#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪১
_________________
রাত আটটা। লকাপের ভিতরে উল্টোদিকে মুখ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি ওরোফে আহিল মাহামুদ। তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো প্রথম দিকে আচ করতে না পারলেও এখন যেন একটু হলেও আচ করতে পারছে। কেউ তো আসবে এখন যে আহিলের সাথে এমনটা করেছে। এ তো শুধু একজনই করতে পারে সে হলো ভাবার আগেই চিরচেনা এক কন্ঠ কানে ভেসে আসলো আহিলের কানে কেউ ডাকলো তাকে। বললো,
‘ আহিল।’
আহিল ঘুরে তাকালো তার সামনেই শার্ট প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে অপূর্ব। আজ বহুবছর পর সেই পুরনো দিনের বন্ধু রূপের শত্রুটাকে দেখতে পাচ্ছে আহিল। আহিল এগিয়ে আসলো কিছুটা সামনে। অপূর্বও এগিয়ে আসতে লাগলো আহিলের দিকে। মুখোমুখি হলো দুজন। শুধু মাঝে রইলো লকাপের গ্রিল। সবার আগে অপূর্বই বললো,
‘ আচ্ছা এই মুহূর্তে তোকে ঠিক কোন নামে ডাকলে তুই খুশি হবি?’
আহিল কিছু বললো না চুপ করে রইলো। যা দেখে অপূর্ব বলতে লাগলো,
‘ আহিল মাহামুদ, আব্রাহাম ইফতিয়াত আসফি নাকি শাহরিয়ার আদনান ওরোফে SA.
আহিল যেন চমকালো চরমভাবে চমকালো। অপূর্ব তার এই লুকিয়ে রাখা পরিচয়টা সম্পর্কেও জানে। আহিলের চোখ মুখ দেখে হাল্কা হাসলো অপূর্ব। বললো,
‘ কিরে অবাক হলি নিশ্চয়ই ভাবছিস তো যে আমি কি করে জানলাম আশকোনার ছাত্র দলীয় নেতার মৃত ছেলে সম্পর্কে। আমার ভাবতেও অবাক লাগে সামান্য একটু কনফিউশানে রাখার জন্য তুই এত খেলা খেল্লি। একটা জীবিত ছেলেকে মৃত দেখালি। শাহরিয়া আদনানের মতো সেইম একজন মৃত ছেলেকে রেখে গোল খাওয়াতে চাইলি। তা আসল শাহরিয়ার আদনান আমেরিকায় থাকে তো। তুই তো নিশ্চয়ই জানিস তা।’
আহিল চরমভাবে অবাক হলো। এতকিছু অপূর্ব কি করে জানে। হুম শাহরিয়ার আদনান মরে নি। আসল কথা যেই মুহুর্তে শাহরিয়ার আদনানের খবর দেখানো হয়েছিল সেই মুহূর্তে আসল শাহরিয়ার আদনান ছিল আমেরিকায়। ওখানেই পড়াশোনা করে সে। আর আদনানের পুরো বিষয়টাই ছিল সাজানো নাটক। শুধুমাত্র অপূর্বকে কনফিউশান আর এস এর বিষয়টা ধাপা চাপা দেওয়ার জন্য ওসব করা হয়েছিল।’
আহিল অনেকক্ষন চুপ থেকে হাসলো। চোখের চশমাটা হাল্কা ঠিক করে বললো,
‘ তার মানে তুই সব জানিস?’
উত্তরে ডোন্ট কেয়ার ভাবে বললো অপূর্ব,
‘ হুম সেই শুরু থেকে। শাহরিয়ার আদনানকে আমি চিনি না। এটা হয়তো তুই ভালো মতোই জানতি কিন্তু তুই এটা বুঝিস নি আমার দলে আমি একা নই আমার আরো অনেক লোক আছে। যার মৃত্যু ঘটেছিল তার মুখটা থেতলে গেছিল কিন্তু হাত ওটা তো ঠিক ছিল। আদনানের একটা ছবি দেখেছিলাম আমি যে ছবিতে ওর ডান হাতে একটা তিল ছিল কিন্তু যার মৃত্যু হয়েছিল তার ডান হাতে কোনো তিল ছিল না।’
আহিল বিস্ময়ের চোখে তাকালো। আর অপূর্ব হাসলো বললো,
‘ এই জিনিসটা খেয়াল না করা ছিল তোর প্রথম ভুল। আমার ভালোবাসার দিকে নজর দেওয়াটা ছিল তোর সেকেন্ড ভুল, আর তোর থার্ড নাম্বার ভুল ছিল আমারই ভালোবাসার হাতে আমারই মৃত্যু কামনা করা। আচ্ছা তুই ভাবলি কি করে অপূর্ব যাকে ভালোবাসে তার প্রতি অপূর্ব কোনো নজর থাকে না। প্রিয়তার ফেসবুক একাউন্ট, তোর সাথে ওর চ্যাট সব কিছুই দেখেছি আমি। এত সহজ অপূর্বকে মারা। তুই চাইলেও আমার কিছু করতে পারবি না আহিল। আমার শুধু দুঃখ একটাই তুই আমায় বুঝলি না আজও পুরনো ঘটনাকে নিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার বাসনায় বসে আছিস। রুহিকে আমি,
