#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৬১.
উশ্মির ডাকে বন্ধ চোখজোড়া খুলে তার পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কপাল খানিকটা কুচকিয়ে চাঁদ বলে,
“বিয়ে?কার তোমার?”
অতঃপর উঠার চেষ্টা করতে চাইলে উশ্মি বাধা দিয়ে বলে,
“আহহা ভাবি!উঠো নাতো।সবই বলবো তবে তোমার এ অবস্থা হলো কী করে?এতোটা আ!ঘা!ত কীভাবে পেলে?দেখেতো মনে হচ্ছে মাথা ফে*টেছে কিন্তু কীভাবে ভাবি?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“সে বড়োই দুঃখজনক কথা।সময় করে শোনাবো একদিন।তুমি বলো,হঠাৎ বিয়ে?”
চাঁদের পাশে বিছানায় পা তুলে বসে উশ্মি।বসে এক পাশের বালিশে ডান হাতের কনুই এ ভর দিয়ে তালুতে মাথা ঠেকিয়ে চাঁদের পানে চেয়ে উৎফুল্লতার সহিত বলে,
“হ্যা ভাবি হ্যা!আমার বিয়ে,ভাবতেই যে কি খুশি খুশি লাগছে!”
বলেই খানিকটা লজ্জা পায় উশ্মি।উশ্মির লজ্জা পাওয়া দেখে চাঁদ বলে,
“ওরে ননদিনী আমার!এত্ত লজ্জা?রামিম ভাইয়ার ফ্যামিলি জানে সব?”
“আমাদের দুই ফ্যামিলিই তো জানে ভাবি।সবাই রাজি, শুধু আমার ফেরার অপেক্ষায় ছিলো।আমিও আর দেরি করতে চাইছিলাম না তাই রামিমকে বলেছি আংকেল আন্টিকে যেনো বিয়ের কথা বলতে পাঠায়”
“তাই?তারপর?”
“তারপর আর কি?আজ আমায় দেখতে আসবেন তারা”
“সব না জানেই?তো দেখতে আসবেন মানে?”
“আরেএ!দেখতে আসবেন বলতে কথা পাকাপাকি করা ভাবি”
“আচ্ছা আচ্ছা!তাহলেতো আমার অনেক কাজ আছে।কিন্তু এভাবে কীভাবে?”
“তোমার যে এমন অবস্থা হয়েছে আমিতো জানতাম না ভাবি।একটু আগেই চাচির কাছ থেকে শুনলাম।কালও তো বাড়ি ছিলেনা,কোথায় গিয়েছিলে?”
“হসপিটাল”
“হসপিটাল?কিন্তু কেনো?”
“অরণকে দেখতে গিয়েছিলাম”
“অরণ ভাইয়া?তুমি আসলেই দেখি সবাইকে চেনো।তোমাদের বিষয়টা বুঝতে পারছিনা আমি।আমায় সবটা না জানালে কীভাবে কী করবো?আবার তুমি ডিভো!র্সও চাও।কিন্তু কেনো?সেটা তুমি আমায় স্পষ্টভাবে বলছোনা ভাবি”
মৃদু হেসে চাঁদ বলে,
“আমায় নিয়ে ভাবতে হবেনা মেয়ে।বিয়ে নিয়ে ভাবো,রামিম ভাইয়াকে নিয়ে ভাবো।তোমাদের বিয়ের ঝামেলাটা যাক তারপরই আমি তোমায় জানাবো কেনো তোমার ভাইকে আমি ডিভো!র্স দিতে চাই।আর আশা রাখছি সবটা শোনার পর তুমি নিজেই বলবে যেভাবেই হোক ডিভো!র্স তুমি আমাকে দেওয়াবেই।তাই পেপার সব রেডি করে রেখো”
কপাল কুচকে উশ্মি বলে,
“এতোটা শিওর কী করে?তোমার আর প্রণয় ভাইয়ের মাঝে আসলে হয়েছে টা কী?”
“হয়েছে বহু কিছুই আপাতত সেসব রাখো আর সবকিছুর ব্যবস্থা করো।কখন আসবে রামিম ভাইয়ারা?”
“না আজ আর আসবেনা।আমি মানা করে দেবো।তুমি একটু সুস্থ হও তারপরই কথা আগাবো”
কপাল কুচকে হাত নাড়াতে গেলে হাতে সুচ বি!ধে যাওয়ায় চোখ বন্ধ করে দাত খিচে চাঁদ বলে,
“আরেএ খামোখা আমার জন্য কেনো?”
“চুপ থাকো।বেশি বুঝবেনা বলে দিলাম।আমি যেভাবে বলবো সেভাবেই হবে”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
পরেরদিন সকালেই চৈত্র বোনকে দেখতে বোনের শ্বশুরবাড়ি হাজির হয়।এসেই বোনের রুমে গিয়ে বোনকে শোয়া অবস্থায় দেখে তার কাছে আসতে আসতে বলে,
“ছোটি?”
ভাইয়ের কন্ঠস্বর পেয়ে তৎক্ষনাৎ চোখজোড়া খোলে চাঁদ।খুলেই ভাইকে দেখে বলে,
“ভাই তুই?”
বোনের কাছে এসে তার পাশে বসে চৈত্র বলে,
“হ্যা আমি।কেনো আসতে পারিনা?নাকি ভেবেছিস বিয়ে হয়ে গেছে বলে পর হয়ে গেছিস?”
“আরেএ না ভাই”
“এবার বল এসব হলো কী করে?”
