আজ শুভ্রর বিয়ে পর্ব-০১

0
64

#আজ_শুভ্রর_বিয়ে
১ম পর্ব

আপনি রান্না করতে পারেন?
– ডিম ভাজিকে যদি রান্না বলেন তাহলে পারি।
শুভ্রর কথায় হেসে ফেললো তুলি।

খুব মোটা লেন্সের চশমা পরা আমাদের গল্পের নায়ক শুভ্র ভাবছে তুলি নামের মেয়েটা ওর এই কথায় হাসলো কেনো।

হেসেছি আপনার কথা বলার ধরনে…
মুখে হাসি নিয়ে শুভ্রকে চমকে দিয়ে বললো তুলি।
আমি খুব ভালো রান্না করতে পারি। আমি বাড়ির মেঝো মেয়েতো। আর বাড়ির মেঝো মেয়েরা সব সময় খুব ভালো রাঁধুনী হয়। কেনো জানেন?

শুভ্র বুঝতে পারছেনা অযথা মেয়েটা এতো বক বক করছে কেনো। তারপর ও ভদ্রতা করে বললো না জানিনা…

কারণ হলো… বেশির ভাগ বাড়িতে বাড়ির বড় মেয়েরা থাকে মার আদরের কন্যা যাকে মা কোনোদিনো রান্না ঘরে যেতে দেয় না। এরা আবার একটু পড়াশোনায় ও ভালো হয়, অবসর সময়ে গল্পের বই পড়া, গান শোনা এগুলো তাদের কাজ। অন্যদিকে ছোট মেয়ে গুলো থাকে এক তো বাবার আদুরে তার উপর প্রচন্ড জেদী। রান্নাঘর বলে বাড়িতে যে কোনো ঘর আছে তাদের অনেকেরই জানা নেই।এর মাঝে সবচেয়ে অবহেলিত মধ্যমা কন্যা, ঐ যে বিয়ের কার্ডে লেখা থাকে না আমাদের মধ্যমা কন্যার সাথে ওমুকের বিবাহ, সেই মধ্যমা কন্যাই সবার অগোচরে সেরা রাঁধুনি হয়ে যায়।

শুভ্রর কুচকানো ভুরু আরেকটু কুচকে জিজ্ঞেস করলো এ ধরনের কি কোনো জরীপ হয়েছে..? আপনি কি করে জানলেন এতো কিছু..?

আপনি কিন্তু খুব মজা করে কথা বলেন। আপনার সাথে যার বিয়ে হবে তার জীবনটা আর যাই হোক বোরিং হবেনা।
না কোনো জরিপ হয়নি। অন্যদের ক্ষেত্রে এমন হয় কিনা তাও জানি না আমি আমার অভিজ্ঞতাটাই বললাম।একবার কি হয়েছে শোনেন, মা হঠাৎ তার গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছে আর ওদিকে বাবা তার অফিসের কয়েকজন কলিগকে দাওয়াত করে বসেছে। বাবা জানতো না মা এমন হুট করে চলে যাবে। হয়তো বাবা এমন হুটহাট মানুষ দাওয়াত দেয় বলেও মা রাগ করে চলে যেতে পারে। এখন ঘটনা হলো বাবা বাড়ি এসে মাকে না দেখে বললো তুলি তুই ওনাদের চা দেয় আমি পেছনের গেট দিয়ে যেয়ে ঝুনুর বিরানী নিয়ে আসি। আমি বললাম বাবা ঝুনুর বিরিয়ানি আনা লাগবেনা বাসায় তুলির বিরিয়ানি আছে সেটাই গরম করে দিয়ে দিই। বাবা হাফ ছেড়ে বাচলেন। সেদিন তুলির বিরিয়ানি খেয়ে বাবার কলিগরা এতো মজা পেয়েছিলেন শেষে বাবা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মা তুলির বিরিয়ানির ঠিকানাটা একটু দেয় আমার কলিগরা অনেক করে চাচ্ছে। দোকানের বিরিয়ানি আনিয়েছি বলে ওনারা কিছুই মনে করেননি উল্টো তুলির বিরিয়ানি খেয়ে খুব খুশি হয়েছেন।’ আমি কয়েকটা ছোট ছোট কাগজে লিখলাম তুলির বিরিয়ানি ঘর নিচে আমাদের ঠিকানা। বাবা ভালো করে না দেখেই কাগজ গুলো তার কলিগদের দিয়ে দিলেন। এবার বুঝতে পেরেছেন শুভ্র সাহেব আমি কতো অবহেলিত মধ্যমা কন্যা।

