আবার প্রেম হোক পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
652

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

২৪.
ফুলের থালা হাতে নিয়ে পুষ্পবর্ষণ করছে চাঁদ।সামনে তার কয়েকজন মন্ত্রী এবং সভাপতি,অতিথিরা।ফায়ান,ইফাদ,অবনীসহ আরও দু’তিনজন ছেলেপেলে তাদেরকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগতম করছে।এমন সময় চাঁদের ক্লাসমেট হাবিব একজনকে বুকে দিচ্ছিলো কিন্তু লোকটা তা প্রত্যাখান করে বলে,

“সরি এভাবে নেবোনা”

ফায়ান ভ্রু কুচকে বলে,

“কেনো স্যার?কোনো সমস্যা?তাহলে এটা নিন”

বলেই নিজের হাতে থাকা বুকেটা এগিয়ে দিতেই লোকটা বলে,

“ফুলেতে কোনো সমস্যা নেই।ফুল একটা হলেই হবে তবে ফুল প্রদানকারী হতে হবে ফুলবর্ষনী এই নীলাম্বরীকে”

বলেই চাঁদের সামনে গিয়ে তার হাতে অবস্থিত ফুলের থালা থেকে এক মুঠো ফুলের পাপড়ি নিয়ে তার মুখের সামনে ফু দিতেই চোখজোড়া বন্ধ করে চাঁদ।অতঃপর ফুলের পাপড়িসমূহের মুখে আছড়ে আসা থামতেই চোখজোড়া খোলে সে।

সবেমাত্র গেট দিয়ে প্রবেশ করছিলো প্রণয়।এমতাবস্থায়ই সে দেখতে পায় কালো পাঞ্জাবি পরহিত এক ছেলে বলছে,

“ফুলেতে কোনো সমস্যা নেই।ফুল একটা হলেই হবে তবে ফুল প্রদানকারী হতে হবে ফুলবর্ষনী এই নীলাম্বরীকে”

‘নীলাম্বরী’ শব্দটা শুনে ছেলেটার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেও তাকায় সে পানে।অতঃপর নজরে আসে তার অপছন্দনীয় এক মানবীর মুখশ্রী।চোখেমুখে বিরক্তিভাব থাকলেও চাঁদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে তারই মুখের দিকে ছেলেটার এভাবে ফু দেওয়া পছন্দ হয়না প্রণয়ের।কপাল খানিকটা কুচকে পা বাড়ায় সেদিকে।চাঁদ চোখ খুলে নাক ফুলিয়ে দাতে দাত চেপে কিছু বলতে উদ্যত হতেই তার পাশে এসে দাঁড়ায় প্রণয়।অতঃপর সেদিকে তাকাতেই চাঁদ দেখতে পায় প্রণয় ছেলেটার বাহু ধরে তার সামনে থেকে ছেলেটাকে পিছু চাপিয়ে হাবিবের হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“নিন আপনার বুকে।ফুলেতে যেহেতু সমস্যা নেই আশা করছি আমাতেও হবেনা।আমিই মিস অশীনের তরফ থেকে দিয়ে দিলাম।টেক ইট”

ছেলেটা মৃদু হেসে বুকেটা নিয়ে বললো,

“আপনাতে সমস্যা হওয়ার প্রশ্নই আসেনা মি.রুহায়ের প্রণয়।অ্যান্ড হু’জ অশীন?দিজ নীলাম্বরী?তার নাম অশীন?অদ্ভুততো!”

“তার নাম তোর না জানলেও চলবে।”

বলেই ছেলেটাকে নিয়ে সে স্থান ত্যাগ করতে উদ্যত হতে নিলেই চাঁদ বাধা দিয়ে বলে,

“এক্সকিউজ মি ভাইয়া?”

ছেলেটা ভ্রু কুচকে বলে,

“হু’জ ইওর ভাইয়া?” [কে আপনার ভাই?]

“ফরমালিটি বোঝেন?”

“সবই বুঝি ম্যা’ম”

“গ্রেট!লিসেন দেন।” [ভালো!তাহলে শুনুন]

“ইয়েস ওয়েটিং” [হ্যা অপেক্ষিত]

প্রণয় কপাল কুচকে ছেলেটাকে টানতে টানতে বলে,

“দাঁড়িয়ে আছিস কেন?চল”

ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলে,

“তোর সমস্যা কী?এমন ভাব করছিস যেনো জনম জনম ধরে অপেক্ষা করছিলিস।অথচ আমাদের বন্ধুত্বের ইতি আরও বহুবছর আগেই টানা হয়েছে”

বলেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ক্যারি অন নীলাম্বরী”

চাঁদ কোনো কিছু না ভেবেই ছেলেটার সামনে এসে ডান গালে চ!ড় বসায়।তবে বেশি জোরেও না আবার আস্তেওনা।অতঃপর বলে,

“মেডিকেলে দাঁড়িয়ে আছি এবং শুধুমাত্র অতিথি বলে আলতো চ!ড় দিতে হলো।নাহয় আপনি যেই কান্ড ঘটিয়েছেন আপনার ঠোট টে!নে ছি*ড়ে ফেলতাম”

ছেলেটার চেলাপেলা কিছু বলতে নিলেই চোখ রাঙিয়ে তাকায় চাঁদ এবং হাতের ইশারায় বাধা দিয়ে বলে,

“এবং সে ক্ষমতা আর সাহস দুটোই আমার আছে”

বলেই ফায়ানের হাতে থালা ধরিয়ে দিয়ে বলে,

“এটা ধরো।হিজাব ঠিক করে আসছি।এই অবু চল”

বলে যেতে নিলেই ছেলেটার রাশভারি কন্ঠস্বর ভেসে আসে,

“ফু দিয়েছি বলে এ দশা?চুমু দিলে কী করতে নীলাম্বরী?”

চাঁদ ঘাড় ঘুরিয়ে বাকা চোখে চেয়ে বলে,

“জিভ টে!নে ছি*ড়ে না ফেলা পর্যন্ত এক পা’ও নড়তাম না অবশ্যই!”