অপূর্ব পুরো কথা শেষ করার আগেই আহিল যেন রেগে গেল। চোখ মুখ লাল বর্ন ধারন করলো তার। আহিল অপূর্বের দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে বললো,
‘ চুপ কর আমি তোর মুখে রুহির নাম শুনতে চাই না।’
অপূর্ব থেমে যায়। খানিকটা অসহায়ত্ব কন্ঠ নিয়ে বলে,
‘ তুই আজও আমায় বিশ্বাস করছিস না আহিল।’
আহিল জবাব দেয় না। চুপ করে থাকে। রাগ হচ্ছে তার ভীষণ রাগ।’
‘ তুই কেন বুঝতে চাস না আমার রুহির মৃত্যুর পিছনে কোনো হাত নেই।’
‘ থেমে যা অপূর্ব আর কত মিথ্যে বলবি।’
‘ আমি মিথ্যা বলছি না সেদিনও বলি নি আর আজও বলছি না।’
আহিল নিজেকে সামলালো খুব শান্ত ভাবে বলতে লাগলো,
‘ আচ্ছা ঠিক আছে যা মানলাম তুই কিছু করিস নি তাহলে রুহি কেন তোর নাম লিখে গেল। ওর কি তোর সাথে শত্রুতা ছিল।’
অপূর্ব জবাব দেয় না।’
‘ কি হলো এখন চুপ কেন এই প্রশ্নের উত্তর আছে তোর কাছে। আর তুই তো বলেছিলি এটা নাকি তোর পিছনে করা একটা ষড়যন্ত্র তা এতদিনে নিশ্চয়ই সেই ষড়যন্ত্র করা ব্যক্তিটির খোঁজ পেয়ে গেছিস৷ পেয়ে গেলে তার নাম বল আমায়, আমি তাকে নিজ হাতে শাস্তি দিয়ে তোর সাথে আবার আগের মতো হয়ে যাই।’
অপূর্ব এবারও চুপ থাকে। যা দেখে আহিল হাসে। হাসতে হাসতে বলে,
‘ কি হলো সত্যিটা বের হলো তো। তুই যদি সত্যি কিছু না করতি তাহলে এভাবে চুপ থাকতি না। একটা কথা জেনে রাখ আমি তোকে ছাড়বো না। তোর জন্য আমি যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার থেকে দিগুণ কষ্ট তোকে ফেরত দিবো। কি ভেবেছিস এই চার দেয়ালে বন্দী রাখলেই আহিল তোকে ছেড়ে দিবে। একদমই দিবে না। এখন যা, তোকে আর সহ্য হচ্ছে না। জেল থেকে বের হলে দেখা হবে।’
অপূর্ব আহত হলো আহিলের কথায়। বিনিময়ে আর কিছু না বলেই চলে যেতে লাগলো।’
আহিল শুধু তাকিয়ে রইলো অপূর্বের যাওয়ার পানে খানিকটা শব্দ করে বললো,
‘ বিশ্বাসঘাতক!’
অপূর্ব শুনলো, তবে কিছু বললো না চলে গেল নিজের মতো। হয়তো আহিলের জায়গায় সে থাকলেও এমনটাই করতো।’
___
গভীর রাত। ঘড়িতে এক টা ছাড়িয়েছে। আকাশটা অন্ধকারে টুইটুম্বর তেমন কোনো তারা নেই। বিষন্নতায় আঁটকে ধরেছে চারপাশ। হিমশীতল বাতাস বইছে, বার কয়েক মেঘও ডেকেছে হয়তো বৃষ্টি নামবে। অপূর্ব ছাঁদে বসে আছে। হাতে তার বিয়ারের বোতল। মাঝে মাঝে জীবনটাকে বড্ড অসহায় মনে হয়। মনে হয় সব থেকেও অনেক কিছু নেই। জীবন সুন্দর আবার সুন্দর না। কেমন যেন এলেমেলো।’
অপূর্ব বিয়ারের বোতলে চুমুক দিলো কিছু ভালো লাগছে না তার। প্রিয়তার সাথে একটু কথা বলতে পারলে বোধহয় ভালো লাগতো। অপূর্ব তার ফোনটা হাতে নিলো নিরদ্বিধায় কল করলো প্রিয়তার নাম্বারে মেয়েটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে খুলনা চলে গেছে। অপূর্ব কল করার তিন চার সেকেন্ডর ভিড়েই কল রিসিভ হলো প্রিয়তা কিছু বলার আগেই অপূর্ব বলে উঠল,
‘ জানো তো মেয়ে জীবন বড্ড খারাপ। আসলে সেদিন মরে গেলেই মেইবি ভালো হতো। তোমার আরো শক্ত পক্ত করে গুলিটা করা উচিত ছিল। নিশানাটাও ঠিক মতো করতে শিখলে না।’
প্রিয়তা কিছু বলে না চুপ করে থাকে। যা দেখে অপূর্ব বলে,
‘ কথা বলছো না কেন?’
প্রিয়তা মুখ খুললো। খুব স্বল্প স্বরে বললো,
‘ আমার কথা কি আপনি বিশ্বাস করবেন অপূর্ব?’
