#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৬০.(অতীতপাতার সমাপ্তি)
“তোমার এক্ষুনি রাজ ভিলায় যেতে হবে আপু”
কথাখানা শুনেই কপাল কুচকে নিতে বাধ্য হয় চাঁদ।অতঃপর ফোনে থেকেই বলে,
“কিন্তু আজ তো শুক্রবার লিমা।আর এই নম্বরটা কার?”
“আমার এক কাজিনের।ওরটা দিয়েই করেছি।আমারটা দিয়ে করলে ওরা জেনে যেতো”
“আমি একা ওখানে কী করে যাবো?”
“আমিও যাবোতো।শুক্রবারও ওখানে মজলিশ বসে।আর গতকাল যেই লোকটা তোমার রুমে ঢুকলো,সে ই নাকি তোমায় ডাকিয়েছে”
“আমি এখন একটু বাইরে আছি।বিকালে গেলে হবেনা?”
“হ্যা বিকালেই যাবো”
“তুমিও চলও প্লিজ,আমার ভয় লাগছে কিঞ্চিৎ”
“তোমায় অবশ্যই একা ছাড়বোনা আপু।চিন্তা করোও না”
আরও কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেয় চাঁদ।কল কাটতেই পাশে থেকে অরণ জিজ্ঞেস করে,
“লিমা কল করেছে কেনো?কোথায় যেতে বলছে তোমায়?”
চাঁদ জবাবে বলে,
“সবটা জানানোর জন্যই আজ আপনার সাথে দেখা করা আমার।বেশ চিন্তায় আছি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দুপুর দুইটা বেজে সাইত্রিশ মিনিট,
রিক্সা হতে নেমেই পাস্তা ক্লাবের কাপল জোনের দিকে এগোয় চাঁদ আর অরণ।সেইসাথে দ্রুত গতিতে রিক্সা থেকে নেমে পকেট থেকে মাস্ক নিয়ে সেটা পরিধান করে প্রণয়ও পিছু নেয় তাদের।অতঃপর দুজনকে কাপল জোনে ঢুকতে দেখে বুকের ভেতর অসহনীয় যন্ত্রণা হয় তার।সাহস করে আর এগোতে পারেনা সে।ইচ্ছে করেনা এগোতে।ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পিছু ঘুরেই মুখের মাস্ক টেনে খুলে সেটা সেখানেই ফেলে দ্রুত কদমে হেটে নেমে আসে সেখান থেকে।
রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকে সামনাসামনি চেয়ারে বসেই দুজনে কথা বলা আরম্ভ করে।তারা ব্যতীত সেখানে আরও দুই তিনজোড়া কপোত-কপোতীও রয়েছে তবে তারা নিজ কার্যে ব্যস্ত।চাঁদ আর অরণের দিকে এত খেয়াল দেয়ার সময় তাদের নেই,দেবেও না তারা।কেনোনা কাপল জোনটাই এমন।ভালোবাসাময় মুহূর্ত ব্যয় করার জন্যই জোড়ায় জোড়ায় আসে তারা।এবং ঠিক এজন্যই চাঁদ আর অরণও এরূপ এক জায়গা বেছে নিয়েছে।কেনোনা একমাত্র এই জায়গা ছাড়া আর কোথাও তারা সতর্কতার সহিত কথা বলতে পারবেনা।অতঃপর কিছু খাবার অর্ডার করে চাঁদই শুরু করে এতদিনের ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা।সমস্তকিছু শুনে বিচলিত হয়ে অরণ বলে,
“পাগল তুমি?এভাবে কেউ নিজ জীবনের ঝুঁ*কি নেয়?আর তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো?এত খারাপ জায়গায় কেনো একা গিয়েছো?লোকটা যদি সত্যিই তোমায় কিছু করে বসতো?”
চাঁদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“সেটাইতো।আমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম অরণ।আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া সহিহ সালামত ফিরে আসতে পেরেছি বলে”
“আবার আজ যেতে চাচ্ছো,তাও শুক্রবারের দিন।আর কতদিন এমন করবে বলোতো?প্রতিদিন সহিহ সালামত ফিরবে তার কী গ্যারান্টি বলো?”
“এজন্যইতো আপনায় জানাতে চাইলাম।কোনো সমস্যায় পড়লেই আপনাকে আমি ডাকবো”
“কোনো কারণবশত আমার আসতে দেরি হয়ে গেলে কী হবে বিষয়টা ভেবেছো একবার?”
“সমস্ত কিছুর এত সন্নিকটে এসে পিছু হটতে বলছেন?”
“না তা বলছিনা।সাবধান করছি তোমায়”
“আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে লোকটার হয়তো আমায় ভালোলাগে।তার দৃষ্টিতে কোনোরূপ কামুকতা দেখিনি”
“কী যেনো নাম বললে?”
“অ্যালেন”
“আমাদের বয়সী সে?”
“হ্যা আপনাদের মতোই হবে নয়তো খানিকটা বড়”
“বিদেশী মনে হলো কেনো?”
“তার চেহারা-সুরত ই এমন আর কথাবার্তায়ও মনে হলো”
“কার সাথে মিলে চেহারা?কাকে সন্দেহ করছো?”
“কার সাথে যেনো মিলে।আমি ঠিক মনে করতে পারছিনা”
“প্রায় দশ বারোদিনের মতো হলো যাচ্ছো।তোমায় সন্দেহ করেনিতো?বা তোমার কাছে কিছু সন্দেহজনক?”