“অরণের ব্যাপারে জানিস না?সেদিনতো অরণের জন্যই বেঁচে ফিরতে পারলাম”
শেষের কথাটা খুব ধীরগতিতে বলেই দৃষ্টি নত করে চাঁদ।তা দেখে চৈত্র বলে,
“ওসব মনে করিস না।হঠাৎ অরণের কথা বলছিস যে?”
“ভাই তুইতো জানিস আমি সেদিন ইচ্ছা করে অরণের মাথায় বা*রীটা দেইনি।ওরা যাতে,ওরা যাতে তাকে….”
বোনের ঠোটে তর্জনী রেখে চৈত্র বলে,
“হিশ!সেসব জানতে চাইনি।তুই বল ওর কথা কেনো বলছিস?হঠাৎ পাঁচ বছর আগের ঘটনা কেনো মনে করছিস?যা চলে গেছে গেছেই!তুইও তো মুভ অন করেছিস।আর যেনো তোর মুখে এসব না শুনি”
“ভাই আমি অরণকেই দেখতে গিয়েছিলাম হাসপাতালে।অরণের অবস্থা খুবই করুন।ছেলেটা কোমায় গিয়ে রয়েছে।আর খুব সম্ভবত তা পাঁচ বছর ধরে।আমার সেই কাহিনীর পরেই!”
কপাল কুচকে চৈত্র বলে,
“কী!”
“হ্যা।আমার দেওয়া আ!ঘা!তটা হয়তো গুরুতরভাবেই লেগেছে।তুইতো জানিস আমি ইচ্ছা করে….”
“হ্যা জানি।অরণ তারপর থেকেই কোমাতে?”
“আমারতো তাই মনে হচ্ছে।এখনো ছেলেটা ঠিক হয়নি।সবকিছু আমার জন্য হয়েছে রে!এতটা বিধ্ব*স্ত অবস্থায় তাকে দেখে আমার যে কেমন লাগছে!তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা আমি ভাই”
“কিন্তু অরণের সাথে তোর এ অবস্থা হওয়ার কানেকশান কোথায়?তোর মাথা কী করে ফে*টেছে?”
“ইম….আমি অরণকেইতো দেখতে গিয়েছিলাম।সেখানেই বাথরুমে গিয়ে সাবানে পা দিতেই পিছলিয়ে পড়ে গিয়ে”
কপাল কুচকে চৈত্র বলে,
“সত্যি বলছিস?”
চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে ভাইয়ের চোখে চোখ রেখে চাঁদ বলে,
“হ্যা সত্যি”
“তবে তুই কিন্তু আজও আমায় বলিস নি সেদিন তুই ছেলেটাকে মাথায় আ!ঘা!ত কেনো করেছিলি?যেখানে ছেলেটা নিজের প্রাণের বিনিময়ে তোকে বাঁচিয়েছিলো!”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“সে এক অজানা রহস্য,যা গোপন থাকাই শ্রেয়”
অতঃপর হাসিমুখ করে বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বলে,
“তুই বস আমি তোর জন্য শরবত করে আনি”
চাঁদের কব্জি ধরে তাকে বিছানায় বসিয়ে ধমকের সুরে চৈত্র বলে,
“চুপচাপ বস।বেশি পাকামো করতে হবেনা”
দিন দু’য়েক বাদের কথা,
হলরুমের একপাশের সোফায় বসে আছে উশ্মি।তার একপাশে বসা রামিমের মা তথা প্রণয়ের মামি আর অপরপাশে রিদি।তাদের বিপরীতপাশের সোফাতে বসে আছেন উশ্মির বাবা,রামিমের বাবা আর প্রণয়ের বাবা। তাদের পাশের সিংগেল সোফায় বসে আছে রামিমও।রামিম আর উশ্মিকে একবারের জন্যও মাথা তুলে তাকাতে দেখেনি চাঁদ।যার দরুন খানিকটা কেশে শরবতের গ্লাস রামিমের দিকে এগিয়ে দিয়ে চাঁদ বলে,
“নিন ভাইয়া শরবত নিন।কিছুইতো খেলেন না।মানলাম জামাই হয়ে আসছেন,তাই বলে কিছুই খাবেন না?জামাই হওয়ার আগে কিন্তু প্রণয়ের ভাই আপনি”
রামিম খানিকটা হেসে চাঁদের থেকে গ্লাসটা নিয়ে বলে,
“না না তেমন কিছুই না।তুমিতো অসুস্থ এসব কেনো করছো?রিদির পাশে বসে পড়ো।উশি বললো খানিকটা সুস্থ হয়েছো তাই ই আসা।কিন্তু এখনতো দেখছি ততটাও সুস্থ হও নি।তাছাড়া এক্সিডেন্টটা হলো কী করে?”
চাঁদ প্রসঙ্গ এড়াতে বলে,
“আরেএ ভাইয়া সেসব বাদ দিন।আজ কেবলই আপনাদের দিন।আমায় মাঝে টানবেন না”
বলেই খানিকটা হাসে চাঁদ।হেসে আবারও বলে,
“মামা আপনারা তাহলে কথা বলুন আমি আপনাদের খাবারের ব্যবস্থা করছি।মামিমা আপনারা কিন্তু না খেয়ে যাবেন না।আমার রান্না প্রায় শেষই”
রামিমের মা বললেন,
“সে কী মা?এই অসুস্থ শরীর নিয়ে এসব করতে গেলে কেনো তুমি?”
“আমি টুকটাক হেল্প করেছি মামিমা।উশ্মিই সব করেছে।আপনাদের হবু বউ কিন্তু পাকা রাধুনী”
চাঁদের কথা শুনে রামিমের মা উশ্মির পানে চেয়ে বলেন,
“তাই নাকি বউমা?”
