#আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায়
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব১৪
দুদিন হতে চলল হসপিটাল থেকে রিলিজ পেয়ে নিজের বাসায় এসেছে রাশফিন। এখন মোটামুটি বেশ অনেকটাই সুস্থ রাশফিন। রাহেলা খাতুন যত্নের যেন কোনো কমতি রাখছেন না তার ছেলের জন্য।
তবে সব কিছু ঠিক থাকলেও রাশফিনের মন একদমই ঠিক নেই। অরনিশা একবারের জন্যও আর রাশফিনের সামনেই পরেনি। চোখ দুটো প্রিয় মানুষটিকে দেখার জন্য কতো আনচান করে কিন্তু এতো খুজেও পেল না অরনিশার দেখা। মনটা যে তার খালি বউ বউ করে। কিন্তু বউ তো বুঝেই না তার মনের কষ্ট। একা একা বিরবির করে বলে রাশফিন। পর মুহূর্তে কিছু একটা ভেবে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে রাশফিনের।
কাপা কাপা হাতে ফোনটা বের করে সাহস করে অরনিশাকে ফোন দেয় রাশফিন। কয়েকবার রিং হতেই রিসিভ করে অরনিশা।এতে রাশফিনের খুশি যেন উপচে পড়ছে।
-‘ কেমন আছো বউ? তোমাকে ছাড়া আমি মোটেও ভালো নেই যে, চলে আসো না বউ?
অরনিশা দাতে দাত চেপে বলল
-‘ আসবো না।
-‘ কেন বউ? সরি বললাম তো।
-‘ ফোন দিয়েছেন কেন আপনি আমায়? আর কখনো ফোন দিবেন না আমায়। আপনার সাথে কোনো কথা নেই আমার।
-‘ ও বউ শোনো না?
রাশফিনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুম করে ফোনটা কেটে দেয় অরনিশা। ফোনটার দিকে তাকিয়ে রাশফিন মাথায় হাত দিয়ে অসহায়ের মতো বসে থাকে কিছুক্ষণ।
পর মুহূর্তে কিছুটা একটা ভাবতেই যেন মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে রাশফিনের।
আড়াল থেকে ছেলের এমন কান্ড কারখানা দেখে মুচকি মুচকি হাসেন রাহেলা খাতুন।
.
.
.
রকিং চেয়ারে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে নিজের মেয়ের ছবি দেখছেন আর ছবিতে হাত বুলাচ্ছেন নাফিয়া রহমান। সেই সাথে চোখ দিয়ে তার অশ্রু কণা গুলো টপটপ করে পড়ছে মোবাইলের স্ক্রিনের ছবিটার উপর।
রুমটাকে তিনি পুরো অন্ধকার করে রেখেছেন। বাইরের রোড লাইটের আলোতে যত টুকু আলোকিত হয়েছে তাতে আবছা আবছা ঘরের কোণা দেখা যাচ্ছে। আজ সারা বাড়িতেও সন্ধ্যের বাতিটাও জ্বলেনি। হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে ভুতের বাড়ি। মেয়েকে ছাড়া যেন পুরো বাড়িটাই হাহাকার করছে। আজ এক সপ্তাহের বেশি হতে চলল ফারিহা মা*রা গেছে। তার কোল যে খালি হয়ে গেছে। তিনি যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না নিজের মেয়ের অ’কা’ল মৃ*ত্যুটা। বেচে থাকলে পুরো বাড়িটা যেন মাতিয়ে রাখত ফারিহা। মেয়ের সাথে তার ছিল অন্য রকম বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক। স্বামী মা*রা যাবার পর তার এই একমাত্র সম্বলই ছিল তার এই একমাত্র মেয়েটা ফারিহা। আর তিনি কিনা অরনিশা নামক মেয়েটার জন্যই খুইয়েছেন নিজের একমাত্র সম্বলটাকে।
কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি এসব। যখন মেয়ের মৃত্যুর কথাটা তার কর্ণ কুহরে গিয়ে বাড়ি খেল তখন যেন তিনি স্তব্ধ হয়ে যান কয়েক মুহূর্তের জন্য। পরে বোধগম্য হতেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে ঢলে পরেন।
রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে তিনি চোখ বুজে প্ল্যান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অরনিশার জন্যই যেহেতু সব কিছু হয়েছে, সেহেতু তিনিও দেখে নিবেন অরনিশা কিভাবে সুখে থাকে। প্রয়োজন পড়লে অরনিশাকে খু*ন করে তিনি জে*লের ভাতও পর্যন্ত খাবেন। তবুও শান্তিতে বাচতে দিবেন না অরনিশাকে। ওর জীবনটাকে একেবারে বি*ষিয়ে তুলবেন তিনি। তিনি তার কল্পনায় আকতে লাগলেন হী*ন স্বরযন্রের চিত্র গুলি।
হঠাৎ দরজায় কারো নক করার শব্দে ফিরে তাকালেন সেদিকে। অন্ধকারে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে কারও অবয়ব। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এই ব্যক্তিটি আহনাফ। আহনাফকে দেখে মুখে হাসির রেখা প্রশস্ত হলো নাফিয়া রহমানের। ইশারায় তিনি ভেতরে আসতে বললেন আহনাফকে। কাল অতি বিলম্ব না করে ভেতরে চলে যায় আহনাফ।
আহনাফকে আগেই নিজের বাড়ির চাবি দিয়ে দিয়েছিল ফারিহা। যে কারণে আহনাফের আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি। মেইন গেইট দিয়ে এসেই ও সোজা চলে যায় নাফিয়া রহমানের রুমে।
আহনাফ গিয়ে চেয়ার টেনে বসল নাফিয়া রহমানের পাশে। নাফিয়া রহমান আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললেন
-‘ আমার যে সব শেষ হয়ে গেল যে বাবা, আমার পুরো পৃথিবীটাই ছিল ফারিহা, আমার মেয়ে। সে-ই যে আর বেচে নেই…
কথাটা বলে নাফিয়া রহমান ডুকরে কেদে উঠলেন। নাফিয়া রহমানের অবস্থা দেখে আহনাফের মায়া হলো বেশ। কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকল আহনাফ। পর মুহূর্তে কিছু একটা ভাবল।
যত্ন সহকারে হাত বুলিয়ে দিল নাফিয়া রহমানের মাথায়। করুন কণ্ঠে বলল
-‘ যা হবার তা তো হয়েই গেছে, আম্মু৷ আমিও তো আপনার ছেলের মতোই তাইনা? আমাকে কি আপনি আপনার ছেলে হিসেবে মানতে পারবেন না? আমি যে মা ম*রা ছেলে। সেই কোন ছোটবেলায় হারিয়েছি মাকে। মায়ের চেহারাও মনে নেই আমার। আমি কি আপনাকে আম্মু বলে ডাকতে পারিনা? তাহলে আপনার অভাবও পূরণ হতো, আর আমার অভাবও পূরণ হতো।
আহনাফের কথা শুনে আহনাফের দিকে চমকে তাকালেন নাফিয়া রহমান। ছেলেটার জন্য বড্ড মায়া হলো তার। তিনি আহনাফের গালে হাত রাখলেন। পরম স্নেহময়ী মাতার মতো হাত বুলিয়ে দিলেন আহনাফের মাথায়। আদুরে গলায় তিনি বললেন
-‘ হ্যা, অবশ্যই, কেন নয় বাবা। তুমি তো আমার ছেলের মতোনই। ফারিহা আর তোমাকে কখনোই আলাদা চোখে দেখিনি আমি। তবে বিপত্তি তো ঘটিয়েছে ওই অরনিশা মেয়েটা। আজ ওর জন্য আমার মেয়েটা আজ বেচে নেই।
আমার বুকটা খালি হয়ে গেল যে বাবা।
কথাটা বলে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
আহনাফ কটমট করে বলে উঠল
-‘ যার জন্য আমার বোন মা*রা গেছে, তাকে আমি কিছুতেই ছাড়ব না। মিলিয়ে নিবেন আমার কথা।
নাফিয়া রহমান অবাক চোখে তাকালেন আহনাফের দিকে। আহনাফ তা দেখে মুচকি হেসে বলল
-‘ আমি জানি, আপনি মনে মনে প্ল্যান করছেন অরনিশাকে মা*রার জন্য। কিন্তু আপনার কোনো টেনশন করতে হবে না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আপনার এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কিছুই করতে হবেনা। যা করার আমি-ই করবো। আপনার ছেলে আহনাফ জুবায়ের, আমি আছি তো নাকি?