“সম্ভবত কেউই সন্দেহ করেনি তবে ইদানীং মনে হচ্ছে কেউ আমায় আর আপনাকে ফলো করছে”
“সেটা বাদ দাও।তুমি বলো তুমি কিছু সন্দেহ টাইপ দেখেছো কিনা?আর আম্বিয়া মেয়েটার রহস্য উদঘাটন করতে পারলে?”
“এখনো না।বেশ চতুর আর বিচক্ষণ সে।সকলে আম্বিয়া বলেই ডাকে”
“আমি বুঝতে পারছিনা পতিতালয় বানিয়ে হবেটা কী?কী জন্য এমন করছে তারা?টাকার জন্য?”
“যেই লোকজন আসে মেয়ে কিনতে তারা বেশ বড়লোক।আর বেশিরভাগই বিদেশী অরণ।হতে পারে টাকা পয়সার বিষয় বা অন্যকিছু”
“বুঝতে পারছিনা”
“সেদিন সেই লোকটাকে দেখেছি আমি অরণ।মানে চোখ দেখেছি।আর সেই চোখ এর আগেও দেখেছি আমি।তবে তার কন্ঠ শুনিনি,শুনলে চিনতাম অবশ্যই।কেনো যেনো মনে হচ্ছে মুখোশে লুক্কায়িত থাকা অপর লোকটাকে চিনি আমি।একজনের উপর সন্দেহ হচ্ছে”
“কার উপর?”
“সেটা আমি শিওর হয়ে নেই।আমার মাথায় খুব ভালো একটা বুদ্ধি আছে”
“আর সেটা কী?”
“এই অ্যালেন থেকে সবকিছু জানা লাগবে”
কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে বিস্ময় নিয়ে অরণ বলে,
“আর তোমার মনে হয় সে বলবে?”
“আমার প্রতি তার দুর্বলতা কাজ করে অরণ।আমি সেই সুযোগ টাই কাজে লাগাবো”
“তবে বি*পদ ডেকে এনোনা”
“চিন্তা করবেন না”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বেশ কিছুদিন পরের কথা,
অ্যালেন নামক ছেলেটার সাথে সখ্যতা বেড়ে উঠেছে চাঁদের।অ্যালেন তাকে চোখে হারায়।রাজ ভিলায় আসলেই সে ছুটে যায় মহুয়া তথা চাঁদের রুমে।মেয়েটাকে ছাড়া তার একদমই চলেনা।বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে তার প্রতি।সম্ভবত ভালোও বাসে।আজ এসেই ফুরফুরে মেজাজে সে চাঁদের রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিতেই হাসিমুখে চাঁদ তার কাছে এগিয়ে আসে।এসেই আঙুলের উপর ভর দিয়ে পা উঁচু করে তার কপালে বাধা কাপড়টা খুলে মুখের মাস্ক খুলে দিয়ে নিজের শাড়ির আচল দিয়ে মুখ মুছে দিয়ে বলে,
“আ…আসুন”
ছেলেটা সামান্য হেসে বলে,
“তোমার মুখে আধোআধো বাংলা বেশ ভালো লাগে আমার”
চাঁদ মুচকি হেসে তাকে বিছানায় বসিয়ে বলে,
“আ…আটা খুলে ফেলান”
বলতে বলতে অ্যালেনের গায়ের কালো ব্লেজারটাও খুলে নেয় চাঁদ।অতঃপর নজরে আসে ধবধবে সাদা শেতাঙ্গী অ্যালেনকে।চাঁদ সে পানে তাকিয়ে থাকতেই ছেলেটা চাঁদকে ধরে এনে নিজ কোলে বসিয়ে পেট জড়িয়ে ধরে বলে,
“ব্যাপার কী?আজ এতো খাতির-যত্ন যে?”
চাঁদের অস্বস্তিবোধ হচ্ছে তবুও সে নিজেকে সামলে অ্যালেনের গলা জড়িয়ে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তার গালে আলতো করে এক চুমু খায়।চুমু খেতেই সর্বাঙ্গ শিউরে উঠে অ্যালেনের।তার নিশ্বাস বেগতিক বাড়ে।সে চাঁদের কোমড় আরও জোরে চে!পে ধরে বুকের কাছে টেনে নিয়ে আসে।অতঃপর চাঁদের অর্ধোন্মুক্ত পিঠে,ঘাড়ে এক-দু’টো চুমু খেতেই সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়ে চাঁদ।হৃদপিন্ড এত দ্রুত গতিতে চলছে যেনো এক্ষুনি সে ম*রে যাবে।চোখের সামনে সবটা অন্ধকার দেখছে চাঁদ।তবুও সে উঠে গিয়ে টেবিলের কাছটায় যেতে চাইলে অ্যালেন তার হাত ধরে ফেলে চাঁদকে আবারও তার কোলে বসায়।বসাতেই চাঁদের বুকে অজানা আশংকা এসে হানা দেয়।দাতে দাত চেপে সে অ্যালেনের কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
“হা…হামি হা…হাপনাকে ভা..ভালোবাসি”
কথাখানা শুনেই চোখজোড়া দ্রুত খুলে নেয় অ্যালেন।অতঃপর চাঁদকে তার সামনে দাড় করিয়ে বলে,
“কী কী বললে?”