হবু শাশুড়ীর কথায় লজ্জায় দৃষ্টি নত করে উশ্মি।দৃষ্টি নত ঝুকাতেই রিদি বলে,
“ইশ রে ভাবি!এভাবে লজ্জা পেওনাতো।এতো লজ্জা পেলে চলে নাকি?বিয়ে যে তোমাদের হবেই তাতো সবাই জানতোই”
হঠাৎ প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর শোনা যায়,
“মামা?সব কথাইতো হলো।ওদের বিয়ের দিনতারিখের ব্যাপারে কিছু ভাবলেন?”
রামিমের বাবা খানিকটা কেশে শান্তকন্ঠে বলেন,
“হ্যা বলছিলাম যে রিদির এডমিশন ফেজ টা যাক।তাছাড়া শিফা আর রুবারও তো এডমিশনের ব্যাপার স্যাপার আছে।মাস দুয়েক পরে দিন তারিখ ঠিকঠাক করলে কেমন হবে ভাইসাহেব?”
শেষের প্রশ্নটা উশ্মির বাবার কাছেই করা।উশ্মির বাবা তথা প্রণয়ের চাচা বলেন,
“জ্বি ভাইসাহেব সেটা করলেই ভালো হয়।ওদের এডমিশনের ঝামেলাটা গেলেই বরং যা করার করলে ভালো হবে বলেই মনে হচ্ছে”
উশ্মির বাবার কথা শুনে রামিমের মা বলেন,
“তাহলে মেয়েকে আজই আংটি পরিয়ে যাই তবে?কী বলো মা?তোমার আপত্তি আছে?”
উশ্মির কিছু বলার পূর্বেই চাঁদ ইতস্তত করে বলে,
“মামিমা একটা কথা বলতাম যদি আপনাদের কারো আপত্তি না থাকে তো”
প্রণয়ের বাবা বলেন,
“আপত্তি কেনো থাকবে?তুমি বাড়ির বড় বউ,উশ্মির বড় ভাবি।তোমার তার ব্যাপারে কথা বলার অধিকার অবশ্যই আছে।বলো নির্দ্বিধায়”
শ্বশুরের সম্মতি পেয়ে চাঁদ বলে,
“আসলে বাবা,আমি বলছিলাম যে উশ্মিকে নিয়ে রুবা,শিফারও বেশ উৎফুল্লতা।তো সবাই থাকাবস্থায় যদি রামিম ভাইয়া আর উশ্মির রিং সেরিমনি টা হতো তাহলে হয়তো ভালো হতো।ওরা জানলে হয়তো কষ্ট পাবে।তাই বলছিলাম আজকের মতো ভাইয়ারা থেকে যাক আগামীকাল নাহয় সবাইকে ডাকিয়ে এনে ঘরোয়াভাবে আংটিবদল করে ফেললে?মানে যদি আপনাদের কারো কোনো সমস্যা না হয় তবেই আরকি”
প্রণয় কিছু বলতে উদ্যত হতেই রামিম প্রণয়ের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“হ্যা ফুপা চাঁদের কথায় যুক্তি আছে।তাছাড়া আমারও কয়েকজন বন্ধু ছিলো।ওদেরও বলতাম আর রায়হানও তো….”
কথাখানা বলেই উশ্মির পানে তাকায় রামিম।তাকাতেই উশ্মির শান্ত মুখশ্রী দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলে তার বাবার পানে চেয়ে আবারও বলে,
“রায়হান তো আমার জানের জিগার।ওকে ছাড়া কীভাবে এনগেজমেন্ট করি বাবা?রায়হানকে বরং তুমিই দাওয়াত করোও মা।আমি করলেতো আসবেনা।আর ফুপি তুমি কিন্তু রায়হানকে বিশেষ তলব দিয়ে আনাবে”
শেষের কথাটা প্রণয়ের মা’কে উদ্দেশ্য করে বলে রামিম।প্রণয়ের মা পুষ্পিতা জামান রামিমের পাশে এসে তার কান মলে দিয়ে বলেন,
“তবে রে পাজি!বিয়ে নিয়ে এত নাচগান তোর?”
“হবে নাই বা কেনো?তোমাদের ভাতিজিকে যে পাচ্ছি!তাছাড়া অনুপ্রাণিত কিন্তু আমি তোমার ছেলে প্রণয়ের থেকেই”
কপাল কুচকে প্রণয়ের চাচা বলেন,
“প্রণয়ের থেকে মানে?”
রামিম বলে,
“আরেএ বাবা আপনিতো জানেন না আপনার ভাতিজা কী সাংঘাতিক কাজ করেছে!এই যে চাঁদ না?এই চাঁদতো আপনার ভাতিজার প্রাক্তন প্রেমিকা।প্রাক্তনকে বিয়ে করেছে সে”
তৎক্ষনাৎ প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“সে না কখনো আমার প্রেমিকা ছিলো,না কোনোকালের প্রাক্তন।চাঁদ নামক চন্দ্রময়ী কেবলই আমার বউ তথা অর্ধাঙ্গিনী”
কথাখানা বলে তৎক্ষনাৎ সে জায়গা প্রস্থান করে প্রণয়।আর প্রণয়ের এরূপ ভয়ডরহীন প্রেমবাক্যে চাঁদ ভারী লজ্জায় পড়ে।কেনোনা আশেপাশে সকল বড়রাই প্রণয়ের পানে চেয়ে থেকে তার দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।যার দরুন তৎক্ষনাৎ দ্রুত পায়ে রান্নাঘরের দিকে এগোয় সে।
To be continued…..
