আবার প্রেম হোক পর্ব-৫০+৫১+৫২

0
741

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৫০.
প্রণয়ের সাথে শপিংমলে দাঁড়িয়ে আছে অরণ।প্রণয় কেনাকাটা করছে আর অরণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে এক দিকেই চেয়ে থেকে কোনোকিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।প্রণয় অনেক্ক্ষণ যাবৎ ই তা খেয়াল করে অবশেষে অরণকে বলেই ফেলে,

“কী হয়েছে?এমন অন্যমনস্ক হয়ে আছিস কেনো?”

প্রণয়ের কথায় তার পানে তাকিয়ে অরণ বলে,

“কোথায়?”

“আমার চোখ ফাকি দিতে পারবি ভেবেছিস?”

প্রথমবারের ন্যায় প্রিয় বন্ধুকে মিথ্যা বলতে হয় অরণের,

“কিছুটা ডিপ্রেসড”

“কেনো?”

“অরিনকে নিয়ে”

অরিনের কথা শুনেই কপাল কুচকে প্রণয় বলে,

“ওসব বাদ দিয়ে আমায় কেনাকাটায় হেল্প কর মন ভালো হবে।আর বললি না তো দুই ঘন্টা দেরি হলো কেনো?তুইতো সেই দুইটার দিকেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়েছিলি?”

ভাইয়ের রুমে ঘাপটি মেরে বসে আছে চাঁদ।কলেজ থেকে এসে এভাবে যে বসেছে আর রুম থেকে বের হয়নি।তার মা কতবার খেতে ডেকেছেন তাও যায়নি।মূলত সে অপেক্ষা করছে অরণের ফোনকলের অথবা মেসেজের।কিন্তু অরণ তাকে তার বাসার নিচে দিয়েই চলে গেছে।কিছু বলেনি তেমন।শুধু বলেছে আগামীকাল বাইরে কোথাও দেখা করবে।সেটা নিয়েই ভাবছে চাঁদ।সেইসাথে ভীষণভাবে চুপসে আছে।ক্ষণে ক্ষণেই কেপে উঠছে।বারংবার আম্বিয়ার লা*শটা চোখের সামনে ভাসছে।ঘেমে গেছে খানিকটা,মৃদু কাপছে শরীর।এমতাবস্থায় কেউ তার গায়ে হাত রাখতেই ‘আ’ শব্দ করে চেচিয়ে উঠতেই তার মা জাহানারা বেগম বলেন,

“আমি আমি!এমন ভুত দেখার মতো চমকাচ্ছিস কেনো?”

মাকে দেখেই বিছানায় বসে থেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরে চাঁদ।এক হাতে প্লেট ধরে অপরহাত দিয়ে চাঁদের পিঠে হাত রেখে জাহানারা বেগম বলেন,

“কী হয়েছে ভয় পেয়েছিস?”

দু’পাশে মাথা নেড়ে আরেকটু জোরে মাকে জড়িয়ে ধরে চাঁদ বলে,

“না আম্মু”

“সেতো বুঝতেই পারছি,ছাড়।দেখি কিছুইতো খাস নি।সেই যে এসেছিস রুম থেকে বেরিয়েছিস?রাত হয়ে আসলো অথচ কাপড় ও পাল্টাস নি।এতো ময়লা লেগেছে কী করে?মা!রপিট করিস নিতো?নাকি পড়ে গিয়েছিলি কোথাও?”

“হ্যা আম্মু একটু হোচট খেয়ে পড়েছিলাম”

“মোবাইল টিপে টিপে চোখতো খে!য়েছিসই।এখন চশমা পরেও কিছু দেখিস না?পড়িস কিভাবে আবার?”

“আহহা আম্মু বকোও না তো।আজ কিছুই ভালো লাগছেনা”

“মন খারাপ তোর?”

বলেই মেয়েকে ছাড়িয়ে তার পাশে বসেন জাহানারা বেগম।অতঃপর ভাত মাখতে আরম্ভ করতে নিলেই চাঁদ খানিকটা উচ্চস্বরে বলে,

“মেখো না আম্মু।আমি খাবোনা”

“কেনো খাবিনা?কিছুইতো খাস নি?না খেলে পড়বি কী করে?কাল না শেষ এক্সাম?”

“আমি এমনিতেই পড়তে পারবো।আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা সত্যি”

“এক চ!ড় দেবো।আসছে খেতে ইচ্ছে করছেনা।একটু হলেও খেতে হবে।দেখি হা কর”

বলেই চাঁদের দিকে এক লোকমা ভাত এগিয়ে দেন জাহানারা বেগম।তা দেখে চোখ বন্ধ করে মায়ের হাত সরিয়ে দিয়ে অসহায় কন্ঠে চাঁদ বলে,

“খাবার আমার গলা দিয়ে নামবে না আম্মু”

কপাল কুচকে জাহানারা বেগম বলেন,

“কেনো?”

“ইম….ওদের সাথে ক্যান্টিনে অনেক ভাজাপোড়া খেয়েছি।পেট ফেপে আছে।কিছুই খাওয়া সম্ভব না আম্মু।রাতের খাবারও খেতে পারবোনা”

“সে কি?মুখ যে শুকনো লাগছে।পেটটাওতো পড়ে আছে।খেলে এরকম দেখাবে কেনো?শরীর খারাপ করছে মা?দেখি”

বলেই বাম হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চাঁদের কপাল স্পর্শ করতেই চমকে উঠে বলেন,

“শরীরতো পুড়ে যাচ্ছে।হঠাৎ জ্বর বাধালি কী করে ইশ!দেখি একটু খেয়ে নে মা ঔষধ খাওয়া লাগবে”

হঠাৎ করেই মাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠে চাঁদ বলে,

“মাগো!বিশ্বাস করো খেতে পারবোনা আমি।খাবার নিয়ে যাও আমার বমি লাগছে”

বলেই উঠে বেসিনের কাছে গিয়ে উগলে দেয় সব।পানি ব্যতীত আর কিছুই পেট থেকে বের হয় না।মেয়ের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে জাহানারা বেগম বলেন,

“তুই না খেয়েছিস?তবে পানি আসছে কেনো শুধু?এই ই তোর খাওয়া?”

বেশকিছুক্ষণ পর নিজেকে পরিষ্কার করে মায়ের পাশে বসে চাঁদ বলে,

“আমার শরীরটা ভালো লাগছেনা আম্মু।আমি ভোরে উঠে রিভাইস দিবো।সব পড়া আছে।রিভাইস দেয়া লাগবে।এখন একটু ঘুমাতে চাই।তোমার আর আব্বুর সাথে ঘুমাই আজকে?প্লিজ?”

“প্লিজ বলছিস কেন?ঘুমাবি,সমস্যা কোথায়?একটু খেয়ে নে”

“আল্লাহর দোহাই লাগে খাওয়ার কথা বলবেনা প্লিজ।আমার মন চাইলে আমি খেয়ে নিবো।তুমি প্লিজ আমার পাশে শুবে আম্মু প্লিজ?”

“সবেইতো পৌনে আটটা বাজে।তোর আব্বু ভাইয়া আসবেনা?”

“প্লিজ আম্মু?”

“আচ্ছা শুবো আয়।কিন্তু একটা কথা বল।তুই কি ভয় পেয়েছিস কিছুতে?”

“না আম্মু ভয় পাইনি।খুব খারাপ লাগছে।শুধু শুধু মন খারাপ হঠাৎ করেই”

অতঃপর মাকে সাথে নিয়ে মায়ের বিছানায় মাকে জড়িয়ে কাথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে চাঁদ।জাহানারা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে এক হাতে জড়িয়ে রেখে চিন্তার সাগরে ডুব দেন।হঠাৎ করে মেয়েটার কী হলো?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
খুব ভোরে উঠে আলতো হাতে মাকে ডাকে চাঁদ।ডেকে বলে,

“আম্মু?আম্মু আমি ওয়াশরুমে যাবো।চলোনা প্লিজ”

মেয়ের ডাকে ঘুম থেকে হাই তুলতে তুলতে উঠে মেয়েকে নিয়ে ওয়াশরুমে দিয়ে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে থাকেন জাহানারা বেগম।মেয়েকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান তিনি।হঠাৎ তার বাঘের বাচ্চাটা এমন নেতিয়ে পড়েছে কেনো?কী হয়েছে তার সাথে?এমন ব্যবহার করছে কেনো বুঝতে পারছেন না তিনি।অতঃপর রুমে এসে শোয়ার প্রস্তুতি নিতে গেলে চাঁদ বলে,

“আম্মু আমার পাশে বসে থাকোনা প্লিজ?আমি পড়তে বসবো”

মেয়ের মলিন কন্ঠে মেয়েকে আর না করতে পারেন না তিনি।তবে চিন্তা মস্তিষ্কে কিলবিল করছে।শীঘ্রই বিষয়টা জানতে হবে তার।হঠাৎ করে মেয়েটার হলো কী?কী দেখেছে এমন?অথবা কী হয়েছে তার সাথে?খারাপ কিছু?নাকি খারাপ কিছু দেখেছে সে?

এক্সাম হল থেকে বের হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হাটছে চাঁদ।হঠাৎ করে ফায়ান বলে,

“তোমার চেহারা এমন শুকিয়েছে কেনো চাঁদ?ঘুমাওনি?রাত জেগেছো?”

মাথা নিচু রেখেই চাঁদ আস্তে করে বলে,

“না।ঘুমিয়েছিতো”

“তাহলে চেহারাটা এতো শুকনো কেনো দেখাচ্ছে?”

ইপ্সি বলে,

“গতকালইতো বলছিলাম ওর কী যেনো হয়েছে।আজ আরও বেশি চুপচাপ লাগছে।আমরা কিছু বললেই উত্তর দিচ্ছে তাও হুহা এসব।তোর কী হয়েছে বলবি চাঁদ?”