চাঁদ কেবলই মাথা নিচু করে রাখে।তা দেখে অ্যালেন চাঁদের মাথা উঁচু করিয়ে বলে,
“এই মহুয়া বার্ড?বলোনা,কী বললে একটু আগে?”
চাঁদ এবার টেবিলের কাছ থেকে এক শরবতের গ্লাস অ্যালেনের মুখের সামনে নিয়ে নিজে তার কানের কাছে গিয়ে বলে,
“হামি হাপনাকে ভালোবাসি”
চাঁদের কথা শুনে অধর কোনে হাসি ফুটে উঠে অ্যালেনের।সে ঢকঢক করে শরবতটুকু শেষ করে বলে,
“সত্যি?সত্যি বলছো?”
চাঁদ কেবলই মাথা ঝাকায়।ঝাকিয়ে আরেক গ্লাস শরবত অ্যালেনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ঝি সত্যি”
অ্যালেন সেই শরবত টুকুও পুরোটা খেয়ে বলে,
“আমিও তোমায় অনেক ভালোবাসি মহুয়া”
তারপর চাঁদ তার কোলে বসে বিভিন্ন ধরণের গল্প করতে লাগে।আর একের পর এক শরবতের গ্লাস অ্যালেনের দিকে এগিয়ে দেয় আর সেও তা সাদরে গ্রহণ করে পান করে নেয়।এক পর্যায়ে অ্যালেনের এতটাই নেশা হয় যে সে বেমালুম ভুলে বসে চাঁদ স্পষ্ট বাংলায় কথা বলছে।অ্যালেনের দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে আসছে ক্ষণে ক্ষণেই।বেশ মাতাল হয়ে উঠেছে সে।চাঁদকে নিজের দিকে টেনে শুইয়ে দেয় সে।চাঁদও নিরুপায় হয়ে তার পাশে শোয়।শুতেই জিজ্ঞেস করে,
“আচ্ছা অ্যালেন আপনিতো অনেক ভালোমানুষ তবে এসব করছেন কেনো?”
মাতালের ন্যায় অ্যালেন বলে,
“কে বলেছে আমি ভালো মানুষ?আয় আম নট আ ডিসেন্ট পার্সন মহুয়া বার্ড।যার বাবাই ডিসেন্ট নয় সে কী করে ডিসেন্ট হবে পাখি?”
বিস্ময় নিয়ে চাঁদ বলে,
“কে আপনার বাবা?”
“আমার ড্যাড।আমার ড্যাড আমার বাবা।জানো মহুয়া?আমার এই বাবা না আমায় কখনোই ভালোবাসেনি।সবসময় নিজের থেকে দূরে রেখেছে।আমি ছিলাম আমার মমের সাথে কানাডা।আমার ড্যাডের যে আরেকটা বউ আছে তা আমি জেনেছি অনেক পরে।মম যে কী কষ্ট পেলো!তারপরই বাবা আমাকে এখানে এনেছে।এনে কত খারাপ খারাপ কাজ শেখালো!কিন্তু আমার একটা ভাই আছে ভাইটা খুব ভালো।আমি ওকে ভীষণ ভালোবাসি কিন্তু বাবা কখনোই তার কাছে যেতে দেয়না।তার সামনেও আসতে দেয়না মহুয়া।আই জাস্ট হেইট মাই ড্যাড”
“কে আপনার ভাই অ্যালেন?আর কেই বা আপনার বাবা?”
“আমার ভাই আহিন।আহিন মোহাম্মদ শেখ,পলিটিক্স করে যে?আর তুমি জানো?আমার আসল নাম কী?”
চাঁদ বলে,
“কী?”
অ্যালেন যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো।মাতালের ন্যায় সে তোতলিয়ে দ্রুত বলে,
“আম…আমি….আমি হলাম আহান।আহান মোহাম্মদ শেখ”
বিস্ময়ে চোখদুটো বড় বড় হয়ে আসে চাঁদের।এজন্যই কারো সাথে তার চেহারার খুব মিলে খুঁজে পাচ্ছিলো সে।আহিনের সাথে চেহারাটা মিলে তার।আর নামটাও।অ্যালেনের আসল নামটা মনে করতে না পেরে চাঁদ বলে,
“আহিন?আপনার নাম?আপনার নাম আ….”
“না না।আমার নাম আহিন না।আমার ছোট ভাইয়ের নাম আহিন।আমি হলাম ড্যাডের বড় বউয়ের ছেলে।আহিনও ঠিক তাই।তবে আহিন বাংলাদেশে থাকায় সে আমার মতো গায়ের রঙ বা চুলের রঙ পায়নি।আমি হয়েছি মমের মতো”
“তাহলে অ্যালেন বললেন যে?”
“সেটাতো আমার কানাডা থাকাকালীন নাম।ড্যাড এমনিতেও ছেলেবেলা আমার নাম আহান ই রেখেছিলো।কিন্তু মম ভালোবেসে অ্যালেন রাখে।আমারও অ্যালেনই পছন্দ।তবে ড্যাড আহান বলেই ডাকে।মহুয়া তোমার যা পছন্দ হয় সেটাই ডেকো হ্যা?”
“আচ্ছা আহান আপনাদের এসবে কি আহিনও জড়িত?”