ঠিক তখনই ভেসে আসে অরণের কন্ঠস্বর,

“প্রণয়ওতো একই কাজ করেছে তার জিভ কেনো টা!নোনি তুমি?”

অরণের কথা শুনে খানিকের জন্য চুপ হয় চাঁদ।অতঃপর সেই ছেলেটার কথায় তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতে বাধ্য হয় সে,

“তাহলে প্রণয়ের মা*ল তুমি?”

মেজাজ চ!টে যায় চাঁদের সেই সাথে প্রণয়েরও।প্রণয়ের কিছু বলার পূর্বেই চাঁদ অরণের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ঠিক এজন্যই এই লোকটার জিভ টা!নার ইচ্ছে পোষণ করেছি অরণ।কোন পুরুষের রুচি,মানসিকতা আর উদ্দেশ্য কেমন তা বোঝার ক্ষমতা প্রতিটা নারীর ষষ্ঠইন্দ্রীয়তে বিদ্যমান।আর আপনার বন্ধুর উদ্দেশ্য যদি বাজে হতো তার জিভ কেবলই ছি*ড়তা*ম না কে!টে ফেলতাম”

অতঃপর সেই ছেলেটার মাথা থেকে পা অব্দি তর্জনীর ইশারায় বলে,

“আর আপনি।এমন কুরুচি নিয়ে চলেন কী করে?আপনাকে চ!ড়টা ঠিকঠাকভাবেই দেওয়া উচিত ছিলো।ব্লা!ডি হেল”

বলেই অবনীর হাত ধরে প্রস্থান করে।

নিমিষেই সেখানে নীরবতা ছেয়ে যায়।সেখানকার প্রধান অতিথি মুখ থমথমে অবস্থায়ই ছেলেটাকে বলেন,

“চলো এখান থেকে।আর এক সেকেন্ডও এখানে থাকার মানে হয়না”

ছেলেটা লোকটাকে বলে,

“আহহা!চিল বাবা।এতো হাইপার হচ্ছো কেন?প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও নবীনবরণ ধুমধাম করেই হবে।বরঞ্চ এবার একটু বেশিই ইন্টারেস্ট জাগলো মনে”

“মেয়েটার সাহস দেখেছো?সে কার ছেলের সাথে রাফ বিহেভ করেছে আদৌ জানে সে?”

ছেলেটা বাকা হেসে বললো,

“ভালোতো এমনিই লেগেছিলো।এখন যেনো উন্মাদনা ছেয়ে গেলো”

“আমার মাথা কিন্তু ঠিক থাকবেনা আহিন।চলো তুমি”

আহিন ছেলেটা হালকা হেসে কিছু বলতে নিলেই প্রণয়ের ঠাট্টাস্বর ভেসে আসে কানে,

“নিজেদের দোষ আজও আপনি মানতে নারাজ মি.অধিরাজ শেখ?সরি সরি!মেয়র অধিরাজ মোহাম্মদ শেখ?”

অধিরাজ শেখ প্রণয়ের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান।অতঃপর কিছু বলতে নিলেই আহিন প্রণয়ের প্রতিত্তোর করে,

“দোষ তো অবশ্যই আছে।তবে দোষটা তোর ঐ অশীনের।তার আহিনের নজরে পড়াটা একদম উচিত হয়নি।”

বলেই তার বাবা এবং বাকি মন্ত্রী,সভাপতি,অতিথিদের নিয়ে মঞ্চে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

অরণ প্রণয়ের কাধে হাত রেখে কিছু বলার পূর্বেই প্রণয় তার দিকে ঘুরে বলা আরম্ভ করে,

“থেমে যা।আজও আমার কাছে উত্তর নেই”

অরণ হাসে।স্মিত সেই হাসি।চশমার আড়ালে থাকা চোখদু’টোও যেনো জানাচ্ছে তার প্রাণও বোধহয় হাসছে।হাসছে তার হৃদয়ও।শরীরের প্রতিটা লোমকূপও বাতাসের তালে হাসতে চাচ্ছে আজ।হাসি বজায় রেখেই অরণ প্রণয়ের কাধে হালকা চাপড় মেরে বলে,

“আমি তোর সর্বনাশ দেখছি প্রণয়।বিরাট সর্বনাশ!”

অনুষ্ঠান শুরু হয়।বেশকিছুক্ষণ যাওয়ার পর মঞ্চে অবস্থিত উপস্থাপকের মুখে শোনা যায় চাঁদের কিছু মিষ্টি প্রশংসা।যে প্রশংসায় সে পঞ্চমুখ,

“মেয়েটার নাম চাঁদ।দেখতেও সে চাঁদের ন্যায়ই উজ্জ্বল।তবে তার ব্যক্তিত্ব আরও বেশি জ্বলজ্বল করে যেনো।মেয়েটাকে দেখলে বোঝাই যায়না এই ছোট্ট একটা মেয়ের মাঝে বিধাতা গুনের বর্ষণ ঢেলে দিয়েছেন।একটা দু’টো নয়।অনেকগুলো গুনই বিদ্যমান এই মেয়েতে।হয়তো আরও আছে।তবে তা লুক্কায়িত।তন্মধ্যেই লুক্কায়িত তার কোনো একটা গুন প্রকাশিতব্য হতে যাচ্ছে আজ।আশা রাখছি সকলেই আমার ন্যায় প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে তার।মুহাইমা বিনতে চাঁদ আর আরফিদ ফায়ান।এ দুজন যে এ বছরের টপার সবাইতো জানেন তাইনা?পড়ালিখার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা এ দু’ মানব-মানবী আর কিসে কিসে পারদর্শী জানি নাহয় সে সম্পর্কে আজ?পুট ইওর হ্যান্ডস টুগেদার গাইজ!অ্যান্ড লেটস ওয়েলকাম বোথ মুহাইমা বিনতে চাঁদ অ্যান্ড আরফিদ ফায়ান”

