আজ শুভ্রর বিয়ে পর্ব-০২

0
51

#আজ_শুভ্রর_বিয়ে
পর্ব ২

————
হ্যালো, আমি কি শুভ্র সাহেবের সাথে কথা বলতে পারি

– জ্বী বলেন

শুভ্র সাহেব আমি তুলি

– কোন তুলি? ও আচ্ছা তুলির বিরিয়ানি ঘরের তুলি?

জ্বী, শুভ্র সাহেব আপনাকে আমার কিছু জরুরি কথা বলার আছে। আপনি কি আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন।

– যতক্ষন আপনি আমাকে শুভ্র সাহেব বলবেন ততক্ষন পর্যন্ত পারবোনা। শুভ্র বললে চেষ্টা করে দেখতে পারি।

শুভ্র

– পুরো বাক্যটা বলুন

শুভ্র আপনি কি আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবেন

– অবশ্যই এখন আসবো

না এখন না… বাড়িতে না আপনি আপনার মোবাইল নম্বরটা বলেন আমি জায়গা, সময় মেসেজ করে দিবো।

————-
তুলি আর কতক্ষন…
তোর আন্টি বলেছে তৈরি হয়ে থাকতে তোর জন্য ভালো কিছু ডিজাইনার সালোয়ার কামিজ কিনে দিবে।
মন্ত্রী সাহেবের স্ত্রী খুবই স্টাইলিশ মহিলা। ওনাদের বাসার কাজের লোকেরাও নাকি খুব পরিপাটি থাকে।
সামনের কয়েকটা দিন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন ছেলে পছন্দ করলেইতো আর সব হয় না। ছেলের বাবা মার পছন্দ করাটাও জরুরি। বিয়েতো আর দুটো মানুষের মধ্যে হয় না দুটো পরিবারের মধ্যেও হয়।

মা তুমি একটু বকবক বন্ধ করবে
আমাকে যা করতে বলছো তাইতো করছি
কিন্তু তোমার কি মনে হচ্ছেনা এরকম অসম সম্পর্ক করাটা ঠিক নয়। বিয়ে যেমন দুই পরিবারের মধ্যে হয় তেমনি পরিবার দুটি বরাবরের হলে ভালো। আকাশ আর পাতালের মধ্যে কি ব্রিজ তৈরি করা যায়।

চুপ থাকতো এতো কথা বলিস না।
আমরাতো আর ওনাদের জোড় করিনি।
ওনাদের ছেলে তোকে পছন্দ করেছে আর তারা তাদের ছেলের পছন্দেই খুশি।গত কয়েকদিন ধরে তুলির উপর এক রকম অত্যাচার চলছে বলা যায়। মা তুলির খেয়াল করেনা বলে এতোদিন যে কষ্ট পেতো সেটা লাখ গুন ভালো ছিলো মার অতি খেয়াল আর যত্ন থেকে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকেই ওকে এই পর্যন্ত তিন বার পার্লারে যেতে হয়েছে আর পাঁচ বার শপিংয়ে। খুব সম্ভবত মা তার ডি পি এস টা ভেঙ্গে ফেলেছে। তুলি যতই না করছে কোনো কাজ হচ্ছে না, মা আরো উৎসাহিত হয়ে একের পর এক আইডিয়া বের করেই যাচ্ছে। ও আচ্ছা আরোতো বলা হয়নি বাসার জন্য নতুন সোফা সেট, সারা বাড়ির পর্দা আর একটা চাকা সহ টি টেবিল ও অর্ডার করা হয়েছে। কিছু বললেই মা বলছেন, মন্ত্রী সাহেব হবে আমাদের বিয়াই সাহেব তখন এসব টাকা উঠে আসতে বেশি সময় লাগবে না।