শুভ্রর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তুলি মেয়েটাকে ওর একদমই পছন্দ হয়নি। কিন্তু কেমন যেনো মায়া লাগছে। মেয়েটার ভেতরে চাপা কষ্ট আছে বলে মনে হচ্ছে। যখন মানুষের ভেতর কথার আগ্নেয়গিড়ি থাকে তখনই এমন অগ্নুৎপাত হয়। তাও সব সময় না হঠাৎ কোনো পরিবেশে অচেনা কোনো মানুষের সামনে সে তার কথার লাভা ছড়িয়ে দেয়।শুভ্র আধা ঘন্টা যাবত এই মেয়ের সামনে বসে আছে তাতেই তার কথা লাভায় শুভ্রর মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই মেয়ের সাথে সারাজীবন সংসার করতে গেলেতো শুভ্রর পার্মানেন্ট মাইগ্রেন হয়ে যাবে।তারপর একসময় তীব্র ব্যাথায় ব্লেড দিয়ে কপালে আঁচড় কাটতে লাগবে। শুভ্রর এক মামার এমন সিরিয়াস মাইগ্রেন পেইন উঠতো যে টিকতে না পেরে বেচারা ব্লেড দিয়ে কপাল কাটতো।

আমি কথা বলে বলে আপনার মাথা ধরিয়ে দিয়েছি তাইনা? আসলে হয়েছে কি আমি কথা বলার তেমন সুযোগ পাইনা তো, তাই আমার ভেতরটা কথার ঘুমন্ত আগ্নেয়গিড়ি হয়ে আছে। মাঝে মাঝে হঠাৎ জেগে উঠে কথার অগ্নুৎপাত হয়ে যায়।
আমি রিয়েলি রিয়েলি সরি
একটা প্যারাসিটামল খাবেন, আমার ব্যাগে আছে,
নাকি টাইগার বাম দিবো টাইগার বাম মাথা ব্যাথার জন্যে বেস্ট।

শুভ্র রীতিমত ঘাবড়ে গেলো। এই মেয়েরতো অন্তঃচক্ষু আছে। ওর ছোট চাচা একজন সাইকিয়াট্রিস্ট অবসর সময় মানব চরিত্রের বিচিত্র দিক নিয়ে গবেষনা করা ওনার হবি। সেই ছোট চাচাই একবার বলেছিলেন, ‘জানিস শুভ্র কিছু মানুষ আছে যাদের অন্তঃচক্ষু থাকে। যা দিয়ে তারা মানুষের অন্তরের কথা পড়তে পারে। সবারটা পারেনা যাদের অন্তর পরিষ্কার তাদেরটা পারে।এটা একটা গুন বলতে পারিস আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ভয়াবহ অভিশাপ ও। ছোট চাচাকে এ ব্যাপারটা নিয়ে আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে। তবে একটা ব্যাপার ভেবে ভালো লাগছে শুভ্রর অন্তরটা এখোনো পরিষ্কার না হলেতো এই মেয়ে এভাবে সব পড়তে পারতোনা।