ফায়ান আর চাঁদ মুখোমুখি বসেছে।দৃষ্টি তাদের একে অপরেতে নিবদ্ধ।মুখেতে লেপ্টে আছে হাসির মৃদু রেখা।ইশারায় কি যেনো কথোপকথনও চলছিলো দুজনেতে।ফায়ানের আঙুল বিচরণ করছে তার সামনে রাখা পিয়ানোতে।নিখুঁত তার ধ্বনি।কত শ্রুতিমধুর করে তুলেছে পরিবেশটাকে!চাঁদ আর ফায়ানের পেছনে তিনজন করে ছ’জন দাড়িয়েছে তাদের সঙ্গ দিতে।এবং তারাই শুরু করে প্রথম পর্যায়ের পঙক্তিগুলো,

♪♪♪…সর্বত মঙ্গল রাধে বিনোদিনী রাই,
বৃন্দাবনের বংশীধারী ঠাকুরও কানাই।
একলা রাতে জল ভরিতে যমুনাতে যায়,
পিছন থেকে কৃষ্ণ তখন আড়ে আড়ে চায়।…♪♪♪

অতঃপর শোনা যায় ফায়ানের চিকন ও মোটা কন্ঠের মিশ্রণ।দৃষ্টি তার চাঁদেতে নিবদ্ধ,

♪♪♪…জল ভরো,জল ভরো রাধে,ও গোয়ালের ঝি,
কলস আমার পূর্ণ করো,রাধে বিনোদী।…♪♪♪

চাঁদের দৃষ্টিও ফায়ানে বিদ্যমান।মুখে হাসি বজায় রেখে লম্বা শ্বাস টেনে সেও শুরু করে,

♪♪♪…কালো মানিক হাত পেতেছে,চাঁদ ধরিতে চায়, বামুন কি আর হাত বাড়ালে চাঁদের দেখা পায়?…♪♪♪

বিমুগ্ধকর সেই ধ্বনি!চুম্বকের ন্যায় আকর্ষণ করার ক্ষমতা বিদ্যমান তাতে।আকর্ষণ অনুভবও করছে কয়েকজনের হৃদয়।এ যেনো হৃদয় বশ করার বশীকরণী কোনো মন্ত্র!মন্ত্রমুগ্ধ এ সুরের অধিকারিণীর দিকে তাকালে হৃদয় এবং চোখ দু’টোই জুড়িয়ে যাচ্ছে।কি স্নিগ্ধ!কি অপূর্ব ভালোলাগায় আবৃত সে নারী!

To be continued…..

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

২৫.
“শুধু তাই না,হানিমুন করতে শ্বশুরবাড়িও চলে গেছে”

দরজার সম্মুখে দাঁড়ানো পূর্ণতার উপরিউক্ত বাক্যটি কর্ণকুহর হতেই অতীত ছাপিয়ে বর্তমানকে আকড়ে ধরতে হয় ফায়ানের।অতঃপর ইফাদের বিস্ময়কর কন্ঠে তাকায় বন্ধুর পানে,

“চাঁদের বিয়ে হয়েছে?হানিমুনেও গেছে?কিন্তু বিয়েটা হলো কিভাবে?কার সাথে?আর এতো খোজার পরেও যাকে পাইনি সে হঠাৎ বিয়ে করে ঢাকা চলে আসলো?”

পূর্ণতা কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে তাচ্ছিল্য করে বললো,

“সবই হচ্ছে তোমাদের বান্ধবীর সাজানো নাটক।একেতো আমার এক বন্ধুর প্রা!ণটা খেতে খেতে সেরেছে।অন্যদিকে আরেকজনের জীবন নষ্ট করতে বসেছে”

ফায়ানের ঠান্ডা কন্ঠস্বর,

“আপনি কি প্রণয় ভাইয়ার কথা বলছেন আপু?”

মিরা জবাব দেয়,

“ও বাদে আর কাকে এক্সপেক্ট করছিলে ফায়ান?”

ফায়ানের হৃদয় দ্বিতীয়বারের ন্যায় শব্দহীন চুরমার হয়।লম্বা শ্বাস টেনে সে বলে,

“অথচ আপনি একটু আগেই মেয়েটাকে অপ!বাদ দিচ্ছিলেন”

“আরও দেবো।যা সত্যি তা চিরকাল সত্যি”

“আর যা মিথ্যে তা আজন্ম মিথ্যে”

ইফাদ ফায়ানকে বললো,

“চল না চাঁদের সাথে দেখা করে আসি।কত বছর হলো মেয়েটাকে দেখিনা!”

ফায়ান স্মিত হেসে বললো,

“অবশ্যই করবো।কতশত পাওনা বাকি আছে যে!”

এয়ারপোর্টে বসে আছে এক তরুণী।বয়স তার চব্বিশ-পচিশের এপার ওপার।পরণে ট্রাউজার আর টপ্স।টপ্স এর উপর কালো রঙের ব্যারিস্টারি পোশাক।কাধ পর্যন্ত খোল চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।চুলেতে খানিকটা লালাভাও দৃশ্যমান।বোধহয় রঙিন করেছে।চোখে চাচের বড় ফ্রেমের কালো রঙের বর্গাকার চশমা।নাকের ডগায় আসা চশমাখানা ভালো করে চোখে এঁটে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ডায়াল লিস্টের তৃতীয় নম্বরটিতে ডায়াল করে সে।অতঃপর কিছুক্ষণ কথা বলে ওপাশের মানুষটার কাছে নিঃসংকোচে আবেদন করে বসে,

“আমাকে ছেড়ে সবাই মজা করছে।এটা মানতে পারিনি চাচিম্মা।তাইতো চলে এসেছি।খুব শীঘ্রই সেখানেও পৌছে যাবো।যেতে যেতে দুপুর গড়িয়ে পড়বে।তুমি কিন্তু কাউকে কিছু বলবেনা।চমকে দেবো ওদের”