আচ্ছা একটু শুনি কি করে উঠে আসবে, তুমি কি তোমার মেয়ের শশুরের কাছে হাত পাতবে।
আরে কিযে বলিস না তোর মাথার কোনো ঠিক নেই।
শোন্ গতকালই তো গলির মুখে মোখলেস সাহেব ঐ যে মহুয়ার বাবা তোদের স্কুলে যে পড়তো উনি আমাকে থামালেন বলেন কিনা, ‘ভাবি শুনলাম আপনি নাকি মন্ত্রী সাহেবের বিয়াই হচ্ছেন। শুনে কিযে আনন্দ হলো। আমার একটা সুপারিশ আছে আমার আর ছয়মাস পর রিটায়ারমেন্ট ওনাকে বলে যদি আর দুটা বছর চাকরির মেয়াদটা বারিয়ে দিতে পারেন, আমি আপনাকে খুশি করে দিবো।’

কি বুঝলি..?

– কিছুই বুঝিনি

খুশি করে দিবো হলো কোড ওয়ার্ড… মানে মোটা একটা বান্ডিল দিবে আরকি

– মা তুমিও না অনেক বোকা মহুয়ারা দুনিয়ার কিপটা তোমাকে একটা শাড়ি এনে দিয়ে বলবেন এই যে আপনার খুশি হওয়ার দ্রব্য।

যা যা তুই বেশি বুঝিস না সেগুলো আমি আগেই কথা বলে ঠিক করে নিবো

-বিয়ে দুইটা মানুষের জীবনের ব্যাপার এটা কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে করা কি উচিত বলো..?

আরে এসবই তো ভাবতাম না যদি শুভ্র তোকে পছন্দ না করতো। তোর উপর তলার আন্টি বললো তোকে এক দেখাতেই নাকি শুভ্রর হাবু ডুবু অবস্থা।

– হাবু ডুবু অবস্থা হলেতো ভালই ভাগ্যিস তলিয়ে যায়নি আমার মতো

কী… কী… বললি..?

মার কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে গেলো তুলি
মা বেশি ফালাফালি করছে থাকুক একটু ধাঁধার মধ্যে…

————
বাসার গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় জোড়ে একটা ধাক্কা খেলো জহির মামার সাথে। আহারে আম্মাজান কতো জানি ব্যথা পেয়েছেন। আমারে মাফ কইরা দিয়েন। আমি আপনারে দেখতে পাইনি।

– আপনাকে না বলেছি আমাকে আম্মাজান বলবেন না। আপনিতো আমার আপন মামা নন।কোনো সম্পর্কেই মামা নন।আমার মাকে বোন বলেন তাই মামা। ঠিক বলেছিনা..?

জ্বী…

– যদি আমার মাকে চাচি বলতেন তাহলে আমি আপনার চাচাতো বোন হতাম আর মাওই বললে কি হতাম বিয়াই তাইনা..? বিয়াইয়ের সম্পর্ক তো ফাজলামোর সম্পর্ক। হাসি ঠাট্টার সম্পর্ক, এখন থেকে আপনি আমাকে বিয়াই বলবেন।

আম্মাজান আপনি এগুলো কি বলতেসেন আমিতো কিছুই বুঝতে পারলাম না।

– বুঝা লাগবে না আজকের পর থেকে আমাকে শুধু ‘তুলি’ বলবেন, তু…. লি….. ওকে..?

জ্বী অবশ্যই

————-
আপনার সমস্যাটা কি বলেন তো, প্রথমবার দেখার পর যেরকম বিরক্ত হচ্ছিলেন আমিতো ভেবেছিলাম আপনার আমাকে পছন্দ হয়নি।

– ঠিক ধরেছেন

মানে

– মানে আসলেই আমার আপনাকে পছন্দ হয়নি।

তাহলে আপনার মাকে যেয়ে বলেছেন কেনো বিয়ে করলে আমাকেই করবেন, অন্য কাউকে করবেন না।

– এ কথাতো আমি বলিনি

আপনি বলেন নি..?

– না সত্যি, আমি এরকম কিছুই বলিনি

তাহলে কি বলছেন..?