আহনাফের কথায় আস্বস্ত হলেন নাফিয়া রহমান, হাফ ছেড়ে যেন বাচলেন তিনি। কিন্তু কিছু একটা ভাবতেই কেমন যেন সন্দেহ হয় আহনাফকে। তিনি সন্দিহান চিত্তে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। মনে মনে আওড়ালেন
-‘ ছোটবেলার থেকে যার সাথে এতো ঘনিষ্ঠ, বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক তাকেই কিনা শাস্তি দিবে আহনাফ? শুধুমাত্র আমাদের সাথে দুদিনের ভালো সম্পর্কের জন্য এমনটা করবে আহনাফ? এরপর কোনো কারণে আমার সাথেও কোনো ঝামেলা বাধলে আমাকেও তো মে*রে ফেলতে দুবার ভাববেনা হয়তো আহনাফ।
পর মুহূর্তে আহনাফের ইনোসেন্ট চেহারা আর চাহনির দিকে তাকিয়ে তার মনের যেন সব সন্দেহ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল এক নিমেষেই। নিজেকেই নিজে কয়েক দফা বকা দিলেন, শুধু শুধুই এমন নিষ্পাপ ছেলেটাকে কেন সন্দেহ করছেন তিনি।
কি একটা মনে করে যেন তিনি নিজের গাড়ির চাবিটা দিয়ে দিলেন আহনাফকে।
এতে যেন আহনাফের চোখ মুখ খুশিতে চিক চিক করে উঠল। এটাই তো চাচ্ছিল এতোক্ষণ ধরে। পরিশ্রম বৃথা যায়নি তবে আহনাফের।
আহনাফের মুখে ফুটে উঠল রহস্যময় হাসি। ব্ল্যাকমেইলটা ভালো মতোই করতে পারে সে। এক মুহূর্তেই কিভাবে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো নাফিয়া রহমানকে। নাফিয়া রহমান যদি জানতেন যে তার-ই একমাত্র মেয়ে ফারিহাকে তার প্রাপ্য টাকার না দেওয়ার কারণে আহনাফ-ই মে*রে ফেলেছে, তাহলে কি নাফিয়া রহমান এতোটা করুনাময়ী হতেন আহনাফের উপরে? যদি জানতেন তাহলে হয়তো অরনিশাকে নয় আহনাফকেই কে*টে কে*টে স্লাইস করে ফেলতেন নাফিয়া রহমান।
#চলবে ~
আচ্ছা যদি আমি অরনিশা বা রাশফিন অথবা দুজনকেই মে*রে দেই তাহলে কি পাঠকগণ আমার উপর রা*গ করবেন?