প্রিয়তার কথাটা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে বললো অপূর্ব,
‘ না। তুমি জীবনে বিশ্বাস করার মতো কিছু করেছো আমার সাথে।’
‘ অবিশ্বাস করার মতো আমি কতগুলো কাজ করেছি অপূর্ব।’
‘ তুমি আমার হৃদয়ে আঘাত করেছো এর পর আর কি করতে চাও। এটাই তো অনেক বড় কাজ।’
প্রিয়তা আর কিছু বলতে পারে না। নীরবতা চলে দুজনের মাঝে। নীরবতা ভেঙে অপূর্ব বলে,
‘ একদিন খোলা চুলে কালো শাড়ি পড়ে আমার সামনে আসবে মেয়ে তোমায় না খুব করে কালো শাড়িতে দেখতে মন চাইছে।’
‘ আমার কালো শাড়ি নেই।’
‘ দিলে তো আবার আঘাত করে। তুমি বড্ড খারাপ আর নিষ্ঠুর তোমার প্রতিটা কথায় আমার যন্ত্রণা লাগে।’
‘ আমি সত্যি বলেছি কালো শাড়ি নেই আমার।’
‘ থামো তো আর একটাও কথা বলবে না তুমি এত হৃদয়হীন কেন?’
‘ আমি হৃদয়হীন নই অপূর্ব।’
‘ মিথ্যে বলো না মিথ্যে একদম সহ্য হতে চায় না।’
‘ আপনি কি এই মাঝরাতে আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য ফোন করেছেন?’
‘ ঝগড়া নয় প্রেম করার জন্য ফোন করেছি।’
‘ এটাকে প্রেম বলে।’
‘ হুম বলে তো তুমি বুঝবে না।’
‘ আমি সত্যি আপনায় বুঝতে পারি না।’
‘ অপূর্ব কঠিন পদার্থ দিয়ে তৈরি এত সহজে তাকে বোঝা যায় নাকি।’
‘ তাহলে কঠিন থেকে সহজ হয়ে যান আমি ঠিক বুঝে নিবো।’
‘ তোমায় যেদিন মারবো যেদিন বুঝে নিও।’
‘ তাহলে আজ কেন বাচিঁয়ে রাখলেন?’
‘ এই যে মাঝরাতে তোমার সাথে কথা বলার জন্য।’
প্রিয়তা জবাব দিলো না। আবারও চললো দু’জনের মাঝে নীরবতা। অপূর্ব অনেকক্ষন পর বললো,
‘ শোনো আর কথা বলতে ভালো লাগছে না রাখি।’
বলেই ফোন কেটে দিলো অপূর্ব। বিয়ারে চুমুক দিলো আবার। এরই মাঝে আকাশ পথ বেয়ে বৃষ্টি নামলো অপূর্বকে ভিজিয়ে দিলো কঠিনভাবে। অপূর্ব আকাশ পথে তাকালো খুব শীতল শব্দে বললো,
‘ তুমি আমার বিষন্ন ভরা রাতের বৃষ্টিতে ভেজা শ্রাবণ মাস,
আমি তোমার ওই মায়াবী চোখে শুধুই দেখছি আমার সর্বনাশ। যে সর্বনাশের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।’
#চলবে….
#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪২
_________________
রাত তখন গভীর থেকে আরো গভীর হলো। বৃষ্টির তেজ বাড়লো আরো। অপূর্ব ভিজচ্ছে, বৃষ্টির পানিতে তার পুরো শরীর মাখোঁ মাখোঁ অবস্থা। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ভেজার ফলে তার চোখ দুটো লাল হয়ে আসছে। খানিকটা শীত শীতও করছে বোধহয় কিন্তু তাও অপূর্ব উঠছে না। চুপচাপ বৃষ্টিতে ভিজছে আর গভীর ভাবে কিছু ভাবছে। ভাবনাগুলো যেন অনেক জটিল তবে এই জটিল ভাবনাগুলোর উত্তর অপূর্বের জানা তাও সে ভাবছে।’
‘ গভীর রাতে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজচ্ছিস কেন ভাই? জ্বর আসবে তো।’
অয়নের কন্ঠ শোনা গেল। ছাতা হাতে মাত্রই ভাইয়ের জন্য ছাঁদে এসেছে সে। অয়নের ডাকটা বোধহয় অপূর্বের কানে গেল না। কারন তার কোনো হেলদোল দেখা যাচ্ছে না এমনকি ঘুরেও তাকালো না। অয়ন এবার আর একটু এগিয়ে গেল সামনে অপূর্বের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
‘ ভাই,
এবার অপূর্ব ঘুরে তাকালো। চোখ দুটো চরম লাল বর্ন ধারন করেছে তার। অপূর্বের চাহনি দেখে খানিকটা ঘাবড়ালো অয়ন। বললো,
‘ কি হয়েছে ভাই?’
অপূর্ব কয়েকবার পলক ফেললো। দৃঢ়তার স্বরে বললো,
‘ কি হবে কিছুই হয় নি। তুই এখানে কি করছিস ঘুমাস নি।’
‘ ঘুমিয়ে ছিলাম তো হঠাৎ বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙলো। খিদেও পেয়েছিল তখনই হেঁটে যাওয়ার সময় দেখলাম তুই রুমে নেই। কখন থেকে ভিজচ্ছিস এভাবে চোখ লাল হয়ে গেছে তো।’
অপূর্ব জবাব দিলো না। যা দেখে অয়ন আবার বলে,
‘ কি হলো ভাই জবাব দিচ্ছিস না কেন?’