বন্ধুবান্ধবের চিন্তিত মুখশ্রীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,

“জানিসই তো ফেয়ারওয়েলের পর থেকে প্রণয়ের সাথে তেমন কথা হচ্ছেনা।এর প্রায় দশ-পনেরো দিন পর থেকে টোটালি যোগাযোগ অফ।হাসপাতালে এসেও সে দেখা করছেনা,কথা বলছেনা।আবার এক্সামের প্যারা।তো খানিকটা ডিপ্রেসডই বলতে পারিস”

“প্রণয় ভাইয়ার জন্য?কিন্তু তুইতো জানিস ইন্টার্নশিপে এমন ঝামেলা থাকেই।সময় বের করা যায়না”

অবনীও বলে,

“তাছাড়া ভাইয়াতো কার্ডিওলজি নিয়ে তার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করবে।দু’বছর বেশি লাগবে অন্যদের থেকে।সময় বের করাটা কষ্টসাধ্য নয় কি?”

“একটা মেসেজও দেয়না”

ইফাদ বলে,

“ভাইয়াকেতো আমি অনলাইনেই দেখিনা মেসেজ কিভাবে দেবে চাঁদ?”

“সিমে দেওয়াই যায় তাইনা?নাকি ফোনটাও সাথে থাকেনা?”

কপাল কুচকে গম্ভীরভাবে ফায়ান বলে,

“তুমিতো এমন না চাঁদ।এসব বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটির মানুষতো তুমি না।তবে হঠাৎ এসব বলছো কেনো?হয়েছে কী তোমার?”

অবনীও বলে,

“আর এমনও তো না যে তোরা প্রেম করতিস বা গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড ছিলি যে ভাইয়া তোকে ইগনোর করবে বা করছে ব্রেকাপের উদ্দেশ্যে?”

চাঁদ কপাল কুচকে নিতেই তার ফোনটা বেজে উঠে।অরণের নম্বর দেখেই চোখ চিকচিক করে তার,শ্বাস বাড়ে।বন্ধুমহলের পানে চেয়ে বলে,

“আমার একটা কাজ আছে,গেলাম”

“কোথায় যাবি?আজতো শেষ এক্সাম আমরা কোথায় বেরুবো না?খাবোনা?”

অবনীর কথা শুনে চাঁদ বলে,

“কাল খাবো দোস্ত শিওর।আজ তোরা কোথাও ঘুরে আয়।একদিন আমিসহ সবাই যাবো।আজ আমার যেতেই হবে দোস্ত গেলাম”

বলে আর এক মুহুর্ত দাঁড়ায়না চাঁদ।মোবাইল কানে লাগিয়ে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যায় কলেজ থেকে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
টিএসসির মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে অরণ।চাঁদ সেখানে উপস্থিত হতেই চাঁদসহ উদ্যানের ভেতরে ঢুকে সে।হাটতে হাটতে ফাকা কোনো জায়গা খোঁজে,যেখানে মানুষের ভীড় কম।অতঃপর পেয়েও যায়।একটা গাছের নিচে ঘাসের উপরই গিয়ে বসে দুজনে।চাঁদই বলা শুরু করে,

“আজ হাসপাতাল যান নি?”

“না,একটা কাজ ছিলো সেখানেই ছিলাম।তুমি বলো মুখ এমন শুকনা আর চোখের নিচে এমন কালচেভাব দেখাচ্ছে কেনো?”

“তেমন কিছুইনা”

“তেমন কিছুই।তুমি যে কিছু খাও নি তা বোঝাই যাচ্ছে।এমন কিছু দেখার পর খাবার গলা দিয়ে নামার কথাও না।বসো আমি কিছু নিয়ে আসছি”

“না আমি কিছু খাবোনা।এই বিষয়টা ক্লিয়ার না হওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি মিলছেনা”

গলার স্বর খাদে নামিয়ে অরণ বলে,

“যা বলবে খুবই ধীর গতিতে বলবে।আমি ব্যতীত যেনো কেউ না শোনে”

অরণের কথা শুনে তার পাশে আরেকটু চেপে এসে চাঁদ ফিসফিসিয়ে বলে,

“আম্বিয়া আপুকেতো আমি সেদিন অনিন্দ্য স্যারের সাথে দেখেছি অরণ,তাহলে আপুর লা*শ ওখানে কী করছে?আর দেখে এয়ো মনে হলো পুরোনো লা*শ।পচে গলে যাচ্ছিলো।অতিরিক্ত মাত্রায় নরম হয়ে গেছে।বিষয়টা মাথায় আসছেনা আমার”

অরণও নিম্নকন্ঠে বলে,

“ফার্স্টে আমিও বুঝিনি কিন্তু অনেক ভাবার পর একটা জিনিসই মাথায় আসছে কিন্তু তার আগে বলো তুমি কি শিওর এক্সামের আগেরদিন আম্বিয়াকেই দেখেছিলে?”

“হ্যা।আম্বিয়া আপুই ছিলো ওটা”

“কিন্তু আমরা যে লা*শ দেখেছি সেটা আম্বিয়ারই।আমি যতটুকু বুঝেছি।মেয়েটাকে ধ!র্ষ!ণ করার পরও খুব ট!র্চার করা হয়েছে আর মেয়েটার সম্পর্কে যতটুকু শুনেছি তোমার মতোই সাহসী স্বভাবের।কিছু একটা হয়তো করতে চেয়েছিলো যার দরুন এতোটা নি!কৃ!ষ্টভাবে তাকে হ*ত্যা করা হয়েছে”

“তা…তাই বলে উ….উ*ল*ঙ্গাবস্থায় শরীর কে!চে হ*ত্যা করবে?”

“ধ!র্ষ!ণ করে সরাসরি মা!রার হলে ডিরেক্ট পেটে অথবা অন্যভাবে মা!রতে পারতো কিন্তু যেভাবে কে!চিয়েছে,জিহবা বে…বের করে অর্ধেক কে!টে রেখেছে আর মাথা ন্যা*ড়া করেছে তাতে করে এটাই মনে হচ্ছে কিছু একটা জেনে গিয়েছিলো অথবা পালাতে চেয়েছিলো যার দরুন অতিরিক্ত রেগে ওভাবে মেয়েটাকে….।আর লা*শটা যদি তখনকার হতো যখন ও গায়েব হয়েছে তবে এতোদিনে পুরোপুরি পচে যেতো।কিন্তু এটার বেশিদিন হয়নি মানে বলতে পারো মাস খানেকের মতোই হয়েছে।অথবা তারও কম”

“কিন্তু লা*শতো তিন-চারদিনের মধ্যেই পচা শুরু করেনা?”

“সেটা যদি মাটির নিচে থাকে তখন।কিন্তু ওর ডে*ড*ব*ডিতো মাটিতে পু*তেনি আর যথেষ্টই পচেছে নাহয় তুমি পা দিতেই কেন ওভাবে গলবে?”

“তাহলে আমি যাকে দেখলাম সেটার?”

“সেটা নিয়ে আমার একটাই সন্দেহ”

“কী?”

“হয় তুমি ভুল দেখেছো নাহয়….”

“নাহয়?”

“অন্য কেউ আম্বিয়ার ফেসমাস্ক লাগিয়েছে এবং হয়তো এজন্যই আম্বিয়াকে হ*ত্যাও করেছে”

“তার মানে এসবকিছুতে কোনো মহিলাও আছে?”

“তুমি যদি ভুল না দেখো তবে মহিলাই আছে।আর যদি ভুল দেখো হতে পারে অনিন্দ্য স্যারের গার্লফ্রেন্ড টাইপ কিছু”

“তাহলে কীভাবে সবটা জানা যাবে?”

“বিষয়টা বেশ জটিল।তুমি বলেছিলেনা?যারা উধাও হয়েছে ওরা ফিরে এসেছে।ওদের থেকেই জানা লাগবে”

“কিন্তু ওরা কি বলবে?”

“বাট উই হ্যাভ টু ট্রায়”

“আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে”

“কী প্ল্যান?”

অরণের কানের কাছে গিয়ে আস্তেসুরে পুরো পরিকল্পনা তাকে শোনায় চাঁদ।তা শুনে অরণ ক্রুর হেসে বলে,

“তুমিতো অতিরিক্ত মাত্রায় চতুর চাঁদ”

“আরেকটা জিনিস।অনিন্দ্য স্যারকে চব্বিশ ঘন্টাই যদি নজরে রাখা যায় সহজেই বাকিদের সম্পর্কেও জানতে পারবো।আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে এ কাজে কোনো তিন-চারজনের হাত না অনেকজনই আছে এবং যে মাস্টারমাইন্ড তার ক্ষমতা বেশ”

“আমারও তা ই লাগছে”

“আম্বিয়া আপুর বিষয়টা মাথা থেকে যাচ্ছেনা”

“লা*শের কথা ভুলে যাও।আর এটা শিওর হওয়ার চেষ্টা করো যে ঐটা আম্বিয়ার মতোই চেহারা কিনা?যদি তাই হয় দ্যাটস মিন আম্বিয়ার ফেস দিয়ে নিজের আসল পরিচয় লুকাচ্ছে।এবং হয় সে ই মাস্টারমাইন্ড আদারওয়াইজ মাস্টারমাইন্ডের পার্টনার”

“হিম এমনকিছুই হবে”

“তোমার জুতাটার কী করেছো?”

“ধুয়ে মাটিতে পু*তে দিয়েছি”

“এমন টা করলে কেনো?কেউতো দেখেনি আমাদের”

“ঐ জুতাজোড়া দেখলে আমার চোখের সামনে সেই বিদঘুটে লা*শ ভাসে”

“আচ্ছা আচ্ছা সরি।এসব ভুলে তোমার বিড়াল মানবকে নিয়ে ভাবো”

“তাকে নিয়ে ভাবার কী হলো?”

“মাহ?ওকে দিয়ে ভালোবাসি বলাতে হবেনা?”