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৬১.(বর্ধিতাংশ)
“আমার ডি!ভোর্স লাগবে প্রণয়”
আকস্মিক চাঁদের বলা এক বাক্যে হৃদপিণ্ড ছলাৎ করে উঠে প্রণয়ের।সে বিস্মিত দৃষ্টিতে চাঁদের পানে তাকাতেই চাঁদ বলে,
“অবাক হওয়ার কিছু নেই।আপনার সাথে আর এক মুহুর্ত আমি থাকতে পারছিনা”
থমথমেভাব ধারণ করেই বিছানার উপর পা তুলে মোবাইল নিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসে প্রণয়।অতঃপর বলে,
“থাকতে পারবেন ই বা কী করে?এক পুরুষ দিয়েতো আপনার পোষায় না”
প্রণয়ের কথায় চোয়াল শক্ত হয় চাঁদের।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সে বলে,
“আজও আপনি তেমনই রয়ে গেছেন মি.রুহায়ের প্রণয়”
মোবাইল পানে দৃষ্টি রেখেই প্রণয় নিম্নস্বরে শুধায়,
“আর আপনি?”
“আমার ব্যাপারে আপনার না জানলেও চলবে।আমার ইমিডিয়েটলি ডি!ভোর্স লাগবে।এখন আপনি স্বেচ্ছায় দিলেতো ভালোই নাহয় আমায় অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে”
“ডি!ভোর্স তো ইহ জনমে আপনি পাবেন না।থাকতেতো আপনাকে আমার সাথেই হবে।এখন আপনি আপসে থাকলে ভালো নাহয় যেভাবে আছেন সেভাবেই”
দুই ভ্রু উচিয়ে চাঁদ বলে,
“আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছেন?”
“আপনাকে ফেরত তো আরও বহু কিছুই দেয়া বাকি।এবং সুদে আসলে সবটাই ফেরত পাবেন আপনি।হয়তো তার তুলনায় অধিকই পাবেন।কেবলই সময়ের অপেক্ষা”
শুকনো জামাকাপড় ভাজ করে আলমারিতে রাখতে রাখতে তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসি হেসে চাঁদ বলে,
“এখনও বুঝি বহু কিছু পাওয়া বাকি আমার?অতীতে কি কম পেয়েছিলাম বলে ভাবছেন আপনি?”
“আমার বন্ধুর তুলনায় বহু কমই পেয়েছেন আপনি”
আলমারির দরজা বন্ধ করে চাবি দিয়ে তা আটকাতে আটকাতে চাঁদ বলে,
“যদি ভেবে থাকেন আমায় কষ্ট দেবেন তবে জেনে রাখুন, চাঁদ যেই কষ্ট ভোগ করে এসেছে সেই কষ্টের তুলনায় আপনার দেয়া কোনো কষ্টই রুহ অব্দি আর পৌঁছাবেনা”
বলেই বিছানায় এসে বসে প্রণয়ের পানে দৃষ্টি রেখে আবারও শুধায়,
“আপনার প্রতিটা আ!ঘা!ত নিতে সর্বদা প্রস্তুত আমি।তবে আপনি কি জানেন?আপনার বন্ধুর এ দশায় কোথাও না কোথাও আপনি দায়ী?”
চাঁদের কথা শুনে তার পানে তাকাতেই দুজনের দৃষ্টি মিলিত হয়।অতঃপর হকচকিয়ে যায় চাঁদ।দৃষ্টি সরাতে গেলেই প্রণয় বলে,
“আপনি কেনো হঠাৎ বদলে গেলেন চাঁদ?”
মৃদু হেসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“বদলে কি আমি গিয়েছি?না আপনি?”
“আপনার জীবনে বহুপুরুষের আনাগোনা নেই বলছেন?”
প্রণয়ের কথায় কপাল সামান্য কুঞ্চিত হয় চাঁদের।সে বলে,
“কী বোঝাতে চাইছেন আপনি?”
“কিছুইনা।ঘুমান,আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন”
ব্যগ্র হেসে চাঁদ বলে,
“দুঃখ দিয়ে দুঃখ সারতে চাইছেন?তা কি আদোতে সম্ভব?”
চাঁদ হতে দৃষ্টি সরিয়ে প্রণয় বলে,
“অথচ এক আকাশ দুঃখ দিয়েও তা সারানোর প্রয়োজনবোধটুকুও আপনি করেননি।দূর থেকে দূরান্তে পালিয়ে বেরিয়েছেন”
“আপনি এমন কেনো বলবেন?”
“কেমন?”
“সবার সামনে এমনভাবে প্রিটেন্ড করেন যেনো আপনি বউ বলতে পাগল।অথচ আড়ালে দু’চোখের বিষ”
“বিষতো নয়।নীলবিষ আপনি,যে বি*ষ স্বেচ্ছায় পান করেছি আমি”
“আর কত প্রেমবাক্যে ফাসাবেন মি.বিড়াল?”
“প্রেমবাক্য নয়।আপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষে ভরপুর।যা যেকোনো পুরুষকে মৃ*ত্যুর দিকে ধাবিত করতে সক্ষম”
“অপমান করছেন?”
“সত্যিটা বলছি”
“এমন সত্যি তো অতীতে বহু শুনেছি।চরিত্রে আঙুল অতীতেও কম তোলেন নি।এখনও তাই করছেন”
“আপনার চরিত্র আদোতে ভালো?”
প্রণয়ের সবকথা মেনে নিতে পারলেও এই কথাটা বুকে গিয়ে বি!ধলো চাঁদের।হঠাৎ করেই বুকে অসহনীয় যন্ত্রণা হলো তার।ঘনঘন শ্বাস নিতে লাগলো সে।অতঃপর বিস্ময় নিয়ে প্রণয়ের পানে চেয়ে অস্ফুটস্বরে বললো,
“প্রণয়!”