‘ এমনি ভালো লাগছে না তুই যা।’
‘ যাবো মানে তুই যাবি না।’
‘ হুম যাবো আগে তুই যা,
‘ আমার সাথেই চল ভাই আর ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে তো,
অপূর্ব তাও উঠলো না চুপচাপ বসে রইলো অনেকক্ষন। অয়নও গেল না সে পণ করেই নিয়েছে সে গেলে ভাইকে নিয়েই যাবে। অয়নের কান্ডে অপূর্বের হাঁক পড়লো। বললো,
‘ তুই এখনো যাচ্ছিস না কেন?’
‘ তুই চল আমার সাথে আমি জানি আমি চলে গেলেও তুই আরো এক ঘন্টায়ও রুমে যাবি না।’
‘ যাবো বললাম তো তুই যা।’
‘ আমার সাথে চলো না,
এবার আর অপূর্ব মানা করতে পারলো না। হাতে থাকা খালি বিয়ারের বোতলটা ধরেই উঠে দাঁড়ালো। বললো,
‘ ঠিক আছে চল।’
অয়ন খুশি হলো। মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
‘ হুম চলো,
অপূর্ব আর অয়ন হাঁটা দিল। মাঝে অপূর্ব বললো,
‘ বুঝলি অয়ন ভাবছি খুব শীঘ্রই তোর জন্য একটা ভাবি আনবো,
‘ সত্যি বলছিস ভাই তুই আমার জন্য ভাবি আনবি,
‘ হুম আনবো। একা জীবন আর ভালো লাগে না বুঝলি।’
অয়নের মুখের হাসি যেন আরো বাড়লো। সে খুব খুশি হয়েছে ফাইনালি তার ভাই বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছে।’
এরই মাঝে হেঁটে যেতে যেতে অপূর্ব এক সাংঘাতিক কাজ করে বসলো। অয়নকে বাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে ছাঁদের দরজা বন্ধ করে দিলো। কিছুক্ষনের ভিড়ে আহাম্মক বনে গেল অয়ন। অপূর্ব দরজা আটকাতেই হতাশ হয়ে বললো,
‘ এটা কি হলো ভাই?’
‘ কিছুই হয় নি তুই রুমে যা। তোর ভাবিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা এখনো বাকি আমার।’
‘ বৃষ্টির মধ্যে স্বপ্ন দেখবি ভাই,
‘ তুই হয়তো জানিস না অয়ন তোর ভাবি এই বৃষ্টির জন্যই আমার অনেকটা আপন হয়েছে।’
‘ রুমে চল না প্লিজ এভাবে ভিজলে জ্বরের অসুখ বাঁধবে তোর।’
‘ বাঁধবে না অপূর্বকে অসুখে আঁকড়ে ধরা এত সহজ নাকি।’
‘ তুই কেন বুঝতে চাচ্ছিস না ভাই আমি কিন্তু বাবাকে ডাকবো।’
‘ এমন করিস না অয়ন বাবা খুব বকবে আমায় তুই কি ভেবেছিস আমি এভাবে বলবো ইডিয়েট। বাবাকে আমি ভয় পাই নাকি। শেষে দেখবি বাবা আমি দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজচ্ছি তাই কথা না বাড়িয়ে
রুমে যা নইলে,
‘ নইলে কি?’
‘ নইলে অহনার কথা কিন্তু বাড়িতে লিক হতে আমার দু’সেকেন্ড সময় লাগবে।’
অয়ন থেমে গেল। আর কিছু বলতে পারলো না তার ভাইকে বিশ্বাস নেই সত্যি সত্যি যদি বলে দেয় তখন। অয়ন কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বললো,
‘ তুউ কিন্তু কাজটা ঠিক করছিস না ভাই।’
উত্তরের কোনো জবাব আসলো না। অতঃপর অয়ন হতাশ হয়েই চলে গেল তার রুমে। আর অপূর্ব দরজার পাশে হেলান দিয়ে বসে রইলো চুপচাপ। তার মস্তিষ্ক এখনও ঠান্ডা হয় নি। কোথাও গিয়ে বন্ধু হারানোর যন্ত্রনা অনুভব হচ্ছে তার।’
___
সূর্যের প্রবল তেজ। ঘড়ির কাটায় আনুমানিক এগারোটা বাজে। প্রিয়তা হাঁটছে, বোনের সাথে দেখা করার জন্য মনটা উতলা হয়ে আছে তার। চোখের কোণে পানি জমছে, তার জন্যই তার বুবুটা আজ জেল খানায় বন্দী হয়ে আছে। খুলনার এই জেলখানাটায় একজন পুলিশ আছে যাকে প্রিয়তা চেনে তার বাবার বন্ধু ছিল। পুলিশটির সাথে কথা হয়েছিল প্রিয়তা। বলেছে তার বুবুকে নাকি ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।’
.