“তার যখন ইচ্ছা হবে বলবে।নাহয় বলবেনা”

“ওরে ভাবি আমার!শোনো,তুমি এখনো পুরোপুরি গম্ভীর মহাশয়কে চেনোনি।ও অতিরিক্তই ইন্ট্রোভার্ট।ওর মুখ দিয়ে ভালোবাসির ‘ভা’ ও উচ্চারিত হবেনা।তাই যা করার আমাদেরই করতে হবে”

“কিন্তু এতে করে যদি সে আপনাকে আর আমাকে ভুল বুঝে?”

“একটু ভুলতো বোঝাতেই হবে।নাহয় জেলাস হয়ে মনের কথা কীভাবে বলবে?সেজন্যইতো ওকে বারবার ওয়ার্ন করি যেনো তুমি অন্যের হওয়ার আগেই বলে দেয় বাট গাধাটা বলছেইনা।না তুমি গাধী কিছু বলছো”

কিছুটা লজ্জা পেয়ে চাঁদ বলে,

“না মানে….”

“হয়েছে মানে টানে চলো খাবে।ওসব চিন্তা আপাতত কয়েকদিনের জন্য ঝাড়ো।বাকিটা পরে দেখা যাবে।নিজের স্ট্রং পার্সোনালিটি ধরে রাখো।এভাবে নেতিয়ে পড়লে সবাই সন্দেহ করবে”

“আচ্ছা।আর এসব কথা কাউকে বলেননিতো?”

“না।আপাতত কাউকেই জানাই নি”

“কাউকে জানিয়েনও না।প্রণয়কেও না।বিষয়টা আমরা শিওর হই দেখি সামনে কী হয় তারপর দেখা যাবে।আপাতত আপনার আর আমার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকুক”

“ঠিক আছে চলো”

“চলুন”

অতঃপর দুজনে বাইরে এসে হাসি-ঠাট্টা করতে করতে অনেককিছুই খেলো,অনেক গল্পই করলো।একে অপরের সম্পর্কে জানলো।সেইসাথে তাদের ভালোবাসার মানুষ সম্পর্কে অনেক ধারণাও দিলো।

To be continued…..

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৫১.
সময়টা চৈত্র মাসের।সূর্যের প্রকোপ তাপ,ধরণীকে যেনো তার উত্তাপে ফেলার আয়োজনে সর্বদা মত্ত।আকাশ ক্ষণে ক্ষণেই ঘনকালো মেঘে হয় আচ্ছাদিত।বৃষ্টি আসেনা,তবুও বর্ষণের অপেক্ষায় প্রাণিকুলের হৃদয় হয়ে থাকে চঞ্চল।সেই চঞ্চল হৃদয় খা খা করে উঠে এক পশলা বৃষ্টির জন্য।অথচ নিষ্ঠুর আকাশের করুনা হয়না।মায়া জন্মায়না নিরীহ প্রাণী,ফে!টে চৌচির হওয়া মাঠ,শুকিয়ে যাওয়া ঘাস অথবা নিস্তেজ তরুর জন্য।চৈত্রের আগমণে ধরণীর সকলকিছু হয়ে উঠে নির্দয়,নিঠুর।সর্বনাশা চৈত্রমাস সমস্ত কিছু গ্রাস করে নেয় যেনো।এমনই কোনো অজানা আশংকা চিত্ত চি!ড়ে দিচ্ছে চাঁদের।গরমে হাশফাশ করছে সে।বান্ধবীদের সাথে অযথা কলেজের আসার কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা।তাদের পাশে বসে থেকেও শান্তি মিলছেনা।এই মাসটা আসার পর থেকেই মনের মাঝে নানান কু ডাকে চাঁদের।সে জানেনা কেনো তবে অদ্ভুত অদ্ভুত ভাবনা মনের মাঝে হানা দেয়।সে চায়না সেসব কখনো সত্যি হোক।কবি-গুরুদের বিভিন্ন উক্তি তার মনে পড়ে।এবং সে চৈত্রমাস নিয়ে ভাবে।কেবলই ভাবে আর ভাবনার সাগরে ডুবে যেতে চায়।হঠাৎ করেই চাঁদ অবনীকে জিজ্ঞেস করে,

“দোস্ত?চৈত্রমাসকে সর্বনাশা বলা হয় ক্যান বলতো?”

কপাল কুচকে অবনী বলে,

“কিসব বলছিস?”

ইপ্সিও জিজ্ঞেস করে,

“এসবই ভাবছিলি এতোক্ষণ ধরে?”

খানিকটা হেসে দুই পা ঘাসের উপর মেলে দিয়ে দু’হাত পেছন দিকে দিয়ে আকাশপানে দৃষ্টি রেখে চাঁদ বলে,

“ধ্বং!সাত্মক চৈত্রমাস,ডেকে আনে সর্বনাশ!”

হঠাৎ ই ইপ্সির প্রশ্ন,

“কী আজগুবি কথাবার্তা বলছিস?”

এবার নিজেকে ঠিক করে চাঁদ বলে,

“এক্সাম শেষ হলো এক সপ্তাহও হয়নি।রেজাল্ট দিতে ঢের বাকি।তোরা বল বিনাকারণে আমায় কলেজে কেনো আনিয়েছিস?”

মুখ গোমড়া করে অবনী বলে,

“আমাদের সাথে বুঝি তোর দেখা করতে ইচ্ছা হয়না?”

চাঁদ সন্দিহান চোখে অবনীকে দেখে বলে,

“আমি কিন্তু খালা ননি পুতুল নই,যে তোমার কথায় গলে যাবো।কাহিনী কী তা বলো”

চাঁদের কথায় চ!টে গিয়ে অবনী বলে,

“হ্যা হ্যা তুই কেন গলবি?তুইতো হচ্ছিস পাথরে মোড়ানো হৃদযন্ত্রের মানবী”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,

“এই পাথরের হৃদযন্ত্রটাও মাঝেমধ্যে নিখুঁতভাবে ভেঙে যায়”

এমনি সময় ইফাদ আর ফায়ান এসে তাদের দুইপাশে বসে।বসেই ফায়ান বলে,

“আমাদের ছাড়াই গল্প করা হচ্ছে?”

আরেকবার লম্বা করে শ্বাস ফেলে চাঁদ শুধায়,

“কী আর করবো গল্প?জীবনের দৈর্ঘ্য তো খুবই স্বল্প!”

খানিকটা রাগ দেখিয়ে ইফাদ বলে,

“এসব কেমন কথা চাঁদ?”

চাঁদের পালটা প্রশ্ন,

“কেমন কথা ইফাদ?”

“এভাবে বলছো কেনো?”

“কীভাবে বললাম?”

“কেমন যেনো!”

“কেমন?”

অবনী কপাল কুচকে বলে,

“তখন থেকেই তোর নেগেটিভ কথা শুনে যাচ্ছি।মেজাজ খারাপ করিস না বললাম”

ফায়ান জিজ্ঞেস করে,

“তখন থেকে মানে?”

ইপ্সি উত্তর দেয়,

“আসার পর থেকেই কেমন উদ্ভট উদ্ভট কথাবার্তা বলছে”

ফায়ান চাঁদকে জিজ্ঞেস করে,

“কী হয়েছে তোমার?আমাদের বলবে?সমস্যাটা আসলে কোথায়?”

চাঁদ উদাসীনভাবে বলে,

“হৃদয় পো*ড়ায় চৈত্রমাস!চিত্তজুড়ে তার বাস”

ফায়ান নিম্নকন্ঠে বলে,

“কারো জন্যই জীবন থেমে থাকেনা”

ইফাদ বলে,

“সেদিন কিন্তু চলে গেলে চাঁদ।আজ আমরা সারাদিন ঘুরবো,আড্ডা দেবো।এই প্ল্যানিং করেই বেরিয়েছি সবাই”

অবনীও বলে,

“আর টেনশন নিবিনা আন্টির সাথে আমার কথা হয়েছে।আন্টিকে বলেছি আজ আমরা ঘুরবো।আন্টি বলেছেন রাত করে ফিরলেও সমস্যা নেই।তাই বলেই দিয়েছি আজ তুই আমার বাসায় থাকবি।ইপ্সিও থাকবে”

কপাল কুচকে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“আম্মু রাজি হয়েছে?”

ইপ্সি জবাব দেয়,

“আলবাত হয়েছে!উলটো আন্টি বললেন আগামীকাল বিকালে যেনো তোকে দিয়ে আসি।তোর মন নাকি ইদানীং ভালো যাচ্ছেনা?”

প্রসঙ্গ এড়িয়ে চাঁদ ইফাদকে বলে,

“তা ইফাদ,কোথায় কোথায় ঘুরবো আমরা?”

ঠিক তখনই ফায়ানের ফোনটা বেজে উঠে।বাজতেই সে ফোনের দিকে চেয়ে সকলকে বলে,

“তোরা ডিসাইড কর কোথায় কোথায় যাবি।আমি একটু আসছি”

বলেই কল রিসিভ করে ফোন কানে লাগিয়ে বন্ধুদের থেকে খানিকটা দূরে আসে ফায়ান।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বন্ধুমহলকে নিয়ে শপিং এ বেরিয়েছে প্রণয়।কাউকেই আজ হাসপাতালে যেতে দেয়নি।অবশ্য ওরাও যেতো না।মনমরা কেবল পূর্ণতা।তবুও হাসিমুখে বন্ধুর সাথে এসেছে।আগে অতিরিক্ত খারাপ লাগলে প্রকাশ করে ফেলতো তবে এখন নিজেকে বুঝ দিয়েছে,যথেষ্ট সামলে নিয়েছে।যদিও সকলকে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে দিয়েছে তবুও শান্তি মিলছেনা প্রণয়ের।সে অস্থির হয়ে আছে।এই আজকের এই দিনটার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছে এবং প্রিয় কাউকে করিয়েছেও।তাই কোনোপ্রকার ত্রুটি সে রাখতে চায়না।সেজন্যই সবকিছুর তদারকি ঘুরেফিরে নিজেই দেখছে।পূর্ণতা এক ধ্যানে বন্ধুকে দেখছে।অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার পানে এগিয়ে এসে শুধায়,

“খুব ভালোবাসিস চাঁদকে?”

