেহের বীজটা খুব শীঘ্রই উপরে ফেলব। মাটিটুকু নিজের দখলে নিয়ে বিশ্বাসের চারা রোপন করব। যার কখনও মৃত্যু হবে না। চির অমর হবে। ”
অরুণিমা হাসার চেষ্টা করলে সে সুধাল,
” সামনে এগুবে নাকি ফিরে যাবে? আমি দুটোতেই তোমার সাথে আছি। ”
সে সামনে এগুল। যার জন্য পরিবারের বিপক্ষে গিয়েছে, বাবার অবাধ্য হয়েছে, মাথা নত করিয়েছে তার উপর বিশ্বাস অর্জন করা অনিবার্য। এই পথে তার পিছে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। অরুণিমা সমুখে অগ্রসর হতে হতে খেয়াল করল, ফাঁকা উঠোনটা আজ পরিষ্কার। ম’রা পাতার স্তুপ নেই কোথাও। ঝাড়ুর ছাপ স্পষ্ট। প্রবেশ দ্বার খোলা থাকা সত্ত্বেও সে মাইমূনের দিকে তাকাল। সে চোখের পলক ফেলে বলল,
” এই বাড়ির দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা থাকবে। প্রবেশের জন্য অনুমতির প্রয়োজন নেই। ”
অরুণিমা ভেতরে ঢুকল। দূর থেকে দৃষ্টি গিয়ে পড়ল রান্নাঘরটায়। বেশ পরিচ্ছন্ন। নতুন ময়লার ঝুড়ি। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনার ছিটে-ফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। সে বিস্ময়ে অভিভূত হলো। তার আগমনের সময় কি মানুষটার পূর্বেই অবগত ছিল? এ সকল উদ্যোগ তার জন্যে? কখন গ্রহণ করেছে?
” এ বাড়িটা আমার বাবার। তিনি চলে যাওয়ার পর জিনিসপত্র যেমন নাড়া-চাড়া করিনি তেমন গোছগাছও করিনি। এখানে আমরা শুধু ঘুমাতে আসতাম। ”
” বাবার মুখে শুনেছিলাম, বাড়িওয়ালা চাচাদের দুটো বাড়ি। কিন্তু দুটোই যে একই এলাকায়, এটা জানতাম না। ”
অরুণিমার ভ’য়’কাতুরে মনটা এখন একটু সাহসী হয়েছে। সে ধীরে ধীরে হাঁটছে আর বাড়িটিকে নতুনভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যে রুমটায় মাইমূনকে পেয়েছিল, সেই রুমটায় প্রবেশ করতে শুনতে পেল,
” আমার যে বাবাকে তুমি চিনো, এই বাড়িটা তার নয়। ”
সে থমকে যেতে বাধ্য হলো। ভ্রদ্বয় কুঁচকে চেয়ে থেকে সুধাল,
” মানে কী? আপনার কতগুলো বাবা? ”
প্রশ্নটা এমন বিদ্রুপ রসাত্মক শোনাল যে, মাইমূনের ঠোঁটে হাসি জড়ো হলো। মৃদু হেসে মজার ছলে বলল,
” আমার অনেকগুলো বাবা না থাকলেও দুটো আছে। এই বাড়িটি যার তিনি আমার জন্মদাতা। ”
অরুণিমা দ্বিধাগ্রস্থ। স্মরণ করে দিল,
” আর বাড়িওয়ালা চাচা? তুমি বলেছিলে, উনি তোমার বাবা। ”
” হ্যাঁ, উনিও আমার বাবা। কিন্তু জন্মদাতা নন। বৈবাহিক সূত্রে আমার মায়ের স্বামী হওয়ার কারণে উনিও আমার বাবা। ”
অপ্রত্যাশিত তথ্য পেয়ে অরুণিমা হতভম্ব। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” তোমার মায়ের দুই বিয়ে হয়েছে? তুমি প্রথম স্বামীর ছেলে? ”
” না। ”
” তাহলে? ”
