আজও বৃষ্টি নামুক পর্ব-৪৪+৪৫+৪৬

0
438

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৪
_________________

‘ বলছিলাম কি ভাই বিয়েটা তো এখনো হয় নি। তুই যদি এখনই ভাবির এত কাছাকাছি থাকিস লোকজন দেখলে কি ভাব্বে বল তো।’

অয়নের কথায় চমকে উঠলো প্রিয়তা। অপূর্বকে ছাড়তে চাইলো তক্ষৎনাত তবে অপূর্ব প্রিয়তার হাত ছাড়লো না। উল্টো অয়নের দিয়ে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,

‘ তুই এখানে কি করছিস?’

অয়ন অপূর্বের কথা শুনে হতাশ হলো সে ভেবেছিল তার হুট করে বলা কথায় হয়তো তার ভাই খানিকটা লজ্জা পাবে কিন্তু তা আর পেল কই। অয়ন হতাশার সুর টেনে বললো,

‘ ভাই, আমি তোর ছোট ভাই হই একটু তো লজ্জা করা উচিত ছিল।’

অয়নের কথায় প্রিয়তা লাল, নীল, বেগুনি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অপূর্বের কোনো হেলদোল দেখা যাচ্ছে না। অপূর্ব অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ বাজে না বকে কি জন্যে ছাঁদে এসেছিস সেটা বল?’

অয়ন জোরে এক নিশ্বাস ছাড়লো। তারপর বললো,

‘ বাবা ডাকছে ভাই বাড়ি যাবি না।’

উত্তরে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো অপূর্ব,

‘ তুই যা আমি আসছি।’

‘ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস।’

বলেই চলে গেল অয়ন।’

অয়ন যেতেই প্রিয়তাকে ছাড়লো অপূর্ব। প্রিয়তাও ছিটকেও দু’কদম দূরে সরে গেল। তারপর বললো,

‘ আগে ছাড়লেন না কেন? আপনার ভাই কি ভাবলো বলুন তো?’

‘ যা ভাবার ওকে ভাবতে দেও তাছাড়া আমি যদি তখন তোমায় ছাড়তাম তাহলে ও ভাবতো আমি ঘাবড়ে গেছি আর বড় ভাই হয়ে ছোট ভাইয়ের সামনে ঘাবড়ে যাওয়াটা কেমন দেখায় বুঝো না।’

প্রিয়তা কিছু বলে না চুপ করে রয়। এ লোক বড্ড পাগল। অপূর্ব প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ তুুমি ঢাকা যাবে না?’

‘ হুম যাবো।’

‘ তবে আমাদের সাথেই চলো,

‘ না আজ যাবো না কাল বা পরশু যাবো।’

প্রিয়তার কথা শুনে অপূর্ব আর জোর করে নি। শুধু বলে,

‘ ঠিক আছে।’

অপূর্ব চলে যেতে নেয়। অপূর্বের যাওয়ার পানে প্রিয়তা তাকিয়ে থেকে বলে,

‘ আমাকে আপনার সঙ্গে রাখতে এখন কি আর ভয় হবে না অপূর্ব?’

অপূর্ব বুঝলো কিসের পিটে পরে কথাটা বলেছে প্রিয়তা। অপূর্ব মৃদু স্বরে পিছন না ঘুরেই বললো,

‘ আমি তোমার জন্য আমার অতি প্রিয় রাজনীতি ছাড়তেও রাজি মেয়ে, শুধু একটু সময় লাগবে।’

বলেই আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত পা চালিয়ে চললো অপূর্ব এখন তার অনেক কাজ।’

প্রিয়তা শুধুই দেখেই গেল অপূর্বের যাওয়াটা মুখ ফুটে আর কিছু বলতে পারলো না। ছেলেটা কি খুব খারাপ লাগা নিয়ে কথাটা বলেছে?’

____

দুপুরের কড়া রোদে ঘিরে আছে চারপাশ। হাতে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে তন্দ্রা বিলাসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে প্রিয়তা অপূর্বের যাওয়ার আজ দু’দিন পর ঢাকার বুকে পা রেখেছে প্রিয়তা। কাল আসার ইচ্ছে থাকলেও আসে নি বুবুর কাছে গিয়েছিল বিয়ের বিষয়ে সবই বলেছে সেও ভীষণ খুশি হয়েছে। শেষমেশ তবে প্রিয়তা হবে অপূর্বের। তাও কেন যেন ভয় হয় প্রিয়তার। অতঃপর বেশি ভাবলো না প্রিয়তা এগিয়ে গেল তন্দ্রা বিলাসের উদ্দেশ্যে। বেশিদিন থাকবে না প্রিয়তা, প্রিয়তা ভেবে নিয়েছে যতদিন না তার বিয়ে হবে ততদিন সে খুলনাতেই থাকবে এখানে এসেছে শুধু নিজের জিনিসপত্রগুলো নিতে। প্রিয়তা বাড়ির সামনের কালো গেটটা খুলে ভিতরে ঢুকলো সবকিছু কেমন যেন নির্জন বাড়িতে কেউ নেই নাকি। প্রিয়তা সেই প্রথমদিনের মতো বাড়ির আশপাশটা দেখলো তবে এবার আর কলিংবেল টাপলো না সোজা হেঁটে গেল নিজের রুমের উদ্দেশ্যে। নিজের রুমের তালাটা খুলবে এরই মাঝে পিছন থেকে ডাকলো কেউ। বললো,

‘ প্রিয়তা,

প্রিয়তা থেমে গেল হাতের চাবিটা হাতে রেখেই পিছন ঘুরে তাকালো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়মান। আজ অনেকদিন পর আয়মানকে দেখলো প্রিয়তা। হাল্কা হাসলো। বললো,

‘ জ্বী বলুন,

আয়মান এগিয়ে আসলো। বললো,

‘ তুমি ঠিক আছো তো?’