প্রণয় কিছু বলেনা কেবল ঠোটের দু’পাশ অল্প একটু প্রসারিত করে।যার ফলস্বরূপ অধরযুগোলে হাসির রেখা স্পষ্ট না হলেও চোখ দুটো স্বেচ্ছায় হেসে উঠে।অতঃপর অরণের ডাকে সে পানে তাকায় পূর্ণতা আর প্রণয় যায় মিরের কাছে।প্রণয় যেতেই খানিকটা দূরে এনে অরণ পূর্নতাকে বলে,

“খুব কষ্ট হয় তোর তাইনা?”

ম্লান হেসে পূর্ণতা বলে,

“আগে হতো।এখন হয়না রে”

“মানিয়ে নিয়েছিস?”

“মানিয়ে নেওয়ার কিছু নেই।ও তো কখনোই আমার ছিলোনা।আমিই বেশি এক্সপেক্ট করেছি।এয়ো জানতাম কখনো আমার হবেও না।কিন্তু ভাবতে পারিনি কারো জন্য প্রেমের ফোয়ারা হৃদয়ে লালন করে ফেলবে অথবা করতে পারবে কখনো”

“কিন্তু প্রণয়ের হৃদয়ে তো ফোয়ারা নয় সাগর লালিত আছে”

“হয়তো তেমনটাই”

অরণের হঠাৎ প্রশ্ন,

“আমরা যাদের কখনোই পাবোনা অথবা যাদের থেকে ভালোবাসা পাওয়া একেবারেই অসম্ভব তাদেরই কেনো ভালোবাসি রে?”

“এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই রে”

“প্রণয়কেতো তুই আজ থেকে না কলেজ লাইফ থেকেই পছন্দ করিস।মেডিকেলে এসেও কখনো বলিস নি কেনো?”

“এ প্রশ্নটা আদোতে মানালো তোকে অরণ?”

“কেনো?”

“প্রণয় আমায় কেবলই বন্ধু ভাবে।আর আমি চাইনি আমার বন্ধুকে হারাতে।থাক না কিছু অনুভূতি লুক্কায়িত।কাউকে কখনো জানাস নারে আমার মনের এই সুপ্ত অনুভূতি।আর এয়ো চাইনা প্রণয় কখনো জানুক অথবা বুঝে যাক”

“এজন্যই নিজেকে খুশি দেখানোর নাটক করছিস?”

“নাটক নারে।আমি চাঁদ আর প্রণয়ের জন্য সত্যিই খুশি।কেনোনা এটা দুইপাক্ষিক।আমারটাতো একপাক্ষিক,যা কখনোই পূর্ণতা পাবার নয়”

বলেই হাসে পূর্ণতা।তা দেখে অরণ জিজ্ঞেস করে,

“হাসছিস কেনো?”

“হাসছি নিজের ভাগ্যের উপর”

“কেনো?”

“দেখ না।নিজের ভালোবাসার পূর্ণতাই পেলাম না।অথচ নাম আমার পূর্ণতা।আমার নামও আমার সাথে মশকরা করে রে”

“পূর্ণ!”

“ভালো লাগছেনা।আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।তুই প্রণয়ের সাথে যা”

বলেই পূর্ণতা শপিং মলের বাইরে বের হয়।পূর্ণতা যেতেই তার পাশে এসে দাঁড়ায় মিরা।অরণ পাশে ঘুরেই বলে,

“পূর্ণ মন খারা…”

বলতে গিয়েও থেমে যায় অরণ।তা দেখে স্মিত হেসে মিরা বলে,

“পূর্ণকে এক্সপেক্ট করছিলি?”

“না মানে”

“দেখেছি তোদের।দুঃখিত,কথাও শুনলাম”

“দুঃখিত কেনো বলছিস?এমনতো না যে পূর্ণর ব্যাপারে তুই কিছু জানিসনা”

“তা জানি।তবে এটা জানতাম না কেউ কাউকে এতোটা চাওয়ার পরেও,বিনিময়ে কষ্ট ব্যতীত কিছু না পাওয়ার পরেও কেবল তারই মঙ্গল চায়।এমন ভালোবাসা ক’জনের ভাগ্যে জোটে?নিশ্চয়ই পূর্ণ ভাগ্যবতী কেউ”

কোনোকিছু না বলে কেবল মিরার পানে চেয়ে আছে অরণ।তা দেখে মিরা বলে,

“আমি যে কিছুই বুঝিনা বা বুঝতে পারবোনা এটা ভাবা বোকামি বৈ কিছুনা।আর আমি জানি তুই বোকাদের তালিকায় পড়িস না”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরণ বলে,

“একটু আগে শুনিস নি?ভাগ্যকে উপহাস করে গেলো”

“তুই কখনো জানাস নি তাই”

“জানালেও যে খুব কিছু হয়ে যেতো এমনও না।উলটো বন্ধুত্বে ফাটল ধরতো”

“একপাক্ষিক সর্বদা দুঃখই দেয় রে অরণ”

“তোর কাছেতো সবকিছুর উত্তর থাকে।আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি?”

“আমি হয়তো জানি।তবুও বল”

“কী জানিস?”

“এই যে তুই কী প্রশ্ন করবি”

“বল তাহলে?”

“যাকে জিজ্ঞেস করেছিস সেতো বললোনা”

“উত্তর জানতে পারিনি বিধায়ই তোকে জিজ্ঞেস করা”

“প্রশ্নটা আবার কর।তোর মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছি”

“জানিসই তো”

“শোনা না?”

মিরার কথায় কী যেনো ছিলো।কিসের এক টান!অরণ উদাস গলায় বললো,

“যাদের পাওয়া একেবারেই দুষ্কর তাদের প্রতিই আমাদের ভালোবাসা কেনো জন্মায় বলতে পারিস?”

ম্লান হেসে মিরা জবাব দেয়,

“ভালোবাসার সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম।তন্মধ্যে একপাক্ষিক ভালোবাসাটা কারো কাছে প্রশান্তির তো কারো আছে অশান্তির।আমি মনে করি দু’টোর মিশ্রণই এটা।যাকে ভালোবাসি তাকে নিয়ে ভাবতেই প্রশান্তি অনুভূত হয় আর অন্যের সাথে দেখলে অথবা ভাবলে হৃদয় পু*ড়ে অশান্তি বাড়িয়ে দেয়।আর রইলো যাকে পাবোনা তাকে ভালোবাসার কথা?তাহলে বলবো ভালোবাসা জেনেশুনে হয়না।কখন হবে,কার সাথে হবে,কোন প্রহরে হবে সবটা বিধাতাই নির্ধারণ করে রাখেন।নিশ্চয়ই তিনি সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।যার দরুন হৃদয়ে এমন কারো বসবাস হয়ে যায় যাকে কখনোই পাওয়া সম্ভবনা জেনেও মন কেবল তাকেই চায়।তাকে পাওয়ার আশা রাখে,জানে পাবেনা তবুও!”

“যাদেরকে আমরা ভালোবাসি তারা কেনো অন্যকে মন উজাড় করে ভালোবাসে বলতে পারিস?”

খানিকটা হেসে মিরা শুধায়,

“এ যেনো এক ধারাবাহিকতায় পরিণত হয়েছে।আমরা যাকে ভালোবাসি তারা অন্যের ভালোবাসায় মত্ত।আবার আমরা যাদেরকে কখনো ভালোবাসতে পারবোনা,প্রায় অসম্ভব তারা আমাদের মন উজাড় করে ভালোবাসে”

“কেনো হয় এমনটা?”

“আল্লাহ চান বলেই হয়।তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গাছের একটা পাতাও তো নড়েনা রে”

লালবাগ এসেছে চাঁদেরা পাঁচজনে।বর্তমানে তারা কেল্লার ভেতরে ঘাসের উপর বসে চিপ্স চিবাতে ব্যস্ত আর গল্পে হয়ে আছে মশগুল।চাঁদ বেশ বিরক্ত হয়ে বলেই ফেলে,

“শা*লা গরম লাগছে।এই গরমে কেউ কেল্লায় আসে?আর কেল্লায় এমন আছে টা কী ভাই?তোরা না বের হলে কিন্তু আমি একাই বেরিয়ে যাবো আর ডিরেক্ট বাসায় যাবো”

লাফিয়ে উঠে ইপ্সি আর অবনী।ইপ্সি চিপ্সের প্যাকেট মোচড়াতে মোচড়াতে বলে,

“না বোইন বাসায় যাওয়া লাগবেনা।বেরুচ্ছি আমরা”

ইফাদ উঠতে উঠতে বলে,

“পাস্তা ক্লাবে চল লাঞ্চ করে বেরুবো”

ফায়ান বলে,

“এখান থেকে আমার বাসা কাছে।চল বাসায় লাঞ্চ করাবো।পাস্তা টাস্তা খেতে ইচ্ছা করছেনা”

চাঁদও তাল মেলায়,

“এই গরমে আপাতত আমি একটু ঠান্ডা হতে চাই।তোমার বাসায়ই যাচ্ছি।তোদের মুখ দিয়ে যাতে কোনো সাউন্ড না হয় বলে দিলাম।নাহয় সোজা বাসায়!”

অবনী ধমকে উঠে বলে,

“পাইছে একটা!বাসায় যাওয়ার হুম!কি।শ*য়তা*ন মহিলা।চল”

অতঃপর পাঁচজনই হাটা ধরে ফায়ানের বাসার উদ্দেশ্যে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বিকাল পাঁচটা,
ফায়ানের রুমে একেকজন চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে।ইফাদ এক পা সোফায় অপর পা ফ্লোরে দিয়ে শুয়ে আছে।অবনী শুয়ে আছে ফায়ানের বিছানার অর্ধেকের বেশি জায়গা জুড়ে।তার পায়ের কাছেই ঠেলে ঠুলে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে ইপ্সি।চাঁদ আরেক পাশের সোফায় কনুই ঠেকিয়ে কপালে হাত রেখে আধশোয়া হয়ে আছে।আর ফায়ান তার পড়ার টেবিলের কাছের চেয়ারটায় বসে বন্ধুবান্ধবের কান্ড পর্যবেক্ষণ করছে।তা দেখে খেকিয়ে উঠে অবনী বলে,

“চোখ দিয়ে গি*লে খাচ্ছিস ক্যান?”