সারারাত ঘুমায়নি রিদি।ব্যাপারটা আর কেউ খেয়াল না করলেও চাঁদ করতে বাধ্য হয়েছে।কেনোনা এখানে আসার পর থেকেই চুপচাপ স্বভাবের মেয়েটা কেমন যেনো বোবাই হয়ে গেছে!জানালার পাশে হেলান দিয়ে ঘুমন্ত রিদিকে দেখেই চাঁদের মায়া হলো।কি সুন্দর মুখশ্রী!মায়ামায়া মুখখানা।এই মেয়েটাও কি তার ন্যায় দুখী?উহু তার ন্যায় দুখী এ ধরণীতে আদৌ কেউ আছে?থাকতে পারে কি?হয়তো পারে,হয়তো নয়।তবে এই ছোট্ট মেয়েটার কিসের এতো দুঃখ?জানতে ইচ্ছে হলো চাঁদের।তাই বিছানার ডান পাশে শোয়া শিফাকে আলতো হাতে ডাকলো সে।খুব ধীর কন্ঠ তার।পাছে রুবা,রিহা,অমৃতারা উঠে যায়?শিফা চোখ ডলতে ডলতে বললো,

“কী ভাবি?”

চাঁদ শিফার মুখ আলতো করে চে!পে ধরে বলে,

“হিশ!চলো আমার সাথে”

বলেই শিফাকে নিয়ে বারান্দায় উপস্থিত হয় সে।অতঃপর শিফাকে প্রশ্ন করে,

“রিদির কী হয়েছে?আসার পর থেকে দেখছি মেয়েটা তেমন কথা বলেনা”

চোখ ডলতে ডলতে হাই তুলছিলো শিফা।চাঁদের হঠাৎ প্রশ্নে ঘুমঘুম ভাব উবে যায় তার।বারকয়েক পলক ঝাপটে বলে,

“রি..রিদুর আবার কী হবে ভাবি?”

চাঁদ শান্তস্বরে বলে,

“কিছু যে হয়েছে তা আমি জানি।কী হয়েছে তা জানতেই তোমাকে ডাকা।কোনো এক্সকিউজ শুনবোনা শিফা।”

হতাশ হয়ে শিফা বলে,

“আমি যে বলতে পারবোনা ভাবি।বোনতো আমার।সেই সাথে বেস্ট ফ্রেন্ডও।যে কথা কখনো কাউকে বলিনি তোমায় কী করে বলবো বলো?”

“আমি কি ডিরেক্ট রিদিকেই জিগেস করবো তাহলে?”

“কী জিজ্ঞেস করবে ভাবি?”

রিদির কন্ঠ পেয়ে দুজনেই তাকায় পেছনে।অতঃপর রিদিকে দেখে চাঁদ আবারও শিফাকে বলে,

“কী হলো বলো?”

শিফা দৃষ্টি নত করে বলে,

“করতে পারো।তবে আমি কিছু বলতে পারবোনা ভাবি।সরি”

বলেই বারান্দা থেকে চলে আসে শিফা।শিফা যেতেই বারান্দার টুলে রিদিকে বসায় চাঁদ।অতঃপর তার সামনে হাটুগেরে বসে হাতদু’টো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

“ভাবিকে বলবেনা?মন খারাপ কেনো তোমার?আমায় বলো সমাধান দেয়ার চেষ্টা করবো”

রিদি ইতস্তত করে বলে,

“না ভাবি তেমন কিছুইনা”

রিদির থুতনিতে হাত রেখে তার মাথা ডানে-বায়ে ঘুরিয়ে চাঁদ বলে,

“তাহলে কেমন কিছু রিদুসোনা?ভাবি তোমার বোনের মতো।তুমি আমায় বলো।তুমি-আমি ব্যতীত কেউ জানবেনা প্রমিজ”

রিদি কিছুক্ষণ ভাবলো।অতঃপর চাঁদের দু’হাত ধরে বললো,

“কাউকে বলবেনাতো?”

রিদির হাত ছাড়িয়ে দাঁড়ায় চাঁদ।মেয়েটার ডান গালে হাত রেখে বলে,

“বলবোনা।তিন সত্যি”

বলেই রিদির মাথা নিজের বুকের সাথে আগলিয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে।অতঃপর চুলে হাত বুলিয়ে বলে,

“এবার ভাবিকে বলো সবটা।ভাবি তোমার যথাসাধ্য সাহায্য করবো”

রিদি চাঁদের এমন স্নেহময়ী স্পর্শ পেয়ে তার কোমড় দু’হাতে জড়িয়ে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বলে,

“ভাবি তুমিতো মিরের সাথে খুব ফ্রেন্ডলি,তাইনা?তার কি সত্যিই গার্লফ্রেন্ড আছে?”

রিদির কথায় চমকে ভ্রু কুচকায় চাঁদ।অতঃপর দুষ্টু হেসে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

“কেন গো ননদিনী?আমার মিরজাফর ভাইয়াকে মন দিয়ে বসেছো নাকি?”

রিদি লজ্জা পেয়ে বলে,

“যাহ ভাবি!বলোনা”

“বললে কিন্তু কষ্ট পাবে সোনা”

“আমি তাও শুনবো।”

“আমার মনে হচ্ছে তুমি ভাইয়াকে খুব পছন্দ করো হা?”

চাঁদকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে লম্বা শ্বাস নিয়ে রিদি বলে,

“আমি তাকে ভালোবাসি ভাবি”

“তাই?”

“হিম”

“কবে থেকে?”

“যখন আমি সেভেনে পড়ি তখন থেকেই।না না।সেভেনে থাকতে ক্রাশ খেয়েছিলাম।আস্তে আস্তে ভালোলাগা এরপরই…”

“ভালোবাসা?”