‘ হুম ঠিক কেন থাকবো না।’

‘ সেদিন রাতে হুট করে এসেই খুলনায় পারি জমালে তাই আর কি।’

‘ ওহ না আমি ঠিক আছি।’

উত্তরে আয়মান কিছু বললো না চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। যা দেখে প্রিয়তা বললো,

‘ আপনি কি আমায় কিছু বললেন আয়মান?’

আয়মান চমকালো। বললো,

‘ হুম কিছু বলার ছিল।’

‘ জ্বী বলুন!’

‘ আমি চলে যাচ্ছি ভেবেছি আর আসবো না এই দেশে।’

প্রিয়তা খানিকটা অবাক হয়ে বললো,

‘ আর আসবেন না কেন?’

‘ এমনি এই দেশ আমায় আঘাত করবে তাই আর কি,

‘ আমি আপনার কথার অর্থ বুঝচ্ছি না আয়মান।’

‘ থাক না কিছু কথার অর্থ নাই বা বুঝলে।’

‘ আপনি কি কোনো কারনে কষ্ট পেয়েছেন এই দেশ থেকে।’

‘ কিছুটা তেমনটাই। যাইহোক ভালো থেকো বুঝলে গ্র্যান্ডমাকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি আর কতকাল একা একা থাকবে এই দেশে।’

প্রিয়তা এবার যেন আরো অবাক হলো গ্র্যান্ডমাও থাকবে না।’

‘ আপনারা কবে যাবেন? ‘

‘ কালই,

‘ কালকেই চলে যাবেন?’

‘ হুম কাল রাতে আমাদের ফ্লাইট।’

‘ যাক ভালো হয়েছে ভালো থাকবেন।’

‘ হুম তুমিও ভালো থেকো। আমার অজান্তে কোনো ভুল হয়ে গেলে আমায় ক্ষমা করো।’

উত্তরে শুধু হাল্কা হাসে প্রিয়তা। তারপর চলে যায় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে গ্র্যান্ডমার সাথে কথা বলে সেও চলে যাবে কাল। বিষয়টায় বড্ড খারাপ লাগলো প্রিয়তার ভেবেছিল বিয়ের পর মাঝে মধ্যে গ্র্যান্ডমার সাথে এসে এসে দেখা করবে। কিন্তু এখন, তবে একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে গ্র্যান্ডমাকেও আর একা একা এত বড় বাড়িতে থাকতে হবে না। মাঝে মাঝে কিছু খারাপ লাগাও ভালোর জন্যই হয়।’

অন্যদিকে প্রিয়তার হাঁটার পানে তাকিয়ে থেকে বললো আয়মান,

‘ কিছু কিছু গল্প না হয় অসমাপ্তই থাকুক
হাল্কা বৃষ্টির ঝড়ে কাঁদার ভিড়েই না হয় ঠাই মিলুক।’

কি আর ক্ষতি হবে তাতে।’

____

দু’সপ্তাহ পর।’

আজ অপূর্ব আর প্রিয়তার বিয়ে খুব অল্প আয়োজনে বিয়ে সম্পন্ন করা হবে ওদের। তেমন কোনো লোকজন থাকবে না শুধু পরিবারের অল্প কিছু লোকজন।’

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। আজ সে বহুত খুশি পরিশেষে তার বড় ভাইটা বিয়ে করবে। অপূর্বের বিয়েটা হয়ে গেলে মাস খানেক পরই সে অহনার কথা বাড়িতে বলবে তারপর সেও ভেবেই লজ্জায় লাল নীল হলুদ কমলা হয়ে যাচ্ছে অয়ন। অয়ন আজ একটা সুন্দর গ্রীন কালার পাঞ্জাবি পড়েছে। ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। অয়ন ঘড়ি দেখলো ন’টা বাজে ১০টার ভিতরই তাড়া খুলনার উদ্দেশ্যে বের হবে। কিন্তু তার ভাইটার এখনও খবর নেই কোথায় গেছে কে জানে?’ এমন সময় হতভম্ব হয়ে একটা কালো পাঞ্জাবি পড়ে রুমে ঢুকলো আকিব। উত্তেজিত কন্ঠে বললো,

‘ অপূর্ব ভাই আপনি তৈরি তো।’

উত্তরে অপূর্বের বদলে অয়ন বললো,

‘ তোমার অপূর্ব ভাই বাড়ি নেই আকিব।’

‘ বাড়ি নেই মানে কোথায় গেছে?’

