আবছা আলো পর্ব-০৫

0
1

আবছা_আলো(৫ম পর্ব)
Nazmul Huda

তুবার খবর পেয়ে আমি তার পরের দিন সকালে আমার একটা ফ্রেন্ডের সাথে ওই স্কুলে চলে গেছি। কিন্তু তুবা পরের দিন স্কুলে যায়নি হতাশা নিয়ে ফিরে এসেছি বাসায়। জানিনা তুবা আমার সাথে এমন কেন করতেছে? তুবা কি আসলেই আমার সাথে থাকতে চায় না নাকি আমাদের সম্পর্কটা ও নিজেই বিচ্ছেদ করতে যাচ্ছে।

চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে যাওয়ার ঠিক আগের দিন রাতে তুবা আমাকে ফোন দেয়।

– তুবা তুমি? এতদিন কোথায় ছিলে তুমি? আর আজকে বা কেন আমাকে তুমি ফোন দিলে? তুমি কি চাওনা আমি দেশের বাইরে ডাক্তার দেখাতে যাই?

– মিহির আমি আসলে তোমাকে কিভাবে বলব তা বুঝতেছি না। হয়তো তুমি ভাবছো আমি তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। না আমি তোমার কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছি না। আমি তোমাকে আগেও যেমন ভালোবাসতাম এখনো তোমায় ভালোবাসি। আমি শুধু তোমার ভালোর জন্যই আমি দূরে চলে গেছি। আসলে এ ছাড়া আমার আর কোন কিছু উপায় ছিল না। আর দেখো তুমি দিনদিন তোমার ফ্যামিলির কাছ থেকে তোমার রিলেটিভ এর কাছ থেকে অপমানিত হচ্ছো।বিভিন্ন কথা শুনছো আমার নামে। বিভিন্ন বাজে কথা বলছে লোকজনে তোমার ফ্যামিলির কাছে। সেজন্য তুমি চুপ করে থাকো। হ্যাঁ জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো সেই সুবাদে হয়তো তুমি আমাকে কিছুই বলতে পারতেছো না। কিন্তু এভাবে আর তুমি কতদিন শুনবে?

– তুবা তুমি তো আমাকে এসব ব্যাপারে কিছু বলতে পারতে। তুমি আমাকে একা বাসায় রেখে তুমি কোথায় আছো আমি জানিনা কিন্তু আমার কাছ থেকে লুকিয়ে আছো। আমার উপরে কি তোমার কোন ভরসা নেই? হ্যাঁ আমার বাবা মা বলেছে তোমাকে ছেড়ে দিতে। কই চাইলে তো আমি তোমাকে ছেড়ে দিতে পারতাম। আমি চাইনা তোমাকে ছাড়া থাকতে। তুমি যদি চাও তাহলে আমি অন্য কোথাও তোমাকে নিয়ে থাকবো?

– না হয়না। তোমার বাবা-মা তোমাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে। হ্যাঁ তুমি আমাকে ভালবাসো। আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছো। কিন্তু হয়তো তারা মেনে নিতে পারে নাই। দেখো আমার ফ্যামিলিকে তোমার ফ্যামিলি বিভিন্নভাবে অনেক কিছু বলে যাচ্ছে।

– এতদিন তুমি কোথায় ছিলে তুবা? তোমার কি একটা বার আমাকে মনে পড়েনি? আমি তো একটা অসুস্থ মানুষ। তুমি রাগ করে দূরে সরে গেছো। আমিতো তোমাকে খুঁজতে পারব না আমি না পারছি হাঁটতে না পারছি চলতে। তুমি বাসায় ফিরে আসো। আমি আমার ফ্যামিলিকে সবকিছু বুঝিয়ে বলব। আর কি সমস্যা সেটাও তুমি আমাদের জানাও। এভাবে করোনা। তুমি যদি এমন করো তাহলে আমি কালকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাব না।

– মিহির আমার আর সম্ভব না। আমি তোমার কাছে যেতে পারব না। তুমি তোমার ফ্যামিলির কথা শুনো। তারা বলেছে আমাকে ডিভোর্স দিতে। হ্যাঁ তুমি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। আমি তোমাকে দূর থেকে ভালোবাসবো। তোমাকে দূর থেকে দেখে যাবো কিন্তু তোমার সামনে আমি যেতে পারব না।।

– তুবা একটা বার আমার কথা শোনো। তুমি আমাকে বুঝতে চাও। আমি তোমাকে কি বলতে চাচ্ছি। হ্যাঁ দরকার হলে আমি আমার ফ্যামিলি ছেড়ে দেবো। কারণ তোমাকে আমাকে কেউ বুঝতে চায়নি। আমি অসুস্থ আমাকে অবহেলা করে আমার ফ্যামিলি আর তুমিও আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেলে শুধুমাত্র আমার ফ্যামিলির কথা শুনে।

– না আমি কিছু বুঝতে চাই না আর নতুন করে কিছু শুনতে চাই না। আজকে হয়তো তোমার আমার একেবারে শেষ কথা। আর তুমি যদি আমাকে ডিভোর্স না দাও আমি তোমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবো।

– একটু আগে না বললে তুমি আমাকে ভালোবাসবে তাহলে ডিভোর্সের কথা আবার কেন বলছ?

– ভালোবাসলে যে সংসার করতে হবে এমন তো কথা নেই। আর যদি তুমি আমাকে ডিভোর্স না দাও তোমার আমার সম্পর্ক যদি বিচ্ছেদ না হয়।তাহলে তুমি তোমার ফ্যামিলির কাছ থেকে ভালোবাসা পাবে না দিন দিন অবহেলার পাত্র হয়ে যাবে। সবাই তোমাকে করুনার চোখে দেখবে।আর আমি চাইনা যে তুমি তোমার ফ্যামিলি ছেড়ে তুমি আমার কাছে থাকো!