মাইমূন নতুন চাদর বিছানো বিছানার একধারে বসল। অরুণিমাকেও বসার জন্য ইশারা করল। সে বসল না। তার চিন্তা-ভাবনায় জিলাপির মতো প্যাচ লেগে গেছে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন উদ্ভুত হচ্ছে কিন্তু উত্তর মিলছে না। বুদ্ধিশূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মাইমূন তার মনের অবস্থা বুঝতে পারল। গম্ভীরমুখে বলল,
” এই সত্যটা বলার জন্যই তোমাকে এখানে এনেছি। ”
একটু চুপ থেকে আবারও বলল,
” সেই রাতে মাতাল অবস্থায় যাকে মে’রে’ছিলাম তিনিই আমার জন্মদাতা। এই বাড়ির প্রকৃত মালিক। ”
” বাবাকে মে’রে’ছ! ”
অরুণিমার কণ্ঠে অবিশ্বাস, আ’ত’ঙ্ক। মাইমূন মাথা নেড়ে বলল,
” হ্যাঁ। আমি তাকে ঘৃ’ণা করি। যদি খু’ন করা পাপ না হতো, অন্যায় না হতো তাহলে আমি এই মানুষটাকে আমি এতদিনে পরকালে পাঠিয়ে দিতাম। ”
” এত ঘৃ’ণা করো! কেন? ”
মাইমূন গভীর নিশ্বাস টানল। তারপরে শান্ত ও নিরুত্তেজ স্বরে বলতে লাগল,
” দিদারুল করিম মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। পারিবারিকভাবেই আমার মাকে বিয়ে করে আনেন। তখন তিনি একটা কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে চাকরি করছিলেন। হঠাৎ তার বাবা মানে আমার দাদা মারা যান। পরিবারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে বাবার উপর। তার স্বল্প বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। পড়ালেখা বেশিদূর করা হয়নি। ভালো চাকরি যোগাড় করতে পারছেন না। এই সংকটময় অবস্থায় বাবার একমাত্র বন্ধু শহীদুল পরামর্শ দিলেন, বাংলাদেশ ছাড়ার। চাকরি ও ভিসার ব্যবস্থা করে দিবেন তিনি শুধু টাকার ব্যবস্থা করতে হবে বাবাকে। আমার দাদি এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। গ্রামের জমি-জমা বিক্রি করে বাবাকে পাঠিয়ে দিলেন দুবাই। তখন বাবা ও মায়ের বিবাহের বয়স দুই বছর। এখনকার মতো মোবাইলের সুব্যবস্থাও ছিল না। মায়ের সাথে বাবার কথা হতো চিঠির মাধ্যমে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আচমকা সৃষ্টি হওয়া এই দূরত্বটাকেই অ’স্ত্র হিসেবে ব্যবহার করল বাবার বন্ধু। বাবার আর কোনো ভাই ছিল না, দুই বোন ছিল। দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছিল। শ্বশুরবাড়ি থাকত। পুরুষহীন এই পরিবারটিতে বিনা অনুমতিতে যাওয়া-আসার সুযোগ পেয়েছিল একমাত্র শহীদুল। এই সুযোগের যথার্থ ব্যবহার করলেন তিনি। দাদির চোখের আড়ালে অবৈধ সম্পর্ক জড়িয়ে ফেললেন মায়ের সাথে। বাবা বিদেশ যাওয়ার পরপরই দাদি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তিন বছর কাটানোর পর তিনি মারা যান। বাবাকে দেশে আসতে হয়। সেই সময় আমি মায়ের পেটে আসি। সবাই ভাবে আমার বাবা দিদারুল করিম। এটাই ভাবা স্বাভাবিক। কিন্তু আমার মা জানত, আমার বাবা দিদারুল করিম নয় শহীদুল। ”