“আপনার চরিত্র যদি এতটাই মধুময় হতো,তবে এক পুরুষেই আসক্ত থাকতেন আপনি”
খানিকটা হেসে চাঁদ বলে,
“আপনার দেয়া একের পর এক অপবাদে বিস্মিত না হয়ে পারছিনা।কোন ভিত্তিতে কোন প্রমানস্বরূপ যে আপনি এসব বলেন আল্লাহ মাবুদ জানেন!”
“নিজের দোষ ঢাকতে বিধাতাকে মাঝে আনছেন?”
“মোটেও নয়”
“আপনি জানেন?আপনার এই চাঁদের ন্যায় মুখশ্রীর প্রেমে পড়ে সকলেই তার হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে বসে।অথচ মুখশ্রী যত নিষ্পাপ,অন্তর ততই অভিশপ্ত”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“গোটা আমিটাই তো এক অভিশাপের ধ্বংসস্তুপ”
প্রণয় বুঝতে না পেরে বললো,
“জ্বি?”
“ঘুমান,কাল উশ্মির রিং সেরিমনির বহু কাজ আছে।আপনার সাথে অহেতুক তর্কে জড়িয়ে সময় অপচয় করতে চাচ্ছিনা”
বলেই বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়ার আগ মুহুর্তে শুনতে পায় প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“কত পুরুষের সাথে শুয়েছেন এভাবে?”
বুকের ভেতর দহন যন্ত্রণা হচ্ছে চাঁদের।চোখে সে ঝাপসা দেখছে।আঁখি ফেটে নোনাজলের বর্ষণ হতে চাচ্ছে তার।তবুও ঠোট কামড়ে ধরে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা দিয়ে বেরুতে বেরুতে চাঁদ অল্প বিস্তর উচ্চস্বরে বলে,
“বহু পুরুষ!বহু পুরুষ!”
To be continued……
#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৬২.
“রামিম ভাইয়া আর রায়হান ভাইয়ার মাঝে কিসের এত রাগ?”
চাঁদের হঠাৎ বলা বাক্যে ঈষৎ কেপে উঠে রুবাসহ তার দুই বান্ধবী শিফা আর রিদিও।শিফা আমতা আমতা করে বলে,
“তু….তুমিতো ঘুমিয়ে ছিলে ভাবি”
শোয়া থেকে উঠে বসে হাই তুলতে তুলতে চাঁদ বলে,
“হ্যা ছিলাম তবে তোমাদের কথাবার্তায় ঘুম আলগা হয়ে গেছে।এখন বলো তাদের মাঝে ঠিক কী হয়েছে?উশ্মিকে নিয়ে কোনো বিষয়?”
রুবা জিহবা দ্বারা ঠোট ভিজিয়ে বলে,
“না মানে বাদ দাওনা ভাবি।আজতো উশ্মিপুর এংগেজমেন্ট অনেক কাজ আছে চলো চলো”
চাঁদ গম্ভীরভাবে বলে,
“এড়িয়া যাওয়ার প্রচেষ্টা?তিনজনই আমার সামনে বসো”
রিদি বলে,
“তুমি যেমন ভাবছো বিষয়টা তেমন….”
“বিষয়টা কেমন তাতো জেনেই নেবো।দু’জনের মাঝে সমস্যা হলে তাদের মিটমাট করা উচিত বলেই মনে হচ্ছে।তোমরা আমায় জানালে হয়তো কিছুটা হলেও হেল্প করতে পারবো”
তখনই রুবা বলে,
“অথচ তোমার আর প্রণয় ভাইয়ার ব্যাপারে কিছুই জানিনা আমরা।তুমিও তো নিজেদের ব্যাপারে আমাদের কিছু বলোনি।ভাইয়ার রুম থেকে এই রুমে এসেছো কেনো?”
রুবার কথায় গতকাল রাতের প্রণয়ের করা কঠিনসব অপমান স্মরণ হয় চাঁদের।অতঃপর হৃদয় তার ভার হয়ে আসতেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আমি তোমার বড় ভাইয়ের বউ রুবা।সে হিসেবে তোমাদের বড় ভাবি।আবার এমনও কিন্তু নয় যে আমি তোমাদের বয়সী।তো তোমার বড় ভাই আর ভাবির পার্সোনাল ইস্যু নিয়ে এত মাথাব্যথা তোমাদের কিন্তু সাজেনা রুবা”
চাঁদের কথায় দৃষ্টি নত করে রুবা।সাথে সাথেই শিফা চাঁদের দিকে চেপে গিয়ে তাকে বলে,
“তুমি রুবার কথায় কিছু মনে করও না ভাবি।ও আসলে বুঝতে পারেনি।আমি তোমায় বলছি রামিম ভাইয়া আর রায়হান ভাইয়ের মাঝে কী হয়েছে।তবে তুমি তাদেরকে বুঝতে দেবে না তাদের ব্যাপারে যে সবটা তুমি জানো।আর আমি আশা রাখছি তোমার থেকে উৎকৃষ্ট সমাধানই পাবো।আমি খুব করে চাই তাদের মাঝে সব ঠিক হয়ে যাক।জানো?দুজন একে অপরকে ছাড়া কিছুই বুঝতোনা।বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো”
চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“ছিলো বলতে?”