– আম্মা জিজ্ঞেস করেছে মেয়ে পছন্দ হয়েছে? আমি বলেছি মেয়ে পছন্দ হয়নি কিন্তু তাতে সমস্যা নেই আমি বিয়েতে রাজী আছি

এটা কি ধরনের কথা, পছন্দ না হলে আপনি আমাকে বিয়ে কেনো করবেন..?

– ঝামেলা মুক্ত হওয়ার জন্যে, আমার যতদিন পর্যন্ত মেয়ে পছন্দ না হবে আম্মা আমাকে একটার পর একটা মেয়ে দেখাতেই থাকবে। মেয়ে দেখতে দেখতে আমি বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেলে পাবনা পাঠিয়ে আমাকে চিকিৎসা করিয়ে এনে আবার মেয়ে দেখানো শুরু করবে। এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবার জন্যে আপনাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গিয়েছি। আরেকটা কারণ ও আছে

কি সে কারণ..?

– আপনি খুব সুন্দর করে মিথ্যা বলেন, আমি একদমই মিথ্যা বলতে পারিনা, তাই যারা সুন্দর করে মিথ্যা বলে তাদের ব্যাপারে আমার খুব আগ্রহ। আমাদের বিয়ে হলে দারুন হবে তাইনা, চরম সত্যবাদী স্বামীর চরম মিথ্যাবাদী বউ।

আপনার কেনো মনে হলো আমি মিথ্যা বাদী

– আমি আগে থেকেই জানতাম আপনারা দুই বোন আর আপনি বড়। আপনার বায়োডাটাতে লেখা ছিলো। প্রথম কথা গুলো যেহেতু মিথ্যা সেহেতু আমি ধরে নিয়েছি আপনার দুঃসম্পর্কের মামার বিষয়টাও বানানো। কোনো কারণে হয়তো আপনি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছেন না। তাই কথা গুলো বলেছিলেন যেনো আমার আপনার উপর মায়া হয়। আর আমি আপনাকে না করে দেই। আপনি শুধু অসাধরন মিথ্যাবাদীই না খুব বুদ্ধিমতীও। আমি হ্যা বলাতে আপনি হতভম্ব হয়ে গেছেন তাইনা..? কাউকে অবাক করা কিন্তু সহজ কোনো ব্যাপার না সবার এ ক্ষমতা থাকেনা।

দেখেন শুভ্র সাহেব আপনি আপনার আধ্যাত্মিক কথা বার্তা আপনার ভবিষ্যৎ বউয়ের জন্য জমিয়ে রাখেন। আজকে বাড়িতে যেয়ে বলবেন আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না। বুঝেছেন কি বলেছি…

– বুঝেছি

জিজ্ঞেস করলেন না কেনো বললাম এ কথা

– আমি না জিজ্ঞেস করলেও আপনি বলবেন

হ্যাঁ বলবোতো বটেই, এক নম্বর কারণ আমি অন্য কথাগুলো মিথ্যা বললেও এটা মিথ্যা বলিনি যে আমি একজনকে তীব্র ভাবে ভালবাসি। আর দ্বিতীয় কারণ হলো আপনাকে আমার একদমই পছন্দ হয়নি। আপনার মধ্যে একটা পন্ডিত পন্ডিত ভাব আছে। মেয়েরা পন্ডিত নয় বোকা জামাই পছন্দ করে। বুঝেছেন কি বলেছি..?

– জ্বী বুঝেছি, আপনি অনুমতি দিলে আপনাকে আজ বাসার সামনে নামিয়ে দেই

তুলিদের বাসার সামনে এসে শুভ্রর সাদা গাড়িটা থামতেই, ‘বাসায় যেয়ে না করে দিবেন কিন্তু’
বলতে বলতে তুলি নেমে গেলো।

হ্যালো আম্মা
হ্যা এই মাত্র তুলিকে নামিয়ে দিলাম
আম্মা আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখবে প্লিজ বিয়েটা তিন মাস পর না করে একটু তাড়াতাড়ি করা যায়না..!

চলবে…