মাইমূন এই অবধি এসে থামল। অরুণিমা বলল,
” তার মানে দোষী তোমার মাও। তিনি প্রশ্রয় না দিলে হয়তো…”
বলতে বলতে সে থেমে গেল। মাথা ঝাকি দিয়ে বলল,
” এসব কথা আমাকে শোনাচ্ছ কেন? আমি আগ্রহ পাচ্ছি না। বাসায় যাব। ”
” অর্ধেক শুনেই চলে যাবে? ”
” আমার ইচ্ছে তো তেমনই। এটা রুচিসম্মত আলোচনা নয়। এসব আমাকে না বললেই ভালো হতো। তুমি তোমার মাকে নিয়ে কথা বলছ। মায়ের সম্পর্কে খারাপ কথা শুনতে প্রস্তুত নই আমি। ”
মাইমূন বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ল। অরুণিমার কাছাকাছি এসে বলল,
” আমাকে যে বলতেই হবে। ”
” কেন? ”
” বলার মতো কাউকে পেয়েছি যে তাই। পনেরো বছর ধরে অবৈধ আমিটাকে বন্দি করে রেখেছি। এবার একটু মুক্ত করতে চাই। ”
অরুণিমা শুনতে প্রস্তুত নয়। সে কাঠ স্বরে বলল,
” আমি যেটা শুনতে এসেছি সেটা বলার হলে বলো। নাহয় আমি যাচ্ছি। ”
” সেটাই তো বলছি। তুমি হয়তো ভুলে গেছ, শুরুতে কী বলেছিলাম। আচ্ছা, আবার স্মরণ করে দিচ্ছি। মদ খেয়ে যাকে মে’রে’ছিলাম সে আমার জন্মদাতা ছিল। বাবার একমাত্র বন্ধু শহীদুল। ”
অরুণিমার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বাকি অর্ধেক কাহিনি শুনতে হলো। যার মূল বাক্যগুলো এমন ছিল, মায়ের মৃ’ত্যু’র জন্য দিদারুল দেশে আসলেও আর ফিরে যায়নি। কারণ, তার স্ত্রী একা এবং অন্ত:সত্তা। এই অবস্থায় তাকে রেখে যাওয়ার মতো জায়গা ছিল না। সে থেকে যাওয়ার ফলে শহীদুল নিজের ইচ্ছেমতো যাওয়া-আসা করতে পারছিল না। মাইমূনের মাও এড়িয়ে যাচ্ছিল। একটা সময় শহীদুল সেই বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সবাই যখন তাকে ভুলে যায় ঠিক তখনই আবির্ভাব ঘটে নতুন করে। তখন মাইমূনের বয়স ছয় বছর। স্কুলে পড়ছে। দিদারুল করিম দুবাই থেকে জমানো টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে। লাভবানও হচ্ছেন। ভাড়া বাসায় থেকে জমি নিয়েছেন। বাড়ির কাজ ধরবেন। এই সুখ ও সফলতাকে মেনে নিতে পারেনি শহীদুল। মাইমূনের মায়ের কাছে বিশাল অংকের টাকা দাবি করে। না দিলে তার অবৈধ সম্পর্ক ও সন্তানের কথা বলে দিবে সকলকে। সে বাধ্য হয়ে টাকা দিতে থাকে। এক বার নয়, বার বার। এই টাকার বিনিময়েও সত্যটা লুকানো সম্ভব হয়নি। দিদারুল করিমকে ঠিকই সত্যিটা বলে দেন। শহীদুল জানতেন, তিনি তার স্ত্রীকে ভীষণ ভালোবাসতেন। এই অন্যায়টা সহজেই ক্ষমা করে দিবেন। তেমনটা হয়েছিলও। সেজন্য অন্য পরিকল্পনা করে। তার কাছে টাকা চায় ও জানায়, টাকা না দিলে তার স্ত্রীকে বলে দিবেন, মাইমূনের