জেলখানার একদম শেষ প্রান্তের লকাপে বসে আছে প্রেমা। চোখ মুখ শান্ত যেন কিছুই হয় নি। রহিম মারা যাওয়ার পর যেন প্রেমা বেশ শান্তিতেই আছে। এমন শান্তি পাবে আগে জানলে বোধহয় প্রেমা আরো আগেই মেরে দিত রহিমকে। ভেবেই হাল্কা হেঁসে উঠলো প্রেমা। কিসব ভাবছে সে, খুন করার পর বোধহয় এমন সব ভাবনাই মাথায় আসে সবার।’
‘ বুবু,
হঠাৎই প্রিয়তার ভয়েসটা কানে আসতেই যেন প্রেমা সতেজ হলো। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো এগিয়ে গেল প্রিয়তার দিকে খুব স্বাভাবিক গলায় বললো,
‘ তুই এখানে?’
উত্তরে কান্না ভেজা স্বরে বললো প্রিয়তা,
‘ বুবু তুই আমার জন্য এমনটা কেন করলি?’
প্রেমা হাল্কা হাসে। বলে,
‘ ওহ রাজনীতিবিদ তাহলে সব বলে দিয়েছে তোকে।’
প্রিয়তা মাথা নাড়ায় বলে,
‘ এমনটা না করলেও তো পারতি,
‘ কিভাবে পারতাম শয়তানটা যে তোর ওপর নজর দিয়েছিল। আমার বোনের দিকে যে বাজে নজর দিয়েছে তাকে আমি কিভাবে ছাড়ি।’
প্রিয়তা কেঁদে দেয়। বলে,
‘ তোকে এখান থেকে কি করে ছাড়াবো বুবু?’
‘ ছাড়াতে হবে না আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।’
‘ এভাবে বলিস না বুবু।’
প্রেমা হাত বুলায় প্রিয়তার মাথায় হাল্কা হেঁসে বলে,
‘ তা রাজনীতিবিদকে বিয়ে কবে করছিস তুই?’
‘ উনি আমায় মেরে ফেলতে চায় বুবু।’
এবার প্রেমা আরো উচ্চ স্বরে হাসে। বলে,
‘ তাহলে তো ভালোই তুইও তাকে মেরেছিস আর সেও তোকে মারবে কাহিনি শোধবোধ।’
‘ তুই কি আমার সাথে মজা নিচ্ছিস?’
‘ আরে মজা নেওয়ার কি আছে যা সত্যি তাই বলছি। তোরা খুব ভালো থাকবি দেখিস।’
প্রিয়তা কিছু বলে না। দু’জনের মাঝে চলে অনেকক্ষনের নীরবতা।’
‘ চাঁচি কোথায় আছে বুবু?’
‘ আছে হয়তো এখানেরই আশেপাশে। বুঝলি প্রিয়তা সব মানুষ আপন হয় না। সবসময় চোখ কান খোলা রেখে চলবি কে আপন আর আপন নয় সেটা ভালোভাবে বুঝে চলাফেরা করতে হবে। দুনিয়াটা বড্ড বাজে বুঝলি।’
‘ আজ যদি বাবা মা বেঁচে থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো তাই না বুবু।’
‘ যারা চলে গেছে তাদের ভেবে লাভ আছে বল, যারা চলে যায় তার আর ফিরে আসে না। তাই যারা চলে গেছে তাদের কথা না ভেবে একা বাঁচতে শিখ। আর তাছাড়া এখন তো তোর রাজনীতিবিদ আছে তাই বেশি ভাবিস না।’
উত্তরে শুধু এতটুকুই বলে প্রিয়তা,
‘ হুম।’
___
জেলের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। চোখের পানি শুকিয়ে বুকভরা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসছে তার। চাঁচির সাথে দেখা করার ইচ্ছে থাকলেও করে নি। প্রিয়তা সামনের রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো। কি করবে না করবে বুঝতে পারছে না বুবুটাকে কিভাবে ছাড়াবে তাও ভেবে পাচ্ছে না। আচমকাই মোবাইলটা বেজে উঠল প্রিয়তার। প্রিয়তা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো অপূর্ব কল করেছে। প্রিয়তা খুব ইতস্তত হয়ে বললো,
‘ এই লোকটা আবার কি বলবে কে জানে?’
প্রিয়তা ফোনটা তুলতেই অপরপ্রান্তে জানালার পাশে বিছানায় শুয়ে থাকা অপূর্ব বললো,
‘ বুঝলে মেয়ে তোমার মৃত্যুর ডেট ফিক্সড করে ফেলেছি। আগামী এক দু’সপ্তাহের মধ্যে তোমায় মেরে ফেলবো।’
‘ খুশি হয়েছি আমি।’
‘ খুশি তুমি হবে কেন খুশি তো হবো আমি।’
‘ ওই একই হলো।’
‘ এক হয় নি। কোথায় আছো বলো তো তোমার বুবুর সাথে দেখা করেছো?’
‘ হুম করেছি।’
‘ খুব ভালো শোনো আমার না জ্বর হয়েছে সাথে মাথাও যন্ত্রণা করছে একটু মাথা টেপার দরকার ছিল তুমি কি একবার আসবে আমার কাছে ভয় নেই দু’সপ্তাহের আগে তোমায় কিছু করছি না।’
‘ আমি খুলনায় আছি অপূর্ব।’
‘ তো।’
‘ তো মানে কি? আমি কি করে আপনার কাছে যাবো এখন?’