– হা হা। তুমি আমার ফ্যামিলির কারণ দেখাইতেছো নাকি নিজ থেকে আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাইতেছো? যদি আমার কাছে থাকতে ভালো না লাগে আমাকে ভালোবাসতে তোমার সমস্যা হয় তাহলে বলে দিতে পারো। কারণ আমি তো একটা পঙ্গু মানুষ। আমার কাছে কে থাকবে? আমাকে কে ভালবাসবে?আমার দেখাশুনা কে করতে চাইবে? আমি তো চলাফেরা করতে পারিনা। তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না আমার দ্বারা? অনেক বিরক্ত হয়ে গেছো? আগে থেকেই আমাকে বলে দিতে পারতে এভাবে না করে।

– তুমি আমাকে ভুল বুঝছো তাই না? আসলে ভুল বুঝলে আমার কিছু করার নাই। আমি পারবো না তোমার সাথে থাকতে এখন তুমি যেটা ভাবো ভেবে নিতে পারো। যাইহোক এখন আর আমি তোমার সাথে কথা বলতে পারবো না। তবে আমার একটাই রিকোয়েস্ট তুমি তোমার নিজের যত্ন নাও ঠিকঠাক মতো চিকিৎসা করো।

– তুবা তুমি না আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছিলে?আমার হাত ধরে জনম জনম পার করে দিবে। বলেছিলে না আমাদের সংসারে একটা পিচ্চি বাবু আসবে। আমরা বাবুটাকে খুব ভালবাসবো। আমরা দুজনে বাবুটার দুই হাত ধরে রাস্তায় হাঁটবো।

– আসলে আমার কপালটাই খারাপ ছিলো। যার কারণে আমি আমার নিজের ফ্যামিলির সাপোর্ট পাইনি। ভালোবেসে তোমার হাত ধরে তোমার ফ্যামিলিতে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোমার ফ্যামিলির প্রত্যেকটা মানুষ আমাকে ভালোবাসবে। আমাকে মেয়ের চোখে দেখতে তোমার বাবা-মা। অথচ দেখো আমার নামে বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছে। আমার মায়ের নামে বিভিন্ন খারাপ কথা শুনে গেছি। কই আমি তো তাদের বাবা-মা’র চোখে দেখতাম। কিন্তু আমার কপালে কি আসলেই এমন ছিলো।

– আমার জানা নাই তুমি হঠাৎ করে কেন এমন পরিবর্তন হয়ে গেলে? আমার ফ্যামিলি হয়তো তোমাকে অনেক কিছু বলছে। কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে তো তুমি আমার কাছে থাকতে পারতে। কই আমিতো চেয়েছিলাম যে তোমাকে নিয়ে অন্য কোথাও থাকবো। তখন তো তুমি রাজি ছিলে না। আর এখন তুমি কারণ দেখাইতেছো যে আমার ফ্যামিলি তোমাকে নানান কথা বলে সেজন্যই তুমি আমার কাছে দূরে চলে গেছো। খুব ভালোই তো পারলে তুমি।

– হ্যাঁ আমি খারাপ। তুমি আমাকে ভুলে যাও। আর তুমি আমার সাথে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছেদ করে দিবে। তুমি আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিও আমি সই করে দেবো। ভালো থাকবে আল্লাহ হাফেজ!

তুবা কলটি কেটে দিলো। জানিনা তুবা কেন আমার সাথে এমন করতেছে। আমার সবকিছু জানতে হবে। আমার সুস্থ হয়ে দেশে ফিরতে হবে। যেভাবেই হোক আমি তুবাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। এভাবে আমি আমার সংসার নষ্ট করে দিতে পারব না। একটা ব্যর্থ ভালোবাসার গল্প তৈরি করতে পারব না। আমাদের মাঝে ঘিরে আছে হাজার হাজার স্বপ্ন। তিলেতিলে স্বপ্নের জাল বুনে ছিলাম আমরা দুজন। ভুল বোঝাবুঝির জন্য এভাবে আমাদের সম্পর্কটা কখনোই নষ্ট হবে না। যদি কখনো তুবা আমার কাছ থেকে চলে যেতে চায় তারপরেও আমি তুবার হাতটা ছাড়তে পারব না। জানি হয়তো আমার ফ্যামিলির উপর বা আমার উপরে অনেক রাগ করে আছে যেভাবেই হোক আমি ভেঙে দেবো ওর ভুলটা।

তুবা আমাকে ছেড়ে দিলেও আমি তো তুবাকে ছাড়তে পারবো না। সুস্থ হয়ে দেশে ফেরে নেই দরকার হলে তুবাকে নিয়ে আমি অনেক দূরে চলে যাবো। জীবনে বেঁচে থাকতে হলে কিছু না কিছু ছেড়ে দিতে হয়। হয়তো আমার ভাগ্যে এমন ছিল যার কারণে আমার সাথে এমন ঘটতেছে।

এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বাবার সাথে বের হয়েছি কিছুক্ষণ পরে আমাদের ফ্লাইট।তুবাকে কেনো যেনো আজকে অনেক মিস করতেছি।যাবার বেলায় তুবার হাতটা যদি একটিবারের জন্য ধরতে পারতাম?একটা পলকের জন্য তুবাকে দেখতে পারতাম?

তুবাকে নির্লজ্জের মত আরেকটি বার ফোন দিলাম। একটা মূহুর্তের জন্য এয়ার্পোটে আসার জন্য……

(চলবে…..)