“না না!আহিন খুব সুশীল ছেলে।আমিতো মমের কাছ থেকে দূরে আসার পর বেপরোয়া হয়ে গিয়েছি।সেজন্যই বাবার সাথে এই কালো ব্যবসায় হাত দিয়েছি আদারওয়াইজ আমার মেয়েদের প্রতি অতো নেশা নেই।তুমিই আমার প্রথম ভালোবাসা।আই রিয়েলি লাভ ইউ মহুয়া।প্লিজ ডোন্ট লিভ মি লাইক মায় মম”
“যাবোনাতো।আপনার কাছেই থাকবো আমি।আপনার বাবা তাহলে অধিরাজ মোহাম্মদ শেখ?”
মাথা ঝাকায় অ্যালেন।অতঃপর চাঁদ বলে,
“ওনিই সবকিছুর পেছনে আছেন?কিন্তু কেনো?মেয়েদের সাথে এমন করছেন কেনো আপনারা?”
“সেটাতো আমি জানিনা বেইবি।ড্যাড জানে।আমি শুধু তার সাথে থাকি।আর জানে আমার বোন”
“আপনার বোন?কে আপনার বোন?”
“আমার সৎ বোন”
“হ্যা কে সে?”
“অ…..অ..”
বলতে বলতেই ঘুমে টলে পড়ে অ্যালেন।চাঁদ বেশ হতাশ হয় এতে।তবুও মনে মনে বেশ ভয় পাচ্ছে এখন।যে করেই হোক এখান থেকে বেরুতে হবে।অরণকে সবটা জানাতে হবে তার।সে অ্যালেনকে সেভাবে রেখেই উঠে দাঁড়ায়।দাঁড়িয়ে থেকে আসতে নিলে দেখে তার হাত অ্যালেনের হাতে,বেশ শক্ত করে ধরে রেখেছে।নিজেকে বহু কষ্টে ছাড়ায় সে।ছাড়াতে গিয়ে আঙুলের আংটির সাথে লেগে আঙুল খানিকটা কে!টেও যায়।তবে পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে অ্যালেনের শার্টের বোতাম খুলতে আরম্ভ করে চাঁদ।পুরো শার্ট খুলে ফ্লোরে ফে!লে দিয়ে প্যান্টের বেল্ট খুলে হুকও খু!লে রাখে সে।দাতে দাত চেপে চোখ খিচে বন্ধ করে চেইনটাও খানিকটা খুলে সাথে সাথে পাশে গিয়ে শুয়ে থাকে।দাত কিড়মিড়িয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে চুমু খেয়ে লিপস্টিকের দাগ লাগিয়ে দেয় সে।অতঃপর নিজ শাড়ির আচল সরিয়ে শাড়ির কুচিও সরিয়ে নিজেকে এলোমেলো করে অ্যালেনকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে তার সাথেই শুয়ে থাকে চাঁদ।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যা হতেই ঘুম উবে যায় অ্যালেনের।সে পিটপিট করে চোখ খুলতেই নিজের বুকের কাছে চাঁদকে দেখে বেশ অবাক হয়।আরও বেশি অবাক হয় নিজেদের অবস্থা নজরে আসতে।সে দ্রুত উঠে যেতেই চাঁদের ঘুম হালকা হয়ে আসে।আসলে হালকা হয়না,সে ঘুমের ভান ধরে ছিলো।অ্যালেন উঠতেই সেও উঠে বসে মাথা নিচু করে রাখে।গম্ভীরভাবে অ্যালেন বলে,
“এসব কী মহুয়া?”
চাঁদ চুপ করে আছে কিছু বলছেনা।তা দেখে অ্যালেন আবার বলে,
“আমাদের মধ্যে কী কিছু হয়ে গেছে মহুয়া?”
চাঁদ মাথা ঝাকাতে ঝাকাতে ফুপিয়ে উঠে।চাঁদের ফোপানো শুনে অ্যালেন তার মুখ উঁচিয়ে বলে,
“এই মেয়ে?কাদছো কেনো?কিচ্ছু হয়নি।কান্না করোনা।দেখি এদিকে এসো”
বলেই চাঁদকে বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সান্ত্বনা দিতে লাগে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
মজলিশ শেষে রাজ ভিলা থেকে বেরুতেই যেনো প্রাণভোমরা ফিরে পায় চাঁদ।সে যত দ্রুত পারে নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছায়।এসেই অরণকে কল দেয়।বেশ কয়েকবার দেওয়ার পরেও অরণ তার ফোন ধরছেনা বলে বেশ চিন্তায় পড়ে যায় চাঁদ।তাই মিরাকে কল দিতেই মিরা রিসিভ করে বলে,
“হ্যা চাঁদ বলো?”
“আসলে আপু অরণ ফোন ধরছিলোনা”
“হাসপাতাল থেকে অরণ আর প্রণয়কে জরুরী তলব করে ডাকা হয়েছিলো।আর সার্জারি দেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছেন খানিক আগেই।সেইজন্যই ফোন হয়তো সাইলেন্ট করা”
“আজ কি আর ধরবেনা?”
“নয়টাতো বেজেই গিয়েছে মনে তো হচ্ছে না আজ আর কথা হবে বলে।অরণই একটু আগে আমায় জানালো যে ওরা এই প্রথম সার্জারী দেখবে।বেশ এক্সাইটেড ছিলো।বেশ সময়ওতো লাগবে।তুমি বরং কাল কল দিও ওকে”
“ঠিক আছে আপু”
“তোমার এখন কী খবর?”