‘ সেটা তোমার বিষয় তবে পায়ে হেঁটেই আসো আমি কিছু মনে করবো না।’
‘ আপনার কি মাথা গেছে খুলনা থেকে ঢাকা আমি পায়ে হেঁটে যাবো।’
‘ হুম আসবে কি হয়েছে? গুলি করার সময় তো এমনিই হেঁটে হেঁটে এসেছিলে এখন কি সমস্যা?’
‘ ফোন কাটুন তো।’
‘ কাটবো না জলদি আসো না হলে বুঝোই তো।’
‘ আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না বলুন তো।’
টুং টুং ফোন কেটে দিল অপূর্ব। আর প্রিয়তা দাঁড়িয়ে পড়লো অপূর্বের কি সত্যি মাথা গেছে নাকি সত্যি সত্যি তাকে যেতে বলছে। কিন্তু প্রিয়তা তো অপূর্বদের বাড়ি চেনে না আর এখন ঢাকা পৌঁছাতেও তো অনেক সময় লাগবে। প্রিয়তা নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চললো বাড়ির পথের দিকে। বাড়িতে কেউ নেই চাচাও দোকানে বসেছে। প্রিয়তা আসার আগে রান্না করে এসেছিল। প্রিয়তা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। অপূর্বের মাথা বোধহয় সত্যি সত্যিই গেছে।
‘ কিন্তু মানুষটা জ্বর বাঁধালো কি করে? কাল রাতে বৃষ্টিতে ভিজেছিল নাকি।’
__
বাড়ির ভিতর ঢুকতেই খানিকটা অবাক হলো প্রিয়তা। কারন সদর দরজা খোলা তাদের
‘ তবে কি ছোট আব্বু দোকান থেকে এসে পড়েছে।’
#চলবে….
#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৩
_________________
চুপচাপ কিছু কৌতূহল নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয়তা। বাড়িতে তো কেউ একজন আছে এখন। প্রিয়তা প্রথম দিকে ছোট আব্বু এসেছে এটা ভেবে থাকলেও পরক্ষণেই কেন যেন মনে হলো ছোট আব্বু নয় অন্যকেউ আছে। এমনটা মনে হওয়ার একমাত্র কারন হলো ছোট আব্বুর রুমের দরজা বাহির থেকে আটকানো যেটা প্রিয়তা বাহিরে যাওয়ার আগে আঁটকে গিয়েছিল। সচারাচর চাচা বাড়ি ঢুকে সর্বপ্রথম নিজের রুমে যান। আজ নিশ্চয়ই তার ব্যতিক্রম কিছু হবে না। প্রিয়তা কৌতূহলী এগিয়ে যেতে লাগলো উপরে, উপরের কর্নারের রুমটাই তার আর প্রেমার ছিল। প্রিয়তা আস্তে আস্তে এগিয়ে চললো তার রুমে। হঠাৎই যেন চেনা কারো কন্ঠে গান ভেসে আসলো প্রিয়তার কানে কেউ গাইছে,
❝কথা হবে দেখা হবে প্রেমে প্রেমে মেলা হবে!’
কাছে আসা আসি আর হবে না!’
চোখে চোখে কথা হবে ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে!
ভালোবাসা বাসি আর হবে না!❞
প্রিয়তা যেন চরম ভাবে চমকালো অপূর্ব এখানে এসেছে। প্রিয়তা দৌড়ে ছুটে গেল তার রুমের ভিতর।’
.
পরনে মেরুন রঙের শার্ট, সাদা রঙের জিন্স, চুলগুলো এলেমেলো, হাতের ঘড়ি টেবিলে রাখা অবস্থায় বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশ জড়িয়ে ধরে গান গাইছে অপূর্ব। প্রিয়তা যেন বিশ্বাস করতে পারছে না অপূর্ব এখানে এসেছে। প্রিয়তা কি বলবে বুঝতে পারছে না। যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে সে।’
অপূর্ব তার গান থামালো, কিছু একটা ফিল হলো তার। প্রিয়তা এসেছে তবে। অপূর্ব আর ঘুরে না তাকিয়েই খুব তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
‘ ওভাবে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মতো কিছু হয় নি মেয়ে, জলদি কাছে এসে পাশে বসো মাথা ধরেছে আমার।’
প্রিয়তা শুনলো, জবাবে কিছু না বলে চুপচাপ এগিয়ে যেতে লাগলো অপূর্বের দিকে। অপূর্ব এবার সোজা হয়ে শুলো তাকালো প্রিয়তার দিকে। বললো,
‘ এতক্ষণ সময় লাগে এখানে আসতে তুমি জানো আমি কতক্ষণ থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।’
প্রিয়তা হেঁটে গিয়ে বসলো অপূর্বের পাশে। বললো,
‘ আপনি এখানে কিভাবে এলেন?’