‘ সেটা তো তোমার অপূর্ব ভাইই জানে।’

.
ঢাকার শহর থেকে একটু দূরে একটা সুন্দর জায়গা। যার নাম মসজিদ। এক শান্তি প্রিয় জায়গা আতরের মিষ্টি সুভাস বইছে পুরো মসজিদ জুড়ে। অপূর্ব মসজিদে এসেছে সেই ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে এখনো এখানে বসে আছে। তার মনটা বড় উতলা কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। মসজিদের ইমাম সাহেব বিষয়টা লক্ষ্য করেছেন অনেক আগে থেকেই। অপর্বকে তিনি চেনেন প্রায় সময় এখানে আসে ছেলেটা। ইমাম সাহেব এগিয়ে গেলেন তারপর অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বললো,

‘ কি হয়েছে অপূর্ব? আজ তোমায় বড় অস্থির লাগছে।’

উত্তরে অপূর্ব বললো,

‘ আজ কেন যেন খুব খারাপ লাগছে হুজুর কেন এমনটা লাগছে বুঝচ্ছি না মনে হচ্ছে আমার অতি প্রিয় কোনো জিনিস আমায় ছেড়ে চলে যাবে।’

অপূর্বের কথা শুনে ইমাম সাহেব মৃদু স্বরে বললেন,

‘ জীবন মানেই তো ছেড়ে যাওয়া। আজ আছি কাল নেই এটাই দুনিয়ার নিয়ম। আমাদের সবাইকেই একদিন সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রিয়জনদের কাঁদিয়েই না হয়। তাই কষ্ট পেও না অপূর্ব কেউ ছেড়ে গেলে ব্যাথাটা খুব কম নেও। নিজেকে শক্ত রাখতে হবে সবসময়। আর পুরুষ মানুষদের এমনিতেই সবসময় শক্ত থাকতে হয়।’

অপূর্ব মন দিয়ে শুনলো হুজুরের কথা। তারপর বললো,

‘ ঠিক বলেছেন হুজুর। জীবনে সবসময়ই শক্ত থাকতে হয়। শক্ত থাকলেও জীবনটা হয়তো সুখের হয়।’

উত্তরের শুধু মুচকি হাসে হুজুর তবে কিছু বলে না।’
____

সোফার সামনে সেজেগুজে বসে আছে অপূর্বের বাবা, ভাই, আকিব, চাচা সঙ্গে অপূর্বের দুজন চাচাতো ভাই এরা সবাই বিয়েতে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বসে আছে ওদিকে অপূর্বের খবর নেই। হঠাৎই অপূর্বের বাবা বলে উঠল,

‘ আকিব তোমার অপূর্ব ভাইকে ফোন লাগাও বলো সে কি আসবে নাকি আমরা তাকে ছেড়েই চলে যাবো।’

উত্তরে আকিব কিছু বলার আগেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো অপূর্ব,

‘ হুম চলে যাও। জামাইর কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে সে বরিশালের পিরোজপুরের ধানক্ষেতে ঘুরতে গেছে।’

#চলবে….

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৫
_________________

বরের গাড়ির ভিতর ঢুকতে গিয়ে গাড়ির ভিতর আরোহীকে দেখে থমকে গেল আকিব। বুক ধড়ফড় করে উঠলো নিমিষেই। আকিব ভূত দেখার মতো চমকে উঠে ঠাস করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিলো যা দেখে অয়ন বললো,

‘ কি হলো আকিব ভয় পেলে নাকি?’

আকিব শুঁকনো হাসলো তারপর অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ ভাই ও এখানে কি করছে?’

উত্তরে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো অপর্ব,

‘ কে কি করছে?’

‘ আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন না ভাই?’

অপূর্ব হাসে। বলে,

‘ দেখো আকিব বিয়ে বাড়ি যাচ্ছো আরোহী না গেলে তোমার ভালো লাগবে বলো। অহনার সাথে আমার যোগাযোগ নেই না হলে ওকেও আনতাম। যতই হোক আমার পরে তোমাদেরই তো লাইন।’

অপূর্বের কথা শুনে কাশি উঠে গেল অয়নের। কাশতে কাশতেই বললো সে,

‘ লাইন ঠিক আছে তাই বলে তোমার বিয়েতে আনবো ভাগ্যিস তোমার সাথে অহনার যোগাযোগ নেই না হলে বাঁশ তো তুমি দিতা।’

এর মাঝে অপূর্বের বাবা বললো,

‘ কোন বাঁশের কথা হচ্ছে শুনি?’

চমকে উঠলো অয়ন। বললো,

‘ না কিছু না তোমরা গিয়ে ওই গাড়িতে বসো বাবা।’

অপূর্বের বাবা শুনলেন। অতঃপর গাড়ি নিয়ে ছুটলো তারা প্রিয়তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। টোটাল তিনটে গাড়ি যাচ্ছে এখান থেকে। খুব সাদামাটাভাবে সাজানো হয়েছে বরের গাড়ি। যাতে বোঝা না যায় তারা আসলে বিয়ে বাড়ি যাচ্ছে যতই হোক অপূর্ব কোনোভাবেই রিস্ক নিতে চায় না।’

আকিব গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ওর পাশে বসে আছে আরোহী। মিটিমিটি হাসছে সে। ফাইনালি মনে হয় তার আর আকিবের বিয়েটা হবে শীঘ্রই। বিয়েটা হয়ে গেলেই এই ভীতু আকিবকে একদম সাহসী আকিব বানিয়ে দিবে আরোহী এই ছেলেটা একটু বেশি ভিতু। আরোহী স্বল্প স্বরে বললো,

‘ শোনো?’

