#আনমনে_সন্ধ্যায়
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২১
সাব্বির পুরো বাড়িতে চোখ বুলালো। অর্ফহোয়াইট রঙের পাঁচতলা বাড়ি। সাধারণ এলাকা। দু- তলা, তিন তলা, পাঁচ তলা আশে পাশে অসংখ্য বাড়ি। সুরু গলির মাঝামাঝি বাড়িটি। কোন আলাদা ভাবে গেইট নেই। নিচ তলার দু- ফ্ল্যাটের মাঝামাঝি সিঁড়ির নিচে কেচি গেইট। অবশ্য বন্ধ! ভেতর থেকে তালা দেওয়া।
সে ফিরে রিমির দিকে তাকালো। সে চাদর টাদর মুরে আরামছেই সিএনজি তে বসে আছে। শীত ছাড়া অন্য কোন বাড়তি টেনশনের ছাপ তার চোখে মুখে এখন আর নেই।
এখানে তারা পৌঁছেছে সন্ধ্যায়! বাস থেকে নেমে এই মেয়ের দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়া অবস্থা। পুরো পাকিং তাও এতো শীত এই মেয়ের আসে কোথা থেকে কে জানে। অবশ্য ঢাকার চেয়ে দুগুণ বেশি শীত এখানে। তার মধ্যে সন্ধ্যা। এই সময় সব জায়গায় এমনিতেই শীত বেশি থাকে। তার নিজেও সে রকম কাপড় গায়ে ছিলো না । থাকবেই বা কি করে। সে কি জানতো?
সে তো বের হয়েছিলো কেকের ডিজাইন চেইঞ্জ করার উদ্দেশ্যে । তারতো নরমাল ডিজাইনের অর্ডার দিয়েছিলো। আয়াশের নরমালে হবে না। তার কার ডিজাইন চাই। নেটে নাকি দেখেছে। তাই সে কথা বলতে এসেছিলো, সন্ধ্যায় ডেলেভারি! সারাদিনের মধ্যে পারবে কি না । এখন দেখো সে কোথায়?
বাসার সবাই ফোনের উপরে ফোন দিচ্ছে। সে ছোট্ট একটা মেসেজ পাঠিয়ে মোবাইল অফ করে রেখেছে। রিমি অবশ্য বেশ কয়েকবার নেমে যাওয়ার তাড়া দিয়েছে। দিলেই কি? সে কি আর কখনো পারবে এই মেয়েটাকে একা ছেড়ে দিতে? না! কখনও না।
অবশ্য সে আর জিজ্ঞেস ও করেনি কেন যাচ্ছে। সব কিছুর’ই নির্দিষ্ট একটা সময় আছে। এক দিনে সব কিছুর আশা করা ঠিক না। রিমি যে তাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে তার জন্য আপততো এ ই অনেক।
তাই বাস থেকে নেমেই প্রথমে সে নিজের জন্য একটা জ্যাকেট আর রিমির জন্য চাদর নিয়েছে। অবশ্য আর নেবেই বা কি? গায়ে আর জায়গা আছে কিছু দেওয়ার।
সে এগিয়ে একটু ঝুকে বললো, — তুমি শিওর এটাই বাড়ি?
— রিমি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।
— ছেলেটার নাম যেন কি বলেছিলে?
— আরিয়ান আহমেদ।
— শিওর।
রিমি বড় একটা শ্বাস ফেললো। মনে রাখার ক্ষেএে তার ব্রেইনের তুলনা নেই। একবার কিছু একটা দেখলে বা শুনলেই হলো। মাথায় সেট! সে আর কখনো ভোলে না। যদি ভুলতে পারতো তার চেয়ে ভালো আর কে থাকতো।
সে আবার মাথা নাড়লো। এতো শীতে তার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।
সাব্বির এগিয়ে গিয়ে তৃতীয় তলার কলিং বেল চাপলো। বাড়িওয়ালা নাকি ভাড়াটিয়া সে কিছুই জানে না । তবে তৃতীয় তলায় বাড়িওয়ালা থাকার সম্ভবনাই বেশি। আর পুরো বাড়ি খবর তাদের কাছ থেকেই পাওয়া সম্ভব।
কলিং বেল বাজতেই তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে এক মেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, — কে?
সাব্বির একবার রিমির দিকে তাকালো। রিমি নির্বিকার। তারপর সেই বললো, —- আরিয়ান আহমেদের বাসা কোনটা একটু বলবেন?