ফায়ান ঠোট উলটে বলে,

“তোদের খেতে আমার বয়েই গেছে!দ*জ্জাল কোথাকার”

অবনী তেতে উঠে শোয়া থেকে উঠে বসে বলে,

“অ্যাই কী বললি তুই?”

ধড়ফড়িয়ে ইফাদ উঠে বলে,

“ভূমিকম্প হচ্ছে?”

চাঁদ খানিকটা হেসে ঠোট টিপে বলে,

“না।অবনীকম্প হচ্ছে”

ইপ্সিও উঠে বসে অবনীকে বলে,

“এই বেডি কম চিল্লাবি।কানের পোকা নাড়িয়ে ফেলেছে একদম,বে*য়াদব কোথাকার”

অতঃপর ফায়ান বলে,

“রোদ পড়ে গেছে।তোরা ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে বেরুবো আমরা।ভাল্লাগছেনা বাসায় বসে বসে”

অবনী ফায়ানের দিকে চেয়ে ভড়কে বলে,

“শা*লা তোর কারণে আমার আয়রণ করা জামাকাপড় নষ্ট হয়েছে”

কপাল কুচকে ফায়ান বলে,

“আমি কী করেছি?”

“তোর কারণেইতো বাসায় এসেছি।আর এখন এই দেখ জামা,ওড়না কুচকে গেছে আমার”

“তো এটা আমার দোষ?”

“তা নয়তো কী?”

ইফাদ জবাব দেয়,

“নিজে যে দুইজনের জায়গা খেয়ে গড়াগড়ি খেয়েছে সেটার কোনো দোষ নাই”

“অ্যাই কী বললি তুই?”

ইপ্সি বলে,

“আমরা সবাই যা শুনেছি।নিজের দোষ স্বীকার কর বে!য়াদব মহিলা”

অবনী চেচিয়ে বলে,

“দেখ তোরা!”

তখনই চাঁদ বলে,

“থাম বলছি!কখন থেকে ঝগড়া করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে।এই ইফাদ,ফায়ান বেরোয় তো তোমরা।আমরা ঠিকঠাক হয়ে বাইরে আসছি”

“ঠিক আছে”

বলেই ফায়ান আর ইফাদ বেরিয়ে পড়ে।অতঃপর পৌনে ছয়টার দিকে সকলে মিলে বের হয় হাতিরঝিলের উদ্দেশ্যে।সেখানে যেতে যেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাবে।আর রাত্রের বেলাই হাতিরঝিলের পরিবেশ সুন্দরভাবে অবলোকন করা যায়।সেই দরুনই সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা তাদের।

সন্ধ্যা তখন সাতটা বেজে সতেরো মিনিট,
প্রণয়সহ তার বন্ধুমহলের সকলেই অবনীর বাসার ছাদে উপস্থিত।সেইসাথে আছে অবনীর ছোটবোন লাবনীও।সকলে মিলেই সবকিছু ডেকোরেট করতে ব্যস্ত।প্রণয়ই সবকিছু বলে দিচ্ছে কিভাবে কী করবে,কোনটা কোথায় লাগাবে,কীভাবে সবটা সাজানো হবে ইত্যাদি বিষয়াদি।নিজেও মাঝেমাঝে এটা ওটা করছে।পুরো ছাদটাকে গোলাপি আর সাদার মাঝে সজ্জিত করতে ব্যস্ত প্রতিটা ছেলেমেয়ে।বেলুন ফোলানোর কাজে আছে রবিন,লাবনী আর মিরা।রিহা আর পূর্ণতা সামলাচ্ছে লাইটিং এর তারগুলো।অরণ আর মির মিলে মই বেয়ে পর্দাগুলো লাগাতে ব্যস্ত।আর প্রণয় সবাইকে সঠিক নির্দেশনা দিচ্ছে।

নয়টা পয়তাল্লিশে ছাদে এসে হাজির হয় ইফাদ আর ফায়ান।এসে দেখে ডেকোরেশন প্রায় শেষের পথে।ইফাদ প্রণয়ের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,

“কোনো হেল্প কি লাগবে ভাইয়া?”

প্রণয় জবাব দেয়,

“না,শেষই প্রায়।তোমরা বলো চাঁদ কিছু টের পায়নিতো?”

“না ভাইয়া”

“এখন কোথায় সে?”

“রাস্তায় আছে ওরা”

“তোমরা এতো জলদি?”

“আমরা আগেই বেরিয়েছি”

প্রণয় ইফাদের দিকে কয়েকটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলে,

“এগুলো ধরো”

ইফাদ সবগুলো ব্যাগ নিতে পারছেনা দেখে প্রণয় ফায়ানকে ডাকে।ফায়ান এগিয়ে আসতেই প্রণয় বলে,

“দু’জন মিলে ব্যাগগুলো অবনীর রুমে রেখে আসো।আর খানিকটা লুকিয়ে চাঁদ যেনো টের না পায়”

ফায়ানের প্রশ্ন,

“কিন্তু এগুলোতে কী?”

“ড্রেস আর জুয়েলারিস”

ইফাদ জিজ্ঞেস করে,

“এতোগুলো!”

“সবার জন্যই আছে।আর এই যে এই ব্যাগটা এটা চাঁদের জন্য।এটা আলাদা রাখবে”

অবনীর বাসায় এসে তার রুমে কিছুক্ষণ রেস্টের পরই ইপ্সি আর অবনী মিলে চাঁদকে ঠেলেঠুলে ওয়াশরুমে পাঠায় ড্রেস চেঞ্জ করতে।বারবার জিজ্ঞেস করার পরেও যখন তারা কিছুই বলেনা হতাশ হয়ে চাঁদ তাদের কথাই মেনে নেয়।কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে,বন্ধুরা হয়তো সারপ্রাইজ দেবে।তাই বিষয়টা আর ঘাটায়না সে।বান্ধবীদের কথানুযায়ী তৈরি হতে শুরু করে।ঠিক এগারোটা বেজে সাতচল্লিশ মিনিটে সবাই তৈরি হয়ে নেয়।তৈরি হয়েই ইপ্সি আর অবনী দুইপাশ দিয়ে চাঁদকে ধরে ছাদে উঠতে আরম্ভ করে।আর চাঁদ ব্যস্ত তার ড্রেস সামলাতে।কাচের জুতো কখনো পরেনি সে তাই বেশ সামলে একেকটা সিড়িতে পা দিচ্ছে,পাছে ভেঙে যায়?সবকিছুই পছন্দ হয়েছে চাঁদের।সে ভাবতেও পারেনি তার বন্ধুরা এভাবে তাকে সারপ্রাইজ দেবে।ছাদে কিভাবে কী করেছে তা জানতেই মন আঁকুপাঁকু করছে চাঁদের।ছটফট করছে হৃদযন্ত্রটা।বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম শব্দ বেগতিক বাড়ছে।সেতো মেডিকেলের স্টুডেন্ট সে দরুনই ডান হাত দিয়ে বুকের বাম পাশে হাত রাখে।শোনার চেষ্টা করে শব্দটা ঠিক কিরকম?বইয়ে যেমন পড়েছে তেমনই?নাকি অন্যরকম?এবং সে মনোযোগ দিয়ে শুনতে চায় শব্দটা ঠিক ‘লাব ডাব’ কিনা?চাঁদের এমন কাজে চেচিয়ে উঠে অবনী বলে,

“এমন করছিস কেনো?নিজেও পড়বি আমাদেরও ফালাবি”

ইপ্সিও বলে,

“সামলে হাট।জুতো ভাঙলে খবর আছে বলে দিলাম”

চাঁদ বান্ধবীদের হাত ধরে উপরে উঠতে উঠতে বলে,

“একেতো নিজেরাই চোখ বাধিয়েছিস আবার খোটাও দিচ্ছিস?আমি বলেছি এগুলো কর?”

অবনী আবারও বলে,

“হাসের মতো প্যাকপ্যাক না করে উপরে উঠতো।অলরেডি এগারোটা বায়ান্ন বেজে গেছে।জলদি কর”

“তোদের ছাদই তো আটতলা।এতে আমার কী দোষ?”

ইপ্সি বলে,

“তোরা ঝগড়া না করে উঠতো”

অতঃপর অপেক্ষার অবসান ঘটে।তিনজনে এসে ছাদের দরজার কাছে দাঁড়ায়।অবনী দরজায় টোকা দিতেই ওপাশ থেকে ইফাদ বলে,

“চলে আয়”

বন্ধুর কন্ঠ শুনে সাসপেন্স বাড়ে চাঁদের।না জানি কী কী করেছে তারা।অতঃপর বান্ধবীদের হাত ধরেই পা বাড়ায় ছাদের ভেতরে।

আকাশ থেকে মেঘের ‘গুড়ুম গুড়ুম’ ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।ক্ষণে ক্ষণেই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে গগণে।ফাগুনের গরমকে পেছনে ফেলে চৈত্রের বৃষ্টি আকাশ চি*ড়ে ধরণীতে তার আগমন ঘটাতে চাচ্ছে যেনো।রাত্রি তখন এগারোটা বেজে ছাপ্পান্ন মিনিট।ছাদের উপর স্টেজ সাজানো হয়েছে সাদা আর গোলাপি কম্বিনেশনে।সাদা আর গোলাপি পর্দা দ্বারা মেইন জায়গাটা সাজানো হয়েছে।যেখানটায় সকলে বসবে।সাদা আর গোলাপি লাইটিং করা হয়েছে পুরো ছাদজুড়ে।ছাদের জমিনটায় সাদা-গোলাপি বেলুনের সমাহার।পুরো ছাদ মজে উঠেছে সাদা-গোলাপির মিশ্রণে।আর সকলের পরণে আকাশি রঙের ড্রেস।মেয়েরা গাউন আর ছেলেরা টাই-কোর্ট।কেবল চাঁদ আর প্রণয়ের গায়ে বিদ্যমান সাদা রঙ।চোখ বেধে সাদায় মোড়ানো প্রিন্সেস ড্রেসে আবৃত চাঁদকে ছাদের কিনার ঘে*ষে দাড় করায় অবনী।পুরো ছাদটাকে আকাশে বিদ্যমান অর্ধচন্দ্র তার আলোয় আলোকিত করতে ব্যস্ত।চাঁদের ঠিক ডান পাশেই গগণ হতে চন্দ্রিমা সফেদ কন্যারূপী চাঁদকে তার আলোয় করে তুলছে অভূতপূর্ব!এমতাবস্থায় ছাদজুড়ে ইপ্সির মিষ্টি আর কম্পিত কন্ঠ বারংবার প্রতিধ্বনিত হয়,

“চোখের বাঁধন টা খুলে ফেল চাঁদ!”