সঙ্গে সঙ্গে থমকে গিয়ে থরথর কন্ঠে বললো আকিব,

‘ একদম শোনা শুনি করবে না চুপচাপ বসে থাকো গাড়িতে অপূর্ব ভাই আছে।’

আরোহী বুঝেছে আকিব কাঁপছে তাই আর কথা না বারিয়ে চুপচাপ বসে রইলো। যতই হোক গাড়ি চালাচ্ছে এই কাঁপাকাঁপির ঠ্যালায় কিছু করে বসলে তখন।’

আরোহী জানালার ধারে চুপচাপ বসে রইলো। আকাশে মেঘ করেছে, প্রকৃতি গেছে থমকে, গাছের পাতাগুলো নড়েচড়ে উঠছে খুব, পিচঢালা সরু রাস্তাগুলোকে আরোও বেশি মায়াবী লাগছে আজ। অপূর্ব প্রকৃতির রঙ দেখলো খানিকটা শীতল কন্ঠে বললো,

‘ আজও কি তবে বৃষ্টি নামবে?’

____

দুপুর দুটোর কাছাকাছি। আয়নার সামনে লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বধূবেসে বসে আছে প্রিয়তা। বুকের ভিতর এক অদ্ভুত অনুভূতি সাথে অস্থিরতা কাজ করছে তার। বুবুটার জন্য মনটা বড়ই কাঁদছে প্রিয়তার। ঢাকার বুকে সকালের দিকে বৃষ্টির রেখা থাকলেও খুলনার বুকে আজ রোদ জমেছে। যদিও রোদের তীব্রতা অল্প তবে সুন্দর। প্রিয়তা আকাশ পানে তারপর স্বল্প আনন্দের সঙ্গে বললো,

‘ এবার তবে আমাদের সত্যি সত্যিই সংসারটা হবে অপূর্ব।’

হঠাৎই গাড়ির হন বাঝার আওয়াজ আসলো প্রিয়তা বুঝেছে অপূর্বরা এসে পড়েছে। প্রিয়তা উঠে দাঁড়ালো, জানালা দিয়ে এক ঝলক তাকিয়ে দেখলো অপূর্বদের গাড়ি। আজ অপূর্ব নীল রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা পড়েছে,হাতে ঘড়ি, চুলগুলো বরাবরের মতই সুন্দর মতো গোছালো। প্রিয়তা এক পলক অপূর্বকে দেখেই চোখ সরিয়ে ফেললো। যদি অপূর্ব দেখে ফেলে তাকে। প্রিয়তা বুকে হাত বেঁধে জোরে নিশ্বাস ফেললো। এরই মাঝে তার মোবাইলে একটা মেসেজ আসলো প্রিয়তা দেখলো অপূর্ব মেসেজ দিয়েছে লিখেছে,

‘ ওভাবে উঁকি ঝুঁকি মেরো না মেয়ে, তোমার বধূরূপের মায়াবী সাজ দেখে আমি যে নিঃস্ব হয়ে যাবো।’

প্রিয়তা হাসলো বুকের ভিতর কেমন একটা করে উঠলো। এই অপূর্বকে একটুও ফাঁকি দেওয়া যায় না সেই দেখেই ফেললো তাকে।’

প্রিয়তার দরজায় নক পড়লো। সে বুঝেছে তাকে নিতেই কেউ এসেছে। প্রিয়তা হেঁটে গিয়ে দরজা খুললো, দরজা খুলতেই সামনে প্রেমাকে দেখে চোখ মুখে এক অবাকের ছোঁয়া ঘিরে ধরলো প্রিয়তাকে। মুখ থেকে অটোমেটিক বের হলো তার,

‘ বুবু তুই?’

উত্তরে হাল্কা হেঁসে বললো প্রেমা,

‘ হুম আমি বোনটার বিয়ে আর আমি আসবো না।’

প্রিয়তা দৌড়ে গিয়ে বুবুকে জড়িয়ে ধরলো। বললো,

‘ আমি খুব খুশি হয়েছি বুবু।’

‘ জানি তো আমি আসলে তুই খুশি হবি তাই তো অপূর্ব আমায় নিয়ে এলো।’

‘ তুই কি একেবারে এসে পড়েছিস?’

‘ না শুধু আজকের জন্য আসলাম। তবে তুই চিন্তা করিস না কেসটা কোটে উঠলে হয়তো পাঁচ দশ বছরের জেল খেটে ঠিক ফিরে আসবো।’

প্রিয়তা তার বুবুর মুখের দিকে তাকালো পাঁচ দশ বছর যেন পাঁচ ছয়দিনের ব্যাপার। প্রিয়তার চাহনি দেখে হাল্কা হাসলো প্রেমা। বললো,

‘ আরে বেশি চাপ নিস না আমি ভালো আছি। আর অপূর্ব বলেছে কোটের রায় বের হলে সাজা কমিয়ে ঠিক দ্রুত আমায় নিয়ে আসবে। তবে আজ তোকে একটা কথা দিতে হবে,

প্রেমার কথা শুনে প্রিয়তা অবাক হয়ে বললো,

‘ কি?’

‘ তুই কি জানিস তুই খালামনি হতে যাচ্ছিস?’

