আবছা_আলো[২য় পর্ব]
Nazmul Huda
গত পরশু বাবা আমার রুমে এসে তুবার ব্যাপারে নানান ধরনের কথা বললো।যেগুলো শুনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
তুবা যে স্কুলে জব করে সেই স্কুলের এক শিক্ষকের সাথে বেশ ভালোই ভাব জমিয়েছে।এছাড়া তুবা স্কুল শেষে নাকি পায়ই সময় সেই শিক্ষক আমাদের বাসার সামনে এসে পিক করে দেয়।
বাবা আমাকে এসব বলার পরেও আমি কথা গুলো মালুম করিনি।আমার দৃড় বিশ্বাস আছে যে তুবা এমনটা কখনোই করবে না।তারপরেও কেনো যেনো আমার মাঝে ভয় লাগতে শুরু করলো।এসব শুনেও আমি তুবাকে কিছুই আস্ক করিনি।তুবা যা করুক না কেনো আমাকে তো ভালোবাসে।আমার কেয়ায় নেওয়া সহ যাবতীয় কাজ তুবা একাই সামলায়।
কিন্তু হঠাৎ করে একদিন তুবা রাত করে বাসায় ফিরে।সারাদিন ওর ফোন অফ ছিলো।কোথায় ছিলো বা কি করেছিলো তা কিছুই জানতে পারিনি।তুবা বাসায় ফেরার সময় সাথে করে সেই শিক্ষককে নিয়ে বাসায় ফিরে।আমি চুপচাপ ভাবে দেখেছিলাম,কিন্তু বাবা মা রাগী ভাবে তাকিয়েছিলো।সেই শিক্ষক বাসায় আসার পরে আমি তুবার কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে এতো সময় ধরে কি করেছিলো।জবাবে বলেছিলো স্কুলের কাজে ব্যস্ত ছিলো আর মোবাইলে চার্য না থাকার কারনে অফ হয়ে গিয়েছিলো।
এখন বাজে রাত প্রায় দশটা তুবা বাসায় ফিরছে না এখনো।মোবাইল হাতে নিয়ে আরেকটিবার তুবাকে ফোন দিয়েছি এইবার ফোনের সুইচ অফ পেলাম।
তবে কি আমার খালাতো বোন যেটা বললো বাবা মা তাই করেছে?পুরাপুরি কিছু শিওর না হয়ে কারো কাছে কিছুই জিজ্ঞেস করতেও পারছি না আমি।বাবা সেই বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ছে সেও বাসায় আসছে না।আবার আমার মা তিনিও বাসার কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরেছেন।একদিকে বাসায় মেহমান আবার অন্য দিকে বাসার সমস্ত কাজ।
কিন্তু একটা বিষয় বুঝতেছিনা আজতো মা’র তুবাকে নিয়ে কোনো তাড়া নাই।তাই আমি বিষয়টা পুরোপুরি জানার জন্য মিমকে ডাক দিলাম।
-এই মিম এই দিকে আয় তো আপু!
-জি ভাইয়া বলো।
-আমার জন্য এককাপ চা বানিয়ে নিয়ে আয়তো।তোর চা খাওয়ার পরে তো মুখে চায়ের স্বাদ লেগে আছে।
-আচ্ছা দাড়াও ভাইয়া, কিছুক্ষন পরে নিয়ে আসতেছি।
-হুম যা। আর শোন তোর আন্টির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতো তুবা আজ বাসায় আসবে কি না?আমি এটা তোকে শিখিয়ে দিয়েছি তার আবার বলিস না।
-আচ্ছা যাচ্ছি।
আমি বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছি।আর তুবার নাম্বারে কল দিয়েই যাচ্ছি।বারেবারে ফোন অফ পাচ্ছি।কি করবো বুঝতেছিনা।মিম মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করলো…
-আন্টি ভাবি এখনো বাসায় আসছে না।সে কি আসবে না?
-কি জানি?সেটা তার ব্যাপার। আমি না করে দিয়েছি মনে হয়না আর আসবে।
কথাটা শুনে বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠলো।তুবা কি এমন করেছে যে ওকে এই বাসা থেকে তাড়িয়ে দিলো।সব কিছুই তো ঠিকঠাক ছিলো তাহলে এমন কেনো করলো।আমি না হয় তাদের মাঝে বোঝা হয়ে আছি।কিন্তু তুবা তো জব করে। যেটাকা মাইনে পায় সেখান থেকে পাঁচ হাজার টাকা রেখে সবই তো বাবার কাছে ঔষধ বাবদ টাকাটা দিয়ে দেয়।আমার মায়ের এই কথা গুলো শুনে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো নিজের অজান্তে।এরই মাঝে মিম।চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এসে বসলো আমার সামনে।নিজের জন্য এককাপ আর আমার জন্য এক চাপ।
-ভাইয়া একটা কথা বলবো?
-হ্যা বল।
-আন্টি আজকে ভাবিকে অনেক গালাগালি করেছে।তাও ভাবিকে ছাদে ডেকে নিয়ে।গালাগালি শুনে ভাবি সেখানে বসে কান্না করেছে।আমি তখন দোলনায় বসে দোল খাচ্ছিলাম।
-এগুলা আমাকে আগে বললি না কেনো মিম?
-ভাইয়া তুমি তো সকালে ঘুমিয়ে থাকো।ভাবি যাওয়ার সময় লুকিয়ে আমাকে একটা কথা বলে গেছে।
-কি কথা বলছে বল আমায়?
