আফসানা আশা
প্রেম- প্রতারণা – ১
আমার বউ তার প্রেমিকের সাথে ভেগে যাওয়ার পরে ফোনটা এলো!
ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আমি হেসে ফেললাম! কষ্ট না-কি নিজের কপালকে বিদ্রুপ করে হাসলাম না-কি অনেক অপেক্ষার পরে এই ফোনকলটি পেয়ে সত্যিই আনন্দিত হলাম বুঝতে পারছি না।
ইনকামিং কলের অপর প্রান্তে আমার প্রাক্তন!
ফোনটা কানে নিয়ে বললাম,
—- ‘খবরটা পেয়ে গেছ? এত তাড়াতাড়ি? এত তাড়াতাড়ি এত দূর চলে গেছে?’
ওই প্রান্ত চুপচাপ থাকল কয়েক মূহুর্ত। তারপর স্বভাবগত ধীর কন্ঠে বলল,
—- ‘কী হয়েছে, সাজ্জাদ? কী খবর?’
এতক্ষণ কী করব, কাকে বলব, কাকে জানাব, কীভাবে কীভাবে কী হবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লাম,
—- ‘দিশা, আমার বউ চলে গেছে!’
—- ‘কে চলে গেছে?’
—- ‘সাথী চলে গেছে! আমার বউ চলে গেছে।’
—- ‘কবে? আর কোথায় চলে গেছে?’
আমি এবার একটু স্থির হলাম। প্রাক্তন হলেও, ওই মানুষটা, দিশা, আমার সমস্ত শক্তির জায়গা ছিল এক সময়। আব্বা মরে গেল, সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র আমি তখন, পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে ভেবে অকুল পাথারে পড়েছিলাম। দিশা তখন প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনটির কার্যকরী কমিটির ছাত্র কল্যান সম্পাদক পদবিধারী। শুধু নামে নয়, কাজেও সে ছিল তাই! আমি যখন আমার সমস্যার কথা বললাম, সোনালি ফ্রেমের চশমাটা খুলে আয়তচোখে গভীর তাকিয়ে বলেছিল,, —- ‘ওঠ!’
আমি অসহায় তাকিয়েছিলাম শুধু।
ওই উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিল,
—- ‘দরীদ্র তহবিল থেকে যা ব্যবস্থা করে দিতে পারব তা দিয়ে মাস দুই ঠেক দিতে পারবি বড়োজোর। তারপর? চল তোর পার্মানেন্ট ব্যবস্থা করি?’
সেইদিন দুটো টিউশন হলো আমার, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ছেড়ে সস্তার মেসবাড়িতে ঠিকানা হলো, কোন চিপার কোন হোটেলে দুবেলা খেয়ে আসলে পকেটের সাস্থ্যের খুব একটা তারতম্য হয় না, কোন ভাইয়ের কাছে লাগাতার ধর্না দিতে থাকলে বিরক্ত হয়ে বই আর নোট ছুঁড়ে দেন, ওইদিন সমস্ত পাঠ পেয়ে গিয়েছিলাম আমি দিশার কাছে।
অনেকের কাছে, অনেক সমস্যার সমাধানে দিশা, ওর নামের মতোই পথের দিশা!
সেই পথনির্দেশনা পেতেই আমি আকুল হলাম,
—- ‘আমার সাথে গত সন্ধ্যায়ও কথা হয়েছে। আমি বললাম, খবরদার সাথী ঘর ছাড়বা না। আমি আসতেছি। আমি আজ সকালে পৌঁছে শুনি, সে গতকালও এখানে ছিল না। তিন দিন হলো সে বাড়িতে নাই। আমার ছেলেটাকেও নিয়ে গেছে। আমার আয়াত! বাপপাগল ছেলে, ওর মা বকলেই ও আমাকে ফোন করে। বলে, আব্বু চলে আসো? আজ তিন দিন, আমার ছেলেটা কেমন করে আছে?’
— ‘আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছিস? বন্ধু-বান্ধব?’
—- ‘সব জায়গায় খোঁজ করেছি। ঘরে ওর একটা ছবি বা ভোটার আইডি, কোনো কাগজ কিছু রেখে যায়নি!’
—- ‘দেখ, আমার মনে হয়, বাচ্চা নিয়ে গেছে যখন, কোনো বন্ধু বা কাজিন এইরকম কারো বাসায় গিয়েছে। তোর সাথে ঝগড়া হয়েছে বললি না, এইজন্যই লুকিয়ে আছে।’
—- ‘না, দিশা না। ঘটনা সেরকম নয়!’
—- ‘দেখ, তোর বউকে তো আমি চিনি না। ইন জেনারেল বলছি, বাচ্চাকে নিয়ে যেই মা বের হয়, সে আর যাই হোক এরকম খারাপ হতে পারে না!’
—- ‘ওরে দিশা রে, সবাই তোমার মতো আদর্শবাদী নয়। আমি খোঁজ নিয়ে শিওর হয়েই বলছি। বাচ্চার সাথে ভিডিও কলে কথা বলি বলে এন্ড্রয়েড সেট কিনে দিয়েছিলাম। সাথী সারাদিন ওই মোবাইলে লুডু খেলে। তা খেলুক। খারাপ কিছু তো করে না, ভেবে আমিও ডাটা কিনে কিনে দিতাম। ওই লুডু খেলতে পার্টনার লাগে। সেই পার্টনার হচ্ছে এই ছেলে। অনলাইনে লুডু খেলতে খেলতে প্রেম! অনেক আগে নম্বর সেইভ করেছিল আমার শালীর নম্বরে। সেই নম্বরে একটা ছেলের হোয়াটসঅ্যাপ খোলা। হোয়াটসঅ্যাপ আইডিতে গিয়ে দেখি, ডিপিতে আমার বউ আর সেই ছেলের ছবি। একসাথে। রিকশায়। সাথীর মাথায় ফুলের ক্রাউন। মানে, এই যে ফেব্রুয়ারিতে ভালোবাসা দিবস গেল না, ওইদিন ওই ছেলের সাথে বেরিয়েছিল? আমাকে বলেছিল, মাথা ব্যথা, শুয়ে থাকবে। আমি যেন ফোন না দিই!’
— ‘কী বলিস!’
—- ‘এখন কী করব আমার মাথায় আসছে না রে…’
—- ‘আগে খুঁজে তো বের কর? তোর বাচ্চাটা আছে সাথে।’
— ‘কীভাবে কী করব আমার মাথায় আসছে না রে…’
— ‘আন্টিকে কী বলেছিস?’
—- ‘ওই সাথীর জন্যই মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক নেই আজ চার বছর। ওর অনেক বদনাম ছিল। আমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে একবার পালিয়েছিল এলাকার এক ছেলের সাথে। তারপর আমার সাথে প্রেম হয়। ওকে প্রেমের বিয়ে করেছি বলেই মা আমাকে ত্যাজ্য করেছে!’
– ‘কী বলিস? তুই যে বলেছিলি আমি অনেকটা ছেলেদের মতো বলে আন্টির পছন্দ নয় আমাকে। তাই মায়ের পছন্দে সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিস। তাহলে তোর প্রেমের বিয়ে হলো কখন?’
চলবে…