“হিম”

“তাহলেতো বিষয়টা বেশ জটিল।তুমি কিন্তু কষ্ট পাবে।কিছুটা হলেও খারাপ লাগবে রিদু”

“লাগুক।তুমি বলো”

“আহামরি আমি জানিনা।তাদের সাথে আমার প্রায় তিনবছরের মতো থাকা হয়েছে।মানে পরিচয় আরকি।তোমার প্রণয় ভাইয়া যখন থার্ড ইয়ারে পড়ে আমি কেবলই মেডিকেলে পা দিলাম।সেই হিসেবে তারা আমার দু’ক্লাস সিনিয়র।তাদের সার্কেলে পূর্ণপু বাদে বাকি সবার সাথেই আমার ভালো সম্পর্ক ছিলো।সবচাইতে বেশি ফ্রেন্ডলি আমি মির ভাইয়ার সাথেই ছিলাম।তুমি খেয়াল করলে বুঝবে আজও আমরা আগের ন্যায়ই আছি।হ্যা হয়তো পুরোপুরি না।তবে অনেকটাই।ভাইয়া আমায় খুব স্নেহ করে।তারতো ছোট বোন নেই।তাই খুব ভালোবাসে আমায়।আমার বড় ভাই আছে।তবুও মির ভাইয়াকেও আমি খুব ভালোবাসি।শ্রদ্ধা করি।তার সম্পর্কে এভাবে আমি বলতে চাইনা বা বলতে ভালোও লাগছেনা।কিন্তু যখন থেকে ভাইয়াকে চিনি তখন থেকেই দেখতাম বেশিরভাগ সময় মোবাইলে ব্যস্ত থাকে।এখনো বোধহয় তেমনই।আস্তেধীরে জানতে পারলাম ভাইয়া ওয়ান কাইন্ড অফ প্লেবয়।তার লাইফে মেয়েদের আনাগোনা বেশি।ফ্লার্ট করা তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদ্যমান।তবে আমার সাথে তা কখনোই করেনি।শুরু থেকেই আমি ছিলাম তার ছোটবোন সমতুল্য।তার চিন্তাধারা এমন ছিলো যে ‘একটা গেলে দশটা আসবে’।আর একই সাথে নিম্নে দু’টো রিলেশন কন্টিনু করতোই।যদি উর্ধ্বে শুনতে চাও তবে বলি।একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম,ভাইয়া বলেছিলো হায়েস্ট নাকি পাঁচটাও কন্টিনু করেছে।দেখা সাক্ষাৎ,ফোনালাপ সবই হতো।আমি জানিনা ভাইয়া আদোতে তাদের ভালোবাসতো কিনা।তবে মনেতো হয়না বাসতো বলে।যদি বাসারই হতো ছাড়তো আর ধরতো নাকি?”

রিদির গরম শ্বাস চাঁদের পেটে এসে লাগছে।ফোপানোর আওয়াজও পাচ্ছে সে।নাক টানার শব্দ কর্ণকুহর হতেই চাঁদ রিদির মাথা বুক থেকে সরিয়ে দু’গালে হাত রেখে বলে,

“বোকা মেয়ে কাদছো কেনো?”

রিদি টুল থেকে উঠে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বলে,

“মির এমন কেনো ভাবি?”

“ভাইয়া এখনো এমনই আছে কিনা তাতো জানিনা।তবে একটা কথা মনে রাখবে সে যদি তোমার ভাগ্যে থাকে যত বাধা বিপত্তি ই আসুক না কেনো তুমি তাকে পাবেই।আর ছেলে হিসেবে মির ভাইয়া কিন্তু একদমই খারাপ না।কখনো কোনো মেয়ের সাথে মিসবিহেভ করতে দেখিনি।এমনকি রিহাপু আর পূর্ণপুর সাথে বেশি ঘে!ষতেও দেখিনি।আই মিন মেয়েফ্রেন্ড থাকলে ছেলেরা স্পেশালি প্লেবয়গুলো….বুঝতেই তো পারছো?তবে মির ভাইয়া মোটেও তেমন না।রিলেশন অনেকগুলোই করেছে তা মানছি।কিন্তু তুমি যদি ভাইয়াকে সত্যিই ভালোবাসো আশা ছেড়ে দিওনা।ভালোবাসো।খুব করে বাসো তবে আড়ালে-আবডালে,নীরবে-নিভৃতে।যাতে কাকপক্ষীও টের না পায়।”

মুখটা ছোট হয়ে যায় রিদির।আফসোসের সুরে বলে,

“কিন্তু ভাবি…”

“কিন্তু?”

“মির বোধহয় বুঝে গেছে আমি তাকে ভালোবাসি”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“কিভাবে?”

অতঃপর গতকাল রাতের মিরের বলা সব কথাগুলো রিদি চাঁদকে বলে।সেসব শুনে চাঁদ স্মিত হেসে বলে,

“যেহেতু জেনে গেছে আর তোমাকে নিষেধাজ্ঞাও দিয়ে দিয়েছে।তাহলে তুমিও তার নিষেধাজ্ঞা পালন করো।তাকে বুঝিয়ে দাও ওসব তোমার আবেগ ছিলো।ছোট বয়সের আবেগ।যা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে”

“কিন্তু ভাবি…”

“ভালোবাসা হলে কাটবেনা মেয়ে।তবে মির ভাইয়ারও তো একটু বোঝা উচিত যে ওসব কেবলই তোমার আবেগ ছিলো।তুমি স্ট্রং পার্সোনালিটির একটা মেয়ে।তার কথা তোমার ইগো হার্ট করেছে।জাস্ট টোটালি ইগনোর হিম”

হতাশ হয়ে রিদি বলে,

“এসব কিছু শিফু বা রুবাকে বললে তাও চলতো ভাবি।আমিতো এসব কিছুই পারবোনা।আমার দ্বারা হয়না যে”

“একটা কথা বলি শোনো”

“বলো ভাবি”