‘ কিভাবে এসেছি মানে আমার যে গাড়ি আছে তুমি জানো না।’
প্রিয়তা থতমত খেল সে কি ভুল প্রশ্ন করলো। করলোই তো কথাটা ‘ আপনি এখানে কিভাবে এলেন?’– এটা না বলে তার বলার উচিত ছিল আপনি এখানে কি করছেন? প্রিয়তা নিজেকে সামলে আবারও প্রশ্ন করলো,
‘ তা নয় আপনি এখানে কি করছেন?’
‘ তোমার হাতের স্পর্শ নিতে এসেছি।’
‘ আপনার জ্বর আসলো কি করে?’
‘ কাল রাতে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম ছোট ভাই বার বার বললো ভাই আর ভিজিস না জ্বর আসবে কিন্তু আমি শুনিনি তাই জ্বর এসেছে।’
‘ ঔষধ খান নি?’
‘ না সকাল হওয়ার আগেই তোমার এখানে চলে এসেছি।’
‘ বাসার চাবি কোথায় পেলেন?’
‘ চাবি লাগে নি তো তোমার চাচা ছিল তো।’
অপূর্বের এবারের কথা শুনে প্রিয়তা অবাক হয়ে বললো,
‘ আপনার সাথে ছোট আব্বুরও দেখা হয়েছে।’
‘ হুম।’
উত্তরে কিছু বলতে পারলো না প্রিয়তা। অপূর্ব কত ইজিলি কথাগুলোর উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই বলে উঠল অপূর্ব,
‘ শোনো মেয়ে, এখানে তোমার ভাবনা দেখতে আসি নি আমি দ্রুত মাথা টিপে দেও আর কথা বলতে ভালো লাগছে না।’
অপূর্বের কথার জবাবে প্রিয়তার খুব করে বলতে মন চাইলো,
‘ এত অধিকার দেখাচ্ছেন কেন? শুনে রাখুন আমি আপনার বিয়ে করা বউ নই।’
প্রিয়তার মনে মনে বলা কথাটাও যেন বুঝলো অপূর্ব। ফট করে বললো,
‘ হতে কতক্ষণ।’
প্রিয়তা খানিকটা চমকে উঠলো। বললো,
‘ কি বললেন?”
‘ কিছু বলি নি। কুইকলি কপালে হাত রাখো তোমার হাতের স্পর্শ পাওয়ার জন্য মনটা আনচান করছে।’
প্রিয়তার হাসতে মন চাইলো কিন্তু তাও হাসলো না। নিজের হাতটা আলতোভাবে এগিয়ে দিল অপূর্বের দিকে, ছুঁয়ে ছিল কপাল। প্রিয়তার হাতের স্পর্শ লাগতেই অপূর্ব তার চোখ বন্ধ করে নিলো। তবে মনে মনে আওড়ালো,
‘ তোমার হাতের একটু স্পর্শ পেতে আমি দীর্ঘক্ষন বৃষ্টিতে ভিজে বাহানা করতে পারি।’
অপূর্বের কপালে হাত রাখতেই বিষম খেল প্রিয়তা। অসম্ভব জ্বর হয়েছে অপূর্বের। প্রিয়তা কিছুক্ষন মাথা টিপে দিয়ে বললো,
‘ আমি কাপড় ভিজিয়ে আনছি আপনার মাথা মুছে দিতে হবে।’
অপূর্ব তক্ষৎনাত বারন করলো। আদেশের স্বরে বললো,
‘ ওসবের দরকার নেই তুমি পাশে বসে থাকলেই হবে।’
‘ কেন বুঝচ্ছেন না আপনার জ্বরটা অনেক।’
প্রিয়তার কথায় অপূর্ব রেগে গেল। ধমক দিয়ে বললো,
‘ বেশি বকো না তো ভালো লাগছে না।’
প্রিয়তা থেমে গেল। এই ছেলেটা তার কথা একদমই শুনবে না।’
সময় গড়ালো ঘড়ির কাটা একটা ছেড়ে দুটোয় গড়ালো। প্রিয়তা বসেই রইলো অপূর্বের পাশে আর অপূর্ব চোখ বুঝে ঘুমিয়ে পড়লো।’
আচমকা দরজায় নক পড়লো। এতে খানিকটা চমকে উঠলো প্রিয়তা। বললো,
‘ কে?’
প্রিয়তার কথা শেষ হতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠলো কেউ,
‘ ভাবি আমি। আসবো রুমে?’