ঘড়িতে তখন ঠিক বারোটা বেজে শূন্য এক সেকেন্ড।বাঁধন খোলামাত্রই চাঁদের সম্মুখে নিজের প্রিয় মানবকে দেখে যতটানা সে অবাক হয়েছে তার চাইতেও বেশি অবাক হয়েছে তার কন্ঠস্বরে এরূপ এক বাক্য শুনে,

“হ্যাপি টুয়েন্টি মিস হোয়াইট বাটারফ্লাই”

স্তম্ভিত অবস্থা থেকে চাঁদের স্বাভাবিক হওয়ার পূর্বেই অবাকের চরম পর্যায়ে চাঁদকে ফে*লে দিতে প্রণয় তার সামনে গিয়ে তার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে আধারিয়া অম্বরে বিদ্যমান অর্ধচন্দ্রিমার দিকে তাকিয়ে বললো,

“দ্যা মুন ইজ বিউটিফুল”

বলেই অল্প একটু থেমে নিশ্বাস সঞ্চয় করে চাঁদের দিকে ঘুরে তার দিকেই খানিকটা হেলে উভয় ভ্রু উচিয়ে বললো,

“ইজন্ট ইট?”

বুক ধড়াক করে উঠে চাঁদের।এই বাক্যটা সম্পর্কে সে শুনেছে।এর অর্থও সে জানে।যার দরুন হৃদস্পন্দন তীব্র হয় তার,নিশ্বাস বাড়ে।পলকহীন তাকিয়ে থাকে তার বিড়ালাক্ষী মানবের দিকে।এই মাত্র কী বললো সে?সে কি তাকে ভালোবাসি কথাটা অবশেষে বলেই ফেললো?তবে এতোদিন কেনো এতো অবহেলা?ভালোই যখন বাসে কেনো কোনো খোঁজ নেয়নি তিন তিনটা মাস?কেনো নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে তাকে?আজকের এই দিনটার জন্য?এভাবে তাকে চমকে দেবে বলে?বাক্যটা কি সেই অর্থেই প্রণয় বলেছে যেটা চাঁদের মস্তিষ্কজুড়ে বিচরণ চালাচ্ছে?নাকি কেবলই চাঁদের রূপের প্রশংসা করলো সে?ভেবে পাচ্ছেনা চাঁদ।নানান চিন্তায় গ্রাসিত হচ্ছে সে।প্রণয়কে কিছু বলতে নিলেই প্রণয়ের ফোন বেজে উঠে।তার ফোনের ডাটা অন ছিলো বিধায় ফোনটা কেপে উঠেছে।মেসেঞ্জারের টুংটাং শব্দ।সুন্দরতম মুহুর্তে বিরক্তিতে কপাল খানিকটা কুচকে যায় প্রণয়ের।সে মোবাইল হাতে নিতেই দেখে মেসেঞ্জারে মেসেজ রিকুয়েস্ট এসেছে।সেদিকে তোয়াক্কা না করে ফোন পকেটে গুজে রেখে চাঁদের পানে কিছুক্ষণ,অনেক্ক্ষণ নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে সে।চাঁদের দৃষ্টিও প্রণয়ের পানে।কতগুলো মাস পর চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে প্রেমিকযুগোল।চোখজোড়া ভিজে যাচ্ছে চাঁদের।সে ঠোট কামড়ে কান্না আটকাবার প্রয়াস চালায়।অতঃপর না পেরে প্রণয়ের কাছে গিয়ে ঘাড় উঁচিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে,

“সে কি জানেনা?তাকে ব্যতীত একেকটা প্রহর বিরহে কাটায় তার চন্দ্রময়ী?তবে কেনো এতো যন্ত্রণা?”

কথাগুলো বলেই আকস্মিক প্রণয়ের বুকে মুখ গুজে চাঁদ।আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে তাকে।ফোপানোর আওয়াজ নিস্তব্ধ ছাদে খানিকটা জোরেই শোনা যাচ্ছে।প্রণয় তার প্রেমমানবীকে দু’বাহু দ্বারা আলিঙ্গণ করে শুধায়,

“উষ্ণ হৃদয় শীতল করতে তার সুধাকণ্ঠই যথেষ্ট।তবুও হৃদয় শীতল না হয়ে তার অশ্রুজল অগ্নিবর্ষণরূপে চিত্ত পু*ড়িয়ে দিচ্ছে লালগোলাপ।কান্নার ফোয়ারা থামান।থামান বলছি”

To be continued….

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৫২.
দিন গেলো।মাস গড়ালো।কিছু সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটলো।তো কিছু সম্পর্কে ধরলো ফাটলরেখা।জীবনটা যেনো রাতের আধারেই বদলে গেলো।এক রাতে এতো পরিবর্তন কী করে এলো?পরিবর্তন টা কি এক রাতের?নাকি মাসের পর মাস তার সুতো বুনা হয়েছিলো?জানা নেই অরণের।সে আনমনে হয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে,ভাবনায় হয়ে আছে বিভোর।এইতো সেদিন কতটা উৎফুল্লতার সহিত প্রিয় মানবীর বিশেষ দিনকে স্মরণীয় করার জন্য কতটা মরিয়া হয়েছিলো প্রণয় নামক তার প্রিয় বন্ধুটা।ভালোবাসার কথাটা যখন বলেই দিয়েছে প্রণয়টাও বুঝি দেখার সৌভাগ্য জুটবে ভেবে আনন্দে পুলকিত হয়েছিলো সকলে।কিন্তু সকলের ভাবনায় গুড়ো বালি দিয়ে এমন কিছু করেনা সে।সম্পূর্ণভাবে ভালোবাসার বিষয়টা অস্বীকার করে যায়।সে প্রসঙ্গে আর কোনো কথাই সে শুনতে চায়নি।সেই রাতটা স্বাভাবিক থাকলেও পরদিন থেকে নিজেকে কেমন যেনো গুটিয়ে নেয় সকলের থেকে।ছেলেটা সবসময়ই ছিলো গম্ভীর প্রকৃতির।তবে সেটা আড়ালে থেকে যেতো বন্ধুমহলের কাছে।তাদের কাছে প্রণয় ছিলো প্রাণবন্ত এক গম্ভীরমানব।আর অরণ?তার কাছেতো ছিলো খোলা বইয়ের ন্যায় উন্মুক্ত,যাকে যখন তখন চাইলেই পড়ে ফেলা যায়।বুঝে যাওয়া যায় তার চোখের ভাষা।কিন্তু এখন?এখন সবটাই যেনো বদলে যাচ্ছে অথবা গেছে!ছেলেটা আর সবার সাথে গম্ভীর থাকলেও বন্ধুবান্ধবের সাথে কখনো গম্ভীরতা দেখায়নি।তবে বর্তমানে সে সবার থেকেই নিজেকে আড়াল করেছে,দেখায় ব্যস্ততার অজুহাত।কথা হয়না কারো সাথে তেমন,দেখাও করতে চায়না।তবে হাসপাতালে আসার দরুন দেখাটা হয়েই যায়।কিন্তু অরণকে সে সূক্ষ্মভাবে এড়িয়ে চলার চেষ্টায় মত্ত।হয়তো বাকিসবার তুলনায় তার থেকেই দূরত্বটা বাড়িয়েছি অধিক!কারণ টা কী?জানা নেই অরণের।সে ভাবে,ভাবে এবং কেবলই ভাবে!কী এমন কারণ যার জন্য নিজেকে এভাবে বদলে নিলো ছেলেটা?কী এমন হলো সেই রাতে?যার দরুন এভাবে করে বদলে ফেললো নিজেকে?আসলেই কি বদলেছে?নাকি কেবলই লোক দেখানো?ভেতরে ভেতরে বন্ধুটা কি তার পু*ড়ছে দহনে?কিসের সেই দহন?বলেনা কেনো কাউকে?এমনটাতো হওয়ার কথা ছিলোনা।দুজনেতো একে অপরের আহটেই বুঝে যেতো তারা আদোতে আছে নাকি নেই সেথায়?তবে আজ কেনো এতো দূরত্ব বাড়ালো ছেলেটা?আর চাঁদ?চাঁদকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেও কেনো তা অস্বীকার করলো?আর কেউ জানতোনা তবে সেতো জানতো মেয়েটাকে কি সাংঘাতিক ভালোবাসে সে!এবং তাকে এই ভালোবাসি কথাটা বলার জন্যইতো এতোগুলো মাস অবহেলার নাটক করেছে।বহুবার থমকে গিয়েও নিজেকে সামলিয়েছে শুধু সেই একটি দিনের জন্য।এসব কথা সেই রাতের দু’দিন আগে জানিয়েছিলো প্রণয় অরণকে।অতঃপর এক চিলতে হাসি ফুটেছিলো অরণের চোখেমুখে।তার আর কষ্ট করে বন্ধুকে জেলাস করাতে হয়নি।সেও চেষ্টা করেনি এমন কিছুর।তবে হঠাৎ করেই সবটা বদলালো কেনো?মেয়েটা নিশ্চয়ই কষ্টে আছে?শুষ্ক মরুভূমিতে পানি খোঁজার তেষ্টা যেমন তড়পায়,মেয়েটাও তো সেভাবেই তড়পেছিলো।অবশেষে সলিলরূপে ধরা দিয়েছিলো তারই বিড়ালাক্ষী মানব কোনো এক সুন্দরতম মেঘময় রাত্রিতে।অতঃপর?অতঃপর বারিধারা শুকিয়ে হৃদয় চরচরে মরুতে পরিণত হয়েছে আরও একবার!এবং এবার বুঝি আর কখনো সেই হৃদয়ে প্রেমের উষ্ণতা জাগবেনা।উতলা হবেনা নব্য যুবতী মেয়েটি তার প্রেমিক পুরুষের প্রেম উন্মাদনায়!প্রেম নামক বস্তুতে যার ছিলোনা বিন্দুমাত্র উৎসাহ,সেই প্রেমই হয়তো এখন তার কাছে পরিণত হবে অবিশ্বাসের অগাধে।প্রেম ধ্বংস বৈ কিছু আনেনা।তবে চাঁদ কঠোর মানবী।এতো সহজে ধ্বংসিত হয়ে পড়বেনা সে।যার জন্য প্রেম লালন করেছিলো হৃদয়ে,সেই প্রেমকেই দুম!ড়েমুচ!ড়ে দেবে মন কাননের দ্বারে।সেই দ্বার পার করে প্রেম আসবেনা কখনো জীবনে।জীবনের অংক কষে যোজন-বিয়োজন করতে করতে অরণ ভাবে একবার কি মেয়েটার খোঁজ নেয়া উচিত?বড় ভালোবাসে মেয়েটাকে।তার বোন অরিনের মতোই স্নেহ করে।সেইসাথে এক গাদা সম্মানের ছড়াছড়ি।এমন ব্যক্তিত্বের মেয়ে দু’টো দেখেনি সে।কি অবিলম্বে চলাফেরা করে!প্রায় তিন তিনটে বছর কাউকে হৃদয়ে লালিত করে হঠাৎ করেই তার অপ্রত্যাশিত ব্যবহার কি করে সহ্য করছে জানে না অরণ।ভাবতে পারেনা সে।তার সাথে এমনটা হলে হয়তো ভে!ঙে গুড়িয়ে যেতো!কি করে পারছে মেয়েটা?এতো শক্তপোক্ত কেনো হৃদযন্ত্রটা তার?এই মেয়েও কি কভু ভাঙতে পারে?ভেঙে চু!রমা!র হতে পারে?পারে কি?তার ভাবনায় ছ্যাদ ঘটে চাঁদের ফোনকলে।মাত্রই তার কথা ভাবছিলো আর সে ই ফোন দিলো।বিষয়টা ভেবেই হাসলো ছেলেটা।মনে মনে ভাবলো ‘মেয়েটার হায়াৎ আছে’ পরক্ষণেই বিষয়টাকে কুসংস্কার মনে করে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো।কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো চাঁদের উত্তেজিত কন্ঠস্বর,