“মানুষ পারেনা এমন কিছুই নেই।এই যে আমাকে দেখছো।সেদিন শিফা জিজ্ঞেস করেছিলোনা টেকনাফ কেনো গিয়েছি?ঢামেক ছেড়ে কি করে আসলাম?তাহলে বলছি।শোনো।ঢামেক কেবল আমার স্বপ্ন ছিলোনা এটা ছিলো আমার ভালোবাসা,আমার হৃদয়াবেগ।পরিবারের পর আমার দ্বিতীয় ভালোবাসা ছিলো এটাই।কখনো কল্পনায়ও ভাবিনি এই ঢামেক ছেড়ে একদিন আমায় এতোদূর চলে আসতে হবে।পরিস্থিতির জাতাকলে পড়ে আজ আমি এখানে।মানুষ এমনই মেয়ে।মানুষ সবকিছু পারে।সবকিছু পারতে হয়!পরিস্থিতি সব শিখিয়ে দেয়।তুমিও পারবে।তোমাকে পারতে হবে”

যোহরের আযান দিয়েছে কেবল।ঘড়িতে মিনিটের কাটাটি বারোটা তেপ্পান্নোতে এসে ঠেকেছে।সেকেন্ডের কাটাটা চলছে বিরামহীন।ঠিক এমন সময় দরজার কড়াঘাতে কোমড়ে ওড়না পেচানো চাঁদ রান্নাঘর থেকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে দরজার দিকে এগোচ্ছে।হঠাৎ করে তার পাশে রামিম এসে বলে,

“ডোন্ট ওরি প্রিটি লেডি!আমিই খুলে দিচ্ছি”

চাঁদ হাসার চেষ্টা করে বলে,

“সমস্যা নেই ভাইয়া।আপনি বসুন আমিই যাচ্ছি”

“কিন্তু তুমি রান্না করছিলেতো”

“চুলার আচ কমিয়েই এসেছি।তাছাড়া দেখিতো এসময় কে আসলো।সবাইতো ভেতরেই আছে।বোধহয় খালামনি এসেছে।আপনি যান আমিই দেখছি”

“ওকে অ্যাজ ইওর উইশ”

বলেই রামিম চৈত্রের রুমের দিকে এগোয়।ওখানেই ছেলেদের নিবাস আপাতত।

চাঁদ দরজা খুলতেই দেখতে পায় ব্যারিস্টারি পোশাকে খানিকটা ওয়েস্টার্ন কালচারে নিজেকে উপস্থাপন করা এক মেয়েকে।চাঁদ কিছু বলতে নিলেই মেয়েটা চাঁদকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে এসে খানিকটা উচু গলায় উৎফুল্লতার সহিত বলে উঠে,

“হেই লিটেল অ্যাঞ্জেলস আ’ম ব্যাক!”

To be continued…

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

২৬.
ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলো রুবা আর শিফা।রিদি রান্নাঘরে ছিলো চাঁদের সাথে।তিনজনই এরূপ চেচানো শুনে দরজার কাছে দৌড়ে আসে।এসেই ব্যারিস্টারি পোশাকের মেয়েটাকে দেখে তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে তারা।জাপটে ধরে তিনজনই।অতঃপর মেয়েটা হেসে বলে,

“ছাড় ছাড়!ম!রে যাবোতো”

তিনজনই ছেড়ে দেয় তৎক্ষনাৎ।রুবা কোমড়ে হাত দিয়ে নাক ফুলিয়ে বলে,

“ম!রবে তোমার দুশমন!”

খিলখিল করে হেসে দেয় মেয়েটা।অতঃপর বলে,

“দেখি সর তোরা”

বলেই মূর্তির মতো জমে থাকা রামিমের দিকে এগোয় সে।সামনে গিয়ে পা উচু করে দাঁড়িয়ে ছেলেটার বাম গালে আলতো চুমু খেয়ে বলে,

“কী জান?কেমন দিলাম হা?”

মেয়েটার কথায় সম্বিৎ ফেরে রামিমের।কপাল কুচকে বলে,

“তুমি আসবে বললে তো আমি এয়ারপোর্টই যেতাম”

“আর তোমরা যে এখানে এসে প্রণয় ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি ফূর্তিতে মেতে উঠেছো বলেছিলে আমায়?”

“বললে কী উড়ে চলে আসতি নাকি?”

রায়হানের কটাক্ষমূলক বানীতে পেছনে ফিরে তাকায় সবাই।অতঃপর রায়হানকে দেখে মেয়েটা মিনিট দুয়েকের ন্যায় চুপ হয়।এরই মাঝে শোনা যায় চাঁদের কন্ঠস্বর,

“ইনি কে রুবা?”

রুবা জবাব দেয়,

“আমাদের উশ্মিপু।উজান ভাইয়ের বড় বোন”

রামিম চাঁদকে বলে,

“আমার গার্লফ্রেন্ডও বলতে পারো”

কপাল কুচকে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“মানে?”

উশ্মি শিফাকে জিজ্ঞেস করে,

“আমাদের ভাবি কইরে?”

শিফা স্মিত হেসে বলে,

“তোমার সামনের মেয়েটাইতো ভাবি”

শিফার কথায় চাঁদের দিকে তাকায় উশ্মি।চাঁদকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলে,

“ভাইয়ার চয়েজ তো মারাত্মক শিফু!এজন্যই বুঝি সূদুর টেকনাফ চলে এসেছে?তা ভাবিজান আমার ভাইয়াকে কেমন লেগেছে তোমার হা?”

চাঁদ ইতস্তত করছিলো।এমন সময়ই সেখানে উপস্থিত হয় মির।মিরই চাঁদের হয়ে জবাব দেয়,

“তোমার ভাইয়া তার প্রেমিক পুরুষ উশ্মিতা”

রায়হান,রামিম,উজান আর উশ্মি একসাথেই বলে,

“কীহ!”

মির ওদের পানে তাকিয়ে বলে,

“জ্বি!”

উশ্মি মিরের সামনে এসে বলে,

“তাই নাকি মির ব্রো?ক্যাম্নে কী?”