কালকে সারাদিনই কারেন্ট ছিল না (ওয়াইফাই ইউজার হলে যা হয়) এই জন্য গল্প দিতে পারিনি। এই জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখীত।
পরিশেষে ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
~হ্যাপি রিডিং~
#আড়ালে_ভালোবাসি_তোমায়
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব১৫
-‘ রাশফিন এক্সিডেন্ট করেছে রে, অরনিশা মা। তুই শিগগীরই বাসায় আয়। আমার ছেলেটার এ কি হয়ে গেলো রে।
কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে মামনির এমন বাক্য আমার কর্ণ কুহরে পৌছাতেই যেন আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম। ধপ করে হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল বিছানার উপর। শূন্য মস্তিষ্কে ছুটে গেলাম রাশফিনের বাসায়। আমি এখন নিজের ভেতরেই নেই যেন।
এমনিই রাশফিন অসুস্থ ছিল তার উপর আবার এক্সিডেন্ট করল কিভাবে। এটাই বুঝতে পারছি না।
রাশফিনের অগোচরে আমি মামনির কাছ থেকে সব সময় খোজ খবর নিতাম রাশফিনের। আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মামনির কাছ থেকে এমন কথা শুনে ভড়কে গেলাম। কেমন জানি নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
রিকশা থেকে নেমে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে এক ছুটে চলে গেলাম রাশফিনদের বাসায়।
রাশফিনের রুমে গিয়ে দেখলাম চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে রাশফিন। মাথায় ব্যান্ডেজ করা আর হাত বেশ খানিকটা ছিলে গেছে।
আমি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম রাশফিনের কাছে। ধপ করে বিছানায় ওর পাশে বসে পড়লাম। একটু ঝুকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। ততক্ষণে আমার চোখ পানিতে টলমল করছে। চোখের পানিগুলো টপটপ করে রাশফিনের মুখে পড়তেই পিটপিট করে মেলে তাকাল রাশফিন।
প্রথমে আমাকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলো রাশফিন। কাপা কাপা হাতে আমার গালে হাত রাখে ওঠার চেষ্টা করল, তবে হাতে ব্যথা থাকায় উঠতে পারছেনা। চোখের পানিগুলো মুছে বললাম
-‘ অসুস্থ মানুষ, শুয়ে আছেন, শুয়েই থাকুন। আপনাকে কেউ উঠে বসতে বলেনি আর না আমি কোনো ভিআইপি মানুষ যে আমাকে দেখলেই উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান দিতে হবে।
আমার কথা শুনে মুচকি হাসল রাশফিন।
রাশফিন কিছুটা অবাকও হলো অরনিশার আচরণে যেখানে রাশফিনকে য*মের মতো ভ*য় পেতো, সেখানে রাশফিনের সাথে নির্দ্বিধায় কথা বলছে এই মেয়েটা। রাশফিনের ভালো লাগে এই অরনিশাকে, বউ বউ ভাব আছে ভেতরে। এটা ভাবতেই হালকা জোড়ে হেসে ওঠে রাশফিন।
রাশফিনকে এভাবে হাসতে দেখে ভ্র কুচকে এলো আমার। হাসি থামিয়ে রাশফিন তাচ্ছিল্যের সুরে বলল
-‘ কি গো বউ, কতো ফোন করে ডাকলাম তোমায়, তুমি একবারের জন্যও আমায় দেখতে এলে না। আজ হঠাৎ কেন এলে? ওহ বুঝতে পেরেছি, মরতে বসেছি তাই চোখের জল ফেলতে এসেছো এ বাড়ি? এমন সহানুভূতির প্রয়োজন নেই আমার। যদি এ কারণে এসে থাকো যেতে পারো তবে।
কথাটা বলে রাশফিন মলিন হেসে মুখ অন্যদিক ঘুরিয়ে নিল।
আমি এর কি উত্তর দিব ভেবে পেলাম না। কিন্তু বুঝতে পারলাম রাশফিনের কথা। আমি কি তবে রাশফিনকে একটু বেশি-ই কষ্ট দিয়ে ফেললাম।
রাশফিনের একটা হাত আমার হাতের মুঠোয় নিয়ে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। বলতে অনেক কিছুই চাচ্ছি তবে মুখ ফুটে বলতে পারছি না কিছু। রাশফিন আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। উত্তরের আশা না পেয়ে আবারও মুখ ঘুরিয়ে নিল। যে হাতটা ছিলে গেছে তাতে হাত বুলাতেই মৃদু চি*ৎকার করে ওঠে রাশফিন। আমি দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম
-‘ খুব ব্যথা করছে বুঝি? এক্সিডেন্ট করলেন কিভাবে?
-‘ গাড়ি চালাতে গিয়ে আমার সামনে হঠাৎ একটা বাচ্চা চলে আসায়, তাকে বাচাতে গিয়েই..
-‘ সবই বুঝলাম, তবে একটু সাবধানে কি চালানো যেতো না? আর আপনাকে এ অসুস্থ শরীরে কে আগ বাড়িয়ে বলছিল বাইরে যেতে?
-‘ বাইরে না গেলে, আমার হয়ে অফিসে যেত কে তুমি?