“এইতো আপু আলহামদুলিল্লাহ”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দু’দিন ধরে কথা বলতে পারছেনা অরণের সাথে চাঁদ।সে বেশ ব্যস্ত তার ইন্টার্নি ঝামেলা নিয়ে যার দরুন চাঁদও তাকে ডিস্টার্ব করতে চায়না।তৃতীয়দিনের দিন অরণই চাঁদকে কল দেয়।অরণের কল পেয়েই চাঁদ বলে,
“অরণ!অরণ!”
অরণ বিচলিত হয়ে বলে,
“কী হয়েছে?কী হয়েছে চাঁদ?তোমার কি কিছু হয়েছে?এতগুলো কল দিয়েছো অথচ আমি দেখতে পারিনি।আসলে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম।সার্জারীর জন্য যেতে হয়েছিলো।সেখানে সার্জারীটা সফল হলেও লোকটা বাঁচেনা তাই ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম তার উপর প্রণয়ের সাথে ঝামেলা হয়েছিলো”
“কী হয়েছিলো?”
“সেসব বাদ দাও।তুমি বলো কী হয়েছে?আমায় হন্ন হয়ে খুঁজেছো কেনো?”
“অরণ আমি!আমি সবটা জেনেছি।এসব কিছুর পেছনে কে আছে আর কেনোইবা এসব করছে জেনেছি আমি।আপনি আসুন আপনাকে বলবো।তাদের মুখোশ খুলবো শীঘ্রই।প্রমাণ জোগাড় প্রায় হয়েছে শুধু একটা জিনিস বাকি।তারপরই তাদের এই কালো কারবারি শেষ।আপনি আসুন প্লিজ।কথা বলাটা জরুরী”
“কে আছে এসবে?”
“অ…অধিরাজ আংকেল”
“হো…হোয়াট!”
“হ্যা।এতকিছু বলার সময় নেই।আপনি প্লিজ বিকাল দিকটায় আসবেন”
.
.
.
.
.
.
.
.
প্রণয় হাসপাতালের এক পাশে চুপচাপ বসেছিলো,এমন সময় তার ফোনে মেসেঞ্জারে মেসেজ আসার শব্দে কপাল কুচকে মেসেঞ্জারে ঢুকতেই সে দেখে চাঁদ আর অরণের বেশ কাছাকাছি বসা কিছু ছবি।এতটাই কাছে যে আরেকটু হলে ঠোট মিলে যাবে।এসবকিছু দেখে রাগে কপালের রগ ফুলে উঠে প্রণয়ের।সে দাতে দাত চেপে মোবাইল লক করে সশব্দে ফ্লোরে আছরে মা!রে তা।টাইলস করা ফ্লোরে মোবাইলটা পড়তে গ্লাস ফেটে কভার খুলে দুভাগ হয়ে যায় তা।
রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতেই কথা বলছিলো চাঁদ।অতঃপর ফোন কেটে দিয়ে মোবাইলটা এয়ারপ্লেন মোডে ফেলে রাজ ভিলায় প্রবেশ করে সে।প্রবেশ করতেই অ্যালেন ঝড়ের বেগে এসে তার বাহু ধরে তাকে নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করে।অতঃপর দরজা আটকে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কে তুমি?”
চাঁদ থতমত খেয়ে যায়।আমতা আমতা করে বলে,
“মা…মা…মাহু…”
ক্ষীপ্র গতিতে চাঁদের সামনে এসে তার বাহু চে!পে ধরে অ্যালেন বলে,
“চুপ!একদম মিথ্যা বলবেনা।তুমি মহুয়া নও আমি তা জানি।তবে বাকিরা জানার পূর্বেই আমায় বলে দাও কে তুমি?কী উদ্দেশ্যে এসেছো এখানে?”
“আপ…আপ…”
বলতে বলতে চোখে পানি এসে পড়ে চাঁদের।মন তার আজ বড্ড কু ডাকছিলো তবুও সে এসেছিলো শেষ প্রমাণটা জোগাড় করতে কিন্তু ভাগ্য বোধহয় সহায় হলোনা।ধরা সে পড়েই গেলো।তাই আর কথা না বাড়িয়ে পেটের কাছে রাখা ছুরিটা বের করে অ্যালেনের দিকে তাক করে বললো,
“এক….একদম কাছে আসবেন না।আসলে খু…খু*ন করে দেবো”
অ্যালেন হোহো করে হেসে দিয়ে বলে,
“সিরিয়াসলি মহুয়া?তুমি আমায় ছুতেও পারবে?”
“দে…দেখুন কা…কাছে আসবেন না”
তবুও ছেলেটা চাঁদের কাছে এসে তার হাত মো!চড়ে ধরে ছুরিটা ফেলে দিয়ে হাত মুচ!ড়ে ধরেই বলে,
“এবার বলো কে তুমি?কেনো এসেছো এখানে?”
“আমাকে প্লিজ যেতে দিন”
“তোমাকেতো যেতে দেওয়া যাচ্ছেনা।সত্যিটা বলো আমায়”
অ্যালেনের দিকে ঘুরে চাঁদ বলে,
“ব্যথা পাচ্ছি,প্লিজ ছাড়ুন।আপনিতো ভালো মানুষ আহান।এমন করবেন না প্লিজ”
কপাল কুচকে অ্যালেন বলে,
“তু…তুমি আমার নাম কী করে জানো?”