রিহা কিছু বলতে নিলেই চাঁদ উশ্মির সামনে এসে বলে,

“দেখুন আপু…”

উশ্মি কপাল কুচকে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,

“এক্সকিউজ মি ভাবি?কে তোমার আপু হা?আমি প্রণয় ভাইয়ের থেকে তিন বছরের ছোট বুঝেছো?সেই হিসেবে আমি তোমার ননদ লাগি।নাম ধরে ডাকবে ওকে?”

“ইম…আচ্ছা।কী যেনো নাম আপনার?”

“আগে তুমি করে বলতে শেখো তারপর বলছি”

চাঁদ উশ্মির জবাব না দিয়ে ডাইনীং টেবিল থেকে পানির গ্লাসে পানি ভরে তার সামনে এসে কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে দিয়ে পানি এগিয়ে বলে,

“নাও মেয়ে খাও।আর বলো নাম কী তোমার?”

মিষ্টি হেসে পানি নিয়ে আশেপাশে কিছু খুজে উশ্মি বলে,

“সোফা নেই ভাবি?”

চাঁদ ডাইনীং এর একটা চেয়ার উশ্মির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

“তোমার ভাবিরাতো বড়লোক না ব্যারিস্টার ননদিনী।এই চেয়ারটাতেই বসো নাহয়”

উশ্মি চেয়ারে বসে পানিটুকু খেয়ে বলে,

“চাঁদের মতো ভাবি পেয়েছি বড়লোক দিয়ে ঘাষ কাটার আর কীই বা দরকার ভাবিজান?আমি উশ্মি।তোমার নাম কী গো?”

চাঁদের আগে রিদিই জবাব দেয়,

“চাঁদের মতো ভাবির নামও কিন্তু চাঁদই ভাবি”

উশ্মি রিদির পানে চেয়ে বলে,

“আয়হায় বলিস কী?ভাবির নামও চাঁদ?”

রিদি জবাব দেয়,

“হ্যা ভাবি।ভাবির নাম চাঁদ”

উশ্মি কিছু বলার পূর্বে চাঁদ রিদিকে বলে,

“তুমি উশ্মিকে ভাবি বলছো কেন রিদু?”

শিফা হেসে বলে,

“কারণ উশ্মিপু রিদুর ভাবিই।ইভেন আমারও,রুবারও।সবারই”

“মানে?”

উশ্মি হেসে বললো,

“রামিমের কথাটা বিশ্বাস হয়নি তোমার?”

“রামিম ভাইয়া?ওহ!তুমি সত্যিই তার গার্লফ্রেন্ড?”

“হ্যা ভাবিজান”

রিহা উশ্মিকে বললো,

“বিয়েশাদি কবে করছো উশ্মি?ব্যারিস্টার তো হয়েই গেলে ফাইনালি”

উশ্মি রিহার দিকে চেয়ে বলে,

“তুমিতো আমারও আগে ডাক্তার হয়েছো।চাকরি-বাকরিও করছো।তুমি যেদিন করবে তারপরেই আমি করে ফেলবো আপু”

রিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“অপেক্ষাতো করতে পারবেনা মনে হয়”

“কেনো?”

“আমাদের সার্কেলের কেউই অরণ ঠিক না হওয়া অব্দি বিয়ে করবোনা”

রুবা রিহাকে বললো,

“প্রণয় ভাইয়া যে করলো?”

রিহা জবাব দেয়,

“কেনো করেছে তা আমরা কেউই জানিনা।ভেবেই নিয়েছিলাম শা*লাটা ব্রাহ্মণ হয়ে যাবে”

বলতে বলতেই হেসে দেয় রিহা।রামিম রিহাকে জিজ্ঞেস করে,

“তবে এই পরীটাকে বিয়ে করলো কিভাবে?আর মির যে বললো প্রেমিক পুরুষ?সেদিননা চাঁদ বললো ওরা প্রেম করেনি?”

মির বলে,

“আরেএ রামিম।প্রেম না করলে প্রেমিক পুরুষ হওয়া যায়না নাকি?”

উশ্মি জিজ্ঞেস করে,

“সেটা কি করে ভাইয়া?”

“তোমাদের প্রণয় ভাই আর এই ঘসেটি বেগম তো চোখে চো….”

মিরকে থামিয়ে দিয়ে চাঁদ বলে,

“আহা ভাইয়া।থামোতো তুমি।মেয়েটা জার্নি করে এলো রেস্ট নিয়ে নিক।চলো উশ্মি”

বলেই উশ্মির ব্যাগ এক হাতে আর অপরহাতে উশ্মির হাত ধরে রুমের দিকে এগোয় চাঁদ।

সন্দেহজনক চোখে উশ্মি উজানের দিকে তাকায়।তাকিয়ে কি যেনো ইশারা করে ভাইকে।উজানও উশ্মিকে ইশারায় আশ্বস্ত করে।উশ্মিকে নিয়ে চাঁদ চলে যেতেই উজান মিরকে বলে,

“মির ভাই!ভাবি এভাবে তোমায় থামিয়ে দিয়ে চলে গেলো কেনো?আর ভাই-ভাবির প্রেম ছিলো?আর আমরা জানি ও না!”

রায়হান গম্ভীরভাবে বলে,

“প্রণয় এ ব্যাপারে আমায়ও বলেনি মির”

মির রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে,

“এ ব্যাপারে ওতো নিজেকেই কখনো জানায়নি।বাকিদের কী জানাবে রায়হান?”

“মানে?”

“মানেটা সবাইকে রাতে বলবো ঠিক আছে?আজ কিন্তু কেউ ঘুমাবেনা বুঝেছো?এই রুবা শোনো”

রুবা মিরকে বলে,

“হ্যা ভাইয়া বলো?”

“তুমি কষ্ট করে চৈত্র ভাইকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে তাদের এ বাড়ির ছাদটা অনেকরাত পর্যন্ত খোলা থাকে কিনা?বা রাতে যেতে চাইলে চাবি টাবি দিতে পারবে কিনা?”