— আপনি কে?
সাব্বির কি বলবে বুঝতে পারলো না। তখনি রিমি ঝট করে বের হলো। তার চোখে মুখে বিরক্তি। বিরক্তি নিয়েই বললো,— রিমি! আয়মান সুলতানার মেয়ে রিমি।
বারান্দা অন্ধকার। তবুও সাব্বির ঠিক বুঝলো। মেয়েটা চমকেছে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েটা ঝেড়ে দৌড় দিয়েছে।
তার দৌড়ের কিছুক্ষণের মধ্যেই এই সন্ধ্যায় শান্ত, নিশ্চুপ বাড়িটায় হুড়মুড় পড়ে গেলো। সাব্বির নিচে থেকেই বুঝলো, দরজা খোলা হচ্ছে। একদল লোক নিচে আসছে। সাব্বির একটু অবাক হয়েই রিমির দিকে তাকালো।
রিমি ভাবলেশহীন ভাবে হাই তুললো! অর্ধেক রাস্তা সে ঘুমুতে ঘুমুতে এসেছে। সে হাই তুলে বললো, — আমার বায়োলজিক্যাল পিতার বাড়ি। তার দু- চোখ নাকি আমাকে খুঁজে, তাই নিজেকে একটু দেখাতে এলাম।
সাব্বির হতম্ভব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর বড় একটা শ্বাস ফেলে সে মাথা নাড়লো। এই মেয়ে সত্যিই ভয়ংকর। যতো অস্বাভাবিক কাজ খুব খুব স্বাভাবিক ভাবে অনায়াসেই এই মেয়ে করে ফেলতে পারে।
সাব্বির আর রিমি ড্রয়িং রুমে বসলো। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেই মোটামুটি ভালোই অভিজাত্যের ছোঁয়া ভেতরে। তিন চার তলা নিয়ে ডুপ্লেক্স। মনে হচ্ছে যৌথ ফ্যামিলি। এক গাদা লোক তাদের ঘিরে আছে। কে, কি হয় কে জানে। তবে রিমির সাট কাট সবার চেহেরায়ই বিদ্যমান।
রিমি অবশ্য স্বাভাবিক! সে চাদর টাদর মুড়ে বসে আছে চুপচাপ। ভেতরে আসতেই এক বৃদ্ধা, যে সম্ভবতো রিমির দাদি। একপ্রকার হাউ, মাউ করতে করতে তাকে জড়িয়ে ধরতে এগিয়ে এসেছিলো। রিমি আস্তে করে সরে গেছে। বৃদ্ধা থতোমতো খেয়ে হা হয়ে গেছে। এই বৃদ্ধার সাথে সাথে সবার চোখে মুখে এতোক্ষণ যে খুশির ঝিলিক ছিলো, তা সাথে সাথেই থমকে গেছে।
রিমি চোখ তুলে তাকালো। যে মেয়েটা বারান্দায় এসে কে বলেছিলো। তার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আরিয়ান কোথায়?
— ভাইয়াতো বাসায় নেই।
— কোথায় গেছে?
— আশেপাশেই হয়তো।
— তাকে ফোন দাও। আমি কিছুক্ষণ বসবো। তাকে আসতে বলো তাড়াতাড়ি।
মেয়েটা দৌড়ে গেলো। বেচারির মনে হয় আজকে দৌড়াতেই দৌড়াতেই রাত শেষ হবে।
তার কথা শুনেই মধ্য বয়সের এক লোক এগিয়ে এসে বললো,
— সে কি কথা। এসেই এভাবে যাবে কেন? আমরা তো তোমাকে এভাবে যেতে দেবো না। নিজের বাড়ি এসেছো। এতো তাড়া কিসের?
রিমি এবার লোকটার দিকে তাকালো।
— আপনি কে?