“অরণ!অরণ!আমি….আমি মাত্রই….মাত্রই…”

কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে অরণের।সে জিজ্ঞেস করে,

“কী হয়েছে চাঁদ?কোনো সমস্যা?আসবো আমি?”

“হ্যা আপনি আসুন।আপনি বলেছিলেন না?আমি সত্যি আম্বিয়া আপুকে আবার দেখেছি।আমি তার পিছু নিচ্ছি জলদি আসুন”

লম্বা শ্বাস নিয়ে খানিকটা ঢোক গিলার ভঙ্গিতে অরণ বলে,

“আম…আমি আসছি।তুমি বলো কোথায় তুমি?আর শোনো খুব সাবধানে পদক্ষেপ নেবে।মেয়েটা যাতে কোনো টের না পায়”

“চিন্তা করবেন না।আমি আজিমপুরে আছি জলদি আসুন”

“আজিমপুর?আজিমপুরের কোথায়?”

ফিসফিসিয়ে চাঁদ বলে,

“আপনি…আপনি আজিমপুর কলোনির দিকে আসুন।মেয়েটা ঐদিকটায়ই যাচ্ছে।প্লিজ জলদি আসুন”

“তুমি সাবধানে থেকো আর ভয় লাগলে এগিয়ো না।ওখানেই থেমে যেও।লাইফ কিন্তু রি*স্কে নেবে না চাঁদ”

“চিন্তা করবেন না,আসুন”

বলেই কলটা কাটে চাঁদ।চাঁদ কল কাটতেই ত্রস্ত পায়ে হাটা ধরে অরণ।বেশিক্ষণ লাগবেনা যেতে।সে বর্তমানে নীলক্ষেত আছে।বড়জোড় মিনিট দশেক লাগবে।তবুও তার প্রাণপন চেষ্টা দ্রুত যাওয়ার।কি যে করবে মাথায় আসছেনা কিছু।মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে কিছু অজানা আশংকা।দ্রুত পা চালায় সে।যেতে হবে তাকে।পৌঁছাতে হবে মেয়েটার কাছে।এই মেয়েটার কিছু হলে তার বন্ধু বেঁচেতো থাকবে অথচ মৃ!তের ন্যায়,সে কথা সে জানে।খানিকের জন্য মেয়েটার সাথে যদি অভিমানের পাল্লাও চলে সেই অভিমান থেকে হারিয়ে যেতে দেবেনা বন্ধুর জীবন থেকে।বন্ধুর আমানত যখন মেনেছে,আমানত রক্ষা সে অবশ্যই করবে।হোক তা নিজের জীবনের ঝুঁকির উপর দিয়েই!

ধীরপায়ে চাঁদ এগুচ্ছে মেয়েটার পিছু।কালো রঙে আবৃত মেয়েটা।হুডির সাথে হাতমোজাও পরেছে।হাতে কিসের যেনো এক বড় ব্যাগ।সন্দেহের মাত্রা দ্বিগুন হচ্ছে চাঁদের।এই মেয়েটা নিশ্চিত বড়সড় কেউ।কিয়ৎক্ষণ পূর্বেই আজিমপুরের দিকের একটা টিউশন থেকে বেরিয়েছে সে।তখনই নজরে এসেছিলো মেয়েটা।অতি সাবধানে তার পিছু নিতে নিতেই অরণকে কল দিয়েছিলো সে।বর্তমানেও যথেষ্ট বুঝেশুনে এগুচ্ছে।কিন্তু খুব সাবধানে থেকেও লাভ হলোনা চাঁদের।ব্যাগটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে অসাবধানতাবশত কিছুর সাথে হোচট সে খেয়েই গেলো।অতঃপর ধপাস করে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ হতেই আম্বিয়ারূপী মেয়েটা পিছু ঘুরে তাকালো।কিন্তু তার আগেই চাঁদ মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।পায়ে ব্যথা পাওয়ার ভঙ্গিমায় পা ডলার নাটক করছে যেনো মেয়েটা বুঝতে না পারে।হয়তো কাজ হলোও।তবে মেয়েটা দ্রুতগতিতে চলা আরম্ভ করলো।চাঁদ উঠে ঘুরে তাকাতেই মেয়েটাকে আর দেখতে পেলোনা।এদিক সেদিক চাইলো।খোঁজার চেষ্টা করলো কিন্তু পেলোনা।হতাশ হয়ে কলোনির ভেতরেই এক পাশের পাকায় বসে পড়লো।বেশকিছুক্ষণ বসে থাকলো সেখানে।ভাবতে থাকলো পরবর্তীতে কি করবে,কীভাবে কী করা যায়।হঠাৎ পাশে কেউ বসতেই সেদিকে চাইলো সে।অতঃপর অরণকে দেখতেই হতাশ গলায় বললো,

“কিছুই করতে পারলাম না”

“কেনো?কী হয়েছে?”

“পড়ে গিয়েছিলাম।নাহয় মেয়েটার রহস্য অবশ্যই জানতে পারতাম”

ভয়মিশ্রিত কন্ঠে অরণ বলে,

“দেখেনি তো তোমায়?”

“দেখেছে,আমি মুখ ঘুরিয়েছিলাম।আর ব্যথা পাওয়ার অভিনয় করেছি যাতে না বুঝে”

“তারপর কি সে পালিয়ে গেলো?”

“পালাতে দেখিনি।আমি উঠে ঘুরতে ঘুরতে কোথায় যেনো গায়েব হয়ে গেলো।খুঁজেও পেলাম না”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে অরণ গম্ভীরভাবে বললো,

“যতটা চালাক নিজেকে মনে করছো আদোতে তা নও তুমি”

“মানে?”

“মেয়েটা যদি তোমার অভিনয়ে ফেসেই যেতো তবে এতো দ্রুত পালাতো না বা গা-ঢাকা দিতোনা।নিশ্চিত সন্দেহ করেছে।তুমি শিওর হয়ে বলো,দেখেনিতো?”

“সম্ভবত দেখেনি”

“সম্ভবত কী আবার?শিওর হয়ে বলো”

“দেখার তো কথানা!”

“ঠিক আছে চলো এখান থেকে।এখানে থেকে কথা বলাও রি!স্কের”

“চলুন”

বলেই দুজনে উঠে দাঁড়ায়।কথা বলতে বলতে বের হয় কলোনি থেকে।নিজেদের মধ্যে আলোচনায় এতোটাই মশগুল ছিলো যে দু’জোড়া চোখের কবলে পড়ে গেলো অথচ জানতেও পারলোনা সে খবর বোকা ছেলেমেয়ে দু’টো।অতঃপর অরণের চাঁদকে তার বাসা অব্দি পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত একজোড়া তীক্ষ্ণ চোখের আড়াল তারা হতে পারলোনা।জীবনে কী আসতে চলেছে তবে?কোনো অজানা বি!পদসমৃদ্ধ ঝড় নাকি অপ্রত্যাশিত কিছু যা কল্পনাতীত দুজনার?