বিস্ময়ে রুবার চোখ কপালে!সে আমতা আমতা করে বলে,

“আ…আমি ভাইয়া?”

“হ্যা তুমি।কেনো সমস্যা?”

“না..নাতো!”

“আচ্ছা তাহলে জিজ্ঞেস করে আমায় জানিও”

“ঠিক আছে ভাইয়া”

রিহা কপাল কুচকে মিরকে জিজ্ঞেস করে,

“তুই ঠিক কী করতে চাচ্ছিস বলতো?”

ভাবলেশহীনভাবে মির বলে,

“কী আবার?ওদের ভাই-ভাবি লাগে ওরা।ওদের ব্যাপারে জানতেই পারে।ইটস নরমাল খালা”

“মানে তুই প্রণয়-চাঁদের ব্যাপারে সবটা জানাবি ওদের?”

“জানাবো আর কী?অলরেডি অনেকটা জেনে গেছে”

“মানে?কিভাবে?”

“তন্ময়,রুবা,শিফা আর রিদিতো প্রণয়-চাঁদের ব্যাপারে অনেককিছুই জানে।আমি জানিয়েছি”

উজান তৎক্ষণাৎ ভড়কে বলে,

“কী!তন্ময়!তুই আমায় ধোকা দিলি?তাও এভাবে?”

তন্ময় চেয়ারে বসে মোবাইলে মনোযোগ রেখেই বলে,

“তুই সেদিন আমার রুম থেকে না গেলেইতো সব শুনতে পারতি ভাই”

উজান বলে,

“সেদিন বলেছে?শিট!”

রায়হান মিরকে বলে,

“যা গেছে গেছে মির।তুমি আবারও সবটা আমাদের শোনাবে।বুঝেছো?আমিওতো জানি এই নিরামিষটা কতখানি আমিষ ছিলো”

রামিমও রায়হানের সাথে তাল মিলিয়ে বলে,

“আমারও কিন্তু প্রণয় প্রেমিক হিসেবে কেমন ছিলো জানতে ইচ্ছা করছে মির”

মির সবাইকে শংকিত কন্ঠে বলে,

“ঠিক আছে ঠিক আছে।সবাইকেই জানাবো।কিন্তু প্রণয় আর চাঁদ যেনো এ ব্যাপারে না জানে।জানলে দু’জনই আমার খবর করে দেবে”

রিহা চ!টে গিয়ে বলে,

“তোর খবরই করা উচিত!”

মির রিহার বাম বাহুতে আলতো ঘু!ষি মেরে বলে,

“সর শা*লী!ওদের যেই লম্বা কাহিনী!পুরোটা বলতে গেলে বুড়ো হয়ে যাবো।আধা তুই বলবি আধা আমি বুঝছিস?”

রিহাও মিরের বুকে কিল মে!রে বলে,

“আমার ঠ্যাকা পড়ছে হ্যা?”

রুবা,শিফা আর রিদি রিহার সামনে আসে।এরপর রিদি বাচ্চাদের মতো আবদার করে বলে,

“এমন করওনা আপু!তুমি না আমাদের মিষ্টি আপুটা?আমি জানি তুমি বলবে।উই লাভ ইউ রিহাপ্পু!”

রিহা রিদির গাল টে!নে বলে,

“ওরে!এই চুপচাপ পিচ্চিটা দেখি কথাও বলতে পারে।তোমার আবদারতো একদমই ফেলা যাচ্ছেনা রিদু।অ্যান্ড আই লাভ ইউ মোর ময়নাপাখিস”

উশ্মিকে রুমে নিয়ে এসে ওয়াশরুম দেখিয়ে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“শরবত খাবে তুমি?”

“হ্যা ভাবি গরম লাগছিলো।শাওয়ার নেয়ার আগে শরবত টা খেলে ভালোই লাগতো”

“আচ্ছা বসো।আমি করে আনছি”

“ঠিক আছে ভাবিজান”

মিনিট পাঁচেক পরেই চাঁদ শরবত হাতে ফিরে আসে।আসতেই উশ্মি অবাক হয়ে বলে,

“এতো জলদি!”

চাঁদ হেসে বলে,

“হ্যা।শরবত করতে এতো টাইম লাগে নাকি?”

“আমিতো কিছুই পারিনা ভাবি।সেই যে লন্ডন গেলাম।এই আজ ফিরলাম”

চাঁদ উশ্মির পাশে বসে বলে,

“কতবছর হলো লন্ডন ছিলে?”

“ইম…এইতো আট-নয়ের মতো হলো”

চাঁদ কিছুক্ষণ ভেবে শরবতটা উশ্মির হাতে দিয়ে বলে,

“বাংলাদেশ হিসেবে ভার্সিটি ব্যাচ কোন ব্যাচ ছিলে?মানে ভার্সিটি যদি ভর্তি হতে কতো সালে হতে?”

“দাড়াও হিসাব করি।”

ইম…২০১৩ তে সম্ভবত”

“আচ্ছা তোমার পুরো নামটা যেনো কী?”

শরবত শেষ করে উশ্মি বলে,

“উশ্মিতা উশ্মি।কেনো বলোতো?এই ভাবি তুমি আবার ডিটেকটিভ শিটেকটিভ নাতো?”

চাঁদ হেসে বলে,

“না না।তেমন কিছুই না।তুমিই কি তবে ব্যারিস্টার উশ্মিতা উশ্মি?”

“হ্যা।এক মিনিট এক মিনিট।এমন কন্ঠতো আমি…”

“হিম।আমিই সেই চাঁদ”

“সমুদ্রের বেস্ট ফ্রেন্ড তুমি?মুহাইমা বিনতে চাঁদ মেয়েটা?”

“হ্যা”

কপাল কুচকে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে আশ্চর্য হয়ে উশ্মি বলে,

“প্রণয় ভাইয়াকে ডি*ভোর্স কেনো দিতে চাও তুমি?”

To be continued….