লোকটা একটু থতমতো খেলো। তারপর বললো, — আমি তোমার বড় চাচা।
রিমি অন্য রকম ভাবে একটু হাসলো! রিমির হাসি দেখে লোকটা বিভ্রান্ত খেয়ে গেলো। পুরো বাড়ি তার ইশারায় চলে। তবে এই মেয়ে যে তার ধার ধারবে না, সে এই এক হাসিতেই বুঝলো।
তার পরেই এগিয়ে এলো, মধ্যে বয়সের এক নারী। মুখ ভর্তি পান। হাতে গলায় স্বর্নের বাহার। সম্ভবতো তিনি রিমির বড় চাচি। সে একগাল হেসে গদগদ হয়ে বললো।
— আচ্ছা এসব থাক এখন। যাবে না থাকবে পরে দেখা যাবে। ও সাহেদা তোর বড় মেয়ে আইছে নাস্তা, পানির ব্যবস্থা কর।
রিমি ফট করে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। সবার পেছনে সাধারণ দেখতে এক নারী। থমকে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি এই মুখটা চেনে। অনেক অনেক দিন আগে। তার বয়স কতো, এই ছয় সাত হবে হয়তো। তার কাছে এসেছিলো। রিমি উঠোনে খেলছিলো। হাতে ছিলো খেলনা মাটির পাটাপুতা। সে ছুঁড়ে মেরে এর কপাল ফাঁটিয়ে দিয়েছিলো। এর পরে আর কেউ তাকে দেখতে যাইনি।
মহিলা সেখান থেকে নড়লো না। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই একগাদা নাস্তায় টিটেবিল ভরে গেলো। রিমি, সাব্বির কেউ’ই সেই নাস্তায় হাত দিলো না। কেন জানি কেউ জোর করে বলার সাহসও পেলো না।
তখনি হন্তদন্ত হয়ে আরিয়ান নামের ছেলেটি আসলো। শ্যামলা, লম্বা, চিকন, টিংটিঙে শরীর। চুল ছোট,তা না হলে রিমি বলে অনায়াসেই চালিয়ে দেওয়া যেতো। এরা সম্ভবতো বাবার কপি হয়েছে।
সাব্বিরের এবার হাসি এলো। অবশ্য হাসির পরিস্থিতি এটা না। সবাই যেমন রিমিকে দেখছে। তেমনি দেখছে তাকে। মনে হয়তো এদের প্রশ্নের ঝুড়ি ভরে যাচ্ছে। তবে রিমির ব্যাটিংয়ের কাছে কেউ আর কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না ।
সে সোফায় মাথা এলিয়ে দিলো। ক্লান্ত লাগছে। এই নাটক চলতে চলতে একটু চোখ বন্ধ করা যাক। রিমি ঘুমোতে ঘুমোতে এলেও সে ঘুমেতে পারিনি। কখনো পারেও না। ধুলো, বালিতে শরীর মাখামাখি। এতো শীত তাও তার গোসল করতে মন আঁকুপাঁকু করছে।
আরিয়ান শুকনো ঢোক গিলে ঠোঁট ভেজালো। তাদের বয়সের পার্থক্য হয়তো চার, পাঁচ বছর। চিঠিতে আপনি সম্বোধন করলেও এখন কি ভাবে কথা বলবে সে ভেবে পেলো না। তার শরীর কাঁপচ্ছে। এভাবে হুট করে আসবে সে ভাবেনি। অবশ্য তার খোঁজ নিতে গিয়ে শুনেছে মাথা একটু এলোমেলো। পুরো গ্রামে এই মেয়ের নানান কাহিনী আছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ভয়ংকর। কারো কারো তো ধারণা এর উপরে জ্বীনের আছর আছে।
রিমি স্বাভাবিক ভাবে বললো, — তুমি ঠিক আছো?
আরিয়ান শুধু মাথা নাড়ালো।
— এতো কষ্ট করে চিঠি লেখে এক বার আসার জন্য রিকোয়েষ্ট করেছো। জানতে পারি কেন?
আরিয়ান এবার চোখ তুলে তাকালো। তাকিয়ে আস্তে করে বললো, — আপনি আমাদের বড় বোন। এটা আপনারও বাড়ি। আমরা সবাই এখানে থাকতে পারলে, আপনি কেন এখানে ওখানে বড় হবেন? এ বাড়িতে যতোটুকু অধিকার আমাদের ততোটুকু তো আপনারও। তবে কেন অন্যের আশ্রয়ে থাকবেন?
নিজের চেহেরার মতো দেখতে এই ছেলেটার দিকে রিমি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো — এই প্রশ্নগুলো তো আমারো আরিয়ান। তবে করার মতো সুযোগ আমি কখনো পাইনি। তবে তোমার কাছে সেই সুযোগ আছে। তুমি কি তোমার বাবাকে আজ এক্ষুণি এই প্রশ্ন গুলো করতে পারবে?