দিন দুয়েক পর,
সেকেন্ড প্রফের রেজাল্ট পাবলিশ হবে আজ।ফার্স্ট প্রফের ক্ষেত্রে যতটা উত্তেজিত চাঁদ ছিলো।ততটা উৎফুল্লতা আজ আর নেই।সে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছে ক্যাম্পাসে।বন্ধুবান্ধব পাশে আসতেই খানিক হাসলো।মেকি হাসি যাকে বলে!মনকাড়া সেই হাসিটা কোথায় মিলিয়ে গেলো?যে হাসিতে অনেকের হৃদক্ষ!রণ করতো মেয়েটা?কোথায় মিলিয়ে গেলো সেই তেজী মেয়েটা?কলেজে আসলেই সে বিষন্নতায় ছেয়ে থাকে কেনো?কী তার কারণ?কেউ জানেনা।হয়তো কেউ জানতে চায়ও না।এসব ভাবতে ভাবতেই মুচকি হেসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে চাঁদ।কতটা বিষাদতাপূর্ণ সেই দীর্ঘশ্বাস তা বোঝা বড় দায়!তবুও এক পুরুষালি কন্ঠ কানে বাজতেই সে পানে তাকায় চাঁদ,

“দীর্ঘশ্বাস দুঃখ বাড়ায় বৈ কমায়না চাঁদ”

অতঃপর ঠোট প্রসারিত করে ছেলেটার পানে চেয়ে সে বলে,

“পাশে বসো ফায়ান,কথা বলি”

বুকটা ধুক করে উঠলো ফায়ানের।প্রণয় নামক পুরুষটার তার জীবনে হঠাৎ আগমনের পর থেকে তার কথা ছাড়া আর কোনো কথা কখনো মেয়েটার মুখে শোনেনি সে।তবে আজ কী বলতে চায়?নিশ্চয়ই প্রণয়ের দেয়া আঘা!তগুলোর কথাই বলবে?তবুও শুনতে চায় সে।এই মেয়েটার কন্ঠেও একপ্রকার জাদু আছে।মন ভালো করার জাদু।বাকিদের কথা জানেনা তবে তার মন ভালো করার জাদু মিশিয়েই বোধহয় মেয়েটা কথা বলে!অধীর আগ্রহে পাশে বসে ফায়ান।বসতেই চাঁদ বলে,

“বিনামূল্যে একটা উপদেশ দিতে চাই ফায়ান।নেবে কি?”

“বি*ষ দিলেও নিয়ে নেবো”

“কী?”

“মানে হ্যা নেবো।না নিতে পারলেও চেষ্টা করবো নেয়ার।বলো”

“জীবনে আর যাই করো,কারো জন্য মনে সুপ্ত অনুভূতি জাগাবেনা।এটা জঘন্য,ভীষণরকমের জঘন্য”

তৎক্ষনাৎ ফায়ানের জবাব,

“ভুল বললে”

“কীভাবে?”

“যে অনুভূতিই সুপ্ত তা জঘন্য হয় কি করে?”

চাঁদের প্রতিত্তোর করার পূর্বেই পাশে এসে বসে অরণ।অরণ বসতেই ফায়ান উঠে যেতে চাইলে চাঁদ বলে,

“উঠছো কেন?বসো”

অরণও বলে,

“উঠোনা,আড্ডা দেই।আজ না রেজাল্ট দেবে?কনফিডেন্স কেমন তোমাদের?”

ফায়ান জবাব দেয়,

“সেই আগের মতোই”

ফায়ানের জবাব পেয়ে চাঁদকে প্রশ্ন করে অরণ,

“আর তোমারটা?”

“হ্যাভ নো কনফিডেন্স” [কোনো আত্মবিশ্বাস নেই]

অরণের প্রশ্ন,

“হোয়াই?” [কেনো?]

“মন বলছে আর বাকিটা মস্তিষ্ক”

বলে আর একটুও অপেক্ষা করেনা চাঁদ।হেটে সেদিকটায় আসে যেদিকটায় আজ থেকে আরও একবছর আগে ফার্স্ট প্রফের রেজাল্টের সময় প্রণয়ের সাথে দাড়িয়েছিলো সে।ছেলেটা হাত ধরে আশ্বাস দিয়েছিলো তাকে।অথচ আজ সে একা।আশ্বাস অথবা সান্ত্বনা সে খুঁজছেনা তবুও মনের কোথাও এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা,মানুষটা আসুক!একবার হলেও আসুক!অন্তত চোখের চাওয়া চেয়ে যাক।কিন্তু না।সে আসেনি।মিনিট দশেক দাড়ানোর পরও সে আসেনা।আর অপেক্ষা করেনা চাঁদ।রেজাল্ট দেখার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে নিলে পাশে এসে দাঁড়ায় কেউ।বুকের হৃদস্পন্দন তীব্র হয় চাঁদের।সে কি এসেছে?সমস্তকিছু ছাপিয়ে কি অবশেষে এলো বলে?গতবারের ন্যায় এবারও কী বলবে?

“এতো বিষন্নতা কেনো চন্দ্র?নিজের প্রতি আশাবাদী নন আপনি?”

নিজের মতো করেই প্রণয়ের বলা কথাটাকে সাজালো চাঁদ।অথচ পাশে ঘুরে অরণকে দেখে বুকে কোথাও সূক্ষ্ম ব্যথা হলো তার।আজও ছেলেটা এলোনা।তবুও কেনো হৃদয় তার প্রহর গুনে?কেনো অন্তরজুড়ে প্রতারক মানুষটার বসবাস?সে কি আদোতে প্রতারক?প্রতারণা করেছে কি তার সাথে?কিন্তু চাঁদের নিজ মনই বিষয়টার বিরোধিতা করলো।মন বললো এমন কিছুইতো লোকটা করেনি।সেই হয়তো বেশি ভেবে বসেছিলো।যার ফলস্বরূপ এখন বুকের মাঝের হিয়াটা ভীষণভাবে পু*ড়ছে।পু*ড়ে কি ছাই হওয়ার পথে?নাকি হয়েই গেছে?উত্তর পায়না সে।কোনোকিছুরই উত্তর পায়না।নিজে নিজেও কোনো উত্তর মিলিয়ে নিতে পারেনা।কোথাও যেনো সংকোচবোধ কাজ করে।আগে লোকটাকে নিয়ে কতশত কল্পনা-জল্পনা করে ফেলতো।অথচ আজ!আজ সে পারেনা সেসব।হয়তো ইচ্ছে করেই করেনা!অরণ চাঁদকে চোখ দিয়ে আশ্বাস দিতেই বিনিময়ে খানিকটা হেসে রেজাল্ট দেখতে এগোয় চাঁদ।ভীড়ের মাঝে যখন সে হারিয়ে যায় ঠিক তখনই আড়াল হতে বের হয় প্রণয়।তবুও আড়ালেই থেকে যায়।কাছে আসেনা।পাশেও আসেনা।দূর হতে কেবল দেখে যায়।

রেজাল্ট দেখে বের হতেই অরণের নজরে চাঁদের স্বাভাবিক মুখশ্রী পড়তেই কপাল কুচকায়।এই মুখশ্রীতে না আছে উৎফুল্লতা না আছে বিষন্নতা।সে বুঝতে পারেনা আদোতে হয়েছে টা কী?তাই জিজ্ঞেস করেই ফেলে,

“রেজাল্ট কেমন হলো চাঁদ?বরাবরের মতোই প্রথম তাইনা?”

খানিকটা হেসে চাঁদ বললো,

“প্রথমতো অবশ্যই কেউ না কেউ হবে এটাই নিয়ম।তবে আমি হয়েছি দ্বিতীয়”

বিস্ময়ে ঠোটজোড়া কিঞ্চিৎ ফাক হয় অরণের।তা দেখে চাঁদ বলে,

“ফায়ান প্রথম হয়েছে।আর আমি এতে ভীষণ খুশি।যাই ওকে কংগ্রেটস জানাতে হবে।আপনিও চলুন”

চাঁদের কব্জি ধরে আটকে দেয় অরণ।অতঃপর বলে,

“খুব কষ্ট লাগছে?”

ঠোট প্রসারিত করে চাঁদ বলে,

“একদমই না!”

অতঃপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অরণের বাহুতে হালকা চাপড় দিয়ে হাসতে হাসতে বলে,

“আপনিও না!আমিতো জানতামই এমন কিছু হবে।পরীক্ষা তেমন ভালো হয়নি বলেছিলামতো আপনায়!বেশি বেশি ভাবছেন।চলুন”

অরণের হাত না ছাড়িয়েই তাকে টেনে ফায়ানকে খুঁজতে লাগে চাঁদ।আর সমস্তকিছু সাদাটে-ধূসর বর্ণের বিড়ালাক্ষীজোড়া দ্বারা মন এবং মস্তিষ্কে ধারণ করে প্রণয়।কোনো প্রতিক্রিয়া না করে আড়াল হতেই বিদায় নেয় সে।অথচ সেখানের কেউই জানলোনা সে এসেছিলো!এসেছিলো চাঁদের বিড়ালাক্ষী মানব,কোনো এক অজানা টানের সুর শুনে।কিন্তু সে কথা কারো কর্ণকুহরে গেলোনা।জানলোনা হৃদয়পো!ড়া মানবীটাও।তার প্রেমিক পুরুষ যে নীরবে এসে নীরবেই চলে গেলো ঘুনাক্ষরেও টের পেলোনা সে।অথচ এক আকাশ মন খারাপ নিয়ে প্রস্থান করলো সে স্থান।না প্রণয়ের সুপ্ত প্রেম কেউ জানলো,না জানলো চাঁদের সুপ্ত প্রেমে পাওয়া আঘা!তের ধ্বংসস্তূপ।

To be continued…..