প্রিয়তা যেন আরো অবাক হলো পরক্ষণেই খুশি হয়ে বললো,

‘ সত্যি,

‘ হুম তবে শুনে রাখ জন্মের পর আমি যতদিন না জেল থেকে ফিরে আসছি ততদিন তার দায় দায়িত্ব সব কিন্তু তোদেরই নিতে হবে।’

বোনটা কত নিষ্ঠুরভাবে কথাগুলো বলছে তার কি কষ্ট হচ্ছে না। প্রিয়তা আবার জড়িয়ে ধরে প্রেমাকে বলে,

‘ তুই এত সহজভাবে সবটা মেনে নিচ্ছিস কিভাবে বুবু?’

প্রিয়তার কথা শুনে শুধু হাল্কা হেঁসে বলে প্রেমা,

‘ পাগলী বোন আমার।’

বিয়ের আসরে বসে আছে অপূর্ব। কেমন কেমন লাগছে তার শেষ পর্যন্ত সবটা ঠিকঠাকভাবে হবে তো। কিছুক্ষনের মাঝেই কাজী আসলো, সাথে মেয়েকেও নিয়ে আসা হলো।’

অপূর্ব একঝলক দেখলো প্রিয়তাকে যদিও মাথায় বিশাল ঘোমটা দেওয়ার কারণে তার মুখটা ঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে না। তাও অপূর্ব মুচকি হাসলো।’

অতঃপর কবুল বলার মাধ্যমে প্রিয়তা আর অপূর্বের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। তেমন কোনো ঝাঁক ঝমক ছাড়াই বিয়েটা হয়ে গেল অপূর্ব আর প্রিয়তার। অপূর্ব মনে মনে বললো,

‘ এবার তাহলে সত্যি সত্যিই তুমি পুরোপুরি আমার হলে প্রিয়তা।’

.
খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে আছে সবাই প্রিয়তাকে বিদায় দেওয়া হবে এখন প্রিয়তার চাচাসহ বাড়ির আশেপাশের অল্প কিছু লোকজন ছিল বিয়েতেও তারাই ছিল। প্রিয়তা তার বুবুকে ধরে কাঁদছে আর প্রেমা তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।’

অপূর্ব দাঁড়িয়ে আছে এদের থেকে খানিকটা দূরে। কারন তার ফোনে একটা মেসেজ এসেছে। মেসেজটা তানভীর পাঠিয়েছে যার জন্য একটু সাইডে যেতে হয়েছে অপূর্বকে। অপূর্ব মেসেজটা দেখবে এরই মাঝে তার ফোনটা বেজে উঠল আননোন নাম্বার থেকে কলটা এসেছে। অপূর্ব কলটা ধরলো ফোন তুললেই অপরপাশ থেকে বলে উঠল কেউ,

‘ কনগ্রেচুলেশন অপূর্ব ভাই। আপনার বিবাহিত জীবন খুব সুখে না খুব দুঃখের হোক।’

অপূর্ব যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। বললো,

‘ আহিল তুই?’

আহিল হাসে। বলে,

‘ হুস আহিল নই আমি আব্রাহাম। আহিলকে তো সেই কবেই মেরে দিয়েছিস আমি হলাম আব্রাহাম।’

‘ তুই কোথায় আছিস?’

আব্রাহাম হাসে। বলে,

‘ তুই কি ভেবেছিলি আমাকে সারাজীবন ওই কারাগারে বন্দী করে রাখবি আব্রাহামকে বন্দী করা এত সহজ নাকি। বাই দা বে তুই তো বিয়ে করেছিস তা নিজের বউকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবি তো।’

অপূর্ব হতভম্ব হয়ে তক্ষৎনাত পিছন ঘুরে তাকালো না প্রিয়তা তার সামনেই আছে। অপূর্বের হতভম্বটা যেন বুঝলো আব্রাহাম। বললো,

‘ কি রে ভয় পেয়ে গেলি নাকি?’

অপূর্ব জবাব দেয় না। জোরে নিশ্বাস ফেলে বলে,

‘ এমন কেন করছিস?’

আব্রাহাম হাসে। বলে,

‘ তুই জানিস না আমি এমনটা কেন করছি?’

‘ আমি রুহিকে মারি নি আহিল।’

‘ তাহলে কে মেরেছে তার নামটা বল?’

অপূর্ব চুপ হয়ে যায়। দুজনের মধ্যে নীরবতা চলে কিছুক্ষনের। এরই মাঝে অপূর্বের ডাক পড়ে এক্ষুনি প্রিয়তাকে নিয়ে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। অপূর্বের ডাকটা আব্রাহাম শুনলো হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ তোকে ডাকছে অপূর্ব দ্রুত যা না হলে কিন্তু অনেক কিছু মিস করে যাবি। তোর হাতে সময় কিন্তু খুব কম।’

অপূর্বের খটকা লাগলো আব্রাহামের কথায় সে পিছন ঘুরে আশপাশে তাকালো তাদের থেকে এক বাড়ি ছেড়ে দ্বিতীয় বাড়ির বেলকনির ধারে গুলি হাতে কেউ আছে। অপূর্বের মোবাইল হাতেই দৌড়ে যেতে লাগলো এরই মাঝে আব্রাহাম বলতে লাগলো,

‘ থ্রি, টু,

আব্রাহামের কথায় অপূর্ব হতভম্ব হয়ে বললো,

‘ এ্যা না….