-‘ ছুটি নিতেন, এতে কি এমন সমস্যা হয়ে যেত। এমনিতেই আপনার টেনশনে ঘুমাতে পারিনা, তার উপর আবার.. আচ্ছা, আপনি বুঝেন না, আমি আপনাকে ঠিক কতোটা ভা…
দু হাত দিয়ে নিজের মুখটা চেপে ধরলাম আমি। রাশফিন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
-‘ কি বলতে গিয়ে থেমে গেলে?
-‘ ক কই ক কিছু ন না তো।
-‘ নো, আমি স্পষ্ট শুনেছি, তুমি আমাকে, কি যেন একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলে। ভয় নেই বলে ফেলো, শুনি একটু।
-‘ বললাম তো কিছু বলিনি আমি।
রাশফিন ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে অরনিশা কি বলতে চায় ওকে। এই মেয়েটার বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না। তবে ও নিজেও নাছোড়বান্দা, অরনিশার মুখ দিয়ে শুনেই ছাড়বে। সেটা আজ না হয় কাল, কিন্তু সে শুনেই ছাড়বে।
রাশফিন চোখ বন্ধ রেখে বলল
-‘ আমি কোনো কথা বললেই তো তুমি শুনবে না। যদি শুনতে তাহলে একটা কথা বলতাম।
-‘ কি বলবেন বলুন।
-‘ আমাদের বাসায় থেকে যাও। আর যদি চলে যাওয়ার জন্য এসে থাকো, তাহলে আবারও বলছি চলে যাও। শুধু শুধু আমার মায়া বাড়িও না। আমি কষ্ট হয় খুব।
রাশফিনের কথা শুনে আমার বুকটা ধক করে উঠল। একটু খানি শিক্ষা দিতে গিয়ে এই মানুষটাকে বেশিই কষ্ট দেওয়া হয়ে যাচ্ছে। আমি মনে হয় একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলছি।
তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বললাম
-‘ আজ যেতে হবে, আম্মু, আব্বুকে বলে আসিনি আমি। তাই যেতে..
-‘ তোমার আম্মু আব্বুকে বলা হয়ে গেছে আমার আগে থেকেই। এখন নিশ্চয়ই আর কোনো এক্সকিউজ নেই দেওয়ার মতো।
আমি আবাক হয়ে বললাম
-‘ কি বলেছেন আম্মুকে? আর আপনি বললেন কিভাবে, আপনি তো…
রাশফিন হেসে আমাকে এক টান দিয়ে ওর একদম কাছে নিয়ে এলো। আমি ভড়কে গেলাম। আমাকে চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাশফিন হো হো করে হেসে দিল
-‘ আরেহ্ মিসেস রাশফিন চৌধুরী, আমাকে দেখলে কি আপনার বোকা মনে হয়? বউ না পেয়ে, শশুর শাশুড়ীকে আমার সব বলা হয়ে গেছে।
-‘ ক কি বলেছেন আপনি?
আমার কথা শুনে বাকা হেসে বলল
-‘ অনেক কিছুই বলেছি। আমি ওতো কাচা কাজ করি না। শশুর শাশুড়ী থেকে পারমানেন্টলি অনুমতি নিয়ে নিয়েছি। নাও আপনি আমার সাথে থাকতে পারেন,জনাবা। এবার বাকিটা আপনার ইচ্ছা।
বলেই আমার নাকে নিজের নাকটা ঘষে নিল রাশফিন। আমার আরেকটু কাছে আসতেই মামনির ডাক শুনে রাশফিন ছেড়ে দিল আমায়। আমি ছাড়া পেতেই এক ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলাম।
দরজার কাছে এসেই পিছন ফিরে রাশফিনকে ভেঙচি কাটলাম। যাক বাবা এই অসভ্য লোকটার হাত থেকে বেচে গেলাম। তা না হলে কি না কি করে বসতো, ইস। ভাবতেই লজ্জায় মনে হচ্ছে মাটির নিচে চলে যাই।
এদিকে রাশফিন হেসে গড়াগড়ি খেতে থাকে। যাক অরনিশার অভিমান একটু হলেও ভাঙাতে পেরেছে। মনে মনে অনেক ধন্যবাদ দিল, ভাগ্যিস এক্সিডেন্টটা হয়েছিল, তা না হলে অরনিশা আসতোই না। তবে এক্সিডেন্টটা খুব বেশি গুরুতর ছিল না। ঐ অল্প একটু চোট পেয়েছে। তবে অরনিশা নামক মেয়েটার ছোয়া পেলেই ঠিক হয়ে যাবে সব। এসব ভেবে মুচকি হাসল রাশফিন।
রাতে সবাই মিলে ডাইনিং টেবিলে বসে খেয়ে দেয়ে, এখন মামনির সাথে কাজে হেল্প করছি। আজ কতোদিন পর আবার সাহায্য করছি মামনিকে। যদিও মামনি নিষেধ করেছে অনেকবার, তবে আমি শুনিনি। রাশফিনের কথামতো নিজের বাসায় না গিয়ে এখানেই থেকে গেলাম। তবে মনে মনে অন্য ফন্দি আটলাম।
সব কাজ সেরে মামনির সাথে ওনার রুমে যেতে গেলেই মামনি বলে উঠলেন
-‘ কি রে, কই যাস? রাশফিনের রুমে যা। আমার রুমে কি?