বাবা জেনে গেছে সে অবৈধ সম্পর্কে ছিল। দিদারুল করিম তার ফাঁদে পড়ে যায়। আশঙ্কা করেন, তার স্ত্রী আত্মহত্যা করবেন। স্ত্রীকে বাঁচাতে শহীদুলকে টাকা দিতে রাজি হয়ে যান। গল্পটা এখানে শেষ হতে পারত, হয়নি। শহীদুল বিনা পরিশ্রমে দুই দিক থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা পেয়ে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। আরও বেশি লোভী হয়ে পড়ে। মাইমূনের বয়স যখন বারো বছর তখন একা নিরালায় নিয়ে গিয়ে আরও একটি ফাঁদ পাতে। তার মায়ের অবৈধ সন্তান এই কথাটি জানিয়ে দেয়। কিন্তু নিজের পরিচয় গোপন রাখে। তার মাধ্যমেই দেখতে পায়, মাইমূনের মা ও বাবা গোপনে কাউকে টাকা দেয়। সেই গোপন মানুষটিই তার জন্মদাতা। তারপরে তার জীবন বদলে যায়। শহীদুলের সাথে বন্ধুর মতো মিশতে থাকে। তার প্ররোচনায় পড়ে নেশায় আসক্ত হয়, পরিবার থেকে দূরে ছিটকে পড়ে। আশ্রয় নেয় এই বাড়িতে। মাইমূনের বাবা-মা তাকে দূরে করেনি। সে নিজেই দূরে সরে এসেছে। মাকে ভালোবাসতে পারেনি, তার অপরাধের কারণে। বাবাকে ভালোবাসতে পারেনি, জন্মদাতা নয় তাই।
এই পর্যন্ত জানার পর অরুণিমা জিজ্ঞেস করেছিল, শহীদুলই যে তার বাবা, এই কথাটি কবে জেনেছে। মাইমূন বলেছিল, ‘ যেদিন তোমার বাবা আমাকে পে’টা’তে দেখেছে সেদিনই। ‘
____________
অরুণিমা বাসায় ফিরল অসহ্য রকম মাথা ব্যথা নিয়ে। চোখ, মুখ ভীষণ ক্লান্ত ও অসুস্থভাব। সে চোখ বন্ধ করে একহাতে কপালের একপাশ মর্দন করতে করতে নিজের রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছিল সহসা কানে কিছু শব্দ পৌঁছাল। চোখ মেলতে অবাক হলো। বসার রুমটা মানুষে ভর্তি। সবাইকে সে চেনে। শুধু সঞ্জয়ান নয়, তার বাবা-মাও আছে এখানে। নতুন করে এদেরকে নিজের বাসায় দেখে তার বুক কেঁ’পে ওঠল। পুরোনো ভ’য়টা দ্বিগুণ যন্ত্রণার রূপে তাজা হয়েছে। বাবা কি এই মানুষটার সাথে তাকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বে? অরুণিমা দ্বিতীয় বারের মতো যু্দ্ধে নামার জন্য প্রস্তুত নয়। জোর, সাহস কোনোটাই নেই। তার মাথার ভেতরটা জট পেকে আছে। সামান্য ব্যাপার নিয়ে ভাবতেও আলসেমি পাচ্ছে। এই অবস্থায় এত বড় দুর্যোগ সামাল দিবে কী করে? সে ভীষণ অসহায় অনুভব করছে। মাকে রান্নাঘর থেকে বেরুতে দেখলে, সেদিকে ছুটতে চাইল। তার আগেই শূভ্রা হাত ধরে ফেলল। সকলের অগোচরে রুমের ভেতর টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরল। কান্নায় ভেঙে পড়ে বলল,
” আমি বিয়ে করব না, আপু। বাবাকে বলো, এই বিয়ে ভেঙে দিতে। ”
অরুণিমা বাকরুদ্ধ। বিস্ফারিত নেত্রদ্বয়ে আবিষ্কার করল, শূভ্রার শরীরে লাল বেনারশী ও স্বর্নের গয়না।
চলবে