“জানি আমি অনেককিছুই।আপনি প্লিজ আমায় যেতে দিন।কথা দিচ্ছি আপনার নাম কোথাও আসবেনা”
“আর আমার নাম কেনো আসবেনা?”
বলেই চাঁদের মুখের সামনে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,
“ভালোবাসো আমায়?”
চাঁদ দ্রুত জবাব দেয়,
“না।কারণ আমি জানি আপনি আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে ছুয়েও দেখেননি।তাই আমি চাই আপনার যেনো কিছু না হয়”
“তোমার সাথেতো আমার…..”
থমথমেভাবে চাঁদ বলে,
“না।আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি সেদিন”
“সেটা আমিও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম তবে আমি তোমার মুখে সব সত্যিটা জানতে চাই”
“আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই”
“এখনো তেজ দেখাচ্ছো?তুমি কি ভাবতে পারছো তোমার সাথে আমি ঠিক কী কী করতে পারি?”
ঢোক গিলে চাঁদ বলে,
“আমি জানি আপনি আমার সাথে কিছুই করবেন না”
“এতো বিশ্বাস?একটা অপরাধীকে এত বিশ্বাস কী করে করছো মহুয়া?সরি তুমিতো মহুয়াও নও।তবে নাম কী তোমার?”
বলেই চাঁদের খোপা করা চুল টেনে খুলে দেয় অ্যালেন।চুল খুলতেই ঝরঝর করে চাঁদের লম্বা চুলগুলো খুলে গিয়ে কোমড় ছাড়িয়ে নেমে যায় নিমিষেই।অ্যালেন কেবলই সে পানে তাকিয়ে থাকে।অতঃপর চাঁদ বলে,
“আপনাকে বিশ্বাস করে নাম বললে নামটা কি আমার গোপন থাকবে অ্যালেন?”
লম্বা শ্বাস নিয়ে অ্যালেন বলে,
“যদি মনে হয় গোপন রাখা শ্রেয়,আমি গোপনই রাখবো মেয়ে”
“দাড়ান তবে”
বলেই হাতে থাকা মোটা বালাগুলো খুলে ফেলে চাঁদ।নাকের নথটাও সে খুলে নেয়।অ্যালেন কেবলই সে পানে তাকিয়ে থাকে।তাকিয়ে থেকেই বলে,
“তোমার গায়ের রং টাও যে কালো নয় তাও আমি জানি।নিজের আসল রূপে ফিরে আসলে আমি খুশি হবো মেয়ে”
বলেই চাঁদের বিছানায় গিয়ে বসে সে।চাঁদ হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আসল রূপে আসার পর যে এখান থেকে বেঁচে ফিরে যাবো তার কি গ্যারান্টি?আম্বিয়া আপুর মতো যে আমায়ও ধ!র্ষণ করে সেভাবেই মে*রে ফেলা হবেনা তার কি গ্যারান্টি?”
দ্রুত গতিতে হেটে এসে চাঁদের মুখ চে!পে ধরে অ্যালেন বলে,
“হিশ!এভাবে বলবেনা,বলবেনা এভাবে।আমার বুকে খুব ব্যথা হয়।আমি ব্যতীত তোমায় আর কেউ ছুতে পারবেনা,পারবেনা মহুয়া!আর মে*রে ফেলা?তা একেবারেই অসম্ভব”
অ্যালেনের হাত সরিয়ে চাঁদ বলে,
“এত ভালোবাসেন কেনো?”
দৃষ্টি নত করে অ্যালেন বলে,
“জানিনা”
অ্যালেনের থুতনী ধরে তার মাথা উঁচিয়ে চোখে চোখ রেখে চাঁদ বলে,
“এত ভালোবাসবেন না প্লিজ।খুব কষ্ট পাবেন তবে”
“কষ্টটা কি তুমি দেবে?”
দৃষ্টি নত করে চাঁদ বলে,
“দিতেই পারি”
“তোমার দেওয়া কষ্টও সুধা মনে করে পান করে নেবো মেয়ে।নাম বলো তোমার?”
“আপনাকে আমি বিশ্বাস করছি অ্যালেন।ধো*কা দেবেন না প্লিজ!”
বলেই নিজের পুটলি থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে তা পরিধান করে বাইরে আসতেই অ্যালেন তার পানে তাকিয়ে বিস্ময়ে হা হয়ে যায়।মাথা থেকে পা অব্দি অবলোকন করতে লাগে ঠিক প্রথম দিনের ন্যায়।চোখের পলক পড়া যেনো বন্ধ হয়েছে তার।অ্যালেনের সামনে এসে তুড়ি বাজিয়ে চাঁদ বলে,
“আমি চাঁদ”
“কী?”
“আমার নাম চাঁদ”
“তুমি?তুমি কি সেই চাঁদ যাকে আহিন,আহিন পছন্দ করে?”
“জ্বি আমি সেই চাঁদই”
চাঁদের পানে তাকিয়ে থেকেই অ্যালেন বলে,
“আজ বুঝলাম কেনো আহিন তোমার জন্য এত মাতোয়ারা”
“বাদ দিন সেসব”
“ওয়েইট?তুমি তাকে রিজেক্ট করেছো কেনো?আমার ভাই দেখতে কিন্তু মোটেও খারাপ নয়”
“তবে আপনি বেশি সুদর্শন”
চাঁদের কথা শুনে তার কাছে এসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে অ্যালেন বলে,
“ভালোবেসে ফেলেছো নাকি?”