শিফা বলতে শুরু করে,
“প্রায় বছর নয়েক আগের কথা।তখন আমরা পড়তাম সবেমাত্র ক্লাস ফোরে।আমি রুবা আর রিদির থেকে দেড়-দুই বছরের বড় ছিলাম তাই অনেকটাই বুঝতাম বিভিন্ন জিনিস।প্রণয় ভাইয়ারা তখন ইন্টারে পড়তো।প্রণয় ভাইয়া,রামিম ভাইয়া,রায়হান ভাইয়েরা একই ক্লাসে ছিলো।সমবয়সী তারা।বেশ ছোটবেলা থেকে রামিম ভাইয়া আর রায়হান ভাই খুব ক্লোজ,বেস্ট ফ্রেন্ড আরকি। আর উশ্মিপু ছিলো রায়হান ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড”
কপাল কুঞ্চিত করে সাথে সাথে চাঁদ বলে,
“কী!কিন্তু উশ্মিতো রামিম….”
শিফা আবারও বলে,
“হ্যা কিন্তু সর্বপ্রথম উশ্মিপু রায়হান ভাইয়েরই গার্লফ্রেন্ড ছিলো।স্কুল লাইফ থেকে।দুজন দুজনকে বেশ ভালোও বাসতো।কিন্তু তাদের মাঝে কী হয়েছে তা আমি জানিনা।হঠাৎ শুনি তাদের ব্রেকাপ হয়ে গেছে।পরে আস্তেধীরে জানলাম আপু নাকি রায়হান ভাইকে ধো*কা দিয়েছে।পরে আরও জানলাম উশ্মিপু রামিম ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড।দুজন নাকি দুজনকে ভালোবাসে।তো এসবের জন্যই রামিম ভাইয়া আর রায়হান ভাইয়ের মাঝে সমস্যা।একে অপরের ছায়াও মাড়াতে চায়না দুজনে।তুমি বিষয়টা বুঝতে পারছো ভাবি?”
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে চাঁদ বলে,
“হ্যা বুঝলাম।পুরো বিষয়টারই কেন্দ্রবিন্দু উশ্মি।তো উশ্মিই সবটা জানে হয়তো”
শিফা বলে,
“হ্যা উশ্মিপু আর রামিম ভাইয়াই হয়তো জানবে”
“তোমরা জানো কিছু?রিদি তুমি?”
রিদি মৃদুস্বরে বলে,
“না ভাবি।আমিও এই ব্যাপারে অবগত নই”
“রামিম ভাইয়া জানায়নি তোমায় কিছু?”
“আমিতো বেশ ছোট এসব ব্যাপারে ভাইয়া আমায় তেমন কিছুই বলেনা ভাবি”
এবার চাঁদ রুবার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আর রুবা?”
রুবাও হতাশার শ্বাস ফেলে বলে,
“না ভাবি।প্রণয় ভাইয়া আর আমার ভাইকেই আমি মাত্রাতিরিক্ত ভ*য় পাই।ভাইকে এসব জিগেস করার মতো সাহস কোনোকালেই আমার ছিলোনা”
ঠোটে ঠোট চেপে দাত দিয়ে তা কামড়ানোর ভঙ্গিমায় লম্বা শ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“আমি দেখছি বিষয়টা”
চাঁদের ভাবুক কন্ঠস্বরে সকলেই তার পানে তাকায়।অতঃপর রুবা বলে,
“কী করতে চাচ্ছো ভাবি?”
বিছানা থেকে নামতে নামতে চাঁদ বলে,
“উশ্মির বিয়ে হতে হতে রায়হান ভাইয়া,রামিম ভাইয়া আর উশ্মির প্রব্লেম সর্ট আউট হয়ে যাবে”
সকলে একইসাথে জিজ্ঞেস করে,
“কিন্তু কীভাবে?”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দুপুর বারোটা,
সকলে নাস্তা শেষে বসে আড্ডা দিচ্ছে খাবার টেবিলে।আড্ডার প্রসঙ্গ কে কাকে কাকে দাওয়াত করবে সে বিষয়ে।উশ্মি বলছে,
“বিডিতে আমার ফ্রেন্ডের সংখ্যা ভারী কম।আছেই দু’ তিনজন।সবারই বিয়ে হয়ে গেছে।আসবে কিনা জানিনা।ততটা ক্লোজও না।আমার তরফ থেকে আমার বোনেরাই ঠিক আছে।আলু আর হুরুকে জানিয়ে দিও মা।বলবে ওদের আসাই লাগবে নাহয় ভালো হবেনা বলে রাখলাম”
উশ্মির মা কিঞ্চিৎ হেসে খাবারের বোলসমূহ নিতে নিতে বলেন,
“হ্যা আমি কাল রাতেই বলে দিয়েছি।ওরা এতক্ষণে বেরিয়ে পড়েছে সম্ভবত”
উশ্মি আবারও বলে,
“হুমু আপু আসতে পারবেনা না?”
“না।দু’দিন হলো কক্সবাজার গেছে।এখনই আসবে কিনা জানিনা।বলে দেখবো?”
“হ্যা বলো তুমি।নাহয় পরে যদি বলে বললাম না কেনো”
“আচ্ছা বলছি”
“আর আলফি ভাই?”
“ও কোন জন্মে কোনো ফাংশনে এসেছে?”
“এবার বলেই দেখোনা যদি আসে!”
“আচ্ছা বলবো”
তখনই চাঁদ তার চাচি শাশুড়ীকে বলে,
“চাচিমা রুবাতো এসেছেই।রায়হান ভাইয়া আসলোনা যে?”
“হ্যা আমি আপাকে জিজ্ঞেস করছি ও আসলোনা কেন”
রুবা ঝটপট বলে,
“আম্মুকে কিছু বলও না মামি।ভাইয়া বিজি থাকেতো আসবেনা মনে হয়”
চাঁদ কপাল কুচকে বলে,
“কেনো আসবেনা?রামিম ভাইয়ার বেস্টফ্রেন্ড না?তাকে অবশ্যই আসতে হবে।আপনি কল করে আসতে বলুন চাচিমা”
“তোমরা বসো আমি ওদের দু’জনকেই কল করছি”
মিনিট দশেক বাদে উশ্মির মা এসে হতাশ হয়ে বলেন,
“আমিতো জানতামই এদের কেউই আসবেনা।তাও তোমরা বললে তাই বললাম তবুও একই উত্তর”
“রুবা,রিদি,শিফা চলো আমার সাথে”
রিদি কপাল কুচকে বলে,
“কোথায় ভাবি?”