কিন্তু আব্রাহাম শুনলো না দূর থেকে গুলির তাক করা হলো গুলিটা আব্রাহামের ওয়ান বলার সঙ্গে সঙ্গে ছুটলো প্রিয়তার দিকে। অপূর্ব দৌড়ে যেতে লাগলো প্রিয়তা বলে চিৎকার দিলো দ্রুত। কিন্তু! কিন্তু তার আগেই সব শেষ। কারন গুলিটা পুরো লেগেছে প্রিয়তার বুক বরাবর। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে পুরো পরিবেশ গেল থমকে আশেপাশের সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। প্রিয়তা লুটিয়ে পড়লো নিচে। তবে দৃষ্টি তার অপূর্বের দৌড়ে আসার দিকে। হুট করে কি হলো সবটাই যেন সবার মাথার উপর দিয়ে গেল।’

অপূর্ব দৌড়ে গিয়ে প্রিয়তার মাথাটাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বললো,

‘ তোমার কিছু হবে না?’

উত্তরে শুধু আর্তনাদ ভরা কন্ঠে এতটুকুই বলে প্রিয়তা,

‘ আমাদের বোধহয় আর সংসার করা হলো না অপূর্ব?’

বলতে বলতে অপূর্বের বুকের চোখ বুঝে ফেললো প্রিয়তা। আর অপূর্ব হতভম্ব হয়ে প্রিয়তাকে কোলে তুলে আকিবকে বললো,

‘ আকিব গাড়ি স্ট্যার্ট দেও না তোমায় কিছু করতে হবে না যা করার আমি একাই করবো।’

বলেই দ্রুত প্রিয়তাকে নিয়ে ছুটলো অপূর্ব। বাকি সবাই যেতে চাইলেও অপূর্ব কাউকে সঙ্গে নিলো না।’

অপূর্ব গাড়ি ছোটার কতক্ষণের মাঝেই একে একে সবাই ছুটলো অপূর্বের পিছু পিছু।’

আর অন্যদিকে,

ঢাকার উঁচু এক বিল্ডিং এর ছাঁদে দাঁড়িয়ে প্রশান্তির হাসি হাসলো আব্রাহাম। সাথে বললো,

‘ এবার বুঝবি অপূর্ব প্রিয়জন হারানোর ক্ষতটা ঠিক কতটুকু!’

#চলবে….

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৬
_________________

হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারের বাহিরের একটা চেয়ারে বসে আছে অপূর্ব। বুকের বা’পাশটা খাঁ খাঁ। প্রিয়তা তাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো। এমনটা হলে অপূর্ব যে পাগল হয়ে যাবে। অপূর্ব এমনিতে সব মুহূর্তে নিজেকে স্থির রাখতে পারলেও আজ মটেও স্থির রাখতে পারছে না। তার পা কাঁপছে, বুকটা কেমন খালি খালি লাগছে অস্থিরতায় নিজেকে দমিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়ছে অপূর্বের। অপূর্ব চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো সাথে নিজেকে বোঝালো প্রিয়তার কিছু হবে না। নিয়তি তার সাথে এভাবে খেলতে পারে না। অপূর্ব তার মোবাইলে তানভীরের মেসেজটা দেখলো। যেখানে তানভীর লিখেছিল,

‘ আব্রাহাম জেল থেকে পালিয়েছে অপূর্ব। সাবধান!’

মেসেজটা পড়ে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে অপূর্বের মনে হচ্ছে তার সত্যি প্রিয়তার লাইফে আসা ঠিক হয় নি সে ভুল করেছে। অপূর্ব যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত ঠিক তখনই তার কাঁধে হাত রাখলো অপূর্বের বাবা। বললেন,

‘ এভাবে ভেঙে পড়ো না অপূর্ব, আমরা সবাই আছি তো।’

বাবার একটুখানি কথায় অপূর্ব যেন আরো অবুঝ হয়ে পড়লো। হুট করেই বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ বাবা ওর কিছু হবে না তো, ওর কিছু হয়ে গেলে আমি যে পাগল হয়ে যাবো।’

অপূর্বের কথায় এক গম্ভীর আওয়াজে বললো অপূর্বের বাবা,

‘ ওভাবে বলো না তো বউমার কিছু হবে না। আর নিজেকে সামলাও এমনভাবে চললে আমি আমার নাতি-নাতনীদের মুখ দেখবো কি করে?’ নিজেকে শক্ত রাখতে শিখ আমাকে দেখেছো আজও কত শক্তিশালী আমি। তোমরা চাইলে তোমাদের আরো পাঁচ দশ ভাইবোন গিফট দিতে পারি এখনও।’

অপূর্ব ভ্রু-কুচকে বাবার দিকে তাকালো। বললো,

‘ তুমি কি আমার সাথে মশকরা করছো?’

‘ ইডিয়েটের মতো কথা বলো না তো, এটা একটা মশকরা করার মতো সময়।’

অপূর্ব তার বাবার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো। যা দেখে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো অপূর্বের বাবা,

‘ ওভাবে তাকাবা না তো, আমি তোমায় মটেও ভয় পাচ্ছি না।’

অপূর্ব ভড়কে গেল বাবার এহেম কথায়। বললো,

‘ আমি ভয় পাওয়ার মতো তাকাই নি বাবা।’

‘ হবে হয়তো তবে তুমি কি জানো তোমার চোখে কেমন লাল লাল মারবেল বসানো তাকালেই মনে হয় রেগে আছো।’

‘ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে বাবা।’

‘ অদ্ভুত তো এখানে বাড়াবাড়ির কি হলো?’