চাঁদ দ্রুত পেছনে চেপে বলে,
“না।আমি কাউকেই ভালোবাসিনা”
“তাহলে চান্স আছে দেখা যাচ্ছে?”
“আপনার কি মনে হয়?আদোতে আমি আপনায় ভালোবাসবো?শুধুমাত্র রূপের জন্য?যেখানে আপনার ভাইকেই বাসিনি?”
“ভাইয়ের ভাবি হবে বলে বাসোনি মিস চাঁদ”
এই এক জিনিস চাঁদের মোটেও পছন্দ নয়।যখনই কেউ তাকে ‘মিস চাঁদ’ বলে ডাকে চাঁদের মস্তিষ্ক তাকে প্রণয়ের মুখশ্রীসহ তাকে স্মরণ করাতে বাধ্য করে।সে দাতে দাত চেপে বলে,
“সেটা কখনো সম্ভব না”
“আর সেটা কেনো?”
“আপনি কি আমায় এখান থেকে বেরুতে হেল্প করবেন অ্যালেন?”
কপাল কুচকে অ্যালেন বলে,
“আর সেটা আমি কেনো করবো?কী পাবো তার বদৌলতে?”
“আমি জানি আপনি আমায় সাহায্য করবেন”
চাঁদের চোখ বরাবর চোখ রেখে অ্যালেন বলে,
“ভালোবাসি বলে ফায়দা লুটছো মহু….ইম চাঁদ?”
লম্বা শ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“অনেকটা তেমনই অ্যালেন”
“তবে আমি জানতে চাই এসব কেনো করেছো তুমি?”
“আপনিও জানেন কাজগুলো কতটা খারাপ”
“জানি তবে এত সাহস কারোই হয়নি আজ অব্দি।এতটা দুঃসাহসিকতা কোথায় পেলে তুমি?”
শেষের কথাটা বেশ গম্ভীরভাবেই বলে অ্যালেন।তা শুনে চাঁদ বলে,
“ছেলেবেলা থেকেই এমন আমি”
বলেই সমস্তকিছু অ্যালেনকে খুলে বলে সে।সবকিছু শুনে অ্যালেন বলে,
“আয় লাইক ইওর অ্যাটিটিউড গার্ল।নিজের কথা চিন্তা না করে বাকি মেয়েদের কথা ভাবছো?এখন যদি তোমার সাথে আমি কিছু করে ফেলি?সত্যিই যদি করে ফেলি?কী করবে তুমি?”
চাঁদ অ্যালেনের থেকে পিছু গিয়ে বলে,
“আ…আমি জানি আপনি এমন কি….কিছুই করবেন না”
চাঁদের ভয় পাওয়া দেখে হোহো করে হেসে দিয়ে অ্যালেন বলে,
“ওহ গার্ল!ইউ আর সো ড্যাম অ্যাট্রাকটিভ।মহুয়াবেশেও পাগল করেছো,চাঁদবেশেও করছো।তোমায় অ্যালেনের বউ বানাতেই হবে!”
কথাখানা বলেই হাসে অ্যালেন।আরও কিছু বলার পূর্বেই দরজায় কড়াঘাত করে কেউ।তা শুনে অ্যালেন বলে,
“কে?কে ডিস্টার্ব করছে?কার এত সাহস?আমার প্রাইভেট সময়ে ডিস্টার্ব করে?”
ওপাশ থেকে জবাব আসে,
“আমি তোমার বাবা আহান”
অধিরাজ শেখের আওয়াজ শুনেই ভয়ে তৎক্ষনাৎ হৃদপিণ্ড দ্রুতগতিতে লাফিয়ে উঠে চাঁদের।ভয় পায় অ্যালেনও।সে চাঁদকে বলে,
“তু….তুমি জলদি নিজের মুখ ওড়না দিয়ে ঢেকে নাও।আমাদের এক্ষুনি এখান থেকে বেরুতে হবে”
“কিন্তু কিভাবে অ্যালেন?”
অ্যালেন পুরো রুম পর্যবেক্ষণ করে বলে,
“এই যে এই জানালা দিয়ে।তাড়াতাড়ি করো”
বলেই চাঁদের মহুয়াবেশের জামাকাপড় গয়নাসহ সবকিছু একটা ব্যাগে ভরে তা লুকিয়ে রাখতে রাখতে অ্যালেন চেচিয়ে বলে,
“ড্যাড আ’ম ইন্টিমেটিং”
ওপাশ থেকে উচ্চস্বর ভেসে আসে,
“দ্রুত কাজ শেষ করে দরজা খোলো,তোমার সাথে আমার বেশ গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে”
“ওহ ড্যাড প্লিজ গো।আয় কান্ট বি ফ্রি ইন ইভেন নেক্সট ওয়ান আ’য়ার” [ওহ বাবা দয়া করে যাও।আমি আগামী এক ঘন্টার মধ্যেও অবসর হতে পারবোনা]
“ড্যাম ইট!কাজ শেষ করে দ্রুত আমার সাথে দেখা করবে”
“ওখেই ড্যাড”
ততক্ষণে চাঁদকে নিয়ে বহুকষ্টে জানালা দিয়ে বের হওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে অ্যালেন।এবং অবশেষে দুজনে সে পাশ দিয়ে বের হয়ে আসে সেখান থেকে।বের হয়ে হাইওয়েতে আসতেই চাঁদ অ্যালেনকে বলে,
“আপনি আপনার কালো পোশাকগুলো খুলে এসেছেন কেনো?কেউ চিনে ফেলবেনা?”