-‘ তুমি কি আমায় তাড়িয়ে দিচ্ছো মামনি? তোমার সাথে কতোদিন গল্প করিনা। আমি আজ তোমার সাথেই থাকব।
রাশফিনের থেকে বাচার জন্যই মুলত মামনির সাথে থাকব আমি। এই জন্যই তো এই ফন্দি আটলাম। মনে মনে নিজেকেই বাহবা দিতে লাগলাম। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না এসব।
পেছন থেকে রাশফিনের গম্ভীর কণ্ঠ শুনতেই শুকনো ঢোক গিললাম আমি। মেকি হাসি দিয়ে তাকালাম পেছনে।
রাশফিন বলে উঠল
-‘ এখানে কি করছো, ঘরে চলো বউ।
-‘ না, আজকে মামনির সাথে থাকবো আমি।
-‘ আমার কি তোমায় কোলে নেওয়া লাগবে। চুপচাপ বলছি, চলে এসো।
এটা বলে যখনই রাশফিন এগিয়ে আসতে নিয়ে তখনই আমি মামনির পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ি। আমাকে ধরতে আসলেই মামনিকে নিয়ে দ্রুত মামনির ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেই।
হঠাৎ এমন হওয়াতে রাশফিন হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর দরজা ধাকিয়ে বলে
-‘” বউ বউ ডাক পারি
বউ তুমি কেন থাকো আম্মুর বাড়ি
আয় রে বউ আমার রুমে আয়
তোমার জামাই রে মশায় খায়।”
একটু থেমে রাশফিন আবারও বলে
-‘ “বউ ঘরে গিয়ে দেয় খালি দোর
আর আমার মুখটা হয়ে যায় ভার।”
রাশফিনের এমন উদ্ভট কবিতা শুনে আমি আর মামনি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ পর আবারও রাশফিন বলে ওঠে
-‘ বউ তুমি কি দরজা খুলবেনা?
এদিকে কিছুতেই আমি আমার হাসি থামাতে পারছিনা। ব্যাটাকে ভালো মতোই জব্দ করা গেছে।
রাশফিন এবার বলে উঠল
-‘ আজকের মতো বেচো গেলা, এরপর থেকে কেমনে বাচো আমিও দেখে নিব সোনা। আজকের মতো ছাড় দিলাম। এরপর থেকে ডিরেক্ট কোলে তুলে নিয়ে আসবো। দেখি কেমনে ছাড়া পাও তখন তুমি।
বেচারা রাশফিন ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। বউয়ের অভাবে কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে সে দিন দিন। এ খেয়াল কি আছে কারও। আর ঐ দিকে পেত্নির মতো হাসছে তার পত্নি।
আমি হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। আজ অনেকদিন পর মন খুলে হাসলাম। অবশেষে ব্যাটা জব্দ করলাম। উফফ শান্তি। এদিকে রাশফিনের দেওয়া ঠাণ্ডা থ্রেট আমি আমলেও নিলাম না।
#চলবে ~