“রুবাদের বাসায়”
উশ্মির মা বলেন,
“কিন্তু এই শরীর নিয়ে তুমি?”
“চিন্তা করবেন না চাচিমা।ওদেরকেতো নিয়েই যাচ্ছি আর রায়হান ভাই আসবে মানে আসবেই।আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।আর কে যেনো আসছেনা?তাকেও আনবো।নাম কী তার?কে সে?”
উশ্মি বলে,
“আলফি ভাই।আমার মামাতো ভাই,তাদের বাসায় কী করে যাবে তুমি?”
“রুবা,রিদি তোমরা চেনো কেউ?”
কারো প্রতিত্তোর করার পূর্বেই রামিম বলে,
“উজান চাঁদ আর তোর বাকি বোনদের নিয়ে আলফিদের বাসায়ও যেয়ে আসিস।কিন্তু আগে রুবার বাসায় যাবি।যা ওদের সাথে”
“ভাইয়া?এখানে কাজ আছেনা?”
“আমরা সবাই করে নেবো।তুই যা ওদের নিয়ে”
“ঠিক আছে চলো ভাবি”
দুপুর দেড়টা,
রায়হানের সামনে বসে আছে তার কাজিনমহল সহ ভাবিও।সে সোফায় বসেই বলে,
“কী হয়েছে?তোমরা এখানে কেনো?আমি বলেছি না রুবা আমি যাবোনা?তারপর ওদের নিয়ে এখানে এসেছো কেনো?”
রুবা চুপ করে আছে দেখে রায়হান গম্ভীরভাবে বলে,
“কী হলো?চুপ করে আছিস কেনো?”
তৎক্ষনাৎ চাঁদ বলে,
“ভাইয়া ওরা আসতে চায়নি।আমিই ওদের জোর করে আনিয়েছি।একাতো আসতে পারতাম না তাই”
“তো তুমি এই অবস্থায় এসেছো কেন?কে বলেছে আসতে?আর এমন হয়েছেই বা কীভাবে?”
“কেউই বলেনি ভাইয়া।আমিই এসেছি আপনাকে নিতে”
“অযথাই অসুস্থ শরীর নিয়ে আসলে।যাবোনা কোথাও আমি”
“কিন্তু কেনো ভাইয়া?”
“শরীরটা ভালো লাগছেনা তাই”
চাঁদ সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“তোমরা একটু কষ্ট করে কিছুক্ষণের জন্য অন্যরুমে যাও”
চাঁদের কথা শুনতেই সকলে ড্রয়িং রুম থেকে রুবার রুমে চলে যায়।সকলে উঠে যেতেই চাঁদ খানিকটা কেশে বলে,
“শরীর কিন্তু ভালোই দেখছি ভাইয়া”
“এক কথা দুইবার পছন্দ করিনা চাঁদ”
“আমায় কি ভাবি হিসেবে দেখেন নাকি ছোট বোন?”
“দুটোই”
“তাহলেতো আদেশ আর আবদার দুটোই করতে পারি ভাইয়া”
“যেকোনো আবদার অথবা আদেশ রাখতে পারবো।কিন্তু ওদের এনগেজমেন্টে যেতে বলবেনা প্লিজ”
“হাটতে গেলে মাথায় বেশ চাপ পড়ে।তবুও কেবল আপনাকে নিতে এতদূর অব্দি এসেছি ভাইয়া।শূন্য হাতে ফেরত পাঠাবেন?এতটা নিঠুর আপনি?”
“ছিলাম না”
“এখনও একটু দয়া করুন প্লিজ!”
বলেই হাত জোর করতে নিলে রায়হান চাঁদের দুই হাত ধরে ফেলে বলে,
“ছি চাঁদ!এসব কী করছো তুমি?প্রণয় জানলে বলবে আমার বউকে হিউমিলিয়েট করেছিস কেন?”
কিঞ্চিৎ হেসে খুবই ধীরগতিতে চাঁদ বলে,
“যে নিজেই হিউমিলিয়েট করতে দ্বিধাবোধ করেনা সে আবার অন্যকে এসব বলবে?অসম্ভব!”
চাঁদের কথা শুনতে না পেয়ে রায়হান জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বললে?”
“না ভাইয়া।চলুন তাহলে”
“আমি সত্যিই যেতে পারবোনা চাঁদ।আমার সমস্যা আছে”
“সমস্যাটা নিশ্চয়ই রামিম ভাইয়া?”
অবাকপানে চাঁদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে রায়হান জিজ্ঞেস করে,
“তুমি?”