‘ আমার বউটা অপারেশন থিয়েটারের আছে আর তুমি,

অপূর্বের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই অপূর্বের বাবা বলে উঠলেন,

‘ তো বউ কি তোমার একার আছে আমার নেই। তুমি জানো তোমার বউয়ের চেয়ে আমার বউ কত সুন্দর? আর আমিও যথেষ্ট সুন্দর।’

‘ কোথায় লেখা আছে তুমি সুন্দর?’

‘ তোমার চেহারায়।’

‘ মানে?’

‘ মানে আবার কি তুমি দেখতে একদম আমার মতো হয়েছো কতশত মেয়ে তোমার জন্য পাগল। মানেটা বুঝলে আমি সুন্দর তাই তুমি সুন্দর আর তুমি সুন্দর বলে মেয়েরা তোমার জন্য এত পাগল।’

বাবার অদ্ভুত লজিকের কথা শুনে অপূর্ব খানিকটা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,

‘ আমার মাথা কিন্তু এবার সত্যি সত্যি গরম হচ্ছে বাবা।’

‘ তো মাথা কি তোমার একার আছে আমার নেই। আমি সবসময় আমার মাথা ফ্রিজের মতো রাখি বলে ভেবো না আমার মাথায় গ্যাসের চুলার মতো আগুন নেই। মনে রাখবে আমার মাথায় আগুন না থাকলে তোমার মতো এত আগুনওয়ালা ছেলের পয়দা দিতাম না।’

অপূর্ব পারুক চুপ হয়ে যাক। এই প্রথম যেন বাবার কথায় পুরোপুরি আটকে যাচ্ছে অপূর্ব। অপূর্ব বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ বউটাকে একবার সুস্থ হতে দেও তারপর তোমায় দেখছি।’

‘ দেখা দেখির কি আছে আমায় আবার বিয়ে দিবে নাকি।’

এবার সহ্যের সীমা অতিক্রম হচ্ছে অপূর্বের। অপূর্বের বাবা ছেলের কাজ দেখে ভিতরে ভিতরে হাল্কা শান্তি অনুভব করছে। অপূর্বের বাবা ইচ্ছে করেই এমনটা করছে কারন তার ছেলেটা যে অস্থিরতায় পুরো শেষ হয়ে যাচ্ছিল। অপূর্ব যথেষ্ট শক্তপক্ত ছেলে সহজে নিজেকে উত্তেজিত করে না কিন্তু আজ। অপূর্বের বাবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

‘ শোনো অপূর্ব, আমার কিন্তু এক বছরের মাথাতেই নাতি-নাতনির মুখ দেখতে চাই।’

বাবার কথা শুনে খানিকটা মিনতির স্বরেই বললো অপূর্ব,

‘ ওরে আমার বাপ এবার তুমি চুপ করো। বউডা আমার আগে ভালো হোক তারপর তোমার মুখ দেখাদেখি দেখছি।’

ছেলের কথায় প্রচন্ড বেগে হাসি পাচ্ছে অপূর্বের বাবার কিন্তু তিনি হাসছেন না। নিজেকে শান্ত রেখে বললো,

‘ ঠিক আছে। এবার কিছু সিরিয়াস কথায় আসি। গুলিটা কে করেছে? কেন করেছে? কোনো বিরোধী দলের লোকেরা করেছে?’

উত্তরে গম্ভীর কণ্ঠে বললো অপূর্ব,

‘ আহিল করেছে।’

অপূর্বের বাবা যেন চরম বেগে অবাক হয়ে গেল অপূর্বের কথায়। অবাক হয়েই বললেন,

‘ আহিল কোন আহিল ওই যে বছর খানেক আগে রুহি,

মাথা নাড়ায় অপূর্ব। প্রিয়তার বাবা যেন পুরোপুরি চমকে গেল। নিশ্চুপ বনে ছেলের পাশে বসলেন। বললেন,

‘ ও চায় কি?’

‘ সত্যিটা জানতে চায় বাবা।’

‘ তাহলে বলছো না কেন?’

‘ তুমি কি জানো না আমি কেন বলছি না।’

অপূর্বের বাবা চুপ হয়ে যায় তার মুখ থেকে আর কথা আসে না। বাবাকে চুপ হতে দেখে এবার অপূর্ব বলে,

‘ কি হাওয়া ফুস হয়ে গেল? এই হাওয়া নিয়ে তুমি আমাদের পাঁচ দশ ভাইবোন গিফট করো। ছিঃ

অপূর্বের বাবা কিছু বলতে নিবেন। এরই মাঝে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলো ডাক্তার। সবাই দৌড়ে গেল ডাক্তারের কাছে আকিব ওরা দাঁড়িয়ে ছিল অপূর্ব আর অপূর্বের বাবার থেকে খানিকটা দূরে তারাও ছুটে আসলো কিন্তু অপূর্ব উঠলো না। ঠায় বসে রইলো। আরোহী উত্তেজিত কন্ঠে বললো,

‘ ডাক্তার সাহেব পেশেন্ট কেমন আছেন?’

ডাক্তার কিছুক্ষন চুপ রইলো যা দেখে অপূর্ব আর চুপ থাকতে না পেরে দৌড়ে এগিয়ে আসলো। বললো,

‘ কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেন?’ আমার বউ ঠিক আছে তো ডাক্তার?’