“ড্যাড ছাড়া আর কেউই দেখেনি আমায়।সো চেনেনা,চিনবেওনা।আর ব্ল্যাক ড্রেসে চিনবে বলেই খুলে এসেছি।তোমার সাথে একটু লাভ বার্ডের মতো ঘুরে বেড়াবো বলে।আফটার অল এত সুন্দরী মেয়ে আমার পাশে আছে কিনা?”
বলেই চাঁদকে চোখ মা!রে অ্যালেন।চাঁদ কপাল কুচকে বলে,
“আর ইউ কিডিং বয়?”
অ্যালেন হাসতে হাসতে চাঁদকে নিয়ে দৌড়াচ্ছে আর বলছে,
“তোমার একটুও ভয় লাগছেনা মেয়ে?”
“ভয় লাগলে এতদূর আসতাম না”
“এমন দুঃসাহসি মেয়েকে যেকেউ ভালোবেসে ফেলতে বাধ্য!”
আনমনে হয়ে চাঁদ বলে,
“অথচ মন যাকে চায়,সে ই বাসেনা ভালো”
“মানে?”
“কিছুনা”
চাঁদকে সেখান থেকে অনেকটা দূরে নিয়ে এসে অ্যালেন বলে,
“তোমাকে যেতে দিতে কষ্ট হচ্ছে চাঁদ।আবার কবে দেখা হবে?”
চাঁদ মৃদু হেসে বলে,
“ভাগ্যে যেদিন লেখা আছে”
“সে দিন কি কভু আসবে?”
“আল্লাহ চাইলে অবশ্যই।নয়তো না”
“আমি চাই আল্লাহ আমাদের পরবর্তী দেখা ভাগ্যে আবার লিখে রাখুক।আমাদের যেনো আবার দেখা হয় চাঁদ!”
বলেই চাঁদের হাত শক্ত করে ধরে নেয় সে।ধরতেই চাঁদ ব্যথাতুর আওয়াজ করতেই অ্যালেন বলে,
“কী হয়েছে?কী হয়েছে?”
“কে!টে গিয়েছিলো ব্যথা লাগলো”
“দেখি”
বলেই চাঁদের আঙুলে থাকা আংটিটা ধীরগতিতে আঙুল থেকে বের করে আনে অ্যালেন।অতঃপর আঙুলে লেগে থাকা র*ক্ত মুছতে গেলে চাঁদ বলে,
“আমি আসি অ্যালেন।আপনি ভালো থাকবেন”
বলেই অ্যালেনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে যায় চাঁদ।আর অ্যালেন সে পানে তাকিয়ে থেকেই বলে,
“তুমিহীন কী করে ভালো থাকবো মেয়ে?”
রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতেই চাঁদ অরণকে কল দিয়ে দ্রুত আসতে বলে।বি*প*দ সন্নিকটে শুনে তৎক্ষনাৎ অরণ হাসপাতালের সমস্ত কাজ ফেলে ব্যাগ অ্যাপ্রোন সেখানে ফেলে রেখেই দৌড়ে বাইরে চলে আসে।তাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে পিছু আসে প্রণয়ও।দুজনকে হাসপাতালের ভেতরে এভাবে দৌড়াতে দেখে পিছু নেয় তাদের বন্ধুরাও।
চাঁদ প্রাণপনে দৌড়াচ্ছে আর বারবার পিছু ঘুরে ভাবছে কখন সে অরণের কাছে যাবে আর কখন সবটা তাকে বলবে।বলে সমাধান চাবে।আপাতত এই জায়াগাটা থেকে বহু দূরে যেতে চায় চাঁদ।যেনো কেউ তাকে ধরে না ফেলুক।মনটা বড্ড কু গাইছে তার।জানেনা কেনো,তবুও মন ভীষন ভার হয়ে আছে।অ্যালেন ছেলেটার জন্যও বেশ চিন্তা হচ্ছে তার।সেইসাথে দুঃখও পাচ্ছে তার জন্য।কেনো এমন মানুষই তাকে ভালোবাসে যার প্রতি চাঁদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই?কেনো সে প্রণয় নামক এমন মানুষকে ভালোবেসেছে যে কেবলই তাকে দিয়েছে অ!পমান,অসম্মান আর লাঞ্চনা-বঞ্চনা?এই মানুষটাকে কেনো সবটা উজাড় করে ভালোবাসে চাঁদ?কেনো তার প্রিয় মানবই তাকে সর্বোচ্চ অবিশ্বাস করলো?এসবকিছু ভাবতে ভাবতেই দৌড়াচ্ছে চাঁদ।হঠাৎ পাশে এসে উশ্মির চেচানোতে ধূলো পড়া অতীত নামক পুরোনো বইটা আকস্মিক বন্ধ হয়ে যায় চাঁদের।সে উশ্মির পানে তাকাতেই শুনতে পায় সে বলছে,
“ভাবি!ও ভাবিভাবি ভাবি!তুমি জলদি ঠিক হয়ে যাও প্লিজ!আমার বিয়ের আয়োজন করতে হবেনা?”
To be continued…..