— পারবো?
রিমি উঠে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে বললো,
— তাহলে চলো।
সাথে সাথেই বৃদ্ধা মহিলা আহাজারি করে উঠলেন। এই মাইয়া আমার আনিসরে খাইবার আইছে গো, আমার আনিসরে খাইবার আইছে। এর রাক্ষসী মায় আমার আনিসার জীবন তছনছ কইরা দিছে। এখন আইছে এ। এরে আনিসের কাছে যাইতে দিবি না । খবরদার কেউ যাইতে দিবি না।
বৃদ্ধা আহাজারি করলেও, কেউ কিছু বললো না। আরিয়ান রিমির দিকে তাকিয়ে বললো, — আসুন। সে আমাদের যেমন বাবা তেমনি আপনারও। তার কাছে যাওয়ার জন্য কারো অনুমতির প্রয়োজন নেই।
রিমি স্বাভাবিক ভাবেই উপরে যাওয়ার জন্য এগুলো। এগুতে এগুতে বললো, —- যখন আমার মা মারা গেছে। তার অনেক আগেই আমার বাবাও মারা গেছে। এই পৃথিবীতে এসেছি’ই আমি এতিম হয়ে। আমি এখানে এসেছি তোমার জন্য। কেন মারা গেছে, আর এই যে এতো এতো প্রশ্ন সেগুলোর উত্তর তোমাদের জানা দরকার। তাহলে আর অপেক্ষায় থাকতে হবে না, আর এটাও মনে রাখতে হবে না তোমাদের কোন বড় বোন আছে।
আরিয়ান চমকালো! তবে কিছু বললো না। সে সব কিছুই জানে। সে নিশ্চুপ এগিয়ে গেলো।
আনিস রিমিকে দেখে চমকে উঠলো। এই মেয়ে কখনো এই বাসায় আসবে সে কল্পনাও ভাবেনি। সে ধীরে ধীরে উঠে বসলো। তার লিভার ক্যানসার। অবশ্য অপারেশন হয়েছে। সে এখন মোটামুটি সুস্থ। অবশ্য কতোদিন থাকে এটাই দেখার বিষয়। সে উঠে বসে আস্তে করে দু- জনের উদ্দেশ্য করে বললো, — বস।
রিমি বসলো। বেডের সামনেই সিঙ্গেল সোফা রাখা। সে সেখানেই বসলো। তার এখন শরীর ছেড়ে দিচ্ছে। অবশ্য শরীরেরও দোষ দিয়ে লাভ কি? সেই সকাল থেকে আছে দৌড়ের উপর। পেটেও তেমন কিছু পরেনি।
আরিয়ান দাঁড়িয়েই রইলো। অনেকগুলো প্রশ্ন সাথে করে নিয়ে আসলেও, বাবার অবস্থা দেখে সে কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারলো না। গলায় আটকে গেলো। বাবা যেমনই থাক। বাবা তো বাবাই।
রিমি আরিয়ানের অবস্থা বুঝলো! বুঝে হেসে ফেললো। আরিয়ান, আনিস দুজনেই অবাক নয়নে এই মেয়ের হাসি দেখলো। এ রকম পরিস্থিতিতে ও যে হাসা যায় তারা হয়তো জানে না।
আর রিমি! সে হেসেই বললো, — আমার মাও মা’ই আরিয়ান। হয়তো সে সবার কাছে খারাপ। কিন্তু সে আমার মা। তাকে আমি দেখেনি, তার বুকে একবারের জন্যও মাথা রাখিনি। তবুও জানি সে আমার ওয়ার্ল্ড বেস্ট মা। যে তার সন্তানের জন্য পুরো দুনিয়ার সাথে একা একা লড়েছে।
তারপর আনিসের দিকে তাকালো! তাকিয়ে বললো, — আপনার চোখ নাকি নীরবে আমাকে খোঁজে। জানতে পারি কেন? যে মেয়েকে পায়ে মাড়িয়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিলো। হঠাৎ তাকে এতো খোঁজার মানে কি?