-সে নাকি মাসে মাসে তোমার একাউন্টে ঔষধ বাবদ টাকা দিবে।কি ব্যাপার তোমার চা ঠান্ডা হয়ে গেলো তো।
-আচ্ছা তুই যা। আমি খেয়ে নিচ্ছি।
তুবার উপরে আমার অনেক রাগ হলো।এতোকিছু মা তুবাকে বললো অথচ তুবা আমাকে কিছুই জানায় নি।আসলে আমি রাতের বেলা স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমিয়ে থাকি।তাই সকালে ঘুমের মধ্যে বিভোর থাকি।আর তাছাড়া ইদানীং তুবা আমাকে সকালে না জাগিয়ে দিয়েই স্কুলে চলে যায়।
স্কুলের কথা মনে উঠতেই তুবার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নাম্বার বের করে তাকে কল দিলাম।
-আসসালামু আলাইকুম স্যার!
-ওয়া আলাইকুমুস-সালাম। কে বলছেন আপনি?
-স্যার আমি তুবার হাজব্যান্ড।
-ওহ আচ্ছা।কি বলবেন বলুন?
-আজকে কি তুবা স্কুলে ক্লাস করেছিলো?
-তুবাতো আজকে স্কুলেই আসে নি!
-আচ্ছা ঠিক আছে স্যার।পরে একসময় আপনাকে কল দিবো।
এইটুকু বলেই কলটা কেটে দিলাম।আমার টেনশন আরো দিগুণ বেড়ে গেলো।তুবা কি তাহলে বাসায় গেছে নাকি অন্য কোথাও।এসব ভাবতে ভাবতেই বাবা ডাক দিয়ে আমার রুমে আসলেন।
-মিহির কি ভাবছিস?তুবা আর ফিরবে না বাবা।আমরা যেটা বলেছি সেটা ভেবে দেখ একটু।
-মাকে ডাকেন এখানে।
-কেন তোর মাকে দিয়ে কি করবি?
-তার সাথে আমার কথা আছে।
আচ্ছা ডেকে দিচ্ছি।একটু পরেই মা আসলো।
-মা তুবাকে কি বলেছেন সকালে?
-কই কিছুইতো বলি নাই।বলার মত বলেছি ওর যে সংসারের দিকে কোনো খেয়াল নাই।
-তাহলে গালাগালি কেন করছেন?
-গালাগালি কখন করলাম?আর এসব কি বলছিস তুই?
-তাহলে মিম কি মিথ্যা বলছে?আপনি সকালে নাকি তুবাকে অনেক গালাগালি করেছেন?আর নাকি এই বাসায় আসতে নিষেধ করেছেন?
-নিষেধ করেছি বেশ করেছি।যে মেয়ের মায়ের আচরন খারাপ তার মেয়ের আচরণ কি হতে পারে।তোর ভালো ভাবে জানা আছে তুবা মা ছিলো একটা দুশ্চরিত্রা।সেখানে কিভাবে ভাবলি তুবাও ভালো হবে?সেদিন তোর বাবা কি বলেছে শুনিশ নাই?
-সবই শুনেছি।জানতেও চেয়েছিলাম কিন্ত আপনারা তো আমাকে কিছুই জানার সুযোগ দিলে না।যখন আমি বিয়ে করেছিলাম তখন আপনাদের এইসব ছিলো কোথায়?নাকি তখন আমি সক্ষম ছিলাম তাই আপনাদের আপত্তি ছিলো না।আজ আমি পঙ্গু হয়ে বাসায় আছি পাঁচমাস সেই পাঁচ মাসেই এই বাসায় আমার বা তুবার উপরে কোনো গুরুত্ব নাই।আজ আমার ভালোর জন্য তুবা একটা জব করে।শুধু মাত্র আমার এই চিকিৎসার জন্য যেনো আপনাদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে না থাকি বা আমাদের করুনা আপনাদের না করতে হয়।আজ আমি আপনাদের কাছে বয় অসহায় হয়ে গেলাম।
-তুই যেটা যানিস না তা নিয়ে কিছুই বলিস না মিহির।আমাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে।আমরা বুঝি।
-হ্যা আপনাদের বোঝার যথেষ্ট বয়স হয়েছে।কিন্তু আমাকে গুরুত্ব দেওয়ার সময়টা হয় নি।আজ আমি অসহায় আমাকে আপনারা সবাই মিলে যেভাবে চলাবেন আমার সেভাবেই চলতে হবে।আপনাদের কথার উপরে আমি কিছুই বলতে পারবো না।আমার সেই অধিকার নাই।
-কি সব বলছিস তুই।এইসব সমস্ত সম্পদের মালিক তোরা দুইটা ভাই।তোদের জন্যই এসব?
-আপনারা ভুলে যাবেন না আমার বয়স ত্রিশ প্লাস।এখন আমার রংঢং করার বয়সটা নাই।
-এসব বাদ দিয়ে খেতে চল।তুবা একটা নোংরা মেয়ে।
-খবরদার ওর ব্যাপারে আপনারা একটা কথাও বলবেন না।এক কাজ করুন আপনারা আমাকে ত্যায্যপুত্র করেদিন।নতুবা আমিই আপনাদের ছেড়ে দিবো।দরকার হলে এই হুইল চেয়ারে বসে রাস্তায় ভিক্ষা করে চলবো। আমাকে নিয়ে কারো ভাবতে হবে না।
চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করলো কিন্তু কাঁদতে পারলাম না।রাতের বেলা না খেয়ে কয়েকটা স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমিয়ে পরেছি…
[চলবে….]