শোনেন শুভ্র সাহেব আপনাকে একটা কথা বলি, আমি জানি আপনার আমাকে পছন্দ হয়নি আর এটা জানার জন্য অন্তঃচক্ষু থাকতে হয়না এটা এমনিতেই বোঝা যায়। মানে সব মেয়েরাই বুঝতে পারে যে সামনের ছেলেটা তাকে পছন্দ করেছে কি…করেনি। এখন কথা হচ্ছে আপনি বুঝতে পারছেন না, আপনি আমাকে না কিভাবে করবেন তাইতো?
আপনার আমাকে না করতে খুব মায়া লাগছে, বাড়িতে সবার অবহেলিত এমন একটা মেয়েকে আপনি না করবেন কি করে..?
বিশ্বাস করেন আমি আবারও বলছি আপনার সাথে যে মেয়ের বিয়ে হবে সে খুবই ভাগ্যবতী হবে। কারন আপনার ভেতরটা মায়ায় ভরা।
এখন আপনাকে আমি আসল ঘটনা বলি, ‘আমি একজন কে তীব্র ভাবে ভালোবাসি’
সেই একজনটা আর কেউনা আমাদেরই বাড়িতে থাকে আমার মার দুঃসম্পর্কের এক ভাই, দূরের হলেও সম্পর্কে উনি আমার মামা হন। আর আরো বড় সমস্যা হলো আমার মনে হয় আমার সেই মামা আমার না আমার ছোট বোনের প্রেমে তলিয়ে গেছে। একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন আমি কিন্তু বলিনি হাবু ডুবু খাচ্ছে। মানুষ হাবু ডুবু খেলে তার একটা বাঁচার সম্ভাবনা থাকে তলিয়ে গেলে একেবারেই শেষ। আর আমার ব্যাপারটাও তাই আমিও ওনার প্রেমে তলিয়েই গেছি বলা যায়। আমাদের কারোরই বাঁচার কোনো চান্স নেই। তাই আপনার আর শুধু শুধু কষ্ট পেতে হবেনা। আপনি নির্দ্ধিধায় না বলে দিতে পারেন।

চায়নিজ রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই শুভ্র বললো, তুলি আপনি কিভাবে যাবেন..?
আপনি যান, আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, আমি একটা রিক্সা নিয়ে নিবো।

শুভ্র ঠিক ওর নামের মতোই সাদা একটা গাড়িতে উঠে চলে গেলো। তুলিও বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো, এখন বাজে সাতটা ঠিকঠাকমতো হাঁটলে নয়টার মধ্যে ও বাড়ি পৌছে যেতে পারবে। আর ও কয়টায় বাড়ি গেলো কি গেলোনা সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কেউ নেই বাড়িতে। মা গিয়েছেন উপরের তলায় আন্টির বাসায় আড্ডা দিতে দশটার আগে আসবেন না আর বাবা বসার ঘরে বসে দাডোয়ান করিম চাচার সাথে দাবা খেলছেন। দাবা খেলার সময় যদি ভূমিকম্পও হয় তাতেও বাবার মনোযোগ সরানো যাবেনা।আর তাদের কারো মনে হয় মনেও নেই আজ তুলির শুভ্রর সাথে দেখা করার কথা। শুভ্র সম্বন্ধের কথা উপর তলার আন্টিই বলেছিলেন। তাই শুধু শুধু আর অটোর টাকাটা খরচ করে কি লাভ। বরং হেটে হেটে এটা সেটা ভাবতে ভাবতে যাওয়া যাবে।

রাত পৌনে নয়টার দিকে তুলি যখন বাড়িতে এসে পৌঁছালো ওকে অবাক করে দিয়ে গেটের সামনে থেকে দৌড়ে এসে মা ওকে জডিয়ে ধরলো। বাবাও দাবা খেলা থেকে উঠে এসেছেন। কি ব্যাপার ভূমিকম্পের থেকে ভয়াবহ কিছু হলো নাতো।

উপর তলার আন্টি বললেন, তুলি তুই কি যাদু করেছিস, মন্ত্রী সাহেবের ছেলে শুভ্র ওর মা কে যেয়ে বলেছে ও বিয়ে করলে তোকেই করবে নাহলে আর কাউকে করবে না।

চলবে…