এবার ডক্টর মুখ খুললেন। বললেন,

‘ হুম তিনি ঠিক আছেন আমরা তার বুকে লাগা গুলিটা বের করে ফেলেছি। তবে ওনাকে খুব সাবধানে রাখতে হবে, যত্ন নিতে হবে অনেক। তাহলেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।’

সবাই খুশি হলো। অপূর্বও খুশি হলো। যাক তার প্রেম বালিকার কিছু হয় নি। সে ঠিক আছে। অপূর্ব তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ আমার বউটার তাহলে কিছু হয় নি বাবা। তোমার বলা ডিলটা পাক্কা। আর হ্যা ‘থ্যাংক ইউ’। ফাইনালি তুমি তোমার ছেলেকে কথার জালে হারিয়েই দিলে।’

অপূর্বের বাবা হাসলেন। অপূর্বের পিঠে হাত বুলালো মুহুর্তেই। সবাই হাসলো। আকিব, আরোহী, অয়ন, প্রেমা, প্রিয়তার চাচা, সহ আরো আত্মীয়দের মধ্যে প্রায় সবাই এসেছে। সবার মুখেই হাসির রেখা।’

অপূর্ব আবার গিয়ে বসলো সামনের চেয়ারটায়। এর কিছুক্ষনের মাঝেই অপূর্বের ফোনটা বাজলো। আননোন নাম্বার। তবে নাম্বারটা যে কার তা আন্দাজ করতে পারছে অপূর্ব। অপূর্ব ফোন তুললো কিছু বলার আগেই আব্রাহাম বললো,

‘ বুঝলি অপূর্ব তোর বউয়ের ভাগ্যটাও তোর মতো ভালো যে চ্যালাকে দিয়ে গুলিটা করিয়ে ছিলাম সেই চ্যালায়ও টার্গেট মিস করলো। বেঁচে গেল না তোর বউ তবে বেশিক্ষণ বাঁচবে না ফর এক্সামপেল, ধর তোর বউয়ের অক্সিজেন মাস্কটা তোর আড়ালে কেউ খুলে নিল তারপর তোর বউ শ্বাস রোধ করে মারা গেল, আবার ধর রাতের আধারে কেউ চাকু দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করলো তোর বউয়ের পেট, বুঝতেই পারছিস বাবার মতো মেয়েও যাবে আবার এমনও হতে পারে স্যালাইনের সাথে বিষের ইনজেকশন পুস করে মেরে ফেলা হলো। অফার তো কতগুলো দিলাম এবার তোর কোনটা ভালো লাগবে বল।’

আব্রাহামের কথায় এবার অপূর্বের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। চোখ মুখ রক্ত রাঙা রঙে রাঙিত হলো। ছেলের এই রূপটা নজরে আসলো অপূর্বের বাবার। অপূর্ব তার বাবাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিল যা দেখে অপূর্বের বাবা বললো,

‘ কোথায় যাচ্ছিস?’

‘ কাটা উপড়াতে। শোনো আমি না আসা পর্যন্ত আমার বউটাকে নজরে রাখবে বাবা ওর কেভিনে যেন কেউ না ঢোকে সেটাও খেয়াল রাখবে।’

বলেই হন হন করে চলে গেল অপূর্ব আকিব সঙ্গে যেতে চাইলেও অপূর্ব নিল না।’

অপূর্বের বাবা চেয়ে রইলো ছেলের যাওয়ার পানে সে বুঝেছে ভয়ংকর এক ঝড়ের মুখে পড়তে চলেছে অপূর্ব। তবে শেষের জয়টা অপূর্বেরই হবে দোয়া দিয়ে দিল অপূর্বের বাবা।’

____

সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে চারিপাশ অন্ধকারে টুইটুম্বর। শুঁকনো পাতার ভিড়ে এক কবর স্থানের সামনে বসে আছে আব্রাহাম। কবরটা রুহির আব্রাহাম সেই বিকেল থেকেই এখানে বসে আছে তার মনে কোনো ভয় নেই আব্রাহাম জানে অপূর্ব আসছে তার কাছে। আসুক এবার আব্রাহাম জেনেই ছাড়বে খুনটা কে করেছে? খুনটা যেই করে থাকুক না কেন তাকে নিজ হাতে শেষ করেই দম ছাড়বে আব্রাহাম। তারপর না হয় সেও চলে যাবে তার রুহির কাছে। আব্রাহাম রুহির কবরে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

‘ আজ কতগুলো দিন চলে গেল তোমায় দেখি না আমায় ছেড়ে কেন চলে গেলে রুহি?’

জবাব কি আর আসলো? আসলো না তো। আব্রাহাম অনেকক্ষণ ওভাবে থেকে হেঁটে যেতে লাগলো একটা বাড়ির উদ্দেশ্যে বাড়িটা নিজের নয়। বাংলাদেশ আসার পর সে সেখানেই থাকে। অপূর্বের জন্য আব্রাহাম সেই বাড়িতেই অপেক্ষায় করবে এবং হেঁটে হেঁটেই সেখানে যাবে। কারন কোনো তাড়া নেই অপূর্বের আসার যে এখনো ঢের দেরি।’

#চলবে….

#TanjiL_Mim♥️