প্রিয়তা যেন আরো অবাক হলো তাকে ভাবি ডাকে কে। প্রিয়তা কিছু বলার আগেই অপূর্ব চট করে বলে উঠল,
‘ না আসবি না তোকে আসতে বলেছি আমি।’
অয়ন তাও আসলো। এক গাল হাসি দিয়ে বললো,
‘ তুই বারন করলেই আমায় শুনতে হবে নাকি।’
‘ অবশ্যই শুনতে হবে ভুলে যাস না আমি তোর কি হই।’
‘ হুম ভুলি নি। তুমিও মনে রাখো আমি তোমার কি হই।’
এদিকে অপূর্ব আর অয়নের কথোপকথনের কিছু বুঝতে না পেরে শুধু হাবলার মতো তাকিয়ে রইলো প্রিয়তা। যা দেখে অয়ন বললো,
‘ কি ভাবি কিছু বুঝচ্ছো না তো আসলে আমি হলাম তোমার হবু বর মানে মিস্টার তাহসান আহমেদ অপূর্বের ছোট ভাই তানভীর আহমেদ অয়ন। তোমার একমাত্র দেবর।’
অয়নের কথা শুনে প্রিয়তার চক্ষু বেরিয়ে আসার উপক্রম কি বলছে এই ছেলে। এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো অপূর্বের বাবা মা। অপূর্বের মা তো বলে উঠলেন,
‘ কই দেখি আমার বড় বউমার মুখটা কেমন।’
প্রিয়তা উঠে দাঁড়ালো। লজ্জায় কেমন যেন মাথা নিচু করে ফেললো সে। এই অপূর্বটা এমন কেন হুটহাট এমন সব কান্ড করে বসে যে প্রিয়তা ঘাবড়ে যায়।’
একে একে বাড়ির সবার আগমন দেখে অপূর্ব যেন হতাশ হলো। সে এদের আসতে বলেছিল কিন্তু এর মানে তো এই নয় যে দল বেঁধে সবাই প্রিয়তার রুমে ঢুকে পড়বে নিচেও তো বসা যায় নাকি।’
___
নিচে ড্রয়িং রুমের সোফাতে গোল হয়ে একদিকে বসে আছে অপূর্ব, অয়ন আর ওদের বাবা মা অন্যদিকে বসে আছে প্রিয়তা আর প্রিয়তার চাচা। মূল কথা হলো এখানে প্রিয়তা আর অপূর্বের বিয়ের কথা বার্তাই বলতে এসেছে তারা। প্রিয়তার চাচা এগুলো আগে থেকেই জানতেন এমন কি অপূর্বের বাবা মাও যে আজ আসবে তাও তিনি জানতেন শুধু প্রিয়তাকে কিছু বলেন নি। অপূর্ব বারন করেছিল কি না।’
অতঃপর সবার কথাবার্তা শেষ করে ঠিক করা হলো দু’সপ্তাহ পর প্রিয়তা আর অপূর্বের বিয়ে দেওয়া হবে। আর বিয়ে দিয়েই তাদের বউমাকে তারা নিয়ে যাবেন। প্রিয়তার চাচারও কোনো আপত্তি নেই এতে। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ওনার মনে হচ্ছে প্রিয়তার চাঁচিটা বাড়ি নেই বেশ হয়েছে না হলে ঠিক এই বিয়েতে কোনো ঘাপলা বাজাতো। বউটা জেলে আছে এতে প্রিয়তার চাচার কোনো আফসোস নেই। কারন সে বিশ্বাস করে ভুল করলে তার মাশুলও দিতে হয়। আর প্রিয়তার চাঁচি তো ভুল করে নি মেয়ে পাচারের মতো যগন্যতম অপরাধ করেছে শাস্তি তো পেতেই হবে। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো প্রিয়তার চাচা।’
____
বাড়ির ছাঁদের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। সবকিছু কেমন যেন স্বপ্নের মতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেল। বিয়েটা চাইলে আজই করে ফেলতে পারতো তারা কিন্তু অপূর্ব রাজি হয় নি আর প্রিয়তাও কিছু বলে নি। বুবু টা কাছে নেই এই সময় সে বিয়ে কি করে করতে পারে। প্রিয়তা ভেবেছিল অপূর্ব বোধহয় কিছু জানে না যে সে সেদিন গুলিটা করে নি। কিন্তু আজ বুঝলো এই অপূর্ব সব জানে। প্রিয়তা আনমনে হাসলো। ছেলেটা চরম বদমাশ।’
‘ এখানে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো তুমি?’
হঠাৎই অপূর্বের কন্ঠস্বর শুনে পিছন ঘুরে তাকালো প্রিয়তা। একপলক অপূর্বের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘ কিছু না।’
‘ আমাকে কি বোকা মনে হয় তোমার?’
প্রিয়তা খানিকটা বিস্মিত চেহারা নিয়ে বললো,
‘ আমি আপনার বোকা বলেছি নাকি।’
‘ তা বলো নি,
‘ তাহলে আচ্ছা আপনি শুরু থেকেই সবটা জানতেন তাই না।’
‘ কোন সবটার কথা বলছো তুমি?’
‘ আবারও না জানার ভান করছেন।’
অপূর্ব হাসলো। কি নিষ্পাপ সেই হাসি। ছেলেটা জ্বরের ঘোরেও মারাত্মক সুন্দর হাসে। প্রিয়তা অপূর্বের হাসি দেখে অপূর্বের মতো করে বললো,
‘ ওভাবে হাসবেন না তো আমারও কষ্ট হয়।’
প্রিয়তার কথা শুনে আচমকা অপূর্বের কি যেন হলো প্রিয়তার হাত ধরে নিজের দিকে টানলো। খানিকটা কাছাকাছি হলো দুজন। প্রিয়তা যেন থমকে গেল এতে এই প্রথম যেন সজ্ঞানে অপূর্বের কাছাকাছি গেল প্রিয়তা। প্রিয়তা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো অপূর্ব,
‘ কেন বুঝতে পারো না মেয়ে তোমায় এমন ছোট ছোট কষ্ট দিতেই আমার বেশ লাগে।’
#চলবে….
#TanjiL_Mim♥️