“একটা কথা বলি ভাইয়া,শুনুন।এই যে আমি?আপনাদের কাছে মনে হয় খুব সুখ দিয়ে ভরপুর জীবন।অথচ জীবনে কতকিছু যে দেখেছি,কত কিছুর হিসাব নিকাশ যে ছোট্ট এই জীবনে করেছি ভাইয়া!জানেন?প্রণয়ের সাথে সম্পর্ক টা আমার মোটেও সহজ নয়।অতীত জীবনের রেশ বর্তমানে জীবনে রয়েই গেছে জানেন ভাইয়া?এখনকার যেই চাঁদকে আপনারা দেখেন,চাঁদ কিন্তু মোটেও এমন ছিলোনা।না প্রণয় এমন ছিলো।প্রণয়-চাঁদ বলতে সকলেই ছিলো পাগল।আমরা ছিলাম আমাদের কলেজের প্রিয় জুটি।না না,ভাববেন না প্রেম করেছি বা সম্পর্কে ছিলাম।আমাদের সম্পর্কটাই ছিলো এরকম যে এর কোনো নামই ছিলোনা।এবং তখন কোমো নাম পাওয়ার সুযোগও হয়নি।সেই নামহীন সম্পর্কটা বর্তমানে জীবনসঙ্গির নাম পেলেও।তা খুবই ঠুনকো।আমাদের সাথে যা হয়েছে তার সামনে আপনাদের তিনজনের মাঝেকার বিবেদ-কলহ খুবই সামান্য।বলছিনা গুরুতর নয়।এটা অবশ্যই খারাপ হয়েছে তবে আমাদের সাথে যা হয়েছে তার তুলনায় সামান্যই বলবো।তবুওতো ভাগ্যের জোরে আজ আমরা একসাথে।ভাগ্যকে মেনে নিয়ে একইসাথে,একই ছাদের নিচে এমনকি একই রুমে,এক বিছানায় ই থাকছি।তবুও হৃদয়ের দূরত্ব কমেনি একটুখানিও।আপনি হয়তো ভাবছেন আপনাকে কেনো এসব বলছি?তারও কারণ আছে ভাইয়া।আপনাকে আমি এটাই বোঝাতে চাইছি যে কোনোকিছুই জীবনে সহজ নয়।জীবনটাইতো সহজ নয় ভাইয়া।আল্লাহ আমাদের সাথে যা করেন তা কোনো না কোনো কারণবশতই করেন যার প্রভাব পরবর্তীতে অথবা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য সুখ বয়ে আনবে”
চাঁদের কথার মাঝেই রায়হান বলে,
“তোমার জীবনের সুখ কোথায় চাঁদ?”
রায়হানের কথায় কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলেও সাথে সাথেই মৃদু হেসে চাঁদ জবাব দেয়,
“তবুও আমি আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট।আমি বিশ্বাস করি একদিন আমি জীবনের সর্বসুখ পাবো।আল্লাহ আমার ভাগ্যে অবশ্যই সুখ লিখে রেখেছেন।কোনো না কোনোভাবে তা পেয়েই যাবো”
“কিন্তু কখন?”
“যখন পেলে সুখগুলোকে আমি উপভোগ করতে পারবো আল্লাহ তখনই হয়তো দেবেন”
“এত দুঃখ থাকার পরেও এতটা সুখী নিজেকে কীভাবে দেখাও চাঁদ?”
“দুঃখগুলোকে এখন আর পরোয়া করিনা ভাইয়া।তাই ই বলছি জীবন কারো জন্যই থেমে থাকেনা।জানেন?প্রণয় নামক মানুষটাকে আমি ভীষণ ভালোবাসতাম।কখনো তাকে হয়তো বলতে পারিনি তবে বাসতাম খুব”
“বাসতে বলতে?এখন বাসোনা?”
“সত্যি বলতে তার প্রতি এখন আর সেই সম্মান টা আসেনা যেটা আগে আসতো।সম্মানহীন ভালো কী করে বাসতে হয় তা আমি জানিনা”
“তো এখন ভালোবাসোনা ওকে?”
“জানিনা।তবে বাসতাম খুব।পরিস্থিতির দরুন তাকেও ছেড়ে বহুদূর যেতে হয়েছিলো।এমনকি আমার স্বপ্নের ঢামেক ছেড়েও দূর থেকে দূরান্তে যেতে হয়েছিলো আমায়।ভাগ্যের নি!র্মম খেলায় দেখুন না আবারও সেখানে এসেই উপস্থিত হলাম।হয়তো আল্লাহ ভালো কিছুর উদ্দেশ্যেই এনেছেন।নাহয় যার থেকে এত পালিয়ে বেড়ালাম কেনোই বা সেখানেই আসলাম?”
“এসব দিয়ে কী বোঝাচ্ছো তুমি?”
“এটাই বোঝাচ্ছি যে পরিস্থিতি মেনে নিন ভাইয়া।এতবছরেও কেনো সবটাকে সেভাবেই দেখবেন?হতেও পারে আপনি যেমনটা ভাবছেন বিষয়টা তেমন না।একটা জিনিস বলি শুনুন।প্রণয় আর অরণ বেস্ট ফ্রেন্ড জানেন তো?তাদের মাঝেও বিরাট ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিলো।কিন্তু কেউই দোষী ছিলোনা।সেই ভুলের রেশ ধরে আজও অরণের কাছে সে ক্ষমা চাইতে পারেনি।আপনিও কি চান রামিম ভাইয়ার এমন কিছু?….”
চাঁদকে থামিয়ে দিয়ে রায়হান বলে,
“থামো আর শুনতে চাচ্ছিনা আমি”
“ভুল নাহয় একটা হয়েই গেছে।তার রেশ ধরে এখনো থেকে যাবেন না প্লিজ!সহজ হোন হয়তো সত্যিটা জানতেও পারবেন।সত্যি নাইবা জানলেন।বন্ধুর সুখে একটু সুখী হন।একটু নাহয় ত্যাগ করলেনই।কীই বা হয়ে যাবে তাতে?”
রায়হান কেবলই চুপ করে রয়।তা দেখে চাঁদ বলে,
“ভেবে দেখবেন কথাগুলো।আমি বসলাম মিনিট দশেক মতো।আশা রাখছি সাথে নিয়েই ফিরবো আপনায়”
To be continued…..