আনিস নিশ্বাস বন্ধ করে রিমির দিকে তাকিয়ে রইলো। এই দিনটা একদিন না একদিন আসবে সে জানতো।
আরিয়ার চোখে মুখে ভয় নিয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে রইলো। কতোটা ঘৃণা মনে পোষা রিমির কথায় সে স্পর্ট বুঝতে পারলো। সে অসহায় ভাবে আস্তে করে বললো, — আব্বু অসুস্থ আপু।
রিমি আরিয়ানের দিকে তাকালো। তাকিয়ে বললো, — ওহ স্যরি! রাক্ষসী মায়ের মেয়ে তো, তাই ভুল হয়ে যায়। তারপর আনিসের দিকে তাকিয়ে বললো, — দেখতে চেয়েছেন দেখলেন। এখন আমার মায়ে দোষ ছাড়া আপনার আর কিছু বলার আছে?
আনিস বড় একটা শ্বাস ফেললো! শান্ত ভাবে বললো,
— আছে।
— তো বলুন শুনি।
— পারলে ক্ষমা করো।
— শুনলাম আর?
— অন্যায়তো আমার সাথেও হয়েছিলো তাইনা। যদি আমার জায়গায় থাকতে তাহলে বুঝতে।
— বুঝলাম! তবে দয়া করে বলবেন, আমার দোষটা কোথায় ছিলো?
— আয়মানের গর্ভে তোমার জন্ম। এটাই ছিলো তোমার দোষ। আমি মানছি তোমার সাথে অন্যায় আমি করেছি। তবে এই অন্যায়ও হয়েছে তোমার মায়ের জন্য। এটা তুমি স্বীকার করো আর না করো।
রিমির চোয়াল শক্ত হলো! চোখ মুখ কঠিন করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো — আমি শুরুতেই বলেছি আনিস আহমেদ আমার মায়ের দোষ ছাড়া যা বলার বলুন।
আনিস চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো! তার মতো দেখতে হলেও তার মনে হলো, তার সামনে আয়মান বসা। সেই রাগ, সেই জেদ। সে চোখ বন্ধ করলো! করে খাটে হেলান দিলো। তার শরীর যে থরথর করে কাঁপছে আরিয়ান দূর থেকেও বুঝলো।
সে চোখ বন্ধ করেই শান্ত ভাবে বললো, —- তোমাকে অস্বীকার করে আমি অন্যায় করেছি। জানি তার ভরপাই আমি করতে পারবো না। তবুও বলছি পারলে ক্ষমা করো।
— আমার মাকে পারবেন ক্ষমা করতে?
আনিস উত্তর দিলো না। রিমি হাসলো! হেসে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,— ক্ষমা চাওয়া খুবই সহজ তবে সব ভুলে ক্ষমা করাটা অনেক কঠিন। যেটা আপনি পারছেন না, আমি পারবো কিভাবে?
আনিস আবার তাকালো! ধীরে ধীরে আবার সোজা হয়ে বসলো! তার চোখে পানি। তার জীবনটা কি এতো এলোমেলো হওয়ার দরকার ছিলো। সারাটা জীবন গেলো ভেতরে এক ঘা নিয়ে। সে কাঁপা কাঁপা হাতে পানি মুছে বললো, —- ক্ষমা না করতে পারলে শাস্তি দিয়ে যাও। বেঁচে থাকতে তো শান্তি পেলাম না, অনন্ত মরে যেন পাই।
রিমি নিশ্চুপ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো! তারপর বললো,— আসি! ভালো থাকবেন। দয়া করে আপনার বৈধ, পবিএ সন্তানদের বুঝিয়ে বলবেন। এটা তাদের বাড়ি হলেও কেন আমার বাড়ি না। কেন তাদের জন্মগত অধিকার থাকলেও, কেন আমার অধিকার নেই। আর আমার মায়ের জারজ সন্তানের কাছে আপনাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। না ক্ষমা, না শাস্তি।
বলেই রিমি বেরিয়ে আসলো। সে আর ডানে বামে কারো দিকে তাকালো না। সোজা সাব্বিরের সামনে দাঁড়িয়ে বললো, — চলুন যাওয়া যাক।
সাব্বির উঠে দাঁড়ালো। দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। এবার আর কেউ কিছুই বললো না।
রিমি যেতে গিয়েও থামলো। বৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বললো, —- শুধু বয়সের জন্য বেঁচে গেলেন। তা না হলে রিমির সামনে রিমির মাকে রাক্ষসী বলার পরিণাম আপনার ছোট বউমাকে জিজ্ঞেস করবেন। রিমির মা কারো কিছু না। সে শুধু রিমির মা। খারাপ থাক, ভালো থাক সে শুধুই রিমির মা।
চলবে….